অতিরিক্ত_চাই_তোকে #লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া #পার্ট : ১৩

0
362

#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া
#পার্ট : ১৩

আয়ানের হাত ধরে একাধারে কেঁদে যাচ্ছে মায়রা।অতিরিক্ত কাঁদার ফলে চোখ গুলো রক্তবর্ন ধারন করেছে মায়রার।

আর্দ্র বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়রার দিকে।ওর মতে “ডাক্তার তো বলেছেই যে আয়ান ঠিক হয়ে যাবে ” তারপরেও এতো কাঁদার কারন খুজে পাচ্ছেনা আর্দ্র।

আর্দ্র মায়রার কাছে এসে বলে,,,,

-“মায়রা কান্না বন্ধ কর, ডাক্তার তো বলেছেই আয়ান ঠিক হয়ে যাবে তারপর ও এতো কান্না করার কি আছে? ”

-“(নিশ্চুপ) ”

-“মায়রা আমি তোকে থামতে বলেছি! ”

মায়রা কান্না না থামিয়ে নিজের মতো করে কেঁদেই যাচ্ছে।

আর্দ্র রেগে মায়রার হাত ধরে টান দিয়ে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে যায়।বাহিরে আসা মাত্রই দেখে ওদের বাড়ির সবাই অস্থির হয়ে দৌড়ে আসছে।আর্দ্র ওনাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

-“ভিতরে যান, আমি আসছি! ”

বলেই মায়রাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।মায়রা কিছু বলতে পারছে না।ও এখনো আয়ানের এক্সিডেন্ট এর শক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

আর্দ্র আর মায়রার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়রার বাবা।তিনি বললেন,,,,

-“আর্দ্র মায়রাকে এভাবে টেনে কই নিয়ে যাচ্ছে? ”

আদ্রিতা আমতা আমতা করে বলে,,

-“আরে চাচু ঐটা ওদের ব্যাপার, ওদের ওপরই ছেড়ে দাও। ”

মায়রার বাবা ভ্রু কুচকে বলে,,,

-“ওদের ব্যাপার মানে? ”

-“চাচু ছাড়ো তো, এখন আয়ানকে দেখতে চলো। ”

আদ্রিতা মায়রার ভুংভাং বুঝিয়ে আয়নাকে দেখতে নিয়ে যায়।

আয়ানের মাথার ক্ষত ওতোটা গভীর নয়। তাই ও এ যাত্রায় বেঁচে যায়।আপাতত ওকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে।
_____________

আর্দ্র মায়রাকে হসপিটাল এর ছাদে নিয়ে এসে রেলিং এর সাথে চেপে ধরে। আর্দ্র রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে মায়রার দিকে।কিন্তু আজ কেনো যেনো মায়রা এই দৃষ্টিটাকে ভয় পাচ্ছেনা।নিজের ভাইয়ের চিন্তায় বিভোর ও।

আর্দ্র মায়রাকে ক্রোধানিত স্বরে ধমক দিয়ে বলে,,,

-“প্রবলেম কি তোর? কান্না থামাতে বলেছি শুনিস না? কথার অবাধ্য হতে বেশ ভালো লাগে না তোর?”

আর্দ্রের ক্রোধানিত স্বর শুনে মায়রাকে কাঁপাতে বাধ্য করে।ও এতোক্ষণ মাথা নিচু করেছিলো।এবার ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে আর্দ্রের দিকে অশ্রশিক্ত নয়নে তাকায়।

মায়রার এমন দৃষ্টিতে আর্দ্রের বুকে ঝড় বয়ে যায়।মায়রার গাল ঠোঁটসহ পুরো মুখ লাল গোলাপি বর্ন ধারন করেছে।আর্দ্র এক দৃষ্টিতে মায়রার ঠোঁটের দিকে নেশাক্ত ভাবে তাকিয়ে আছে। বেশ টানছে ওকে মায়রার গোলাপি ঠোঁটজোরা।

আর্দ্রের দৃষ্টি বুঝতে পেরে মায়রা ওর বাম হাত দিয়ে আর্দ্রের বুক স্পর্শ করে নিজের থেকে হালকা দূরে সরিয়ে দেয়।

মায়রার স্পর্শে আর্দ্রের হুশ ফিরে। ও মায়রার থেকে নজর সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়,নাহলে নিজেকে সামলাতে পারবে না সিয়র।

আর্দ্র বাহিরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে মায়রার উদ্দেশ্যে বলে,,,,

-“কেঁদে নিজের চোখের পানি অপচয় করার কোনো লজিকই দেখছি না আমি! তুই কাঁদলে তো আর আয়ান সুস্থ হয়ে উঠবে না তাই না!আর তাছাড়া ডাক্তার তো বলেছেই যে, আয়ান ঠিক হয়ে যাবে। ”

মায়রা কান্না থামিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মায়রার কান্নার কারন আয়ান না শুধু অন্য কারন আছে তা তো আর আর্দ্র জানে না।

আর্দ্র আবার বলে,,,,

-“তুরনা এসেছে শুনলাম?”

মায়রার বুক ধক করে উঠে।মায়রার কান্নার অন্য একটি কারণ হচ্ছে “তুরনা”! আজ দুপুরের দিকেই তুরনার ফ্যামিলি দেশে এসেছে। খবরটা জানা মাত্রই মায়রার মন ছটফট করতে থাকে।

মায়রা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,

-” হুম। ”

আর্দ্র বাহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মায়রার দিকে তাকায়। ভ্রু যুগল কুচকায়িত আর্দ্রের।অন্ধকারে মায়রা স্পষ্ট আর্দ্রের মুখে বিরক্তির ছাপ বুঝতে পারছে।কিন্তু কারনটা জানা নেই।

মায়রা মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে,,,

-“তুরনার কথাতে আর্দ্র ভাইয়া বিরক্ত কেনো হলো? ”

আর্দ্র বিরক্ত স্বরে বলে,,,,

-“প্রচুর জ্বালায় মেয়েটা। ঐটা মেয়ে নাকি সুপার গ্লু কে জানে? সবসময় আঠার মতো চিপকে থাকে।বিরক্তিকর একটা! ”

আর্দ্রের কথায় মায়রা হাসে, মন খুলে হাসে। আর্দ্রের কথায় যতোটা মজা পেয়েছে তার থেকে বেশি খুশি হয়েছে এই ভেবে যে “আর্দ্র ভাইয়াও তাহলে মায়রাকে ভালোবাসে না।” শত কষ্টের মাঝেও একটু হলেও শান্তি অনুভব করে মায়রা।কিন্তু এই শান্তিটুকু হয়তো বেশিক্ষণ টিকবে না ওর কপালে।

মায়রার হাসির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আর্দ্র। চোখের পলক পড়ছেই না ওর। চোখের পলক পড়লে যেনো মায়রা হারিয়ে যাবে, তার ভয়ে চোখের পলক ও ফেলছে না ও।

আর্দ্রের উইকনেস হচ্ছে মায়রার হাসি।মায়রা যদি মুচকি হেসে ওর কাছে কোনো আবদার করে তাহলে সেটা ফেরানোর সার্ধ্য আর্দ্রের নেই।

আর্দ্র অন্যমনষ্ক হয়ে মায়রার হাসির দিকে তাকিয়ে বলে,,,

-“তোর হাসিটা অনেক সুন্দর। এমনভাবে আর হাসিস না, তাহলে আমাকে অকালেই ওপরের টিকিট কাটতে হবে। ”

আর্দ্রের কথাটা শোনা মাত্রই মায়রার হাসা বন্ধ হয়ে যায়।সাথে সাথেই ওর গাল দুটো লাল বর্ন ধারন করে।মায়রার এটা ছোটোবেলার স্বভাব, কেও ওর একটু প্রশংসা করলেই ও লজ্জায় কুকুড়ে যায়।মায়রা মাথা নিচু করে আজ্ঞুল মোচড়াতে থাকে।

মায়রার লাল গালগুলো দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা আর্দ্র। ও মায়রার সামনে গিয়ে ওর গালদুটো নিজ হাতে ধরে দুই গালে দুটো কামড় দিয়ে চুমু দেয়।তারপর সাথে সাথে মায়রার থেকে দূরে সরে যায়।

আর্দ্রের এহেন কান্ডে মায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
_______________

মাইশার প্রেগন্যান্সির আজ চারমাস সম্পূর্ণ হলো।তাই আজকে আবার নতুন করে চেকাপ করাতে এসেছে ও।

মাইশা ডাক্তার এর কাছে বসে আছে।ডাক্তার ওকে দেখা মাত্রই জিজ্ঞেস করে,,,

-“আরে মাইশা যে,, তা মেঘের কি অবস্থা? দেশে এসেছে নাকি? ”

-“মানে? ”

-“মেঘের তো ব্রেন টিউমার ছিলো, আমার কাছেই চিকিৎসা করাচ্ছিলো ও। কিন্তু ওর অবস্থা বেশ খারাপ ছিলো তাই বিদেশ নিতে বলেছিলাম, ”

ডাক্তারের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে যায় মাইশা।
_______________

হসপিটাল এর ছাদে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে মায়রা।আর্দ্র ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত।মায়রা রেলিং ধরে দাড়িয়ে ঢাকার ব্যাস্তনগরী দেখছে।হটাৎ ই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়।

বৃষ্টির কারনে আর্দ্র তাড়াতাড়ি ফোনে কথা বলে মায়রার কাছে এগিয়ে যায়। আর্দ্র মায়রার কাছে গিয়ে দেখে মায়রা পুরো ভিজে গেছে। শীতে কাপছে ও।

আর্দ্র মায়রার কাছে এগিয়ে বলে,,,

-“চল সাইডে দাড়াই। এ অবস্থাতে নিচে যাওয়া যাবেনা। ”

মায়রা আর আর্দ্র ছাদের এক সাইডে এসে দাড়ায়।শীতে প্রচন্ড কাপছে মায়রা। আর্দ্র মায়রার পিছনে গিয়ে ওকে জরীয়ে ধরে।

#চলবে?

(আয়ান কে মারলাম না, তাহলে গল্পের সৌন্দর্য টাই নষ্ট হয়ে যেত!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here