#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৪
প্রকৃতি তখন সূর্যের দাপতে। কনকনে শীতের আভাস ছাড়িয়ে সূর্য উঠেছে ধরণী জুড়ে। ফারিশ ঘুমিয়ে আছে বেলকনিতে। কাল রাতে এখানেই ম’দ সিগারেট খেয়েসেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। গায়ে তার মোটা কম্বল জড়ানো। কম্বলটা আদিব দিয়ে গেছে। কাল আদিব ঘুমানোর আগে আরো একবার ফারিশের রুমে আসে। এসে দেখে ফারিশ বেলকনিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। শীতে গায়ের পশম গেছে দাঁড়িয়ে অথচ তাও ফারিশ রুমে এসে বিছানায় শোয় নি। আদিব একবার ভেবেছিল ফারিশকে ডাকবে কিন্তু পরে আর ডাকার সাহস হয় নি। তাই বাধ্য হয়ে রুমে থাকা মোটা কম্বলটা এনে জড়িয়ে দেয় ফারিশের গায়ে। ফারিশও হঠাৎ শীতল ছোঁয়ার ভিড়ে গরম উষ্ণতা পেয়ে কম্বল ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে থাকে। আদিব বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে তাকে ফারিশের ঘুমন্ত মুখের দিকে। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে নিজেও জানে না। পরে হুস আসতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় নিজের রুমে। যাওয়ার পথে একটা কথাই ঘুরপাক খায় মাথায়“এ জীবন যেন বড্ড দুঃখ দেয়”।’
ফারিশের ঘুম ভাঙলো আরো আধঘন্টা পর। শীতের সকালে তীব্র রোদ্দুরের ছোঁয়া গায়ে মাখতেই যেন আরো বেশি সতেজ হলো শরীর। এক মিষ্টি গন্ধ যেন নাকে বিদে তখন। ফারিশ চোখ খুলে চাইলো। হাই তুলে আশপাশ দেখলো। সেকেন্ড পনের আশপাশ চোখ বুলাতেই বুজলো সে বেলকনিতে শুয়ে আছে। গায়ে জড়িয়ে থাকা মোটা চাঁদরটা দেখলো। ফারিশ বুঝলো এটা আদিবেরই কাজ। ফারিশ আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ঘাড় পিঠ খানিকটা ব্যথা করছে। ফারিশের পিঠের ক্ষত এখনো বুঝি পুরোপুরি সাড়ে নি। এখনও মাঝে মাঝে লম্বা আকৃতির দাগটায় চিনচিনে ব্যথা হয়। কিন্তু ফারিশ বরাবরই তা উপেক্ষা করে। তার মতে ফারিশ আঘাত পায় না, তাদের ব্যথা হয় না, যন্ত্রণা উপলব্ধি করে না। অথচ গত সাতদিন যাবৎ ডাক্তার ম্যাডামকে দেখতে না পাওয়ার শূন্যতায় যে যন্ত্রণা হয়েছিল ফারিশের তা সহ্যনীয় ছিল না। ফারিশ নীরবে জোরে নিশ্বাস ফেললো। ফারিশ বুঝলো, পৃথিবীতে ভালোবাসার উপর কোনো নিয়ম চলে না। এটা একদম অনিয়ম ব্যাপার স্যাপার। যেটা হুট করে আসে আর সহজে যেতে চায় না। ফারিশ মেনে নিয়েছে। আপাতত সে চায় তার জীবনে কেউ একজন থাকুক যাকে ভালোবাসা যায়, বুকে জড়িয়ে ধরে যত্নে রাখা যায়, ক্লান্তিতে কোলে মাথা দিয়ে দু’দন্ড শোয়া যায়। মন খুলে অনেককিছু বলা যায়। ফারিশের মনে হয় সেই কেউ একটা বুঝি আদ্রিতাই। ফারিশের নাকে আবারও সেই সুগন্ধটা এলো। এবার যেন আরো বেশি করে গন্ধটা নাকে লাগছে। ফারিশ অনেকক্ষণ গন্ধটা সুকে বুঝতে পারলো এটা কোনো খাবারের গন্ধ। তবে কি আদিব রান্না করছে। ফারিশ সকালের সোনালী রোদ্দুরটা গায়ে মেখেই উঠে দাঁড়ালো। বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে নিজেকে। ফারিশ নিচে লেপ্টে থাকা কম্বলটাও হাতে নিলো। গিয়ে রাখলো বিছানায়। তারপর এগিয়ে গেল রান্না ঘরের দিকে।’
যা ভেবেছিল তাই আদিব সকাল সকাল মুরগী পোলাও রান্না করছে। ফারিশ তার বাম পাশের ঘড়িটা দেখলো। এখনকার সময়কে সকাল বলা চলে না। বেলা প্রায় বারো’টা ছাড়িয়ে। এত বেলা হয়ে গেছে অথচ তার মনে হচ্ছে এখনও সকাল চলছে। ফারিশ রান্নাঘরের দরজার মুখে দাঁড়িয়েই বললো,
“আদিব,
আদিব মুরগী বাজছিল। হঠাৎই ফারিশের কণ্ঠ শুনে পিছনে তাকালো। এক ঝলক ফারিশকে দেখে বললো,“জি ভাই। আপনার ঘুম ভেঙেছে?”
ফারিশ আরো দু’পা রান্না ঘরে দিলো। বললো,
“হুম। এগুলো কি করছো তুমি?”
“রান্না ভাই। মুরগীর রোস্ট আর পোলাও।”
“তা তো দেখছি কিন্তু হঠাৎ তুমি রাঁধতে গেলে কেন?”
“এমনি ভাই। রোজ রোজ হোটেলের খাবার ভালো লাগছিল না তাই একটু রান্না করছি।”
ফারিশ কি বলবে বুঝছে না। এ বিষয়টা নতুন না। আদিব প্রায়শই এমন হঠাৎ হঠাৎ রান্নাবান্না করে। ফারিশ আর ভাবলো না। আদিবের রান্নার হাত সুন্দর। যা রাঁধে সবই সুস্বাদু আর মজাদার হয়। ফারিশ দাঁড়ালো না আর। যাওয়ার পথে বললো,
“ঠিক আছে রান্না করো আমি গোসল সেরে আসছি।”
“আচ্ছা ভাই।”
ফারিশ চলে গেল। আদিব রান্নায় মন দিলো।’
—–
হসপিটালে নিজ চেম্বারে বসে আছে আদ্রিতা। মিটমিটিয়ে হাসছে সে। আর তাকে ঘিরে বসে আছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। লাঞ্চ টাইম চলছে। আজ সবাই মিলে ঠিক করলো লাঞ্চটা আদ্রিতার চেম্বারে বসে খাবে। তাই চেম্বারের মেজেটা খুব সুন্দর ভাবে মোছা হয়েছে। সাদা টাইসটা চকচক করছে মেজেটা। কিন্তু তাও কোথাও গিয়ে নড়েবড়ে লাগছে। মৃদুল কিছুটা কপাল কুঁচকে বললো,“নিজটা যতই চকচকে হোক এখানে বসে খেতে ইচ্ছে করছে না চল সবাই মিলে ছাঁদে যাই।”
মৃদুলের কথা শুনে আশরাফ বললো,“এখন ছাঁদে যেতে নিলে লাঞ্চ করার সময় থাকবে না। তাই নিচে না বসতে চাইলে চেয়ার পেতেই বসি না সবাই।”
আশরাফের কথায় যুক্তি আছে। তাই কেউ আর বেশি কথা না বলে চেম্বারের টেবিলে গোল হয়ে বসে খেতে শুরু করলো। আদ্রিতার মাঝে কোনো ভাবাক্রান্ত নেই। সে নীরব। চুপচাপ। বিষয়টায় তার বন্ধুমহলরা বেশ চিন্তিত। কারণ আদ্রিতা কখনোই এতটা চুপচাপ থাকে না। তারা শুনেছে আদ্রিতাকে নাকি কোন ছেলে দেখতে এসেছিল। তাও রেস্টুরেন্টে। কিন্তু আদ্রিতা বিয়ে করবে না এমনটা নাকি বলে দিলেছে। মৃদুল বুঝে না এখনও বিয়ে না করলে আর কবে করবে। মৃদুল আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,“আদু,
আদ্রিতা তড়িৎ চমকে ঘুরে তাকালো মৃদুলের দিকে। বললো,“হুম বল,
রনি বললো,“কি হয়েছে তোর?”
রনির কথায় চরম চমকান চমকালো আদ্রিতা। ভড়কানো গলায় বললো,
“কি হবে?”
“তোর হাবভাব ঠিক লাগছে না।”(চাঁদনী)
“আমারও কেমন যেন লাগছে।” (মুনমুন)
আশরাফও বেশ ভাবলো বিষয়টায়। তারও কেমন ঠেকছে যেন আদ্রিতার হাবভাব। আশরাফ মুখে এক লোকমা খাবার নিয়ে তা চিবোতে চিবোতে বললো,“সত্যি কি তোর কিছু হয়েছে আদু?”
বন্ধুদের একে পর এক প্রশ্নে হতমত খাচ্ছে আদ্রিতা। সে বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার বন্ধুমহলের হলোটা কি?” আদ্রিতা বেশ হতভম্ব স্বরে বললো,“আমি সত্যি বুঝচ্ছি না তোরা কি বুঝাতে চাচ্ছিস?”
মৃদুলের সোজা কথা,“প্রেমেট্রেমে পড়েছিস বোইন?”
সঙ্গে সঙ্গে যেন আরো ঘোর চমকান চমকালো আদ্রিতা। চোখ বড় বড় করে বললো,
“এসব কি বলছিস তুই?”
“বিয়েটা করলি না ক্যান।”(রনি)
“আরাফাতের আমাকে পছন্দ হয় নি তাইলে বিয়ে কিভাবে করবো।”
কথাটা ঠিক হজম হতে চাইলো না কারোই। তবুও জোরজবরদস্তি করে কথাটা হজম করে নিলো। এবার আদ্রিতা বললো,“তোরা বিয়ে করছিস না কেন?”
মৃদুল বেশ ভাব নিয়ে বললো,“আগামী পরশু তোগো ভাবিরে দেখতে যাইতাছি। পছন্দ হইলেই বিয়া পাক্কা।”
মৃদুলের হাবভাবে সবাই বেশ হাসলো। রনি মুনমুনের দিকে তাকিয়ে বললো,“মুন চল না আমরাও বিয়েটা করে ফেলি।”
মুনমুন নাকমুখ কুঁচকালেও বললো,“বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিস একবারও। খালি বিয়ে বিয়ে করিস।”
সঙ্গে সঙ্গে পুরো বন্ধুমহল যেন মুনমুনের পানে চাইলো। কি বললো মেয়েটা। তাহলে কি রনিকে বিয়ে করতে সম্মতি জানালো মুনমুন। বন্ধুমহলের হাবভাবে বিষম খেল মুনমুন। তড়িৎ চোখ মুখে লাজুক ভাব এনে বললো,“তোরা এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
আচমকাই হুল্লোড় করে উঠলো সবাই। মুনমুন বিস্মিত। রনি বললো,“কালই তবে যাচ্ছি তোর বাড়ি মুন।”
মৃদুল তো চেঁচিয়ে বললো,“উড়ে মামা ফাইনালি বান্ধুবীর বিয়া খামু।”
মুনমুন মুখে শিখার না করলেও তারা জানতো মুনমুন রনিকে পছন্দ করে। রনির পাশে কোনো অচেনা মেয়েমানুষদের সহ্য করে না। এর আগে যতবার রনি তাকে বিয়ের কথা বলেছে ততবারই তার উত্তর ছিল “তোকে বিয়ে করবে কেডা?” কিন্তু আজকের উত্তরটা ছিল ভিন্ন। তাই সবাই ভেবেই নিয়েছে ফাইনালি তাদের বান্ধুবী, বন্ধুকে বিয়ে করতে রাজি।”
মুনমুন তব্দা খেল সবার উল্লাস দেখে। নিজেও হেঁসে ফেললো হঠাৎ। রনি ভিড়ে মাঝে এগিয়ে এলো মুনমুনের দিকে। বললো,“সত্যি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবো তোর বাড়ি?”
মুনমুন আর না করলো না। সে লাজুক হেঁসে বললো,“আয়।”
মুনমুনের কথা শুনে আচমকাই রনি মুনমুনকে জড়িয়ে ধরলো। হতভম্ব বন্ধুমহল। পরমুহূর্তেই সবাই সবার চোখ বন্ধ করে হেঁসে হেঁসে বললো,“আমরা কিন্তু কিছু দেখি নি।”
হাসে রনি। লজ্জায় মিইয়ে যায় মুনমুন।’
হাসি তামাশার মাঝে হঠাৎ একটা মেসেজ আসে আদ্রিতার। সে দেখে। কিছু ভাবে। কল করে একজন মেডিকেলের স্যারকে। বলে,
“স্যার আমার তিনঘন্টার জন্য একটু ছুটি চাই। বিষয়টা ইমারজেন্সি।”
—–
বাড়ির ছাঁদে বিশাল টেবিল বসানো। মাথার উপর গোল আকৃতির ছাতা। সঙ্গে গোল টেবিলটার চারপাশে চারটে চেয়ার বাঁধানো। আদিব টেবিলে খুশি মনে খাবার বারছে। পোলাও, রোস্ট, ছালাত,ড্রিংক হিসেবে কোক দিয়ে জায়গাটা সাজাচ্ছে আদিব। আজ একটা বিশেষ দিন যার জন্যই আদিবের এত আয়োজন। ফারিশ ছাঁদে প্রবেশ করলো তখন। আদিবের কান্ডকারখানা তার মাথায় ঢুকছে না ঠিক। ফারিশ আদিবের কাছাকাছি এসেই বললো,“এগুলো কি করছো আদিব?”
আদিব মিষ্টি হাসলো। সাজানো শেষ তার। আদিব খুব উৎসাহ নিয়ে বললো,“শুভ জন্মদিন ভাই।”
সঙ্গে সঙ্গে অবাক হলো ফারিশ। চমকালো দারুণ। এতক্ষণে বুঝলো আদিবের এত তোড়জোড় কিসের। ফারিশ বললো,“তুমিও না আদিব।”
ফারিশ এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আদিবকে। বললো,
“এই ভুল তারিখ কেন সেলিব্রেট করো আদিব।”
“দিনটা আমার খুব প্রিয় ভাই।”
ফারিশ কিছু বলে না। একগাল হেঁসে বলে,
“চলো খাই।”
আদিব গেল না। শক্ত কণ্ঠে বললো,“আমি খাবো না ভাই।”
ফারিশ অবাক স্বরে বললো,“কেন?”
সেই মুহূর্তেই ছাঁদে ছুটে আসলো আদ্রিতা। বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,“শুভ জন্মদিন মিস্টার বখাটে।”
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]
#TanjiL_Mim♥️
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/