প্রেম_আমার♥ #পার্ট-০৭,০৮♥ #Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥ .

0
220

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৭,০৮♥
#Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥
.
– আআআআআআআআ…………! আপনিইইইই?
.
-তুমিইইইইইইইই???
.
(একটু আগে আমি জেমসের “ঝাকানাকা ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলানা” গানটা ছেড়ে লাফাতে লাফাতে নেচে নেচে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছিলাম। আর বের হতেই দেখি আমার যম মানে সাদা বিলাই থুক্কু নীবিড় ভাইয়া আমাদের সোফায় বসে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কিছু একটা করছেন। আমি তো নাচতে ব্যস্ত ছিলাম ওতো না বুঝেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছি। তাছাড়া এটা নতুন কিছু না কিন্তু এই সাদা বিলাইটা যে এখানে থাকবে তা কে জানতো? উনাকে দেখেই আমি নাচ থামিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। উনি হঠাৎ করে কাউকে নেচে নেচে সামনে আসতে দেখে ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠেন।)
.
আমাদের দুজনের এরকম বাড়ি কাঁপানো চিল্লানিতে আম্মু খাবারের ট্রে হাতেই হন্তদন্ত হয়ে কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসেন। আর ভাইয়া হাতে একটা ফাইল নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।
.
আমার গায়ে ওড়না নেই দেখে এক দৌড়ে রুমে যেয়ে কোনোরকমে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে আবার ড্রয়িংরুমে চলে আসি।
.
– আপনি এখানে কি করছেন? আমাকে শাস্তি দিতে এখানেও চলে এসেছেন? আল্লাহ দড়ি ফালাও আমি আসতেছি।😣
.
– হোয়াট রাবিশ! তোমাকে শাস্তি দিতে এসছি মানে কি? আর তুমি এই বাড়িতে কেন?
.
– বারে! নিজের বাড়িতে থাকবো না তো বাইরে গড়াগড়ি খাবো নাকি?
.
আমাদের কথার মাঝে ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
– কিরে তোরা আগে থেকেই কি দুজন দুজনকে চিনতিস নাকি? ধুর আমি ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দিবো। তুই তো আমাকে শালা বলে বলে মাথাটাই খেয়ে ফেলেছিস তাই বোনকে দেখিয়ে তোর আমাকে শালা বলা বের করে দিতাম। (নীবিড়কে উদ্দেশ্য করে)
.
– কিহহ! এই বিচ্ছুটা তোর বোন? ওহ মাই গড! তাইতো বলি ওর মুখটা কার জেনো সাথে মেলে। তোর সাথে মেলে এবার বুঝছি। থাক ভাই মাফ চাইছি আর তোকে শালা বলার দুঃসাহস দেখাবো না!
.
এর মধ্যে আম্মু খাবারের ট্রেটা টেবিলে রেখে নীবিড় ভাইয়ার পাশে বসলেন।
.
– কিরে বাবুই তুই চেঁচালি কেন? আর অনু তোকে বলতাম না আমার আরেক ছেলে আছে। এইযে সেই ছেলে আমার। অগ্নির বেস্টফ্রেন্ড কম ভাই বেশী।
.
এদের কথা শুনে এবার আমার কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা। কথায় আছে না যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়! সরি সরি প্রবাদটা আমার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন হওয়া উচিৎ! লাইক “যেখানেই সাদা বিলাইয়ের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।” ভেবেছিলাম উনার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবো কিন্তু ঐ যে অনন্যার ফুটা কপাল! যার থেকে পালাবো ভাবছি সে নিজেই বাড়িতে এসে হাজির। ভাইয়াও কি আর ছেলে পায় নি বেস্টু কম ভাই বেশী বানানোর জন্যে? হায় দাইয়া!
.
আমার ভাবনার মধ্যে নীবিড় ভাইয়া বলে ওঠেন,
– মামুনি! এটা তোমার মেয়ে কি করে হতে পারে? তুমি এতো সুইট কিউট, তোমার পেট থেকে এরকম ফাজিল মেয়ে কি করে বের হতে পারে মামুনি! হাও?
.
– কেন রে কি করেছে ও তোর সাথে?
অনন্যা কি করেছিস নীবিড়ের সাথে বলতো? তুই যে দুষ্টু! ঠিক বাবুইয়ের সাথেও দুষ্টুমি করেছিস তাইনা?
.
আমি কি বলবো ভেবে না পেয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম। কিন্তু কিছু বলার আগেই বাঁধ সাজলেন নীবিড় ভাইয়া। উনি আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
.
– ও কি বলবে? আমি বলছি, মামুনি জানো সবে তিনদিন ভার্সিটিতে গিয়েছে তাতেই আমার বারো অবস্থা বানিয়ে ছেড়েছে। প্রথম দিন গিয়েই পিঠে কিল বসিয়ে দিয়েছে, আবার দ্বিতীয় দিন ভুল করে আমার গালে চড় মেড়ে দিয়েছে। আর গতকাল কি করেছে জানো? আমাকে কুকুরের দৌড়ানি খাইয়ে ছেড়েছে।
.
উনার কথা শুনে আম্মু রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন। আর ভাইয়াতো সরু চোখে ভ্রু কুচকে আমার দিকে চেয়ে রয়েছেন। সবার চাহুনী দেখে যা মনে হচ্ছে তা হলো এই ” আমি কাঠগোরায় দাঁড়িয়ে থাকা খুনের আসামী, আর যাকে খুন করেছি সে স্বয়ং ভূত হয়ে উরে এসে আমার বিরুদ্ধে শাক্ষি দিচ্ছে।”
.
আর আমি এটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি যে এখন যদি আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে একটা শব্দও উচ্চারণ করি তবে এরা আমার জ্বিব টাই কেটে দেবে তাও মানবে না যে আমি ভোলাভালা কিছু করিনি। আর ঠিক এটার সুযোগ নিয়েই উনি গড়গড় করে বলে দিলেন আমার ফল্টগুলো। অথচ নিজে যে শাস্তি হিসেবে আমাকে কান ধরে দাঁড় করে রেখেছিলেন দেন আয়া পর্যন্ত বানিয়েছিলেন তাতো বললেন না। কি সুন্দর করে নিজেকে ধোঁয়া তুলসি পাতা বানিয়ে নিলেন আর আমাকে আগাছা বানিয়ে দিলেন। এর শোধ তো আমি তুলবোই। তুলতে আমাকে হবেই।
.
আমি আম্মু আর ভাইয়াকে বুঝানোর জন্য বলে উঠলাম,
– আরে আমি তো আর ইচ্ছে করে এসব করি নি। প্রথম দিন উনি সেম ভাইয়ার গেট আপে ছিলেন। আজো তাই আছেন শুধু শার্টটা ভিন্ন। তাই চিনতে ভুল করাটা অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না। সেদিন ভুল করে পেছন থেকে উনাকে দেখে ভাইয়া ভেবে মেরেছিলাম। আর পরের দিন উনার বাইকে ওড়না আটকে গেছিলো। আমি কোনো ছেলে অসভ্যতামি করছে ভেবে না দেখেই চড় মেরে দিয়েছিলাম। আর আজ যা হলো তা তো বলার মতোই না। তোমরা জানো আমি কুকুর দেখে কি পরিমাণ ভয় পাই তাই দৌড় মেরেছিলাম আর কুকুরটা আমাকে না ধরে সাদা বি…থুক্কু নীবিড় ভাইয়াকে তাড়া করে। আমার ইচ্ছাকৃত কোনো দোষ নেই। (ইনোসেন্ট মার্কা ভাব নিয়ে।)
.
– তোকে কতবার বারণ করবো বলতো? শুধু অকাজ করে বেরাস! আগে ভালো করে দেখবি সবকিছু তারপর কোনো স্টেপ নিবি। বুঝেছিস? আর যেন এরকম কমপ্লেইন না আসে। (আম্মু)
.
বলেই নীবিড় ভাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আর ভাইয়া এদিকে মুখ টিপে হাসছে। ভাইয়ার হাসি দেখে আমি ওর পেটে হাতের কুনুই দিয়ে গুঁতো মেরে দিলাম।
.
– ওই হাসছিস কেন? (ফিসফিসিয়ে)
.
– থ্যাংক ইউ বোনু 😂।
.
– থ্যাংকস আবার কিসের জন্য? (ভ্রু নাচিয়ে)
.
– এই যে তুই নীবিড়লে কুকুরের দৌড়ানি খাওয়াইলি। আমি শুনে তখনই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম যে মেয়ে ওরে দৌড়ানি খাওয়াইছে ওরে একটা ধনিয়াবাদ দিবো। 😄 আর তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন বলতো? মিথ্যা বলছিস কেন?
.
– হ্যা আমি বলতাম আর তুই আমাকে ক্ষেপাইতি আর বকাও দিতি তাইনা? তার কোনো দরকার নাই তাই বলিনি। বান্দর ভাই কথাকার। হুহ!
.
– 😂 যাক গে শুন কাল নবীনবরণ অনুষ্ঠান আছে জানিস তো তাইনা?
.
– কিহ??? কালকে? কই আমি তো জানি না।
.
– তা জানবেন কিভাবে? অডিটোরিয়ামে তো আপনার পা পরে নি। যাই হোক। নীবিড় আসছে ওর সাথে ওসব নিয়েই ডিয়াকাস আর প্লানিং করবো। আফটার অল আমরা ভার্সিটির সিনিয়রদের মধ্যে টপারস। তা তোদের কোনো প্লানিং থাকলে ফ্রেন্ডসরা মিলে করিস কেমন? এখান খেতে বস। আমারও খিদে পেয়েছে মারাত্মক।
.
বলেই ভাইয়া আম্মুর পাশে বসে পড়লো।
– আম্মু নীবিড়কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে নাকি? আমাকেও খাইয়ে দাও।
.
– ওই সারাজীবনই তো খাস। আমি পুরো দু সপ্তাহ বাদে আসলাম। সো আজকে আমাকে খেতে দে।
.
– আরে আরে হইছে তোরা বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করিস না। আমি তোদের দুজনকেই খাওয়ায় দিচ্ছি।
.
ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আমি কেউ না। আমি যে জলজ্যান্ত একটা মানুষটা সামনে দাঁড়িয়ে আছি তাতে এদের কোনো হুশই নেই। এখন এই সাদা বিলাই আর এই সাদা বান্দরই সব নাকি? আমাকে কি ডাষ্টবিন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে নাকি? হায় খোদা! তুমি দেখো কি অবিচার টাই না হচ্ছে আমার সাথে।
.
মনে মনে কথাগুলো বলে, কান্নাকান্না ফেস বানিয়ে বলে উঠলাম,
– আমাকে কেউ ভালোবাসে না। কেউ আমারে আদর করেনা, আমি এক অভাগা নারী থুক্কু সন্তান। উহুহুহু 😭!
.
আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আম্মু বলে উঠলো,
– হইছে তোর ড্রামা? এবার আয় আজকে তিনজন কেই খাইয়ে দিবো।
.
আমি খুশিতে এক লাফ মেরে টেবিলের ওপর গিয়ে বসে পড়লাম। যেহেতু সোফায় আম্মুর এক পাশে ভাইয়া আর একপাশে সাদা বিলাই। তারপর আম্মু আমাদের তিন জনকেই নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন। ইশশ! মায়ের হাতে খাওয়ার স্বাদ টাই আলাদা। আমি যখন একা খাই তখন বেশি খেতেই পারিনা। অথচ আম্মু খাইয়ে দিলে যেন আমার পেট আর আমার পেট থাকে না। যতই খাওয়াক পেটে অটোমেটিক্যালি ঢুকে যায়।
.
.
.
চলবে…………………….💗
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-০৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
– হেই ইউ তোমাকে কতোবার বলবো That I don’t love you? কেন বোঝো না? আমি তোমাকে ভালোবাসি না। ভুলে যাও আমাকে। Just forget me damn it!
.
– ভেবে বলছো তো? সত্যিই কি আমাকে ভালোবাসো না?
.
– ইয়াহ! আমি ভেবেই বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।
.
– কিন্তু তোমার চোখ তো আলাদা কথা বলে অগ্নি!
.
– শুনো মেয়ে আমার চোখ কি বলে না বলে তা নিয়ে তোমাকে গবেষণা করতে হবে না। মেডিকেলে পড়ছো, ভালো করে স্টাডি করো। তাহলেই হবে। এন্ড ওয়ান মোর থিং, ফার্দার আমার সাথে আর দেখা করতে আসবে না ওর কল, মেসেজ এসব ও দেবে না। গট ইট? নাও গো। বাড়ি যাও নিজের।
.
– আই আম সো সরি অগ্নি, আমি যে তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না। আমি তোমাকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আমার করে নেবোই। তুমি যতই আমাকে এভোয়েড করো আমি জানি তুমি কিঞ্চিত পরিমাণে হলেও আমার প্রতি উইক। এন্ড তুমিও আমাকে ভালোবাসবে। It’s my challenge!
.
বলে নিত্য রেস্টুরেন্ট থেকে উঠে হাটা ধরলো। অগ্নি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিঁড়া শুরু করে দিয়েছে সে। এমন কিন্তু না যে অগ্নি নিত্য কে বিন্দু মাত্রও ভালোবাসে না, বরং সে ও মনে মনে নিত্যর প্রতি উইক। ও যে নিত্যকে ভালোবেসে ফেলেছে তা একটু হলেও বুঝতে পারলেও সে বুঝতে চায় না। সে তার মন কে বোঝাতে চায় যে সে নিত্যর প্রতি উইক না। কিছুতেই না।
সে চায় না তার ভালোবাসার জন্য নীবিড় আর তার বন্ধুত্ব তে ফাটল ধরুক।
.
এবার আসি নিত্য কে সেই প্রসঙ্গে। নিত্য হলো নীবিড়ের ছোট বোন। রাজশাহী মেডিকেলে ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট। নিত্য অনেক আগে থেলেই অগ্নিকে ভালোবাসে। প্রথম যেদিন নীবিড়ের সাথে অগ্নিকে দেখেছিল ঠিক সেদিন থেকেই সে অগ্নিকে মন প্রাণ সব দিয়ে ফেলেছে। এই নিয়ে সে বেশ কয়েকবার অগ্নিকে বলেছে কিন্তু প্রতিবারই অগ্নির উত্তর না বোধক! এতে অবশ্য আর নিত্যর কোনো কষ্ট নেই। কারণ কয়েকদিন যাবৎ সে লক্ষ্য করেছে যে অগ্নিও তার প্রতি কিছুটা উইক হয়ে পড়ছে। যদিও সেটা অগ্নি মুখে বলতে নারাজ তবে নিত্য তা বেশ বুঝতে পারছে। হাজার হোক মেয়েদের এই গুণটা কিন্তু খুব আছে। তারা চট করেই সামনে থাকা ব্যক্তির অঙ্গভঙ্গি দেখেই তার মনে কি চলছে বুঝে নিতে পারে।
.
আজ নীবিড়ের সাথে ফাংশনের সব কাজ করার পর নিত্য অগ্নিকে কল করে ডাকে। প্রথমে বেশ কয়েকবার মানা করার পরও নিত্য নাছরবান্দা তার একটাই কথা অগ্নি না গেলে সে রেস্টুরেন্টে বসেই থাকবে বাড়িতে যাবেনা। তাই অগ্নি একপ্রকার বাধ্য হয়েই কোনো একটা বাহানা দিয়ে বেড়িয়ে পরে নিত্যর টেক্সট করা ঠিকানায়। ওদিকে নীবিড়কে মামুনি কিছুতেই যেতে দিতে চাচ্ছে না। উনার একটাই আবদার আজ যেন নীবিড় রাতের ডিনারটাও করে যায়। তাই নীবিড় মামুনির কথার ওপর আর কিছু না বলেই থেকে যায়।
.
🍁
.
সন্ধ্যে হয়ে আসছে। ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে এখন ৬ টা বেজে ১৭ মিনিট। নীবিড় ভাইয়া এখনো ল্যাপটপে মুখ গুঁজে রয়েছেন। আমি বারবার উনার সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করছি শুধুমাত্র উনার হাবভাব বুঝার জন্য। কারণ আবার যদি শাস্তি টাস্তি দেন তাহলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর হ্যা এবার আমি চুপ থাকবোও না। যদি খারাপ বিহেভ করেন তাহলে আমিও আর চুপ থাকবো না। না না না।
.
এসব ভাবতে ভাবতে আবারোও উনার সামনে দিয়ে হেটে যেতে নিলে উনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই এক হাতের ১ টা আঙুল দুবার মুড়িয়ে আমাকে তার কাছে যেতে ইশারা করলেন। আমার বুকটা যেন মুহূর্তেই ধক করে উঠলো। কে জানে আবার কি করে। যতই হোক এটা আমাদের বাড়ি সো এখানে উনি কিছু করতে পারবেন না। তাই এতো ভয় পাওয়ার তো কোনো মানেই হয়না।
– বি স্ট্রং আনানয়্যা! ইউ ক্যান ডু ইট। (বিড়বিড় করে)
.
– এই যে মিস বিড়বিড় করা বন্ধ করে এইদিকে আসেন।
.
উনার কথায় আমি বিষম খেয়ে গেলাম যেন। উনার কি চারিদিকেই চোখ কান আছে নাকি? স্ট্রেঞ্জ! ব্যাপারটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাতত উনার কাছে যাই।
এসব ভেবেই উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
.
– সিট।
– হা
– ওয়াট হা? বসতে বলেছি তোমাকে। সোফায় বসো। (শান্ত গলায়)
.
আসলে আমি ভেবেছিলাম উনি উনার কোলে বসতে বলছেন। কারণ আমি যেভাবে দাড়িয়ে ছিলাম, হুট করে বসতে বললে তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক।
নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে উনার পাশে বসে পড়লাম।
.
– কি..কিছু বলবেন?
.
– হুম। (ল্যাপটপে টাইপ করতে করতে)
.
– তো বলুন কি বলবেন? আর দেখুন প্লিজ কালকের ওই কুত্তার দৌড়ানি নিয়ে কিছু বলবেন না। আমি আসলে অনেক ভয় পাই তাই না ভেবেই….
.
আমাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
– ওয়াট ইজ দিস? কুত্তা কি হ্যা? ল্যাংগুয়েজ ঠিক করবা। আর ভুল করার কথা বলছো তো ওটা তো তোমার স্বভাবই। প্রতিদিনই কিছুনা কিছু ভুল করা দেন সরি বলা। লেট ইট গো। এখন কথা হচ্ছে তোমার ডিপার্টমেন্ট থেকে যেকোনো একজনকে স্টেজে স্পিচ দিতে হবে ভার্সিটি সম্পর্কে। এন্ড আই থিংক ইউ ক্যান হ্যাভ দ্য চান্স। যেহেতু ঝগড়া করতে মুখ ভালোই চলে তোমার আশা করি ইজিলি স্পিচ দিতে পারবা। ওকে?
আর এই যে এটা তোমার স্ক্রিপ্ট! (একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে) এটার ডায়ালগ গুলো বলবা। এন্ড দেন তোমার এই কয়দিনে কি ধরণের এক্সপেরিয়েন্স হলো তা তুলে ধরবা। লাইক তোমাদের টিচার্স, ক্যাম্পাস, ফ্রেন্ডস এন্ড ডিসিপ্লিনস এসব সম্পর্কে তুলে ধরবা। ওকে? এখন তুমি আসতে পারো।
.
উনার কথাবার্তা শুনে আমি যেন সপ্তম আকাশ থেকে দুম করে পড়ে গেলাম। উনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন আমি কোনো জবের জন্য জোড়াজুড়ি করছি আর উনি আমাকে দয়া দেখি জবটা দিয়ে দিলেন। হাহা! কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। কারণ আমার এই কাজটা বরাবরই ভালো লাগে। আগে কলেজে থাকতে আমাকেই যেকোনো বক্তব্য দেওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হতো কারণ এটা আমি খুব ভালো করেই পারি। কিন্তু এখন ভাববার বিষয় হচ্ছে আমি বক্তব্যে বলবোটা কি?
এটা বলবো নাকি যে “প্রথম দিনই আমার একটা ভুলের জন্য কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেকেন্ড দিন আরোও একটা ভুলের জন্য ঝাড়ুদারনি হয়ে ছিলাম, আর তৃতীয় দিন সিনিয়রকে কুকুরের দৌড়ানি খাইয়েছিলাম!”
.
কথাগুলো ভাবতেই নিজের অজান্তে হুহা করে হেসে উঠলাম, আমার হাসি শুনে সাদা বিলাই ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন,
.
– এতোই যখন হাসি পাচ্ছে তাহলে নিজের ঘরে গিয়ে হাসো। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। নাহলে কুকুরের তাড়া খাওয়ানোর পানিশমেন্ট টা মাফ না করে সুদে আসলে উসুল করে নিবো। সো কিপ কোয়াইট। এন্ড লিভ নাও।
.
উনার কথা শুনে পুরো মেজাজটাই বিগড়ে গেল। নিজেকে যে কি ভাবেন উনি আল্লাহ মালুম! অদ্ভুদ ব্যাপার এতোগুলো কথা বললেন অথচ একটা বারের জন্যেও আমার দিকে তাকান নি উনি। ভাব! যত্তসব! রেগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে উঠে দাঁড়ালাম। তখনই বেল বেজে উঠলো।
আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি ভাইয়া মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু জিজ্ঞাস করবো তার আগেই আমাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে গেল।
.
– অগ্নি…! শালা এতো দেরী হলো কেন তোর ফিরতে? জানিস কখন থেকে প্রজেক্টের ওপর কাজ করছি। মরার কাজ শেষই হচ্ছেনা।
(অগ্নির মুখ দেখে) কিরে তোর মুখ এতো শুকনো লাগছে কেন?
.
ততক্ষণে আম্মু আব্বুও ঘর থেকে বেল বাজার আওয়াজ পেয়ে বেড়িয়ে এলেন।
– কিরে ভাইয়া? তোর কি হয়েছে?
– বাবাই শরীর ঠিক আছে? (আম্মু)
.
– কিছু না ঠিক আছি আমি। জাস্ট একটু টায়ার্ড লাগছে। দ্যাটস ইট। তোমরা থাকো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি তাহলে বেটার ফিল হবে।
.
নীবিড় ভাইয়া কিছু একটা ভেবে বলে উঠলেন,
– আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর দেখতেছি।
.
কেউ আর কথা বাড়ালোনা। ভাইয়া ফ্রেশ হতে চলে গেল।
– হ্যা গো কি হলো বলো তো ছেলেটার। ও যতই টায়ার্ড থাক কখনোও এভাবে মুড অফ করে থাকে না। সবসময় হেসে খেলে বেড়ানো ছেলেটা এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কেন? (আম্মু)
.
– সেটা তো আমিও ভাবছি। হয়তো কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশড। (আব্বু)
.
– মামুনি, বাপী তোমরা চিন্তা করো না ওকে আমি দেখে নিবো। ওকে আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমরা রিল্যাক্স থাকো।
.
নীবিড় ভাইয়ার কথা শুনে আম্মু আব্বু অনেকটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলেন যেন। আম্মু মুচকি হেসে কিচেনে গেলেন। ডিনারের ব্যাবস্থা করতে।
.
রাত ৯ টা বেজে ৪০ মিনিট,
সবাই ডায়ানিং টেবিলে বসে আপন মনে খাচ্ছি। সবার মাঝেই এখম পিনপতন নীরবতা বিরাজমান। মাঝে মাঝে প্লেট, গ্লাস, চামচ এসবের টুং টাং আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।
নীরবতা ভেঙে নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
.
– মামুনি আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি এখন আসছি। আর অগ্নি ঠিক সকাল ৭ টার মধ্যে ফাংশন এট্যেন্ট করবি। মামুনি ও না উঠলে লাথি মেরে উঠাবা। ওকে?
.
– আচ্ছা বাবুই। তুই এখন যেতে পারবি তো? থেকে যা নাহয়?
.
– না মামুনি। বাসায় বোন আছে। রাগ করবে।
.
বলেই উনি উঠে অগ্নি ভাইয়ার কাধে একটা কিল মেরে চলে গেলেন। আর আমরা সবাই উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
.
.
চলবে………………….❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here