#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#পার্ট:১২
সকালের স্নিগ্ধ আলো আর হিমশীতল বায়ু জানালার পর্দা ভেদ করে ভেতরে আসছে। হিমশীতল ঠান্ডা বাতাসের কারনে ঘুম ভেঙে যায় মায়রার।
মায়রা অনেক কষ্টে নিজের চোখ খুলে। রাতে বেচ দেরিতে ঘুমিয়েছে ও।চোখ খোলা মাত্রই ছোটোখাটো একটা ঝাটকা খায় মায়রা। মায়রা দেখে আর্দ্র একদম ওর কাছে এসে ঘুমিয়ে আছে।মায়রা নড়তেও পারছেনা কারন আর্দ্র ওকে একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।
তখনি মায়রার খেয়াল হয় কাল রাতের কথা। কাল রাতে আর্দ্র অনেক জেদ করছিলো মায়রাকে জরীয়ে ধরে ঘুমাবে, মায়রা প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাধ্য হয় আর্দ্রের কারনে।
মায়রা আলতো হাতে আর্দ্রের গাল স্পর্শ করে।হালকা কেঁপে উঠে আর্দ্র তবুও ঘুম ভাঙেনা ওর। মায়রা ভাবছে কাল রাতের কথা।
-“আপনাকে বলেতো দিলাম ভালোবাসি! কিন্তু আদও কি এই ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার যোগ্য? ”
মায়রার খেয়াল হয় তুরনার কথা।সাথে সাথে আর্দ্রের গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয় ও।
-” আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না আমি! আপনি আমার না, বোন হয়ে কিভাবে নিজের বোনকে ঠকাবো আমি।আমি তুরনাকে ওয়াদা দিয়েছি! আমাদের এই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবার নয়। ”
মায়রা কথা গুলো ভেবে খুব সাবধানতার সাথে আর্দ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।আর্দ্র এখনো গভীর ঘুমে মক্ত।
মায়রা রুমে এসে দরজা আটকিয়ে কান্না করে দেয়। ও এখন মনে প্রানে দোয়া করছে যে,, আর্দ্রের যাতে কাল রাতের কথা মনে না থাকে!
______________
সকাল আটটার দিকে ঘুম ভেঙে যায় আর্দ্রের, ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই মাথা চেপে ধরে ও। বেশ মাথা ধরেছে ওর।
আর্দ্র বেড সাইট টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে তেতুলের পানি। ও চট করে উঠে গ্লাস টা হাতে নেয়। পানিটা খাওয়ার পর মাথা ব্যাথা অনেকটাই কমেছে ওর।আর্দ্র নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে ও একটা ব্লাক টি-শার্ট পড়া।ভ্রু কুচকায় ও।
-“আমি তো জ্যাকেট পড়া ছিলাম! ড্রেস চেন্জ করলো কে? আর আমার টি-শার্ট থেকে লেডিস পারফিউম এর স্মেল আসছে কেনো? রাতে কি রুমে কেও এসেছিলো! ”
আর্দ্র নিজের মাথা চেপে ধরে মনে করার চেষ্টা করে কিন্তু ফলাফল শূন্য!
______________
রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে আর্দ্র। আর্দ্রের চোখ এখন মায়রাকে খুজছে, কিন্তু কোথাও ওর দেখা পেলো না ও।
তখনি পিছন থেকে আদ্রিতা বলে উঠে,,,
-“কাকে খুজছিস? ”
-“মায়রা কই? ”
-“ও কলেজে গেছে! ভুলে গেছিস আজকে ওর মেডিকেলে ফাস্ট ক্লাস? ”
-“শিট! আপু আমি বেড়োচ্ছি! ”
বলেই দৌড়ে বাহিরে চলে যায় আর্দ্র।
______________
বাইক নিয়ে রাস্তার টং দোকানের পাশে দাড়িয়ে আছে আয়ান। কারন একটাই জান্নাতের সাথে দেখা করা।
জান্নাত হচ্ছে আয়ানের একমাত্র ভালোবাসার মানুষ। সেদিন ছাদে বলা কথাটা ও জান্নাত কে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলো। জান্নাত দের বাসা আর আয়ানদের বাসা একদম এটার্চ করা।
জান্নাত কখনোই আয়ানকে পছন্দ করেনা।এমনকি পছন্দ তো দূর জান্নাত আয়ানকে দেখলেই কেনো যেন রেগে যায়।কারনটা অজানা আয়ানের কাছে।প্রায় ১০ বছর ধরে জান্নাতের পিছনে ঘুরছে আয়ান, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।
আয়ান জান্নাতের কথা ভাবছিলো ঠিক তখনিই রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো জান্নাত কলেজের উদ্দেশ্যে।
জান্নাতকে দেখা মাত্রই আয়ান মুচকি হাসে।কিন্তু আয়ানের হাসি মুখে বেশিক্ষণ টিকলো না।কয়েকজন ছেলে এসে আয়ানের মাথায় রড দিয়ে বাড়ি মারে, রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে ও।পুরো রাস্তায় আয়ানের রক্ত গড়াগড়ি খাচ্ছে। আয়ান জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখে জান্নাত বিশ্বজয়ের হাসি দিচ্ছে!আয়ান বুঝতে পারে কাজটা জান্নাতই ঘটিয়েছে। আয়ান অজ্ঞান হওয়ার আগে বিড়বিড় করে বলে,,,,
-“বুঝবে একদিন আমার শূন্যতা, যেদিন থাকবো না আমি তোমার কাছে। আজ হাসছো সেদিন কাঁদবে! হ্যা আমার জন্যই কাঁদবে সেদিন। হয়তো দেরী হবে একটু কিন্তু তাতে কি আমার ভালোবাসা তো একটু হলেও সার্থক হবে! ”
কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আজীবনের মতো চুপ হয়ে যায় ও।
_______________
মেঘের অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। ডক্টর রা প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছে বলা চলে।মেঘের ব্রেন অপারেশন করা হলে ও বাঁচতে পারে কিন্তু মেঘের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে মেঘকে একটা ইনজেকশন দিতে হলেও দশবার ভাবতে হয়! সেখানে অপারেশন করাটা বেশ কঠিন।
মেঘের পাশে বসে ছিলো মেঘলা।চোখে ওর মেঘকে হারানোর তীব্র ভয়।
মেঘ অনেক কষ্ট করে মেঘলাকে বলে,,,
-“আপু প্লিজ ডক্টর কে বল না, আমাকে আর কয়েকমাস বাঁচিয়ে রাখতে আমি আমার বাচ্চাকে দেখে মরতে চাই! প্লিজ আপু।”
মেঘলা কি বলবে জানা নেই। ও ঠোঁট কামড়ে কান্না করেই যাচ্ছে।
_______________
মায়রা কলেজ এ এসে আশেপাশে ঘুরে দেখছে। তখনি কেও পেছন থেকে ওর চোখ আকড়ে ধরে।মায়রা হকচকিয়ে উঠে।কিন্তু পরক্ষণেই ও মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
-“আয়না তুই! ”
আয়না মায়রার চোখ ছেড়ে ওর সামনে এসে মন খারাপ করে দাড়ায়।আয়না বলে,,,
-“প্রতেকবার কিভাবে বুঝে যাস এটা আমি! ”
-“সৌলমেট যে! ”
-“হুম! ”
-“কবে দেশে আসলি? ”
-“আজকেই। আর এই এখানেই ভর্তি হয়েছি। ”
মায়রা খুশি হয়ে আয়নাকে জরীয়ে ধরে বলে,,,
-“সত্যি? ”
-“হ্যা। ”
তখনি পিছন থেকে রোহান বলে উঠে,,,
-“আমাকে তো এখন চিনেই না কেও! আমি তো রাস্তার মানুষ তাই না!”
আয়না হেসে বলে,,,,
-“না তুমি রাস্তার ভিখারী! ”
পরে আয়না আর মায়রা দুজনই খিলখিল করে হেসে দেয়। মায়রা হাসি থামিয়ে বলে,,,
-“কেমন আছো ভাইয়া?”
-“কেমন আর থাকবো বলো তোমার ফ্রেন্ড তো আমার জীবনটাকে পুরো নরক বানিয়ে ফেলেছে। “(মন খারাপের নাটক করে)
আয়না রেগে বলে,,,
-” কি বললে?”
(মনে আছে রোহান আয়নাকে আপনাদের? 😁 বিষাক্ত ভালোবাসা! 💃)
ওরা কথা বলছিলো তখনি আর্দ্র আসে।আর্দ্র এসে রোহানের সাথে হাগ করে কথা
মায়রা আর্দ্রকে দেখে কিছুটা চমকে যায়।আর আর্দ্র মায়রার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় বাঁকা হাসি দেয়।
(কালকে ব্রেকআপ পার্টি দিবো জানিনা গল্প দিতে পারি কিনা)