সারপ্রাইজ_পর্ব #মৃগতৃষ্ণা #পর্ব:১০

0
136

#সারপ্রাইজ_পর্ব

#মৃগতৃষ্ণা
#পর্ব:১০
বৃদ্ধ মহিলার কথা শুনে চমকে উঠলো সোফিয়া। ও এসব বিশ্বাস না করলেও বলে উঠল আমাদের তো কখনো নিষেধ করা হয়নি পদ্মপুকুরে যেতে।এটা যদি এতই ভয়ংকর হয় তবে আমরাদের তো সাবধান করিবার প্রয়োজন ছিলো।
বৃদ্ধ মহিলাটি বললো কে যানে এমন হইবো, তোমরা তো বিদেশি, শহুরে পোলাপাইন এইসব গ্রামের কথা কি বিশ্বাস করবা?
সোফিয়া কথা বাড়ালো না কিন্তু মনকে কিছুতেই মানাতে পারছেনা রফিক আর নেই।
সিরাজ আর দিগন্ত ঠিক করলো ওরা সুলামানের আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না, তা নাহলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
রাজবাড়ীতে এতো শোরগোল দেখে জুলেখা আর নিজের কক্ষে বসে থাকতে পারলো না। বোরকা পড়ে নিকাব আটকে নিজের চেহারা আবৃত করে নিলো শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে, কক্ষ থেকে অনেকদিন পর বের হলো সে। রফিকের লাশ নিয়ে ওরা বেরিয়ে পরতে যাবে ঠিক তখনই জুলেখা রাজবাড়ীর চৌকাঠে এসে পৌছালো।এত সরগোল যেন এক মূহুর্তের মধ্যেই থেমে গেলো জুলেখার উপস্থিতিতে।
জুলেখা ওদের থামতে বলল এমন মায়া-কন্ঠ হয়তো এর আগে শোনেনি সিরাজ, দিগন্ত। অন্যসময় হলে হয়তো জুলেখার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতো বাকি সবার মতো। কিন্তু এত সুন্দর চোখ জোড়াও আজ মুগ্ধ করতে পারছেনা ওদের।
জুলেখা অনুরোধ করে আরও কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করতে কারন সুলায়মান এসে যদি দেখে তার মেহমান মনে কষ্ট ও আক্ষেপ নিয়ে চলে গেছে তবে তিনি বেশ মনঃকষ্টে ভুগবেন।
সিরাজ বললো জনাবের যদি এতই মেহমান প্রীতি থাকতো তবে রফিককে আজ হারাতে হতো না।
জুলেখা এমন কথায় বেশ বিরক্ত হলো তবে সবার সামনে সে তা প্রাকাশ করলো না।
সুলায়মানের উপস্থিতিতে যেনো আবার শোরগোল বেধে গেলো হেমন্তি দৌড়ে গিয়ে সুলায়মানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো ভেতরে থাকা হিংস্রতা বেরিয়ে এলো হেমন্তির।- কেনো রফিককে প্রান দিতে হলো? কি দোষ করেছিলো ও?
আমি আপনাকে ছাড়বো না বলে দিলাম। আপনি চাইলেই রফিককে বাচিয়ে নিতে পারতেন কিন্তু আপনার কোনো ভ্রুক্ষেপই আমরা দেখতে পাইনি।

সুলায়মান হেমন্তির আচরণে বেশ অসম্মানিত হচ্ছে গ্রামবাসীর সামনে। সুলায়মান হেমন্তির হাত জোড়া ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে রফিক তো পানিতে ডুবে মারা গেছে।এতে কারো কোনো হাত নেই।

– আপনি হয়তো জানেন না মি. সুলায়মান রফিক সাতার জানতো তাই পানিতে ডুবে মরার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

সুলায়মানকে কোনো নারী স্পর্শ করছে এটা জুলেখা সহ্য করতে পারছেনা তার চোখ দিয়ে অগ্নিশিখা বের হচ্ছে রাগে পুরো শরীর কাঁপছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছেনা কারন এখন এখানে গ্রামের অনেকেই উপস্থিত রয়েছেন।
হেমন্তিকে সিরাজ ছাড়িয়ে নিয়ে বললো এখন কি ঝগড়া করবি নাকি রফিককে বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করবি, হেমন্তি এবার বাচ্চাদের মতো হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।
গ্রাম থেকে থানায় যেতে অনেক সময়ের ব্যাপার তবুও দিগন্ত বললো আমি থানায় যোগাযোগে করে তারপর রফিককে বাড়ি নিয়ে যাবো। কিন্তু হেমন্তি বলে উঠলো নাহ। যেখানে ৩০-৩২ টা বাচ্চা নিখোঁজ হয়েও কোনো কিছু করতে পারলো না ওই থানা-পুলিশ সেখানে রফিকের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করবে, আকাশ-কুসুম ভাবনা হয়ে গেলো না।
আমরা রফিককে বাড়িতে নিয়ে যাবো নয়তো ওর আম্মাকে কি জবাব দেবো আমরা? আমরা ওকে দেখে রাখতে পারলাম না, কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।

সুলায়মান ওদের দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলো।ওরাও যাত্রা শুরু করলো।
ওরা আজ পৌছালো রফিকদের গ্রামে।একটা লাশ বয়ে নিয়ে এসেছে ওরা একটা রাতও পার করতে হয়েছে তবে কারো মধ্যে ভয় বলে কিছু নেই, পুরো পথ অতিক্রম করেছে নিস্তব্ধতায়। রাতের নিশাচর পাখিরাও রা কাটেনি, বরং তারাও যেন এ শোকের ভার নিয়েছে ।

রফিকের আম্মা ওদের সবাইকে দেখে বেশ খুশি হয়ে গেলেন। ভাবলেন ছেলে হয়তো চিঠি পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে এসেছে সাথে করে। সিরাজ দিগন্ত সোফিয়া ও হেমন্তিকে রফিকের আম্মা ভেতরে আসতে বলেন। আর বলেন আমার পাগলটা কই নিশ্চয়ই ও টং দোকানের চা খেতে গেছে। এখানে এলে চা না খেয়ে বাড়িতে আসবেই না ছেলেটা। কিন্তু আজ তো তোমাদের নিয়ে এসেছে সাথে করে নাকি, ছেলেটার আক্কল- জ্ঞান নেই বললেই চলে।
কি সুন্দর! হাসিমাখা মুখ তার,ছেলের আসাতে যেন মনে তার ভীষণ আনন্দ অনুভুত হচ্ছে ।
হেমন্তির কাছে এসে গালে হাত বুলিয়ে বললো কি, মা এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমায়? কি সুন্দর মুখখানা ওমন কেন লাগছে?

হেমন্তি নিজেকে আর সামলাতে পারছেনা হুট করেই রফিকের আম্মাকে জড়িয়ে ধরলো। রফিকের আম্মা কিছুই বুঝতে পারে না, ওদের কারো মুখ থেকেই বের হচ্ছে না যে রফিক আর নেই।
রফিকের বাবা দোকান থেকে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দেখে বাড়ির বাইরে একটা ভ্যান, সাদা কাপড়ে মোড়ানো কারো লাশ। উনি কৌতুহলবসত মুখ থেকে সাদা কাপড়টা সরাতেই দেখা গেলো একটা তরুণ যুবক কিন্তু এটা যে তারই ছেলে দেখে বুঝতে পারছেন না, বিশ্বাসও হচ্ছে না। কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো অপলক দৃষ্টিতে তারপর হাতদুটো ধরলো একি! এতো তার রফিক। তিনি একটা চিৎকার দিয়ে বসে পড়লেন মাটিতে, ভেতরে থাকা সবাই বাইরে বেরিয়ে এলো ।

রফিকের মা আচমকা নিজের ছেলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে জ্ঞান হারালেন।চারদিকে গোলযোগ পরিস্থিতি শুরু হলো এমন তরতাজা যুবকের প্রাণহীন নিথর দেহ দেখতে গ্রামের সকলের ভীড়। রফিকের স্বভাব চরিত্র ভালো থাকায় গ্রামের সবার চোখের মণি ছিলো সে।
যে ছেলে সাঁতার জানে তার পানিতে ডুবে ম*রাটা মোটেও কারো বিশ্বাস হচ্ছে না। রফিকের লাশ নরম হয়ে দুর্গন্ধও বের হয়ে যাচ্ছে, সবাই তড়িঘড়ি করে রফিকের জানাযা পড়ালো। কবরও দেওয়া হয়ে গেলো খুব তাড়াতাড়ি করে নয়তো বা রফিকের আত্মা শান্তি পাবেনা। মানুষ ম*রে গেলে যত তারাতাড়ি কবর দেওয়া যায় ততই তার জন্য ভালো।

রফিকের আম্মা হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদছে একমাত্র ছেলেকে এইভাবে হারাতে হবে সেটা সে দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেনি।কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। যখনই মনে পড়ছে রফিক নেই তখনই বলছে হে আল্লাহ আমায় কেনো আমার ছেলের আগে মৃত্যু দিলে না আ আ আ। এ যে আমি সহ্য করতে পারছিনা আর আমি কি দোষ করেছি তোমার কাছে, আমায়ও তুলে নাও খোদা। আমায় মৃত্যু দাওওওওও।

এমন একটা ঘটনা যেন পুরো গ্রামকে নিস্তব্ধতায় বিদীর্ণ করে দিলো।

কেটে গেলো প্রায় ১০-১২ দিন। এখনও রফিকের শোক কেউ কাটিয়ে উঠতে পারেনি ওরা সবাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবটা জানালে তারা ইসলামাবাদের থানায় খোঁজ করে। আর এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে বলে। থানায় রাজবাড়ীর পেছন দিকটা সার্চ করতে বলা হয়, পুলিশও সার্চ করে তবে তেমন কিছুই পায়নি তারা।
সুলায়মান বেশ রেগে যায় এমন কান্ডে।সুলায়মানকে আস্বস্ত করা হয় এমন কাজ আর কখনোই হবেনা।

এখানেই ধামাচাপা পড়ে গেলো রফিকের মৃত্যু রহস্য।

এর মাঝেই একদিন সিরাজ আবার রাজবাড়ী যায় কিন্তু রাজবাড়ীর অন্দরমহলে সে প্রবেশ করে না।গ্রামে ঘুরে ঘুরে সে সুলায়মান ও রাজবাড়ী সমন্ধে খোঁজখবর নেয়। সবাই তাকে দয়ার সাগর বলেই আখ্যায়িত করেন। হতাশ হয়ে সিরাজ বসলো চায়ের দোকানে, দোকানটি চালায় একজন বৃদ্ধ লোক।কথায় কথায় উনি বললেন বাবা আমি তো তেমন কিছু বলতে পারমু না তয় এইটুকু শুনে রাখো রাজবাড়ী বাইরে থেকা দেখতে যতটা খোলামেলা মনে হয় ভেতরে অনেক রহস্য লুকায় আছে। সুলায়মান মানুষ হিসেবে ভালোই কিন্তু ওনার মধ্যেও কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাই।

সুলায়মানের ছোট চাচারে তো পদ্মপুকুরে পাওয়া গেছিলো কিন্তু আমার মনে হয়না উনার মৃত্যু স্বাভাবিক।বৃদ্ধ লোকটি কিছুক্ষণ থামলো।
সিরাজের চোখের পলক পড়ছেনা। লোকটার সব কথা খুব মন দিয়ে শুনছে।

এরপর আবার বৃদ্ধ লোকটি বলা শুরু করলো সুলায়মানের ছোট ভাই ওসমানও উধাও। হেয় নাকি বিলেতে পড়াশোনা করতে গেছে। ওইখানেই নাকি বিয়াসাদি কইরা ফালাইছে। কিন্তু একদিনের জন্যও রাজবাড়ীতে আইলো না কেমন না ব্যাপারটা।ওনার তো ভাগ আছে এই বাড়ীতে। উনি যা মানুষ এত সহজে ছাড়ার পাত্র ও উনি নন।কত কিছু যে লুকায় আছে এই রাজবাড়ীতে, আমরা ছাপোসা নগন্য মানুষ এইসব বিষয় নিয়া মাথা ঘামাই না।এই গ্রামে অনেক চামচা আছে সুলায়মানের কখন কোন কথা শুনে তার কানে লাগায় দেয় তখন হইবো আরেক বিপত্তি তাই এইসব নিয়া আলোচনা কইরা বিপদ ডাইকা আনতে চাই না।
ক্ষমতা আছে সব মাটির লগে চাপা দিতে পারে।

সিরাজ বুঝলো প্রমাণ ছাড়া সুলায়মান বা রাজবাড়ীর কাউকেই দোষারোপ করা যাবে না, হিতে বিপরীত হবে।
তবে রফিকের প্রানের মূল্য চোকাতে হবে রাজবাড়ীকে এই প্রতিজ্ঞাই মনে মনে করে সিরাজ।
___________
কেটে গলো আরও কয়েকদিন। এখন সব কিছু আবার ঠান্ডা হয়ে গেছে।
কবিরাজ মশাইকে তলব করে রাজবাড়ীতে এনেছেন
সুলায়মান।
আবার রাজবাড়ী তে গ্রামের সকলকে নিমন্ত্রণ করলেন কারন তার বেগম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন।
তার এতদিনের সাধনা বিফলে যায়নি বরং সে তার বেগমকে বাঁচাতে সফল হয়েছে। ৪৫টি বাচ্চার ক*লিজার বিনিময়ে ফিরিয়ে এনেছেন নিজের বেগমের প্রাণ। রফিকের মৃত্যুর পর এই প্রথম যেন সুলায়মানের মুখে হাসির ঝলক দেখা গেলো।

রূপাকে রাতে অন্দরমহলে আনা হয় আর দিনে রাখা হয় পাতাল ঘরে। জল্লাদকেও তার পাওনা মিটিয়ে দিয়ে ছুটিতে পাঠান সুলায়মান।
কবিরাজ মশাইকে যা দেওয়ার কথা ছিলো তারচেয়েও অনেক বেশি কিছু দিয়েছে সুলায়মান।তার ঔষধ ও সাধনার ফলেই তো জুলেখা তার প্রাণ ফিরে পেলো, তাই কবিরাজকে দুহাত ভরে উপহার দিলেন সুলায়মান।

সারা গ্রাম জুড়ে আনন্দের ছড়াছড়ি।
জুলেখা ও সুলায়মানের মুখে সফলতার হাসি।
কি হে বেগম বলেছিলাম না আমি তোমাকে আমার প্রান থাকাকালীন মরতে দিবো না, দেখেছো তো সুলায়মান তার কথার খেলাপি করে না। আজ আমি সবচেয়ে খুশি। আমার জীবনে আর কোনো দু:খ রইলো না। তুমি আছো, রূপা আছে আমার আর কিছুর প্রয়োজন নাই।
জুলেখা হাসছে সুলায়মানের কথা শুনে।

সুলায়মানের সুখ বেশিদিন স্থায়ী হলো না।
এভাবে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর সুলায়মান লক্ষ্য করে জুলেখা এখনো তাকে জিজ্ঞেস করে ক*লিজা পেয়েছেন? সুলায়মান যখন বলে এখন আর এসবের কোনো প্রয়োজন নেই তখন জুলেখা বলে ওহ্, ভুলে গিয়েছিলাম। অনেক দিনের অভ্যাস তো।

কিন্তু কিছুদিন হলো সুলায়মান লক্ষ্য করে জুলেখা ঠিক তার ছোট চাচার মতো পাগলামি করছে। সুলায়মানের ছোট চাচা নেশা করতো, যেদিন আফিম না পেতো সেদিন পাগলের মতো করতো জুলেখাও ঠিক তেমন করছে, তারচেয়েও বেশি করছে তবু কম না।

সুলায়মান কবিরাজকে খবর পাঠালেন আলোচনা করলেন কেন জুলেখার এমন পরিবর্তন? কবিরাজ মশাই বললেন আমি আগেই বলেছিলাম বড় বাবু এমন কিছু হতে পারে আপনি তো আমার সে কথা তোয়াক্কা করেন নি।বলেছিলেন সব সামলে নিবেন এখন দেখলেন তো মুখে বলা যত সহজ কাজে করে দেখানো তার চেয়েও কঠিন।
সুলায়মান ভাবনার সাগরে ডুব দিলো কি করা যায় ভেবে পাচ্ছেনা। কবিরাজ মশাই বললেন যখন সামলাতে না পারবেন ঘুমের ঔষধ তো আছেই সেটার ঘ্রাণ না হয় ওনার নাকে দিবেন তবেই উনি ঘুমিয়ে পড়বেন।কিছুদিন পরে দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে আগের মতো।
সুলায়মানও তাই করতো যখন বেশি পাগলামি করতো তখন ঘুম পাড়িয়ে রাখতো।
এরমধ্যেই একদিন রূপা সুলায়মানের কাছে আবদার করলো সে পাতালঘরে থাকতে চায় না। যদিও দিনের বেলাতে থাকে তবুও ওর মনে ভয় হয় তাই সুলায়মান অন্দরমহলে রূপার থাকার জায়গা করে দেয়।তবে সে কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখে সারাদিন যেহেতু জুলেখার সামনের কক্ষটিতে তেমন কেউ আসেনা তাই কোনো অসুবিধা হলো না।

________
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া এস্যাইনমেন্টে এ প্রফেসর জানালেন যে রফিকের করা এসাইনমেন্টটি পত্রিকায় ছাপাতে দিবে এতে করে তারা রফিকের স্মৃতি ধরে রাখবে এমনকি ভার্সিটির ম্যাগাজিনেও প্রকাশ পাবে রফিকের লেখা, সাথে দিগন্তের আঁকা স্কেচ।

তাই রফিকদের বাড়িতে হেমন্তি ও সিরাজ গেলো ওর ডায়েরিটা আনতে।রফিকের বাড়িতে আসতেই সিরাজ আর হেমন্তির বুকটা কেঁপে উঠল ভাবতেই অবাক লাগছে রফিক নেই। রফিকের আম্মা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।রফিকের ব্যাগটা এগিয়ে দিলেন ওর বাবা। তিনিও ছেলের শোকে শোঁকাহতো। সিরাজ রফিকের ব্যাগ থেকে এসাইনমেন্টের ডায়েরিটা বের করে নিয়ে নিলো।
হেমন্তির গালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো রফিকের আম্মা আর বলতে লাগলো তুমি আমার রফিকের লাল টুকটুকে বউ হবে? এবার রফিক ইসলামাবাদ থেকে ফিরলেই তোমাদের বিয়েটা সেরে ফেলবো। একেবারে তোমায় আমাদের কাছে নিয়ে আসবো। আমার ছেলেটা তোমায় বড্ড ভালোবাসে যে, কাত স্বপ্ন বোনে।
পরমূহুর্তেই তিনি আবার হু হু করে কেঁদে উঠলেন আর বললেন আমার ছেলের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো রে মা। ও আর ফিরবে না আআআ।
কোনোমতে তাকে শান্ত করে বেড়িয়ে পড়লো সিরাজ আর হেমন্তি। পথে সিরাজ খেয়াল করে হেমন্তির চোখ অস্রুশিক্ত, চেহারায় বেদনার ছাপ। সিরাজ জিজ্ঞেস করে বসলো কিরে তোর মনটা কি বেশি খারাপ?
খুব বেশি মনে পড়ছে রফিককে?

হেমন্তি অন্যদিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে এনে সিরাজের মুখোমুখি হয়ে বললো – তোর কি মনে পড়েনা?
সিরাজ বলে উঠলো ও আমার বন্ধু তাই মনে পড়বেই কিন্তু আমার চেয়েও বেশি মনে পড়বে তোর কারন তুই ওকে ভালোবাসিস, ঘর বাধার স্বপ্নও দেখেছিস। ও বেঁচে থাকলে হয়তো এতদিনে আমরা একটা সুখবর পেতাম। আমাদের দাওয়াত দিতি নাকি?

হেমন্তির চোখ দিয়ে ইটের ভাটার মতো লাল আভা বের হচ্ছে রাগে ফোসফাস করতে লাগলো।সিরাজের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো ম*রা মানুষকে নিয়েও কি রসিকতা করতে হবে তোকে? রফিক আর নেই সিরাজ, আর ও আমায় ভালোবাসতো কিন্তু…..

– কি হলো থামলি যে? বল কিন্তু কি?…

– কিছুনা। তোর সাথে কথা বলার কোনো রুচি এখন আমার নেই।
– ও আমারও বন্ধু আর এখন আর নেই তাই ওকে নিয়ে রসিকতা আমি করছিনা যা সত্যি তাই বলেছি।তুই ভালোবাসতি সেটা স্বীকার করলেই তো হয়।

হেমন্তির চোখ যেন কথা বলছে। মনে মনে হেমন্তি বললো যাকে বলে না দিলে ভালোবাসা বোঝেনা তার ভালোবাসার মানে বোঝারই ক্ষমতা নেই।

পুরো পথেই কেউ কারো সাথে কোনো কথা বললো না।দুজন দুজনের মতো হোস্টেলে চলে গেলো। সিরাজ ভার্সিটির অফিসকক্ষে রফিকের ডায়েরিটা জমা দিয়ে এলো।
কেটে গেলো আরও কয়েক মাস। স্নাতক ডিগ্রীর পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেলো।
রফিকের করা এসাইনমেন্ট প্রকাশিত হলো পত্রিকায় আর ম্যগাজিনে। ডায়েরিটা ভার্সিটি থেকে সিরাজকে দিয়ে দেওয়া হলো ওর বাড়িতে পৌছে দেওয়ার জন্য। পরীক্ষা থাকায় সিরাজ সময় পাচ্ছে না তাই পরীক্ষা শেষ হলেই সেটা দিয়ে আসতে যাবে বলে ঠিক করে।

কিছুদিন হলো সুলায়মান লক্ষ্য করে তার বেগম আর পাগলামি করছে না সে বুঝতে পারলো সব ঠিক হয়ে গেছে। নেশা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তার বেগম, এখন আবার স্বাভাবিক জীবনে সে ফিরেছে।

কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রাম প্রধানরা এলেন রাজবাড়ীর দরবারে। আবার কিছুদিন ধরে শুরু নাকি হয়েছে বাচ্চা চুরির প্রবণতা।
এই একমাসে কোনো বাচ্চাই আর চুরি হয়নি তবে আবার গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন গ্রামের বাচ্চা ধাপে ধাপে চুরি হচ্ছে। এতগুলো বাচ্চা কোথায় যায়??
সুলায়মান ভয়ে ভয়ে ভেজা ঢোক গিললো মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো আমি তো এখন আর বাচ্চাদের ধরে আনিনা, তবে কে করছে এই কাজ??
……….
চলবে,,,

#লেখা : মুন্নি ইসলাম
[ আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যই আমার লেখার আগ্রহ আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। গল্প সম্পর্কে এভাবেই নিজেদের মতামত দিবেন সাথে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here