প্রেম_আমার♥ #পার্ট-২৯,৩০♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🌺

0
208

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২৯,৩০♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
আম্মুকে ঘিরে আমি, অগ্নি ভাইয়া, রুশো ভাইয়া, নীবিড় ভাইয়া আর নিত্য আপু বসে আছি৷ সবার চোখেই অস্থিরতার ছাপ। আমি আবারও পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছি। নাহ এভাবে প্রতিবার পানি খেতে উঠতে যাওয়া সম্ভব নয় তাই পানির জগটাই তুলে নিয়ে এলাম। আমার পাশে রুশো ভাইয়া আবারোও নিজের দাঁতগুলোকে নেইল কাটার বানিয়ে ফেলেছে। বুঝি না আমি। আমাদের এই দু ভাই বোনের এরকম অদ্ভুত অভ্যেস হলো কি করে! আমি টেনশনে পানি খেয়ে পেট ফুলাই আর রুশো ভাইয়া দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বোধহয় আঙ্গুলই খেয়ে ফেলে।
.
অবশ্য অগ্নি ভাইয়ার এরকম অভ্যেস না থাকলেও খুবই লজ্জাজনক এক মারাত্মক অভ্যেস আছে। আর সেটা হলো “হাটু কাঁপা” ভাইয়া টেনশনে পড়ে গেলে ঘামার সাথে সাথে হাটুতে ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে ফেলে। যেটা বর্তমানে ঘটে চলেছে। সবাই টেনশনে আম্মুর দিকে মনোযোগী থাকায় ভাইয়ার হাটু কাঁপার দৃশ্য নজরে না দিলেও আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি। নিত্য আপু যদি দেখতো তবে নির্ঘাত মৃগী রোগ ভেবে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতো!
.
এই নিয়ে নীবিড় ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া মিলে আম্মুকে ইনিয়েবিনিয়ে অনেক কথাই বুঝিয়েছে। তবে জানি না কতোটুকু সফল হয়েছে। কারণ আম্মুর এখন পর্যন্ত কোনো পজিটিভ রিয়াকশন চোখে পড়ে নি আমার। আম্মু শুধু ভাইয়াদের কথা গুলো শুনেই গেছে। মস্তিষ্ক পর্যন্ত নিয়ে গেছে কি না সন্দেহ। নিত্য আপু এই প্রথম আম্মুর সামনে মাথা নত করে বসে আছে। আসলে এতোক্ষণ উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকেও আম্মুর কোনো উত্তর না পেয়ে আপু ধরেই নিয়েছে আম্মু রাজি নন। তাই নিজের মায়ের মতো দেখে আসা মামনিকেও যেনো আজ অচেনা লাগছে তার। সাথে অগ্নি ভাইয়া তো টেনশনে একেবারে চুপসে গেছে। এমনি সময় হলে আমি ভাইয়ার এরকম নার্ভাস ফেইস দেখে হেসে কুটিকুটি হয়ে যেতাম। কিন্তু এই মুহূর্তে ভাইয়ার অসহায়ত্বটা বড্ড কষ্ট দিচ্ছে আমায়।
.
অনেক্ষণ যাবৎ আম্মুর কোনো হেলদোল নেই দেখে নীবিড় ভাইয়া বুক ফুলিয়ে একটা দীর্ঘঃশ্বাস টেনে বলে উঠলেন,
– মামনি…!
.
আম্মু এবার নড়েচড়ে বসে কপাল কুঁচকে বলে উঠলো,
– আমি নিত্যকে নিজের বৌ মা বানাতে পারবো না ব্যাস….!
.
আম্মুর উচ্চারিত এই একটা সেনটেন্স যেনো মুহূর্তেই কতো শতো প্রাণ চুরমার করে শেষ করে দিলো। দুমড়ে মুচড়ে উঠলো আমার হৃদয়। নিত্য আপু প্রায় কেঁদেই দেবে যেনো। রুশো ভাইয়ার হুশ নেই কখন যে কাটা বাদ দিয়ে আঙ্গুল চুসতে শুরু করে দিয়েছে। এদিকে নীবিড় ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া যেনো এখনোও এক টুকরো আশা নিয়ে করুণ চোখে আম্মুর মুখপানে চেয়ে রয়েছে।
এই ভয়ানক হৃদয় ভাঙ্গা পরিস্থিতিতে আবারও পিপাসায় পেলো আমায়। এবার সাথে গ্লাস না থাকায় অগত্যা জগ উঁচু করে হা করে পানি খেতে লাগলাম আমি।
আম্মু আবারও বলে উঠলো,
.
– হ্যা! আমি নিত্যকে নিজের ছেলের বৌ বলে মানবো না কারণ………(একটু থেকে)
ওকে আমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসি। ও শুধু নামে আমার ছেলের বৌ হবে। কিন্তু আসলে ও আমার মেয়ে। ঠিক অনন্যার মতোই!
.
আম্মুর উপরিউক্ত উক্তি শুনা মাত্রই আমার জগ থেকে মুখে ঢালতে থাকা পানি মুখে না পড়ে জামায় পড়ে গেলো সাথে মুখে যেটুকু পানি নিয়েছিলাম তা গিলার আগেই ভুসসসস….করে বেড়িয়ে গেলো।
এদিকে রুশো ভাইয়া অন্যমনস্কতার বশে মুখে ঢুকানো আঙুলটিতে “কচ” করে নিজেই কামড় বসিয়ে “আউচচ!” করে উঠলো।
নিমিষেই সবার মুখেই খুশির ঝিলিক। খুশিতে চোখ চকচক করে উঠলো সবার৷ কিন্তু সবাই যেনো বাক প্রতিবন্ধী হয়ে গেলাম। আম্মু সবার এমন অবস্থা দেখে নিজের আগের মুড বদলে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
.
– কিরে চুপ করে গেলি কেনো! বল কেমন দিলাম?
.
রুশো ভাইয়া মামনির কথার পরিপ্রেক্ষিতে আনমনেই বলে উঠলো,
.
– ওত্তেরি..!
কি চিজ তুমি মনি,
থোরি দের আগেই হয়ে গিয়েছিলে সবার শনি!
হায়রে ফ্লেবার চেঞ্জের খনি,
তাইতো তোমাকেই খুঁজছে এ দুচোখের মনি।
ওগো রং পাল্টানো অনামিকা,
হবে কি আমার গল্পের নায়িকা?
.
(আম্মুর নাম অনামিকা) রুশো ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কবিতায় সবাই তার দিকে কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টি রেখে পর মুহূর্তে হু হা করে হেসে উঠলাম। আম্মু মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো,
.
– এই বয়সে এসে নায়িকা বানাচ্ছিস? আমি যখন অনুর বয়সী ছিলাম তখন কতো সুন্দর ছিলাম! তখন কোথায় ছিলিস?
.
রুশো ভাইয়া মাথা চুলকে বলে উঠলো,
– কোথায় আবার? তোমার বোনের পেটে!
.
এবার সবার হাসির বেগ যেনো আরোও বেড়ে গেলো। উফফ রুশো ভাইয়াও হয়েছে একটা হাসির ডিব্বা! সত্যিই ভাইয়ার যে বউ হবে সে নিঃসন্দেহে অনেক লাকি হবে।
.
🍁
.
রুশো ভাইয়া মাথা চেপে ধরে বসে আছে। পাশেই চুপচাপ চিন্তিত হয়ে বসে আছি আমরা সবাই। রুশো ভাইয়ার মতো এতো হাসিখুশি মানুষের মলিন মুখটা নিতে পারছিনা আমরা কেউই।
নীবিড় ভাইয়া আবারো রুশো ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,
.
– হেই ড্রিমার, কি হয়েছে সেটা বলবে তো। আমি সলিউশন বের করবোই ট্রাস্ট মি।
.
রুশো ভাইয়া এবার হাত সরিয়ে মুখ তুলে তাকালো। বাচ্চাদের মতো ঠোট উলটে বলে উঠলো,
– কি বলবো ব্রো! এবারের স্টোরিটাও হিট হলো না। এতো ভালো ক্যারেক্টার গুলো এড করলাম তাও হলো না।
.
নীবিড় ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া নিজেদের মধ্যে ইশারায় কিছু কথা বলে আবারও কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করলেন। তারপর হুট করেই নীবিড় ভাইয়া বলে উঠলেন,
.
– একটা কথা মন দিয়ে শুনো রুশো। স্টোরিতে কিন্তু শুধু অন্যদের ফলো করে ফিলিংস এড করলে সেটা খুব একটা ভালো প্রোমোশন পাবে না। তুমি অন্যকে না দেখে নিজেকে দেখো। অন্যরা কি ইম্যাজিন করছে সেটা না ভেবে তুমি নিজে কি ইম্যাজিন করছো সেটা নিয়ে ভাবো। তুমি ধরে নাও তোমার স্টোরির মেইন ক্যারেক্টার তুমি নিজেই। তুমি কি ফিল করছো সেসব নিয়ে ভাবতে হবে তোমায়। এই টেকনিকটা এপ্লাই করে নেক্সট স্টোরি লিখো। আই থিংক দ্যাট উইল বি বেটার।
.
রুশো ভাইয়া খুবই মনোযোগ সহকারে নীবিড় ভাইয়ার কথা গুলো শুনলো। উনার কথার অর্থ বুঝতে পেরে খুশিতে চোখ চকচক করে উঠলো ভাইয়ার। রুশো ভাইয়া খুশিতে এক লাফ দিয়ে নীবিড় ভাইয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এদিকে নীবিড় ভাইয়া হুট করে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হওয়ার টাল সামলাতে না পেরে রুশো ভাইয়াকে নিয়েই ধপাস করে বিছানায় পরে গেলেন। এই সিন দেখে আমি সহ নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া হু হা করে হাসতে শুরু করে দিলো।
অদ্ভুদ ব্যাপার আমাদের সাথে সাথে নীবিড় ভাইয়া আর রুশো ভাইয়াও বিছানায় পড়ে থেকে হাসতে শুরু করে দিলেন। যেটা দেখে আমি চোখ ছোটছোট করে সাদা বিলাইয়ের দিকে তাকালাম। এতোক্ষণে রুশো ভাইয়ার জায়গায় আমি হলে নির্ঘাত ধাক্কা মেরে ফেলে দিতেন আমায়। অথচ রুশো ভাইয়ার উনার ওপর পড়ায় আরোও হাসছেন উনি! ফাজিল পোলা!
.
🌹
.
পরের দিন…..☀

আজ নিত্য আপুর আব্বুর আমাদের বাসায় আসার কথায় আসার কথা। এনগেজমেন্ট এর কথা বলার জন্য। প্রথমে আমাদেরই যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আম্মু চান না উনাকে বাড়তি ঝামেলায় ফেলতে। এমনিতেই কাজের চাপ উনার বেশি। নিত্য আপুর আম্মু তো অনেক আগেই গত হয়ে গেছেন। অথচ আপুর আব্বু চাইলেই আবারও বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। আপুর মুখের শুনা তারা একে ওপরকে ভীষণ ভালোবাসতেন।
এসব ভেবেই বুক চিরে দীর্ঘঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার।
.
গাল ফুলিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছি আমি। অবশ্য ইচ্ছে করে ফুলিয়ে নেই। তারও যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। কারণটা হলো আমার আক্কেল দাঁত গজাচ্ছে। গালের ডান সাইড ফুলে বোম্ব হয়ে আছে আমার। নিজেকে আয়নায় দেখতেই হাসি পাচ্ছে আমার নিজেরই আর তো ভাইয়ারা! সেই কখন থেকে অগ্নি ভাইয়া আমার মজা নিয়ে চলেছে৷ রুশো ভাইয়া না হাসলেও দাঁত কেলিয়ে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে এই বলে,
.
– আরে ছুটকি! তোর এতো কম বয়সে আক্কেল হবে ভাবা যায়? অনেকের তো বুড়ো বয়সে হয়। তখন হয়ে কোনো লাভ আছে নাকি? শুধু ব্যথাটা বেশি করে বুড়ো বয়সে উঠলে।
.
কিন্তু এরা আমার মুড অফের কারণ বুঝতে পারছেনা। মোট কথা আমি এই ফোলা গাল নিয়ে ভার্সিটি যেতে পারবোনা। ভাইয়া তো অলরেডি আমাক “গোল আলু” উপাধিই দিয়ে ফেলেছে, না জানি ভার্সিটিতে গেলে আরোও কি কি উপাধি পাবো আমি। সেই ভয়েই আজ ভার্সিটি যাওয়ার প্লান অগত্যা ক্যান্সেল করে দিলাম। আজ নাকি ভাইয়াও যাবে না তাই শোক টা কিঞ্চিত কমে এলো আমার। কিন্তু রাত্রির সাথে আড্ডা না দেওয়া পর্যন্ত তো আমার পেটের ভাত হজম হবে না। উফফফ…..! কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।
আমার গোমড়া মুখ দেখে রুশো ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
.
– ছুটকি, খুব ব্যথা করছে কি?
.
আমি চট করে রুশো ভাইয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে শুরু করি,
– আরে আমার দাঁত ব্যাথা করছেনা। শুধু ফুলে আছে এই। আর আমার মুড অফ কারণ আজ রাত্রির সাথে দেখা হবে না।
.
রুশো ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো,
– আরে এটা আবার কোনো প্রবলেম হলো? এটম বোম্বকে আসতে বল বিকেলে। নীবিড় ব্রো রাও তো আসবে তখন। সবাই মিলে নিত্য আর অগ্নি ব্রো কে নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।
.
রুশো ভাইয়ার কথা শুনে নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মেরে দিলাম আমি। সাদা বিলাই ঠিকই বলে। আমি আসলেই একটা স্টুপিড। রাত্রিকে আসতে বললেই যেখানে হয়ে যায় সেখানে আমি মুখ গোমড়া করে বসে আছি।
.
🍂
.
গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। আজ এই দাঁতের ব্যাথার জন্য দুপুরে খাইনি আমি। যদিও বাম দিক দিয়ে খাওয়া যেতো তবুও কেনো যেনো খেতে ইচ্ছে করে নি। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে যাচ্ছে তাও রাত্রির কোনো খবর নেই। নিত্য আপুরা অনেকক্ষণ আগেই এসেছে। ড্রয়িংরুমে বসে সবাই সব কিছু ফাইনাল করে নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়াকে একা কথা বলতে পাঠিয়েছে। বর্তমানে অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপু ছাদে অবস্থান করছে। আর আমি কিচেনে জুস নিতে এসেছি। নিত্য আপুর আব্বু আর আমার আম্মু আব্বু বসে গল্প করছেন। কিন্তু নীবিড় ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পারছিনা। কে জানে কোথায় গেলেন উনি।
.
জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে গিয়ে ঠাসস…করে পিলারের সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্যালেন্স সামলে দাঁড়ালাম আমি। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই আমার মুখ “হা” হয়ে গেলো। একি! এতো কোনো পিলার নয়। এতো জ্বলজ্যান্ত সাদা বিলাই। উনি নিজের পরিহিত শার্টের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছেন। তার কারণ আমার হাতে থাকা জুসের গ্লাসের অনেকটা জুস উনার শার্টে পড়ে গিয়েছে।
.
– স্টুপিড….! চোখ কি পকেটে খুলে রাখো তুমি? কি করলে এটা! আমার পুরো শার্টই তো ভিজিয়ে দিলে।
.
আমি জ্বিবে কামড় দিয়ে উনার ধমক শুনে যাচ্ছি। আল্লাহ কেনো যে বারবার উনার সাথেই আমার এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলেন তা উনিই জানেন!
হায় আল্লাহ! এখন কি করবো আমি?
ভাবতে ভাবতেই একটা বুদ্ধি এলো মাথায়। মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলাম,
.
– ভা….ভা…ভাইয়া আপনি শার্টটা আমাকে দেন। আমি ওয়াশ করে দিবোনি। আপনি বরং ভাইয়ার কোনো শার্ট পরে নিন। প্লিজ…..!
.
আমার কথাটা হয়তো উনার পছন্দ হলো। আমাকে ভাইয়ার রুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে উনি একটা টি-শার্ট পড়ে বেড়িয়ে এলেন। আমার হাতে উনার জুসে ভিজে যাওয়া শার্টটি দিয়ে বলে উঠলেন,
.
– গো..! সুন্দর করে ওয়াশ করবে। একটা দাগও যদি থাকে তাহলে বুঝতেই পারছো কি করবো….! (বাঁকা হেসে)
.
আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে ছুট লাগালাম আমার রুমে। গিয়েই দরজা লক করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।
১০ সেকেন্ড ও হয়নি আবার হুট করে কেউ দরজায় নক করায় ধরফড়িয়ে উঠলাম। আবারো নিশ্চয় সাদা বিলাই এসেছেন। আরে উনার কি আক্কেল হুশ জ্ঞান বলতে কিছুই নেই নাকি? রুমে আসলাম ১ মিনিটও হয়নি তাতেই শার্ট ফেরত নিতে এলেন নাকি?
রেগেমেগে দরজা খুলতেই আমি “হা” হয়ে গেলাম। আমার সামনে একটা ময়দা সুন্দরী দাঁড়িয়ে আছে। একটু ভালো করে দেখে বুঝলাম এটা আর কেউ না আমার বেস্টু রাত্রি।
.
– ওই হা করে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? ঢুকতে দিবি না?
.
– তুই হঠাৎ এতো সেজেগুজে এসেছিস কেনো রাত না দিন? ওহ এবার বুঝলাম এই জন্যই আসতে আসতে তোর সন্ধ্যে লেগে গেলো। শাঁকচুন্নি! কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম আমি জানিস? এই দেখ পেট ফুলে রয়েছে। কতো কথা জমা আছে ভাব!
.
– হয়েছে হয়েছে। মন চাইলো তাই সাজলাম। (আমার গালের দিকে তাকিয়ে) এই তোর গাল ফুলে গেছে কেনো বলতো?
.
উফফফ এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি। প্রসঙ্গ এড়াতে রাত্রিকে টেনে এনে খাটে বসিয়ে আমি ওয়াশরুম যেতে যেতে বলে উঠলাম,
– ” আক্কেল হচ্ছে আমার, যেটার অভাবে তুই আজো বেক্কেল!”
.
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম আমি। রাত্রি হয়তো আমার বলা কথার কোনো মিনিং বুঝতে না পেরে এতোক্ষণে মাথা চুলকানো শুরু করে দিয়েছে। চুলকোলে চুলকোক। আমার কি? আপাতত এই জুসে ভরা সাদা বিলাইয়ের সাদা শার্টের সাথে যুদ্ধ করা শুরু করি আমি।
.
🌺
.
রাত্রি অনন্যার অপেক্ষা করছিলো কিন্তু ৫ মিনিটেও না বেড় হওয়ায় বোর হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো রাত্রি। ওর চোখ জোড়া শুধু এখন অগ্নিকেই খুঁজে চলেছে। নীবিড়ের আব্বুকে নিচে দেখেও তেমন কোনো অর্থ বুঝতে পারে নি রাত্রি। কারণ উনাদের আসা যাওয়া খুবই কমন।
.
রাত্রি হেটে হেটে রুশো যেই রুমে ছিলো সেই রুম ক্রস করছিলো এমন সময় রুশোর চোখ যায় রাত্রির দিকে। নেভিব্লু কালারের সিল্কের শাড়ি পড়েছে সে। কানে বড়বড় ঝুমকো। চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া। সাথে ভারী মেকআপে যেনো অপরূপ লাগছে তাকে। রাত্রি হাটতে হাটতে রুশোর রুম ক্রস করে ছাদের দিকে এগোতে লাগলো। রাত্রিকে ছাদের দিকে যেতে দেখে রুশো রাত্রিকে আটকাতে তার পেছন পেছন রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
.
অগ্নির কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেছে নিত্য। তার অবাধ্য চুলগুলো অগ্নির বুকজুড়ে বিরাজ করছে। এই হাল্কা বাতাসে দুজনই যেনো প্রেমের জোয়ারে ভাসতে শুরু করে দিয়েছে। দুজনেরই দৃষ্টি শুণ্যে। নীরবতার মাঝেও যেনো তারা মনে মনে কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে।
.
রাত্রি ছাদে পা রাখা মাত্রই এই দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ায়। তার চোখ থেকে অবলীলায় নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু সেই শক্তিটুকুও যেনো পাচ্ছে না সে।

রাত্রিকে দরজাতেই থেমে যেতে দেখে রুশোও থেমে যায়। সে রাত্রির মুভমেন্ট পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। হঠাৎ রাত্রির চোখ পানি দেখে বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে ওঠে রুশোর। দুমড়ে মুচড়ে যেতে থাকে তার শতশত আশা। তাহলে কি তার সন্দেহই ঠিক ছিলো? রাত্রি অগ্নিকে ভালোবাসে! তাহলে তো রাত্রি ভেঙ্গে পড়বে। সে যে রাত্রিকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবে না।
.
রাত্রি এক পা দু পা করে পেছাতে পেছাতে একসময় উলটো দিকে ঘুরে কাঁদতে কাঁদতে ছুট লাগায়। রাত্রিকে আসতে দেখে রুশো দেয়ালের অপর পাশে নিজেকে আড়াল করে সরে দাঁড়ায়। হাজারও দুশ্চিন্তা ভর করতে থাকে তার মাথায়। কেমন এক চিনচিনে অসহ্যকর ব্যাথা হতে থাকে বুকের বাম পাশে। রাত্রির জন্য ভয় হতে শুরু করে রুশোর। রাত্রির ছুটে নিচে নেমে যাওয়া দেখে কিছুক্ষণ স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে সে। হঠাৎ রাত্রি যদি কিছু করে বসে ভেবেই রুশোও ততক্ষণাত নিচে নেমে আসে।
.
– রুশো রাত্রি ওভাবে বেড়িয়ে গেলো কেনো? তুই কি আবারও ঝগড়া করেছিস ওর সাথে? (মনি)
.
রাত্রি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে শুনে এক অজানা ভয় এসে বাসা বাধে রুশোর মনে। মনিকে চিন্তা করতে মানা করে এক ছুটে বেড়িয়ে যায় রুশোও! এদিকে দুজনের এভাবে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে যায় সবাই।
.
🌸
.
অন্যমনষ্ক হয়ে রোডের মাঝ বরাবর হেটে চলেছে রাত্রি। এই নিয়ে দু তিনটে গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে গিয়েছে সে। এমন সময় ওপর পাশ থেকে একটা ট্রাক ফুল স্পিডে ছুটে আসছে তার দিকে। কিন্তু রাত্রির সে দিকে কোনোই ভ্রুক্ষেপ নেই। ট্রাক ড্রাইভারটাও মাতাল। মদ খেয়ে দুলতে দুলতে ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছে লোকটি।
ট্রাকটা একদম কাছাকাছি চলে আসা মাত্রই কেউ হ্যাঁচকা টান মেরে রাত্রিকে রোডের সাইডে নিয়ে গিয়ে সজোড়ে থাপ্পড় মেরে দেয় তার গালে।
.
.
.
চলবে……………………💕
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩০♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে চেয়ে রয়েছে রাত্রি। তার ঠিক সামনে হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে চলেছে রুশো। রক্তরাঙা চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে সে। থরথর কাঁপছে রুশোর গোলাপি আভায় মোড়ানো ঠোঁটজোড়া। গায়ের ফর্সা রং পাল্টে লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। দুপাশের চুলের চিপ বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।
রোড সাইডের সোডিয়াম বাল্বের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুশোর এমন ভয়ানক রূপ।
.
রাত্রি রুশোর এমন রূপের সাথে পূর্ব পরিচিত নয়। সে তো সব সময় দাঁত কেলিয়ে থাকা হাস্যজ্বল রুশোকে চেনে। কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই রাগতে দেখি নি রুশোকে সে। যেখানে প্রচন্ড রেগে দু-চারটে থাপ্পড়ও খেয়ে ফেলার কথা ছিলো, সেখানেও খুবই ঠান্ডা মেজাজে আবিষ্কার করেছে সে রুশোকে। রুশোর এরকম ভয়ানক চাহনী দেখে রাত্রি শুধু ভয়ই পাচ্ছে না সাথে চরম অবাকও সে। কিন্তু এখন এসবে পাত্তা না দিয়ে রাত্রি হুট করেই রেগে গেলো৷ তার প্রশ্ন,”কেনো রুশো তাকে সরিয়ে আনলো!”
.
— আপনি আমাকে সরিয়ে আনলেন কেনো ওখান থেকে? হ্যা? (অনেকটা জোড়েই বললো রাত্রি)
.
রুশো নিজেকে শান্ত করবার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না সে। কি করেই বা পারবে? রাত্রিকে ওভাবে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কি অনুভূতি হয়েছিলো সে তো শুধু সেই জানে। রুশোর মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তার নিজের প্রাণ বেড়িয়ে যাচ্ছে। প্রাণ বাজি রেখে ছুটে এসে রাত্রিকে বাঁচিয়েছে সে। যদি আর কয়েক সেকেন্ড দেড়ি হতো তখন কি হতো? ভেবেই বারবার মোচড় দিয়ে উঠছে রুশোর হৃদপিন্ড।
রুশোর রাগ জিনিসটা বরাবরই কম। সহজে রাগবার পাত্র নয় সে। তবে বিশেষ কোনো কারণে যদি একবার তার রাগ উঠে যায় তবে তা থামানো খুবই কষ্টসাধ্য। এখনও ঠিক তাই।
রাত্রি রুশোর কোনো জবাব না পেয়ে আবারও চেঁচিয়ে উঠলো,
.
— কি হলো বলুন! কেনো সরিয়ে নিয়ে এলেন আমায়? মরে যেতাম আমি। এই পৃথিবী থেকে চিরতরে মুক্তি পেয়ে যেতাম। আমি মরতে চাই…..
.
আর কিছু বলা হয়ে উঠলো না রাত্রির। তার আগেই আবারও রুশোর হাতের ৫ আঙুল গিয়ে পড়লো তার অপর গালে।
.
— সাহস কি করে হয় তোমার? খুব মরার শখ না? কিন্তু তোমার সেই ইচ্ছেটা আমি বেঁচে থাকতে পূরণ হবে না। গট ইট? (চেঁচিয়ে)
.
রুশোর চিৎকারে কেঁপে উঠে রাত্রি। সাথে আকাশের বুক চিরে নামতে থাকে ঝুম বৃষ্টি। আজ আকাশে মেঘ করছিলো অনেকক্ষণ ধরেই।
বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেতে থাকে রুশো আর রাত্রি। তারা দুজনেই নিরদ্বিধায় গায়ে মাখতে থাকে বৃষ্টি কণা গুলো। রাত্রি নিশ্চুপ থেকে যায় এবার। শুধু চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনাজল যা বৃষ্টির সাথে মিশে একাকার হয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার গাল বেয়ে।
.
রুশো কিছুক্ষণ আবারও চুপ থেকে রাগটাকে দমিয়ে নিয়ে রাত্রির গালে আলতো করে হাত রেখে বলতে থাকে,
— খুব লেগেছে না? আই এম সরি রাত্রি। একচুয়ালি আমি নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি ট্রাস্ট মি। প্লিজ তুমি আর মরার কথা বলবানা। আমার সহ্য হয় না।
.
রুশো রাত্রিকে নাম ধরে ডাকায় কিছুটা অবাক হয় রাত্রি। কিন্তু পর মুহূর্তে আবারও রেগে যায়। ঝাঁঝালো
কন্ঠে বলে ওঠে,
.
— আমি মরলে আপনার কি হ্যা? বাঁচতে চাইনা আমি! অগ্নি ভাইয়াকে ভালোবাসি আমি। উনাকে না পেলে আমি বেঁচে থেকে কি করবো?
.
রুশোর বুকটা আবারও ছ্যাঁত করে ওঠে। এতো চেষ্টা করে নিজের রাগ থামালো কিন্তু আবারও রাত্রি তার দমিয়ে থাকা রাগটাকে টেনে বের করে আনলো।
রুশো রাত্রির দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,
.
— আমার কি মানে? আমার অনেক কিছু! আর তুমি শুধু অগ্নি ব্রো কেই ভালোবাসো? নিজের পরিবারকে ভালোবাসো না? নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন এদের কারোর কোনো ভ্যালিউ নেই তোমার কাছে? যারা ১৯ টা বছর নিঃস্বার্থ ভাবে তোমার দেখভাল করে আসলো, তোমাকে ভালোবেসে আসলো তাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই তোমার? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তুমি তো নিশ্চিন্তে মরে যেতে, তোমার পরিবারের ওপর দিয়ে কি যেতো কোনো ধারণা আছে তোমার? মুসলমান হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নাও কিভাবে তুমি? কি ভেবেছো, মরে গেলে সব ল্যাঠা চুকে যাবে? পরকালে শান্তিতে থাকবে তুমি? নেভার!
এখন কি কষ্ট পাচ্ছো তার থেকে হাজার গুণ কষ্ট পেতে হবে তোমাকে।
.
বলেই রাত্রিকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে রুশো। রুশোর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে। কিন্তু সে তো নিরুপায়। ছেলেদের যে হাজার কষ্টতেও চোখের জল ফেলা মানায় না। বিশেষ করে রুশোর মতো একজন হেসে খেলে বেড়ানো মানুষকে তো কোনোভাবেই না।
তাই সে মুখ ফিরিয়ে কষ্টগুলো গোপন করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
এদিকে রাত্রির মনে রুশোর বলা প্রত্যেকটা কথা প্রতিধ্বনির মতো বাজতে থাকে। রুশোর বলা প্রত্যেকটা কথা সত্য, যুক্তিসঙ্গত! সে তো এসব আগে ভাবে নি। শুধু অগ্নির কথাই ভেবে গেছে সে। অজান্তেই রুশোর বলা প্রতিটা কথা রাত্রিকে শক্ত হতে সাহায্য করতে থাকে। রাত্রি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘঃশ্বাস টেনে রুশোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
.
— ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া!
.
রুশো এতোক্ষণ উল্টোদিকে ঘুরে চোখ বন্ধ করে ছিলো। রাত্রির কথা কানে পৌঁছানো মাত্রই চট করে ঘরে দাঁড়ায় সে। খুশিতে চোখ চিকচিক করছে রুশোর। রুশো চায় রাত্রি শক্ত হোক। বাস্তবতা বুঝুক। রুশো রাত্রিকে ভালোবাসলেও, কষ্ট পেলেও চায় শুধু রাত্রি ভালো থাকুক। ভালোবাসলেই যে ভালোবাসার মানুষটিকেও পেতে হবে এর তো কোনো মানে নেই। দূর থেকেও তো ভালোবাসা যায়।
ভালোবাসার মানুষটির পাশে থাকতে পারাটাই তো রুশোর কাছে অনেক। এর থেকে বেশি আর কিছু চায় না সে। কিচ্ছুটি না!
.
— রাত্রি তুমি যেহেতু অগ্নি ব্রো কে লাভ করো, সো এটা অবশ্যই চাইবে সে ভালো থাকুক! নয় কি? (শান্ত গলায়)
.
রাত্রি রুশোর প্রশ্নে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
রাত্রির উত্তর পেয়ে রুশোর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। রুশো আবারও বলতে শুরু করলো,

— তবে তুমি এটা নিশ্চয় জানো, অগ্নি ব্রো আর নিত্য একে অপরকে ভালোবাসে। সেই হিসেবে তোমার খুশি হওয়া উচিৎ। ভালোবাসার মানুষটা যা চায় তা পেলে খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
.
রুশোর কথায় মুখে হাসি ফুটে উঠলো রাত্রির। একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে রাত্রি বলে উঠলো,
— আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া। আমি আসলে তখন নিজের সেন্সে ছিলাম না। ব্রেইন কাজ করছিলো না। সব কিছু কেমন ধোঁয়াশা বলে মনে হচ্ছিলো আমার কাছে।
.
রাত্রি কথার মাঝে রুশো রাত্রিকে হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। তাদের পাশ কাটিয়ে দ্রুতবেগে যাওয়া ট্রাকটির টায়ার দ্বারা ছিটকে পরা কাদাজল রাত্রির গায়ে একটুর জন্য লাগতে লাগতে লাগেনি।
ট্রাকটি যেতেই রুশো রাত্রিকে ততক্ষণাত ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে,
.
— সরি সরি, তোমাকে না সড়ালে এতোক্ষণে কাদার ভূত হয়ে যেতে। ইউ নো তোমার মতো এটম বোম্ব কাদায় মেখে গেলে একদম পেত্নি পেত্নি লাগবে।
.
রাত্রি রুশোর কথায় চোখ ছোট ছোট করে ভ্রু কুঁচকে রুশোর দিকে তাকানো মাত্রই রুশো দুহাতে নাক চেপে ধরে বলে উঠলো,
— এই না না প্লিজ! এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগে নাক লাল হয়ে গিয়েছে। এর থেকে বেশি লাল বানালে সত্যিই ছুটকির বলা টমেটো হয়ে যাবে নাকটা!
.
রাত্রি রুশোর এমন বাচ্চামো দেখে ফিক করে হেসে দেয়। তার হাসি দেখে রুশোও হেসে ফেলে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রাত্রির ওই মুখখানায়। বৃষ্টিতে ভিজে খিলখিল করে হাসতে থাকা প্রেয়সীকে যেনো অপরূপ লাগছে তার কাছে।
রাত্রি রুশোকে বোকার মতো হা করে থাকতে দেখে বললো “চলুন এবার যাওয়া যাক! ঠান্ডা লেগে যাবে তো!”
রুশোও মুচকি হেসে সম্মতি জানিয়ে রাত্রির পাশে হাটা ধরলো।
.
🍁
.
— আম্মু কি হলো বলোতো? সেই কখন বেড়িছে ওরা। বৃষ্টিও তো হচ্ছে। ফোনেও পাচ্ছিনা কাউকে। রাত্রি তো ফোন আমার বিছানাতেই ফেলে গেছে।

— রুশো গেছে তো! চিন্তা করিস না ড্রাইভারকেও তো পাঠিয়েছি খুঁজতে। ঠিক চলে আসবে।
.
আমাদের কথার মাঝখানেই আগমন ঘটে রাত্রি আর রুশো ভাইয়ার। আমরা সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। দুজনেই ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। টপটপ করে পানি পড়ছে দুজনের শরীর বেয়ে।
.
আম্মু দৌড়ে দুটো টাওয়াল এনে দুজনের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— কোথায় গিয়েছিলিস তোরা? হিসেব আছে কোনো সবাই কতো টেনশনে ছিলাম?
.
রুশো ভাইয়া টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো,
— আসলে মনি, ওকে একটু রাগিয়ে দিয়েছিলাম। তাই রাগ করে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। সরি আর এমন হবে না।
.
— রুশো, কবে সিরিয়াস হবি তুই? এমন মজা কেউ করে? তোদের নিয়ে আমি আর পারিনা। তোর মা কে কমপ্লেইন দিতে হবে।
.
রুশো ভাইয়া আম্মুকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থেমে গেলো কারণ ভাইয়ার গা ভেজা। অসহায় ভাবে ঠোঁট উলটে বলে উঠলো,
— সরি মনি আর হবে না। প্লিজ এটাই লাস্ট টাইম।
.
আম্মু আর কিছু বললো না, ড্রাউভার আংকেল কে ফোন করে ঘুরে আসতে বললো। সাথে রুশো ভাইয়াকে অগ্নি ভাইয়াকে ঘরে পাঠিয়ে দিলো, আর আমায় বললো রাত্রিকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে চেঞ্জ করিয়ে আনতে।
আমিও আর কথা বাড়ালাম না। রাত্রিকে নিয়ে ঘরে চলে এলাম। সবাই নিশ্চিত হলেও আমার মনে কেমন একটা খটকা থেকেই গেলো। এতো ছোট কারণে তো আর জল এতোদূর গড়াবেনা। রাত্রির এক্সাক্টলি ঠিক কি হয়েছিলো তা আমাকে জানতে হবে। আজ না হোক কাল জানতেই হবে।
.
🍂
.
রাত্রিকে আজ থেকে যেতে বললাম। আন্টিকে ফোন করে অনেক তেল লাগিয়ে তবে কাজ হলো। বৃষ্টির দোহাই দেওয়ার পরই থাকতে দিতে রাজি হলেন আন্টি।
নীবিড় ভাইয়ারা একটু পরই চলে যাবেন। আম্মু থেকে যেতে বলেছিলো কিন্তু আংকেলের খুব সকালে অফিস আছে সাথে অফিসের কাজও আছে যা রাতে বাসায় গিয়ে করবেন।
আপাতত আমার যেটা কাজ তা হলাও সাদা বিলাইয়ের সাদা শার্টটা উনাকে ফেরত দিয়ে দেওয়া। জুসটা অবশ্য খুব ভালো করেই ওয়াশ করে দিয়েছি কিন্তু ভেজা শার্ট তো আর দিতে পারবোনা। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে আমার হেয়ার ড্রায়ার বের করলাম। হেয়ার ড্রায়ার অন করে চুল না শুকিয়ে শার্ট শুকোতে লাগলাম।😅
.
শার্ট প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে অনেকটা। তাই তাড়াতাড়ি করে ভাঁজ করেই ছুট লাগালাম উনার কাছে। কিন্তু কপাল আমার। গেট খুলে ওতো না দেখে হন্তদন্ত হয়ে বেড়োতে গিয়ে ঠাস করে উনার সাথেই আবার ধাক্কা খেয়ে বসলাম। আর আমার ঠোঁট গিয়ে ডিরেক্ট বসে গেলো উনার গলায়!
তাড়াতাড়ি করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুখে ইনোসেন্ট মার্কা হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
.
— মেইনে কুছ নেহি কিয়া ভাইয়া!
.
উনিও আমার চেয়ে কম কিসে আমার দিকে তাকিয়ে বাম পাশের ভ্রু উঁচু করে বলে উঠলেন,
— লেকিন আব ম্যায় বহত কুছ কারুংগা!
.
আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে উনার গলার দিকে তাকালাম। কিন্তু যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ বোধহয় কোটর থেকে বেড়িয়ে হাতে চলে আসবে।
উনার গলায় আমার ঠোঁটের লিপস্টিকের দাগ! হায় আল্লাহ কি ভেবে যে আজ লিপস্টিক দিতে গিয়েছিলাম! উনি তো দেখলে আমাকে আর আস্ত রাখবেন না। ভয়ে তো এখন বলতেও পারবোনা। তার থেকে ভালো পাতলি গালি সে নিকাল যাও!
যেই ভাবা সেই কাজ, উনার হাতে শার্টটা ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম আমি।
যা হবে হোক। আমার সামনে না হলেই ভালো!
হেই সামবদি খিল মিহ প্লিজ!😣
.
অনন্যার ওভাবে চোরের মতো পালিয়ে যাওয়া দেখে হেসে ফেলে নীবিড়। আনমনেই বলে ওঠে সে, “পাগলী একটা!”
.
.
.
.
চলবে…………………….💕

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here