আঁধারের_তারাবাজি #অভ্রায়ীনি_ঐশি #পর্ব_৩৪/ #সমাপ্তি_পর্ব

0
466

#আঁধারের_তারাবাজি
#অভ্রায়ীনি_ঐশি
#পর্ব_৩৪/ #সমাপ্তি_পর্ব

উদ্বিগ্নতা নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করলো নভরা।দেখলো অনেকেই উপস্থিত আছে এখানে।,এই কটা দিন বাকিদের বুঝিয়ে শুনিয়ে নভের রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো।বাড়িতে কেউই যায়নি।হসপিটাল থেকে রিসোর্টের দুরত্ব ১৫ মিনিটের হাটা পথ।গাড়িতে গেলে উর্ধ্বে ৫ মিনিট।,,,তবে সেখানে নিতে পারেনি নভ আর মোয়ানকে।খাওয়া দাওয়া???সে তো দুরের ব্যপার।মোয়ানকে ধমকে জোর করে নোভা মাঝে মধ্যে দু এক লোকমা খাওয়াতে পারলেও পারলো না নভকে জল স্পর্শ করাতে।চার চারটে দিন ধরে নভ এক ফোটা পানিও খায়নি।এই নিয়ে চিন্তিত সকলেই।রুবি বার বার চেষ্টা করেছে নভকে একটু কিছু খাওয়াতে,,তবে নভ সাফ সাফ করে জানিয়ে দিয়েছে,মোমকে দেখা ছাড়া সে খাবে না কিছুই।

চারদিন ধরে মোমের কাছে যেতে দেয়নি কাউকে।নভ এইবার হারলো।জোর করেও যেতে পারলো না তার মোমের কাছে।আই সি ইউর দরজার ছোট্ট কাচের গ্লাস দিয়ে শুধু দুর থেকে দেখে গেলো তার জুলিয়েটকে।,,

—-

তন্দ্রা লেগেছে কখন জানা নেই নভের।তবে বেশ তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো একটা স্বপ্ন দেখে,,,তার মোম??,,হলুদ শাড়ী পড়িয়ে খাটিয়ায় করে নিয়ে যাচ্ছে তার মোমকে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কবরে??নাহ,,,এটা ভুল,,,এটা সত্যি হতে পারে নাহ।,

করিডোরের চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে দৌড়ালো আই সি ইউর সামনে।সামনা সামনি যেতেই দাড়িয়ে গেলো সে,,,মাত্রই দুজন ডক্টর বেরোলো সেখান থেকে।,,একজন বললো…

“সত্যিই,,আমার জীবনে এমন একের পর এক মিরাক্কেল খুব কমই দেখেছি।প্রথমে হার্টবিট জিরো থেকে ফ্লো করা,,এখনতো আমরা সবাই ভেবেছিলাম যে জ্ঞান ফেরেনি মানে কোমায় চলে গেছে।তবে এবারও আরেকটা মিরাক্কেল ঘটলো,,,পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে মাত্রই।”

কি যে শান্তিপূর্ণ কথা? অন্তর যেন জুড়িয়ে দিলো প্রত্যেকের।হাসি ফুটলো সবার মুখেই।,,,আরেকজন ডক্টর বললো….

“তবে মি.রায়ানিশ,,,পেশেন্টের যে অপারেশনটা আরো ১ মাস পরে হওয়ার কথা ছিলো,সেটা অতি দ্রুতই করতে হবে।আপনি ডক্টর থমাসের সাথে কথা বলুন।,,আমরাও যোগাযোগ করছি।,,,আপাতত আমরা পেশেন্টের ব্রেইনে এক প্রকার টেম্পোরারি স্টেইন বসিয়েছি।,এটার সাহায্যে কিছুদিন স্টেবল করবে আপনার ওয়াইফ। বাট এই কয়েকটা দিন বেশ স্ট্রাগল করতে হবে উনাকে।তাই আপনাদের সবাইকেই ঠিক হতে হবে,,,উনার জন্য হলেও নিজেদের শক্ত করতে হবে।মনে রাখবেন এখন উনার সম্পুর্ন শক্তি আপনারাই,,খেয়াল রাখবেন, কোনো ভাবেই যেন মেন্টালি প্রেসার না পরে উনার উপর।,,,আর হসপিটালেই স্টেবেল করবে এখন থেকে উনি।”

ডক্টর কথা শেষ করতেই নভ তাড়া দিয়ে বললো…

“আমি আমার মোমের কাছে যাবো?”

ডক্টর হালকা হেসে বললো…

“ঠিক আছে,এখন একটু দেখা করে আসুন।তারপর আমরা তাকে কেবিনে সিপ্ট করলে তার সাথেই থাকতে পারবেন সারাক্ষণ। ”

আর কিছুর জন্য অপেক্ষা করলো না নভ।দ্রুত পায়ে আই সি ইউর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।,,

বিছানায় শুয়ে থাকা মোমের দিকে তাকতেই তার বুকটা ধক করে উঠলো।কি অবস্থা হয়েছে এ ক দিনে?,,,

ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সে মোমের কাছে।মোমের চোখ বন্ধ। নভ কিছুক্ষণ এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো তার মোমের দিকে।চারদিন আগের মোম,আর এখনকার মোমের মাঝে বিস্তার তফাৎ।মোমের চোখ দুটো ডেবে গেছে একদম।চোখের আশপাশে কালসেটে দাগ।গালগুলোও কেমন যেন খসখসে দেখাচ্ছে। আগের পাতলা ঠোঁটটি যেন আর নেই।সেই ঠোঁট যেন পানির অভাবে শুঁকিয়ে গেছে।ফেটে ফেটে চামড়া বেরিয়ে গেছে একদম।মোমের গলার দিকের হাড় দুটো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় বিষয়টা হলো, মোমের সাধের লম্বা চুল আর নেই।যেই চুলের জন্য মোম একদিন কেঁদে কেটে একাকার করেছে,সেই লম্বা সিল্কি চুলগুলো আর নেই।কেটে ছোট ছোট করে ফেলেছে।একদম ছেলেদের মতো করে চুলগুলো কাটা।

মাথার দুপাশে কি একটা যন্ত্র লাগানো।নাম জানা নেই নভের।জানতেও চাইলো না।নাকেও লতা অক্সিজেন লাগানো।,,,

কাপা কাপা হাতটা রাখলো মোমের উষ্কখুষ্ক ছোট ছোট চুলের ভাজে।সাথে সাথেই চোখ জোড়া খুললো মোম।দৃষ্টি মিললো দুজনার।তৃষ্ণাক্ত চোখ জোড়া যেন কত কত কাল পরে প্রিয় মুখটি দেখলো।চোখের ভাষা বোঝার সাধ্য ঐ দুজন ছাড়া কারোরই নেই।

নভের চোখ টলমল করছে অশ্রুতে,তবে ঠোঁটের কোনে বিশ্ব জয়ের হাসি। আলতো মিহি স্বরে ডাকলো..

“মহ্ মোম??”.

মোম তাকিয়ে রইলো তার রোমিওটার দিকে।তার রোমিও তো মজনু হয়ে গেলো যেন।কি যে অবস্থা? ,,

নভ নিজের ডান হাতটা তুলে মোমের বাম গালে রাখলো আলতো করে।

মোম দেখলো তার প্রেমিক পুরুষটার হাত কাঁপানোর দৃশ্য। খেয়াল করলো,নভের শরীরে এখনো সেই চারদিন আগের সাদা শার্টটি। উপরের হুডিটা নেই।শার্টের ইন ও নেই, বুকের দিকে দু-তিনটা বোতাম এলোমেলো ভাবে খোলা।সমসময় জেল দিয়ে সেট করে রাখা চুল গুলোও আজ এলোমেলো।চোখের নিচে কালি জমেছে,,কতরাত ঘুমায়নি কে জানে?,,চোখ মুখও কেমন শুকনো শুকনো।,,,

মোম জানে, তার রোমিওটা মজনু হয়েছে তার জন্যই।চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো মোমের।তা দেখেই নভের ভ্রু কুুচকে গেলো।ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মোমের চোখের পানিটুকুন মুছে দিয়ে বললো..

” এই পাগলী??কাদছো কেন তুমি??কষ্ট হচ্ছে?? মাথা যন্ত্রণা করছে??বলো আমায়??”‘

মোম আস্তে করে মাথাটা দুদিকে নাড়লো।বোঝালো তার কোথাও কষ্ট হচ্ছে না।,,,,নভ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

মোম আস্তে আস্তে নিজের বাম হাতটা তুলে নিজের গালে থাকা নভের হাতের উপর রাখলো।
এই আলতো ছোয়ায় নভের বুকটা হুহু করে উঠলো।তার মোম যে কতটা অন্তরের যন্ত্রনা নিয়ে এমন ভাবে স্পর্শ করেছে তা শুধু নভই জানে।,,,,তবুও নভ হাসলো,,ফিচেল হাসি।জিজ্ঞেস করলো…

“কি হয়েছে আমার পাগলীটার??”.

মোম এবার মুখ খুললো। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো…

” খ্ খুব কষ্ট দ্ দিয়ে ফেলেছি আপনাকে, ত্ তাই না??”

এবার নভ আরেকটু ছড়িয়ে হাসলো,,

“ধুর পাগলী,,কিসের কষ্ট দিয়েছো তুমি আমায়??একটুও কষ্ট হয়নি আমার।এ্ এই যে আমি হ্যাপি??”

“ক্ কাদছেন ও ত্ তো??”

নভ থেমে গেলো,,দৃষ্টি স্থির করলো তার মোমের চোখে।এরপর নিজের হাতের উপরে থাকা মোমের হাতটা মুঠো বন্দী করলো,,,মুখ এগিয়ে নিয়ে সেই হাতের পৃষ্ঠদেশে একটা সুগভীর চুমু খেলো নভ।,,তারপর মোমের হাতটা শক্ত করে ধরে বললো..

“আমার ভাগ্যের কথা ভেবে কাঁদছি মোম।”.

কথাটার মানে বুঝলো না মোম,,ভ্রু জোড়া হালকা কুঞ্চিত করতেই নভ বললো..

” এই যে দেখো,,আমার ভাগ্য কতোটা ভালো?না হলে কি আল্লাহ তোমাকে এই আমিটার বউ বানাতো?অধিকার দিতো?তোমাকে ভালোবাসার?,,সেই খুশিতেই কাদছি মোম,,,এএটা তো সুখের কান্না। ”

মোম আলতো করে ঠোট প্রসারিত করে হাসলো,,,বললো..

“য্ যদি আ্ আমি মরে যাই?”

নভের মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে গেলো যেন।মোমের হাতটা নিজের হাতে রেখেই,বেডে বসা অবস্থাতেই মোমের বুকে আলতো করে মাথা রাখলো নভ।কাতর কন্ঠে বললো…

“চার চারটা দিন পর নিজের প্রানটা যেন ফিরে পেয়েছি মোম।এবার কি সত্যি সত্যিই একেবারের জন্য মেরে ফেলবে আমায় তুমি?”

নভের আকুতি ভরা কন্ঠ মোমকে থামিয়ে দিলো।আর কিছু বলতে পারলো না।নিজের ডান হাতটা তুলে নভের পিঠে রাখলো সে।

বেশ কিছুক্ষণ কাটলো ওভাবেই।এরপর নভ আস্তে করে উঠে শার্টের হাতায় নিজের চোখ মুখ মুছে নিলো।

“তুমি ওয়েট করো মোম।একটু পরেই তোমায় কেবিনে নিয়ে যাবো।এই বন্ধ রুমে থাকতে হবে না আর।আমি একটু পরেই আসছি,,,”

মোম জিজ্ঞেস করলো…

“ভ্ ভাইয়া কোথায়??এ্ এসেছে?”

নভ মোমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো..

“সবাই এসেছে মোম৷, মোয়ান চারদিন ধরে এখানেই আছে। তোমার আব্বু আম্মিও আছে।সবার সাথেই দেখা করবে তুমি।কেবিনে শিফট করা হোক, তারপর।হুম??”

মোম মাথা কাত করে সায় জানালো।নভও উঠে চলে যেতে লাগলো।তবে আবার দরজার কাছে গিয়েই ফিরে এলো আবার।,,,মোমের কপালে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে দিলো,,,এরপর উঠে বললো…

“আসছি ”

বলেই চলে গেলো,,,মোম হাসলো নভের এমন কান্ডে।,,,

—-
সময় দুপুর ২ টা প্রায়।,,,মোমকে সকালেই কেবিনে সিফট করা হয়েছে।সবার সাথে দেখাও হয়েছে।একটু আগে নভ তাকে নিজ হাতে খাইয়েও দিয়েছে।,,,রুবি এসেছে খাবার নিয়ে নভের জন্য।

“নে,,,এবার একটু কিছু খেয়ে নে তুই।চারটা দিন ধরে এক ফোটা জলও স্পর্শ করিস নি।তুই নিজে না ঠিক থাকলে মোমকে কি করে ঠিক রাখবি বলতো?”

এটা শুনে মোম ভ্রু কুচকে বললো..

“আ্ আপনি এতোদিন না খেয়ে রয়েছেন?”

নভ কথা ঘুরিয়ে বললো..

“ন্ না মোম,,এ্ এমন কিছুই না।”..

মোম বুঝলো নভের চালাকি,,

” এসব কেন করেন হুম??আপনার জন্যতো দেখছি আমিই সাফার করবো।”.

নভ বললো..

“হয়েছে বাবা সরি,,,এই যে আমি এখন খেয়ে নিবো।।ওকেয়,,,”..

আলতো হাসলো মোম।,,কেবিনে ঢুকলো মোয়ান আর তেজ।নভ জিজ্ঞেস করলো…

” ওদিকের কি খবর?”..

মোয়ান বললো..

“ড. থমাসের সাথে একটু আগেই কথা হয়েছে তিনি এয়ারপোর্টে পৌছে গেছেন।আশা করি কাল রাতের মধ্যে বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে।”..

তেজ দেখলো রুবি নভকে খাইয়ে দিচ্ছে লোকমা তুলে।আর নভ মোমের মাথার কাছে বসে তার চুলে বিলি কাটছে।,,এটা দেখে তেজ কোমরে হাত দিয়ে মাতা ঢুলিয়ে ঢুলিয়ে বললো…

” তুউই জানো নি মোম??তোয়ার দুঃখে এতে তো হুরা দেবদাশ ওই গেছে।এদিননা আআরে কিজ্জোরে ধাক্কা দি হালাই দিছে গো৷ আআই অওনো দুক্কাইয়ের মাজাত্তে”

মোম চোখ ছোট ছোট করে মাথা উচু করে তাকালো নভের দিকে।তা দেখে নভ বললো…

“এই,,,এভাবে তাকায় না প্লিজ।ভয় পাচ্ছি আমি”

নভের এমন দুষ্টামি মার্কা কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো মোম।সাথে বাকিরাও হাসলো।,,,
একটু পরেই নোভা এলো হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে।এসেই সেটা মোয়ানের হাতে দিয়ে বললো…

“এই যে,,এটা নিন,,,আর হসপিটালের চার তলায় রেস্ট হাউস আছে সেখানে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে গোসল করে আসুন যান।”

মোয়ান বলতে লাগলো..

“এখন…”

নোভা সাথে সাথেই ধমকে উঠলো..

“একদম কথা নয়,,,এখনই যাবেন।চার দিন ধরে গোসল তো দুরের কথা গায়ের শার্টটা পর্যন্ত চেঞ্জ করেননি।”

বলেই দুপা এগিয়ে এসে মোমের কাছে বললো..

“জানো তো কিউটিপাই,,,,তোমার টেনশনে টেনশিত হতে হতে এই আমার ভাই আর তোমার ভাই,,দুজন খাওয়ার সাথে সাথে সাওয়ারের কথাও ভুলে গেছে।কি রাবিশ মার্কা কান্ড দেখো।,,,গায়ের জামাটা পর্যন্ত চেঞ্জ করেনি এরা।”..

মোম কিছু বললো না,শুধু এক বিষাদের হাসি দিলো।রুবি বললো..

” আমার নভ বাবা একটু আগেই শাওয়ার নিয়ে এসেছে।”

নোভা তাকালো মোয়ানের দিকে…

“কি হলো??আপনি এখনো দাড়িয়ে আছেন কেন???যান???”

মোয়ান হার মানলো,,যাচ্ছি বলে রুম ত্যাগ করলো।,,

—–
রাতে সবাইকে রিসোর্টে পৌঁছে দিয়ে নভ হসপিটালে এসে মোমের কেবিনের দরজা খুলতেই দেখলো,মোম বেড থেকে নামার চেষ্টা করছে।নভ দ্রুত গিয়ে ধরলো মোমকে..

“মোম মোম,,একা একা কেন নামছো তুমি???নার্স কোথায়? ৫ মিনিটের জন্য থাকতে বলেছিলাম।কি যে করে না এরা।।”.

মোম নভকে থামিয়ে বললো..

” আরেহ,আপনি ব্যস্ত হবেন না।উনাকে আমিই যেতে বলেছি।”

“এখন নামছো কেন??”

“এ্ একটু ওয়াশরুমে যাবো।”

“আচ্ছা চলো,,আমি নিয়ে যাচ্ছি।”

নভকে ধরে ধরে মোম এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমে।মোমকে ওয়াশরুমে দিয়ে নভ দরজাটা আটকে দিয়ে বললো..

“আমি বাইরেই আছি,,,তোমার হয়ে গেলে আমায় বলো।”..

” হুম।”

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই মোম নভের সাহায্যে কোনায় থাকা বেসিনের সামনে দাড়ালো।চোখে মুখে একটু জল ছিটাবে বলে।,,,,, তবে থমকে গেলো সে সামনে থাকা আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে।

এটা কে??এটাই কি সেই মোম?যার রুপ লাবণ্যে যে কেউ মুগ্ধ হলো??নাহ,এটা তো সে নয়,,,এটা অন্য মোম,,যার দিকে তাকালেই সবাই মুখ ফিরিয়ে নিবে।

এসব ভাবনার মাঝেই নার্সটি ভেতরে ডুকে ধোয়া প্লেটটি টেবিলে রেখে নভের সামনে এসে বললো…

“আপনি কি রাতে ম্যামের সাথেই থাকবেন স্যার???না হলে আমি থাকবো??”

নভ স্বাভাবিক ভাবেই বললো..

“নাহ,,আমিই থাকবো।আপনি যেতে পারেন।”

মোম দেখলো সেই নার্সটিকে।যথেষ্ট সুন্দর সেই মেয়ে।মোম এবার দৃষ্টি দিলো নভের দিকে,,,নভ তা দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,,,, তবে মোম উত্তর না দিয়ে আবারও আয়নায় নিজের বাজে প্রতিচ্ছবি দেখলো।কুকরে কেদে উঠলো মোম। নিজের প্রতি আজ বড্ড অভিমান জমছে তার।সে নভ কে তার ভালেবাসার বিনিময়ে যে কিছুই দিতে পারলো না।।,,,

নভের তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক খুব সহজেই বিষয়টা বুঝে ফেললো।একটা নিঃশ্বাস ফেলে মোমকে নিজের দিকে ঘোরালো সে।

“এসব কি মোম??এমন কেন করছো তুমি???কি ভাবছো তুমি??আমি তোমার দৈহিক গঠন দেখে ভালোবেসেছি??যেই না সেটা একটু খারাপ হয়ে যাবে আমি তোমায় ছেড়ে দেবো??সুন্দরী মেয়েদের কাছে যাবো??এমন ভাবো তুমি আমায়?”..

মোম ছলছল চোখ তুলে তাকালো নভের দিকে…

” আ্ আমি আপনাকে ক্ কিচ্ছু দিতে পারিনি।,,,,কিচ্ছু নাহ,,”..

নভ নিজের দু হাত রাখলো মোমের খসখসে দু গালে।

“কে বলেছে তোমায়??আমি তো আমার চাওয়া থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।তোমায় পেয়েছি,সারাটাদিন তোমার সাথে থাকতে পারছি, আর কি চাই আমার??”..

থামলো না মোম,,কাঁদতেই লাগলো,,,নভ হা করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মোমের মুখটা উচু করে ধরে,নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিলো মোমের ফেটে যাওয়া,চামড়া উঠে যাওয়া ঠোঁটে।চুসে নিতে লাগলো মোমের অধর সুধা।,,মোম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

মোমকে ছেড়ে দিয়ে নভ নিজের বুকে টেনে নিলো মোমকে।

” এবার হয়েছে তো??বোঝাতে পেরেছি??তুমি আমায় অনেক কিছু দিয়েছো??তুমি যেমনই হও তুমি পুরোটাই আমার।”

“আ্ আমি ত্ তো কুৎসিত ”

“কুৎসিত বলতে কিছু হয়না মোম,, যার ভালোবাসা যতটা গভীর, তার কাছে তার প্রিয় মানুষটা ততটাই বেশি সুন্দর। তেমনি তুমিও আমার কাছে সবসময় সুন্দর।আমার সুন্দরী প্রিয়তমা।আগেও আমি তোমাতে নিজের সুখ খুজে পেতাম,,,এখনো পাচ্ছি।, আর ভবিষ্যতে তুমি যেমনই হওনা কেন,,আমি তোমাতেই আমার সুখ খুজে পাবো।বুঝলে??’

” ভালোবাসি আপনাকে,,,”

নভ চোখ বুঝলো,,,কি যে মোহময় কথা খানা,,।এই কথাট শোনার জন্যই তো এতো আকুলতা,,এতোটা প্রনয় নেশা।সেই কাঙ্ক্ষিত শব্দটিই যখন মোম তার জন্য উচ্চারন করেছে,এর মানে এই মুহুর্তে নভের চেয়ে সুখি মানুষ দুনিয়ায় আর একটাও নেই।,,,

নভও আবেশে মোমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো..

“আমিও ভালোবাসি তোমাকে,,,ভীষণ ভালোবাসি।”

————
রাতের প্রা মধ্যভাগ।,, রায়ানিশ বাড়ির ছাদে উপস্থিত ছোটরা সবাই।সবাই মিলে নানা রকমের বাজি ফোটাচ্ছে। ইচ্ছেটা নোভার।আজ যে তার হলুদ সন্ধ্যা।নানা রকম খুটিনাটি ঝামেলার পরেই নোভা তার গম্ভীর বোকাসোকা ভালোবাসার মানুষটির নামে তিন কবুল পাঠ করার সুযোগ পেয়েছে।কত যে কষ্ট হয়েছিলো মোয়ানকে রাজি করাতে,,তা নোভাই জানে।তবে এখানে শেষমেশ সবচেয়ে বেশি অবদান তার কিউটিপাইয়ের।সেই নিজের ভাইকে রাজি করিয়েছে।পরিবারের দিক থেকেও পলি ছাড়া আর কারোর কোনো আপত্তি নেই,,সবাই ভীষন খুশিই এমন আত্মীয়তায়।মোয়ানকে চোখ বন্ধ করে ভালে ছেলের পদক দেওয়া যায়।,,

হ্যা,এটা ঠিক যে মোয়ানের মুখে এখনো ভালোবাসি শব্দটি শোনেনি নোভা।তারপরেও সে খুশি।কিছু কাঙ্ক্ষিত বাণী না হয় তাদের প্রনয় পরিনতির পরেই শুনবে।,,

ছাদের কোনায় মোম দাড়িয়ে।কার্নিশে থাকা ছোট্ট মোমটাকে বারবার দেশলাই কাঠি দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা করছে।তবে বারবারই সে ব্যর্থ।,,,,

নিঃশব্দে পা ফেলে নভ এসে দাড়ালো তার পেছনে।দু দিক দিয়ে দু হাত সামনে এনে নিজেই জ্বালালো মোমবাতিটা।,নিজের নাকটা ঘষে দিলো মোমের ঘাড় সমান চুলে।

হ্যা,,,অপারেশনের পর ৪ মাস কেটে গেছে।মি.থমাস তার ক্যারিয়ার জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো সফল হয়েছে ব্রেইন ক্যান্সার নামক রোগটি কারোর শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে।,,,মোমের মাঝে এখন আর কোনো অপারগতা নেই।সে না এখন আর এমন ভয়াবহ রোগের রোগী।,,,,,,

এই চার মাসে মোমের চুল একটু বড় হয়ে ঘাড় পর্যন্ত নেমেছে।,,সেই চুলেই মুখ ডুবিয়ে নভ মাতাল কন্ঠে বললো…

“আমার প্রথম দেখা সেই হলদেটে পরী।”

কথাটা বলার যুতসই কারনও আছে।নোভার হলুদ সন্ধ্যা হিসেবে মোমও আজ আবার নিজেকে হলুদে সজ্জিত করেছে।সেই তাদের প্রথম দেখার দিনের মতো।,,,,

মোম হাসলো,,,পাশ থেকে একটা তারাবাজি তুলতে তুলতে বললো…

“আর??”

নভ মুখ তুলে মোমের কাধে থুতনি ঠেকলো। মোমের হাতের উপর নিজের হাত ধরে দুজন মিলে তারাবাজিটা ছোট্ট মোমবাতির আগুনে ধরলো।,,,

“আর আমার জুলিয়েট।”..

মোম রসিকতায় আবারও বললো..

” আর??”

“আমার বউ”

“আর??”

“আমার ভালেবাসা”

“আর?”..

” আর আমার মোমবাতি,,”

বলতে বলতেই তারাবাজিটা জ্বলে উঠলো,মুহুর্তেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশটা তারাবাজির লালছে আলোয় আলেকিত হলো।,,আলতো হাসলো মোম।,,,

আবারও আর বলতে যাবে তার আগেই নভ বললো…

“তুমিই বলো??আমি তোমার কি??”

“আপনি??”

মোম তাকালে নভের মুখ পানে,,,নভ মহাসি মুখে বললো..

“হুম??কি আমি তোমার?”

মোম দৃষ্টি দিলো জ্বলন্ত তারাবাজিটার দিকে,,,মুচকি হেসে বললো..

“আপনি আমার জীবনে,~~~#আঁধারের_তারাবাজি”~~~

++++++++++++++++++++++++++++
+++++++++অন্তিমাঙ্করী++++++++++++
++++++++++++++++++++++++++++

[সমাপ্তি টানলাম স্বল্প সময়ের কল্প #আঁধারের_তারাবাজি এর।,,,জানি না মোম আর নভকে আপনাদের কেমন লাগলো,,,তবে আমি নিজের মনের যথেষ্ট মাধুর্য মিশিয়ে তাদের দুজনকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।,, পাঠকমহল থেকে মোম-নভকে নিয়ে আজ অন্তত দুটো লাইন হলেও আশা করছি আমি। বিশেষ করে সাইলেন্ট পাঠকদের দেখতে চাইছি।,,,,সবার মতামত জানাবেন, ভালো মন্তব্য পেলে এরকম আরে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবো আমি।,, ,,,

আর গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন বিভিন্ন গ্রুপে।নিজেদের বন্ধুদেরও আমন্ত্রণ জানাবেন গল্পটি পড়ার জন্য, এই জন্যই তো পেইজে ইনভাইট অপশনটা দেওয়া আছে।,,

ভুল ত্রুটি অনেক হয়েছে জানি সবাই দয়া করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সব শেষে পাঠকমহলে এতো ধৈর্য সহকারে গল্পটি পড়ার জন্য অন্তর থেকে ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here