প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_৩৬

0
340

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৬
,
“রাগ করেছো?
” নাতো
“তাহলে অভিমান হয়েছে?
” হুম
“কতটা?
” এক সমুদ্র।

শশীর শেষের কথাটা শুনে নিঃশব্দে হেসে উঠল সমুদ্র। বিছানা নামক মাটিতে বিছিয়ে রাখা শক্ত তক্তার উপর পাতলা চাদর পাতা। সেখানে গাঁ এলিয়ে দিয়ে মাথার নিচে নিজের বাম হাত রেখে ফোনের ওপাশে হাজারো অভিমান নিয়ে বসে থাকা নিজের অর্ধাঙ্গীনির উদ্দেশ্য বলল।

“তাহলে তো আমাতে এসেই শেষ হবে। যেহেতু অভিমান এক সমুদ্র সেহেতু চাঁদ থেকে সমুদ্র অবধি এসেই থেমে যাবে। তা এই অধম কি করলে আপনার অভিমান কমবে যদি বলতেন।

“এই চারদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আর ফোন দিননি কেনো? জানেন কতটা চিন্তায় ছিলাম। একদিন দুদিন না পরপর টানা চারদিন আপনি নিখোঁজ। এভাবে আমায় কষ্ট দিতে আপনার খুব ভালো লাগে?

” ম্যাডাম মিসেস সমুদ্র আপনার বর একজন আর্মি অফিসার। সে এসি রুমে বসে কম্পিউটার চালানোর কাজ করে নাহ। রোদে পুড়ে বৃষ্টির মধ্যে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে দেশ থেকে মানুষ নামক কিছু আবর্জনা গুলোকে ছাফ করে। এই জন্য মাঝে মাঝে তাকে নেটওয়ার্ক এর বাইরেও যেতে হয়। এখন থেকে অভ্যাস করে নাও। এটা তো কিছুই নাহ কখনো কখনো এই সময়টা আরো বাড়তে পারে তখন কী করবে।

“মরেই যাবো আমি।

” এটা কি ধরনের কথা শশী। তোমাকে আসার আগে আমি কি বলে এসেছিলাম? তোমার উপর এখন অনেক দায়িত্ব এভাবে বাচ্চাদের মতো কথা বললে হবে?

“আমি কোনো দায়িত্ব কাঁধে নিতে চাই নাহ। আমি সব দায়িত্ব সব চিন্তা আপনার উপর সঁপে দিয়ে। আপনার বুকের মধ্যে লুকাতে চাই। আবার সেই উত্তাল সমুদ্রে ডুবে যেতে চাই।

” আমার বউ মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছে। কতবড় বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছে। কাছে থাকলে তো লজ্জায় নিজের মুখটাই দেখাতে চাও নাহ৷ আর এখন দূরে আছি বলে এভাবে আমায় পোড়াবে?

সমুদ্রের কথাশুনে শশীর হুঁশ ফিরলো। খানিক পূর্ব নিজের বলা কথাগুলো মনে উঠতেই লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেলো। আর কোনো কথা বড়ালো নাহ। চুপ করে ফোনটা কানে ধরে সমুদ্রের কথা বলার অপেক্ষায় থাকলো। খানিক সময় পর সমুদ্র নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বলল।

“কেউ এসেছিলো?

সমুদ্রের কথাটা শুনতেই শশীর মনে পড়ল। চারদিন পূর্বে মালবিকার বলা কথাগুলো। ওপাশে সমুদ্র কথাটা বলে শশীর জবাবের আশায় চুপ করে আছে। শশী বাম কান থেকে ফোনটা ডান কানে নিয়ে সমুদ্রের বালিশে শরীর টা এলিয়ে দিয়ে বলল।

” আসলেই বা কি আমি পরের কথায় কান দিই নাহ। আমি আমার ঘরের মানুষ কে বিশ্বাস করি। যদি আমার বিশ্বাস এতোই ঠুনকো হয় তাহলে আমি কীভাবে তার অর্ধাঙ্গীনি হলাম। বাইরের কেউ এসে কয়েকটা বাজে কথা বলে যাবে আর আমি চোখ বন্ধ করে সেটা বিশ্বাস করে নেবো এতোটাও বোকা আমি নই।

শশীর কথায় সমুদ্রের ঠোঁটের কোনায় হালকা হাসির রেশ দেখা গেলো। ফোনটা কানে চেপে পুনরায় শশীর উদ্দেশ্য দুষ্টুমীর কন্ঠে বলে উঠল।

“বাহ আমার বউতো দেখি মানুষ চিনতেও শিখে গেছে। এই জন্য তোমাকে কিছু দিতে হবে দেখছি। তবে ফোনের মধ্যে সেটা দিতে পারছি নাহ। প্রথম বার আমার কাজে ফিরে এসে আফসোস হচ্ছে কেনো এলাম। এখন যদি তুমি কাছে থাকতে না তাহলে তোমার ওই নরম নরম ঠোঁট জোড়াকে একদম লাল করে দিতাম। সাথে গলায় থাকা কালো তিলটাও। আর সবশেষে বুকের,,,

সমুদ্রের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই শশী থামিয়ে দিয়ে বলল।

” কি করছেন?

সমুদ্র বেশ বুঝতে পারলো ওর কথায় শশী লজ্জা পেয়েছে। শশীকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলতে সমুদ্র পুনরায় বলল।

“এই কথা পাল্টালে কেনো থাকতে পারছো নাহ বুঝি।

” ছিঃ আপনার কথার কী ধরণ। দিনদিন কথার এতো অধঃপতন হচ্ছে কেনো?

“কি করবো বলো বিয়ের পরেই তো এই অধঃপতনটা শুরু হয়েছে।

” কবে আসবেন?

“এখনি এই কথা বললে হবে? কেবল তো আসলাম আবার কবে যাবো সেটার ঠিক নেই। আচ্ছা শোনো এখন আর সময় নেই পরে সময় পেলে কথা বলব। আর ফোন বন্ধ পেলে চিন্তা করো নাহ। সময় হলে আমি নিজেই কল করে নেবো। মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। সবার খেয়াল রেখো আর সাথে তোমার শরীলে থাকা আমার জিনিসগুলোর ও।

কথাগুলো বলে সমুদ্র ফোন কেটে দিলো। শশী ফোনটা বুকের সাথে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ। সেদিন ওই মহিলার কথাশুনে কষ্ট হয়েছিলো। মনের মধ্যে প্রশ্নেরাও হানা দিয়েছিলো। কিন্তু পরক্ষনেই মনে আসলো বাইরের অচেনা অজানা কারোর কথায় সে তার ভালোবাসার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে নাহ। কে কি বলল তাতে কান না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় সমুদ্রের থেকে শুনলেই তো হয়।
,,,,,,,,,,,,,

“হ্যাঁ স্যার আমি আপনার কথামত শাহীন এর পিছু নিয়েছিলাম। আর তার থেকে যেটা জানতে পেরেছি সেটা যদি আপনি জানেন তাহলে আপনার মাথায় ঘুরে যাবে স্যার।

” ইমরান আমার সময় কম যেটা বলার যলদি বলো।

“স্যার শাহীন হলো মালবিকার ছেলে। মানে সতীনের ছেলে। মালবিকা নিজের সার্থের জন্য টাকার লোভ দেখিয়ে ওই চেয়ারম্যান কে বিয়ে করে। যেনো হিজলতলী গ্রামে সবার অগোচরে ওর কাজ সাড়তে পারে। তবে সবাই কানাঘুষা জানে যে চেয়ারম্যান এর দ্বিতীয় বউ আছে তবে সেটা কে এটা কেউ জানে নাহ। আর গ্রামের যারা গরীব পরিবার আছে তাদের টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েদের চাকরির কথা বলে শহরে এনে অন্য দেশে পাঁচার করে। আর সেটাও ওই চেয়ারম্যান এর সাহায্য। ওই গ্রামের পুলিশ ও এর সাথে জড়িত। মানে ওই মহিলার কোথায় কোথায় যে এমন জাল বিছানো আছে কে জানে। খুবি ভয়ংকর মেয়ে মানুষ।

ইমরান এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো। তার নিজেকে অনেক বড়কিছু মনে হচ্ছে। কতগুলো সংবাদ সে সংগ্রহ করেছে। তারতো সাংবাদিক হওয়া উচিত ছিলো। ইমরানের এসব ভাবনার মাঝেই সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল।

” এইসব কিছু আমি জানি নতুন কিছু বলো ইমরান।

সমুদ্রের এই কথাটা শুনতেই ইমরান এর মুখটা চুপসে গেলো৷ মানে ওনি যদি সবটা জানেই তাহলে আমাকে এসব করতে কোনো বলল? খামোখা কত খাটনি করে এই তথ্যগুলো যোগাড় করা লাগল।

“ইমরান তোমাকে এক কথা কতবার বলতে হয়।বললাম তো আমার সময় কম যা বলার যলদি বলো।

” ওহ হ্যাঁ। আর একটা কথা গত চারদিন আগে ওই মহিলা আপনার বাসায় গিয়েছিলো। তবে সেখানে গিয়ে কি করেছ সেটা জানি নাহ। ওনি বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আমিও গিয়েছিলাম। আন্টির থেকে শুনলাম ওনি নাকি শশী ম্যামের সাথে একা কথা বলেছে। তবে কি বলেছে সেটাও জানি নাহ। মহিলাটা যাওয়ার পর আমি সেখানে অনেকক্ষন ছিলাম। কিন্তু ম্যাম তার ঘর থেকে আর বের হয়নি।

“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে যেই কাজটা দিয়ে এসেছি সেটা করো। রাখছি এখন।

” স্যার আমার একটা প্রশ্ন ছিলো।

“বলো।

” কথা হচ্ছে আপনি জানতেন যে শাহীন আপনার গায়ে হলুদের রাতে ইচ্ছে করে ক্লাবঘরে ছিলো যেনো আপনি ওকে ধরতে পারেন। ও জানতো যে আমরা ওর খোঁজেই গিয়েছি।

“হুম।

” আর আপনি এটাও জানতেন যে শাহীন চাইছে যে আমি ওকে ফলো করি এই জন্য আপনি ওকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?

“হুম।

“তারমানে এটা দাঁড়ালো যে আপনি বুঝে গিয়েছিলেন যে শাহিন জানে যে আপনি আমাকে বলেছেন যে ওকে যেনো ফলো করি?

” হুম।

“তারমানে আপনি চেয়েছিলেন মালবিকা আর শাহীন মিলে যে প্লান করছে সেটা ওরা করবে আর আপনি সব জানা সত্বেও না জানার ভান করে ওদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। এতে ওরা ভাবছে আপনি কিছুই জানেন নাহ। অথচ আপনি সবই জানেন। আর শাহীন ও ভেবেছ আপনি কিছুই জানেন নাহ। এই জন্যও নিজের মতো সবটা করেছে আর আমি ওকে ফলো করছি সেটা ও জানতো। মানে আপনি সব জেনে বুঝে এসব করেছেন। আর শাহীন কেও ছেড়ে দিয়েছেন অথচ ওরা ভাবছে আপনি কিছুই জানেন নাহ। যেমনটা আমি ভাবছিলাম যে আপনি কিছু জানেন নাহ।

” হ্যাঁ। তোমার আর কোনো প্রশ্ন আছে? আর থাকলেও আর এই মুহুর্তে উত্তর দেবো না আমার সময় নেই।

কথাটা বলে সমুদ্র ফোন রেখে দিলো। এদিকে ইমরান হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত তার মাথা ঘুরছে। কী একটা অবস্থা এতো কিছু হয়ে গেলো আর ও ভাবছে সমুদ্র কিছু না জেনেই বোকার মতো শাহীনকে ছেড়ে দিয়েছে। অথচ তার স্যার সব জানে। মানে ওনি চোরকে বলেছে চুরি করতে আবার এদিকে বাড়ি ওয়ালাকে বলেছে সজাগ থাকতে। ওরে বাপরে মাথা ঘুরছে আমার কেউ পানি ঢালো।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here