#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৩৭.
#ফাবিয়াহ্_মমো .
(যাদের লিংকে ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছিলো, এটা তাদের জন্য।)
অংশ সংখ্যা ০২.
আজ মস্ত আকাশের উপর বৃষ্টির গুরুভার পরেছে। সেই গুরুভারটা গুরুত্বের সাথেই থেমে-থেমে পালন করছে কালোমেঘের আকাশ। বৃষ্টির প্রবল ধারায় শহরের আনাচে-কানাচে করুণ-বেহাল দশা এখন, পা ফেলতেও মানুষ দ্বিধাবোধ করছে আজ। বৃষ্টি তখনও থেমে যায়নি, কালো মেঘে পুন্ঞ্জীভূত হয়ে বারবার আকাশ ফেটে স্ফূলিঙ্গ দেখা দিচ্ছিলো। মেহনূর ফ্রিজ থেকে দুটো কমলা বের করে সমানতালে ছিলে যাচ্ছে, তার অন্যমনষ্ক দৃষ্টি এখন জানালার বাইরে আকাশের দিকে স্থির। মান-অভিমানের গোলকধাঁধায় আজ মেহনূর যথেষ্ট ক্লান্ত অনুভব করছে, এই ক্লান্তি সমস্ত দেহে বিষাদের মতো আঘাত করছে। আঘাতে নিরবে-নিরবে ক্ষত হচ্ছে ভেতরের ছোট্ট মনটা। মেহনূর কমলার গা থেকে শেষ খোসাটা ছিলে নিতেই গায়ের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো কেউ। অন্য কারোর উপস্থিতি টের পেতেই খানিকটা চমকে উঠে সৎবিৎ ফিরে পাশে তাকালো মেহনূর, ডানে তাকিয়ে দেখলো মাহদি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বৃত্তের মতো গোল কমলাটা তার দু’হাতের মুঠোয় দু’ভাগ হয়ে আছে, সেখান থেকে কমলার প্রতিটি অংশ আলাদা করে কাঁচের পিরিচ সাজাচ্ছে মাহদি। এটুকুনি দেবরের কার্যকলাপ দেখে আশ্চর্য হতে গিয়ে অকস্মাৎ হেসে দিলো মেহনূর। মাহদির পিঠে হালকা মতোন চাপড় মারতে গিয়ে সেটা আর করলো না, হাতটা মাহদির মাথায় রেখে পরমস্নেহে চুলের ফাঁকে-ফাঁকে বুলিয়ে দিতে থাকলো। মাহদি এমন ভঙ্গিতে কাজ করতে লাগলো, যেনো সে এসবে পুরোনো দিনের দক্ষ কারিগর। মাহদির চুলের চামড়ায় আঙ্গুলের ডগা দিয়ে বুলিয়ে দিতেই প্রসন্ন হাসিতে বললো মেহনূর,
– তুমি এখানে কেনো পুচকে দেবর? তোমার কি মোবাইলে খেলা নেই? আমাকে সাহায্য করতে হবে না। তোমার কিছু লাগলে বলো আমি করে দেই।
মাহদি বড়দের মতো গলাটা একটু খুকখুক করে কেশে নিলো, কথা বলার জন্য গলাটা পরিষ্কার করতেই মেহনূরের হাত থেকে অন্য কমলাটা নিতে-নিতে বললো,
– আমি আমার বউকে সাহায্য করছি। বউকে টুকটাক কাজে হেল্প করাই যায়। তাছাড়া অনা-মনার কাছ থেকে দূরে থাকো, পারলে তোমার প্রিসিয়াস আইটেমগুলো লুকিয়ে রাখো। ঘর থেকে কিছু উধাও হলে সেই জিনিস আর ফিরে পাবেনা।
মাহদির কথায় ভ্রুঁদুটো কুঁচকে কপালে অসংখ্য ভাঁজ পরলো। বাড়ির নতুন অতিথি নিয়ে কেমন ইশারা দিলো? অনামিকা কি চোর নাকি চোরাই স্বভাবের অন্য কেউ? মেহনূরের মুখটা আড়চোখে দেখতে পেলো মাহদি। সাথে-সাথে চোখ বুজে নিজেকে অনেকগুলো গা’লি দিলো, পরিস্থিতিটা তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক করার জন্য তাড়াহুড়ো করে অন্য প্রসঙ্গ টেনে বললো,
– কমলা সব সাজিয়ে দিয়েছি। তুমি কি এগুলোর জুস করবে? করলে তুমি সাবু খালাকে বলে দাও। খালা চমৎকার করে জুস বানিয়ে দিবে।
মেহনূর মৃদ্যু করে হেসে দিয়ে মাথাটা একটু নিচে ঝুঁকালো। মাহদির মাথায় ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে তাকে চলে যেতে বললো। মাহদি আরো কিছুক্ষণ থাকতে চাইলো কিন্তু মেহনূরের কথা শুনে আর সেখানে থাকলো না। মেহনূর আধুনিক যুগের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে জানেনা, গ্রামের সহজাত জিনিস দিয়েই শরবত বানানো শিখেছে। বড় মার কাছ থেকে শরবত বানানোর যেসব কৌশল রপ্ত করেছিলো, সেগুলো একে-একে ফলাতে থাকলে রান্নাঘরের দরজার আড়াল থেকে সবকিছু দেখতে লাগলো মাহদি। চোখদুটো সর্বক্ষণ মেহনূরের উপরেই আঁটকে আছে, বাড়িতে যেদুটো ডা’ইনীর আগমন হয়েছে, তাদের আসাটা এই মূহুর্তে ঘোর অমঙ্গল। দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে থাকলে হঠাৎ হাতে হেঁচকা টান খায় মাহদি, ভয়ের চোটে গলা ফাটিয়ে ‘ আম্মু ‘ বলে চিৎকার দিবে সেটারও সুযোগ আর রইলো না। মুখের উপর কঠিনভাবে হাত চেপে ধরলো কেউ, তারহাতদুটো পিছমোড়া করে শক্তভাবে ধরে আছে, চোখ খুলে ঠিকঠাক মতো অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দেখবে সেটারও কোনো ব্যবস্থা নেই। বুকটা ঢিপঢিপ করে কাঁপতেই সেকেন্ডের ভেতর ঘেমে উঠলো মাহদি। হাত-মুখ-চোখ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও নাকের ইন্দ্রিয়শক্তি তখনও সচলভাবে কাজ করছে। নাকে যে মিষ্টি পারফিউমের সুভাস পাচ্ছে সেটা ঠিকমতো আন্দাজ করতেই পুরো দেহ যেনো শিরশির করে কেঁপে উঠলো। তীব্র আতঙ্কে কিচ্ছু বললো না মাহদি, শুধু চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো। মাহদিকে স্বল্প সময়ের ভেতর টেনে এনে রুমের দরজার সাথে ঠেসে ধরলো, ছোট্ট মুখটার দু’গালে বাঘের থাবার মতো শক্ত করে চেপে ধরলে ঠোঁট ধীরে-ধীরে উঁচুতে উঠে গেলো। মাহদির দিকে কড়া দৃষ্টি ছুঁড়ে হুঙ্কার দিয়ে বললো,
– চোখ খোল্।
কন্ঠের তীব্রতায় আরেকবার শিউরে উঠলো মাহদি। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই চোখভর্তি পানিগুলো টলমল করে উঠলো ওর। মনে-মনে যে ব্যক্তিকে নিয়ে ছক কষেছিলো, সেটা পুরোপুরি খাপে-খাপ মিলে গেছে। গালটা যেভাবে চেপে ধরেছে মাহদি গোঙানো সুরেও আওয়াজ করতে পারছিলো না, সেই কড়া চাহনিটা ওর মুখের কাছে এসে আবারও নিচু সুরে বললো,
– তুই ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিলি? কোনো মিথ্যা বলতে যাবিনা। আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে নজরদারি করবি সেটা ভুলে যা মাহদির বাচ্চা। তোর ভাই যে নেই, এইবার তোকে, আর তোর বউকে কে রক্ষা করবে? নীতিরাও নেই, সৌভিকরাও বাড়ি ফিরেছে, তোর বোকামার্কা মা থাকার চেয়ে না-থাকাও ভালো। সে আমার কোনোকিছুই করতে পারবে না। তুই সাবধানে থাকিস। তোর ভাই আমার সাথে যা করেছিলো, সেটা যদি একটুখানি জায়গামতো পৌঁছে দেই তাহলে ওই গেঁয়োর অবস্থা কেমন হবে সেটা ভালোমতো চিন্তা করে নিস। আমাকে রাগাতে যাস না। তোর ভাইকে বলিস অনামিকা এখানে শান্তিমতো থাকতে এসেছে। আমার সাথে যদি তামাশা করার চেষ্টা করে, ক্ষতিটা ওর কলিজার উপর টেনে-খুবলে করবো।
টলমলানি অশ্রুগুলো এক-এক করে গাল বেয়ে নামতে লাগলো। মাহদি কাঠ-কাঠ ভঙ্গিতে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চোখ থেকে যে অশ্রুগুলো পরছিলো তাও অবিরামভাবে পরছে, তাতে কোনোপ্রকার হেলদোল নেই। অনামিকা গালটা ছেড়ে দিতেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ছেড়ে রাখা সিল্কি চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করলো। মাহদি শুষ্ক-রুক্ষ গলায় ঢোক গিলে কাঁপা-কাঁপা সুরে বললো,
– যা-যাই?
অনামিকা হাসিহীন মুখে দাম্ভিকতার ভঙ্গিতে মাথাটা ‘ হ্যাঁ ‘ করে নাড়ালো। ডানহাতের তর্জনী তুলে বেরিয়ে যাওয়ার ইশারা করলো। মাহদি ভয়ে-ভয়ে চোখ নত করে নব্ ঘুরিয়ে দরজা খুললো, বাইরে পা দিতেই অনামিকার কন্ঠটা ফের বেজে উঠলো,
– তোর মা’কে কিছু বলতে যাস না মাহদি। এবার কিন্তু টর্চার তোর উপর করবো না, তোর ‘ বউ, বউ ‘ করা মেহনূরের উপর চালাতে থাকবো। মুখটা একদম স্কচট্যাপের মতো বন্ধ করে রাখবি, নাহলে এটার পরিণাম মোটেও ভালো হবেনা।
দরজার নব্ ধরে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে মাহদি। রাগে শরীরের প্রতিটি কোষ যেনো বিক্ষোভ করে উঠছে, আজ যদি তার ক্ষমতা থাকতো, তাহলে মাহতিমকে ডেকে এনে একেবারে ওর শিরায়-শিরায় শিক্ষা ঢুকিয়ে ছাড়তো। মাহদি মাথাটা পিছু না ঘুরিয়ে ছোট্ট করে বললো,
– ঠিক আছে, বলবো না।
নব্ ছেড়ে দরজার বাইরে পা বাড়ালো মাহদি, হাতের উলটোপিঠে চোখদুটো ভালো করে মুছলো। নিজের রুমের দিকে যেতে-যেতেই অনেক কিছু ভাবতে লাগলো। তার একটু আগের ভয়ার্ত মুখটা এখন যেনো আকাশের মতো কঠোর হয়ে আছে। যে চোখে ভয় গ্রাস করেছিলো সেটা আকস্মিকভাবে বদলে গেছে, বুকের ভেতর তরতাজা রক্তগুলো রাগে-ক্ষোভে উত্থাল করছে এখন, কিছুতেই শান্ত হতে চাচ্ছেনা ক্ষুদ্ধ-বিক্ষুদ্ধ মন।
.
সাদা পরিষ্কার ডিভানে বসে আছেন জাফর হাবিব। পায়ের উপর পা তুলে রেখেছে সে। ঠিক সামনের টেবিলে পেটমোটা ধরনের দামী একটা বোতল সাজানো আছে। তিনি বোতলটার দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টি ছুঁড়ে দেখতে লাগলেন, ইংরেজি এ্যালফাবেটে গভীর মনোযোগ ঢেলে দিয়ে হঠাৎ মনে-মনে উচ্চারণ করে উঠলেন, ‘ বিদেশী মাল, উফ! ‘। ভদ্রলোকের মুখোমুখি সোফায় সাধারণ কায়দায় বসে আছে মাহতিম। জাফর হাবিবের তৃষ্ণার্ত মুখটা দেখতে পেয়ে ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি দেখা দিলো। টেবিলটার দিকে হাত বাড়িয়ে পেটমোটা বোতলটা হাতে নিলো, প্রোফেশনাল স্টাইলে ছিপি খুলতেই জাফর হাবিব চোখ ছোট করে বললেন,
– ইজ দিজ ট্রু ইয়াং বয়? তুমি কি ওগুলো চেখে দেখো? সবই তো দেখছি এ্যাব্রড কান্ট্রির হাইপ মাল।
ঠোঁটের হাসিটা আর বাঁকাভাবে রইলো না, এবার যেনো চওড়া করে হেসে দিলো। ছ্যাৎ করে শব্দ হতেই বোতল থেকে ফেনা মতো কিছু পানীয় মাহতৈমের হাত গড়িয়ে পরতে থাকলো, এরপর কাঁচের গ্লাসের কাছে মুখ ঠেকিয়ে ঢকঢক করে সামান্য পানীয় ঢেলে নিলো। আধাভর্তি গ্লাসটার নিচে থাকা চিকন দন্ডটা দু’আঙ্গুলের ফাঁকে চেপে ধরলো, এরপর তরল পানীয় দ্বারা পরিপূর্ণ গ্লাসটা এগিয়ে দিলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে প্রসন্ন হাসিতে বললো,
– আপনাদের জন্য কালেকশন রেখেছি স্যার, এসব আমার জন্য না।
মাহতিমের হাত থেকে সেও একই ভাবে দু’আঙ্গুলের ফাঁকে নিলো গ্লাসটা। ঠোঁটের কাছে গ্লাস ঠেকিয়ে ছোট্ট একটা চুমুক দিলো, তৃপ্তিতে চোখমুখ বুজে এলো তার। মাহতিম এটা ভালো করেই জানে, তার থেকে উর্ধ্বতন পদের মানুষদের কিভাবে হ্যান্ডেল করা লাগে। মাহতিম একপেশে হাসি দিয়ে নিজেও পায়ের উপর পা তুলে নিলো, সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসতেই বাঁ কনুইটা সোফার হ্যান্ডেলে ঠেকিয়ে দিলো। জাফর হাবিব তৃপ্তিজনক সুখ থেকে বিচ্যূত হয়ে আবার চোখ খুলে তাকালেন, মাহতিমকে চতুর চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি দিয়ে বললেন,
– শুনলাম নতুন বিয়ে করেছো, কথাটা কি সত্যি না গুজব? তোমার বিয়ে নিয়ে যেই গুজব রটে মাই গড! বিশ্বাস করতে গিয়েও ভড়কে যাই।
মাহতিম ওইভঙ্গিতেই জবাব দিলো,
– না, এবার সত্যি শুনেছেন। বিয়ে করেছি।
জাফর হাবিব কেবল আরেক চুমুক দিতে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে এমন কথা শুনে বিষ্ময় দৃষ্টিতে বললেন,
– কে সেই ভাগ্যবতী মেয়ে? আমি কি তাহলে ফাইনালি এম. আনসারীর বিয়ের সংবাদ শুনলাম? আমিতো ভেবেছি চিরকুমার থাকার প্রতিজ্ঞা করে বসে আছো।
মাহতিম ‘ চিরকুমার ‘ শব্দটা শুনেই ফিক করে হেসে দিলো। জাফর হাবিবের দিকে সদ্য খোলা বোতলটা আবার এগিয়ে দিতেই গ্লাস ভর্তি করে দিলো। পুনরায় আগের মতো বসলে পরিষ্কার হাসিতে বললো মাহতিম,
– বিয়ে করেছি এটা সত্য। ভাগ্যবতী না বলে ভাগ্যবান বলুন মেজর। ভাগ্যটা বলতে গেলে আমার। এমন সময়ে আমার লাইফে কেউ চলে আসবে এটা ধারণা করতে পারিনি। তবে এখন যেহেতু এসে গেছে, সেক্ষেত্রে আমার ভাগ্য বলা চলে।
মেজর জাফর হাবিব হাসতে-হাসতে হঠাৎ মলিন হয়ে গেলেন। হাতের গ্লাসটা ঠোঁটে না ঠেকিয়ে টেবিলে রেখে দিলেন। চোখদুটো কিছুক্ষণ বন্ধ করে চুপ করে বসে রইলেন, জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় বলতে লাগলেন,
– তোমার বাবার হাসি-হাসি মুখটা দেখতে পাচ্ছি মাহতিম। আমার দিকে সে হাসছে। আমি যদি এখন ওর দিকে এগিয়ে যাই তাহলে ও আমাকে জাপটে ধরে নাচবে। কি অমায়িক হাসি, এতো সুন্দর হাসিটা ওই শেষ সাক্ষাতে দেখেছিলাম। চোখের সামনে মৃত্যু দেখেও আমার দিকে হাসছিলো, হাত নাড়িয়ে টাটা দিতেই চোখের পলকে মিলিয়ে গেলো।
বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করলো মাহতিম। নিশ্বাসটা আচানক আঁটকে গিয়ে কোথাও ছুড়ির মতো ঢুকে গেলো। বন্ধ চোখজোড়া কুঁচকে নিতেই ঠোঁট খুলে নিশ্বাস ছাড়তে লাগলো, চোখের কুঁচকে রাখা ভাবটা ধীরেসুস্থে স্বাভাবিক হয়ে পরিষ্কার দৃষ্টিতে তাকালো। জাফর হাবিব চোখের উপর রুমাল চেপে ধরে আছেন। ভদ্রলোক যে সহকারী বন্ধুর মৃ’ত্যুযন্ত্র’নায় ব্যথা অনুভব করছেন, সেটা পরিদৃষ্ট। মাহতিম গলা খাকাড়ি দিয়ে একটু কেশে নিলো, ইঙ্গিতে জাফর হাবিব শান্ত হয়ে আবার প্রাণোচ্ছল হাসিতে স্বাভাবিক হয়ে উঠলেন। হাসিটুকু ধরে রেখে গ্লাস তুলে বললেন,
– নাম কি? কোথাকার মেয়ে? শহরের তো?
মাহতিম সহজ ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
– ম্যাডামের নাম মেহনূর। আমার মায়ের দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয়, গ্রামে ওদের বসতবাড়ি আছে।
জাফর হাবিব উত্তর শুনে পানসে মুখে তাকালেন, কিছুটা কৌতুহল নিয়ে বললেন,
– মারজা ভাবীর ওই রিলেটিভ নাতো? তুমি কাকে বিয়ে করেছো?
মাহতিম সকল কৌতুহল ধূলিসাৎ করে গোড়া করে বলতে লাগলো,
– এবার যে অনেক দিনের ছুটি নিয়েছি তাতো আপনি জানেন। ছুটিটা মূলত ওদের বাড়িতে গিয়েই নেওয়া হয়েছে। মায়ের ফোর্স দেখে ডিপার্টমেন্ট থেকে প্ল্যান মোতাবেক চার দিনের ছুটি নিয়েছিলাম, মা বায়না ধরলো তার আত্মীয়ের বাড়ি যাবে। না করতে পারিনি। তার সঙ্গেই আমার ভাইবোনদের নিয়ে গেলাম। সেখানে সবকিছু নরমাল দেখা গেলেও কোনোকিছু এ্যাবনরমালের চেয়ে কম লাগেনি। আমি ছাড়া বিষয়টা কেউ ধরতে পারেনি, ইভেন মা’ও না। আমি যখন গেলাম সেদিন থেকেই ওই বাড়িতে অনেক কিছু টের পেয়েছি, সবচেয়ে বড় রহস্য হলো ওই প্রবীণ বয়সী হান্নান শেখ। যিনি কিনা মেহনূরের আপন দাদা। আপনি কি আমার পয়েন্ট ধরতে পেরেছেন মেজর?
মেজর হাবিব চোখ-কান সজাগ করে তাকালেন। এতোক্ষণ পর তার সবল মনটা মাহতিমের কথায় অন্যকিছুর আভাস টের পাচ্ছে। বিশাল বড় প্রশ্নটা ঘূর্ণিপাকের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনি প্রশ্নটা না করে পারলেন না,
– তুমি কি মেহনূরকে অন্য উদ্দেশ্যে বিয়ে করেছো মাহতিম? তোমার ভেতরে কি চলছে খুলে বলোতো।
মাহতিম তৎক্ষণাৎ নিজের মতামতটা পরিষ্কার করে বললো,
– ওকে বিয়ে করার পেছনে কোনো মোটিভ রাখিনি মেজর। ও আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ। ওকে সম্পূর্ণরূপে মন থেকে চেয়েছি। ওই একমাত্র ব্যক্তি যার সামনে আমার মস্তিষ্ক কখনো কাজ করেনা।
মেজর আশ্চর্য হয়ে চোখদুটো বড় বড় করলেন, আশ্চর্যের সীমাটা এমনভাবে গলা উঁচিয়ে ফলালেন সেটা মাইনুদ্দীনের কান অবধি পৌঁছে গেলো। মাইনুদ্দীন বিষ্ময়ে চমকে গেলেও মাহতিম তখন মেজরের অবস্থা দেখে হাসি দিয়ে ফেললো। মেজর হাবিব তখন আহাম্মক হয়েই বলতে লাগলেন,
– কি তাজ্জব কারবার দেখি! এতো বছরেও যা শুনতে পারলাম না সেটা নাকি এখন শুনি। মাহতিম তোমার ওয়াইফ আসলেই সাইলেন্ট কি’লার। মেবি সে নিজেও জানেনা কাকে সে গুরুতর ভাবে ঘায়ে’ল করেছে।
মাহতিম হাসিটুকু কমাতে-কমাতে একপর্যায়ে গম্ভীর হয়ে গেলো। পিঠটা সোফায় ঠেকিয়ে কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
– ওর বয়সটা কম ছিলো বলে ফার্স্ট স্টেপে ভেবেছিলাম আংটি পরিয়ে রেখে যাই। কিন্তু মন সায় দেয়নি মেজর। মনে হচ্ছিলো ওকে রেখে গেলেই কিছু-না-কিছু একটা ঘটবে। হান্নান শেখকে দেখে প্রথম যেই খটকাটা লেগেছিলো, সেটার হিসাব কিছুদিন আগে মিলিয়েছি। আপনার কি অপারেশন ঝিলতলার কথা মনে আছে?
মেজর হাবিব কপাল কুঁচকে তাকালেন, ডানে তাকিয়ে খোলা জানালার বাইরে সর্তক দৃষ্টি দিয়ে আবার মাহতিমের দিকে ফিরলেন। দেয়ালের যদি কান না থাকে তবেই এখন ভালো। মেজর হাবিব একটু এগিয়ে এসে প্রশ্নাত্মক গলায় বললেন,
– যেই অভিযানটা তোমার আন্ডারে লিড হয়েছিলো সেটার কথা বলছো না?
মাহতিম ‘ হ্যাঁ ‘ ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে দিলো। মেজর হাবিব কপাল কুঁচকে কিছু একটা ঘোরতর ভাবে চিন্তা করতে লাগলেন। মাহতিম উনার চিন্তার জটটা আরেকটু খুলে দিতেই স্বর নামিয়ে সাবধানী কন্ঠে বললো,
– আপনাকে আমি এজন্যই ডেকেছি কারণ আপনাকে আমার দরকার। কালাম সরদার নামটা তো শুনেছেন নিশ্চয়ই? অপারেশন ঝিলতলা নামে যেই অভিযানটা করেছিলাম সেখানে সবগুলো আসামী ধরা পরলেও মূল আসামী পলাতক ছিলো।
জাফর হাবিব কপালে জমা বিন্দু-বিন্দু ঘামগুলো অশ্রু মুছা রুমালে মুছে নিলেন। তিনিও স্বর নামিয়ে সজাগ হয়ে বললেন,
– তুমি কাকে সন্দেহ করছো মাহতিম? মেহনূরের দাদাকে নাকি? তুমি কথা না প্যাঁচিয়ে সোজাসাপ্টা বলো।
মাহতিম স্থির হয়ে জাফর হাবিবের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে উত্তর শোনার জন্য জাফর হাবিব প্রচণ্ড খচখচ অনুভব করছেন। তিনি সহ্য করতে না পেরে আরেকবার তাগাদা দিলেন, এবার মাহতিম নতমুখে নিশ্বাস ছাড়তে-ছাড়তে বললো,
– সাসপেক্ট পার্সন দুজন মেজর। এক. আমার শ্বশুড়মশাই, দুই. আমার দাদাশ্বশুড়।
বাকশূণ্য দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন জাফর হাবিব। মুখের ভাষাও যেনো হারিয়ে গেছে উনার। এতো বড় আসামীর সন্ধান কিনা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পাওয়া গেছে আজ। এতোদিন পরও মাহতিম সেই কেসটা সগোপনে চালিয়ে যাচ্ছে সেটা দেখে তিনি অবাক! ঠিক কিভাবে প্রতিক্রিয়া দিবেন বুঝতে পারছেন না, শুধু ভেতরে-ভেতরে বুঝে নিয়েছেন মাহতিম খুব ভয়াবহ ধরনের চিন্তা কষে রেখেছে। সেটা যে কতোটা ভয়াবহ হবে, তিনি আবারও চোখ বন্ধ করে দেখতে লাগলেন।
.
স্টাডি টেবিলের সামনে বসে পিসি অন করলো মাহদি। ছুটি কাটানোর পর অনেকদিন যাবৎ পিসিতে হাত দেওয়ার সুযোগ পায়নি। আজ অনেকটা বাধ্য হয়েই জে’দের ব্যতিরেকে পিসির সামনে চেয়ার টেনে বসলো, মাউসে ক্লিক করে কাঙ্ক্ষিত পাসওয়ার্ড দিয়ে পিসির সিকিউরিটি শেষ করলো। মাউস ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কায়দামতো জিমেইলে এন্ট্রি করলো, টেবিলের নিচে হাত রেখে ড্রয়ারের মতো টান দিয়ে কির্বোড বের করলো। একনাগাড়ে ফুলস্পিডে বাংলা শব্দ টাইপ করতে থাকলো মাহদি। দক্ষ হাতে সম্পূর্ণ একটা জিমেইল সম্পন্ন করে অন্য জিমেইল এ্যাড্রেসে সাথে-সাথে সেন্ড করে দিলো। জিমেইলটা সেন্ড করতেই জোরে-জোরে দুটো নিশ্বাস ছেড়ে টেবিলেই মাথাটা নত করে রাখলো। চোখ বুজে অষ্ফুট সুরে বারবার বলতে লাগলো,
– তুমি চলে এসো ভাইয়া, চলে এসো, তুমি এবার চলে এসো প্লিজ।
গুণে-গুণে দশ মিনিট যেতেই মাহদির ডান থাইটা সুড়সুড় করে উঠলো। মাহদি তৎক্ষণাৎ বেজায় স্পিডে ট্রাউজারের ডান পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো, একটানে এন্ড্রয়েড ফোনটা বের করতেই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ‘ ইয়াহু ‘ বলে মৃদ্যু শব্দে চিল্লিয়ে উঠলো। তড়িঘড়ি করে চেয়ার থেকে উঠে রুমের দরজাটা লক করে বিছানায় উঠে বসলো। কলটা রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই চটপট গলায় বললো,
– ভাইয়া তুমি কেমন আছো? তুমি মায়ের সাথে কথা বলো আর আমাকে কল দাওনা? আমাকে কি মনে পরেনা?
ওপাশ থেকে ব্যস্ত গলায় কিছু বলতে গিয়েও চুপ রইলো মাহতিম। দু’কানে ইয়ারপড ঢুকিয়ে সেও টেবিলে বসে পিসিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। মাহদি কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ক্ষেপাটে ভঙ্গিতে বললো,
– আমার বউকে তুমি কি বলেছো হ্যাঁ? বিয়ে করেছো কি কাঁদানোর জন্য?
এবার কির্বোডের উপর হাত থেমে গেলো মাহতিমের। কিছুটা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আমিতো মা’কে ছাড়া আর কাউকে কল দেইনি। ও কাঁদবে কেনো?
মাহদি ঠোঁট ফুলিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো,
– কল দেওয়া কি উচিত না? আমার বউ কি টেনশন করেনা? তুমি এতো খারাপ জানলে জীবনেও আমার বউকে বিয়ে করতে দিতাম না। দশ বছর পর আমিই ওকে বিয়ে করে আনতাম।
মাহতিম বিরক্ত হয়ে বললো,
– চড় খাবি? আমি আসলে কিন্তু কঠিন চড় লাগাবো। আমার বউকে তোর বউ বলা বন্ধ করিস। চড় কিন্তু একটাও মাটিতে পরবেনা ।
মাহদি নিজের চিকন-চিকন ভ্রুঁদুটো কুঁচকে ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বললো,
– যেটা তোমার ওটা আমার। যেটা আমার ওটা আমারই।
বেখাপ্পা উত্তর শুনে বোকা বনে গেলো মাহতিম। এটুকুনি ব’দমাশের মাথায় কি জটিল-জটিল কথা ঢুকে গেছে। মাহতিমকে চুপ থাকতে মাহদি নিজেই বলে উঠলো,
– ভাইয়া শুনো আমাদের বউ ঠিকমতো নিজের খেয়াল রাখছেনা। কি করা উচিত বলো?
‘ আমাদের বউ ‘ শুনে আর নিজেকে থামাতে পারলোনা মাহতিম, ফিসফিস করে হেসে উঠলো পিসির সামনে। ফাজিলটাকে ধরে কঠিনভাবে কান মোচড়াতে ইচ্ছে করছে। শেষমেশ কিনা আমাদের বউ বলে আখ্যা? মাহতিম অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটঁকে মাহদির উদ্দেশ্যে বললো,
– শোন্ ব্যাটা, ও আমার বউ। ওকে ভাবী ডাকতে শিখ। পারলে ভাবী আম্মা ডাকবি, ভাবী আম্মা। বুঝছিস?
মাহদি নাছোড়বান্দার মতো জবাব দিলো,
– না, ও আমার ভাবী টাবী না। ও আমার বউ। তোমার বউ মানে আমারও বউ। তুমি যখন বুড়ো হয়ে যাবে, তখন আমি ওকে বিয়ে করে ফেলবো।
মাহতিম হাঁফ ছেড়ে সশব্দে নিশ্বাস ছাড়তে লাগলো, এসব পাকনা পোলাপানদের সাথে যুক্তি লাগিয়ে পারা যাবেনা। মোদ্দাকথায় আসার জন্য জোর দিলে মাহদির কন্ঠটা বিমর্ষ আকার ধারণ করলো। যেই প্রফুল্ল স্বরটা এতোক্ষণ ছিলো সেটার পরিবর্তে একরাশ বিষণ্ণ সুর ভর করে বললো,
– তোমার রুমের ফ্লোরে বসে ও খুব কাঁদছিলো ভাইয়া। ও তোমার জন্য প্রতিদিন যেই ডায়েরীটা লিখতো ওটা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেই হাতটায় নীতি আপু ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলো সেটা পরশুদিন মা খুলে দিয়েছে। ঘা শুকায়নি ভাইয়া। এখনতো ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেনা। সকালে জোর-জবরদস্তি করে কয়েক লোকমা মা খাওয়ায়, এরপর যে তোমার রুমে ঢুকে সেখান থেকে সহজে বেরোয় না। আজ ওই অনামিকা এসেছে, এখনো ওর কানে কিছু ঢুকায়নি। আমি আশেপাশে ঘুরি দেখে আমাকে অনেক শাসিয়েছে ভাইয়া। তুমি প্লিজ প্লিজ চলে এসো।
কলের বিপরীতে স্তব্ধ হয়ে আছে মাহতিম। চোখের সামনে থাকা পিসিটা বিমূঢ় দৃষ্টিতে বন্ধ করে দিলো। সহসা কিছুক্ষণ নিরব থেকে কোমল গলায় বললো,
– তোকে কিছু করেছে?
মাহদি বিষণ্ন গলায় বললো,
– না ভাইয়া। শুধু গালটা —
কথা শেষ করার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে বিকট শব্দ শুনলো মাহদি। আচমকা ভয় পেয়ে কান থেকে ফোন পরে গেলো ওর। দ্রুত ফোনটা তুলে আবার কানে ঠেকাতেই ‘ টুট টুট টুট ‘ শুনতে পেলো ।
রাতের খাবার শেষে কেবল বিছানায় এলেন মারজা। সঙ্গে করে তিনি মেহনূরকেও নিয়ে এসেছেন। আজ তিনি মেয়ে-সম বউমার সঙ্গে গল্প করতে-করতে ঘুমাবেন বলে চিন্তা করেছেন। পুরোনো দিনের আবদ্ধ স্মৃতির কারখানাটা খুলে দিবেন আজ, সেখান থেকে অসংখ্য মধুর স্মৃতি বের করে মেহনূরকে শোনাবেন। মেহনূর একটু একা থাকার সুযোগ খুজেঁ যাচ্ছিলো কিন্তু সুযোগটা সে পায়নি। মারজার উৎসুক মুখটা দেখে বলতেও পারেনি আজ তার মন খারাপ। ভীষণভাবে খারাপ। একাকিত্বের মাঝে অন্ধকার রুমে সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে। কিভাবে মনের চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে মারজা বলবে? এমন কোনো সিস্টেম যদি থাকতো, যেখানে মনের সব কথা অটোমেটিক আশেপাশের মানুষগুলো বুঝে ফেলতো, তাহলে এমন অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতো মেহনূর। মারজা বিছানায় শুয়ে-শুয়ে অনায়াসে সকল কথা বলতে লাগলেন, একে-একে সব ঘটনা খুলে বলতেই কখন যে নিদ্রার রাজ্যে তলিয়ে গেলেন সেটা নিজেও ধরতে পারলেন না। পাশে থাকা মেহনূর টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে মারজা গায়ে পাতলা কম্বলটা টেনে দিলো। বিছানা থেকে নেমে চুপিচুপি সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। আবছা অন্ধকারে পা চালাতে-চালাতে আচঁলটা চোখে ডলছিলো বারবার। বন্ধ রুমটার কাছে এসে ডানহাত বাড়িয়ে ধাক্কা দিলো, দরজাটা খুলে গেলে ভেতরে ঢুকলো মেহনূর। দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে রুমের সুইচবোর্ড থেকে ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে নিলো। শূন্য রুমের শূন্য বিছানায় পা উঠিয়ে বসলো। মাহতিমের একান্ত নিজস্ব বালিশটা টেনে এনে কোলের উপর রাখলো মেহনূর। বালিশটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকাতেই টপটপ করে গোল-গোল বিন্দু কণা বালিশের উপর পরতে লাগলো। কাঁপা-কাঁপা গলায় হালকা সুরে বলে উঠলো,
– আমাকে মাফ করতে চলে আসুন।
ঝরঝর করে চোখ থেকে ফোঁটায়-ফোঁটায় অশ্রু ঝরছে। রাত্রিকালীন নিরিবিলি সময়টা লুকিয়ে থাকা ব্যথাকে জাগিয়ে দিচ্ছে যেনো। ঘুমন্ত শহরটা নিদ্রামগ্নে ডুবে গেছে ভীষণভাবে, কোথাও কেউ জেগে নেই আজ। চারপাশটা এতো নিরব হয়ে উঠলো, শেষমেশ কেবল টিকটিক করে ঘড়ি চলার আওয়াজটা স্পষ্ট হতে লাগলো। মেহনূর ঢোক গিলে চোখ খুলে তাকাতেই বালিশটা জায়গামতো রেখে দিলো। মাহতিমের পাঠানো বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখার জন্য উঠতে উদ্যত হলো মেহনূর, হঠাৎ নিরবতার সন্ধিক্ষণে ছেদন ঘটিয়ে বহুদিন পর টানা একসপ্তাহ একদিন শেষের রাত্রিরে ফোন বেজে উঠলো। নিরব রুমটায় বিকট আওয়াজের জন্য কেমন ভূতুড়ে-ভূতুড়ে ঠেকছে। মেহনূর প্রথমে অবিশ্বাস করলেও শেষে দেখলো ঠিকই ফোন বাজছে, সেটা বালিশের পাশ থেকে বেজেই চলছে। বুকভরা সাহস নিয়ে জোরে-জোরে দম নিতেই ফোনটার কাছে এগিয়ে গেলো মেহনূর, ঠান্ডা হয়ে আসা হাতটা আস্তে করে ফোনের নিচে ঢুকিয়ে সেটা মুঠোয় তুলে নিলো। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই আনন্দ-অশ্রু মিলিত চাহনিতে হু হু করে কেদেঁ উঠলো মেহনূর।
– চলমান
#FABIYAH_MOMO .