মৃগতৃষ্ণা #পর্ব :০৫

0
147

#মৃগতৃষ্ণা
#পর্ব :০৫
রফিক তড়িঘড়ি করে আরেকটু মাটি সরাতে যাবে ঠিক তখনই একজন প্রহরী চেঁচিয়ে উঠলো এই ওখানে কেরে?কে ওখানে?
রফিক ভয়ে মাটি না সরিয়ে বরং আরও মাটি চাপা দিতে লাগলো যদি ওকে কেউ এর জন্য দায়ী করে তখন।আর এমন অচেনা জায়গায় হাজারো সমস্যা ওত পেতে থাকে, সে ইতিহাসের ছাত্র হওয়ার এতটুকু অবগত ছিলো কারন এমন অনেক ইতিহাস আছে যেখানে একজন মানুষ কোনো অপরাধ না করেই শাস্তি পেয়েছেন। তাই রফিক আর সে ভুল করলো না। রফিক ধরফর করে উঠে পড়ল আর বললো আ-আ আমি এখানে।
প্রহরী রাগী কন্ঠ জড়িত স্বরে বলে উঠল এইখানে কারো আসা নিষেধ। আপনাগো রাজবাড়ী ঘুইরা দেখার অনুমতি দেওয়া হইছে সেইটাই বরং দেখেন এইখানে কি করতে আইছেন?
রফিকের মস্তিষ্ক থেকে উত্তর বের হচ্ছে না কিছু বলার মতো ভাষা খুজে পাচ্ছেনা তবে নিষিদ্ধ স্হান শুনে তার সন্দেহ আরও প্রবল হয়। সে নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো।তার কক্ষে এসেই গোসল সেরে নিলো আর ভাবতে লাগলো কেনো রাজবাড়ীর পেছনটায় যাওয়া নিষেধ তাহলে কি এখানে এমন কোনো কর্মকান্ড হয় যা জেনে গেলে তাদের বিপদ হবে।
আর ওই বাচ্চাটার হাতের আঙুল গুলো যখন রফিক ধরেছে বুকের মধ্যে আচমকাই সে একটা চাপা কষ্টও অনুভব করে।
বন্ধুদের এই ব্যাপারে কিছু বলা ঠিক হবে কিনা সেটাও ভাবতে থাকে রফিক। আর কেউ ওর কথা বিশ্বাস না করলেও হেমন্তি ঠিক বিশ্বাস করবে এটা ও জানে। তাই রফিক রাজবাড়ীর অন্দরমহল থেকে হেমন্তিকে ডেকে আনে তাদের কক্ষে আর তার সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনাটি খুলে বলে। হেমন্তি অবাক যেমন হলো তেমন ভয়ও পেলো। এসব কি শুনছে ও।

এরপর হেমন্তি রফিককে বললো সে গতকাল রাতেই কোনো বাচ্চার চিৎকারের শব্দ পেয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করলে কিছুদূর খোঁজার পর পেছন থেকে সুলায়মান এসে তাকে রাগী কন্ঠ নিয়ে কক্ষে চলে আসতে বলে।
হেমন্তি দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালো। তারমানে গতকাল রাতে কোনো বাচ্চাকে মে*রে রাজবাড়ীর পেছনে পু*তে রাখা হয়েছিলো আর আজ সকালে রফিক যখন ওখানে গেলো তখন সে ওই বাচ্চাটার হাতের আঙুল গুলোই দেখতে পেয়েছে।
হেমন্তি এবার বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো রফিক চল আগে ওদের সবটা খুলে বলি নয়তো বা আমরাও কোনো না কোনো বিপদে পড়তে পারি। এর আগেই কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।
রফিক ওদেরকে কিছু জানাতে বারন করল কিন্তু হেমন্তি সেকথা না শুনে ওদেরকে ডেকে নিয়ে আসলো কক্ষে। এবার সিরাজ, দিগন্ত ও সোফিয়াকে ওরা দুজন দুজনের ঘটনাগুলো বললে ওরা একটু চমকে যায় ঠিকি তবে বিশ্বাস করতে চায় না। ওরা ভাবে এত দূরে একটা প্রাচীন বাড়ি আর ছিমছাম পরিবেশে বলেই হয়তো উল্টো পাল্টা ভাবছে ওরা।সবটাই ওদের মনের ভুল।

সিরাজ: এই তোরা আবার আমাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এসব বলছিস না তো? তোদের দুজনের সাথেই এই ঘটনা ঘটলো কই আমাদের কারো তো এমন মনে হলো না।
হেমন্তি এবার একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠল- তুই যেমন, সবাইকে তেমন ভাববি না।আমরা যা বলছি সত্যিসত্যিই বলছি।রাজবাড়ীতে কোনো না কোনো রহস্য তো আছেই।
রফিক হেমন্তির কথায় সায় দিয়ে বলল নয়তো বা বাড়ীর পেছনটায় যাওয়া নিষিদ্ধ হবে কেন বলতো?আর আমি স্পষ্ট কোনো বাচ্চার হাতের আঙুল দেখেছি, স্পর্শও করেছি মনে হচ্ছিল এক্ষুনি কেউ পু*তে রেখেছে হয়তো।

দিগন্ত: আচ্ছা তোরা এত কথা না পেচিয়ে চল সেখানে গিয়ে দেখে আসি রফিক সত্যি বলছে কিনা।তাহলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়।

সোফিয়া : তুমি কি কানে কম শুনিতে পাও, ওই স্থানে কারো যাওয়া নিষিদ্ধ করিয়াছে।

সিরাজ এবার মুখে মুচকি হাসি নিয়ে বলল -সোফিয়া এজন্যই তো বললাম ওই স্থানে যাওয়া নিষেধ তাই ওরা যা ইচ্ছে গল্প বানাচ্ছে। আমরা যেতেও পারবো না আর দেখতেও পারবো না।এই সুযোগে ওরা আমাদের বোকা বানাচ্ছে।
হেমন্তি সিরাজের এই স্বভাব টা বেশ অপছন্দ করে। যেকোনো কথারই ও অন্য মানে বোঝে, কোনো কথা সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। সিরাজের কথায় হেমন্তি রেগে গিয়ে বললো আজ রাতেই আমরা রাজবাড়ীর পেছনে সেই স্থানে যাবো আর তোদেরকে দেখাবো রফিক আর আমি মিথ্যা বলছি কি না!
রফিক হেমন্তির সাহস দেখে অবাক হলো।রফিক এসব ঝামেলায় জড়াতে বারন করলো কিন্তু হেমন্তি প্রমান করেই ছাড়বে। শুধু রাত হওয়ার অপেক্ষা।
_________
রূপা পাতালঘরেই রয়েছে কাল থেকে একবারও বেরোতে পারেনি মেয়েটা। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে।কিন্তু রূপার তো সুলায়মানের সাথে গল্প আর মজা করার কথা ছিলো।সেসবের কিছুই পারছেনা এমনকি যাদুও দেখতে পাচ্ছেনা। রূপার ভীষণ রাগ হয় অতিথি দের ওপর। তাদের আগমনের জন্যই রূপা এখন বন্দি।জল্লাদ রূপার খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়।কিন্তু রূপা খাচ্ছে না।
জল্লাদ খেয়াল করে রূপার মনটা একটু খারাপ।যে বয়সে বাচ্চাদের কান্না করার কথা সে বয়সের রূপা বড়দের মতো মুখ ভাড় করে থাকে। জল্লাদ রূপাকে মন খারাপের কারন জিজ্ঞেস করলে সে কোনো উত্তর দেয় না। জল্লাদ বুঝতে পারে সুলায়মানের জন্য তার মন খারাপ।
তাই তো জল্লাদ রূপাকে বলল রাত হলেই বড় বাবু( সুলায়মান) আসবে তোমার সাথে দেখা করতে রূপা। রূপার চোখেমুখে হাসির ঝলক দেখা দিলো সে লক্ষী মেয়ের মতো সবটা খেয়ে নিলো।

এদিকে সুলায়মান ছদ্মবেশে গ্রামের পর গ্রাম হেটেই চলেছে। কোথাও কোনো বাচ্চাকে একা দেখতে পাচ্ছে না। মনের মধ্যে এখন শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খায় ক*লিজা পাবো তো? নাকি খালি হাতে ফিরতে হবে।
না! না! তা হলে যে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।আমাকে যে কোনো মূল্যেই বাচ্চার ক*লিজা পেতে হবে।সুলায়মান আবার তার কাজে মন দিলো, পথ চলতে শুরু করল।

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো হেমন্তি আর রফিকের বুক ধরফর করছে চিন্তায় সবকিছু ওলটপালট লাগছে। কখন যে সুযোগ হবে রাজবাড়ী পেছনে যাওয়ার সেই চিন্তায় ছটফট করছে।
মি.সুলায়মান এখনো ফেরেনি, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। উনি আসার আগেই আমাদের যা করার করতে হবে তা নাহলে ওনার চোখে ফাঁকি দেওয়া মুশকিল।এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে উঠলো হেমন্তি।

অনেক চেষ্টা করেও ওরা রাজবাড়ীর পেছন দিকটায় যেতে পারছেনা।প্রহরী পাহাড়ায় আছে তার চোখ ফাঁকি দিয়ে পাঁচজন মানুষের সেখানে যাওয়াটা দুষ্কর।

এখন রাত হয়ে গিয়েছে তাই আবার প্লেন চেঞ্জ করতে হলো ওরা ঠিক করলো সেখানে শুধু সিরাজ আর হেমন্তি যাবে।বাকিরা অন্দরে থাকবে আর কেউ ওদিকটায় গেলে শিষ বাজিয়ে সাবধান করবে। তবে সেখানেও হলো আরেক বিপত্তি।
সুলায়মান এতক্ষনে বাড়ি ফিরে এসেছে। হেমন্তি আবারও চিন্তায় পড়ে গেলো কিভাবে কি করা যায়। এর মধ্যেই রাতের খাবার সেরে নিলো ওরা সবাই। এবার শুতে যাওয়ার পালা, ওরা যে যার কক্ষে গিয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর যখন সবাই ঘুমের ঘোরে চলে গেলো তখন ওরা পাঁচ জন বের হলো।
দিগন্ত, সোফিয়া আর রফিক অন্দরে আর হেমন্তি ও সিরাজ বাড়ীর বাইরে বেরোলো।কোনোরকমে প্রান হাতে নিয়ে ওরা বাড়ীর পেছনটায় পৌছালো।একটু অবাক হলো প্রহরী রাতে নেই, বিষয়টি অবাক করা কান্ডই বটে কেননা প্রহরী মানেই তো রাত- বিরাতে পাহাড়া দিবে।এতকিছু এখন ভাবার সময় নেই চুপিচুপি ওরা আলগা ও কাচা মাটির স্থানটি খোজার চেষ্টা করছিলো রাতের অন্ধকারে এদিকটায় কোনো আলোর ছিটেফোঁটাও নেই তবে সিরাজ সাথে করে দিয়াশলাই নিয়ে এসেছিলো।ওর কাছে এটা সবসময়ই থাকে কারন ও মাঝে মাঝেই ধূমপান করে।
এবার দিয়াশলাই এর আগুনের কিছুটা আলোতে সিরাজ রফিকের কথামতো কাচা মাটির স্থান খুজতে লাগলো অবশেষে সেটি খুজে পেলো কারন সেখানে সিরাজের পা একটু ডেবে ডেবে যাচ্ছিল। সিরাজ হেমন্তিকে ইশারা করলো এখানে খুড়তে হবে।দুজনে মিলে খোড়া শুরু করলো মাটি, কিন্তু কারো কোনো অস্তিত্বের ছিটেফোঁটা ও পাচ্ছেনা। দিয়াশলাই এর আলো বেশিক্ষণ স্হায়ী হয়না কাঠিটা পুড়তে পুড়তে সিরাজের হাতের আঙুলও স্পর্শ করে ফেলেছে সিরাজ আচমকাই কাঠিটা ফেলে দেয় নিচে। তাই অন্ধকারের মধ্যেই ওরা খুড়তে লাগলো কিন্তু না কোথাও কোনো বাচ্চার হাত খুজে পেলো না। ওরা দুজনেই ঘামছে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে যেকোনো সময় সুলায়মান চলে আসতে পারে এই ভয় হেমন্তির মনকে আরও ছটফট করাচ্ছে।এবার হেমন্তি হাঁপিয়ে ওঠে বলল সিরাজ দিয়াশলাই জালা, তারপর এখান থেকে চল কোনো কিছুই তো পেলাম না। সিরাজের চোখমুখে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি ফুটে উঠলো ও হেমন্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ও তার মানে রফিক শুধু আমাদের না বরং তোকেও বোকা বানালো। হাহ্।কথাগুলো বলতে বলতেই দিয়াশলাই জালালো সিরাজ।

হেমন্তির শরীরে অনেকটা শিহরণ জেগে উঠলো অন্ধকার রাতে একজন পুরুষ ও একজন নারী চারপাশে কেউ নেই।তারওপর হেমন্তির এত সন্নিকটে সিরাজের মুখের স্পর্শ কান ছুই ছুই অবস্থা, ফিসফিস করে কথা বলা কেমন যেন অন্যরকম মনে হলো ওর।

হেমন্তি সিরাজের সাথে ঝগড়া করতো অন্যসময় হলো তবে এখন কোনো কথাই বের হলো না মুখ থেকে। অবাক হয়ে চেয়ে আছে সিরাজের মুখপানে। দিয়াশলাই এর মিটমিটে আলোতে কি অপরূপ লাগছে সিরাজকে।হেমন্তি মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে।
হঠ্যাৎ ই শিষ বেজে ওঠে হেমন্তি আর সিরাজ বুঝতে পারে কেউ নিশ্চয়ই অন্দরমহল থেকে বের হতে যাচ্ছে। তাই ওরা দুজন সেই স্থান ত্যাগ করার জন্য কোনোমতে মাটিগুলো চাপা দিতে চায় কিন্তু পারেনা। হাত-পা কাঁপতে থাকে দুজনের। এবার ওরা দুজনেই একটা বড় গাছের পেছনে লুকিয়ে পড়লো কোনোমতে মাটি চাপা দিয়ে তবে এখানে যে কেউ এলেই বুঝতে পারবে কেউ এখানকার মাটি খুঁড়েছে।
সিরাজ আর হেমন্তি দুজনেই দুজনের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। হেমন্তি হাঁপাচ্ছে, সিরাজের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, মনে একটাই চিন্তা এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কারো হাটার শব্দ পায় ওরা ঠিক যেন একদিকেই এগিয়ে আসছে বলে মনে হতে থাকে, হেমন্তি এবার ভয়ে সিরাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, চোখ বন্ধ করে আছে দুজনেই
কিন্তু না কিছুক্ষণ পরেই আর কোনো শব্দ পাচ্ছে না ওরা। হেমন্তি আস্তে আস্তে চোখ খুললো নিজেকে আবিষ্কার করলো সিরাজের বুকে। হেমন্তি সাথে সাথেই সিরাজের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বললো – চলে গেছে মনে হয়।। চল আমরাও বরং চলে যাই।
হেমন্তির চোখে মুখে ভয়ের বিপরীতে এখন লজ্জার ছাপ ফুটে উঠেছে।
সিরাজ কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ ছিল হেমন্তির এতটা কাছে ও কখনোই আসেনি বরং ঝগড়া করেছে বহুবার।এই মূহুর্তটা যেন একটা ইতিহাস গড়লো প্রায় ১০ মিনিট ওরা একে অপরের এত কাছে থেকেও ঝগড়া করেনি।
যে সিরাজের মুখে খই ফুটে সারাক্ষণ সে এখন নিশ্চুপ হয়ে হেমন্তির পেছনে পেছনে রাজবাড়ীতে ঢুকলো।

এদিকে ওরা অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে সাথে দুশ্চিন্তাও করছে বটে।

সোফিয়া: ধরা পড়িয়া গেলো না তো ওরা আবার। আমার ভীষণ ভয় করিতেছে যে।

দিগন্ত: না! না! ধরা পড়লে তো এতক্ষণে শোরগোল বেধে যেতো তা যখন হয়নি তাহলে ওরা ধরা পড়েনি। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন মিস.সোফিয়া।

রফিক: আমার ওদের সাথে যাওয়া উচিৎ ছিলো রে, আমার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হচ্ছে এখানে বসে থেকে।সেই কখন আমি শিষ বাজালাম ওদের এখনো আসার সময় হলো না।
ওদের কথাবার্তা চলাকালীন সময়ের মধ্যেই হেমন্তি আর সিরাজ ধুপধাপ পা ফেলে কক্ষের ভেতরে ঢুকলো। সিরাজ আর হেমন্তি দুজনেই চুপ করে বসে পড়লো ধপ করে। রফিকের মনে আকুলতা সবচেয়ে বেশি, ও বলেই ফেললো কি রে তোরা দেখতে পেলি বাচ্চাটাকে? আমি বলেছিলাম না ওখানে কোনো বাচ্চাকে পু*তে রাখা হয়েছিলো তোরা তো কি না কি ভাবলি।।

হেমন্তি রফিকের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে যেন ওর চোখের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মা*রবে ছেলেটাকে। সিরাজ এখনো চুপ করে আছে,
হেমন্তি বলে উঠলো রফিক শোন সব ব্যপার নিয়ে মজা করা তোকে অন্তত শোভা পায় না। এতো বড় মিথ্যা তুই না বললেও পারতি। আমি এখন আমার কক্ষে যাবো তোমরাও যে যার কক্ষে গিয়ে শুয়ে পড়ো। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে এসব ফালতু কাজে আমরা এখানে আসিনি।এই বলেই হেমন্তি হনহনিয়ে ওদের কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেলো।
রফিক হকচকিয়ে গেলো। বাচ্চাটা কি তবে উধাও হয়ে গেলো নাকি কেউ উধাও করে দিয়েছে। রফিকের এটা ভেবে খারাপ লাগলো হেমন্তি ও ওকে অবিশ্বাস করলো।
সোফিয়া : রফিক তুমি শুধু শুধু এমন করিয়া সবার সময় নষ্ট করিয়াছো তো বটেই সাথে সাথে সবার মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করিয়াছো। আমিও তোমার থেকে ইহা আশা করিনাই।
এই বলেই সোফিয়া ও নিজের কক্ষের দিকে যেতে শুরু করলো।
দিগন্ত সোফিয়ার কথা শোনা মাত্রই বলে উঠল রফিক তুই শুধু শুধুই এমন একটা কান্ড করে বসলি। দেখলি তো মিস. সোফিয়া ও তোর কান্ডে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।

পৃথিবী উল্টে গেলেও দিগন্তের সমস্ত ভাবনা তার মিস. সোফিয়াকে নিয়ে। তার কথার ধরনে এইটুকু সবাই বুঝতে পারে।
সিরাজকে চুপ থাকতে দেখে রফিক বলে উঠল তুই ই বা বাকি থাকবি কেন? আমাকে আরও কিছু কথা শোনা তা নাহলে তো আবার তোদের……
সিরাজ এবার রফিক এর কথার মাঝে বাধা দিয়ে বলল তুই চুপ করবি নাকি। তোর কোনো ধারণা আছে সুলায়মানের নিষেধ অমান্য করার শাস্তি কি হতে পারে! তুই তো জানিস না তাহলে বুঝবি কি করে আমি তো জানি তাই আমার মনে হয়েছিল আরেকটু হলেই প্রানটা হারাতাম অকালে ।
রফিক বলতে চাইলো যে ও যা বলেছে সব সত্যি বলেছে কিন্তু ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে ওরা যে যার মতো শুয়ে পড়লো।

রাতটা হেমন্তি কোনোমতে পার করলো কারণ তার শুধু সিরাজের সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো মনে পড়তে থাকে। চোখ খোলা বা বন্ধ করেও সে এগুলো ভুলতে পারছেনা। সকালে ওরা সবাই উঠেই খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো গ্রামটি ঘুরে দেখতে। রফিক মনমরা হয়ে আছে।হেমন্তি আর সিরাজের মাঝেও কোনো ঝগড়া হচ্ছে না।
দিগন্ত আর সোফিয়াই শুধু আগের মতো কথা বলছে।ঘুরতে যাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ বিদ্যমান ছিল সেটা এখন আর নেই।
পুরো গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে সবাই এবার হাঁপিয়ে উঠছে, বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ওরা একটা দোকানের বেঞ্চে বসে পড়লো। একটু খেয়াল করতেই দোকানের তাকের ওপর কয়েকটি পত্রিকা দেখতে পেলো সিরাজ। ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো আজ চার-পাঁচ দিন হলো পত্রিকা পড়া হয় না।ভালোই হলো এখানে বসে বসে পড়া যাবে। সিরাজ একটা পত্রিকা হাতে নিতে নিতে বললো- তোরা কেউ পড়বি?
রফিক বললো আমায় একটা দে।

আর ওরা এখন জিরোচ্ছে তাই পড়তে চাইছেনা।

সিরাজ আর রফিক পত্রিকা পড়তে লাগলো। কিছুক্ষণ পড়ার পর একটা হেডলাইনে চোখ আটকে গেলো রফিকের, “ইসলামাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গত ১ মাসে প্রায় ৩০-৩২টি বাচ্চা নিখোঁজ হয়েছে। কারো কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।”
এমন একটি খবরে আঁতকে উঠলো রফিক তবে কি সে যা ভাবছে তাই হয়েছে। কোনো একটা রহস্য তো আছে যা রাজবাড়ী তে লুকিয়ে আছে। রফিক এবার অস্থির হয়ে হেমন্তি কে বললো দেখ! দেখ! এই এক মাসে ইসলামাবাদ জেলায় ৩০-৩২টি বাচ্চা নিখোঁজ হচ্ছে।কোনো সন্দেহভাজন ব্যাক্তিকে দেখলে থানায় যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
হেমন্তি ওর থেকে থাবা দিয়ে পত্রিকা টি নিয়ে পড়া শুরু করলো আর বললো একটা পুরো জেলার খবর এটা তাই তুই যেটা ভাবছিস সেটা হতে পারে না। দয়া করে আমাদেরকে বিরক্ত করিস না, ঘুরতে এসেছি আমরা গোয়েন্দাগিরি করতে নয়। দয়া করে এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল আর আমাদেরও ভালোভাবে ঘুরতে দে।

রফিক বলে উঠলো তোরা কেন অবুঝের মতো কথা বলছিস বলতো?এক রাতের ঘটনাই কি সব, এমনও তো হতে পারে ওটা তোরা যাওয়ার আগেই কেউ সরিয়ে ফেলেছে।
হেমন্তি আর রফিকের কথা কাটাকাটি এবার সিরাজ থামালো- থামবি তোরা, কি শুরু করেছিস বলতো? চল আজ আমরা আর ঘুরবো না রাজবাড়ী ফিরে চল।
হা! হয়ে সবাই সিরাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।এত পরিবর্তন।
“ওকে আবার জ্বিনে ধরেনি তো”? হাসতে হাসতে দিগন্ত বলে উঠল।

সবাই এবার রাজবাড়ীর দিকে যাওয়া শুরু করলো।

রফিকের মনের মধ্যে একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো এত সব ক্লু সব কি কাকতালীয় নাকি কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। আমি এই রহস্য যে করেই হোক ভেদ করবো আর হেমন্তি ও বাকি সবাইকে দেখিয়ে দিবো আমার ধারণাই সত্যি।

চলবে,,,,,

#লেখা:মুন্নি ইসলাম
[গল্পটি ভালে লাগলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকবেন। গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করলে আরও বেশি খুশি হবো। ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here