প্রমত্ত_অঙ্গনা #লেখিকা_আরোহী_নুর ২৬,২৭

0
419

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
২৬,২৭

সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র,আদ্রিশ ঘরে প্রবেশ করল,আজ দু’দিন পর ঘরে ফিরল সে,ঘরে প্রবেশ করতেই কর্মচারী রহিমা একটা খাম এনে দিলো আদ্রিশের হাতে।

ছোলটো সাহেব এটা একটা লোক এসে দিয়ে গেল,বলল আপনি ছাড়া কাউকে না দিতে।

আদ্রিশ খামটা হাতে নিলে রহিমা চলে গেল,খামটার ভিতর দু’টো রিপোর্ট দেখতে পেল আদ্রিশ,বুঝতে পারল হাসপাতাল থেকে আসছে,প্রথম রিপোর্টটা উন্মুক্ত করে পড়ার পর আদৃত বাকরুদ্ধ হয়ে গেল,হাত পা তার মুহুর্তেই কেমন কাঁপতে লাগল,পলকেই যেন তার মাথায় আকাশ টা ভেঙে পরল।না,এ কীভাবে হতে পারে!কীভাবে মেনে নিবে সে এতো বড় সত্য!না, এ তো হতে পারে না!আদ্রিশ অক্ষম হতে পারে না!বাবা হবার সক্ষমতা নেই কথাটা কি করেই কোনো পুরুষ সহজে মেনে নিতে পেরে যায়।বাবা হবার কারণ দেখিয়েই তো জীবনে রিদিকাকে আনল আদ্রিশ,তবে সে আজ নিজেই অক্ষম তাতে কি করে মন মানাবে রিপোর্টটা কি মিথ্যে?কী করে হতে পারে তাও!আদ্রিশের খুব ভালো করে মনে আছে রিদিকাকে বিয়ে করে নিয়ে আসার আগের দিন আঁখি আর আদ্রিশ দু’জনই একটা হাসপাতালে নিজেদের টেস্ট করাতে গিয়েছিল,আর্জেন্ট কাজের বাহানা দিয়ে রিপোর্ট আনার তাড়া আদ্রিশ দেখায় নি সেদিন, রিদিকাকে বিয়ে করার একটা সুযোগ যে তার চাইছিল তাই আঁখির রিপোর্টের অপেক্ষা করে নি,তারপর তো আর সেই রিপোর্টগুলোর কথা মাথায়ই আনে নি আদ্রিশ,কিন্তু আজ হঠাৎ হাসপাতাল থেকে রিপোর্টগুলো কে পাঠাল!

তখনই আঁখির কল আসলো আদ্রিশের ফোনে,আদ্রিশ ঝটপট ফোন উঠাল,আঁখি আদ্রিশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলল।

কি ব্যপার উকিল সাহেব?নিশ্চয়ই সুখবর পেয়েছেন?খুশি হননি খবরটা পেয়ে,আপনার না বাবা ডাক শোনার খুব ইচ্ছে ছিল,তাই তো রিদিকা নামক সুন্দরী রমণীকে ঘরে এনেছিলেন রাত কাটানোর জন্য,যাতে নিজেরও শরীরের নতুন চাহিদা পুরণ হয় আর বাবা ডাক শোনার শখটাও মিটে,যাক শরীরের চাহিদা তো পুরণ করেই নিলেন তবে বাবা ডাক শোনার চাহিদার এবার কি হবে বেবি?হা হা হা হা।

আদ্রিশ কিছুই বলছে না,পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছে আঁখির বলা তাচ্ছিল্য বাণী,আঁখি আবারও বলল।

তুমি কী করে ভুলে গেলে আদ্রিশ আমি একজন ডাক্তার?সেদিন টেস্ট করানোর পর অল্পসময়েই আমার কাছে রিপোর্ট চলে এসেছিল,তুমি তো ফালতু তাড়া দেখিয়ে চলে এসেছিলে,আমি যখন রিপোর্টে দেখলাম তুমি বাবা হতে পারবে না তখন কতটা খারাপ লেগেছিল আমার তা শুধু আমি জানি তবে খারাপ লাগাটা নিজের জন্য ছিল না ছিল তো শুধু তোমার জন্য,ভেবেছিলাম আমি কথাটা কখনও তোমাকে জানাব না,তোমাকে ভালোবেসে বুকে আগলে রেখে পার করব সারাটা জীবন,নাই বা শোনলাম কখনও মা ডাক, কিন্তু তোমার তো সে ভালোবাসার প্রয়োজন ছিল না।প্রয়োজন ছিল নতুন চাহিদার,যাক পুরণ করলে তো,তোমাকে বেশি কিছু বলব না, তোমার জন্য আমার তরফ থেকে রইল পাঁচ বালতী সমবেদনা,হা হা হা হা,আর হ্যাঁ তুমি কি দুইটা রিপোর্টই দেখেছ?না দেখলে দেখে নাও নিচে থাকা রিপোর্টাও,আরশিয়া আনজুম আঁখি ইজ পার্ফেক্ট ফর হেবিং এ চাইল্ড,বর্তমানে তোমার চুপসে যাওয়া চেহারাটা দেখার ইচ্ছেটা চাঁপা দিয়ে রাখতে পারছি না,সত্যিই খুব মজা হতো চেহারাটা একবার দেখতে পেলে,কিন্তু কি করব বলো তোমার মতো ল*প্ট*টের চেহারা দেখার রুচি আর আমার নেই।বাই বেবি ভালো থেকো,কেমন।

আঁখি ফোনটা রেখে দিয়ে প্রশান্তির একটা নিশ্বাস ছাড়ল,উজ্জ্বল হাসি মুখে টাঙিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগল,কতোদিন পর আজ নিজের চেহারায় সত্য সুখের হাসি দেখে ভালোই লাগল তার।

খামের অন্য রিপোর্টটা খুলে পড়তেই আদ্রিশের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরল কিছু জল,আঁখি সত্যিই মা হবার জন্য পুরোপুরি সক্ষম।

আঁখি আদৃতকে দেখতে তার বাড়ি যাবে বলে মন মানিয়ে নিল,কতদিন হয় মির্জা হাউজে যায় না যেখানে একসময় পরেই থাকত সারাদিন আদৃতের ধান্দায় আঁখি,আজ আবার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো,আজ কেন জানি বড্ড ইচ্ছে করল তার শাড়ি পরতে,গতকাল নিজেই একটা শাড়ি কিনেছিল দেখতেই ভালো লাগায় তাই ওটাই পরে নিল,চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে চোখে কাজল টেনে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে বেড়িয়ে আসল,চুরি পরে নিল কিছু,যাওয়ার পথে হঠাৎ একটা দোকানে শুভ্রতা আর রিহানকে দেখতে পেলে গাড়ি থামাতে বলল আঁখি ড্রাইবারকে,অতঃপর গাড়ি থেকে নেমে ছুটে গেলো দোকানের ভিতর, নিজের ঠিক সামনে হঠাৎ আঁখিকে দেখতে পেয়ে শুভ্রতা আঁখিকে জড়িয়ে ধরল কিছু না বলেই,আঁখিও তাকে জরিয়ে ধরল হাসিমুখে। অনেকদিন পর আপনজন বলতে কাউকে পেয়ে আঁখি অনেকটা আবেগপ্রবণও হয়ে উঠল।আহ্লাদী স্বরে বলল।

″অনেক মিস করি আপু আমি তোমায়। ″

″আমিও মিস করি আমার পাগলি বোনটাকে।″

″এবার আঁখি শুভ্রতাকে ছাড়িয়ে বেশ অভিমানী হয়ে বলল।″

″তাই বুঝি?তবে ফোন করলে উঠাও না কেনো?প্রথম প্রথম তো কতো কথা বলতে সারাদিন আমার সাথে কিন্তু এ ক’দিন থেকে একদম ফোন করই না আর আমি ফোন করলে ধরো না,এমনটা কেনো করছ?রাগ করেছ আমার উপর?

আঁখির কথায় শুভ্রতা বেশ হকচকিয়ে উঠল, আমতা আমতা করে বলল।

″আসলে, আসলে এখন কাজে সময় পাই না,তাছাড়া রিহানকেও পড়াই স্কুল যাবে তো সামনের বছর থেকে,আচ্ছা আমি চলি রাত হয়ে গেছে বাড়ি ফিরতে হবে,আজ আদিল জরুরি কাজে আছে তাই কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে এসেছিলাম আমি।চলি,ভালো থেকো।″

″এ কি আপু?চলে যাবে কেন?এতদিন পর আমার সাথে দেখা হলো,ভালো করে কথাও বলবে না?

″কাজ আছে আঁখি,অন্যদিন সময় করে ফোন করব নে,চলি এবার। ″

″আপু কি হয়েছে বলো আমায়?এমন করছ কেনো তুমি?″

″কই কিছু হয় নি তো।″

″আমি জানি আপু কিছু হয়েছে,বলো আমায়?″

″আরে আঁখি তুমি শুধু শুধুই অতিরিক্ত ভাবছ,কিছুই হয় নি,চলি আমি।″
কথাগুলো বলতে বলতেই হুটহাট পায়ে রিহানকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেল শুভ্রতা,ভালো করে রিহানকে আদরটাও করতে দিল না।

শুভ্রতার এমন আচরণে আঁখির বেশ খটকা লাগল,শুভ্রতা কেমন জানি আঁখিকে এড়িয়ে যেতে চাইছে কিন্তু কেন?

″আর একটু খেয়ে নে বাবা আমার।″

″মা আর খেলে আমি বমি করব।″

″ওকে করে নিস,মা আছি তো পরিষ্কার করার জন্য,তবুও খেয়ে নে বাবা আমার,দেখ না জ্বরে মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে দিনে দিনেই।″

″আন্টি,ছাড়েন শুধু শুধু ওকে জোর করছেন কেন?সুস্থ হলে এমনিতেই খেতে পারবে।″

″হ্যাঁ আর তার আগে আমার ছেলে শুকিয়ে ভুঁ*ত হয়ে তোমার দলে চলে যাক।″

″আমার দল মানে?″

″শেওড়া গাছের পে*ত্নী*দে*র দলে তো ভুঁতই থাকবে।″

বিড়বিড়িয়ে বললেন শায়েলা মির্জা,কথাটা আর কেউ না শুনলেও আদৃত শুনে নিল,রিংকি আবার জিজ্ঞেস করল।

″কি যেন বললেন আন্টি।″

″আরে রিংকি তুমি খাওয়াতে মন দাও তো,মা এমনিই বলছিল।″

মায়ের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল আদৃত,শায়েলা মির্জা মুচকি হেসে গেলেন।

তখনই কলিংবেলটা বেজে ওঠলে কর্মচারী রুবাইয়াত দরজাটা খুলে দিল, দরজার সামনেই আঁখিকে দেখতে পেল সবাই,আঁখিকে শাড়ি পরিহিত দেখে আদৃত যতটা মুগ্ধ হয়ে তখন দেখছিল ততটাই অবাক হয়ে দেখছিল বাকি সবাই।আদৃতের মা তো এক প্রকার বাকরূদ্ধ হয়ে গেছেন,আদৃতের জন্য হাতে যে লোকমাটা মাখিয়ে নিয়েছিলেন সেটাও হাত থেকে পরে গেল,তাড়াহুড়োয় হাত ধুয়েই ছুটে গেলেন আঁখির কাছে,ঝাপটে ধরলেন তাকে।কান্না করে দিলেন পলকেই।

এতবছর পর আজ মনে পরল তোর এই মায়ের কথা?

শায়েলা মির্জার এমন ছোঁয়া আঁখির কোমল হৃদয়ে আঘাত করে গেল,আবেগি হয়ে জবাব দিলো সেও।

″ভুলটার পরিমাণ এতো ছিল যে কারো কাছ থেকে ক্ষমা পেয়ে ওঠব ভাবতেও পারি নি।″

″পাগল মেয়ে আমার,মা বাচ্চার সাথে রাগ করে থাকতে পারে না কি!ঘরে আয়,আজ তোকে আর কোথাও যেতে দিব না।″

আঁখি ঘরে আসতেই ইশিকা এসে আঁখিকে জড়িয়ে ধরল?

″কেমন আছিস?আমাকেও ভুলে গেছিলি?″

″সরি রে।″

″থাপ্পড় দিব যদি আবারও সরি বলেছিস তো।″

ইশিকার কথায় আঁখি হাসল,এবার আরিয়ান মির্জা বললেন।

″কেমন আছো মা?″

″এইত আঙ্গেল আলহামদুলিল্লাহ।″

″কেমন আছো লাভ গুরু?″বলল সিয়াম।

″এইত আছি যেভাবে ছিলাম।″
″তা আপনার কি অবস্থা ডা.সাহেব,হটাৎ করে জ্বর বাঁধালেন কেমনে?″

″আর বলিস না ছেলেটার উপর কুনজর পরেছে তাই অসুখ নামছে না।″
আরচোখে রিংকির দিকে তাকিয়ে বললেন শায়েলা মির্জা,আঁখি জিজ্ঞেস করল।

″ও কে?ওকে তো চিনলাম না।″

″আমি রিংকি,আদৃতের ক্লোজ ফ্রেন্ড।″

আরে না না এতো ক্লোজও না,দূরের ফ্রেন্ড,অনেক দূর থেকে এসেছে,আমেরিকা থেকে,তুই ওসব নিয়ে ভাবিস না,আমি তো আদৃতকে বিয়ে করাব ভাবছি জানিস,ওর জন্য বউ দেখছি,একদম তোর মতো কেউ,তুই হলেও চলবে।শেষের কথা একদম হালকা করে বললেন শায়েলা মির্জা।

″কি বললে তুমি মামুনি?″

″আরে মা তুমি কী আমার বিয়ের কথা ছাড়া আর কিছু পাও না?ও এতদিন পর বাড়ি এসেছে ওকে এমনিই দাঁড় করিয়ে রাখবে?″

″আরে না মা তুই বস,আমি খাবার আনি কতদিন হয় তোকে মুখে তুলে খাওয়াই না।″

″না মামুনি আমি এখন কিছু খাব না।″

″কী বলে পাগলি মেয়ে আমার,আগে আসলে মামুনির হাতে খাবে বলে পাগল করত,আর আজ আমি তোকে না খাইয়ে ছাড়ব ভেবেছিস?″

অতঃপর শায়েলা মির্জা আঁখিকে খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে তার জন্য খাবার বাড়তে লাগলেন,আদৃতও এবার পাশের চেয়ারে এসে বসল,বাকিরা নিজেদের অবস্থানে বসলেন।আদৃত আঁখির দিকে বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে বার বার যা রিংকি খেয়াল করছে খুব প্রখরভাবে,যাতে বড্ড জ্বা*লা*পো*ড়া অনুভূতি হচ্ছে তার মনে।ইশিকা এদিকে সিয়ামকে কানে কানে বলল।

″দেখো না সিয়াম আজ এতটা বছর পর ভাইয়ার চেহারাতে সেই খুশি সেই ভালোলাগা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যেমনটা সেই ছয় বছর আগে আঁখিকে দেখলে ভাইয়ার চেহারাতে ভেসে ওঠত।″

″জানোই তো তুমি, আদৃত আঁখিকে কতটা ভালোবাসত,আর এখনও বাসে,কিন্তু আঁখির মনোভাব তো আমরা এখনও জানি না,আমার তো ভয় হচ্ছে আদৃতকে নিয়ে,যদি এবারও আঁখিকে পেতে ব্যর্থ হয় তবে না আবার নিজের সাথে কিছু করে বসে।″

″এমনটা বলো না তুমি,দেখবে আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।″

রিদিকা ভাবতে ভাবতে পেরেশান,কে করল তার সাথে এমনটা!বাড়িতে এসেই পুরাতন সকল ব্যবহার্য জিনিস ফেলে দিয়ে নতুন করে আনিয়েছে,কিন্তু চিন্তা তো মাথা থেকেই নামছে না কে করল এমনটা?আবার যে করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে,কিন্তু তার ব্যবহার্য জিনিসে কে ই বা কিছু মেশাবে আর কেমনে?ঘরের মানুষ ব্যতীত বাইরের কারো সাথেই তো রিদিকার তেমন কোনো মেলামেশা নেই।তার মানে কি আদিল, শুভ্রতা বা মায়ের মধ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু ষড়যন্ত্র করে চলছে।ব্যপারটা কি আদ্রিশকে জানাবে সে?না,ভয় হচ্ছে তার বড্ড,পরে যদি আদ্রিশ তাকে নিজের অযোগ্য মনে করে ছেড়ে দেয়।আয়নাতে চুল আঁচড়ে আনমনে ভেবে যাচ্ছে রিদিকা কথাগুলো,বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আদ্রিশ,মাঝে মধ্যে আরচোখে দেখছে রিদিকাকে,মনে চলছে হরেক চিন্তা, নিজের অযোগ্যতা সম্পর্কে কি রিদিকাকে তার জানানো উচিৎ?কি করবে সে ভেবে কূল পাচ্ছে না।

″শুভ্রতা আঁখির সাথে আমার কথা হয়েছিল,আমি চাইছি ওর দেওয়া টাকা দিয়ে নিজেই একটা ব্যবসা খুলি,আমার একটা বন্ধু আছে তাছাড়া আঁখি বলেছে তার কাছেও একজন লোক আছে যে এমন ব্যবসা করতে চায়,আমরা তিনজন মিলে শেয়ারে একটা ব্যবসা খুলব,তারপর ব্যবসা বড় হলে আমরা নিজেরা নিজেদের ব্যবসা আলাদা করে নিতে পারব।″

″অভাগী টা কতই না করছে আমাদের জন্য,আর আমরা চেয়েও ভালো ব্যবহারটা তার সাথে করে ওটতে পারছি না।″

″কী হলো শুভ্রতা তুমি কাঁদছ কেনো?″

″আজ আঁখিকে পেয়েছিলাম, কিন্তু ধরা পরার ভয়ে আর ওর কথা চিন্তা করে পালিয়ে এসেছি ওর কাছ থেকে চুরের মতো,বেশি কথাও বলি নি।″

″কি করবে বলো?আমরা যে নিরুপায়,কিন্তু খুব বেশি দিন থাকব না,চিন্তা করো না।″

″হুম,তা আঁখির সাথে তোমার যোগাযোগ আছে কেউ জানে না তো?″

″না না,আমি সম্পূর্ণ লুকিয়ে কথা বলছি ওর সাথে।″

″হুম।″

আঁখির মুখে খাবার তুলে দিলেন শায়েলা মির্জা,আঁখির চোখ ভরে উঠল সুখের জলে,কতদিন পর এভাবে মায়ের আদর পেল সে।শায়েলা মির্জা ওপর হাতে তার চোখ মুছে বললেন।

″কাঁদছিস কেন পাগলি?″

″এতবছর পর আমার দ্বিতীয় মাকে যে আবার ফিরে পেলাম আমি।″

″হয়েছে আর ইমোশনাল করতে আসিস না আমায়,পরে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলে গেলে দেখতে আমায় বিশ্রি লাগবে″

কথাটা শুনে সবাই হু হু করে হেসে দিল।

চলবে…

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(২৭)

অনেক করেও আঁখি আজ মির্জা হাউজ থেকে বেরুতে পারল না,শায়েলা মির্জা তাকে যেতে দিবেন না উনার এক কথাই,এখানেই কয়েকদিন থাকতে হবে,উনার বায়নার কাছে জিম্মি হলো আঁখি,কয়েকদিন থাকার মানসিকতা না থাকলেও আজ রাতটা থেকে যাওয়ার মন মানিয়ে নিল।

″যাক অবশেষে আঁখি ফিরে আসলোই,এখন ওই আপদ আদ্রিশও নেই,সুখে থাকতে ভুঁতে কিল দিয়েছিল ওকে, বুঝে নিতো এখনও কি হারাইছে,যাক যা হয় ভালোর জন্যই হয়,আদ্রিশ আঁখিকে না ছাড়লে আমার আদৃতের জীবনে আবার আঁখি কেমনে ফিরত।″

″তোমার মাথা ঠিক আছে শায়েলা,আমাদের ছেলের এখনও বিয়ে হয় নি,ওর জীবনে এখনও কোনো দাঁগ লাগে নি,হ্যাঁ কথাটা ছয় বছর আগে হলে ঠিক ছিল কারণ তখন আঁখিও অবিবাহিত ছিল,তার জীবনে কোনো কলঙ্ক ছিল না,কিন্তু এখন আঁখি ডিভোর্সি,তাও মেনে নেওয়া যেত কিন্তু আদ্রিশ ওকে ছেড়েছে ও মা হতে পারবে না বলে,কথাটা তুমি জানো?এতো কিছুর পরেও তুমি বলবে আঁখিকে ঘরের বউ বানাতে!″

″তুমি কথাটা কেমনে বলতে পারলে আরিয়ান?আঁখিকে তুমি–আমি সবসময় ইশিকার মতো করেই দেখেছি,সেই প্রথম থেকেই আমি আঁখিকে আমার আদৃতের বউ করে ঘরে নিয়ে আসার সপ্ন দেখে এসেছি,কি হয়েছে ও ডিভোর্সি তো?কি হয়েছে ও মা হতে পারবে না তো?ছিঃআরিয়ান এতো শিক্ষিত হয়েও তুমি এমন মানসিকতা রাখো!আজকাল অনেক ব্যবস্থা থাকে নিজের সন্তান পাওয়ার,টাকা থাকলে এমন অনেক পাওয়া যায়,তাছাড়া আঁখি আদৃত দু’জনই ডাক্তার, আচ্ছা একটা কথা বলো তুমি আমায় আল্লাহ না চান যদি এমন সব কিছু আমাদের ইশিকার সাথে হতো তখনও কি তুমি এমনটা বলতে ওকে নিয়ে?″

″দেখো শায়েলা তুমি আমায় ভুল ভাবছ,আঁখিকে আমিও যথেষ্ট ভালোবাসি,ও আমার কাছে ইশিকার মতোই,কিন্তু এর মানে এটা নয় যে অনুভুতিতে ভেসে যুক্তিগত দিক ভুলে যাব।″

″তুমি থাকো তোমার যুক্তি নিয়ে,এ ঘরে বউ হয়ে তো আঁখিই আসবে।″

কথাটা বলে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেলেন শায়েলা মির্জা,আরিয়ান মির্জা মনে মনে কি যেন ভাবতে লাগলেন।

আদৃতদের বিশাল বাড়ির একটা গেস্ট রুম আঁখির জন্য রেডি করা হয়েছে।কক্ষ টা বেশ ভালোই লাগল আঁখির,সাথে করে এক্সট্রা কাপড় তো আনে নি তাই ইশিকা নিজের একটা নতুন থ্রিপিস পরতে দিলো তাকে,ইশানার সদ্য বাচ্চা হয়েছে শরীর আগে থেকে একটু বেড়েছে তাই আঁখির গায়ে কাপড়টা অনেকটা ঢিলে পরেছে কিন্তু খারাপ লাগছে না তাকে,তাছাড়া আঁখি ঢিলে কাপড়ে বেশ সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।বাইরে বৃষ্টি নেমেছে প্রচুর,আবহাওয়া বেশ শীতল,কেমন জানি মনে ভালোবাসা ভালোলাগার এক আচমকা অনুভুতির সৃষ্টি করে উক্ত এই আবহাওয়া,ভেসে আসা মৃদু হাওয়া শরীরে যেমন শীতলতার অনুভুতি দেয় তেমনই মনে এনে দেয় এক আলাদা তৃপ্তি, আজ হঠাৎ করেই আবার মনে পরছে বিশ্বাসঘাতক সেই প্রেমিক পুরুষের কথা,না জানি এমন কতো সুন্দর ক্ষণ কাটিয়েছে আঁখি তার সনে,চাইলেই কি ভালোবাসার সে মুহুর্তগুলো নিমিষেই ভোলা যায়!বারান্দার বেশ পাশ ঘেষে দাঁড়ানোতে বৃষ্টি এসে আছড়ে পরছে আঁখির গায়ে,তবুও পিছু হটছে না সে,ইচ্ছে করেই যেন বৃষ্টিকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে আঁখি তাকে ভিজিয়ে তোলার জন্য।

″এই যে বাচ্চামো এখনও গেলো না?ভিজছ কেনো এতো রাতে?″

″আমার ইচ্ছে করছে তাই,আপনি কেন এসেছেন এতো রাতে এখানে?জ্বর শরীরেও বাহাদুরি যায় না তাই না?″

″আমি বাহাদুরি করলাম কোথায়?″

″দূর্বল শরীর নিয়ে মাঝরাতে ঘরে ঘুরে বেড়ানো বাহাদুরি নয়ত কি?″

″হয়েছে, বাহাদুরি করব আমি,তোমার সাথে এমনটা না করলে হবে না।চুপচাপ এসো ওখান থেকে,আবহাওয়া ভালো না জ্বর আসবে। ″

″আসলে আসুক,ভিজব আমি,যান আপনি গিয়ে ঘুমোন,তাছাড়া আপনার মতো ঠুসঠাস করে জ্বর আমার আসে না।″

″তবে আসবে না তুমি?″

″না।″

″এতো জেদি কেনো তুমি বলোতো?″

″জেদ আমার র*ক্তে মেশা তাই।″

″আসবে না?″

″না।″

″ওকে আমি আসছি।″

এবার আদৃত গিয়ে আঁখিকে টেনে নিয়ে এলো কক্ষের ভিতর তারপর বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিল।

″এটা কি করলেন আপনি?″

″দরজা লাগিয়েছি দেখো নি?″

″আপনার ঘরে এসেছি বলে ক্ষমতা খাটাচ্ছেন?″

″ওটাই মনে করো।″

″আপনি কখনও বদলাবেন না,নিরামিষ তো নিরামিষই থাকে।কই এমন আবহাওয়ায় লোক একসাথে বসে বৃষ্টি উপভোগ করার ফাঁকে গল্পগুজব করে আর ইনি দরজা লাগিয়ে ঘুমোয়।″

″হ্যাঁ আমি নিরামিষ, তবে নিরামিষ হলেও তোমার সাথে থেকে কিছু জিনিস তো আয়ত্ত আমিও করেছি,হয়ত তোমার থেকেও বেশি কিছু জানি।″

″যেমন?″

″আমি আবার মুখে বলতে মজা পাই না,করে দেখাই।″

″আচ্ছা,তবে তাই।″

″হম,চলো।″

″কোথায়?″

″গেলে বুঝবে।আমার পিছন আসো।″

আঁখি আদৃতের পিছন গেল, ঘরের ভিতরের পিছন দিকটায় বড় একটা খোলা জায়গা,যাতে বেশ বড় একটা জানালা দরজার ন্যায়,বারান্দার মতো বাইরের দিক তার,তবে ভিতরের দিকে কাঁচের দরজা সামনে পর্দা লাগানো,সেখানে বসার জন্য অনেক বড় করে জায়গা বানানো যেখানটায় বসে বাগানের দিকটা সম্পূর্ণ চোখ ভরে দেখা যায়,জায়গাটা আঁখির বরাবরেরই প্রিয় ছিল,যখনই আসত এখানেই বসে থাকত সারাদিন,আদৃতের সাথে আড্ডার আবদার করত এখানটায়,এবার ছোটে এসেই জানালার পাশ লেগে বসল আঁখি,আদৃতও তার পাশে এসে বসল।

″দেখলে এখন বৃষ্টিও উপভোগ করতে পারবে আর ভিজবেও না।″

″হুম,তবে এতে আপনার কোনো ক্রেডিট নেই,জায়গাটা আগে থেকে বানানো।″

″আইডিয়া তো আমি দিলাম।″

″হুম তা মানা যায়,কারণ আপনার ওই নিরামিষ মাইন্ডে এতো সুন্দর আইডিয়া আগে কখনও আসত না,আগে তো একটু সময় আমার সাথে বসে কথা বলার জন্য বললে মনে হতো আপনার কাছ থেকে আপনার প্রাণ চাওয়া হয়ে গেছে,যাক এখন তো নিজে থেকে এক আধটু কথা বলার সুযোগ বানিয়ে নেন।″

″ভুল তো মানুষ সারাজীবন করে যায় না,এক সময় তা শোধরায়ই।″

″যাক অবশেষে যখন ভুল ধরতে পেরেছেন তবে তার সাজাটাও নইলে দেই।″

″কি সাজা দিবে?″

″বেশি কিছু না,ঘুমে ডলুডলু হয়ে পরার আগ অব্দি আমার সাথে এখানে বসে গল্প করতে হবে,যদি আপনার অসুস্থ শরীর মানে তবে।″

″আরে না,জ্বর একটু সকালে ছিল,এখন একদম নেই,ভালোই লাগবে তোমার সাথে আড্ডা দিতে।″

″যাক নিরামিষতা কাটল তবে।″

″তা আড্ডাতে কি আমাকে রাখা যাবে?″

রিংকির সেখানে হঠাৎ আগমণে অল্পতে হাসিমুখটা মলিন হলো আদৃতের,আঁখির সাথে অনেক দিন পর এমন একা সময় পার করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া হয়ে গেল তার।আঁখি হেসে জবাব দিলো।

″আরে কেন নয়?এসো রিংকি।দুই থেকে তো তিন ভালোই।″

রিংকি এসে আদৃতের বেশ পাশ হয়ে বসল,আঁখির কেমন জানি ভালো লাগল না বিষয়টা তবুও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল,তবে আদৃত অনেকটা সরে গেল সাথে সাথে।

″তা আঁখি,তোমার কথা অনেক শুনেছি আদৃতের কাছে,তাছাড়া এখন ইশিকার কাছ থেকেও শুনে এলাম,ভালোই নাম করে ফেলেছ তুমি কম দিনে।″

″ধন্যবাদ।তা তোমার আর ডা.আদৃতের পরিচয় কেমনে?″

″আমেরিকাতে দু’জন একই হাসপাতালে ছিলাম,একসাথেই কাজ করতাম দু’জন,ওখানে তো আমাদের বেশ নাম ছিল,শুধু ডাক্তারি যোগ্যতার জন্য না,একসাথে আমরা এতো থাকতাম যে অনেকেই আমাদের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড মনে করত,আসলে আদৃত চাইলে হয়ত এতদিনে বিয়েও করে নিতাম আমরা।হা হা হা″

″অহ।″
রিংকির কথায় কেন জানি অনেকটা খারাপ লাগল আঁখির,কেমন যেন ঠিক তেমনটাই অনুভব হলো যেমনটা ঠিক ছয় বছর আগে আদৃতের পাশে কোনো মেয়েকে দেখলে হতো,পার্থক্য শুধু এটাই তখন আঁখি এতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া করত,সবার সামনেই আদৃতের উপর অধিকার ফেলাত,তাকে নিজের বলে দাবী করত বর্তমানে যার এক অংশও করার মানসিকতা আঁখির নেই,তাই পানসে মুখে অল্প জবাবটা দিলো,এদিকে আদৃতের মনে ভয় জন্মাল।

″এ রিংকি বাড়িয়ে কেন বলছে এসব?আঁখি না আবার আমায় ভুল বুঝে যায়।″

″আরে তেমন কিছু না আঁখি,ওর তো বাড়িয়ে বলার স্বভাব সবসময়ের,ও শুধুই আমার ভালো বন্ধু এর থেকে বেশি কিছু না। ″

″হয়েছে আর ঢাকতে হবে না,তোমার কি মনে হয় আঁখি, এতো হ*ট মেয়ের সাথে কেউ এতবছর ধরে জাস্ট ফ্রেন্ড সম্পর্কে থাকে?তা তুমি বলো তোমার খবর,শুনেছি বিয়ে করেছিলে ডিভোর্সও হয়ে গেছে।এখন ফিউচার প্লান কি?দ্বিতীয় বিয়ে করবে না কি?″

সবগুলো কথাই যেনো আঁখির মনে দাঁগ কেটে গেল,সোজাসাপটা জবাবে বলল আঁখি।

″এমনটা তো জরুরি নয় জীবনে একজন চলে গেছে বলে আরেকজনকে নিয়ে আসতেই হবে।জীবন একাও কাটানো যায়।″

″হুম তা যায়,কিন্তু আদৃতের মতো সুদর্শন পুরুষ সামনে থাকলে কিন্তু নিজেকে ঠিক রাখা অসম্ভব, তুমি আবার ওর দিকে নজর দিয়ে বসো না।হা হা হা।″

″এসব কি বলছ তুমি রিংকি?″

″আরে আদৃত তুমি রাগছ কেনো?আই এম জাস্ট কিডিং।তোমার কি আমার কথায় খারাপ লেগেছে আঁখি?মজাই তো করছিলাম।″

″না না খারাপ লাগবে কেন?মোটেও খারাপ লাগে নি,তা আপনারা গল্প করুন আমি চলি,ঘুম পাচ্ছে। ″

″আঁখি কথা শুনো আমার।″

আঁখি আদৃতের পিছু ডাকে কান না দিয়েই চলে যায়,
আদৃত এবার বেশ রেগে বলে।

″তুমি আমার রাগ সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানো রিংকি,তুমি আজ আমার বাড়ির মেহমান না হলে আঁখির সাথে এমন ব্যবহার করার পরিনাম কি হতে পারে দেখিয়ে দিতাম,আমার আঁখির চেহারায় মলিনতা আমার সহ্য হয় না,সামনে থেকে এমন কিছু করার আগে ভেবে নিও।″

আদৃত বেগতিক পায়ে গেল এবার আঁখির পিছন।

রিংকি পায়ের উপর পা তুলে জায়গায় বসেই মুচকি হাসল।

আঁখি কক্ষে ঢোকার আগেই আদৃত এসে তার হাত পাকড়াও করল।

″আঁখি,শুনো আমার কথা,ওই রিংকির কথায় মন খারাপ করো না,ও আসলে গায়ে পরা একটা মেয়ে,তাছাড়া কাকে কি বলতে হয় সে জ্ঞান ওর নেই।″

″ঠিক আছে ডা.আদৃত,আমি ওর কথায় মন খারাপ করি নি,আমি ঠিক আছি।রাত অনেক হয়েছে গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন,জ্বর তো দেখি এখনও আছে,যান গিয়ে ঘুমান।″

আদৃতের কপালে হাত দিয়ে বলল আঁখি কথাটা স্বাভাবিক ভাবে, নিরাশ হলো আদৃত এতে।

″তুমি না বললে সারারাত আজকে গল্প করবে?″

″আরে কি যে বলেন,আমি তো মজা করি জানেনই,কাল হাসপাতাল আছে তাছাড়া আপনি অসুস্থ সারারাত এভাবে বিনাশ করলে হবে?যান গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।″

অতএব আর কথা না বাড়িয়ে কক্ষে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নিল আঁখি,আদৃত ভালোয় বুঝতে পারল আঁখি ভালো নেই,আফসোস হলো তার একসময় যে মেয়ে অনুভূতি নামক জিনিস লুকোয় কিভাবে তা জানত না,অল্পতে কান্না করে ঘর ভাসাত আজ সে হাসির নিচে লুকিয়ে রাখে পাহাড় সমান যন্ত্রণা।

আদ্রিশ হঠাৎ তার বুকে কারো নরম হাতের ছোঁয়া পেল,চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দেখল রিদিকা,অন্যদিন যার এমন স্পর্শে শরীরে মুহুর্তেই আলাদা শিহরণ তৈরি হতো আজ তেমনটা আর হচ্ছে না আদ্রিশের,মন আজ খুব করে আবারও আঁখিকে চাইছে।যা চাইলেও সম্ভব না আজ,ব্যর্থতা আর অসক্ষমতা আদ্রিশের সব সুখ যেন নিমিষেই কেড়ে নিল,বর্তমানে চাইলেও আর কোনো সুখের দোলায় দোলতে মন মানাতে পারবে না সে,তাই রিদিকার হাত সরিয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে পরল,রিদিকা বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″কি হয়েছে,এমন করছ কেনো?″

″কিছু না ভালো লাগছে না,ঘুমোয়।পারলে লাইটটা অফ করে দাও।″

আদ্রিশের এমন ব্যবহার অল্পতে রিদিকার মন ব্যথায় ভরে তুলল,তবে আদ্রিশকে বলল না আর কিছু,ঘরের বাতি উঠে বন্ধ করেই আদৃতের বিপরীতে শুয়ে পরল,মনের যন্ত্রনায় মত্ত হয়ে বারান্দার দরজা আজও লাগাতে ভুলে গেল।

রাত তিনটে,আশপাশ জনশূন্য, আদ্রিশের বাড়ির বাইরের রাস্তা থেকে রুমের বারান্দার দরজা খোলা দেখা গেলে হুডিওয়ালা অজ্ঞাত জন এগিয়ে গেল সেদিকটায়,বাড়ির সামনে দারোয়ান, তাই পিছনের দিকের দেয়াল টপকে বাড়িতে প্রবেশ করে গেল সে,বারান্দার দিকে রাখা সিঁড়ি বেয়ে ভিতরে ঢুকে পরল অজ্ঞাত সে জন।আস্তে পায়ে কক্ষে ঢুকে একে একে রিদিকা আদ্রিশ দু’জনেরই মুখের সামনে কিছু স্প্রে করে,দু’জন কিছু না বোঝেই ঘুমের ঘরে অজ্ঞান হয়,অজ্ঞাত জন এবার নির্দ্বিধায় কক্ষে বিচরণ করতে শুরু করে,ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা রিদিকার নতুন করে আনা পন্যগুলো একবার করে দেখে নেয়,কিন্তু ওগুলোতে কিছুই না করে এবার পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রিদিকার হাতের মাধ্যমে তার শরীরে দিয়ে দেয়।তারপর বলে উঠে।

″প্রমত্ত অঙ্গনা সাজা তোদেরও দিবে কিন্তু অন্যদের মতো সহজ মৃত্যু তোরা পাবি না,মিস্টার এন্ড মিসেস রাহমান।প্রমত্ত অঙ্গনা অপরাধীদের ছাড় দেওয়া মোটেও পছন্দ করে না।″

অতঃপর যেভাবে সে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল।

পরদিন সকালে…

যশোর এসেই খোঁজ করতে লেগে গিয়েছিল জিসান,ইতিমধ্যে অনেক নতুন সন্ধান পেয়ে গেল সে।চারবছর আগে যশোর জেলায় নকল প্রমত্ত অঙ্গনা দ্বারা যে দু’টি খুন হয়েছিল বলে জিসান মনে করে তাদের সম্পর্কে বড় তথ্য পেল সে।তখন কেসটা তার থানার আন্ডারে না থাকায় তেমন মাথা ঘামায় নি বলে হয়ত এসব খবর ছোটে গিয়েছিল তার কাছ থেকে।এবার ভালোয় খোঁজ নিলে জানতে পারল সে দু’টি খুন যাদের করা হয়েছিল তারা দু’জন স্বামী স্ত্রী ছিল।প্রথম যে পুরুষের খুন হয়েছিল তার আসল ঠিকানা বের করলে জানা গেল সে যশোরের এক জায়গায় ভাড়া থাকত তার স্ত্রী তাহমিনাকে নিয়ে,প্রথম প্রথম আমিরুল আশপাশ এবং কর্মস্থানের লোকের সাথে ভালো ব্যবহার করলেও ধীরে ধীরে না কি সে সবার থেকে কেমন দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করল,কারো সাথে তেমন কথাও বলত না,কখনও কোনো বন্ধু বান্ধবকে বাসায় নিয়ে নাস্তাও করাতে চাইত না কেউ নিজে থেকে যেতে চাইলেও,তার স্ত্রীকেও আশপাশের কেউ তেমন দেখে নি ঘর থেকে বের হতে,হঠাৎ একদিন আরেকটা মেয়ে এসে তাকে স্বামী বলে দাবী করে,সেদিন সে বাড়িতে না কি তুলুম ঝগড়া হয়,চারপাশের মানুষ মুহুর্তেই একত্রিত হয়,আমিরুলের প্রথম স্ত্রী নিলিমা ছিল সে যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাহমিনাকে অনেক মারধর করে,তবে তাহমিনা এতে কিছুই বলল না আর না তো তার কোনো প্রতিবাদ করতে চাইল,বরং পুরো ঘটনায় স্বাভাবিক থাকল যা আশপাশের লোকের কাছে অনেক অস্বাভাবিক বলে মনে হলো,আমিরুলও নিলিমাকে সেদিন অনেক মারধর করল,এসবের এক পর্যায়ে সেখানে পুলিশ এসে তিনজনকেই আটক করে ধরে নিয়ে গেল।সুযোগ সুবিধা করে আমিরুল তাহমিনাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসতে সক্ষম হলেও নিলিমা তার উপর কেস করে বসল।কেস চলাকালীন এক দিন হঠাৎ আমিরুলকে তার ঘরেই মৃ*ত অবস্থায় পাওয়া গেল,কিন্তু তাহমিনাকে কোথাও পাওয়া গেল না ,এর কিছুদিন পর নিলিমাকেও খু*ন করা হলো,কিন্তু তাহমিনা কে আর কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।তারা সেখানকার স্থায়ী কোনো বাসিন্দা ছিল না এমনকি তাহমিনাকে তেমন কেউ দেখেও নি তাই তার বা তাদের বিষয়ে কিছু বলা সবার জন্যই দূরুহ ছিল।জিসান এবার গভীর চিন্তায় ডুব দিল।তার ভাবনামতে হোক না হোক এই তাহমিনাই এসব খুনের সাথে জড়িত যদি সে এখনও বেঁচে থাকে।এখন জিসানকে খোঁজে বের করতে হবে তাহমিনাকে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here