#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৮
,
কলেজ থেকে এসে গোসল শেষ করে। ব্যালকনিতে বসে বই পড়ছিলাম। তখনি পিছন থেকে কেউ কথাটা বলল। শশী ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে জয় দাঁড়িয়ে আছে। বইটা বন্ধ করে জয়ের দিকে ঘুরে বসে মিষ্টি হেসে শশী বলল।
“সত্যিতো বড় ভুল হয়ে গেলো। বাড়িতে এমন জোয়ান শক্ত সার্মথ্য একটা ছেলে থাকতে ওনার মতো আধবুড়ো লোককে বিয়ে করা আমার মোটেও ঠিক হয়নি। সত্যিই এখন আফসোস হচ্ছে আমার।
শশীর কথায় জয় বেশ আনন্দিত হলো। ভিতরে ভিতরে ভাব বেড়ে গেলো। বাম হাত সামনে থেকে ছোটো করে কাটা চুলের উপর দিয়ে নিয়ে পিছনে টানলো। অতঃপর ভাব নিয়ে বলল।
” কিন্তু কি আর করা যাবে বলো। বিয়ে তো হয়েই গেছে। এখন তুমি ভাইয়ার বউ হয়ে গেছো। সত্যি আমাকে পেয়েও হারালে। তবে বড় ভাইয়াও অনেক হ্যান্ডসাম যদিও আমার থেকে একটু কম তবে বডি আমার থেকেও বেশি। ভাবছি বড় হলে বড় ভাইয়ার মতো বডি বানাবো। আর মেজো ভাইয়ার মতো ছঁবি আঁকা শিখবো।
“আরেহ বাবা এতোকিছু? তাহলে তো অনেক মেহনত করতে হবে সাথে পড়াশোনা টাও করতে হবে।
শশীর এই কথায় জয় বেশ বিরক্ত হলো। রুমের ভিতর গিয়ে বিছানায় বসে বলল।
” উফফ ভাইয়ার মতো তুমিও শুধু পড়ার কথা বলো। আমি আরো আসলাম তোমার সাথে গল্প করতে।
শশী উঠে দাঁড়িয়ে রুমের মধ্যে গেলো। বইটা টেবিলে রেখে জয়ের পাশে বসে কিছু বলবে তখনি নিচে থেকে শাহানারা শশীকে ডাকলো।
,,,,,,,,,,,,,
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়ল সমুদ্র। বাড়িতে কাউকে কিছুই জানাইনি শুধু শাহানারাকে ফোন করে বলেছিলো ফিরতে রাত হতে পারে। মাঝ রাস্তায় গিয়ে ইমরান কেউ সাথে নিয়েছিলো। শহরের ইট সিমেন্ট এর দালান পেরিয়ে গ্রামের ভাঙা ভাঙা রাস্তায় আসতেই রাত হয়ে গেলো। রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে ইমরান কে বলল গাড়িতে বসে থাকতে। কথামত ইমরান ও চোখ কান খোলা রেখে গাড়িতে বসে থাকল। সমুদ্র শশীকে ফোন করে বলে দেওয়ার পরে কথামত ক্লাবঘরের দিকে গেলো। তবে গ্রামে ঢুকেই ওরা আগে শাহীন এর খোঁজ নিয়েছে তবে শাহীন কে পাইনি। তারপর সমুদ্র ভাবলো এসেছে যখন শশীর সাথে দেখা করেই যাক। এই মনোভাব নিয়ে ক্লাবঘরের ওখানে যেতেই ভিতর থেকে কারো কথপোকথন শুনতে পেলো। সমুদ্র নিঃশব্দে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলো ভিতরে কারা কথা বলছে আর কি কথা বলছে।
“আব্বা তুমি এখানে আসছো কেনো এখন?
ছেলের কথায় বেশ বিরক্ত হলো চেয়ারম্যান। রাগ চেপে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
” তো আসবো নাহ। তুই জানিস সমুদ্র তোকে খুঁজতে এখানে এসেছে। আমার লোক ওর গাড়ি মোড়ের মাথায় দেখেছে। আর তুই এখানে বসে আছিস। মালবিকা আমাদের বলেছে সাবধানে থাকতে আর সমুদ্র যদি একবার জানতে পারে মালবিকার সাথে আমরাও জড়িত তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস?
“আরে আব্বা তুমি চিন্তা করো নাতো। আম্মা আমায় বলেছে এখানে লুকাতে তাইতো আমি এখানে এসেছে। আর তুমি এখন বাড়িত যাও আম্মা যদি জানে তাহলে রেগে যাবে।
” তুই আর তোর ওই আম্মা কি করছিস বলতো। আমারই ভুল হয়েছে ওই মালবিকা কে বিয়ে করে এখন প্রতিটা মিনিটে ভয়ে থাকতে হয়। না জানি কখন পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাই। এখন তো আবার ওই সমুদ্র ও সাথে যোগ হয়েছে। আচ্ছা শোন তুই সাবধানে থাকিস। আমি এখন যাচ্ছি। মালবিকা ফোন দিয়ে বলল গ্রামের রাস্তা দিয়ে নাকি নতুন মাল আসবে। শহরে ঢোকার মুখে পুলিশ পাহারায় এই জন্য আমাকে যেতে হবে। গ্রাম থেকে গাড়ি বের করতে হবে। তুই থাক।
কথাটা শেষ করে গামছাটা মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেলো চেয়ারম্যান। ওনার বেরোনোর আভাস পেয়ে সমুদ্র পাশে সরে গেলো। দরজা তখন হালকা ফাঁকা। ফাঁক দিয়ে সাবধানে উঁকি দিতেই সমুদ্র শাহীন কে দেখলো। শাহীন ফোন বের করে কাউকে কল দিলো।
“হ্যাঁ আম্মা সব আপনার কথামতোই হচ্ছে ।
” কি করতে হবে সেটা মনে আছে তো?
“একদম সব মনে আছে আম্মা। সমুদ্রের কাছে আমায় ইচ্ছে করে ধরা দিতে হবে। তারপর সমুদ্র যখন আমায় ধরবে আমি তখন না জানার অভিনয় করবো। আর সমুদ্র আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আমার মতো নিজের কাজ করবো। আর ও নিশ্চয়ই আমার উপর নজর রাখার জন্য কাউকে বলবে। আমি সমুদ্রের পুরো ধ্যান আমার উপর রাখবো আর আপনি সেই ফাঁকে আপনার কাজ করবেন। তাইতো আম্মা নাকি কোনো ভুল আছে।
” হুম সবি ঠিক আছে। আর তোমাকে এতো কথা কে বলতে বলল জানো না দেওয়াল এর ও কান আছে।
“আরে আম্মা চিন্তা নাই এখন এখানে কেউ আসবে নাহ। আর শুনলাম সমুদ্র নাকি আমারে খোঁজার জন্য গ্রামে আসছে। মোড়ের মাথায় ওর গাড়ি দাঁড় করানো।
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাখছি।
কথাশেষ করে শাহীন ফোন কেটে দিলো। পুরো কথা শোনার পর সমুদ্র ক্লাবঘর থেকে সরে এলো। ঠোঁটের কোণে তখন বাঁকা হাসি। ঘাড় কাঁত করে বা হাতে ঘাড় ডলতে ডলতে সমুদ্র বলল
“তো এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা তোমাদের কাজ করো আমি যেমন অজানা ছিলাম তেমনি থাকি।
কথাটা বলে সমুদ্র পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে ইমরান কে কল দিলো। ধুপধাপ পা ফেলে সামনে যেতে যেতে বেশ জোরে জোরেই বলল।
” হ্যাঁ ইমরান শোনো তুমি চোখ কান খোলা রেখো যে করেই হোক ওই শাহীন কে ধরতে হবে। ওকে ধরলেই ওই মহিলার পরবর্তী প্লানটা কি সেটা জানতে পারবো। আমি শশীর সাথে দেখা করেই আসছি ওকে।
কথা শেষ করে সমুদ্র ফোন কেটে পকেটে রাখল।ও জানে শাহীন ওর সবকথা শুনেছে। শাহীন সমুদ্রের গলার আওয়াজ পেয়ে প্লান মতো ঘরের মধ্যে থেকে কাশির আওয়াজ করে। সমুদ্র ও না জানার অভিনয় করে কে ওখানে। কথাটা বলে ক্লাবঘরের দরজা খোলে ভিতরে যাই তারপর ওখানে শাহীন কে হঠাৎ দেখার মতো চমকানোর ভাব করে ওকে ধরে। শাহীন ও ভয় পাওয়ার অভিনয় করলে সমুদ্র ওকে ওখানেই বেঁধে শশীর সাথে দেখা করতে যায়।
এতোক্ষণ বসে বসে সবটা ভাবছিলো সমুদ্র। খানিক সময় পর নিজে নিজেই বলল।
“ইমরান এর কথা অনুযায়ী ওই মহিলা এখন বাংলাদেশ এ নেই। তাহলে ওনি কোথায় যেতে পারে? আর ওনার পরবর্তী প্ল্যানটাই বা কী? হুম সাবধান থাকতে হবে।
কথাগুলো ভেবে সমুদ্র নিজের ছোট ফোনটা বের করলো অতঃপর কাউকে কল দিয়ে বলল।
” হ্যাঁ আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। কালকের মধ্যেই।
,,,,,,,,,,,
“ওসমান ভাই। পাকিস্তান এর সবচেয়ে বড় টেরোরিস্ট। যাকে পুলিশের পুরো টিম আর্মি সবাই খুঁজছে। আর আমি কিনা তারই সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব লাকী মনে হচ্ছে
মালবিকার কথাশুনে সামনের লোকটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। বাঁকা চোখে মালবিকা কে একবার পরোক্ষ করে নিলো। তারপর মালবিকার উদ্দেশ্য বলল।
” বাংলাদেশের মালবিকা মির্জা হঠাৎ আমার আস্তানায়। কি এমন দরকার পড়লো শুনি?
“এতোদিন ফোনেই সবকিছু হচ্ছিল। ভাবলাম এবার সামনাসামনি কিছু কথা বলি। কিন্তু আপনার এখানে আসা তো অনেক কঠিন।
মালবিকার কথাশুনে বিকট শব্দে হাসতে লাগলো ওসমান। পিছনে সরে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা ছোট বতল হাতে নিয়ে ডপারে করে তরল জাতীয় কিছু তুলল। অতঃপর বাম চোখের উপর থেকে কালো পট্টিটা সরায়ে গুনে গুনে তিন ফোঁটা ঔষধ সেখানে নিয়ে পুনরায় আগের জায়গায় বতলটা রাখতে রাখতে বলল।
” কি মনে হয় ওসমান এর সন্ধান পাওয়া এতোই সোজা? এই যে আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি চেয়েছি বলেই আপনি এখানে আসতে পেরেছেন।
চোখের উপর থেকে কালো পট্টি টা সরাতেই কাটা চোখটা বেরিয়ে আসলো। সেটা দেখেই গায়ের মধ্যে কেমন একটা করে উঠল মালবিকার তবে সেটা পাত্তা না দিয়ে বলল।
“তাহলে কাজের কথায় আসা যাক?
” হ্যাঁ চলুন তাহলে বসে কথা বলি।
,,,,,,,,,,,,,,,,,
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে শশী। সমুদ্রের সাথে কথা হয়নি আজকেও মনটা ভীষণই খারাপ তখনি জামশেদ আসলো বলল শশীকে অনেকদিন দেখেনি এই জন্য ওকে নিয়ে যাবে। আর সমুদ্র ও এখানে নেই তাই কয়েকদিন গ্রামে থেকে আসলে ভালো লাগত। কিন্তু শশীর যাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই। এখানে সমুদ্র না থাকলেও ওর সৃতি আছে যা সমুদ্রের অভাব পূরণ না করতে পারলেও কিছুটা শান্তি দেয়। আর ওখানে সেটাও নেই। আবার সমুদ্র কে না বলে কীভাবে যাবে ও। কিন্তু বাবা আর শাশুড়ির কথার উপর কোনো কথা বলতে পারলো নাহ। অগত্যা ব্যাগ গুছিয়ে যেতেই হলো। তবে জয় এর পরিক্ষা শেষ হলে শাহানারাও যাবে গিয়ে কয়দিন থেকে শশীকে নিয়ে আবার ফিরে আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে শশী ফোন বের করে ওয়েল পেপারে থাকা সমুদ্রের ছবির দিকে তাকিয়ে বলল।
“আপনি কোথায় সমুদ্র। কবে আসবেন। আর কতদিন। এতো দূরত্ব সয্য করা সত্যি বড় কঠিন।
#চলবে?