প্রেম_আমার♥ #পার্ট-১৩,১৪♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ .

0
315

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১৩,১৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
– আম্মুউউউ আমার কোমড়টা গেল গো! আমি এই বয়সেই কোমড় ভাঙ্গা হতে চাইনা আম্মুউউ! উহু উহু!
.
– এই মেয়ে দেখে শুনে চলতে পারোনা? হুট হাট করে ঝড়ের মতো এসে আমার সাথেই তোমার ধাক্কা খেতে হয় তোমার? চোখ কি পকেটে খুলে রাখো নাকি? (ধমক দিয়ে)
.
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটার ধমক খেয়ে আমার বুকটা ধুক করে উঠলো। পেছন ঘুরে দৌড়োতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে এতোক্ষণ কোমড়ের ব্যাথায় চোখ বন্ধ রেখেই কান্না করে যাচ্ছিলাম। কার সাথে ধাক্কা খেয়েছি তাও দেখিনি। ওরে রে অনন্যারে…! তোর ফাটা কপালে শুধু সাদা বিলাই ই ঘুরঘুর করে রে…..!
.
আমি চোখ পিটপিট করে খুলে উপরে তাকাতেই দেখি উনি ভাবলেশহীন ভাবে পকেটে হাত গুঁজে আছেন। যেনো আমি পড়ে গেছি তাতে তার কোনো যায় ই আসে না। আর আসার কথাও না ওতো সুন্দর গার্ল ফেন্ড থাকতে আমার ওপর দরদ দেখাবে নাকি?
এমা ছিঃ ছিঃ আমি আমার সাথে আর কারো তুলনা করছি কেনো?
এসব বসে বসে ভাবতেই আরেক ধমক।
.
– এখনোও বসে আছো কেনো? স্টান্ড আপ কুইক! (চেঁচিয়ে)
.
আমার কোমড়ে ব্যথা করছে ভীষণ। সাথে পায়েও চোট লাগছে। এই মানুষটা কি বুঝতে পারছেনা? অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে কোলে করে উঠিয়ে নিতো।
আমি অসহায় ফেস বানিয়ে ঠোট উল্টে উনাকে বলে উঠলাম,
.
– ব্যাথা পাইছি, উঠতে পারছিনা! 😢
.
ঠিক তখনই রাত্রি হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।
– এই তুই পড়ে গেলি কিভাবে?
.
আমি হাতের ইশারায় সাদা বিলাইয়ের দিকে দেখিয়ে দিলাম যার মানে আমি এই লম্বু সাদা পিলারের সাথে ধাক্কা খেয়েছি।
রাত্রি আমার ইশারায় নীবিড় ভাইয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে একটা জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে আমাকে টেনে তুলতে উদ্দ্যত হওয়া মাত্রই আরেক ধমক।
.
– খবরধার ওকে তুলবে না। ও নিজে থেকেই উঠুক। সব সময় অন্যের ওপর ডিপেন্ডেড হওয়া ঠিক নয় এটা ওর বোঝ উচিৎ।
.
রাত্রি উনার ধমক খেয়ে চুপসে গেল। ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– অনু সোনা, উঠ! বেশি লাগে নি তো।
.
এখন নিজেকে একটা ছন্নছাড়া বেড়ালের থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না আমার। কি অবস্থা! এতো খারাপ দিনও আসবে আমার! ভার্সিটির সবাই আমাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে। ছিঃ কি একটা অবস্থা! ব্যাথা পা আর কোমড় নিয়ে শেষ মেশ নিজেকেই উঠতে হলো। আমাকে উঠতে দেখে উনি বাঁকা হেসে রাত্রিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
.
– হেই রাত্রি সি হার, একাই উঠতে পারলো অথচ এতোক্ষণ ড্রামা করছিলো। হাহ!
(আমার দিকে তাকিয়ে) এন্ড ইউ ফার্দার এসব ন্যাকামো আমার সাথে করতে এসো না। অগ্নির বোন বলে যে তোমার সাত খুন মাফ করে দেবো তা ভেবো না।
.
বলেই উলটো দিকে হাটা দিলেন উনি। এদিকে আমার মেজাজ হাই লেভেলে উঠে গিয়েছে। কি ভাবেন টা কি উনি নিজেকে? লাটসাহেব! যত্তসব!
আর রাত্রিও উনার ভয়ে আমাকে তুললো না। হাও কুড শি!
আমি রেগে মেগে রাত্রিকে চোখ রাঙিয়ে ক্লাসের দিকে হাটা ধরলাম। রাত্রি আমার কাছে এসে আমাকে ধরতে নিলেই এক হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলাম,
.
– যখন প্রয়োজন ছিল তখন তো ধরিস নি। এখন আলগা পিরিত দেখাতে হবে না। দূরে যা।
.
বলেই ধীর পায়ে হেটে হেটে ক্লাসে গেলাম। রাত্রি পেছন পেছন আসে নি। হয়তো হার্ট হইছে অনেক। আমি পেছন ফিরে তাকালে হয়তো ওকে আগের জায়গাতেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে অশ্রু মাখা চোখে দেখতে পেতাম। কিন্তু দেখি নি। ওর ও একটা শিক্ষা পাওয়া উচিৎ! নীবিড় ভাইয়ার ভয়ে আমাকে উপেক্ষা করেছে ও। এতো সহজে কি করে মাফ করে দেবো?
.
🍂
.
ক্লাসগুলো কোনোরকমে শেষ করলাম। স্যার বেড়িয়ে যাওয়া মাত্রই ক্লাসে একটা গোল মিটিং বসে গেলো, যার মেইন আলোচনার বিষয় হলো “নীবিড় ভাইয়ার গার্ল ফ্রেন্ড”!
একটু ভালো করে শুনেই বুঝতে পারলাম এখানে শুধু ক্লাসের স্টুডেন্টস না, পুরো ভার্সিটি জুড়েই গতো ২ ঘন্টার মধ্যে নিউজটা ছড়িয়ে গিয়েছে। আর এদিকে আমি ঘামা শুরু করে দিয়েছি। কেউ জানুক বা না জানুক আমি সহ ওই মেয়েগুলো তো জানে এই নিউজের প্রচারক আমি।
আর এটাও বেশ বুঝতে পারছি যে ভার্সিটির কেউই তার গার্ল ফ্রেন্ড সম্পর্কে অবগত ছিলো না। কিন্তু উনি তো ফেসবুকে ছবি পর্যন্ত দিয়ে রাখছে তাহলে এরা কেউই জানে না কেনো? হুয়াই?
.
লুকিয়ে লুকিয়ে ক্যাম্পাসের একটা কোণায় পাইচারী করছি। উদ্দেশ্য সাদা বিলাইয়ের থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা। তার সামনে ধরা পড়া চলবে না কোনো মতেই। অনেকক্ষণ যাবৎ উঁকিঝুঁকি মেরেও সাদা বিলাইকে দেখতে না পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ালাম।
কিন্তু হুট করে ঝড়ের গতিতে কেউ আমার মুখ চেপে ধরে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে গেল। আমি ছোটাছুটির ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে লাগলাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না। মানুষটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রুমটায় কি বিদঘুটে অন্ধকার। কিছু দেখবার জো নেই। জানালা গুলোও বন্ধ। আমি কাঁপাকাঁপা গলায় অচেনা মানুষটিকে বলে উঠলাম,
.
– কে…কে….কে আপনি? আ…আমাকে এখানে এনে দরজা লাগিয়েছেন কেনো? আমাকে যেতে দিন..!
.
লোকটা কোনো জবাব দিলো না। উনাকে দেখতে না পারলেও বেশ বুঝতে পারছি উনি আমার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। উনার গরম নিঃশ্বাস সোজা আমার গলায় পড়ছে। আমি সরে আসতে নিলে লোকটা আমার দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে।
আমি ভয়ে আঁতকে উঠে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
.
– দে…দে…দেখুন আমাকে ছেড়ে দিন। কি…করেছি আমি? আমাকে এভাবে এখানে এনেছেন কেন। দূরে যান। প্লিজ আমি বাসায় যাবো।
.
এবার লোকটা মুখ খুললো আমার বাহু ঝাঁকিয়ে একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলো,
– কি করেছো? কি করোনি তাই বলো। প্রবলেম কি তোমার হ্যা? আমার গার্ল ফ্রেন্ড কোথা থেকে বানালে তুমি?
.
উনার ভয়েজ শুনে আমি ক্লিয়ার উনি সাদা বিলাই ছাড়া আর কেউ নন। ভয়ে আমার প্রাণপাখি যেনো উড়ে দৌড় দিবে এমন অবস্থা। আচ্ছা উনি কি করে জানলো যে আমি এই কথাটা ফাটাইছি?
আমি তা জানার জন্য আমতা আমতা করে উনাকে বলে উঠলাম,
.
– আ..আ…আপনার গফ আছে শুনে আমিও সারপ্রাইজড হয়েছি ভাইয়া! কিন্তু আপনি আমাকে কেনো আস্ক করছেন?
.
– এই নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাইনা? তুমি কি ভাবলে তুমি ফাটায় বেড়াবা আর আমি জানবো না? তাছাড়া তোমার মতো এটা আহাম্মক ছাড়া কে আছে যে আমার গফ বানায় দিয়েছে।
.
– মা…মানে…? আপনি তো নিজেই ফেবুতে কভার আপ দিছেন আপনার গফের সাথে।
.
উনি এবার প্রচন্ডে রেগে আমার পাশের দেয়ালে স্বজোড়ে ঘুষি মারলেন। যাতে আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। এই বুঝি কান্না করে দেবো এমন অবস্থা!
.
– এই মেয়ে তুমি কভার পিক দেখলা আর ক্যাপশনটা দেখলা না? হাউ কুড ইউ? এতোটা ফুল কেউ হতে পারে? আরে ওটা বোন আমার! নিত্য! বোনকে শেষমেশ গার্ল ফেন্ড বানিয়ে দিলে? ইউ স্টুপিড! (চেঁচিয়ে)
.
– মা..মা…মানে? ওটা আপনার বোন ছিলো? আস্তাগফিরুল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ! হায় আল্লাহ! সরি সরি গালতি সে মিসটেক হো গেয়া!
.
– সরি? হোয়াট সরি? জানে ভার্সিটিতে তোমার এই ফাউল নিউজে হাংগামা শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথাও বেরোতে পারছিনা আমি। সবাই একের পর এক কোয়েশ্চেন করে যাচ্ছে যে “কবে থেকে এসব! কোথাকার মেয়ে” ব্লা ব্লা!
এটা তোমার ফল্ট সো তুমি সব ঠিক করবে। যাও যাদের প্রথমে বলছিলা আমার জিএফ আছে তাদের গিয়ে বলো যে তুমি যা বলছো ভুল বলছো। তারপর দেখতেছি কি শাস্তি দেওয়া যায়।
.
– মা…মানে? আরোও শাস্তি দিবেন?
.
– অভিয়েসলি! নাও গো! (চেঁচিয়ে)
.
উনার ধমক খেয়ে আমার রুহু বের হয়ে আসার উপক্রম! আমি অন্ধকারে কোনোরকমে হাতিয়ে গেট খুলে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলাম। তবে ভাগ্যটা বরই ভালো তখনকার মেয়েগুলোর মধ্যে একটা আপু সামনে কার যেনো সাথে কথা বলছে। আমি দৌড়ে গিয়ে আপুটার সামনে হাঁপাতে লাগলাম। আমাকে দেখে ফোনের লাইন কেটে বলে উঠলেন,
.
– এইতো তোমাকেই তো খুঁজছিলাম আমরা! হ্যা এবার বলো নীবিড়ের গফ কে?
.
আমি মুখ কাচুমাচু করে দুহাতের আঙুল খোটাতে খোঁটাতে বলে উঠলাম,
– আ..আপু..! আমি সরি! আসলে আমি উনার বোনকে গফ ভেবে আমার বেস্টুকে বলতে গেছিলাম। আর আপনারা শুনে ফেলেছেন।
.
আমার ধারণা মতে মেয়েটার আমাকে ধমক দেওয়ার কথা অথচ আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
– এই তুমি আমাকে চিন্তা মুক্ত করলে! উফফফ কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম আমি! থ্যাংকস! আর হুম এরকম ভুল নিউজ শুনিয়ে হার্ট ফেইল করায়ো না বুঝলে।
.
বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছুট লাগালেন। ব্যাপারটা পুরোপুরি আমার মাথার ওপর দিয়ে গেল। যাক বাবা! ভাবলাম কি আর হলো কি! তবে এটুকু বুঝে গেছি আগের ভুয়া নিউজটার মতো এটাও এই মেয়ে লিক করে পুরো ভার্সিটি ছড়িয়ে দিবে। দ্যাট মিনস আমার কাজ শেষ।
অবশেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাটা দিলাম রাত্রির খোঁজে পুরো ২ ঘন্টা হয়ে গেছে এর থেকে বেশি সময় ওর ওপর রাগ করে থাকতে পারবোনা আমি।
.
.
.
চলবে………………………💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
– অনন্যা, অগ্নি…! কোথায় তোরা? এসে দেখ কারা এসেছে। (চেঁচিয়ে)
আরে তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ভেতরে এসে বস। আমি তোদের জন্য শরবত বানিয়ে আনছি! ইশ ঘেমে গেছিস দুজনেই!
.
আমি চুল মুছতে মুছতে নামছি, একটু আগেই শাওয়ার নিলাম। আর আমার ঘুম কাতুরে গুনোধর ভাইয়া কেবল ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে করতেই বের হচ্ছে! দুজনে ঘর থেকে বেড়িয়ে একে অপরকে ভেংচি কেটে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম।
.
সোফায় বসে থাকা দুজনকে দেখে আমার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম! আমি দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম লজ্জায়। ছি ছি আমি এদের গফ বফ বানিয়ে দিয়েছিলাম! ইশশ কিভাবে দাঁড়াবো ওদের সামনে?
নীবিড় ভাইয়া এক ধ্যানে ফোনে মুখ গুঁজে রয়েছে আর নিত্য আপু এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছেন।
আমি এভাবে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছি দেখে নিত্য আপু বলে উঠলেন,
.
– এমা, অনন্যা না তুমি? এভাবে মুখ ঢেকে রেখেছো কেনো? এসো এখানে আমার পাশে বসো।
.
নীবিড় ভাইয়া এখনও ভাবলেশহীন। আমি পা টিপেটিপে আপুর পাশে গিয়ে বসলাম। তখনই ভাইয়া ব্রাশ করতে করতে আমাদের সাথে নিত্য আপুকে দেখে থেমে গেল। ভাইয়া হয়তো কোনো মেয়েকে এই সময় বাসায় আশা করেনি। ভাইয়ার মুখটা জাস্ট দেখার মতো হয়েছে। একদম লালে লাল! ভাইয়ার পড়নে ঢিলাঢালা একটা এ্যাশ কালারের টি শার্ট যেটাকে আমি “মিনি হাতি” বলে থাকি আর কি। সাথে একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট! চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, চোখগুলো এখনো ফোলাফোলা! ঘুম থেকে উঠছে মাত্রই। দেখতে এখন পুরাই বাচ্চাদের মতো লাগছে।
ভাইয়ার এমন অবস্থা দেখে আমি মুখ টিপে হাসছি। সাথে জোগ দিয়েছেন নিত্য আপুও। আপু মুচকি মুচকি হাসছেন আর আমি হাসি থামানোর প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েছি।
.
নীবিড় ভাইয়া এবার অগ্নি ভাইয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে ফোন থেকে মুখ তুলে ভাইয়ার দিকে তাকালেন। অগ্নি ভাইয়া পারছেনা তো মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে। পালাতেও প্রেস্টিজে লাগবে তাই পালাতেও পারছেনা। নীবিড় ভাইয়া ভাইয়ার নিচ থেকে উপরে চোখ বুলিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকালো। উনার কোনো রিয়াকশন নাই দেখে আমরা ৩ জনই খানিকটা অবাক হয়েই উনার দিকে তাকিয়ে আছি। নীবিড় ভাইয়া হয়তো ১০ সেকেন্ড ও ফোনের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারেন নি। ফোন টেবিলে রাখা মাত্রই হু হা করে হেসে উঠলেন। উনার হাসি দেখে আমার কন্ট্রোল করা হাসিটাও আর পেটের ভেতরে থাকলো না। ভুস করে বের হয়ে গেল। নিত্য আপু জোড়ে না হলেও মুখ টিপে মাথা নিচু করে হেসে চলেছেন।
.
ভাইয়া আর প্রেস্টিজের পরোয়া করতে পারলোনা। উলটো দিকে ঘুরেই দৌড় দিলো রুমের দিকে। আর ভাইয়ার দৌড়ে পালানো দেখে আমাদের হাসির বেগ আরোও বেড়ে গেল। নিত্য আপু এবার আর হাসি চেপে না রেখে মন খুলে হাসা শুরু করলো। আপুর হাসি দেখে আমি থেমে গেলাম। ইশশ কি সুন্দর সেই হাসি। আর সাদা বিলাই তো ননস্টপ হেসেই চলেছেন। আমার থেকেও বেশি হাসতে পারেন উনি দেখছি। ব্যাপারটা আমাকে ভাবায়। বড্ড ভাবায়।
.
আপুকে যতদূর দেখে মনে হয় খুবই লাজুক আর শান্ত শিষ্ট টাইপ মিষ্টি একটা মেয়ে।
আপু হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
.
– জানো অনন্যা! তোমাকে আমি যতটা কিউট ভেবেছিলাম তুমি কিন্তু তার থেকেও বেশি কিউট। ইউ নো ইউ আর জাস্ট লাইক আ কিউটের ডিব্বা!
.
বলেই হেসে উঠলেন উনি। আমিও একটা মুচকি হাসি ফেরত দিলাম উনার হাসির বিপরীতে।
আপুটা আমার হাত ধরে করুণ চোখে বলে উঠলেন,
.
– তুমি ঠিক আছো তো? শুনলাম সেদিন সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে।
.
আমি আপুর মুখের কথাটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও উনার চোখের ভাষাটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছিনা। কেন জানি একটা অন্যরকম ভাব আছে উনার চোখে। যাতে কোনো না কোনোভাবে অপরাধবোধ ভেসে উঠছে। কিন্তু কেনো? কিসের জন্য? আমি অনেক চিন্তা করেও সেই চাহনীর উত্তর খুঁজে পেলাম না। সেইদিনের রাতের কথা মনে পড়তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
.
– তেমন কিছুই হয় নি। আমি ঠিক আছি আপু! আচ্ছা আপু তুমি আমাকে কিভাবে চেনো?
.
– তোমার ভাইয়ার সাথে মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হয়। উনার কাছেই জেনেছিলাম। (হেসে)
.
ও তাই তো। আমিও না কি কি ভাবছিলাম! সাদা বিলাই তো জিন্দেগিতেও আমাকে নিয়ে কারো কাছে কিছু বলবেন না।
আস্ত নিরামিষ একটা!
আমাদের কথার মাঝেই আম্মু ট্রে তে করে নাস্তা সাথে শরবত নিয়ে আসলো।
.
– এই নে তোরা গল্প কর আর বসে বসে নাস্তা কর।
(আমাকে উদ্দেশ্য করে) হ্যা রে অনু, অগ্নি নামে নি এখনো?
.
– নেমেছিলো….! আবার দৌড়ে চলে গেছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
.
– উফফফ! এই ছেলেটাও না অলসের ঢেঁকি একটা! হ্যা রে নিত্য মা! তুই আসিস না কেন বলতো? বাবুইয়ের সাথে আসবি মাঝে মাঝে। (সোফায় বসতে বসতে)
.
– আসলে মামুনি মেডিকেলের পড়ার চাপ অনেক আর তেমন বের হওয়াও হয়না। আশেপাশেই যাই খুব কম। আর আজ আব্বু ঢাকায় গেছে সাথে সরকারী ছুটিও তাই চলে এলাম।
.
আমাদের গল্পের মাঝে ভাইয়া নেমে এলো! ব্লাক কালারের একোটা টিশার্ট সাথে জিন্স পড়ে। চুলগুলো থেকে টপ টপ করে পানি মুছতে মুছতে! এতোটুকু টাইমে শাওয়ারও নিয়ে নিলো? আসলেই ছেলেরা যতই লেজি হক না কেনো পানিতে মনে হয় এদের এলার্জি রয়েছে। তা না হলে ১০ মিনিটের মধ্যে কিভাবে শাওয়ার নেয় এরা? আমার তো একবার ঢুকলে আর বেরোতেই ইচ্ছে করে না। ১ ঘন্টাও পাড় হয়ে যায় টেরই পাইনা।
ভাইয়া নিচে নামতেই নীবিড় ভাইয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসি থামানোর প্রচেষ্টা চালাতে লাগলো। আম্মু ভাইয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে চিৎকার করে উঠলেন,
.
– অগ্নি…..! এটা তুই? আমি কি ঠিক দেখছি? তুই ঘুম থেকে উঠেই শাওয়ার নিলি? প্রেশার বেড়েছে নাকি?
.
ভাইয়া নিমিষেই মুখটা গোমড়া করে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
– আজ্ঞে না! তবে তোমার কথা শুনে প্রেশার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বোধহয়!
.
– আচ্ছা ভাইয়া আজকে সূর্য ঠিই কোনদিকে উঠেছে বলতে পারিস?
.
ভাইয়া রেগে মেগে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করতে করতে সোফায় বসলো।
– ব্যাটা হাসি থামাবি তুই? বাড়ি থেকে কি খেয়ে আসছিস হ্যা?
.
নীবিড় ভাইয়া হাসতে হাসতেই বলে উঠলেন,
– তোরে দেখেই পেট ভরে গেছে শালা! আলসিয়া নাম্বার ওয়ান!
.
অগ্নি নীবিড়ের কথায় ভেংচি কেটে দিলো। নিত্য অগ্নির দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
– কেমন আছেন ভাইয়া?
.
অগ্নি কথা বলতে না চেয়েও সম্মান রক্ষার্থে “আলহামদুলিল্লাহ ভালো” বলেই মুখ ফিরিয়ে নিলো।
যাতে নিত্য অনেকটা কষ্ট পেল। সবসময় ইগনোর করলেও আজ অগ্নির চোখে আজ অভিমানের পাহাড় জমানো যা নিত্যকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে খুবই নির্মম ভাবে।
.
– এই তোরা আজকে থেকে যা। ভাই তো ঢাকায়! তাহলে তোরা একা একা থাকবি কেনো? (আম্মু)
.
– না মামুনি! এক কোথায়? বোন আর আমি আছি তো। (নীবিড়)
.
– তোরা বাচ্চা বাচ্চা দুইটা ছেলেমেয়ে। আর এতোদিন পর নিত্য আসলো আমি তো ওকে যেতে দিচ্ছিনা। তুই গেলে যা। আমার মেয়েকে যেতে দিবো না। (অভিমানের সুরে)
.
– ওহহো মামুনি! তুমি এভাবে ইমোশনাল ব্লাকমেইল কিভাবে করো বলোতো?
.
– এই নীবিড় থাক তো আজকে। প্রবলেম কি? (অগ্নি)
.
ভাইয়ার সাথে আমিও তাল মেলালাম।
– আপু থেকে যাও আজকে প্লিজ! আমার একটা বোন নেই জানো যে একটু মন খুলে গল্প করবো। ভাইয়া তো খালি বকে। তুমি আজকে থাকো আমি আর তুমি অনেক অনেক অন্নেক গল্প করবো। হুম?
.
সবার জোড়াজুড়িতে শেষমেশ সাদা বিলাই আর আপু থাকতে রাজি হয়ে গেল। আমি তো আজকে সেই লেভেলের খুশি! যতই হোক আজকে গল্প করার মতো একটা মানুষ তো পাবো। ভেবেই খুশি খুশি লাগছে।
না হলে রাত্রি বেচারিকে রাতে জাগিয়ে রাখি সবসময়।
.
🍂
.
রাতে সবাই ডিনার টেবিলে বসে ডিনার করছি। আমি আর নিত্য আপু পাশাপাশি বসেছি। আমার সামনাসামনি বসেছেন সাদা বিলাই। আর নিত্য আপুর ঠিক সামনে ভাইয়া।
ভাইয়ার বোধহয় আজকে মৃগি ব্যারাম ধরেছে। একটু পর পর কেঁপে উঠছে! ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
সবার খাওয়া চলাকালীন আমি খাওয়া থামিয়ে চিৎকার করে বলে উঠালাম,
.
– ভূমিকম্প……….!!!!
.
সবাই আমার কথায় হকচকিয়ে উঠে খাওয়া থামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো আসলেই কি ভূমিকম্প হচ্ছে কি না! কিন্তু কিছু বুঝলো না কেউই। শেষে আমার দিকে সবাই এক সাথে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো শুধু ভাইয়া বাদে,
.
– ভূমিকম্প কোথা থেকে আসলো?
.
– হ্যা হচ্ছিলো তো! ভাইয়ার পায়ে। একটু পর পর কেমন কেপে কেপে উঠেছিলো।
.
অগ্নি ঘেমে যাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
– কি করে তোদের বুঝাবো বল? আমার সামনে বসে থাকা প্যারা টা যে আমার পা টাকে সরকারী সম্পত্তি ভেবে পা দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে!
.
মনের কথা মনে রেখেই অগ্নি বলে উঠলো,
– আরে পা টা ভীষণ চুল্কোচ্ছে! তোমরা খাও তো। উফফফ এই অনুটাকে নিয়ে আর পারিনা। খা চুপচাপ! (ধমক দিয়ে)
.
ভাইয়ার ধমক খেয়ে আমি চুপ হয়ে গেলাম। সবাই একসাথে হেসে উঠে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
.
.
.
চলবে…………………💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here