প্রমত্ত_অঙ্গনা #লেখিকা_আরোহী_নুর ৪৮,৪৯

0
164

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
৪৮,৪৯

রিদিকা শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়,ভিতর জাগ্রত হলেও সারাদিন অচেতনের মতো পরে থাকতে হয় তাকে, মুখ ফোটে চাহিদাটাও বলার সক্ষমতা নেই তার,প্রতিশোধ নেওয়া তো দূর এমন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাও এবার দূরুহ হয়ে পরেছে,চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করলে তাও পারে না,চাইলে পালাতেও পারবে না,না তো নিজেকে শেষ করে দিতে পারবে তবে এমন জীবন মৃত্যু থেকেও ভয়াবহ রিদিকার জন্য।অসহায়ের মতো পরে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই তার।
সাত সকালে চোখ খুলেই হঠাৎ আঁখিকে সামনে দাঁড়ানো দেখে ভিতর থেকে ঘাবড়ে উঠে রিদিকা,রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার কিন্তু কিছু করতে পারছে না, সকল ক্ষোভ যেন তার চোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছে,মুহুর্তেই চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে গেছে।এদিকে আঁখি হাসতে হাসতে বলল।

″ইশ সুইটহার্ট তোর এমন হাল দেখে সত্যিই আমার বুক ফেঁটে যাচ্ছে,প্রাণের বান্ধবীকে না দেখে থাকতে পারলাম না তাই দেখতে চলে এলাম,ভালো আছিস তো?আমি তোকে সত্যিই নিজের অনেক আপন একজন মনে করতাম রিদিকা,নিজের বোনের জায়গায় বসিয়েছিলাম তোকে কিন্তু জানতাম না স্বার্থপর কারো আপন হয় না।তবে তুই কেমনে ভুলে গেলি রিদিকা আমার বিষয়ে,আমার সাথে লাগতে আসার আগে কি একবারও তোর মন কাঁপে নি,কিভাবে ভুলতে পারলি আমি আঁখি সবকিছু জ্বালিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি,দেখলি তো কি হাল হলো অবশেষে।তা চলি ভালো থাকিস,কেমন।″

আঁখি চলে গেল।অসহায়ত্বে রিদিকার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরল জল।

কক্ষের বারান্দার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,আজ মনে নেই কোনো গ্লানি।তিক্ত অনুভুতি সব চাঁপা পরেছে আদৃতের অসীম ভালোবাসার নিচে।তবুও মনে অল্প খারাপলাগা বিরাজমান তার।
সুখপাখির মন খারাপের ভাবটা যেন তার প্রেমিক পুরুষ বুঝে যেতে পারল অল্পতে,এসে পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল।

″কি হয়েছে?″

″জানেন আপনি,কখনও আমি নিজে জেনেশুনে কোনো অন্যায় করি নি।আমি আদ্রিশের জন্য হয়ত বাবা– মাম্মাম বা পরিবার কখনই ছাড়তাম না,সেটা আমার জীবনের একটা বড় অন্যায় ছিল যা আমি জেনেশুনেই করেছি।কিন্তু আমার তখন তা ন্যায় মনে হয়েছে,কারণ বাবা কখনও আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যান নি,যা আমার জন্য খারাপ মনে হতো উনার তা উনি আমায় বুঝিয়ে বলতেন,বন্ধুর মতো পাশে থাকতেন সবসময়, জানো সেদিন যদি আদ্রিশের জায়গায় কোনো গরীব ছেলেকেও বাবার সামনে নিয়ে যেতাম তাহলে হয়ত বাবা রাগ করতেন কিন্তু বাবা এমন প্রতিক্রিয়া করতেন না যতটা আদ্রিশকে দেখে করেছিলেন।আদ্রিশের দাদু আমার বাবার ফুপুর স্বামী ছিলেন।উনি উনার প্রথম স্ত্রী ছিলেন,আদ্রিশের দাদু আমার বাবার ফুপু মানে আমার দাদুর উপর অনেক অত্যাচার করেন দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য,অতঃপর দাদু সুইসাইড করেন,সেজন্যই বাবা আদ্রিশের সাথে আমার বিষয় মানছিলেন না,আর আমার কাছে তখন উক্ত দিক অন্যায় বলে মনে হয়েছে,কারণ ওর দাদু এমনটা করেছেন বলে তো জরুরি ছিল না যে ও নিজেও এমনটা করবে,তাছাড়া আমি আদ্রিশকে অনেক ভালোবাসতাম,তাই ওর হাত ধরি,ভেবেছিলাম বাবাকে উক্ত বিষয় মানিয়ে নিব,যখন বাবা দেখবেন আমরা সুখে আছি তখন বুঝতে পারবেন এমনটা সকল ক্ষেত্রে হওয়া জরুরি না,কিন্তু অবশেষে বুঝতে পারলাম আমিই সেদিন অন্যায় করেছিলাম।জানিনা বংশের ছাঁপ ব্যক্তিত্বে থেকে যায় কি না কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারলাম কখনও বাবা মায়ের বিরুদ্ধে যেতে নেই,যতই যা হয়ে যাক উনাদের মানানোর চেষ্টা করা উচিৎ কিন্তু বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত না,বাবা মাম্মাম আমাকে ক্ষমা করে দিলেও আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না।″

″এসব বংশের ছাঁপ বলতে কিছু হয় না আঁখি,সবই মানুষের ব্যক্তিত্বে থাকে,শরীর ও মনে যদি নিজের আয়ত্ব না থাকে তবে নিজেকে প্রকৃত মানুষ বলে দাবী করা যায় না,এতে কারো বংশের কোনো দোষ হতে পারে না,আর মানুষ মাত্রই তো ভুল আঁখি,তুমিও ভুল করেছে,কিন্তু সে প্রকৃত মানুষ যে ভুল শুধরে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।আর তুমি তা করে দেখিয়েছ।
হয়েছে এবার আর মুখ গুমরো করে রেখো না,তোমাকে একদম ভালো দেখায় না এভাবে।তা আজ মন চাইছে না?

″কি?″

″এই যে বৃষ্টি নেমেছে, আর আমার ময়ূরটা ঘরে বসে নিরাশ হচ্ছে।″

″ময়ূর তো চলল,কুনোব্যাঙ আপনি ঘরের কোণেই থাকেন।″

″কি আমি কোনোব্যাঙ,দাঁড়াও আসছি।″

আঁখি হেসে ছাঁদের দিকে ছুটে গেলে আদৃতও পিছন গেল ছুটে।

রাত তখন প্রায় ১ টা,আশপাশটা নিরব,শুধুই চারিদিকে বৃষ্টির কলকাকলি শোনা যাচ্ছে, মনের আনন্দে ভিজে যাচ্ছে আঁখি,আদৃত বিমোহিত হয়ে দেখছে তাকে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে।

″এই যে মি.কুনোব্যাঙ বৃষ্টির আনন্দ নিতে না চাইলে বাইরে আসলেন কেনো?″

″এই ময়ূরটাকে দেখব বলে।″

″লজ্জা করে না এভাবে দাঁড়িয়ে একটা মেয়েকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখতে?″

″কেন করবে?মেয়েটা তো আমার নিজেরই বউ।″

″বউ বলে কি সব অধিকার পেয়ে গেলেন?″

আদৃত এবার আঁখির দিকে এগিয়ে গিয়ে তার কোমরের পিছনে হাত রেখে তাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,আঁখিকে একদম নিজের মুখোমুখি নিয়ে এলো।নেশাভরা স্বরে বলা শুরু করল।

″বিয়ে করার মানেই তো সব অধিকার পেয়ে যাওয়া,কেন তুমি কি কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে আমায়?″

″ঠান্ডা শীতল পরিবেশটায় আদৃতের উষ্ণ নিশ্বাস উপচে পরছে আঁখির চেহারায়,যা একপ্রকার পাগল করে তুলেছে আঁখিকে।হুটহাট আদৃতের এমন পাশে আসা বয়ে আনছে তার জন্য একরাশ লজ্জা,তাই চোখ নামিয়ে নিয়ে লজ্জামিশ্রিত স্বরে উত্তর দিলো।″

″বিয়ের ক্ষণেই নিজেকে আপনার নামে লিখে দিয়েছি,আমার উপর সকল অধিকার যে এখন শুধু আপনারই।″

″তবে তাই?″

আদৃত ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হাসি দিলো,আঁখি চোখ নিচু করে লজ্জাময় হাসি অটল রেখে আছে।এবার আদৃত আঁখির থুতনিতে একহাত দিয়ে তার মুখ উঁচু করে ধরল,আঁখি বুঝতে পারল আদৃত কি করতে চাইছে তাই নিজের চোখ বন্ধ করে নিল,আদৃতও নিজের চোখ বন্ধ করে নিল,অতঃপর অধরে অধরে মিলিয়ে দিল।অল্পক্ষণ পর আঁখিকে ছেড়ে দিল আদৃত,অতি লজ্জায় আঁখি আদৃতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে যেতে নিলে আদৃত তার আঁচল পাকড়াও করল।

″কোথায় যাচ্ছ লজ্জাবতী,পালাবে কোথায় আমার থেকে।″

আঁখি কিছুই বলছে না,শুধু জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘন নিশ্বাস ফেলছে,আদৃত এবার পিছন থেকে এসে আঁখির চুলগুলো একপাশ করে আঁখির ঘাড়ে একটা গভীর চুমু দিয়ে বসল,যাতে আঁখি শিহরণে পিছন ফিরেই জরিয়ে ধরে তাকে।আদৃত আবারও মুচকি হাসি দেয়,অতঃপর আঁখিকে পাজকোলে নিয়ে কক্ষের পানে হাঁটতে শুরু করে।

শায়েলা মির্জা বিছানার একপাশ হয়ে শুয়ে আছেন,অপরপাশে আরিয়ান মির্জা, শত চেষ্টার পরও শায়েলা মির্জা কথা বলেন না আরিয়ান মির্জার সাথে।এক কক্ষে থাকেন এটাই উনার জন্য বড় পাওনা এই কয়েকদিন ধরে।তবুও চেষ্টায় কমতি নেই উনার।

″এই যে আদৃতের মা কথা বলবে না,বললাম তো আর হবে না এমনটা,শেষবারের জন্য ক্ষমা করো।তুমি কথা না বলে থাকলে আমার দিন ভালো যায় না জানো তো।″

″এতো রাতে প্যাকপ্যাক করো না তো,ঘুমোয়।″

″বুঝেছি আঁখির আইডিয়া এবার কাজে লাগাতেই হবে।″
″ও মা গো,আহ,বুকে বড্ড ব্যাথা হচ্ছে আমার,শায়েলা বাঁচাও আমায়।″

″আরে আরে কি হয়েছে আরিয়ান তোমার?হঠাৎ বুকে ব্যাথা করছে কেন?দাঁড়াও আমি সবাইকে ডাকছি,আদৃত… ″

″আরে কি করছ তুমি?নবদম্পতি ওরা,রাত ১ টা সময় ডাকতে যাচ্ছ ওদের!বুঝো না কিছু?″

″কিন্তু তোমার যে শরীর খারাপ করেছে।″

″আরে ও তেমন কিছু না,তোমার কথা না বলার দরুন অসুস্থ হয়েছি আমি,তুমি কথা বললে আর তোমার হাতে বুকের মধ্যে হালকা মালিশ পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি ছাড়া যে আমার বাঁচা মুশকিল শায়েলা,ক্ষমা করে দাও।″

″কখনও এমন অলুক্ষুণে কথা বলবে না,তোমার কিছুই হবে না,এই তো আমি মালিশ করে দিচ্ছি, আর কথাও বলছি,তুমি শান্ত থাকো প্লিজ।″

শায়েলা মির্জা কাঁদতে কাঁদতে বললেন কথাগুলো,আরিয়ান মির্জা মুখ চেঁপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করলেন।

″যাক অবশেষে লাইনে এসেছে,আঁখির বুদ্ধি আছে বলতে হবে।″

আঁখি আজও শাড়ি পরেছে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছিল, আদৃত হুট করে এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো।

″রোমান্সের ভুঁ*ত মাথা থেকে নামান ডা.সাহেব,হাসপাতাল যেতে হবে।″

আদৃত এবার আঁখিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নে*শা*ময় স্বরে বলল।

″মনের ডাক্তারের কাছেই তো আছি,হাসপাতালে গিয়ে কি করব?″

কথাটা বলে আদৃত আঁখির অধরের পানে এগিয়ে যেতে নিলে আঁখি তার মুখ চেঁপে ধরল।

″হাসপাতালে গিয়ে অন্য রোগীদের চিকিৎসা করবেন,এখন চলুন।″

আঁখি আলতো ধাক্কায় আদৃতকে ছাড়িয়ে নিয়ে একপ্রকার ছুটে কক্ষের বাইরে চলে আসে।″

আঁখি আদৃত বসে আছে খাবার টেবিলে,কর্মচারীরা খাবার বেড়ে দিলেও শায়েলা মা আরিয়ান মির্জার আলাদা করে খেয়াল করছেন।আদৃত আঁখিকে মৃদু স্বরে বলল।

″এ কি আঁখি,বাবা মায়ের প্যাচ আপ হলো কি করে!″

″আঁখি আছে যেখানে সমস্যার সমাধান আছে সেখানে।″

″তুমি কি করলে এমন!″

″একটা আইডিয়া দিয়েছিলাম আঙেলকে,হয়ত কাজ হয়েছে।″

″তুমিও পারো বটে।″

নাস্তা শেষে দু’জন হাসপাতালের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেল।

আজকে হাসপাতালে তেমন কাজ করতে দিলেন না আশরাফ খান আঁখি আদৃতকে,বরং দু’জনকে অর্ধেক দিনেই ছুটি দিয়ে দিলেন।আদৃত তো মহাখুশি।

″যাক কপাল করে একজন শ্বশুরমশাই পেয়েছি,একমাত্র মেয়ের জামাই এর মনের ডাক কিভাবে বুঝে গেলেন দেখো,ছুটি দিয়ে দিলেন,আজ সারাদিন রাত ঘুরব তোমায় নিয়ে।″

″হয়েছে এবার এতো খুশি না হয়ে গাড়ি ছাড়ুন।″

″এখনই ছাড়ছি ডা.সাহেবা।″

আদৃত গাড়ি ছেড়ে দিয়ে হাসপাতালের গেটের বাইরের রাস্তায় উঠার আগেই কোথা থেকে আদ্রিশ তাদের গাড়ির সামনে চলে এলো।আদৃত সহসা ব্রেক কষল।দু’জনই বেশ বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল।

″কী হয়েছে আদ্রিশ?বুদ্ধি বিলুপ্ত হয়েছে তোমার!এখনই কি ঘটে যেত ভাবতে পারছ?″

″যা হওয়ার তো হয়ে গেছে আঁখি আর কি হবে?শুধু শেষবার তোমাকে দেখতে এসেছিলাম,জানি আর কখনও ফিরে আসবে না তবে আজ মন রাখার জন্য একবার হলেও বলো না ক্ষমা করে দিয়েছ,শান্তিতে মরতে তো পারব।″

″কী বলছ এসব আদ্রিশ!″

আঁখির জবাবে আদ্রিশ কিছু বলল না বরং রহস্যময়ী হাসি দিয়ে পিছু হাঁটতে লাগল,অপর পাশ থেকে দ্রুত গতিতে একটা গাড়ি আসতে দেখল আঁখি,কিন্তু কিছু বলে বা করে উঠার আগেই আদ্রিশ চলে গেল সে গাড়িটার সামনে,মুহুর্তেই আদ্রিশ গাড়ির প্রবল ধাক্কায় উড়ে গিয়ে বেশ দূরে ছিটকে পরল।আঁখি আদৃত ছুটে গেল আদ্রিশের কাছে,আদ্রিশ আঁখির হাত ধরে খুব কষ্ট করে মুখে কথা ফোটালো।

″আঁখি,মানুষ এমন অবস্থায় কখনও মিথ্যে বলবে না,আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি আঁখি।″
আদ্রিশ জ্ঞান হারিয়ে গেল।

প্রায় ১ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে আঁখি আদৃত এখনও বেড়োয় নি অপারেশন থিয়েটার থেকে।আদ্রিশের অপারেশন চলছে।বাইরে আঁখি আদ্রিশের পরিবার দাঁড়িয়ে আছে।অনেক সময় পর আঁখি আদৃত বেড়িয়ে এলো,সবাই উৎসুখ হয়ে এগিয়ে গেল তাদের দিকে,জাহানারা রাহমান কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন।

″আমার ছেলে ঠিক আছে তো?″

আঁখি আদৃত একে ওপরের দিকে তাকালো তারপর বিষন্নতার সহিত আঁখি বলল।

″হ্যাঁ বর্তমানে ও বিপদমুক্ত তবে ওর এক পা একদম ভেঙে গেছে,কখনও তা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই,শরীরের বাকি অনেক অংশেই যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে তবে তা সেরে যাবে আস্তে-ধীরে।″
″শুভ্রতা আপু তুমি আমার সাথে আসো″

কথাগুলো বলে চলে গেল আঁখি তার কেবিনের দিকে।
শুভ্রতা ওর পিছন গেল।

″কি হয়েছে আঁখি?″

″আপু জানিনা বিষয়টা মা আর ভাইয়া মেনে নিতে পারবে কি না তাই সবার সামনে বলতে পারি নি,আর বিষয়টা সবার সামনে বলার মতোও না।ডাক্তার হিসেবে রোগীর পরিবারের একজনকে হলেও কথাটা আমায় জানাতে হবে তাই ডেকেছি তোমায়।″

″কি হয়েছে বলো?″

″আদ্রিশ শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেছে।মানে ও আর কখনও শারীরিক সম্পর্ক করতে পারবে না,ওকে বাঁচানো গেছে এটাই বড়।″

চলবে…

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৪৯)

বিষন্ন মনে আঁখি বসে আছে হাসপাতালের এক প্রান্তে,আদৃত বুঝতে পারল তার মনোভাব,পাশে গিয়ে বসল তার।

″খারাপ লাগছে আঁখি আদ্রিশের জন্য?″

″ছোটবেলা থেকেই ও আমার বন্ধু, পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্কে থেকেছি এরপর তিন বছর ওর সাথে সংসার করেছি,মিথ্যের আশ্রয়ে হলেও ভালোবেসেছিলাম ওকে,খারাপ লাগাটা কি অস্বাভাবিক কিছু হবে?″

″আদৃত জবাবে কিছু বলল না,আঁখি তার বুকে ঠাই খোঁজে নিল,আদৃত শক্ত করে ধরল তাকে বুকের সাথে মিলিয়ে,যদি পারত তবে বুকে লুকিয়েই নিত আঁখিকে,আঁখির মনে অন্যের জন্য খারাপলাগা মেনে নেওয়াটা কতটা কঠিন আদৃতের জন্য তা শুধু সেই জানে,কিন্তু কঠোর এই সত্য তাকে মেনে নিতেই হবে।

পুরো একদিন পর আদ্রিশের জ্ঞান ফিরল,চোখ খুলে দেখতে পেল আঁখি তার চেক আপ করছে।আদ্রিশ মুখে হাসি টেনে ডাকল তাকে।

″আঁখি…″

চোখ দিয়ে অশ্র বইতে শুরু হয়েছে আদ্রিশের দেখতে পেল আঁখি, একজন নার্স সেখানে থাকলে তাকে যেতে বলে আদ্রিশের পাশে বসল এবার,তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল।

″আঁদ্রিশ,তুমি যা করেছ একদমই ঠিক করো নি।সুইসাইড সবকিছুর সমাধান হয় না,জীবনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা নিয়ে ভেবে নেওয়া উচিত, কিন্তু তুমি কখনও এমনটা ভাবো নি,না তো ডা.আদৃতকে আমার কাছ থেকে দূর করতে ভেবেছ,না তো রিদিকাকে বিয়ে করতে,আর না তো সুইসাইড করার আগে।সবকিছুর পরিমাণ দেখে নিয়েছ?কিছুই ভালো হয় নি।যা হবার হয়ে গেছে আদ্রিশ,তুমি চাইলেই এখন কিছু ঠিক করতে পারবে না,সবকিছুর সমাধান যদি মৃত্যু হতো তবে আমাকে তো সেই ছয় বছর আগেই মরে যাওয়া উচিত ছিল।ধৈর্য্য ধরলে জীবন অনেক কিছুই দিয়ে যায় আদ্রিশ,যাক গে,এখন আর কিছু করার নেই,আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি আদ্রিশ,যেভাবে পারো জীবনটা গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো,আমি তোমার জন্য এর থেকে বেশি কিছু করতে পারব না,আমি জীবনে অনেক এগিয়ে গেছি, আমার শরীর ও মনে এখন শুধু মিশে আছেন ডা.আদৃত,আর তুমি এখন আমার জন্য পরপুরুষ মাত্র। আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছ আমার কথা।″

আদৃত আদ্রিশের কেবিনের বাইরে পায়চারি করছে,মনের ভিতর তার উথাল–পাতাল ভাবনা, আঁখিকে অনেক আগে ভিতরে ঢুকতে দেখেছে,আঁখি আদ্রিশের পাশে গেছে কথাটা ওর বুকের জ্বালাতনের বড় কারণ হয়ে দাড়িয়েছে বর্তমানে।জানে আঁখি তার জায়গা কাউকে দিবে না তবুও আঁখিকে নিয়ে ঈর্ষা ধরে রাখতে পারে না সে।এবার আর নিজেকে আটকাতে না পেরে ভিতরে ঢুকে গেল।আঁখি আদ্রিশ দু’জনই তার দিকে তাকালো,আঁখিকে আদৃতের পাশে বসে থাকতে দেখে আদৃতের বুকে আদেকদফা মোচড় দিয়ে গেল,খুব কষ্টে নিজেকে আয়ত্ব করে বলল।

″আঁখি আদ্রুিশকে দেখা হয়ে গেলে চলো,কাজ আছে।″

″ভাই এমনিই তো জীবনভরের জন্য পেয়ে গেছ ওকে,একটু সময়ের সহানুভূতিতে কি অধিকার জমাতে পারি না আমি।″

আদ্রিশের বলা উক্ত কথায় তার জন্য খারাপ লাগল আদৃতের, খুব কঠিন হলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় বলল।

″আচ্ছা ঠিক আছে,আমি আসছি।″

″আদৃত নিরাশ চেহারায় বেড়িয়ে গেল কেবিন থেকে।আঁখি বুঝতে পারল তার অনুভুতি।″
_________

রাত ১২ টা,আদৃত বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়ছে,হঠাৎ টান দিয়ে আঁখি বইটা সরিয়ে দিয়ে তার কোলে এসে বসল।আদৃত প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে।

″কি হয়েছে এই চোখা নাকটার?এমন চুপসে আছে কেন?″

″কি হবে কিছুই হয় নি।″

″ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না ডা.সাহেব,বয়সে আপনার থেকে ছোট হতে পারি বোধগম্যে নয়,ভালোবাসি আপনাকে আপনার না বলা কথাও অনুভব করে নিতে জানি।″

তারপর আঁখি আদৃতের বুকে মুখ গুঁজে বলল।

″আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসি ডা.আদৃত,ব্যথাভরা সহানুভূতির টান কখনও ভালোবাসার সমতুল্যে মান পায় না,আদ্রিশের জন্য যদিও আমার মনে কিছু থেকে থাকে তা একটা তিক্ত টান যা সময়ের সাথে ফুরিয়ে যাবে।″

″যখন ভালোবাসার অনুভুতি বুঝতে অক্ষম ছিলাম তখনও তোমায় ভালোবেসেছি,ভালোবাসার মানে তোমার থেকে জানতে পেরেছি,ভালোবাসতে শিখেছি তোমার কাছেই,হারিয়ে গিয়ে বিচ্ছেদের ব্যথা গায়ে মেখেছি,নিয়েছি বিষাদময় নিশ্বাস,বছরের পর বছর তিক্ততায় কাটিয়ে অবশেষে পেয়েছি তোমায়,অযুক্তিক হিংসুটে ভাবটা কি সত্যিই অযুক্তিক হবে আজ আমার?″

আলতো হেসে মাথা তুলল আঁখি।

″আমাকে আমার মতোই বোঝাতে চাইছেন?″

″কিছুই বোঝাতে চাই না আঁখি,শুধু জানাতে চাই এই মন তোমার নে*শা*য় পাগল,এ মন জানে তার ভাগটা আর কেউ নিতে পারবে না,তুমি শুধুই তার,তবুও করে অভিমানী জেদ,দোষ কি তার বড্ড?
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আঁখি,নিজের থেকেও বেশি।মনকে না হয় তার হালেই ছেড়ে দাও,একে বোঝানো নিরর্থক।″

আঁখি এবার এগিয়ে গিয়ে আদৃতের কপালে চুমু কাটল,অতঃপর তার দুই গাল বরাবর ভালোবাসার পরশ মেখে বলল।

″ভালোবাসি।″

″আমিও ভালোবাসি সুখ।″

রাত ২ টা,আদৃতের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আঁখি গায়ে আদৃতের শার্ট জড়ানো,আঙুলে তার বুকে কাল্পনিক কিছু আঁকিবুঁকি করতে করতে আনমনা হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″আমি আমার সারনেইম চেঞ্জ না করলে সমস্যা হবে আপনার?″

″জানো তোমার মধ্যে আমার সবথেকে পছন্দের দিক কোনটা?″

″কোনটা?″

″এই তোমার আত্মনির্ভরশীলতা আর আত্মসম্মান। যে মেয়ে খান বংশে জন্মগ্রহণ করেও সে উপাধী মাথায় নেয় নি,জন্ম দিয়েছে নিজের এক আলাদা সত্তা,বিয়ের পরও স্বামীর উপাধী নিতে চায় নি,নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরেছে পৃথিবীর সামনে।সত্যি বলতে আঁখি আমি কখনও তা কল্পনাও করতে পারি না তুমি আমার পরিচয়ে পরিচিতি পাও।তুমি যে নিজেই এক আলাদা পরিচিতি।আমি চাই সমাজের লোক তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে না আমাকে তোমার স্বামী হিসেবে জানুক।
তা আমার একটা আবদার আছে কিন্তু। ″

″কি বলুন তো?″

″এই আপনি করে ডাকটা বাদ দিয়ে তুমি করে বলবে।″

″আমি তা পারব না।″

″কেন?″

″কারণ আমার অভ্যেস হয়ে গেছে আপনাকে আপনি করে ডেকে,তাছাড়া আপনি ডাকটা যেমন সম্মাননায় প্রকাশ পায় তেমনই অগাধ ভালোবাসার সাক্ষ্য দিয়ে যায়।″

″তবে আমিও তোমাকে আপনি বলে ডাকব।″

″একটা ঘুষি দিয়ে এই চোখা নাক বোঁচা করে ফেলব যদি আপনি করে ডেকেছেন তো।এই অধিকার শুধু আমার আর আমিই ডাকব।″

″মা গো বউ নামক এ কেমন প্র*লয় সাথে নিয়ে ঘুরি আমি।″

″আমি প্র*ল*য়,যান কথা নেই।″

″আরে আমার লক্ষী বউটা রাগ করেছে,এখনই ভেঙে দিব সব রাগ।″

″ছাড়ুন আমায়,গুতো দিয়ে পেট ফুটো করব।″

″ডাক্তার আছি সেলাই করে নিতে পারব।″

″ছাড়ুন,হা হা হা হা″
_____________

দেখতে দেখতে কেটে গেল ৩ টে মাস,এরই মধ্যে আঁখি আদৃত সুইজারল্যান্ড ঘুরে আসলো হানিমুনে। অনেক ভালো কাটছে তাদের দিন,আদ্রিশ বেশ সুস্থ হয়েছে,এক পা ভেঙে যাওয়াতে ওয়াকিং স্টিক ব্যবহার করে হাঁটে,নিজের অবস্থাতে কোনো খারাপ লাগা নেই তার,আল্লাহর দেওয়া সাজাতে বেশ খুশি হয়েছে সে।নিজের হাতে নিজের জীবন শেষ করে গেছে তিক্ত এই সত্য মানতে হবেই তাকে।আঁখি ছাড়া তার জীবনে অন্য কোনো সুখ যে তার আর এমনিতেই চাই না।নিজের কাজে যোগ দিবে আবার ভাবছে,যতদিন বাঁচার এভাবেই বেঁচে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষা করবে ভেবে নিয়েছে,আল্লাহর ইবাদত করে বাকি জীবন পার করে দিবে।পুরো সম্পত্তি আদ্রিশ লিখে দিয়েছে আদিলের নামে।আদ্রিশের করুণ পরিণতি দেখে তার পরিবারও আর তার থেকে দূরে থাকতে পারে নি,তারা চলে এসেছে আদ্রিশের কাছে,আদিলের ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়েছে,এখন নিজের সাথে পরিবারের সবার দায়িত্ব সে নিজের ঘাড়ে নিয়েছে,আদ্রিশের দেখাশোনা এতদিন তার পরিবারই করেছে,খারাপ এ সময়ে অবশেষে নিজের একান্ত আপনজনদের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে আদ্রিশ,আঁখি আদৃত এর মধ্যে বেশ কয়েকবার এসে দেখে গেছে আদ্রিশকে।এদিকে মাইশা একটা মেয়ে সন্তানের জননী হয়েছে,খান বংশে আবারও একটা মেয়ের আগমণে হৈ-হুল্লোড় পরল পুরো খান ম্যানশন জুরে,তাতে আঁখির অবদানটা বেশি ছিল।শুভ্রতা আবারও কনসিভ করেছে।এদিকে আঁখির আংকেল ডাকে নারাজ হলেও আরিয়ান মির্জা, উনাকে আব্বু বলে ডাক্তার আবদার রাখলেন।

আদৃতের আজকে হঠাৎ একটা এমারজেন্সি থাকায় হাসপাতাল থেকে আসতে দেরি হলো,আঁখিকে সে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে।শায়েলা আর আরিয়ান মির্জা ইশিকার বাড়িতে বেড়াতে গেছেন আজকে থাকবেন জানে আদৃত, বাড়িতে ঢুকল তবে আঁখিকে পেল না,কর্মচারী হালিমাকে জিজ্ঞেস করল।

″হালিমা আঁখি কোথায়?″

″জানিনা স্যার,আসার পর থেকে আর নিচে নামতে দেখি নি উনাকে।″

″আচ্ছা আমি দেখছি।″

আদৃত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল,আঁখি বলে ডাকছে তবে তার কোনো সাড়াশব্দ নেই।কক্ষের পানে এগিয়ে গেল,দরজা আজানো, ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলে দেখতে পেল পুরো কক্ষ অন্ধকার,বিছানার উপর একটা বড় আকারের টেডি বিয়ার রাখা,তার শরীরে বিভিন্ন রঙের রঙিন বাতি জলছে যার আলোতে তার কোলে রাখা স্পষ্ট একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে। আদৃত আঁখি নামে দু-তিনবার ডেকেও সাড়া না পেয়ে কৌতুহলবশত এগিয়ে গেল সেদিকে,বুঝতে পারলো একটা রিপোর্ট,হাতে নিল ওটা অতঃপর ফোনের টর্চ জালিয়ে তা পড়তে নিলে মুহুর্ত যেন থমকে গেল আদৃতের সেখানেই,চোখ বেয়ে সাথে সাথে গড়িয়ে পরল সুখের জল।

ঘরের বাতি জ্বলে উঠল, সামনে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,মুখে একফালি হাসি নিয়ে,আদৃত ছুটে গিয়েই জড়িয়ে ধরল তাকে।

″কি হয়েছে ডা.সাহেব?ডোজটা কি খুব বেশি হয়ে গেল?″

″তুমি না মা হতে পারবে না?তবে এই রিপোর্টটা!″

″আপনি কি এমন কোনো রিপোর্ট দেখেছিলেন যেখানে লিখা আমি মা হতে পারব না?″

″কিন্তু আদ্রিশ তো তোমাকে এই দোহাই দিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল,মিডিয়াতে তো এই নিউজ ছড়িয়ে আছে।″

″আপনি কি মিডিয়া বা আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কখনও যে তারা আমার রিপোর্ট দেখেছে কি না?
আরে আদ্রিশের বিয়ে করার শখ জেগেছিল তাই বিয়ে করেছে আর মিডিয়া এরা তো নিউজের নামে গুজব ছড়াতে বেশি পছন্দ করে।″

″তবে তুমি সেদিন বাবাকে বলো নি কেন?আর আমাকে কেন বলো নি?″

″আব্বুকে বলি নি আত্মসম্মানবোধ থেকে,আর আপনাকে বলি নি স্যারপ্রাইজ দিব বলে।যদি তখন বলে দিতাম তবে আজ এতটা আশ্চর্য লাগত না যতটা এখন লাগছে।″

″এসব তুমিই পারো একমাত্র।আই লাভ ইউ,তুমি জানো না তুমি আমাকে কতো বড় সুখ পাইয়ে দিয়েছ।″

″আই লাভ ইউ মোর″

খবরটা পেয়ে সবাই খুশি,চারিদিকে পরেছে খুশির হৈ-হুল্লোড়।এদিকে আজ পাওয়া গেল আরও দু’জনের লা*শ।দু’জনকে একই বিছানায় বি*ব*স্ত্র অবস্থায় একটা চাদরের নিচে পাওয়া গেছে,দু’জনেরই গলা কা*টা।পাশে তাদেরই রক্তে বড় বড় করে লিখা।

পরকীয়া কারীদের একটাই সাজা হওয়া চাই,মৃত্যুদন্ড।
প্রমত্ত অঙ্গনা।

এদিকে আজকেই ইন্সপেক্টর জিসান প্রমত্ত অঙ্গনা কেস ছেড়ে দিলেন।

″স্যার আজকে আবারও দুটি খু*ন হলো,আপনি কি সত্যিই আর প্রমত্ত অঙ্গনা কেস দেখবেন না?″

″আরে না সুমন,আমি কেন কোনো ইন্সপেক্টরই এই কেস হাতে নিতে চায় না,১৩ বছর থেকে ১৪ বছরে চলে এসেছে তবে কেস তার জায়গায়ই। সিআইডি,র‌্যাব কোনো টিম বাদ যাচ্ছে না কিন্তু কোনো খবর নেই।আমি আর এই প্যাচাঁল এ থাকছি না।″

″আচ্ছা স্যার আপনার কি খটকা লাগে না।সব পরকীয়া কারীদের প্রমত্ত অঙ্গনা মৃ*ত্যু*র সাজা দেয়,তবে আদ্রিশ রিদিকাকে কেন দিলো না,আদ্রিশের বিষয়টা তো মিডিয়াতে উঠে এসেছে এমন তো নয় যে তার বিষয়ে প্রমত্ত অঙ্গনা জানে না?″

″আদ্রিশের বিষয়ে জানি না তবে রিদিকাকে প্রমত্ত অঙ্গনা ছাড়ে নি।ওর শরীরে ভাইরাস পাওয়া গেছে,ডাক্তারের থেকে জানা গেছে তা মনুষ্য সৃষ্ট, কিন্তু চাইলেও কেউ তার প্রতিষেধক বানাতে পারছে না কারণ ওর শরীরে দুইটা ভাইরাস দেওয়া হয়েছে,আর দুইটা ভাইরাস ওর শরীরে ছড়িয়ে একে অন্যের সাথে মিলে গেছে যার ফলে এদের আলাদা করে আলাদা ওষুধ বানানো সম্ভব হচ্ছে না।আমার মনে হয় এমনটা প্রমত্ত অঙ্গনাই করেছে।″

″কিন্তু সবাইকে সে মৃ*ত্যু দিলেও তাকে কেন দিলো না?ওকে এতো যন্ত্রণা দিয়ে জীবিত রেখেছে নিশ্চিত রিদিকা তার জন্য আলাদা কেউ না হলে তো এমনটা করত না,এমনও তো হতে পারে সে রিদিকার পরিচিত কেউ,যার অনিষ্ট রিদিকা করেছে আর তার ফলস্বরূপ তাকে এমন সাজা দেওয়া হয়েছে।″

″এমনটা হলে সন্দেহ যায় প্রথমত আঁখির উপর।″

″তবে ডা.আঁখিকে আমরা জবাবদিহি করলে পারি।″

″না সুমন,কোনো প্রমাণ ছাড়া আমরা এতো ক্ষমতাসম্পন্ন কাউকে জবাবদিহি করতে পারব না শুধু অল্প একটু সন্দেহের জোরে,আঁখির এতটা ক্ষমতা যে উপযুক্ত প্রমাণ ব্যতীত ওকে হেনস্তা করা মানে আমার জব হুমকিতে ফেলা,তাছাড়া ওর আশপাশে যা নাম ডাক,প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের বিভিন্ন অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রমে যায় আঁখির একাউন্ট থেকে।দেশের বড় অংশের জনসমর্থন আছে ওর পক্ষে, বুঝতে পারছ এখানে সন্দেহের বশে কিছুই হবে না।আঁখির বিরুদ্ধে আমরা অনেক ইনভেস্টিগেশন করেছিও কিন্তু শূণ্য হাত ছাড়া আমরা কখনই ফিরি নি।তাছাড়া রিদিকাকে যে প্রমত্ত অঙ্গনাই ভাইরাস দিয়েছে তারও তো কোনো প্রমাণ নেই,সবই আমাদের চিন্তা মাত্র,বাস্তবে আমরা কিছুই করতে পারি নি এখন অব্দি।″

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here