প্রেম_আমার♥ #পার্ট-১৫,১৬♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ .

0
176

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১৫,১৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍁
.
কাধে কারো হাতের স্পর্শে চমকে উঠলো অগ্নি। অগ্নি পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নিত্য ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নির পক্ষে এই দৃষ্টি উপেক্ষা করা কঠিন, বড্ড কঠিন! তাই তো চোখ নামিয়ে নিলো সে।
সামনের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
.
– এতো রাতে এখানে এসেছো কেনো? ঘরে যাও।
.
– তুমি এখানে কেনো এসেছো? কি ভাবছো এতো? নিশ্চয় আমায় নিয়ে তাইনা? আমি তোমাকে খুব বিরক্ত করি, সব সময় জালিয়ে মারি তোমাকে তাই তুমি খুব রেগে আছো না? (কান্নামাখা কন্ঠে)
.
অগ্নি নিত্যর হাত নিজের কাধ থেকে সরিয়ে চোখ বুজে রাগ দেখানোর ভংগি করে বলে উঠলো,
.
– এটা আমাদের বাড়ি, তাই আমি যখন যেকোনো সময় ছাদে আসতে পারি। এর কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো না নিশ্চয়।
.
– অগ্নি আমি সরি। বিশ্বাস করো আমার ভুলের জন্য অনন্যার বিপদ হোক তা আমি কোনোদিনো চাইনি। তুমি হয়তো ভাবো আমি তোমার পরিবারকে নিয়ে ভাবি না, কিন্তু বুকে হাত রেখে বলতে পারবে কি আদৌ আমি তোমার পরিবার কে নিয়ে ভাবিনা?
.
অগ্নি কোনো জবাব দিতে পারলো না। কারণ সে জানে তার পরিবারের লোকগুলোকে নিত্য ঠিক কতোটা ভালোবাসে।
নিত্য অগ্নির নীরবতা দেখে মুচকি হেসে অগ্নির পাশে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
.
– জানো তো অগ্নি, আম্মু গত হয়েছে আজ থেকে ১৫ বছর হলো। এই পনেরোটা বছরে আব্বু কখনোও বুঝতে দিতো না যে আমাদের মা নেই। সব সময় চেষ্টা করে গেছেন আমাদের মায়ের অভাব টা পূরণ করার জন্য। তবুও কোথাও একটা কিন্তু কিন্তু ভাব ছিলোই। কারণ মা তো মা ই হয়।
ছোট বেলায় মা কে হাড়িয়েছি আমি। ভাইয়ার তো তখন ৯ বছর বয়স। আর আমি তখন ৬ বছরের শিশু! বুদ্ধি হওয়ার পর বেশিদিন মায়ের আদর কপালে জুটেনি আমার। মা যাওয়ার পর সবাই চরমভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আব্বু যথেষ্ট চেষ্টা করেছে সামলাতে। ভাইয়া ছোট হয়েও বড়দের মতো আমার দিকে তাকিয়ে বুকে পাথর চেপে ঠোটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে আমায় হাসানোর চেষ্টা করতো। এভাবেই দিন কেটে যেতে লাগলো। আব্বু চাইলেই আবারও বিয়ে করতে পারতো কিন্তু আম্মুর জায়গাটা কাউকে দিতে পারবে না তাই করে নি, সাথে নতুন মা আমাদের অবহেলা করতে পারে এটাও ভেবেছিলো আব্বু।
.
এতোটুকু বলে একটু দম নিয়ে অগ্নির দিকে তাকালো নিত্য। অগ্নি মাথা নিচু করে রয়েছে হয়তো চোখের কোণে জমা জলগুলো লুকোতে। কারণ নিত্য জানে অগ্নি তার চোখের দিকে তাকালে নিজেকে সামলাতে পারবে না। নিত্য তা চাচ্ছেও না এই মুহূর্তে। তাই আবারোও সামনের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো,
.
– এরপর থেকে আমার আপন বলতে আব্বু আর ভাইয়াই ছিলো। খুব খারাপ লাগতো জানো যখন আমার ক্লাসমেটদের আম্মুরা তাদের আদর করতো। নিজ হাতে টিফিন বানিয়ে দিতো। এসব দেখে খুব লোভ হতো জানো? কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলো না। আম্মুকে তো আর ওই আকাশটা থেকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা আমাদের নেই। (আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে)
জানো তো অগ্নি মামনি এমন একটা মানুষ যিনি আমাদের নিজের সন্তান না হওয়া সত্ত্বেও নিজের সন্তানদের থেকে কম ভাবেন নি। আমাকে ভাইয়াকে নিজের ছেলেমেয়ের মতো ভালোবেসেছেন উনি। জানো এতোবছর পর মামুনি কে দেখে মনে হয়েছে এইতো আমার “মা” আমার মা আছে। বাপিও তো কম ভালোবাসে নি আমাদের। মামুনির মতো উনিও আমাদের যথেষ্ট আপন মনে করেন।
আর রইলো অনন্যার কথা! আমি তো তাকে নিজের বোনের থেকে কোনো অংশে কম ভাবিনি। ওকে না দেখেও স্নেহ করেছি, ভালোবেসেছি। তোমার কাছে সবসময় ওর খোঁজ নিয়েছি। আর তুমি কি করে ভাবতে পারো আমি অনন্যার ক্ষতি চাইবো?
তুমি যদি একটিবারের জন্যও বলতে যে অনন্যা একলা আছে, তবে ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে আটকে রাখতাম না।
.
অগ্নি এক হাতের ওপর নিজের এক হাত রেখে নিত্য আবারোও বলে উঠলো,
.
– হ্যা অগ্নি, ভালোবাসি আমি তোমাকে। পাগলের মতো ভালোবাসি। কিন্তু আফসোস! তুমি শুধু আমার পাগলামো গুলোই দেখলে, ভালোবাসাটা আর বুঝলে না।
সমস্যা নেই। তুমি আমায় ভালোবাসা না তো কি হয়েছে আমি তো বাসি। তাতেই হবে।
.
বলেই হাতটা সরিয়ে উলটো দিকে ফিরে হাটা ধরলো নিত্য। সাথেসাথেই অগ্নি পেছন থেকে নিত্যে হাত টেনে তাকে আটকে দিলো।
.
🍁
.
মাঝরাতেই কাচা ঘুমটা ভেঙে গেল আমার। চোখ পিটপিট করে পাশে তাকাতেই দেখি নিত্য আপু হাওয়া! হা? গেল কই!
বেড সাইডে রাখা ঘড়িতে তাকাতেই দেখি রাত ২ টো বাজে। তারমানে মাত্র ২০ মিনিট ঘুমিয়েছি আমি। ইশশ গল্প করতে করতে যে কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি। আপুর নিশ্চয় ঘুম আসছিলো না আর খুব বোর হচ্ছিলো তাই বোধহয় নীবিড় ভাইয়ার কাছে গেছেন। কিন্তু ভাইয়াও তো আছে ওখানে। তারমানে ওরা তিনজন মিলে আমাকে রেখে আড্ডা দিচ্ছে? না না! এ হতে পারেনা। এতো অন্যায়। রীতিমত ঘোর অন্যায়।
এখনই ওদের আড্ডা দেওয়া বের করছি আমি, নাহলে আমার নামও অনন্যা না।
বলেই হাটা ধরলাম ভাইয়ার ঘরের দিকে।
.
ভাইয়ার ঘরের দরজা এরকম হাট করে খোলা কেনো বুঝতে পারছিনা। লাইটও জালানো নেই। ঘরের মধ্যে কি বিদঘুটে অন্ধকার! আচ্ছা ওরা কি হাইড এন্ড সিক খেলছে নাকি? খেলতেই পারে। ওয়েট দেখাচ্ছি মজা।
.
পা টিপেটিপে ঘরের মধ্যে ঢুকে সবাইকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু আফসোস, কারোও অস্তিত্ব নেই ঘরে।
হঠাৎ কান গেল ওয়াশরুমের দিকে। ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। তার মানে ভেতরে কেউ আছে।
ওয়াশরুমের দরজার আরোও কাছে যেতেই দরজাটা হুট করে খুলে যায়। আর ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি ভেতর থেকে কে বের হয় তা জানার জন্য।
কিন্তু ভেতর থেকে যিনি বেরিয়ে এলো তাকে আমি আশা করিনি মোটেই। সাদা বিলাই টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হতেই আমাকে দেখে থেকে থেমে গেলেন। আর আমি শত চেষ্টা করেও আমার মুখটাকে আটকে রাখতে রাখতে পারলাম না।
নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলাম আমি।
.
– আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া…..!
.
নীবিড় ভাইয়া আমার চেঁচানো দেখে ঝড়ের গতিতে এসে আমার মুখ চেপে ধরলেন। আর আমি শুধু উম..উম…করতে থাকলাম তার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।
.
– এই মেয়ে চেঁচাচ্ছো কেনো? আর এখানে কি করছো?
.
আমি কিছু বলতে পারছিনা কারণ উনার হাত দিয়ে আমার মুখ এতো শক্ত করে চেপে ধরেছেন উনি যে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি চোখের ইশারায় উনাকে বুঝালাম যাতে আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেন উনি।
উনি আমার ইশারা বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে নেন ততক্ষণাত। আর আমি ছাড়া পেয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকি।
.
আমার অবস্থা দেখে উনি বেড সাইড টেবিলে রাখা পানির গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি উনার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পানির গ্লাস খালি করে দিলাম।
.
– আপনি কি মানুষ না গন্ডার? উফফফ! আর একটু হলে অক্কা পেয়ে যেতাম আমি। আর আমি তো শুধু নিত্য আপুকে খুঁজতে এসেছিলাম। ভাবলাম আপনারা ৩ জন একসাথে আড্ডা দিচ্ছেন। (হাঁপাতে হাঁপাতে)
.
– নিত্য রুমে নেই? নিশ্চয় ছাদে গেছে। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা আমি। রাতে ছাদে না গেলে ওর হয়না। অগ্নিও তো ছাদের দিকেই গেল। আমার মাথা একটু ব্যাথা করছিলো তাই মাথায় পানি দিতে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।
.
– ও তারমানে ওরা ছাদে গল্প করছে আমাকে রেখে। চলুন তাড়াতাড়ি আমরাও আড্ডায় জয়েন করবো।
.
বকেই নীবিড় ভাইয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম। আর নীবিড় ভাইয়া আহাম্মকের মতো হাতের দিকে তাকিয়ে আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে লাগলেন উনি।
.
🍂
.
– কি হলো অগ্নি, আটকালে কেনো আমায়? তুমিই তো চাইতে যাতে আমি আর বিরক্ত না করি তোমাকে। তাহলে যেতে বাধা দিকে কেনো আমায়?
.
– সরি। (মাথা নিচু করে)
.
– সরি কেনো? কিসের জন্য? তুমি তো কোনো ভুল করোনি। বরং ভুল তো আমি করেছি। আই এম সরি।
.
– না নিত্য। আমি ভুল ছিলাম। যা হওয়ার তা তো হতোই। না তুমি জানতে অনন্যা একা ছিল, আর না আমি জানতাম। জানলে কি এতো বড় ভুল করতাম। তাই শুধু তোমাকে দোষ দেওয়াটা আমার উচিৎ হয়নি। না জেনেই তোমাকে অনেক বাজে ভাবে কথা শুনিয়েছি আমি।
.
– আমি কিছু মনে করিনি অগ্নি। তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলে ওভাবেই রিয়াক্ট করতো। আর তুমি প্লিজ কষ্ট পেয়োনা। তোমার কষ্ট যে আমার সহ্য হয়না। ভালোবাসি যে তোমাকে খুব অগ্নি।(কান্না মাখা কন্ঠে)
.
অগ্নি এবার মাথা তুলে নিত্যের দিকে তাকালো। নিত্যর চোখ টলমল করছে। যা দেখে অগ্নি আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা। সব বাধা অতিক্রম করে নিত্যকে বুকে টেনে নিলো। নিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে লাগলো অগ্নি।
.
.
.
.
চলবে………………💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍂
.
– নি…নিত্য! আমাকে তুমি মাফ করে দাও প্লিজ। ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে হার্ট করতে চাই না বাট আই হ্যাভ নাথিং টু ডু! আমি কোনোদিনোও চাইনা, কোনোভাবে বা কোনো কারণে আমার আর নীবিড়ের ফেন্ডশিপের মাঝে কোনো ফাটল ধরুক।
কিন্তু আমিও যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি নিত্য। তোমার রোজকার বিরক্ত করা, কারণে অকারণে ডেকে নিয়ে যাওয়া, অহেতুক বকবক করা এসব বিরক্ত লাগলেও আমি এই বিরক্তিমাখা ভালোবাসাকেই ভালোবেসে ফেলেছি নিত্য! আমি এখন কি করবো তুমিই বলে দাও! না পারছি তোমায় আপন করে নিতে আর না পারছি তোমায় ভালোবাসতে। (ফোঁপাতে ফোঁপাতে)
.
নিত্যও এবার অগ্নিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর এক হাত দিয়ে অগ্নির চোখের পানি মুছে দেয়। আজ যে তার বরই খুশির দিন। ২ বছর ধরে তো ঠিক এই দিন টার জন্যেই ওয়েট করে ছিল সে। আজ সে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেয়ে গেছে। তার ভালোবাসা তার অগ্নিকে।
.
– অগ্নি প্লিজ কেঁদো না। তুমি কি জানো না তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না? আর কাঁদবে না তুমি। আর ভাইয়া আমাদের ঠিক মেনে নিবে। আমার ভাইয়াকে আমি চিনি। আর ভাইয়া তো তোমাকে জানে তুমি কেমন। তুমি তো আর যে কেউ না যে আমাকে তার হাতে তুলে দিতে ভরসা পাবে না।
তাই প্লিজ তুমি টেনশন করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
বলেই নিত্য অগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে থাকে।
.
🌹
.
– আহহহহহহহ…! মাগোও…..!পা টা গেল রে!
.
– এই মেয়ে চোখ কোথায় খুলে রাখো তুমি! একটা কাজ যদি ঠিক মতো করতে পারো। ঠিক মতো হাটতেও পারো না দেখছি। দেখি পা দেখি!
.
– এমা কি করছেন টা কি? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?
.
– হুশশশস…! একদম চুপ থাকো তুমি। ইশশ দেখো তো কিভাবে ছিলে গেছে! তোমার রুমে ফার্স্টএইড বক্স আছে?
.
আমি শুধু সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালাম। উনি আর কিছু না বলেই ঝট করে আমায় শুণ্যে তুলে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে দিলেন। ধ্যাত সিঁড়ির সাথেও হোঁচট খেতে হয় আমার? এতোক্ষণে ছাদে গিয়ে আড্ডা দিতাম তা না। আর এই সাদা বিলাইটাও হইছে। এমনিতে তো আমাকে দুচোক্ষে সহ্য করতে পারেন না। আবার একটু ব্যথা পেলেই উনার দরদ যেন উতলে পড়ে। হুহ!!! যত্তসব ন্যাকামো!
.
সাদা বিলাই আমার টেবিলের ড্রায়ার থেকে ফার্স্টএইড বক্স বের করলেন। উনি স্যাভলন এন্টিসেপ্টিক, একটা ব্যান্ডেজ, আর একটু তুলো বের করে নিলেন। তুলোয় একটু স্যাভলন লিকুইড নিয়ে খুব যত্ন করে আমার ছিলে যাওয়া জায়গায় লাগাতে লাগলেন। তুলোটা লাগানো মাত্রই পায়ে আরোও তিব্র জ্বালা অনুভব করলাম। চোখ খিঁচে বন্ধ করে মুখ থেকে অটোমেটিক্যালি “আহহহ” বের হয়ে গেল। উনি আমার ব্যথা পাওয়া দেখে ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন,
.
– খুব ব্যথা করছে কি? একটু লাগবেই তো। প্লিজ একটু কষ্ট করে সহ্য করো।
.
বলে আবারোও স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলেন। ক্লিন করা হয়ে গেলে আস্তে করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন আর আমি আচমকা উনার হাত খাঁমচে ধরলাম। তখনও আমি চোখ বন্ধ করেই ছিলাম। উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
.
– এখন কি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমার হাত টাকে ক্ষতবিক্ষত করার পরিকল্পনা করছো?
.
উনার কথায় আমার হুশ এলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি আমি উনার হাত খামচে ধরে রয়েছি। আমার নখ বসে গেছে উনার হাতে। আমি দ্রুত এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
.
– সরি ভাইয়া! বুঝতে পারিনি। আচ্ছা চলুন চলুন। ছাদে যেতে হবে তো।
.
বলেই উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে যেতে লেগে থেমে গেলাম। পায়ের এমন জায়গায় চোট লেগেছে যে হাটতে গেলেই ঘষা লাগছে আর জালা করছে। উনি আমার অবস্থা দেখে বলে উঠলেন,
.
– তোমার এই লাফালাফির জন্যই এরকম হয় বুঝলে? চুপ করে দাঁড়াও ওখানেই।
.
বলেই আবারও আমায় কোলে তুলে ছাদের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলেন উনি। আমি বুঝিনা আমার ওজন কম হলেও আমি তো আর ওজনশুণ্য নই। এভাবে হুটহাট কোলে তুলে নিয়ে কি বুঝাতে চান উনি? উনি কি বডি বিল্ডার নাকি আমি একটা নিতান্তই কাগজ মাত্র?
এসব ভাবতেই চোখ গেল উনার মুখের দিকে। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি উনার মুখের দিকে। উনার গালের সাইডে চাপ দাড়ি গুলোও কতো সফট দেখাচ্ছে। আমার মতে দাড়িগুলোর খোঁচা দেওয়া উচিৎ কারণ উনি তো সবসময় খোঁচা দিয়েই কথা বলেন তবে দাড়িগুলো এতো কোমল হতে যাবে কেনো? হুয়াই?
.
– আমাকে পর্যবেক্ষণ না করে সামনের দিকে তাকাও। চলে এসেছি। আর এখন তোমাকে নামিয়ে দিচ্ছি আমাকে ধরে ধরে হাটবে, গট ইট?
.
বলেই নামিয়ে দিলেন আমায়। আর আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম যেন। ইশশ! কি লজ্জা! আমার মান-সম্মানের ফালুদা বানিয়ে দিলেন উনি। আর উনি তো সামনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন তাহলে বুঝলেন কি করে আমি উনাকে দেখছিলাম? তবে কি উনার গলায় ও চোখ আছে?
এসব আজগুবি কথা ভাবতে ভাবতেই চোখ গেল উনার দিকে। উনি বিরক্তিমাখা ফেইস নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আমার দিকে। আমি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে জ্বীবে একটা কামড় দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মেরে গেটের সামনে গেলাম। উনিও আমার সাথে এসেই থেমে গেলেন।
.
আমরা দুজনেই একবার দুজনের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার সামনে থাকা মানুষ দুটোর দিকে তাকাচ্ছি। আমাদের দুজনের মুখই অটোমেটিক্যালি “হা” সাইজ হয়ে রয়েছে। সিরিয়াসলি! ওরা এতো রাতে হ্যান্ডবল খেলছে?
আমি নীবিড় ভাইয়ার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি কাধ উঁচু করে ঠোট উলটে জানান দিলেন যে, ” তিনিও কিছু বুঝতে পারছেন না!”
.
আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভাইয়া আর নিত্য আপু খেলা বন্ধ করে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। নিত্য আপু নীবিড় ভাইয়াকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলেন,
.
– আরে ভাইয়া এতো দেড়ি করলি কেনো? তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। (আমার দিকে তাকিয়ে) এমা অনন্যা, তুমি ঘুম থেকে উঠলে কখন? আচ্ছা উঠেছো ভালোই করেছো। আসো একসাথে আড্ডা দেই।
.
ভাইয়াও নিত্য আপুর কথায় সায় দিয়ে আমাদের ডাকলো।
নীবিড় ভাইয়া আর আমি বেকুব বনে ছিলাম এতোক্ষণ। নীবিড় ভাইয়া এবার মুখ খুললেন,
.
– হ্যা রে! তোরা এই মাঝ রাতে ছাদে এসে হ্যান্ডবল খেলছিস? লাইক সিরিয়াসলি! আর নিত্য না হয় ছোট বাট অগ্নি, তুই এরকম বাচ্চামো করছিস কিভাবে? হাও?
.
– আরে ব্যাটা, খেলা তো খেলাই। সেটা দিনে হোক ওর রাতে সেটা ফ্যাক্ট না। ঘুম আসছিলোনা তাই ছাদে আসলাম। একটু পর নিত্যও আসলো। দুজনে আর কিই বা করবো? হাতের কাছে বল ছিলো তাই হ্যান্ডবল ই খেলতে লাগলাম।আয় তোরাও জয়েন কর।
.
আমি ওদের থামিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠি,
– থামো তোমরা…! আমি নিচ থেকে একটা কার্পেট নিয়ে এসে বিছিয়ে দিচ্ছি।
.
ওমনি এক ধমক। ধমক টা দিলেন নীবিড় ভাইয়া,
– এই ঠিকমতো হাটতে পারছোনা আর একা একা কার্পেট আনতে যাচ্ছো? চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো এখানে। অগ্নি তুই যা। আমি তো জানি না কোথায় রাখা আছে।
.
– ওয়েট ওয়েট, অনু পায়ে কি হয়েছে?
.
– আরে ভাইয়া সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে হোচট খেয়েছি। সামান্য একটু লেগেছে মাত্র। ঠিক আছি আমি। নীবিড় ভাইয়া ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন।
.
– কই দেখি! (নিচে বসে আমার পায়ের ব্যান্ডেজ করা দেখে) আচ্ছা ঠিক আছে। আর অনু প্লিজ সাবধানে চলাফেরা কর মা। তুই আর ছোট নোস। ১৯ বছর চলছে তোর।
.
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। যা এবার।
.
ভাইয়া আমার মাথায় একটা চাটি মেরে নিচে চলে গেল। আর নিত্য আপু এসে আমার গাল টেনে দিলো। নীবিড় ভাইয়া হয়তো বিরক্ত হচ্ছেন নাহলে সাইডে চলে গেলেন কেন! কি জানি। আমাকে উনার এতোই যখন বিরক্ত লাগে তাহলে আমার এতো কেয়ার কেনো করেন উনি? শুধুই কি বেস্টফ্রেন্ডের বোন তাই? হতেই পারে। এসব চিন্তা আপাতত মাথা থেকে বাদ দিয়ে আপুর সাথে গল্পে মনোযোগ দিলাম।
.
🌺
.
ভাইয়া কার্পেট এনে ফ্লোরে বিছাতেই আমরা গোল হয়ে বসে পড়লাম। আমি নিত্য আপুর পাশে বসলাম আমার পাশে সাদা বিলাই, আর উনার পাশে ভাইয়া, আবার ভাইয়ার পাশে নিত্য আপু। এরকম একটা সিকুয়েন্স রেখে বসলাম সবাই।
ভাইয়ার বুদ্ধি ভালোই, আসার সময় চিপস আর কোক সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।
এবার সবাই আড্ডায় মেতে উঠলাম।
.
– আচ্ছা ভাইয়া তুই আর নীবিড় ভাইয়া একই রকম গেট আপে থাকিস কেনো?
.
আমার এরকম প্রশ্নে দুজনেই এক গাল হেসে দিলো। ভাইয়া মুখে হাসি রেখেই বলে উঠলো,
– আরে আমরা দুজন যমজ ভাই বুঝলি। আমরা যাই কিনি সেটাই সেম দুটো করে পিস কিনি। একটা নীবিড়ের আর একটা আমার। দেখ আমাদের হেয়ার স্টাইলো সেইম। হাইট ও সেম। ইভেন স্কিন টোন ও সেইম। দ্যটস হোয়াই সবাই দূর থেকে আমাদের টুইনস ভাবলেও কাছ থেকে দেখে বুঝতে পারে যে আমরা টুইন্স না। আর এই কনফিউশন ক্রিয়েট করতে আমাদের বরাবরই ভালো লাগে। তাই তো উই আর সেইম সেইম! কি বলিস ব্যাটা!
.
– কারেক্ট আছে শালা! (ভাইয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই) উপপসস! সরি! আই মিন ব্রাদার। (জোরপূর্বক হেসে)
.
ভাইয়া নীবিড় ভাইয়ার এরকম অবস্থা দেখে বেশ মজা পেল বোধহয়! হু হা করে হেসে উঠলো ভাইয়া, সাথে যোগ দিলো নিত্য আপুও। শুধু আমিই বেচারী কিছু বুঝতে না পেরে গাল ফুলিয়ে বসে থাকলাম।
.
.
.
চলবে…………………💕

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ

https://www.facebook.com/groups/1483862165147295/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here