মৃগতৃষ্ণা #পর্ব : ১২

0
152

#মৃগতৃষ্ণা
#পর্ব : ১২
সুলায়মান পাতাঘরে ঢুকেছেন।অনেক দিন পর সেখানে গেলেন তিনি সিঁড়ি ভেঙে নামতে তার কষ্ট হচ্ছে খুব কিন্তু সে তবুও নামছে। সে আচমকাই অনেকগুলো বাচ্চার আর্তনাদ শুনতে পায়। কৌতুহল বশত আরেকটু এগোলেই দেখতে পেলো একজন ছদ্মবেশি জীবন্ত বাচ্চাদের থেকে তাদের ক*লিজা টে*নে বের করে নিচ্ছে আর সেটা র*ক্তমাখা অবস্থাই চি*বিয়ে চি*বিয়ে খা*চ্ছে।
সুলায়মান চমকে যায়, চোখমুখে ভয়ের ছাপ এত হিংস্র একজনকে দেখে, সুলায়মান হঠাৎ খেয়াল করে রূপাকেও ওই বাচ্চাদের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।রূপা এমনিতেও তেমন কাঁদেনা তবে আজকে সে কাঁদছে কিন্তু মুখ বাধা থাকায় কান্নার শব্দের পরিবর্তে গোঙানির শব্দ পায়।
সুলায়মান রূপার কাছে দৌড়ে যাওয়ার আগেই ছদ্মবেশ ধারণকারী রূপার সামনে চলে আসে আর ওর বুকে হাত বাড়ায়……..
এমন দৃশ্য দেখে সুলায়মান নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না তিনি চিৎকার করে উঠলেন আর লাফিয়ে উঠলেন পরক্ষণেই তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন পালঙ্কে, শুয়ে ছিলেন তিনি আর এখন বসে আছেন।

তিনি অনেক হাঁপাচ্ছেন আর জুলেখা বার বার জিজ্ঞেস করে চলেছে কি হয়েছে জনাব এমন ভাবে চিৎকার করে উঠলেন যে, কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছেন কি?

সুলায়মানের জবান যেন বন্ধ হয়ে গেছে সে আবার চুপচাপ শুয়ে পড়লো আর চোখদুটো বন্ধ করে নিলো। জুলেখা আকস্মিক চোখে চেয়ে রইলো, কখনোই জুলেখার প্রশ্ন অবজ্ঞা করেননি সুলায়মান তবে আজ কেন এমন করলেন। ভাবতে থাকে জুলেখা।
সুলায়মান শোয়া থেকে আবার লাফিয়ে উঠে রূপার কাছে গেলেন এমন মধ্যরাতে এসব দেখে তিনি অস্থির হয়ে গেছেন প্রায়। গিয়ে দেখলেেন রূপা বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। কি মায়া সেই ছোট্ট মুখখানায়, সুলায়মান রূপার কপালে চুমু একে দিলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, পরম মমতায় চাদর টেনে দিলেন ওর গায়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তিনি আবার নিজের কক্ষে ফিরে এলেন।
জুলেখা বসে আছে পালঙ্কে, মুখ ভাড় করে রেগে আছে বলে মনে হলো, চেহারাতে অভিমানের ছাপ বিদ্যমান। সুলায়মান এবার জুলেখাকে কাছে টেনে নিলেন বাহুডোরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল আমি স্বপ্নে দেখলাম আমার প্রান গুলো ভালো নেই বিপদে পড়েছে তাই আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি বেগম, তুমি আর রূপাই যে আমার প্রান।
সকালে তিনি রাতের স্বপ্নের কথাগুলো ভাবলো আর সিদ্ধান্ত নিলো সে পাতালঘরে যাবে। কিন্তু পাতালঘরে যাওয়ার চাবি সে খুজে পাচ্ছেনা তার সিন্দুকে, কোথায় গেলো চাবি?
ভাবতে থাকে সুলায়মান।এ সিন্দুক খোলার চাবিও কেবলমাত্র সুলায়মানের কাছেই থাকে।তাই তিনি বেশ অবাক হলেন আর বেগমকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি সুলায়মানের পাতালঘরের চাবিটি দেখেছে কিনা?
কিন্তু জুলেখা জানায় সে চাবির ব্যাপারে কিছুই জানেনা।
_________
আজকে সোফিয়ার বিয়ে, চারদিকে সবার মধ্যে আনন্দের ছড়াছড়ি কিন্তু বিষাদের রঙ কেবলই সোফিয়ার মধ্যে। সে জানে দিগন্তকে বিয়ে করলেও তার সাথে সংসার করা হতো না কারন তার বাবা হয়তো দিগন্তেকে মে*রেই ফেলতো।
তবুও একবার শেষ চেষ্টা সে করেছিলো কিন্তু না শেষ রক্ষা হলো না বরং পালাতে গিয়ে উল্টো দিগন্তের প্রানের সংশয় বাড়িয়ে দিয়েছে সে। সোফিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল সে এই বিয়ে করে হলেও দিগন্তের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
ভালোবাসলে ত্যাগ করতে হয় সেটা সবার হয়তো জানা নেই কিন্তু যে সত্যিকারের ভালোবাসার সংজ্ঞা জানে সেই বোঝে ভালোবাসার মানে হলো ত্যাগ স্বীকার করা আর সেটাই করছে সোফিয়া।
সকাল থেকেই অতিথিদের আগমন শুরু হলো সোফিয়াকে সাঁজাতে লোক এলো কি সুন্দর! লাগছে সোফিয়াকে। পরনে সাদা রঙের একটি গাউন, খোপায় সাদা গোলাপ আর চোখে পড়েছে নিকশ কালো কাজল আর ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক । মাথায় তাজও পড়ানো হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন এ এক
সাদা পরী।
সোফিয়ার হবু বর জিয়ান সহ তার বাড়ির লোক সবাই এসে পড়েছে। একটু পরেই বিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
সোফিয়ার কক্ষে জিয়ানকে পাঠানো হলো একান্তে কিছু কথা বলার জন্য।
জিয়ান সোফিয়াকে দেখে মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো মুখ চাপা দিয়ে আছে দুহাত দিয়ে-
ওয়াও মিস. সোফিয়া। ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল।

সোফিয়ার চোখ ছলছল করছে মিস.সোফিয়া শুনে
তবুও সে মাথা তুলে বললো আপনি কি আমার একটা অনুরোধ রাখিবেন!!
গলার কন্ঠ বেশ করুন।

জিয়ান বললো- কি অনুরোড? বলিঠে পারো আমাখে, আমি রাখিবো।

সোফিয়া নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল আমি কোনোদিন আপনার কাছে এ জীবনে আর কোনোদিন কিছু চাইবো না এই শেষবারের মতো চাইতেছি – আমি আমার বিবাহের আগে একবার দিগন্তের সাথে দেখা করিবার আবেদন জানাইতেছি আপনার কাছে।। রাখিবেন আমার শেষ চাওয়াটুকু??

সোফিয়া আকুলতা নিয়ে জিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে জিয়ান? দেখা করতে দেবে নাকি দেবেনা?
জিয়ান কিছুক্ষণ ভেবে উত্তরে বললো সে দিগন্তের ব্যপারে সবটা শুনেছে সোফিয়ার ডেডের কাছে। একজন বিধর্মী লোকের সাথে বিয়ে দেওয়া কি শাস্ত্র মেনে নিবে। এতসব কথার পরও জিয়ান অনুমতি দেয় সোফিয়াকে।সোফিয়ার ডেডের সাথে জিয়ান কথা বলে দিগন্তের সাথে সোফিয়ার দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয়।
বদ্ধ দুয়ার খুলে দিল জিয়ান মৃদু পায়ে কক্ষে প্রবেশ করছে সোফিয়া। দিগন্তের হাত-পা বাধা চেয়ারের
সাথে, সোফিয়ার প্রবেশে ক্ষত-বিক্ষত চেহারায় হাসির ঝলক দেখা গেলো দিগন্তের। দিগন্ত অপলক চেয়ে রইলো সোফিয়ার দিকে।
মুখ থেকে রক্তাক্ত লালা জড়ছে তবুও মুখে একরাস হাসি নিয়ে বললো- মায়াবন বিহারিণী।

সোফিয়ার চলার গতি বৃদ্ধি পেলো সে দৌড়ে চেয়ারের সামনে এসে বললো – এমন ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে কি করে তোমার মুখে হাসি আসিতে পারে বলিতে পারো দিগন্ত?

-আমাকে মুগ্ধ করতে কেবলমাত্র আপনিই পারেন সোফিয়া।এত সুন্দর করে সেজেছেন যে আমারি নজর লেগে যাচ্ছে, কালো একটা টিপ পড়ে নিতেন!!
সোফিয়া ভাবছে এমন পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে না ভেবে বরং সোফিয়ার কপালে টিপ পড়েনি সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে। কি আজব!!
সোফিয়া দিগন্তের সমস্ত বাধন খুলে দিলো, চোখ দিয়ে শ্রাবণ ধারার মতো অস্রু ঝড়তে লাগলো সোফিয়ার।দিগন্ত সোফিয়াকে কাঁদতে বারণ করছে তবে নাকি তার সাজসজ্জা নষ্ট হয়ে যাবে।
সোফিয়া হাটু গেড়ে বসে পরলো ধপ করে তার দুহাত দিয়ে দিগন্তের গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কেঁদে চলেছে দিগন্তও এবার নিজেকে সামলাতে পারছে না সেও সোফিয়ার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে দিতে লাগলো।একটা সময় সোফিয়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিগন্তের বুকে আশ্রয় নেয় দিগন্তও দুহাত দিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরে রেখেছে সোফিয়াকে। এই কক্ষের চার দেয়ালের মাঝেই সমস্ত কষ্ট বিলীন করে দিচ্ছে। দিগন্ত সোফিয়াকে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি বিয়েটা করবেনই মিস.সোফিয়া??

সোফিয়া দিগন্তের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো -হ্যা দিগন্ত। আমি চাইনা তুমি আমাকে এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করো, আমি চাইনা কোনো এক কঠোর মূহুর্তের মুখোমুখি তুমি আমায় দাড় করাও।
দিগন্তও সোফিয়াকে আর বিয়ে নিয়ে কিছু বললো না।দিগন্ত নিজের হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।এক মুহূর্তেই নিজেকে শক্ত করে বললো আপনি আমায় নিয়ে ভাববেন না মিস.সোফিয়া, আমি একদম ঠিক আছি।
এমন সময় দরজায় টোকা দিলো জিয়ান, বললো মিস. সোফিয়া বিবাহের জন্য সবাই ডাকিতেছে যে প্লিজ আর বেশি লেইঠ করিবেন না।
দিগন্তের ওষ্ঠাধর জুড়ে হাসি প্রশস্ত হলো বললো- আপনাকে নিয়ে আমার আর কোনো চিন্তা রইলোনা।

তবে আপনি আমার খুব শখের, আপনার হবু স্বামীকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে আমার শখের নারীর সুখের কারন হোন মি.জিয়ান।

” আপনি আমার না হইয়াও সুখি হোন মিস.সোফিয়া”।
আপনি তাড়াতাড়ি যান নয়তো বিয়েতে দেরি হতে পারে।
সোফিয়া এবার বসা থেকে উঠে দাড়ালো বললো গল্পের শেষ পৃষ্ঠায় যদি বিচ্ছেদই হইবে তবে আমাদের গল্পের শুরুই বা কেন করিয়াছিলেন বিধাতা।
আমি তোমাকে আমার করিয়া রাখিতে পারিলাম না।খুব করিয়া চেয়েছিলাম তোমারে, ধরিয়া রাখিতে আর পারিলাম নাহ্।তোমাকে দেখার তৃষ্ণা আমার আজীবন থাকুক।
অস্রুশিক্ত নয়নে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেলো সোফিয়া দিগন্ত শরীরের ভর ছেড়ে দিয়েছে, মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে ও।

কিছুক্ষণ পরেই সিরাজ এলো কক্ষে দিগন্তকে নিয়ে যেতে। দিগন্তের এমন অবস্থা দেখে সিরাজও বিস্মিত হলো খুব। দিগন্ত বুঝলো এতক্ষণে সোফিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে তাই সিরাজ তাকে নিতে এসেছে।

-দিগন্ত সোফিয়া তোকে সত্যিই অনেক ভালোবেসেছিল নয়তো এমন ত্যাগ করা কারো পক্ষেই সম্ভব হতো না। ভালোবাসার জন্য হলেও মাঝে মাঝে ভালোবাসাকে ত্যাগ দিতে হয় সেটা সোফিয়াকে না দেখলে জানতামই না হয়তো।
– আমাকে জীবিত লাশ বানিয়ে না রেখে বরং মৃৃত্যু দিলেই বেশি খুশি হতাম।সোফিয়া আমার শরীরের ক্ষতই কেবল দেখলো আমার মনটা যে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে শরীরের চেয়ে হাজার গুনে বেশি সেটা বুঝলো না!!

___________
কেটে গেলো আরও কয়েকটা দিন। সিরাজ এবার এদিকের সবটা সামলে নিয়ে ঠিক করলো আগামীকাল রওনা হবে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে। দিগন্ত এখন মনমরা হয়ে থাকে নিজেকে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখে। জীবনের সব রং হারিয়ে বসে আছে দিগন্ত। তাই সিরাজ ঠিক করলো ও একাই গোয়েন্দা টিমের সঙ্গে যাবে।
হঠ্যাৎ দরজায় কেউ ঠকঠক শব্দ করে। সিরাজ গিয়ে দরজা খুলে দেয়। খুলে দেখতে পায় হেমন্তিকে, হেমন্তির চোখে মুখে চিন্তার ছাপ, অস্থিরতা বিদ্যমান। কেমন যেন করে উঠল হেমন্তি বললো সিরাজ দেএএখ দেখনা!! এই পত্রিকাটা একবার দেএএখ।
সিরাজ চমকালো হেমন্তি আগ বাড়িয়ে কথা বলেনা রাগ করলে তাই সিরাজ বুঝতে পারলো ঠিক কিছু না কিছু ভয়ংকর ঘটেছে। হেমন্তি কাঁপা কাঁপা হাতে এগিয়ে দিলো পত্রিকার কাগজটা। সিরাজও সেটা থাবা দিয়ে নিয়ে পড়া শুরু করে দিলো।
হেডলাইন পড়তে গিয়েই নিজের চোখ হাত দিয়ে ডলছে বারবার সিরাজ। মনে হচ্ছে যেন চোখে ঝাপসা দেখছে নয়তো বা সে যা দেখছে তা ভুল, এত বড় বড় অক্ষরে লেখাগুলোও পড়তে পারছেনা ও।

” ইসলামাবাদ জেলার রাজবাড়ীর বড় ছেলে সুলায়মান তার নিজের বেগমকে জীবিত মাটিচাপা দিয়েছেন গতকাল।”।

আজ সকালে সারা জেলার মানুষের ভীড় জমেছে রাজবাড়ীতে। সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কেনো তিনি তার নিজের প্রানপ্রিয় বেগমকে জীবিত সমাধি দিলেন????……
চলবে,,,,

#লেখা : মুন্নি ইসলাম
[ গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করে দিবেন। তা নাহলে আপনাদের নিউজফিডে গল্পটা পৌছাবে না। আপনাদের সকলের মন্তব্যই আমি পড়ার চেষ্টা করি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here