প্রায় আধঘন্টা হতে চললো আমি এক পায়ে ভর করে আরেক পা শূণ্যে তুলে দুহাতে কান ধরে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছি। কি মনে হচ্ছে আমি পাগল? মোটেই না। কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যেচে এভাবে এতো মানুষের সামনে নিজের মান-সম্মান বিলিয়ে দিবে না নিশ্চয়। হ্যা ঠিক আমিও নিজ ইচ্ছেতে এভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে নেই মোটেই, দাঁড়াতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছি, শুধু মাত্র সামনে থাকা সাদা বিলাইটার জন্য।
.
কিছুক্ষণ আগের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা…..
.
আমি আর রাত্রি ভার্সিটির ক্যাম্পাসের গেটে একসাথে ডান পা ফেললাম। আজ থেকে আমাদের ভার্সিটি লাইফের সূচনা। তাই দুজনই ব্যাপক এক্সাইটেড। একটা আলাদা রকমের অনুভূতি কাজ করছে মনের মধ্যে সাথে একটু ভয়ও কাজ করছে বটে। ভয়টা ভার্সিটির কিছু সিনিয়রদের নিয়ে।
.
ভাইয়া আগে থেকেই সাবধান করে দিয়েছে, যে সিনিয়ররা যা বলবে তাই করতে হবে, যা জিজ্ঞাসা করবে তার ঠিক ঠিক জবাব দিতে হবে। কোনো ভুল করলে ভাইয়া থাকলেও নাকি বাঁচাতে পারবে না। হাহ!
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো হোয়ায়? কেন এতো খাতিরদারি করতে হবে? উনাদের কি খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই নাকি? অদ্ভুৎ!
.
#In_campus
– এই এই রাত্রি ওটা ভাইয়া না? আরে হ্যা ওটা তো ভাইয়াই। একটু দাঁড়া আমি আসছি।
.
বলেই রাত্রি কে রেখে ছুট লাগালাম। পেছন থেকে ভাইয়াকে ডাক দেওয়া শুরু করলাম। কিন্তু কোনো রেসপন্স পেলাম না। ব্যাপারটা কি কানে তুলো দিয়ে রেখেছে নাকি ভাইয়া? দেখতে হচ্ছে তো। বড় বড় পায়ের কদম ফেলে ভাইয়ার পেছনে গিয়েই দিলাম পিঠে একটা কিল বসিয়ে।
.
ভাইয়া পিঠে আঘাত লাগায় বুঝতে পেরে পেছন ফিরে তাকালো। যা দেখে আমি রীতিমত শকড। ৪৪০ ভোল্টের ঝাটকাটা বোধহয় আমার কপালেই ছিল। শুধু যে ঝাটকা খাইলাম তা কিন্তু না। সাথে একদফা ক্রাশও খেয়ে ফেললাম। কোনো ছেলে বুঝি এতোটাও সুন্দর হয়? সিল্কি চুল গুলো হাল্কা বাতাসা নড়াচড়া করছে, কপাল ছুয়ে দিচ্ছে তারা পরম আবেশে। দুধে আলতা গায়ে চকলেট কালার শার্টটা কি অদ্ভুতভাবে মানিয়েছে তাকে যেন তার জন্যই এই কালারটা এতোটা ফুটে উঠেছে। ভ্রু জুগল কুঁচকে সাথে ডার্ক রেড ঠোঁটজোড়া কেমন যেন ঢেউ খেলিয়ে রয়েছে, যা তার বিরক্তির জানান দিয়ে চলেছে। আর তার সাথে চোখে কালো সানগ্লাস! উফফ! এই প্রথম আমি ভাইয়া ছাড়া আর কোনো ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়েছি।
মুখটা অটোমেটিকালি হা হয়ে গেল আমার যেন অনায়াসে একটা বড়সড় গোলগাপ্পা ঢুকে যাবে।
হঠাৎ উনার চিল্লানোতে আমি ভাবনা জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলাম।
.
– হেই ইউ, প্রবলেম কি তোমার? হাউ ডেয়ার ইউ! মারলে কেন আমায়? হোয়ায়? (রাগি গলায়)
.
– আব….আব…আ…আসলে পেছন থেকে দেখে আপনাকে আমার ভাই মনে করছিলাম। সো..সরি ভাইয়া!
.
– হোয়াট? এইটুকু একটা মেয়ে, এই বয়সেই চোখ নষ্ট করে বসে আছো? এতো মোবাইল ইউজ করলে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। বুঝেছো? ফোন কম ইউজ করো। এতটুকু বয়সে এতোগুলো রিলেশন করলে এমনই হবে।
.
এবার আমার রাগ উঠা শুরু করলো। মানেটা কি? আমাকে আব্বু ফোন কিনে দিলো ১৫ দিনও হলো না। তাতেই আমাকে শুনতে হচ্ছে আমি ফোন টিপায় চোখের মাথা খেয়ে ফেলছি! আর কি বললেন উনি? বয়ফ্রেন্ড? আরে আমার একটা ছেলে বন্ধু পর্যন্ত নেই আর উনি বয়ফ্রন্ড নিয়ে খোঁটা দিচ্ছেন? এটা তো অপরাধ!
আর আমার কি দোষ? উনি যদি সেম টু সেন আমার ভাইয়ার মতো শার্ট-প্যান্ট কিংবা হেয়ারস্টাইলই করে থাকেন? তাই পেছন থেকে দেখে ভুল করটা তো স্বাভাবিকই ছিল। এতোগুলো কথা শুনানোর তো কোনো মানেই হয় না। সরি তো বললামই। তাও কথা শুনাচ্ছেন কেন উনি? এতো রীতিমত অন্যায়। ঘোড় অন্যায়!
তাই বুকে সাহস নিয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনানোর জন্য মুখ খুললাম,
.
– এইযে মিস্টার সাদা বিলাই! আমাকে কানা বলছেন কোন সাহসে হ্যা? নিজেই তো কানার মতো সানগ্লাস পড়ে আছেন! আর আপনাকে কেই বা বলেছে সেম আমার ভাইয়ার মতো গেট আপ এ থাকতে?
.
কথাগুলো হয়তো হজম করতে পারেন নি উনি। বুক ফুলিয়ে তো উনাকে কথাগুলো বলেই ফেললাম কিন্তু উনার দিকে তাকানো মাত্রই আমার আত্মা শুকিয়ে গেল। সব হাওয়া ফুস হয়ে গেল নিমিষেই। উনি পুরো অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করেছেন। কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে, চোখ গুলো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে উনার যেন টুপ করে গিলে ফেলবেন আমাকে অনায়াসেই।
.
– ইউ চিপ গার্ল! সাহস কি করে হয় তোমার আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার? আমি কি করবো না করবো কি পড়বো না পড়বো সেটা কি তুমি ডিসাইড করে দেবে? ইউ ফুল!
.
পাশথেকে আরোও কয়েকজন এগিয়ে এলো। হয়তো উনার ফ্রেন্ডস হবে। এসেই একটা মেয়ে আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,
.
– এই মেয়ে? হোয়াটস ইওর প্রবলেম? দেখে তো মনে হচ্ছে নতুন! কোন ডিপার্টমেন্ট এ তুমি?
.
এবার আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম। হায় রে সেই সিনিয়র এর পাল্লাতেই পড়তে হলো আমাকে। এবার বেশ বুঝতে পারছি ভুল করে ফেলেছি আমি চরম ভুল। ভুল যায়গায় ভুল কথা বলাটা আমার উচিৎ হয় নি মোটেই।
এর মধ্যে সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো। পালানোরও কোনো পথ দেখতে পারছিনা। ওদিকে দূর থেকে রাত্রি উঁকি ঝুঁকি মেরে চলেছে কি হচ্ছে দেখার জন্য। আমি আপুটাকে ভয়েভয়ে উত্তর দিলাম,
.
– কে…কেমিস্ট্রি!
.
– বাহ তা এখানেও কি কেমিস্ট্রি করতে এসেছো নাকি? নীবিড় এর কি করা যায় বল তো?
.
একটা বাঁকা হাসির রেশটেনে সাদা বিলাই আই মিন কি যেন নাম বললো? ও হ্যা! নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
.
– তোমার জন্য তো স্পেশাল ট্রিটমেন্ট আছে মিস..হোয়াট?
.
– অ…অ..অনন্যা!
.
– এর আগে পিছে কিছু নেই? (পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো)
.
– না মানে আছে! আয়ানা জাহান অনন্যা!
.
উনি বাঁকা হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন আর আমি ভয়ে পেছাতে লাগালাম,
– ওওহ! মিস অনন্যা রাইট? সো মিস অনন্যা ভুল যখন করেইছো এর শাস্তি তো পেতেই হবে। না হলে তো অন্যায় হয়ে যাবে তাইনা? তো চলো যাও ওই যে বটতলা দেখতে পাচ্ছো ওখানে গিয়ে এক পা তুলে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো! (নীবিড়)
.
– মা…মানে? কি বলছেন?
.
– কেন বাংলা বুঝো না? দিব্যি বাংলায় কথা বলছো! তো বুঝতে তো প্রবলেম হওয়ার কথা না মিস। নাও গো। (চিল্লিয়ে)
.
উনার চিল্লানিতে আমার হাত থেকে ঠাস করে ফোনটা পড়ে গেল। ইশ আমার শখের মোবাইলটারে। ৩ খন্ড হয়ে পড়ে আছে অসহায় হয়ে। হয়তো বলছে, ” অনন্যা আমাকে বাঁচাও! আমি সবে জন্ম নিলাম এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা আমি। কিছুতেই না।”
আমি নিচে হেলে যেই না ফোনটা তুলতে যাবো ওমনি আরো একটা ধমক!
.
– এই মেয়ে কথা কানে যায়না? চোখের সাথে কানেরও প্রবলেম আছে নাকি? আই সেইড গো….!
.
এবার বোধহয় আমি কান্না করে ফেলবো। আমার আম্মু আব্বু তো দূর ভাইয়াও আমাকে কখনোও এভাবে বকে নি! গলা ফাটায় ভাইয়াকে ডাকতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু ভাইয়া কোথায়? আশেপাশে নেই কেন? একই ভার্সিটি তে থেকেও যদি ভাইয়ার দেখা না পাই তাও এরকম একটা বিপদের সময়, তাহলে আমার থেকে বেশী অভাগী আর কে হতে পারে?
চুপচাপ মাথা নামিয়ে বটতলায় এসে কান ধরে দাঁড়ালাম। রাত্রি হয়তো আমাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে আমার কাছে আসলো। আমার কান্না জমানো চোখ দেখে বলে উঠলো,
.
– কি রে অনন্যা? এসব কি করে হলো বলতো? তুই তো অগ্নি ভাইয়াকে দেখে ছুটলি তাহলে?
.
রাত্রির কথায় আমার কান্না থামানো দায় হয়ে পড়ছে, কাঁদোকাঁদো গলায় বলে উঠালাম,
– ওটা ভাইয়া ছিল না রে। ছিল অন্য কেউ। তুই যা এখান থেকে পরে বলবো সব।
.
রাত্রি গেল না বরং আমার ঠিক সামনের ঠায় দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদিকে নীবিড় ভাইয়া তার গ্যাং সহ এদিকেই আসছে তা দেখে রাত্রি বলে উঠলো,
.
– আমি যদি ভুল না হই তবে তুই নীবিড় ভাইয়াকে অগ্নি ভাইয়া ভেবে ভুল করেছিস তাইনা? এটা কি করলি রে অনু? নীবিড় ভাইয়া কে ভার্সিটির সবাই এক নামে চেনে। উনিই সবার লিডার বলা যায়। পড়াশুনায় যেমন টপার তেমনই র্যাগিং এও! তবে আমার জানামতে ভাইয়া মেয়েদের সাথে এমন করে না। তোর সাথে এমন কেন করলো?
.
– এই চুপ করবি তুই? দেখতে পারছিস না আমি কি অবস্থায় আছি? ঢং! আর তুই ওই সাদা বিলাইয়ের নামে গুনগান গাইছিস?
.
– হোয়াট ডিড ইউ সে? কে সাদা বিলাই?
.
পেছন থেকে নীবিড় ভাইয়ার কথা শুনে আমি আবারোও ঘাবড়ে গেলাম! আমতাআমতা করে বলে উঠলাম,
.
– কে..কে আবার? এই যে রাত্রি! এই তুই যা এখান থেকে!
.
– মিস রাত্রি? আপনার ফ্রেন্ড হয় উনি বুঝি? হতেই পারে। যাই হোক দরদ দেখানোর থাকলে পড়ে দেখায়ো। আপাতত ওর পানিশমেন্ট ওন আছে। সো ইউ ক্যান লিভ নাও।
.
রাত্রি আর কিছু বলার সাহস পেল না। মাথা নিচু করে চলে গেল।
.
🍁
.
#In_Present………..
আমি একবার ডান পা নামাচ্ছি তো একবার বাম পা। পা ব্যাথায় শেষ হয়ে যাচ্ছে! শাস্তির কি ছিঁড়ি! এক পায়ে দাঁড়াতে হবে! হাও ইরিটেটিং!
এদিকে আমি ব্যাথায় মরে যাচ্ছি আর উনি কতো মনোযোগ সহকারেই না মোবাইলে মুখ গুঁজে রয়েছেন। একটু পর পর ভ্রু জুগল কুঁচকে একপাশের ঠোট কামড়ে ধরছেন! এর থেকে বেশ বুঝতে পারছি উনি গেমস খেলছেন নিশ্চয়! আর এটাও বুঝতে পারছি উনি পাবজি নাকি ফাবজি কি একটা গেমস আছে যার জন্য সবাই পাগল ওটাই খেলছেন। কানে হেডফোন লাগিয়ে বকরবকর করে চলেছেন, কখোনও বোম ফেলাইতে বলছেন তো কখনো মার মার করে মাথা খেয়ে ফেলছেন আমার। আমি আর নিতে পারছিনা। এই মুহূর্তে উনাকে আমার পৃথিবীর সব থেকে নির্দয় মানুষ বলে মনে হচ্ছে।
.
হঠাৎ করে উনি ফোনে মুখ গুজেই বলে উঠলেন,
.
– এবার তুমি যেতে পারো! ইওর টাইম ইজ ওভার!
.
হাহ! এমন করে বলছেন যেন আমি নিজ ইচ্ছে থেকে এভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি! আর মনে হচ্ছে উনি আমার সাথে গেমস খেলছেন! যেভাবে টাইম ওভার বললেন তাতে আমার এটাই মনে হচ্ছে!
.
রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে যেতে নিলে উনি আচমকা আমার হাত টেনে ধরেন, আমি বিরক্তি নিয়ে হাতের দিকে তাকাতেই উনি আমার হাতে আমার ৩ খন্ড ফোনটাকে এক খন্ড বানিয়ে ধরিয়ে দিয়ে আমার আগেই হনহন করে চলে গেলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি একদম আহাম্মক বনে গেলাম যেন। সবই মাথার ৬ কিলোমিটার উপর দিয়ে গেল।
#চলবে…………….!
#প্রেম_আমার♥
#পর্ব- ০১♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
(রিপোস্ট! কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। পেইজে ছিলো না তাই আবারও পোস্ট করা হচ্ছে)
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
ঠাসসসসসসস……….!
.
নিজেই থাপ্পড় মেড়ে নিজেই বেকুব বনে গেলাম। কারণ আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয় স্বয়ং নীবিড় ভাইয়া! করলাম আর একটা ভুল! 😑
.
উনার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এতোটা হিংস্র লাগছে যেন হায়না ও হার মানবে। উনার রক্তিম চোখের আভা দেখে আমার রুহু কেঁপে উঠছে বারংবার। এই মুহূর্তে আমাকে এক গ্লাস কেন কয়েক বালতি পানি দিলেও খেয়ে গলা শুকায় যাবে এমন অবস্থা!
আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
.
– স…সরি….ভাইয়া আমি আ…আসলে ভেবেছিলাম…অন্য কেউ। না দেখেই…মে…মেরে দিয়েছি…!
.
উনি কিছুই বলছেনা শুধু নিজেকে শান্ত করবার চেষ্টা করে চলেছেন! এভাবে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,
.
– মেয়ে তোমার এতো সাহস আসে কোথা থেকে? তুমি সাদমান শাহরিয়ার নীবিরের গায়ে হাত তুলো? (শান্ত গলায়)
.
– ভাইয়া আসলে আমি ভেবেছিলাম আমার ওড়নাটা কেউ টেনে ধরেছে তাই পেছন ঘুরেই থাপ্পড় টা মেরে দেই। আমি খেয়াল করি নি যে আপনার বাইকে আমার ওড়নাটা বেঁধে গেছে। আই আম সো সরি ভাইয়া। (মাথা নিচু করে)
.
– সরি? মাই ফুট! সরি শব্দটা নীবিরের ডিকশনারীতে নেই। সো রেডি হয়ে নাও পানিশপেন্টের জন্য।
.
– ভাইয়া প্লিজ এমন করবেন না! আর হবে না। 🥺
.
– সাট আপ! ভার্রসিটিতে আসতে না আসতেই উড়া শুরু করে দিয়েছো! তোমার ডানা না কাটলে তো আরোও উড়বে। সো সেই রিস্ক আমি নিচ্ছি না৷ এই দুদিনে তুমি দু দুবার আমার গায়ে হাত তুলছো! গতকালেরটা নাহয় বাদই দিলাম নিজের ভাই ভেবে মেরেছো কিন্তু আজকে? না দেখেই চড় মেরে দিলে? তাও যদি এখানে অন্য কেউও হতো তাকেও তো বিনা অপরাধেই মেরে দিতে তাইনা?
আহা! এর জন্য তো তোমার কঠিন শাস্তি পাওয়া উচিৎ! নয় কি?
.
আমি আর কিছু বললাম না। চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কারণ আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি এখন শুধু সরি কেন? উনার পায়ে লুটিয়ে পড়লেও উনি আমাকে পানিশমেন্ট দিবেন। দিবেই দিবেন।
.
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন,
– এই মেয়ে যাও। আমাদের যেই পুরাতন লাইব্রেরি আছে যেটা এখন স্টোর রুম হিসেবে ইউজ হয়, ওটা রুম ক্লিন করো যাও।
.
– মা…মানে? আমি তো তেমন কিছু চিনি না এখনোও! আর সেসব পরিষ্কার করার জন্য তো লোকেরা আছেই। আমিই কেন?
.
আমার ভয় পাওয়া দেখে উনি যেন পৈশাচিক আনন্দ পেলেন। পকেটে দুহাত গুজে। স্ট্রেট হয়ে দাঁড়িয়ে সিল্কি চুল গুলো ঝাকিয়ে বলে উঠলেন,
.
– দেখুন মিস অনন্যা! আমি আপনাকে কোনো জবের অফার করছিনা। এটা আপনার পানিশমেন্ট। সো কোনো কথা না বলে ভদ্রভাবে যা শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা মাথা পেতে নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন। আর আপনাকে এতো কিছু চিনতে হবে না। যেকোনো কাউকে বলে দিলেই সে আপনাকে চিনিয়ে দেবে। আর তোমার ভাগ্য ভালো যে সাদমান শাহরিয়ার নীবিড় কোনো মেয়ের গায়ে হাত তোলে না। নাহলে এতোক্ষণে তোমার ওই সুন্দর কোমল গালে আমার হাতের ৫ আঙুলের ছাপ পড়ে যেত।
নাও গো ফাস্ট। (চেঁচিয়ে)
.
আমি আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ালাম না। গট গট করে বড় বড় পায়ে চলে আসলাম! ছিঃ এতো অপমান! শেষে আমাকে দিয়ে আয়ার কাজ করাবেন উনি? আমি অনন্যা, নিজের ঘরটা পর্যন্ত ঠিক মতো গুছাইনা সেখানে উনি আমাকে দিয়ে স্টোর রুম পরিষ্কার করাবেন! এতো মেনে নেওয়া যায় না। কিছুতেই না।
.
কিছুক্ষণ আগে রাত্রি ক্যান্টিনে কিছু কিনতে গিয়েছিল।
তাই আমি একটু ক্যাম্পাসটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। তখন একটা ছেলে এসে আমার সাথে পরিচয় করতে চায়। আমিও হেসেই নিজের পরিচয় দিয়ে নেই। যেহেতু উনি আমার সিনিয়র। এরকম টুকটাক কথা বলে চলে আসতে নিলেই নীবিড় ভাইয়ার বাইকে আমার ওড়না আটকে যায়। আর আমি তা না দেখেই ভেবে নেই কেউ ইচ্ছে করে অসভ্যতামি করছে তাই ঘুরেই সেই মানুষটার গাল বরাবর সজোড়ে চড় বসিয়ে দেই। তারপরই তো জানেনই কি হলো। আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরে আমাকে আয়া বানিয়ে দেওয়া হলো। 💔
.
রাত্রি হাতে চিপস নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস আমাকে খুজেছে। শেষে না পেয়ে হলে খুঁজা শুরু করে দিয়েছে। আর আমি একটা আপুর থেকে পুরাতন লাইব্ররীটা কোথায় তা জেনে নিয়ে হাটা দেই সেই পথে। বেশি হাটতে হয়নি যদিও কাছেই ছিলো রুমটা। তালাও খোলা! তারমানে আমার শাস্তির ব্যবস্থাটা খুব সুন্দর করেই প্লান মোতাবেক সাজিয়ে নিয়েছেন সাদা বিলাইটা! তাও এইটুকু সময়ের মধ্যে! হাও ফাস্ট!
.
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই কাশি শুরু হয়ে গেল আমার। ইশ! কতো নোংরা! এই ঘরটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিগত কয়েক মাসেও কেউ ঢুকেনি। এটা পরিষ্কার করতে আমার মিনিমাম ৫ দিন তো লাগবেই৷ জেনেশুনে এরকম একটা শাস্তি দেওয়ার কি আদৌ কোনো মানে হয়? উনি কি পাগল নাকি? ব্যাটা এলিয়েন তোর কপালে বউ জুটবে না। জুটলেও ১০০ কেজি ওজনের বউ জুটবে যে তোকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করিয়ে নেবে। দেখিস তখন কেমন লাগে।
.
এরকম হাজারটা গালি বকা দিতে দিতে মাকড়সার জাল গুলো ছাড়িয়ে নিচ্ছি তখনই রাত্রির আগমন। আমাকে দেখেই ওর হাতের চিপসগুকো ঠাস করে পড়ে গেল। অবাকের শেষ সীমায় উঠে রাত্রি বলে উঠলো,
.
– অনন্যা……..! কি করছিস তুই? এখানে কেন এসেছিস? আমি তোকে পুরো ভার্সিটি পাগলের মতো খুজেছি জানিস? আমাকে এভাবে খুঁজতে দেখে নীবিড় ভাইয়া বললো তুই এখানে। তাই ছুটে আসলাম।
.
রাত্রিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেচারি অনেক ক্লান্ত! কপাল বেয়ে ঘাম পড়ে যাচ্ছে ওর। ওই সাদা বিলাইয়ের কথা শুনে মাথায় আবারোও আগুন ধরে উঠলো। চেঁচিয়ে বলে বলে উঠলাম,
.
– তা আমি এখানে যখন ওই ব্যাটা বলতে পেরেছেন তখন উনাকেই জিজ্ঞাসা করতি আমি এখানে কেন! (রেগে)
.
– অনু! কি হয়েছে খুলে বলতো আমাকে!
.
আমি তখনকার পুরো ঘটনাটা রাত্রিকে খুকে বললাম। আমার কথা শুনে রাত্রি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে উঠলো,
– কি করেছিস তুই এটা! এমনিতেই আগের দিন নীবিড় ভাইয়াকে অগ্নি ভাইয়া ভেবে ভুল করে পিঠে কিল বসিয়ে দিয়েছিলি আর আজ তো পুরো গালেই চড় মেরে দিয়েছিস! 🤦♀
– তো কি করতাম! আমি কি জেনেশুনে করেছি নাকি? ওই লম্বু, সাদা বিলাইটার জন্যই তো ওমন হলো।
.
– Excuse Me! Who is “সাদা বিলাই?”
.
পেছন থেকে কারো গলা শুনতে পেয়ে বুকটা ধক করে উঠলো! যাহহ আজকে আমি শেষ! পুরাপুরি শেষ!৷
চলবে……………💕
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://www.facebook.com/groups/1483862165147295/?ref=share