#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
২৮,২৯
আঁখির মন বড্ড খারাপ আজ,চাইলেও রিংকির রাতে বলা কথাগুলো ভুলতে পারছে না সে,এমনিতে কারো বলা কোনো কথা কখনও মনে নিয়ে বসে থাকে না,হাসিখুশি থাকাই আঁখির স্বভাব,কিন্তু আজ যেন চাইলেও খুশি থাকতে পারছে না,মন টা কেমন জানি ভার হয়ে আছে,কি করবে আঁখি ডিভোর্সিদের হয়ত সবাই এমন নিচু চোখেই দেখে,মন ভালো করার জন্য ইশিকার সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়েটাকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে এসে খেলা করছিল আঁখি,এমনিতে বাচ্চাদের সে খুব পছন্দ করে,ঠিক তখন কক্ষে নক করল আদৃত।
″আসতে পারি?″
″হুম আসুন ডা.সাহেব।″
″কি করছ?″
″এইত নিশিকে নিয়ে খেলা করছি।″
″শুধু খেলা করবেই?হাসপাতালও তো যেতে হবে আর তার আগে নাস্তা করতে হবে,চলো।″
″আপনার জ্বর নেমেছে?″
″হ্যাঁ,একদম সুস্থ আমি বর্তমানে, আজকে হাসপাতালও যাব।চলো নাস্তা করবে।″
″না আমি নাস্তা করব না,খিদে নেই।″
″নেই বললে চলে?চলো চুপচাপ। ″
″খাবো না ডা.আদৃত, প্লিজ আপনি গিয়ে খেয়ে নিন।″
″তুমি না খেলে আমিও খাচ্ছি না।″
″এ কেমন জেদ?″
″তেমন জেদ যেমন তুমি করছ।″
″আপনি একটু বেশি করছেন।″
″তুমি কোথায় কম করছ?″
″কথায় কথায় ঝগড়া না বাঁধালে হয় না আপনার?″
″ঝগরাটের সাথে ঝগড়া করব না তো কি করব?″
″কি আমি ঝগড়াটে?″
″আমি তো সেটা বলি নি,তবে তুমি মেনে নিলে আমার কি করার আছে?″
″আপনি কি মনে করেন আপনি আমায় কথায় ফাঁসাতে পেরো যাবেন?″
″চেষ্টা তো করতেই পারি।″
তখনই নিশি কেঁদে উঠল চিৎকার করে।
″দেখলেন তো আপনার বাজে ফাজলামো নিশিরও পছন্দ হয় নি,দিলেন তো কাঁদিয়ে বাচ্চাটাকে।না না কাঁদে না ময়না।″
″ও কাঁদছে কারণ ওর তোমার কথা পছন্দ হয় নি।″
″আপনার মতো পঁচা নিরামিষ কথা বলি না আমি।″
″হয়েছে তোরা থাম এবার,এতো বড় হয়েও দু’জন বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করা বাদ দিলি না।আঁখি চল আদৃতকে নিয়ে নাস্তা করবি নিশিকে আমার কাছে দে।″
″না মামুনি খিদে নেই।″
″আবার কথাটা বললে নাস্তার জায়গায় থাপ্পড় খাইয়ে তোর পেট ভরাব।″
″তুমি আমায় এমনটা বলতে পারলে মামুনি?″
আহ্লাদী করে ঠোঁট উল্টে বলল আঁখি।
″যাবি এবার খেতে না দিব সত্যি একটা কানের নিচে বসিয়ে।″
″দিয়ে দাও মা,তাও যদি একটু বুজদার হয়।″
″হুহ,কি এসেছেন আমার বোজদার সাহেব।″
আঁখি আদৃতকে ভেংচি কেটে চলে গেল পাশ কাটিয়ে, আদৃতও মুচকি হেসে তার পিছু গেল,শায়েলা মির্জা দু’জনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললেন।
আল্লাহ আমাকে তৌফিক দাও যাতে এ দু’জনকে আমি এক পবিত্র বন্ধনে বেঁধে দিতে সক্ষম হই।যে বন্ধন থাকবে জীবনভর,কখনও ছিঁড়ে যাবে না,দু’জন একে ওপরে খুঁজে পাবে নিজেদের প্রকৃত সুখ।রহম করুন রাব্বুল আল-আমিন।
আজ হঠাৎ করেই লক্ষ্য করল রিদিকা তার গায়ের চামড়া খসখসে হয়ে যাচ্ছে, একটা টান টান ভাব সারা শরীর জোরে,মনের ভয় আরও প্রখড় হলো তার।হঠাৎ হাতে অল্প ব্যথা অনুভব করলে হাতে সুচের ছিদ্র লক্ষ্য করল সে।হতবাক হলো মুহুর্তেই।
″আমি তো কোনো ইনজেকশন দেই নি তবে হাতে সুচের দাঁগ এলো কোথা থেকে!তাছাড়া ব্যথাও আছে,এদিকে চামড়াও কেমন খসখসে হয়ে আছে।না দেরি করলে হবে না দেখছি,আজ একবার সময় করে ডাক্তারে যেতে হবে,এভাবে বসে থাকলে তো আর হয় না।তবে ব্যপারটা আদ্রিশকে জানানো উচিৎ হবে না।″
আদ্রিশের কিছুই ভালো লাগছে না,জীবনটা কেমন বিষাদময় হয়ে গেছে,মন শুধু আঁখিকেই খোঁজে বেড়াচ্ছে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিল তখন রিদিকা এসে তাকে বোতাম লাগাতে সাহায্য করতে শুরু করলে তাতে বাঁধা দিলো আদ্রিশ।রিদিকার প্রতি কোনো টানই যেন বর্তমানে অনুভব করছে না আর সে।
″কি হয়েছে আদ্রিশ?″
″কিছু না ভালো লাগছে না কিছু।আমি চলি।″
″কখন ফিরবে?″
″আজ কখন আসব জানি না,আসতে দেরি হবে।″
″দিনে ফিরবে না তো?″
″না,কেন?″
″না এমনিই।″
আমতা করে জবাব দিলো রিদিকা।আদ্রিশ আর সে নিয়ে এতো মাথা না ঘামিয়ে বরং চলে গেল।
″মামুনি আমি হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যাব।″
″কি বললি তুই?আবার বল তো?″
″না মানে একদিন তো থেকেছি।″
″তো কোন বড় তী*র মে*রে*ছি*স?এখানে তুই মাস দেড় এক থেকে যাবি,তার মধ্য দিয়ে তোকে পার্মানেন্ট করে রাখার ব্যবস্থা করে নিব আমি।″
শেষের কথা মিনমিনিয়ে বললেন শায়েলা মির্জা।
″কি বললে মামুনি?″
″না বললাম যে তুই এখন যাবি না।″
″কিন্তু মাস দেড় এক তো বেশি হয়ে যায়।″
″তো কি হলো?বুঝেছি আমি তো তোর নিজের মা না তাই এমন করছিস, নিজের মা হলে তো এমন কখনও করতি না″
″তুমি কিন্তু আমায় ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করছ মামুনি।″
″হ্যাঁ,আমার অনুভূতি তো নাটক মনে হবে তোর কাছে,যা চলে যা আমার আর কাউকে প্রয়োজন নেই।″
″কি বলছেন মামুনি এসব?আচ্ছা ঠিক আছে দেড় দুই মাস না থাকলেও কিছুদিন থেকে যাব,এবার খুশি?″
″এই তো আমার লক্ষি মেয়ে।″
অনেক সন্ধানের পর জিসান পেল আমিরুল এর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর খোঁজ,আমিরুলকে প্রায় সময়ই তার সাথে দেখা যেত অনেকের মুখ থেকে খবরটা জানতে পারল জিসান,এবার বের করল তার বাড়ির ঠিকানা,কিন্তু তার বাড়িতে গিয়ে যা শুনল তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।লোকটির নাম মিশু,ঘরে তার স্ত্রী আর দু’টা সন্তান আছে,মিশু আর আমিরুল সম্পর্কে মিশুর স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে মহিলাটি জানাল।
″স্যার,আমার স্বামী মিশু হাসান একটা ছোটো কোম্পানিতে কাজ করতেন,উনার সাথে কাজ করত আমিরুলও,ওখান থেকেই দু’জনের পরিচয়,কম দিনেই দু’জনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে পরিণত হয়,আমিরুল প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত,তবে তার স্ত্রী তাহমিনাকে কখনও আনা হয় নি,দাওয়াত দিলেও সে আসতে চায় নি কখনও,উল্টো আমিরুল বলত তাহমিনার না কি আমিরুল এর অন্যদের সাথে মেলামেশা তেমন পছন্দ ছিল না,আর আমিরুল তাকে খুব ভালোবাসে,তাকে হারাতে চায় না,আমিরুলের আগের স্ত্রী ছিল,ঢাকাতে নিজস্ব বাড়ি আছে আমিরুল এর,নিলিমার দূর সম্পর্কের বোন ছিল না কি তাহমিনা,আমিরুল এর তাহমিনাকে হঠাৎ ভালো লেগে যায় কিন্তু সে চাইলেও নিলিমাকে ছাড়তে পারত না,কারণ আমিরুল এর মা বাবা নিলিমাকে খুব ভালোবাসতেন,ওকে ছাড়তে গেলে হয়ত ঘর সম্পত্তি সবকিছু ছাড়তে হতো তাকে,তাই আমিরুল কাজের কথা বলে তাহমিনাকে বিয়ে করে এসে যশোরে থাকত।এতটুকুই জানতাম আমরা তার বিষয়ে।হঠাৎ একদিন আমার স্বামী কারো হাতে খুন হন,তার লাশের পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নামটা পাওয়া যায়।স্থানীয় পুলিশ এ নিয়ে খোঁজ করলেও আজ অব্দি কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।তার কিছুদিন পরে আমিরুল এর ও একইভাবে মৃত্যু ঘটে প্রমত্ত অঙ্গনা দ্বারা।
কথাগুলো শুনে জিসান জায়গায় স্থির হয়ে যেন থাকতে পারছে না,রহস্য খুলতে এসে রহস্যের মারপ্যাঁচে তলিয়ে যাচ্ছে জিসান,খু*নির সন্ধান করতে গিয়ে খুনের সংখ্যা অজস্র বেড়িয়ে আসবে আগে তো এমন ভাবনা ভাবার কথাই ছিল না।এবার আবার জিজ্ঞেস করল জিসান তাকে।
″আচ্ছ আমিরুল ঢাকায় কোথায় থাকত সেটা কি আপনি জানেন?″
″না স্যার,আমিরুল তার আর তাহমিনার ব্যপারে তেমন কিছু বলতে চাইত না,কেমন জানি রহস্যের নিচে চাঁপা রাখত সব,মিশু বলতেন আমিরুল তার ব্যপারে কিছুই বলে না,যা সব জেনেছিলেন তা না কি আমিরুল কখনও কখনও মুখ ফসকে বলে ফেলত উনাকে।″
″তাহমিনার কোনো ছবি হবে?বা তাকে কখনও দেখেছ?″
″না স্যার।″
″হুম, আসি তাহলে।″
জিসান আবার নিরাশ হয়ে ফিরে এলো,তাকে এবার আমিরুল এর আসল বাড়ির ঠিকানা পেতে হবে,ওখানে গেলে হয়ত কোনো সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
রিদিকা বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে,আদ্রিশ বেড়িয়ে যেতেই রিদিকা বেড়িয়ে এসেছিল।ডাক্তার আবারও তাকে চেক আপ করলেন,সে তার হাতের ব্যপারে বলল উনাকে,এবার ডাক্তার বললেন।
″মিসেস রিদিকা রাহমান আপনার শরীরে যে ভাইরাসটা পাওয়া গেছে তা নিয়ে আমি অনেক রিসার্চ করেছি,অতঃপর এ বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম আমি।ভাইরাসটা মানুষের শরীরে বা অন্য কোথাও কখনও নিজে থেকে জন্ম নেওয়ার কোনো যোগ্যতা রাখে না,এটা সম্পূর্ণ মনুষ্য সৃষ্টি,এটা কোনো মাধ্যম খোঁজে কারো শরীরে পৌঁছানোর জন্য,আর শরীরে ঢুকে শরীরের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়,যাতে অল্প বসয়ে বার্ধক্যের ভাব চলে আসবে,ধীরে ধীরে শরীর অচল হয়ে পরবে।এটার অংশ অনুযায়ী,এর মোট তিন অংশ,পূর্ণাঙ্গ কাজের জন্য এর প্রথম অংশ অল্প আকারে দিতে হবে আর পরের অংশ এর থেকে বেশি আকারে,আর তার পরের অংশ এর থেকে বেশি,এই তিন ডোজই একজনকে জীবন্ত লা*শে পরিণত করতে সক্ষম।″
″এ কি বলছেন ডাক্তার!তারমানে কি আমার শরীরে দুই ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে!″
″আপনার কথামতো আপনার শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে আপনি তা বুঝতেই পারেন নি এর মানে তো এটাই মনে হয় আপনার শরীরে দুই ডোজ দেওয়া শেষ,তাও টেস্ট করে দেখতে হবে আবার।″
″এর থেকে বাঁচার কি কোনো রাস্তা নেই ডাক্তার?″
″দেখুন আমি ওষুধ লিখে দিতে পারব,কিন্তু কাজ করার কোনো নিশ্চয়তা নেই,যেহেতু ভাইরাস নতুন তাই এতো তাড়াতাড়ি তার পথ্য দেওয়ার সামর্থ্য বর্তমানে কোনো ডাক্তারের থাকবে না,তবে হ্যাঁ যে এটা বানিয়েছে তার কাছে এর প্রতিষেধক নিশ্চয়ই থাকবে।ভাইরাসটা যেই বানিয়েছে সে নির্ঘাত কোনো বিজ্ঞ ও দক্ষ একজন যে বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান রাখে।যেহেতু আপনার সাথে সে এমন করছে তবে তো নিশ্চিত তার আপনার সাথে ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা,আপনি তাকে সনাক্ত করুন, তারপর তার সাথে সবকিছু মিটিয়ে নিন এতেই প্রাণরক্ষা পাবেন আপনি।″
আঁখি আজ আদৃতের গাড়িতে হাসপাতাল যাচ্ছে, আদৃত আঁখির ড্রাইবারকে আঁখির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে আর বায়না ধরেছে আঁখি তাদের বাড়িতে যতদিন থাকবে আদৃতের গাড়িতেই যেখানে যাওয়ার যাবে,আজকে ড্রাইবার আনে নি আদৃত,অনেক দিন পর আঁখির সাথে একা সময় পার করার সুযোগ কি সে এমনি যেতে দিবে!বর্তমানে ড্রাইব করছে আদৃত,আঁখি চুপচাপ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।আদৃত মনে মনে বলে চলেছে।
″আফসোস হয় আঁখি,একদিন যে আঁখি সারাদিন কথা বলে আমাকে বিরক্ত করত,গাড়িতে আমার সাথে একা ভ্রমণ করার জন্য না জানি কি কি করত,একবার আমাকে একা পেলে জীবনের সব গল্প অল্প মুহুর্তে বলে দেওয়ার প্রচেষ্ঠায় থাকত সেই আঁখি আজ এতো চুপচাপ, সবকিছুই ওই ফালতু আদ্রিশের জন্য হয়েছে,আমি কথা দিলাম আঁখি ছাড়ব না ওই আদ্রিশকে,তোমার সুখ কেঁড়ে নেয় এমন সব লোককেই আমি দূর করে রাখব তোমার থেকে।″
হঠাৎ আঁখি বলে উঠল।
″গাড়ি থামান ডা.আদৃত।″
আঁখির কথায় জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করাল আদৃত।
″কি হয়েছে আঁখি?″
″শুভ্রতা আপু,বাড়ির বাজার করছে দেখি।উনি তো কখনও বাজার করতে আসে না,বাড়ির কর্মচারী গুলো বাজার করে।দাঁড়ান আমি কথা বলে আসি।″
আঁখি নেমে গেলে আদৃতও তার পিছন নেমে যায়,আঁখি গিয়েই শুভ্রতার হাত পাকড়াও করে,হঠাৎ আঁখিকে এভাবে দেখে হকচকিয়ে উঠে শুভ্রতা।
″আপু তুমি এখানে কি করছ?তুমি সবজি কিনতে এলে কেন?ঘরের কর্মচারী গুলো কই?″
″ওই আসলে আঁখি দু’জনই কাজ ছেড়ে দিয়েছে,নতুন কাজের লোক তো আর তাড়াতাড়ি করে পাওয়া যায় না,আর আদিল একটা কাজে গেছে ওই যে ব্যবসা খুলছে তোমার কথায় ওটারই কাজ,তাই আমি চলে আসলাম।″
″হুম,আমি নতুন কাজের লোকের ব্যবস্থা করে দিব,ভাইয়াকে বলো ব্যপারটা আদ্রিশকে না জানাতে।″
″না তোমাকে কষ্ট করতে হবে না আঁখি,কাজের লোক আর লাগবে না,লাগলে আদ্রিশ দেখবে,আমি বরং আসি কাজ আছে।″
শুভ্রতা চলে যেতে নিলে তার হাতে বেশ গাঢ় হয়ে ফুলে ওঠা খামচির দাঁগ দেখতে পেল।
″এ কি হয়েছে তোমার হাতে আপু?কে করল এসব?″
″আরে কিছু না,রিহান দুষ্টুমি করে করেছে এসব,চলি এবার।″
অতঃপর চুরের মতো পালিয়ে গেল শুভ্রতা,আঁখি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেখানে,আঁচড়টা রিহানের দেওয়া বলে মোটেও মনে হলো না আঁখির,বরং মনে সৃষ্টি হলো অন্য এক সন্দেহের।
আঁখি আবারও চুপচাপ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে আর আদৃত ড্রাইব করছে,এবার নিরবতা ভেঙে বলল আদৃত।
″আঁখি,আমি জানি তুমি রিংকির ব্যপার নিয়ে আপসেট,আসলে ও সহ্যের বাহিরের একটা ব্যক্তিত্ব,ওর কথা আমি কখনও কানে নেই না,কিন্তু ও তোমাকে এভাবে কথা বলবে বলে ভাবি নি,তুমি মন খারাপ করো না,ওকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি।″
″আমেরিকা কেন পাঠাবেন?বিয়ে করে নিন ওকে,দেখতে তো সুন্দরী, তাছাড়াও এডাল্ট,আপনাকে পছন্দও করে তবে ক্ষতি কিসে?আর কতকাল একা থাকবেন?কারো জন্য তো জীবন আটঁকে থাকে না,ডা.সানিয়ার সাথে কি হয়েছিল আপনার তা আমি জানি না তবে আপনার জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়।
আদৃতকে জীবনে অন্য কারো সাথে এগিয়ে যেতে বলতে বুকে বড্ড পীড়া অনুভব করছিল আঁখি তবুও তাতে মন দিলো না,নতুন কোনো মনের অনুভুতির ডাকে সারা দিতে চায় না সে,একদিন যে আদৃতকে খুব করে চেয়েছিল তাই হয়ত আজও তাকে অন্য কারো সাথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলতে খারাপ লাগছে।এদিকে বাকরুদ্ধ হলো আদৃত, প্রথমত বুক ফেঁটে যাচ্ছে এটা ভেবে যে আঁখি কখনও তার মুখে কোনো মেয়ের নাম শুনতে রাজি ছিল না সেই আঁখি আজকে তাকে অন্যের সাথে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছে আর দ্বিতীয়ত আঁখির ডা.সানিয়াকে নিয়ে বলা কথাটা পেরেশান করে তুলল তাকে।আঁখির এমন কথার মানে বুঝে উঠতে না পেরে এবার প্রশ্ন করে বসল সে।
″ডা.সানিয়ার সাথে আবার কি হবে আমার?ওর সাথে কিছু থাকলে তো কিছু হবে।আমি তোমার কথার মানে বুঝতে পারছি না আঁখি,পরিষ্কার করে বলো।″
চলবে…
#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(২৯)
″কেন ডা.সানিয়ার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিল না?ওকে তো আপনি ভালোবাসতেন?″
″কি বলছ আঁখি!মাথা ঠিক আছে তোমার!সানিয়াকে আমি ভালোবাসতে যাব কেন?এটা ঠিক ও আমায় পছন্দ করত কিন্তু আমি ওকে কখনও পাত্তা দেই নি।″
″তবে সেদিন আপনাদের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ সংবর্ধনায় আয়োজিত অনুষ্ঠান এর দিন যখন ডা.সানিয়া আপনাকে আর আমাকে একসাথে সহ্য করতে না পেরে কাঁদছিল তখন তার কান্না কেন সহ্য হয় নি আপনার?মানা করতে পারবেন সেদিন আপনি তার কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরেন নি?তাকে কোলে করে নিয়ে একটা বন্ধ কেবিনে ঢুকে যান নি,তার ঘন্টাখানিক ওই বন্ধ রুমেই ছিলেন কথাটা অস্বীকার করতে পারবেন আপনি?এসবের মানে কি হয় ডা.আদৃত বলতে পারবেন?″
কথাগুলো শুনে অবাকত্ব নিয়ে আদৃত সজোরে ব্রেক কষল গাড়ির।
″কি বলছ আঁখি এসব?এসব ভুলভাল তোমাকে কে বলেছে?″
″ভুলভাল,নিজের চোখে দেখেছি আমি।″
হ্যাঁ সেদিন সানিয়া কাঁদছিল,কারণ হঠাৎ তার পায়ে মোচড় খেয়ে গিয়েছিল,অতিরিক্ত ব্যথায় হাঁটতে পারছিল না,তাই না চাইতেও ওকে আমায় কোলে নিতে হয়েছিল, সেখানে অনুষ্ঠান থাকায় অনেক লোক ছিলেন শোরগোলে ও বসতে চাইছিল না,তাই একটা কেবিন খালি পেলে ওকে নিয়ে সেখানে ঢুকি আমি,পায়ে বড় কোনো সমস্যা হয় নি তার তখন,কোথায় ব্যথা করছিল ঠিকভাবে বলতেও পারছিল না,তাছাড়াও ওর পারিবারিক কিছু সমস্যা ছিল যার কারণে মানসিকভাবেও অনেক ভেঙে পরেছিল তাই আমি ওকে রেস্ট করার কথা বলে বেড়িয়ে আসতে চাইলেও ও আসতে দিচ্ছিল না,অনেক রিকুয়েষ্ট করছিল ওকে একা ছেড়ে না যেতে,কিছুক্ষণ ওর পাশে বসতে,ও আমার ভালো বন্ধু ছিল তাই সেদিন ওর পাশে কিছুক্ষণ বসে যাওয়া আমি ভুল মনে করি নি,ও তো বেশি কিছু চাইছিল না আমার কাছ থেকে।″
″আপনার আর ডা.সানিয়ার মধ্যে কোনো কিছুই ছিল না?″
″নো আঁখি।″
সেদিন আদ্রিশের দেখানো ভিডিও দেখে কি আমি ডা.আদৃতকে ভুল বোঝলাম!কিন্তু ডা.সানিয়া সেদিন কেন বলল ডা.আদৃতের সাথে তার সম্পর্ক। তারমানে কি ডা.আদৃত আর আমাকে ইচ্ছে করেই আলাদা করা হয়েছিল?
″কি হয়েছে আঁখি কি ভাবছ?কি হয়েছে ব্যাপারটা আমায় খুলে বলো, প্লিজ।″
″আপনি হাসপাতালে যান আমার অন্য কাজ আছে।″
কথাটা বলেই আঁখি গাড়ি থেকে নেমে ছোটতে শুরু করল,আদৃতও কিছু না বোঝেই তার পিছন ছোটে গেল।তার নাম ধরে ডাকছে।
″আঁখি কোথায় যাচ্ছো?আঁখি?দাঁড়াও।″
আঁখি আদৃতের কোনো পিছু ডাকে কান না দিয়েই একটা সিএনজি আটকিয়ে চলে গেল কোথাও,আদৃত এবার ছোটে তার গাড়ির কাছে এসে সিএনজি টার পিছু নিল।
কিন্তু অর্ধেক রাস্তা গিয়ে গাড়িটা হারিয়ে ফেলল আদৃত,এদিকে বার বার আঁখিকে কল করলেও ধরছে না সে।আঁখিকে নিয়ে আদৃত পেরেশানিতে পরে গেল।
আঁখি সোজা গেল সানিয়ার বাড়িতে,কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারল সানিয়ার বিয়ে গত পাঁচ বছর আগেই হয়ে গেছে,আঁখি দেরি না করে তার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা নিল তার পরিবারের কাছ থেকে,এদিকে আদৃত তাকে কলের উপর কল দিয়ে যাচ্ছে, এবার ফোন উঠাল আঁখি।
″কোথায় আছো আঁখি তুমি?আমি পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছি তোমায় সে কবে থেকেই।″
″আপনি আমাকে খোঁজবেন না,আমি ঠিক আছি,জরুরি কাজে এসেছি,পরে দেখা করছি আপনার সাথে।″
″কি হয়েছে তা সোজাসুজি বলতেই তো পারো।″
″বললাম তো এসে বলছি,আপনি হাসপাতাল যান।″
″হুট করে কি এমন কাজে চলে গেলে যে আমাকে সাথে নেওয়া যেত না,এড্রেস বলো আমি আসছি।″
″না এ দিকটা আমি একাই সামলাব।″
আঁখি কল কেটে দিলো কথাগুলো বলে,আদৃত ভাবলেশহীন হয়ে রইল।
আঁখি পৌঁছাল সানিয়ার শ্বশুর বাড়ি,কিন্তু সানিয়াকে সেখানেও পেল না,সানিয়া হাসপাতালে গেছে ,আঁখি জানতে পারল সানিয়ার স্বামীও একজন ডাক্তার,আর তাদের একটা মেয়ে সন্তানও আছে,আঁখি সানিয়ার শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাছ থেকে তার হাসপাতালের এড্রেস নিয়ে এবার বেড়িয়ে গেল সে উদ্দেশ্যে।
রোগী দেখে লাঞ্চ টাইমে একটু রিলাক্স করছিল সানিয়া তখনই তার কেবিনে প্রবেশ করল আঁখি,আঁখিকে হঠাৎ এভাবে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেল সানিয়া।অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
″আঁখি তুমি এখানে?″
″হ্যাঁ আমি,সত্য জানতে এসেছি।″
″কিসের সত্য?″
আমতা করে বলল সানিয়া।কর্কশ স্বরে জবাব দিলো আঁখি।
″কিসের সত্য বুঝো না?ডা.আদৃত আর তোমার সত্য,ছয় বছর আগে যে ডং করে ডা.আদৃত আর আমায় দূর করেছিল সে সত্য।″
″আমি তোমায় আর আদৃতকে দূর করব কেন?আমি সেদিন কোনো ডং করি নি।″
″আসলে তাই!তবে ডা.আদৃতের প্রতি এতো ভালোবাসার দোহাই দিয়ে এখন ডা.আদৃতকেই ছেড়ে অন্যকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করছ কেমনে?″
″আদৃত আমাকে ধোঁকা দিয়েছে তাই আমি নিজের জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছি।″
কথাটা বলতেই সানিয়ার গাল বরাবর কষে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় আঁখি,সাথে সাথে সানিয়ার ঠোঁটের একপাশ কেটে র*ক্ত বেড়িয়ে আসে, আঁখি এবার তার চুল মুঠো করে ধরে নিল,সানিয়া শত চেষ্টা করেও আঁখিকে না ছাড়াতে পারছে আর না তো তাকে জিম্মি করে উঠতে পারছে,চিৎকার করতে শুরু করেছে সানিয়া।
″কে আছো বাঁচাও?এই গু*ন্ডি মেয়েটা আমায় মে*রে ফেলছে।″
″সত্যটা বল নয়ত সত্যিই মে*রে ফেলব,তুই আমাকে বলবি ডা.আদৃতের মতো লোক তোকে ধোঁকা দিয়েছে আর আমি তা বিশ্বাস করব!বল সত্যটা শাঁ*ক*চু*ন্নি।″
ততক্ষণে হাসপাতালের বেশ লোক সেখানে প্রবেশ করে গেল,অনেকে আঁখিকে ছাড়াতে এগিয়ে এলেই পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে তার আগা ভেঙে সানিয়ার গলা বরাবর ধরে গর্জে বলল আঁখি।
″কেউ যদি এক পাও এগিয়েছ তবে এখানেই মুহুর্তে এর লাশ ফেলব আমি,বল সানিয়া চুপচাপ নইলে তুই আমায় ভালো করে জানিস এটা তোর গলা বরাবর ঢুকিয়ে দিতে দ্বিতীয় বার ভাবব না।″
আঁখির রাগ সম্পর্কে ভালো জানে সানিয়া,বর্তমানে আঁখির রক্তিম বর্ণ ধারণ করে থাকা চোখের দিকে তাকিয়ে আর সাহস জুটিয়ে উঠতে পারল না,প্রাণ বাঁচানোর চিন্তায় জিম্মি হলো আঁখির কাছে।।
″বলছি আঁখি, আমি সত্যটা বলছি আগে গ্লাসটা নামাও।″
″নামাব না,আগে বল।″
″আপনারা প্লিজ যান,ব্যপারটা আমি দেখছি।″
সানিয়া নিজের বদনাম না হওয়ার সুবিধায় সবাইকে বাইরে যেতে বললে সবাই কেবিনের বাইরে চলে গেল,এবার বলল সানিয়া।
″আসলে আঁখি আমি তখন আদৃতকে অনেক ভালোবাসতাম,সুদর্শন থাকা সত্ত্বেও চরিত্রবান ছিল আদৃত,শালীন মার্জিত তার ভাষা,গম্ভীর স্বভাব,অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় না দেওয়া, সত্যবাদী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিল আদৃত, এমন ছেলের প্রেমে কোন মেয়েই না পরবে?আদৃত বলতেই তো ভালোবাসার আরেক নাম ছিল।যাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিলাম আমিও,কিন্তু বাকি সকল মেয়েদের মতো সে আমাকেও পাত্তা দিত না যেখানে ওর মনের অনেক বড় এক জায়গা জুরে বসবাস করে উঠতে সক্ষম হয়ে গিয়েছিলে তুমি,জা তুমি না জানলেও আমি ঠিকই জানতাম,আদৃতের প্রেম বিরহে কতো পোঁ*ড়ে*ছি তা শুধু আমি জানি,যখন আশাহত হয়ে নেতিয়ে পরেছিলাম তখন আশার আলো হয়ে আসলো আদ্রিশ,আদ্রিশ জানতে পেরে গিয়েছিল আমি আদৃতকে ভালোবাসি,সেদিন আদ্রিশ আমাকে জানাল সে তোমাকে ভালোবাসে সেই প্রথম থেকেই,কিন্তু তুমি ভালোবাসো আদৃতকে,যেকোনো মূল্যেই আদ্রিশের তোমাকে চাই,এদিকে আমিও আদৃতকে খুব করে চাইছিলাম তখন।সে আমাকে আশ্বাস দিলো আমরা দু’জন মিলে যদি তোমাদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টি করি তবে তোমরা আলাদা হয়ে যাবে আর আমরা দু’জন নিজেদের ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত জন পেয়ে যাব,প্রথমত আমি আদ্রিশের কথায় রাজি হই না কিন্তু আদ্রিশ আমাকে বোঝায় যে এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।তাই আদ্রিশের সাথে মিলে আমরা দু’জন তোমাদের আলাদা করার প্লান করি।
সেদিন হাসপাতালের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পায়ে ব্যথা আর পারিবারিক সমস্যার নাটক করে আদৃতকে এক কক্ষে নিজের সাথে আঁটকে রাখি,আর তখন সবকিছু আড়াল থেকে ভিডিও করে আদ্রিশ।তারপর তোমাকে তা দেখায় তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী বলে নিজেকে দাবী করে।তোমার মনে বিষ গুলে দিতে চায় আদৃতকে নিয়ে,কিন্তু তুমি তাতেও বিশ্বাস করছিলে না বরং আদৃতের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে সোজাসুজি কথা বলতে চাইছিলে কিন্তু আদ্রিশ তোমাকে ঠেকায় এই বলে যে আদৃত তোমার কথা ভেবে আমাকে ভালোবাসার কথাটা স্বীকার করবে না,কথাটায় তুমি আটকাও এই ভেবে যে এখানে আদৃত তোমার কথা ভেবে কেন নিজের ভালোবাসার সম্পর্ক মেনে নিবে না,তোমাকে কোনো মতেই বিশ্বাস করানো যাচ্ছিল না তাই তুমি আদৃতের সাথে দেখা করার আগেই আমি তোমার কাছে আসি।″
″তারমানে সেদিন যে তুমি বলেছিলে ডা.আদৃত তোমাকে ভালোবাসেন সেই কলেজ চলাকালীন সময় থেকেই তাই আমাকে পাত্তা দিতেন না উনি,কিন্তু আমাকে সত্যটা বলেন নি বাচ্চা ভেবে,আমার মন ভাঙবে যাতে পড়ালেখা নষ্ট হবে আমার তাছাড়া আমার বাবার সাথে উনার বাবার বন্ধুত্বের সম্পর্কও এতে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল যেহেতু আমি আমার বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে,কিন্তু ডা.আদৃত তোমায় অনেক ভালোবাসেন,তোমাদের ব্যাপারে উনি এগুতে চান না শুধু আমার কথা ভেবে,উনি কখনও আমাকে মেনে নিবেন না আর আমার কারণে তোমাকেও কবু মেনে নিবেন তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না,এজন্য তুমি ভিক্ষা চাইতে এসেছিলে উনাকে আমার কাছে যাতে আমি নিজে থেকে তোমাদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াই,এর মানে এসব সকল কথাই বানোয়াট ছিল?তবে ওই রেকর্ডিং ওটা কি ছিল?যেটাতে ডা.আদৃত তোমাকে বলছিলেন,আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি সানিয়া,তবে আঁখি বাচ্চা মেয়ে আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমি চাই না ওর এ বয়সে মন ভাঙুক,ও উল্টা পাল্টা কিছু করে বসুক,তাই যতদিন আমি বিষয়টা ওকে বুঝিয়ে উঠতে না পারছি ততদিন আমাদের ব্যাপার আর এগুবে না।হুবহু উনার কন্ঠের রেকর্ডিং কোথা থেকে এনেছ বলো?
″আমি আর আদ্রিশ মিলে একজন ভয়েস আর্টিস্ট কে অনেক টাকা খাইয়ে আদৃতের কন্ঠস্বর শুনিয়ে এমনটা করে উঠতে পেরেছিলাম।সে লোকটা প্রায় লোকেরই আওয়াজ নকল করতে পারত।″
″শাঁ*ক*চু*ন্নি, ডা.আদৃতকে আমার বিরুদ্ধে কি বুঝিয়েছিস তোরা বল?″
″আদৃত তোমাকে এরিয়ে চলতে চলতে একসময় তোমাকে ভালোবেসে গিয়েছিল,সে তা দেরিতে হলেও বুঝতে সক্ষম হয় অবশেষে।সেদিন অনুষ্ঠান পরে তোমাকে প্রপোজ করবে ভেবেছিল,কথাটা আমি জানতাম আদৃত আমাকে আগেই বলেছিল।কিন্তু তার আগে আমি তাকে অভিনয় করে বন্ধ কক্ষে আটকে রেখেছিলাম নিজের সাথে আর ততক্ষণে তুমি ওকে ভুল ভেবে গিয়েছিলে,সেদিন অনুষ্ঠানের পর সোজা বাড়ি চলে যায় আদৃত,হয়ত নিজে অনেক ক্লান্ত ছিল আর তুমিও ভুল বোঝা থেকে ওর সাথে আর সেদিন কথা বলো নি যাতে আমাদের জন্য ভালোই হয়েছিল,আমরা সেই অল্প সময়েই তোমার মনে ভুলের পাহাড় গড়ে তুলেছিলাম,তার পরদিন আদৃত তোমাকে এক জায়গায় ডাকায় তোমাকে প্রপোজ করবে বলে কিন্তু তোমাকে জানিয়েছিল শুধু দেখা করতে চায়।ঠিক তখন আমিও ওকে তোমার আর আদ্রিশের একটা ভিডিও দেখাই,যেটাতে তুমি আদ্রিশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলে আদৃত আর আমার ব্যাপারে সবকিছু জানার পর কিন্তু ভিডিওটা আমি পিছন থেকে করেছিলাম বিদায় এমন মনে হয়েছে যে তুমি আদ্রিশকে সুখে আলিঙ্গন করছ,ভিডিওটা দেখে আদৃতের মাথায় মুহুর্তেই র*ক্ত চাপে,সেদিন যেমন তোমার অল্প হাত ধরে টান দেওয়া নিয়ে আদ্রিশের হাত ভাঙতে এসেছিল তেমনটাই ভিডিওটা দেখেও আদ্রিশকে মারতে চলে যাচ্ছিল আদৃত।
তখন আমার একটা কথায় ও থমকে দাঁড়িয়েছিল।
আঁখি তোমাকে ভালোবাসে না আদৃত,তুমি শুধু ওর মনের ভুল ছিলে বিষয়টা বুঝে যেতে ও অনেক দেরি করে ফেলেছে,ও আদ্রিশকে ভালোবাসে অবশেষে বুঝতে পেরে এখন তোমাকে নিয়ে অনুশোচনায় ভোগছে,কারণ এতদিন তোমার পিছন ঘুরঘুর করেছে তোমার চোখে না কি নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে কিন্তু সে এখন উপলব্ধি করতে পেরেছে সে তোমাকে ভালোবাসে না,কিন্তু তোমাকে অনেক সম্মান করে,তোমার মন ভাঙার শক্তি জুটিয়ে উঠতে পারছে না।
কথাগুলো শুনে ও একদমই বিশ্বাস করে নি বরং সেদিন আমি কোনো মেয়ে না হলে হয়ত প্রাণে মেরে ফেলত,তাই তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য তোমাকে সেদিন তার সামনাসামনি আনাই,আর আমার কথামতো আমার হয়ে সেদিন তুমি তাকে বলেছ যে তুমি ওকে ভালোবাসো না ও শুধু তোমার মনের ভুল ছিল,তুমি আদ্রিশকে ভালোবাসো,ও তারপরও বিশ্বাস করতে না চাইলে তুমি ওকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছ সেদিন।এটা ভেবে যে ও শুধু তোমার জন্য নিজের ভালোবাসার অসম্মান করছে।তবে এসব করে আদ্রিশ তোমাকে পেয়ে যেতে পারলেও আদৃতকে আমি নিজের করে পেতে পারি নি।ও কাউকে না জানিয়েই আমেরিকা চলে যায় হুট করে একদিন।তারপর আর যোগাযোগই রাখে নি।″
″শা*লি আজ তোকে আমি মে*রে*ই ফেলব,তোরা দুইটা মিলে আমাদের সাজানো সপ্নগুলো সব চুরমার করে দিলি,তোকে তো আমি মে*রে*ই ফেলব। ″
আঁখি এবার রেগে গিয়ে সানিয়াকে বেশ মারল ততক্ষণে সেখানে পুলিশ এসে গেল।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ আনিয়েছেন।
″ডা.আঁখি এভাবে যে কারো কেবিনে ডুকে আপনি তাকে মারধর করতে পারেন না,আপনাকে আমাদের গ্রেফতার করতে হবে।″
″যা এবার জেলের ভাত খা।″
″চুপচাপ পুলিশকে যেতে বল,এই দেখ ফোনে তোর সকল কথা রেকর্ড করেছি, বুঝতেই তো পারছিস মানুষকে ফ্রোড কেসে জেলে যাবি,আর আমার ক্ষমতা সম্পর্কেও ভালো জানিস,তোর লাইসেন্স কেন্সেল করিয়ে দিতেও সময় লাগবে না আমার।আমাকে খ্যাপাশ না,জানিসই তো আমি কি জিনিস?চলে যেতে বল পুলিশকে।″
আঁখি সানিয়ার পাশে ছিল তখন,তাকে দাঁত কটমট করে কথাগুলো বললে সানিয়া ভয় পেয়ে গেল।আঁখি যে নিজের আসল রূপে চলে এলে এক ধরনের সাইকোতে পরিণত হয় তা সে জানে,তাই আর সুযোগ না নিয়ে বিষয়টা রফাদফা করার চেষ্টা করে।
″ইন্সপেক্টর সাহেব আপনারা চলে যান,আমি আঁখির বিরুদ্ধে কোনো কে*স করছি না।″
″আপনি ভয় পেলে হবে না তো?আমরা আছি।″
″আরে আপনারা যান তো,আমার আপনাদের প্রয়োজন নেই এখন।″
অতঃপর পুলিশ চলে যায়।
″তোর টা না হয় পরে দেখব সানিয়া,আগে আদ্রিশের ভাগটা দিয়ে আসি।″
সানিয়াকে আরেকটা জোড়ালো থাপ্পড় মেরে ফ্লোরে ফেলে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে আঁখি,অতিরিক্ত রাগে তার হাত পা একরকম কাঁপছিল তখন,হাসপাতালের বাইরের একটা দোকান থেকে পানি কিনে খেয়ে নিলে রাগ দমনের সুবিধার্থে।অতঃপর আদ্রিশের উদ্দেশ্যে যেতে নিলে কল আসল আবার আদৃতের। নাম্বারটা দেখতেই বুক মোঁচড় দিয়ে গেল।যার জন্য এতো কিছু করল তার জন্যই তো কিছু করা হয়ে উঠল না আঁখির,নিজের থেকে আদৃতকেই বেশি অসহায় মনে হচ্ছে তার।যে আজ অব্দি আঁখিরই পথ চেয়ে বসে আছে,লোক কাউকে কতটা ভালোবাসলে এমন কিছুও করে যেতে পারে,হয়ত সে ভালোবাসার পরিমাপ করে উঠার সামর্থ্য আঁখির নেই।বর্তমানে এসবের কিছুই আঁখি আদৃতকে জানাতে চায় না তাই নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করে ফোন ধরল।
″কি হয়েছে ডা.আদৃত?″
″কোথায় তুমি?আসছ না কেন এতো সময় ধরে?″
″আমি এখন আসব না,জরুরি কাজ আছে।″
″তোমাকে এখনই আসতে হবে আঁখি,আমাদের হাসপাতালের বেশ পাশে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে,অনেক এমারজেন্সি, এখানে ডাক্তারদের কমতি পরেছে তুমি জলদি আসো।″
″আচ্ছা ঠিক আছে আসছি।″
আঁখির কাছে তার অনুভুতির উপরে তার দায়িত্বের অবস্থান, তাই বর্তমানে হাসপাতালেই ছোটে গেল।
অনেক খোঁজাখোঁজির পর জিসান পেল আমিরুল এর ঢাকার বাড়ির ঠিকানা,আশার আলো খোঁজে পেল সে।আমিরুলের বাড়ি অব্দি পৌঁছালে নিশ্চয়ই তাহমিনা অব্দিও সহজেই পৌঁছা যেতে পারা যাবে।
চলবে…