#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_৩৯
,
“আসলে তুমি করতে চাইছো টা কী? তোমার প্ল্যানটা কি?
“খুব সহজ। একটা নিবিড় পরিকল্পনা। অতঃপর ভূম।
কথাট বলে মালবিকা বাঁকা হাসলো। সাথে ওসমান ও। হাতের মদের গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল ওসমান।
“এতো পরিকল্পনা কেনো ওর বাপ চাচার মতো ওকেও উড়িয়ে দেও কাহিনি খতম।
“না ওকে এতোটা হালকা করে নিও নাহ। আসলে বাঘের বাচ্চা তো তাই বাপ কাকার থেকেও একটু বেশিই চালাক হয়েছে। চতুর বুদ্ধি ওর আমাদের একটা ভুল পদক্ষেপ পুরো খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে পারে।
” হুম তাহলে তুমি আমাকে কী করতে বলছো?
“বলবো সব বলবো তবে এখন নয় সঠিক সময়ে। তোমাকে শুধু সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
” সে না হয় থকলাম। কিন্তু বিনিময়ে আমি কি পাবো?
ওসমান এর কথায় মালবিকা বাঁকা হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারের হাতলে দুহাত রেখে কিছুটা ঝুঁকে ওসমান এর দিকে তাকিয়ে বলল।
“তোমার যেটা চাই সেটা তুমি কাজ শেষে ঠিক পেয়ে যাবে।
কথাটা বলে মালবিকা ওসমান এর দিকে তাকালো। ও ঝুঁকে থাকায় ওর বুঁকের খাঁজটা দূশ্যমান। আর সেখানেই তাকিয়ে আছে ওসমান। মালবিকা সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজেও তাকালো অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল।
” তবে টাকার সাথে সাথে তোমার জন্য আমি আরো একটি স্পেশাল জিনিস রেখেছি।
“কিহ সেটা?
মালবিকা টি টেবিল এর উপর থেকে নিজের ফোনটা তুলে নিলো। কিছুক্ষণ ফোনে কিছু একটা করে পুনরায় ফোনটা টি টেবিলে রেখে ওসমান এর দিকে সরিয়ে দিয়ে বলল।
” এটা তোমার।
ওসমান মালবিকার ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরতেই চোখমুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ফোনের স্কিনটা আলতো করে স্পর্শ করল।সেদিকে তাকিয়ে থেকে মালবিকা কে বলল।
“তোমার ডিল পাক্কা। কিন্তু এটাকে আমার চাই। ফোনেই যদি এতোটা মহনীয় হয় তাহলে সামনাসামনি কতটা সুন্দর।
ওসমান এর হাত থেকে এক টানে ফোনটা নিজের কাছে নিলো মালবিকা। অতঃপর সেও ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল।
” শশী সমুদ্রের একমাত্র দুর্বলতা। ওর স্ত্রী। কিন্তু এটাকে পেতে হলে তোমায় আগে সমুদ্র পাড় করতে হবে। আকাশের চাঁদ এর সংস্পর্শ পেতে হলে যেমন তোমাকে হাজার হাজার মাইল, আলোকবর্ষ পাড় করতে হবে। তেমনি এই চাঁদকে পেতেও তোমায় বিশাল এক সমুদ্র পাড় করতে হবে। তরপরেও যদি হয় সমুদ্র টা ভীষণ উত্তাল।
মালবিকার কথাশুনে ওসমান বাঁকা হেসে বলল।
“গোলাপ ছিঁড়তে হলে তো কাঁটাকে আগে উপ্রে ফেলতে হয়। মিষ্টি জিনিস পেতে একটু না হয় ঝাল এর সম্মুখীন হলাম। আর তাছাড়া অনায়াসে কোনো কিছু পেতে আমারও ভালো লাগে নাহ। সমুদ্র যতই উত্তাল আর গহীন হোক না কেনো। সেটা পেরিয়ে এই চাঁদ কে আমি কলুষিত করবোই। কারণ চাঁদ কলংকিত না হলে মানায় নাহ।
,,,,,,,,,,,,,
নিজের কাজ শেষ করে অনেক আগেই রুমে চলে এসেছে রোদ্র। রুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ভিতরে গেলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে পাতলা কাপড় টা সরিয়ে দিতেই ভিতর থেকে শশীর ছবিটা বেরিয়ে আসলো। যেটা রোদ্র অনেক ভালোবেসে এঁকেছিলো। বাঁমহাত টা বাড়িয়ে ছবিটা ছুঁতে গিয়ে হাত মুটো করে আবার ফিরিয়ে নিলো। শশীর হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।
“তোমাকে ছোঁয়ার অধিকার এখন আর আমার নেই। তুমি কত নিষ্ঠুর গো। আমার ভিতরটা জ্বালিয়ে কি সুন্দর করে হাসতেছো। এই তোমার একটুও কষ্ট হয় নাহ? এভাবে আমাকে পুড়িয়ে কি সুখ পাচ্ছো তুমি মেয়ে। সত্যিই মেয়ে তুমি নির্দয়, হৃদয়হীনা।
“এক পাক্ষিক ভালোবাসায় কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় নাহ। এতো কষ্ট না পেয়ে কেনো ভুলে যাচ্ছো নাহ তাকে। কেনো এভাবে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করছো।
কারো কথার আওয়াজ শুনে রোদ্র পিছনে তাকালো। লিজা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রোদ্র বৃদ্ধা আঙুলে নিজের অবাধ্য চোখের পানিটা মুছে নিষ্প্রাণ হাসি দিয়ে লিজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল।
” আরে তুমি এই সময় কি মনে করে?
“কেনো বন্ধুর বাসায় আসতে পারি না বুঝি?
” পারবে না কেনো অবশ্যই পারো। আর এখানে আসার সবচেয়ে বেশি তোমার অধিকার আছে। প্রথম যখন এখানে এই অচেনা শহরে এসেছিলাম। তখন তো তুমিই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমায় তোমার চোখে এই অচেনা শহরের সাথে পরিচয় করিয়েছো।
রোদ্রের কথাশুনে লিজা দরজা ছেড়ে ভিতরে এসে বেডে বসে বলল।
“ওহ প্লিজ এইসব কথা বলো নাহ তো। এসব শুনতে ভালো লাগে নাহ আমার।
” আচ্ছা ঠিক আছে বলবো নাহ। এখন বলো কি খাবে।
“কিচ্ছু খাবো নাহ আমি। এটা বলো জোসেফ এর সাথে তোমার কথা হয়েছে?
লিজার কথায় রোদ্র লিজার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আগের ন্যায় শশীর ছবিটায় পাতলা কাপড়টা দিতে দিতে ভাবলো। ও জানে লিজা জোসেফ কে পছন্দ করে। প্রথম যেদিন জোসেফ এর সাথে লিজাকে পরিচয় করায়ে দিয়েছে সেদিনই লিজার চোখে জোসেফ এর জন্য কিছু একটা দেখেছিলো ও। প্রেমিক তো তাই অন্য কারো মনের কথা চোখের দ্বারা পড়ে ফেলতে পারে। কিন্তু জোসেফ? ওর মনে লিজার জন্য তেমন কিছুই দেখেনি। শুধু সাধারণ আর সবার মতোই নিয়েছে লিজাকে। হয়ত লিজার অবস্থা ও খুব শীঘ্রই তার মতোই হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এটাই যে রোদ্র চেয়েও কিছু করতে পারবে নাহ। ও কীভাবে লিজাকে বলবে। লিজা তুমি জোসেফ কে ভালোবাসা বন্ধ করে দেও।
,,,,,,,,,,,
বিছানার উপর শশীর ফোনটা সমানে বেজে চলেছে। কিন্তু ধরার নামগন্ধ নেই। বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় আবার বেজে উঠছে। জোনাকি কোনো একটা কাজে রুমে এসেছিলো শশীর ফোনটা এভাবে বাজতে দেখে হাতে নিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো। শশী তখন উঠানে পেতে রাখা বাঁশের চড়াট এর উপর বসে পিঠা খেতে ব্যাস্ত। শীতের সকাল। সকাল বললে ভুল হবে বেশ বেলা হয়েছে কিন্তু কুয়াশার কারণে সূর্যের টিকিটাও দেখা যাচ্ছে নাহ। এই জন্য আপাতত রোদের ও কোনো হদিস নাই। রান্নাঘরে পারভীন শাহানারাসহ সবাই গল্প করছে আর পিঠা বানাচ্ছে। শশী নিজের সোয়েটার আরো একটু টেনে গলা ঢেকে সামনে বসা জয় এর টুপিটা টেনে কান ঢাকতে ঢাকতে বলল।
“আরে এভাবে কান বের করে রেখেছো কেনো জয়৷ ঠান্ডা লাগবে তো।
শশীর কথায় জয় এর তেমন হেলদোল দেখা গেলো নাহ। সে এখন পিঠা খেতে ব্যাস্ত। বাঁ হাতে লাল হওয়া ডাকটা ডলে আবার খেতে শুরু করলো। দুইদিন আগেই ও শাহানারার সাথে এখানে এসেছে।শহরের তুলনায় গ্রামে একটু বেশিই শীত এই জন্য আসতে না আসতেই ঠান্ডা লেগে গেছে। শশী জয়ের থেকে সরে একটা পিঠা নিয়ে কাঁমড় দিতেই জোনাকি দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
” এই আপা তোর ফোন বাজতেছে সেই কখন থেকে আমি না গেলে তো ঠিকিই পেতাম নাহ।
জোনাকির কথাশুনে শশী তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সমুদ্র কল দিয়েছে। শশী হাতের পিঠাটা রেখে ফোনটা রিসিভ করে কানে চেপে বলল।
“একটু দাঁড়ান।
কথাটা বলে চড়াট থেকে নেমে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকেই চলে গেলো। জোনাকি শশীর জায়গায় বসতে বসতে জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
” এই তোমার নাক এতো লাল কেনো? কেউ ঘুষি মেরেছে বুঝি?
“তুমি সত্যিই বোকা৷ আরে কারো সাহস আছে নাকি আমাকে মারার। আসলে আমার ঠান্ডা লেগেছে তো তাই এমন লাল হয়েছে।
জয়ের কথায় জোনাকি নিজের নাকে হাত রেখে আবার জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
” ঠান্ডাতো আমারও লাগে কই আমার নাকতো এমন লাল হয় নাহ।
“তোমার নাক লাল হবে কেনো। আসলে তুমি কালো তো এই জন্য তোমার নাক লাল হয় নাহ। আর আমি ফর্সা তো এই জন্য একটু ধরলেই আমার নাক লাল হয়ে যায়।
জয়ের কথায় জোনাকির ভীষণ রাগ হলো। ছেলেটা ওকে কালো বলেছে এই জন্য৷ কই আর সবাইতো ওকে কালো বলে নাহ৷ ওর মাও তো বলে শশী লাল ফর্সা আর জোনাকি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। শশীর থেকে সুন্দর৷ শুধু ফর্সা হলেই সুন্দর হয় নাকি। জয় জোনাকির দিকে তাকিয়ে দেখে জোনাকি রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। জয় এর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো জোনাকির দিকে তাকিয়ে বলল।
” তবে যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার নাক লাল করে দিতে পারি।
“সত্যি? কিন্তু কীভাবে?
” ম্যাজিক করে।
জয়ের কথায় এবার জোনাকি মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“আমাকে বোঁকা পেয়েছো? তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো? ওসব জাদু ফাদু কিছু নাহ। আব্বা আমায় বলেছে ওসব জাদু সত্যি হয় নাহ৷ আসলে ওসব আমাদের চোখের ভুল।
” আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে নাতো তোমার? ঠিক আছে আমার দিকে সরে আসো এখনি তেমার নাক লাল করে দিচ্ছি।
জয়ের কথায় জোনাকি সরল মনে জয়ের দিকে গেলো। তবে ও জানে এসব জাদু করে কখনোই নাক লাল করা যায় নাহ। তবুও জয় কি ম্যাজিক দেখাতে চাই সেটা দেখার জন্য গেলো। জোনাকি সরে আসতেই জয় ওকে চোখ বন্ধ করতে বলল। জয়ের কথামত জোনাকি চোখ বন্ধ করতেই। জয় জোনাকি নাকের মাথায় জোরে সরে একটা কাঁমড় দিয়ে পিঠার বাসন নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো৷ কাঁমড় দেওয়ার সাথে সাথে জোনাকি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নাক ধরে বলল।
“ওমা গো আব্বাগো আমার নাকে কাঁমড় দিয়ে রক্ত বার করে দিলো। জ্বলে গেলো গো।
,,,,,,,,,,,,
” কোথায় থাকো ফোন রেখে? কতবার কল দিয়েছি?
লেপটা পায়ের উপরে টেনে নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বেশ আরাম করে বসল শশী।
“মা পিঠা বানাচ্ছে বাইরে বসে ওটাই খাচ্ছিলাম।
“কোনো সম্যসা হচ্ছে নাতো?
” নাহ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শশী সমুদ্রের উদ্দেশ্য বলল।
“আপনি কবে আসবেন?
শশীর কথায় সমুদ্রের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলল।
“কেনো রাতে কি শীত বেশি লাগছে?
সমুদ্রের কথার মানে বুঝে পেরে শশীর গাল লাল হয়ে গেলো। লজ্জায় বেশি কিছু বলল নাহ আর। লোকটার মুখ সত্যি বড়ই অবাধ্য। মুখ খুললেই যেনো কথা নয় এক একটা বোম বের হয়।
,,,,,,,,,,
চলে গেছে আরো কয়েকটা মাস। সমুদ্রের যাওয়ার পর অনেক গুলো মাস পেরিয়ে গেছে। এই কয়মাসে খুব কমই কথা হয়েছে ওদের। মাঝে মাঝে তো কথাও হতো নাহ। সমুদ্র এক এক সময় এক এক জায়গায় থাকতো। যার দরুন নেটওয়ার্ক এর সম্যসায় পড়তে হতো। এর জন্য শশীর সমুদ্রের উপর ভীষণ অভিমান জমেছে। আজ প্রায় পাঁচদিন মতো কথা হয় নাহ। শীত পেরিয়ে গেছে। দিনের বেলায় গরম লাগলেও রাতের বেলা হালকা ঠান্ডার রেশ এখনো যেনো রয়ে গেছে। জোনাকির স্কুল বন্ধ তাই ছুটি কাটাতে শশীর কাছে এসেছে। বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে আছে শশী। চোখে হালকা ঘুম ঘুম ভাব। হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে হালকা ঘুম ভাব টাও কেটে গেলো। ওভাবে থেকেই ঘুম জড়ানো গলায় বলল।
“জোনাকি নিচে গিয়ে জয়ের সাথে খেলাকর। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে বিরক্ত করিস নাহ।
কথাটা বলেই পুনরায় চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কমরে শক্ত হাতের নরম ছোঁয়া পেতেই শশীর ঘুম উড়ে গেলো। চমকে হাতটাকে ধরে ধরফরিয়ে উঠে বসে পিছনে তাকালো।
#চলবে?