প্রেম_আমার♥ #পার্ট -১৭,১৮♥ #Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥ .

0
169

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট -১৭,১৮♥
#Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥
.
– আয়ায়ায়া…..!
এতটুকু চেঁচাতেই নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলাম আমি। আমি চাইনা আমার কারণে সবার সাধের ঘুমটা নষ্ট হোক। তবে না চেঁচিয়েও একটা শান্তি শান্তি ফিলিংস পাচ্ছিনা। এরকম একটা সিচুয়েশনের পরও চেঁচাবোনা তা কি করে হয়?
.
কালরাতে গল্প করতে করতে যে সবাই ছাদেই ঘুমিয়ে গেছি টেরও পাইনি। ঘুমিয়েছি ঠিক আছে কিন্তু আমি যে ঘুমের তালে এই সাদা বিলাইকে সাদা বালিশ বানিয়ে ফেলবো সেটা জানলে কি আর উনার পাশে বসতাম? আর উনাকেও বলি হারি, উনি আমাকে এভাবে কোলবালিশ ভেবে চেপে ধরেছেন যে ছোটারোও সাধ্যি নেই আমার।
.
মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখি ভাইয়া ছাদের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আর নিত্য আপু ভাইয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। হালকা বাতাসে আপুর অবাধ্য চুলগুলো কপালের ওপর এসে পড়ছে। কিন্তু আপুতো বেঘোড়ে ঘুমোচ্ছে। ইশ! ভাইয়া আর আপুকে একসাথে এভাবে কতো সুন্দর লাগছে! এমা এসব আমি কি ভাবছি। (জ্বীবে কামড় দিয়ে )
আপাতত আমায় এই সাদা জলহস্তির কবল থেকে বেরোতে হবে।
.
এই নিয়ে বারকয়েক উনাকে ধাক্কিয়ে ছুটার চেষ্টা করেছি আমি। কিন্তু বরাবরের মতোই রেজাল্ট ইজ আ বিগ জিরো। উনাকে যতোই ঠেলছি উনি ততোই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছেন আমায়। নিজের সর্বশক্তি খরচ করার পর থেমে গেলাম আমি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে ওভাবেই শুয়ে রইলাম। ভোরের সূর্য উঁকি দিচ্ছে পূর্ব আকাশে। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে মৃদু সুরে নানান পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। তার সাথে বইছে ঠান্ডা হাওয়া। পরিবেশটা নিতান্ত্যই এক নিমিষে মন ভালো করে দেওয়ার মতো।
.
এবার চোখ গেল সাদা বিলাইয়ের দিকে। কখনোও উনাকে এতোটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়নি আমার। আসলেই উনি সুন্দর। বলতে গেলে ভয়ংকর সুন্দর। এই যেমন যে কেউ উনার দিকে একবার তাকালেই প্রেমে পরে যাবে এমন টাইপ। তবে আমি ক্রাশ খেলেও ওসব প্রেমে ট্রেমে পরবোনা আই সোয়্যার।
ঘুমের মধ্যে কি নিষ্পাপ লাগছে উনাকে। যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেন না উনি। আচ্ছা উনার যদি সত্যিই বেড়ালদের মতো লম্বা গোপ আর ইয়া বড় একটা লেজ থাকতো তবে কেমন লাগতো? কল্পনায় নীবিড় ভাইয়া গালের দুগালের দুপাশে বেড়ালের মতো লম্বা লম্বা গোপ সাথে পেছনে লম্বা একটা লেজ যুক্ত করে প্রতিচ্ছবি বানিয়ে নিলাম। কল্পনায় উনাকে পুরো দু পা বিশিষ্ট লম্বু সাদা বেড়ালের মতো লাগছে। কল্পনায় উনার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতেই হু হা করে হেসে উঠলাম আমি। সবাই ঘুমোচ্ছে মনে পড়ায় সাথেসাথেই মুখ চেপে ধরলাম। কিন্তু শেষ রক্ষে বুঝি আর হলোনা। আমার কিঞ্চিত হাসির আওয়াজ পেয়ে চোখ বন্ধ রেখেই ভ্রু কুঁচকিয়ে উঠলেন উনি। উনার এই ভ্রু কুঁচকানো জানান দিচ্ছে উনার লাখ টাকার আরামদায়ক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছি আমি।
.
উনি বিরক্তিটা শুধু ভ্রু কুঁচকানোর মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখলেন না। বরং চোখ দুটো পিটপিট করে খুলতে লাগলেন উনি। যা দেখে আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। আস্তে আস্তে উনার হাত আলগা হতেই সরে আসতে নিলেই খপ করে চেপে ধরেন উনি। ঘুমু ঘুমু চোখগুলোয় কেমন যেম এক রক্তিম বর্ণ ফুটে উঠেছে উনার। হয়তো খুব কম ঘুম হয়েছে সেজন্য!
উনি আমকে হুট করে নিচে ফেলে আমার উপরে উঠে গেলেন। আর আমি ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখের ওপর পড়ছে। ভয়ে গা ঘামতে শুরু করে দিয়েছে আমার। এই বুঝি আমার গলা টিপে মেরে ফেলবেন উনি!
.
উনার হাত আলগা হতেই আমি ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকালাম। উনি আমার মুখের ওপর স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝুকে আছেন। উনার সিল্কি চুলগুলো হেলে পড়ে আমার কপাল স্পর্শ করছে। উনি ঠোটে এক রহস্যময়ী বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে আমাকে ছেড়ে উঠে পড়লেন। আর আমি হতবাকের মতো চেয়ে আছি উনার দিকে। চোখ ঘুরিয়ে পাছে তাকাতেই দেখি অগ্নি ভাইয়া আর রেলিংয়ের সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় নেই। কার্পেটের ওপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়েছে ভাইয়া। আর নিত্য আপু ওভাবেই বসে বসে মাথা একদিকে হেলিয়ে রেখে ঘুমিয়ে আছে।
.
নীবিড় ভাইয়া আপুর কাছে গিয়ে আপুকে টুপ করে কোলে তুলে নিয়ে ছাদ থেকে নিচের দিকে হাটা দিলেন। আর আমাকে চোখের ইশারায় বললেন ভাইকে ডাকতে। আমি শুধু সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকালাম। কিন্তু আমি তো জানি, আমার এই ঘুম কাতুরে ভাইয়া শুধু ডাকলে কি, কানের কাছে ঢোল পেটালেও ৯ টার আগে উঠানো যাবে না!
.
ভাইয়ার পাশে বসে ভাইয়াকে জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিতে লাগলাম সাথে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। ভাইয়া ঘুম থেকে উঠা তো দূর বিন্দু মাত্র নড়লোও না। যা দেখে আমি কপালে হাত দিয়ে ঠাস করে রেলিং ঘেঁষে বসে পড়লাম। শেষমেশ আর উপায় না পেয়ে বুক ফুলিয়ে একটা জোড়ে শ্বাস নিয়ে ভাইয়ার দুহাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু বেশিদূর নিয়ে যেতে পারলাম না। একটু নিয়ে যেতেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবারোও টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম। হঠাৎ কারোও হাসির আওয়াজ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।
সাদা বিলাই দরজায় দাঁড়িয়ে পেটে দুহাত চেপে উচ্চস্বরে হেসে যাচ্ছেন। যেন আর একটু হলেই হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যাবেন উনি।
.
আজ উনার হাসি দেখে মুগ্ধ হওয়ার বদলে ভীষণ রাগ উঠছে আমার। উনার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে টাকলা বানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আর সেই টাকলা মাথায় ড্রাম বাজিয়ে দফারফা করে দিতে ইচ্ছা করছে। আমার রাগী দৃষ্টি দেখে উনি হাসি থামানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাতে লাগলেন। কিন্তু কিছুতেই সেই হাসি থামাতে পারছেন না উনি। শেষমেশ হাসতে হাসতে বসে পরে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু দিয়েছেন। এবার আমি রেগে মেগে ভাইয়াকে ওভাবেই ফেলে রেখে গটগট করে মুখ ফুলিয়ে হেটে নিচে নেমে এলাম আমি। আমি ছাদথেকে নেমে আসতে আসতে যেন উনার হাসিটা আরোও তীব্র আকার ধারণ করলো। আমি সেইদিকে গ্রাহ্য না করেই আমার রুমে চলে এলাম।
.
নিত্য আপু অলরেডি ফ্রেশ হয়ে চুল ব্রাশ করা শুরু করে দিয়েছে। আমাকে দেখেই মুখে হাসির রেশ টেনে আমার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলো,
.
– অনু সোনা, যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। মামনি ডেকেছে ব্রেকফাস্টের জন্য।
.
– এতো সকালে? (অবাক হয়ে)
.
– হুম আসলে। আমি আর ভাইয়া খুব সকাল করেই উঠি তো তাই। মামনি তো জানে তাই সকাল সকাল উঠেই ব্রেকফাস্ট রেডি করে দিয়েছে। ভাইয়া একটু আগেই আমাকে রুমে এনে শুইয়ে দিয়ে গেল। তবে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
.
– আচ্ছা আপু!
বলে আমিও ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলাম। নিচ থেকে আম্মুর ডাক কানে ভেসে আসায় আপু আর আমি দ্রুত নিচে নেমে গেলাম।
.
🍁
.
– নিত্য, বাবুই কোথায়? ঘুম থেকে উঠেনি?
.
– না না, উঠেছে তো। এই এলো বলে। তুমি সার্ভ করে দাও শুধু অগ্নি ভাইয়ার টা বাদ দিয়ে। (হেসে)
.
নিত্য আপুর কথায় আমি আর আম্মু ফিক করে হেসে দিলাম। আমাদের হাসির ফাঁকেই চোখ গেল সিঁড়ির ওপরে। আমার সাথে সাথে আম্মু আর নিত্য আপুও হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। আমাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীবিড় ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে চোখ মুখে বিরক্তির রেশ ফুটিয়ে ভাইয়াকে কাঁধে রেখেই আস্তে আস্তে হেটে যেতে লাগলেন ভাইয়ার রুমের দিকে।
আর এদিকে আমরা কিছুক্ষণ নীরব দর্শকের মতো কমেডি দেখে হু হা করে হেসে উঠলাম। কি অবস্থা! ভাইয়াকে সাদা বিলাই শেষমেশ জাগাতে না পেরে কাঁধে করে নিয়ে এলেন। হুহ! আর আমাকে টানতে দেখেই হেসে কুপোকাত হচ্ছিলেন উনি। যত্তসব।
.
🌺
.
ব্রেকফাস্ট করতে করতে আম্মুকে কালকে রাতের আড্ডা দেওয়ার কথা বলতেই আম্মু এল গাল হেসে দিলো। আর আমি ভাবছিলাম এই বুঝি নাগিনের রুপ ধারণ করবে। বাহ! আম্মুতো আমাদের থেকেও এক কদম এগিয়েই রয়েছে।
.
একসাথে ব্রেকফাস্ট করেই নীবিড় ভাইয়া আম্মুকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিত্য আপুকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে নিত্য আপু আমার গাল আবারোও একবার টেনে দিয়ে গেলেন। আচ্ছা আমার গাল টা কি এতোটাই নরম যে সবসময় বাচ্চাদের মতো আমার গাল টেনে দেয় আপু? কি জানি! হতেই পারে। ভেবে নিজেই নিজের গালে হাত বুলাতে বুলাতে রুমে চলে এলাম। আজকে মনটা বড্ড ফুরফুরে লাগছে। শুধু ভার্সিটি যাওয়ার অপেক্ষায়। রাত্রির সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবো আজকে।
.
.
.
.
চলবে…………………..💕
#প্রেম_আমার ♥
#পার্ট-১৮♥
#Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥
.
– ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া………! ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া…………..!
উঠ! দেখ ৯ টা বেজে গেছে। এই ভাইয়ায়ায়ায়ায়া……..উঠ নায়ায়ায়া।
.
এই নিয়ে কম করে হলেও দশ কি পনেরো বার ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে চেঁচিয়েছি। তবুও আমার এই নাদুশনুদুশ ঘুম কাতুরে গুনোধর ভাইকে উঠাতে পারলাম না। মানে একটা মানুষ এভাবে মরার মতো ঘুমায় কিভাবে? হাও! তাও এই অনন্যার ভাই হয়ে! এমনি সময় তো কানের কাছে আমার হাই ভোল্টেজ ওয়ালা এক চিৎকারেই কাজ হয়, বাট আজ হলো টা কি?
.
এতো পরিশ্রমের পরও কাজ না হওয়ায় ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি নিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য বিছানা ভিজলেও ভিজুক তাও ভাইয়ার ঘুম ছুটানো। হাতে মগটা নিয়ে চোরের মতো পা টিপেটিপে ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু ভালো করে খেয়াল করতেই চোখ গেল ভাইয়ার মুখের দিকে। কিসব বিড়বিড় করছে আর ঘুমের তালেই মুচকি মুচকি হাসছে।
লে ভাই! বান্দর টা দেখি মধুর মধুর স্বপ্নও দেখে। শুধু স্বপ্ন দেখেই না বরং মুচকি মুচকি হাসেও।
তবে রে আমার ভার্সিটি যাওয়ায় লেট করিয়ে মহারাজ মনের সুখে রঙ বেরঙ্গে স্বপ্নে হাবুডুবু খাবে তা তো হতে পারে না। মুখে একটা শয়তানি হাসির রেশ টেনে মগে থাকা পানি ছুড়ে মারলাম ভাইয়ার মুখ বরাবর। মেরেই এক দৌড়ে খাটের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। ওমনি এক লাফ দিয়ে ধরফরিয়ে উঠলো ভাইয়া। উঠেই বাচ্চাদের মতো আম্মুকে ডাকা শুরু করে দিলো।
.
– আম..আম্মুউউউ! আম্মুউউউ ভূ…ভূ…ভূত আমার ওপর হিশু করে দিয়েছে…!
.
ভাইয়ার ডাক শুনে আম্মু আব্বু একসাথে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকেই ভাইয়ার কাছে গেলেন। আম্মুকে কাছে পেয়ে ভাইয়া বাচ্চাদের মতো আম্মুর বুকে মুখ গুঁজে মিনমিধ করে ভূ…ভূ…ভূত! বলে যাচ্ছে।
আমি এতোক্ষণে খাটের পেছনে বসে চুপ করে থাকলেও আর থাকতে পারলাম না। ওভাবে বসে থেকেই একেবারে ঘর কাঁপিয়ে হাসা শুরু করে দিলাম। যাকে বলে একেবারে লেভেল ছাড়া ননস্টপ লাফিং। হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেছে আমার।
.
আমার হাসির আওয়াজে আম্মু আব্বু খাটের পেছনে চোখ গরম করে তাকালো আর ভাইয়া এতোক্ষণে বুঝতে পারলো কোনো ভূত টূত ওর ওপর হিশু করে নি বরং অল ক্রেডিট গোস টু মি, অনন্যা দি গ্রেট ফাজিল।
.
– শাঁকচুন্নি, বটগাছের পেত্নি, উল্টো পা বিশিষ্ট পিশাচিনী। গায়ের ওপর পানি ঢেলেছিস কেন ফাজিল? (দাঁত কটমট করতে করতে)
.
ভাইয়ার সাথে তাল মিলিয়ে এবার আম্মু আব্বুও আমার দিকে প্রশ্ন ছোড়া শুরু করে দিলো।
– অনু…! পানি ঢেলেছিস কেনো অগ্নির ওপর?
.
সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এক মুহূর্তে আমাকে টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলবে। তবে আমিও বা কম কিসে? হাসি থামিয়ে মুখে একটা ইনোসেন্ট মার্কা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলাম,
.
– সেটা নাহয় তোমার গুনোধর ছেলেকে বলো। উনি নাকি রোজ আমায় ভার্সিটি নিয়ে যাবেন ইভেন নিয়েও আসবেন। তা এতোক্ষণ ঘুমোলে তো আমার একটা ক্লাস মিস হয়ে যাবে। ঘড়ির দিকে একবার তাকাও। ৯ টা বেজে ১৫ মিনিট। উনাকে আমি সেই ৮ টা ৫০ থেকে ডেকে চলেছি কিন্তু উনার তো ঘুম ভাঙ্গার কোনো নাম গন্ধই নেই। আর পানি মেরেছি ঠিক ৯ টা বেজে ১০ মিনিটে এন্ড তোমরা গত ৫ মিনিট যাবৎ এই রুমে অবস্থান করছো। দ্যট মিনিস পুরো বিশ মিনিট ধরে আমি এই বান্দরটাকে উঠাবার চেষ্টা করে গিয়েছি। তারপরোও কোনো হেলদোল না দেখেই পানি মারার স্টেপটা নিতে বাধ্য হয়েছি।
নাও কাকে বকা উচিৎ তোমরাই ভেবে দেখ। আমি এখন চুপ। (মুখে এক আঙুল চেপ)
.
আমার কথায় আম্মু আব্বু দুজনেই ফুলকো লুচির মতো ফুলে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালো। ভাইয়া মুহূর্তেই একটা শুকনো ঢোক গিলে দাঁত কেলিয়ে পালিয়ে যেতে নিলেই আম্মু খপ করে ভাইয়ার হাত চেপে ধরেই কান ধরে টানে ধরলো।
.
– আহহহ! আম্মুউউই লাগছে তো! ছেড়ে দাও প্লিজ……..!
.
– লাগার জন্যই তো ধরেছি। দিন দিন আদরে আদরে বাদর হয়ে যাচ্ছিস তুই। সকালে বাবুই তোকে কাঁধে উঠিয়ে ঘরে শুইয়ে দিয়ে গেছে। জানিস? তাও তোর ঘুম ভাঙ্গে নি। আর অনু তোকে এতোক্ষণ ডাকার পরও উঠিস নি! তাতে নাকি ভূত তোর ওপর হিশু করে দিয়েছে! (আমার দিকে তাকিয়ে) অনু যা করেছিস বেশ করেছিস। পুরো বালতি ভরে পানি দিয়ে বিছানাতেই গোসল করিয়ে দিতি। আরোও ভালো হতো।
.
আমি আর আব্বু এতোক্ষণ নীরব দর্শকের মতো মা আর ছেলের কান্ড দেখছিলাম। এবার দুজন দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে হু হা করে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলাম। আম্মুর হাত আলগা হতেই ভাইয়া সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
ভাইয়া যেতেই আম্মুও ফিক করে হেসে দিয়ে আমাদের সাথে হাসির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লো।
.
🌺
.
আমি আর রাত্রি পুল সাইডে গাছের নিচে পা ঝুলিয়ে বসে আছি। দুজনের দৃষ্টি একদিকে। আর সেটারোও কেন্দ্রবিন্দু হলেন মি. সাদা বিলাই।
উনি ফোনে কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছেন আর একটা মেয়ে উনার সাথে কথা বলার জন্য রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। পারলে যেন এক্ষুনি উনার কোলের ওপর উঠে যেতো। আর উনি বারবার হাত দিয়ে বারণ করছে উনার কাছে যাতে না যায়।
কিন্তু কেনো যেন এসব দেখে আমার রাগ লাগছে। বলতে গেলে একপ্রকার জেলাস টাইপ ফিল হচ্ছে। কিন্তু কেনো তার উত্তর জানা নেই আমার।
অজান্তেই কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে উঠছে। রাত্রি আমার দিকে তাকিয়ে তা লক্ষ্য করে বলে উঠলো,
.
– কিরে তোর আবার কি হলো? আমরা তো সিনেমাহল ছাড়াই ফ্রি ফ্রি সিনেমা দেখছি তাতে তো তোর খুশি হওয়ার কথা। তা না হয়ে হঠাৎ রেগে যাচ্ছিস কেনো? (ভ্রু নাচিয়ে)
.
রাত্রির এমন কথায় আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম,
– আ..আ..আমি রাগ করতে যাবো কেনো? আসলে মেয়েটার ঢং দেখে বিরক্ত লাগছে, দেখনা কি রকম কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে লাফালাফি করছে।
.
– সে যাই করুক! তাতে তোর কি? হেই ফিশি অনন্যা সামথিং সামথিং?
.
– কি যাতা বলছিস রাত্রি। জাস্ট নাথিং নাথিং ! চল ক্লাসে যাই টাইম হয়ে গেছে।
.
বলেই ঠাস করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। যেই না উলটো দিকে ঘুরে হাটা দেবো ওমনি পা স্লিপ কেটে একট প্রকান্ড চিৎকার দিয়ে পুলে পড়ে গেলাম।
আমার পড়ে যাওয়া দেখে রাত্রি আমার নাম নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। কিন্তু ততক্ষণে আমি পানিতে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। পুলটা বেশি গভীর না হলেও আমি পুরোপুরিভাবে ডুবে যেতে পারবো অনায়াসেই। ইভেন আমি সাঁতারও কাঁটতে জানি না। শুধু হাত পা ছোটাছুটি করে চলেছি কিন্তু কিছুতেই পাড়ে যেতে পারছিনা। বরং আরোও পিছিয়ে যাচ্ছি আমি।
.
হটাৎ কে যেনো পুলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সেই মানুষটা আর কেউ না আমার সাদা বিলাই। উনাকে দেখেই চোখ অবদি ডুবে গেল আমার। উনি তাড়াতাড়ি করে সাঁতরে এসে আমাকে নিয়ে পাড়ে যেতে লাগলেন। আমি এতোক্ষণে পানি খেয়ে খেয়ে পেট ফুলিয়ে ফেলেছি। চোখে ঝাপসা দেখছি আমি। শুধু এতোটুকু বুঝতে পারছি আমাকে পাড়ে উঠিয়ে শুইয়ে দিলেন উনি। সাথেসাথেই আমাদের ঘিরে দাঁড়ালো সবাই। কানে মৃদু সুরে ভেসে আসতে লাগলো রাত্রির কান্না করতে করতে আমার নাম ধরে ডাকা।
.
আমার শ্বাস-প্রশ্বাস যেন আটকে আসতে চাইছে। নীবিড় ভাইয়া আমার পেটে ক্রমাগত চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা পানি বের করার পর উনি আচমকা আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। আর সাথেসাথেই চারপাশ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস কন্ট্রোলে আসা মাত্রই চটজলদি চোখ খুলে বসে পড়লাম আমি। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বসা মাত্রই সজোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম উনার গালে।
.
.
.
.
চলবে……………………💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here