পর্ব:০৭ #মৃগতৃষ্ণা

0
300

#পর্ব:০৭
#মৃগতৃষ্ণা
সুলায়মানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে আলোচনা সভা ছেড়ে এতগুলো মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তার বাড়ীর বাইরে যাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। ঘন্টার পর ঘন্টা সভা চলল সকাল গড়িয়ে দুপুর শেষ হতে চললো প্রায়। সুলায়মান এবার বললো – আপনারা বরং আগামীকাল আবার আসুন আজ আমার জরুরী কিছু কাজ আছে। আমি না হয় আজকের মধ্যেই ভেবে রাখবো কিভাবে অপরাধীকে ধরা যায়।
সুলায়মান এর কথায় গ্রাম প্রধানরা আস্বস্ত হয়ে যে যার গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করলেন।এদিকে সুলায়মানের বুকে পাহাড় সমান দুশ্চিন্তার ভার। সবাই অনেক সতর্ক হয়ে গেছে যদি কোনোভাবে সে ধরা পড়ে যায় তবে তার এতদিনের অর্জিত সকল সম্মানই ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে এটা সে ঢের বুঝতে পারছে।তবুও তাকে তার কার্য সম্পাদন করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
সুলায়মান কাজের অযুহাত দিয়ে রাজবাড়ী থেকে প্রতিদিনের ন্যায় বেড়িয়ে পড়ল আজও।

রফিক সিরাজ এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বসলো, এতসব ঘটনা সব যেন একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কিত হয়ে আছে খুব আষ্টেপৃষ্টে। সিরাজ যদিও বলছে হয়তো আমরা যা ভাবছি তা সম্পূর্ণই ভুল কিন্তু রফিক ওর কথায় অনড়। রফিক বললো আমি নিশ্চিত যে এসব বাচ্চা চুরি এ রাজবাড়ীর কারো কাজ।কিন্তু কে সে? সেটা যদি একবার বুঝতে পারি তাহলেই পুরো ঘটনার জট খুলবে। আমি যে করেই হোক এই রহস্যের সমাধান বের করবোই করবো।

দুপুরে খেয়ে ওরা সবাই যে যার কক্ষেই বিশ্রাম নিচ্ছিলো। হেমন্তি সিরাজের ডায়েরিটা খুলে পড়তে বসলো।একের পর এক পাতা উল্টে চলেছে হেমন্তি, কোনো পাতার লেখাই ও পড়ছে না শুধু উল্টে পাল্টেই যাচ্ছে। ডায়েরির মধ্যবর্তী পাতায় এসে হেমন্তি খেয়াল করে একটা পৃষ্ঠার লেখাগুলো কেটে দিয়েছে সিরাজ।এবার হেমন্তি সেই কেটে দেওয়া পৃষ্ঠাটাই পড়ার চেষ্টা করছে। – ‘”আমি কখনোই কোনো নারীর এতটা কাছাকাছি আসিনি তবে আজ তোর এতটাই কাছে এসেছি যে নিজেকে প্রায় ভুলতে বসেছি। আমি এখানে রূপবতী সুনয়না কে দেখার আকুলতা নিয়ে এসেছিলাম
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোকে দিয়াশলাই এর মিটমিটে আলোতে আরও একবার দেখে নিজের চোখের তৃষ্ণা মেটায়। তোকে যে কি অপরূপ সুন্দর লাগছিলো যা বলে বোঝানোর মতো কোনো শব্দ আমি খুজে পাচ্ছি না।মৃগতৃষ্ণিকা কি বুঝিস মরূর বুকে জলের ঢেউয়ের সেই মায়াবী দৃশ্য যা গ্রীষ্মের অগ্নিতাপে প্রতিফলিত হয়।যেখানে দিনেও সূর্যের কিরণ ছাড়া এ দৃশ্য দেখা অসম্ভব সেখানে আমি রাতের অন্ধকারে তোকে দেখেছি।
রাতেও কি মরিচিকা দেখা যায়??

আমি হয়তো তোকে এতটা মন দিয়ে কখনো এভাবে দেখিনি তাই সুনয়না কে দেখার ইচ্ছে এত প্রবল ছিলো কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে এতটা কাছে পাওয়ার পর পৃথিবীর আর কোনো সুন্দরই আমাকে আকৃষ্ট করতে পারছেনা। আমার যে কি হয়েছে নিজেও জানিনা আচ্ছা তোরও কি আমার মতো মনে হচ্ছে। সব কিছু কেমন যানি ওলটপালট মনে হচ্ছে।
তুই হয়তো ভাবতে পারিস যে আমি কিসব উল্টোপাল্টা কথা বলছি, সারাক্ষণ তো সুনয়না কে নিয়েই মেতে থাকি আসলে আমি সেটা তোকে রাগান্বিত করার জন্য করি। আমার মনে হয় তুই ভীষণ রাগান্বিত হয়ে যাস যখন আমি সুনয়নার প্রশংসা করি। বিশ্বাস কর তোকে রাগলেও সুন্দর লাগে এখন। আমি তো এতবড় করে এস্যাইনমেন্ট কোনোদিন করিনি আর আজ দেখ তোকে নিয়ে কত কথা বলে ফেললাম। হেমন্তি সত্যি বলতে এখন আমি কেন যানি তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।তুই ও কি আমায় নিয়ে ভাবিস নাকি অন্যকাউকে নিয়ে স্বপ্ন বুনিস? তবুও বলবো হেমন্তি তুই আমার কাছে এক অন্যরকম অনূভুতি যা বোঝানোর মতো ভাষা এ পৃথিবীতে এখনো আবিষ্কার হয়নি।”শুধু ভালোবাসি বললে আমার কাছে হয়তো কম হয়ে যাবে।আমি তোকে………..
আর কিছুই লেখেনি তবে কেটে দিয়েছে পুরো পাতাটা।
হেমন্তির এই কাটা-ছেঁড়া ডায়রির পাতা টা দেখে ভীষণ রাগ হচ্ছে সিরাজের ওপর।হেমন্তি একা একাই বলতে শুরু করলো জীবনে প্রথমবার কোনো প্রেমপত্র পেলাম আর সেটাও কিনা কাটা-ছেঁড়া। থাক! ও যে এতকিছু লিখেছে এই তো বেশি।কিন্তু যে আমার সাথে সারাদিন ঝগড়া করে সেই আমায় ভালোবাসে, স্বপ্ন দেখে আমায় নিয়ে। সে আবার আমায় প্রশ্ন করেছে রাতেও কি মরচীকা দেখা যায়?? হ্যা যায়। এইতো সেদিন রাতেই তো দেখলাম তোকে দিয়াশলাই এর মিটমিটে আলোতে কি সুন্দর লাগছিলো ঠিক মৃগতৃষ্ণার মতো।হেমন্তি একা একা বকবক করেই চলেছে এমন সময় দরজায় কে যেনো টোকা দিল। হেমন্তি ডায়েরি টা হুরমুর করে টেবিলে রেখে দিল আর বলল- কে??
– আমি
– আমি কে? নাম নেই?
– সিরাজ। আসবো ভেতরে?
– হ্যা আয়।
সিরাজ কক্ষে প্রবেশ করেই দৃষ্টি এদিক ওদিক দিচ্ছে আর বলছে এই আমার ডায়রি টা কোথায় রে?

হেমন্তি সিরাজেকে উদ্দেশ্য করে বললো বা-বাহ্।এমন কি আছে তোর ওই ডায়েরি তে? এত খোঁজ কিসের?

সিরাজ কপাল ভাজ করে বলল আমার ডায়েরি আমাকে ফেরত দে বলছি, সবসময় রসিকতা ভালো লাগেনা বলে দিলাম।
হেমন্তি মিটমিটিয়ে হাসছে আর বলছে না দেবো না।কি করবি তুই?
সিরাজ হেমন্তির সবকিছু ওলট পালট করে খোঁজা শুরু করলো ওর ডায়েরি অবশেষে দেখলো ওটা ওর চোখের সামনেই ছিলো, টেবিলের ওপর।
হেমন্তি রাগে ফোঁসফোস করছে। সিরাজ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দেখিয়ে তার ডায়েরি নিয়ে সে চলে যেতে লাগলো।
হেমন্তির ইচ্ছে ছিলো সেই কাটা-ছেঁড়া পাতা টা সে রেখে দিবে তার কাছে আর যখন ইচ্ছে হয় সে পড়বে।কিন্তু সিরাজ তার সব আশায় জল ঢেলে দিলো।

সিরাজ ডায়েরিটা হাতে করে তার কক্ষে এসে শুয়ে পরল আর একা একা বিরবির করে বলতে লাগল উফ! কি বাঁচা বাঁচলাম। হেমন্তি যদি আমার লেখাগুলো পরে নিতো, কি গাধা আমি। ওর হাতে দিয়েছি আমার ডায়েরি যদিও কাটাছেঁড়া করে দিয়েছি তবুও বলবো ও যা মেয়ে ঠিক এর থেকেই পড়ে নিতো আর আমায় নিয়ে মজা করতো। ও তো পারে সারাদিন ঝগড়া করতে আমার আবেগ ও কি বুঝবে? ঝগরুটে মেয়ে একটা। এসব বলে একা একাই হাসছে আনমনে।

রফিক ও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে সিরাজের ব্যাপারে। রফিক নিজের মনকে কোনোমতে সামলে নিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে লাগলো যে করেই হোক ও প্রমান করেই ছাড়বে রাজবাড়ীতেই লুকিয়ে আছে বাচ্চাদের অস্তিত্ব। আর তবেই হেমন্তি তাকে আবার আগের মতো করে বিশ্বাস করবে কথা বলবে।রফিক মনে মনে তার প্লান সাজিয়ে নিলো কি করে এর রহস্য উন্মোচন করা যায়। আজ রাতে ও ঘুমাবে না বরং জেগে থাকবে ও নজর রাখবে রাজবাড়ীর ওপর।
এবার আর প্রমাণ ছাড়া কোনো কথাই বলবে না ও।

পাতালঘরে রূপা বেশ বিরক্তি ও মনকষ্ট নিয়ে বসে আছে।তবে সে কাঁদে না। এটা তার একটা গুন বললেই চলে, কেননা এই বয়সের বাচ্চারা থাকে কোমল হৃদয়ের সামান্য কিছু একটা হলেই কান্না করে বুক ভাসিয়ে দেয় কিন্তু রূপা ঠিক তার উল্টো। জল্লাদকে ডেকে রূপা বললো কালু আমি কি রাজপুত্রর সাথে দেখা করতে পারবো না আর আগের মতো?
– কেন পারবা না রূপা বড় বাবু তো তোমারে আইজ নিয়া যাইবো রাতে আইসা তোমার মা নাকি তোমায় দেখতে চাইছে।
– আজকে রাতেই যাবো দেখা করতে? মেহমানরা চলে গেছে বুঝি কালু?
– না তারা যায়নি। তয় তোমারে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে যাইবো বলছে।
রূপার এবার বেশ খুশি খুশি লাগছে।এই পাতালঘরে বন্দিজীবন তার মোটেই ভালো লাগছেনা।

বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো, দিগন্ত সোফিয়ার কক্ষে প্রবেশ করল আর বললো মিস.সোফিয়া এই স্কেচখাতা টা আমি আপনাকে আমি উপহার হিসেবে দিলে আপনি কি গ্রহণ করবেন?
– ওহ্ দিগন্ত কেন গ্রহণ করিব না আমি। তোমার স্কেচ আকিঁবার হাত বেশ সুন্দর। আমার বেশ পছন্দ হইয়াছে।
-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মিস.সোফিয়া।
দিগন্তের চোখে মুখে হাসির ঝলকানি স্পষ্ট। সোফিয়া তার প্রশংসা করছে এর চেয়ে খুশির মূহুর্ত তার কাছে আর হয়না। দিগন্ত সোফিয়ার হাতে তার স্কেচখাতা টা দিয়ে কক্ষ থেকে চলে গেলো লজ্জামাখা মুখ নিয়ে।

সোফিয়া এবার মনোযোগ দিয়ে স্কেচ খাতাটা খুলতে লাগলো আর আচমকাই নিজেকে সে আবিষ্কার করলো দিগন্তের আঁকা স্কেচখাতায়। কি অপরূপ সুন্দর লাগছে সোফিয়াকে সে নিজেই যেন নিজেকে দেখে বিস্মিত হলো। দিগন্তের আঁকা সোফিয়াকে যেন বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে সোফিয়ার। এরপর একটার পর একটা পাতা উল্টে চলেছে সোফিয়া দেখতে লাগলো একি! পুরো স্কেচ খাতা জুড়ে যেন সোফিয়ার রাজত্ব। একেক রকম সুন্দর একেকটা স্কেচ।কখনো সোফিয়া তাকিয়ে আছে আনমনে কখনো হাসছে আবার কখনো মুখে চিন্তার ভাজ এতসব কিছু দিগন্ত খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে তার আঁকা প্রতিটি ছবিতে।
সোফিয়া বুকে জড়িয়ে নিলো দিগন্তের দেওয়া উপহারটা। যেন এবার দিগন্তের ভালোবাসা সোফিয়া অনুভব করতে পারছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সোফিয়া তার বুক থেকে স্কেচ খাতাটা সরিয়ে নিলো আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজে নিজেই বলতে লাগলো আমার প্রতি তোমার একটা দুর্বলতার আছে যা আমি বেশ ভালো করিয়াই অনুভব বুঝিতে পারিতেছে কিন্তু তুমি যে বিধর্মী দিগন্ত। আমাদের খ্রিষ্টান ধর্ম অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের বিবাহ যে পাপ।ইহা গ্রহণযোগ্য হইবে না। আমি এমন একজন পুরুষকে ভালোবাসিতে চাই, যাকে আমি আমার করিয়া পাইবো। আর তোমাকে যে আমার মনে আনাও পাপ দিগন্ত।
জীবন কেন এতো জটিল বলিতে পারো তুমি দিগন্ত??

আজ রাতেও প্রতিদিনের মতোই রাজবাড়ীর পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো সুলায়মান। রাজবাড়ীর পেছনে লুকিয়ে আছে রফিক, রফিক খেয়াল করলো কোনো একজন বৃদ্ধ লোক রাজবাড়ীর পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো কিন্তু কে এই লোক? নিজের মনকে প্রশ্ন করতে লাগলো রফিক। এই অন্ধকার রাতে কাউকে একনজর দেখে চেনাও সম্ভব নয় তারমধ্যে ছদ্মবেশ নেওয়া সুলায়মানকে চেনা আরও বেশি দুষ্কর।
রফিকের বুকের ভেতর থাকা হৃদয়টা যেন কিছুটা কম্পিত হলো এমন দৃশ্য দেখে। রফিক আরও অবাক হলো রাতে কোনো প্রহরী এখানে থাকে না।
এবার রফিক রাজবাড়ীর ভেতরে ঢুকে পড়ল। রফিক জুলেখার কক্ষের দিকটায় এগোতে লাগলো গুটি গুটি পায়ে। নিজের প্রান যেন সে হাতে নিয়ে হাটছে খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে রফিক এমন সময় কারো হাতের স্পর্শ সে তার কাধে অনুভব করলো, ব্যাস ধরা পড়ে গেলাম হয়তো? দৃষ্টি ওঠানামা করছে ঘাড় ঘুরানোর চেষ্টা করছে খুব কিন্তু পারছেনা। অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো -কে,কেহ্?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো – আমি। এর আগেও আপনাদের বলা হয়েছিল রাতের বেলা রাজবাড়ীতে অহেতুক হাঁটাচলা করবেন না। তবে কেন আপনারা এই কথাটা মানছেন না বলুনতো?
রফিক এবার সুলায়মানের গলা পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল জনাব সুলায়মান আমি আপনাকে খুঁজতেই এসেছিলাম।

-আমাকে কি প্রয়োজনে?

যেহেতু সুলায়মানকে রফিক তার পেছনে দেখলো তাই রফিকের সন্দেহের তালিকা থেকে সুলায়মান বাদ পড়লো আর তাই রফিক সুলায়মানকে আবার বললো আমি মনে হয় আপনাকে সাহায্য করতে পারবো জনাব বাচ্চা চুরির বিষয়টি নিয়ে। ঐ যে সকালে দেখলাম সভা বসেছিল। তাই আরকি…

– কেমন সহযোগিতা করতে পারবেন? কি জানেন আপনি এ ব্যাপারে? ( সুলায়মানের কন্ঠ কাঁপা কাঁপা)

রফিক বললো আমার মনে হচ্ছে এ বাড়িতেই সেই রহস্য লুকিয়ে আছে জনাব। আপনার অগোচরেই হয়তো এ বাড়ীতে কেউ এই কাজ করে বেড়াচ্ছে।
সুলায়মানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে, চাহনিও কেমন যেন অন্যরকম লাগছে তবুও কোনোমতে বলে উঠল -কে হতে পারে জানেন?

– নাহ জনাব তা জানিনা কিন্তু আমি কাউকে রাজবাড়ীর পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখেছি কেমন যেন বৃদ্ধ মনে হলো তার হাতে একটা বড় পুটলিও দেখেছি জনাব। অন্ধকার হওয়ার ভালোভাবে কিছুই দেখতে পারিনি।

সুলায়মান এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে নরম সুরে বললো দেখুন আমিও আপনার মতোই অপরাধী কে খোজার চেষ্টা করছি আর প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা যায় না তাই আমিও সুযোগেরই অপেক্ষায় আছি।আপনারা মেহমান ভ্রমণে এসেছেন ভ্রমণ করেই চলে যান। এর বাইরে আপনাদের কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করিনা। আমাকে যে কথাগুলো বললেন তা ভুলেও কাউকে বলবেন না তবে জানাজানি হলে রাজবাড়ীর সম্মানহানি হতে পারে আপনি এবার আসুন।আমিই যা করার করবো।
রফিক মাথা নিচু করে নিজের কক্ষে প্রবেশ করলো সিরাজ এখনো জেগে আছে। রফিকের ভেতর ঢোকার শব্দ পেয়ে জিজ্ঞেস করলো কিরে কোথায় গিয়েছিলি এত রাতে?
রফিকের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে।রফিক বললো এমনিতেই একটু বাইরে হাটতে গিয়েছিলাম।
সিরাজ বুঝতে পারছিলো রফিক কিছু একটা লুকাতে চাইছে ওর কাছ থেকে তাই ও জানার জন্য বেশি জোড় করলো না।
রফিক বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।রফিকের মনে হাজার হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো।মনের মধ্যে সব প্রশ্নের ছড়াছড়ি নিয়েই ও ঘুমিয়ে পড়লো।

সুলায়মান রূপাকে প্রতিরাতের মতো কাচের জারে থাকা ঘুমের ঔষধটি নাকে দিয়ে দিলো যাতে ও ঘুমিয়ে পড়ে আর পাতালঘরে হয়ে যাওয়া ঘটনা ওর চোখে না পড়ে বা টেরও না পায়। রূপাকে দেখার পর থেকেই সুলায়মানের বাচ্চাদের ধরে আনতে ভীষণ কষ্ট হয় কিন্তু তাকে যে এ কাজ করতেই হবে নয়তো সব সাধনাই বৃথা যাবে। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে তবেই তো আর এই কাজ করতে হবে না তার।কিন্তু মাঝখানে পথের কাটা হয়ে দাড়ালো মেহমানরা।

এরপর জল্লাদও তার কাজ করে দিলো, জুলেখার খাবারও প্রস্তুত করে নিয়ে সুলায়মান রূপা ও খাবারের থালা নিয়ে চলে এলো কক্ষে। জুলেখা আজও দৌড়ে চলে আসলো দরজার সামনে। রূপার দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে থালাটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। এরপর সে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললো আজ রূপাকে নিয়ে এসেছেন জনাব। কিন্তু বাড়ীতে তো এখন মেহমানরা রয়েছে তাদের দৃষ্টির অগোচরে রূপাকে নিয়ে আসা আবার পাতালঘরে রেখে আাসা কি কষ্টসাধ্যের ব্যাপার হচ্ছে না বলুনতো?
সুলায়মান হেসে উত্তর দিল এর চেয়েও হাজার গুন বেশি কষ্টসাধ্যের কাজ আমি করেছি বেগম। এ আর এমনকি।জল্লাদের কাছে শুনলাম রূপার নাকি পাতালঘরে বেশ মন খারাপ হচ্ছিল আবার তুমিও বললে রূপাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই নিয়ে এলাম। ভোরের আলো ফোটার আগেই ওকে আমি পাতালঘরে দিয়ে আসবো।
রূপার দুচোখ বন্ধ, বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন মেয়েটা।সুলায়মান রূপাকে পালঙ্কে শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেলো। জুলেখা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রূপার দিকে। রূপার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কেমন যেন রহস্যময়তা নিয়ে হাসছে। হাত বুলাতে বুলাতে সেদিনের মতো আজও রূপার কলিজার স্থানে গিয়ে সে থামলো।কি ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হঠ্যাৎ করেই রূপা চোখ খুলে চমকে উঠলো আর জুলেখার চাহনি দেখে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো ভয়ে।সুলায়মান দৌড়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে রূপাকে কোলে তুলে নিলো। রূপার বুকের ভেতর ছোট্ট হৃদপিণ্ডটা দ্রতগামী হয়ে উঠেছে ধুকপুকানি শব্দ বেশ উপলব্ধি করতে পারছে সুলায়মান।
রূপা সুলায়মানের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে আর চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুতেই চোখ খুলছেনা মেয়েটা।
ভয়ে কুকরে আছে রূপা।
সুলায়মানের ভয় হলো সেদিনের মতো আজও কেউ শুনতে পেল নাতো চিৎকারের শব্দ? সুলায়মান রূপাকে বললো কি হলো রূপা ভয় পাচ্ছো কেনো? উনি তো তোমার মা।
জুলেখা বললো হয়তো খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে মেয়েটা দাও, ওকে আমার কোলে তুলে দাও তো দেখি।

সুলায়মান বললো থাক না ও আমার কাছে আমিই ওকে সামলে নিচ্ছি তুমি বরং ঘুমিয়ে পড়ো বেগম।
সুলায়মান রূপাকে কোনোরকমে শান্ত করেছে এখন রূপার আবদারে ওকে ছদ্মবেশের যাদু দেখাচ্ছে। এভাবেই বাবা-মেয়ে খুনসুটি করে রাত পার করে দিলো।একটু পরেই ভোরের আলো ফুটবে চারদিকে তার আগেই রূপাকে সুলায়মান পাতালঘরে রেখে আসতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ পেলো। সুলায়মান কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখলো একটা ফুলের টব ভেঙে চুরমার হয়ে পরে আছে। সুলায়মানের মনে প্রশ্ন জাগে এত ভোরে কে এসেছিলো আমাদের কক্ষের সামনে? কে হতে পারে?

সুলায়মানের সন্দেহ হয় রফিকের ওপর, যেহেতু কাল রাতে ও এসেছিলো তাই হতেই পারে কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে ও আবার এখানে এসেছে। এবার ওর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। সুলায়মান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে চারদিকে খুঁজলো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না।তবে মনে হলো রফিক এসেছিলো এখানে।
রফিকের এই কৌতুহলই তার জীবনে কাল হয়ে না দারায়? একা একাই বলতে থাকে সুলায়মান।
এদিকে রফিক…..

চলবে,,,,,
#লেখা: মুন্নি ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here