অতিরিক্ত_চাই_তোকে #লেখিকা : মারিয়াম আক্তার সাদিয়া #পার্ট:১৪

0
351

#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#লেখিকা : মারিয়াম আক্তার সাদিয়া
#পার্ট:১৪

আর্দ্র মায়রাকে পিছন থেকে জরীয়ে ধরার পর মায়রা শিউড়ে উঠে। সারা শরীর অদ্ভুতভাবে কেঁপে উঠে মায়রার।

মায়রার কাঁপুনির কারনে আর্দ্র মায়রাকে আরেকটু জোরে জরীয়ে ধরে। আর্দ্র মায়রার কানের কাছে গিয়ে বলে,,,

-“বেশি ঠান্ডা লাগছে? ”

আর্দ্রের এমন শীতল কন্ঠ শুনে আরেকদফা কেঁপে উঠে মায়রা।ও মাথা নিচু করে বলে,,,

-“হুম। নি,,চে চলুন প্লি,,জ!”

আর্দ্র মায়রাকে ছেড়ে দেয়।তারপর নিজের পরনের শার্টটা খুলে মায়রাকে পড়িয়ে দেয়।আর্দ্রের শরীরে এখন শুধুমাত্র একটা পাতলা গ্রে কালার এর টি-শার্ট আছে।

আর্দ্র মায়রাকে শার্ট টা পড়িয়ে দিয়ে বলে,,,

-“এখন চল। ”

মায়রা ইতস্তত বোধ করে বলে,,,

-“আপনার ঠান্ডা লাগছে না? ”

মায়রার প্রশ্ন শুনে আর্দ্র স্মিথ হাসে।

-“উহুম! চল,”

মায়রা হাফ ছেড়ে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
______________

জান্নাত নিজের রুমে অস্থিরভাবে পায়চারি করছে।ওর অস্থিরতার একটাই কারন আর সেটা হচ্ছে “আয়ান “, কিন্তু জান্নাত ভেবে পাচ্ছে না কেনো ও আয়ানকে নিয়ে এতোটা চিন্তিত। ও তো নিজেই চেয়েছিলো যে, আয়ান মারা যাক তাহলে এখন কেনো আয়ানের জন্য খারাপ লাগছে?

জান্নাত কথাগুলো ভাবছিলো তখনি ওর আম্মু ওর রুমে প্রবেশ করে।তিনি জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,,

-” এভাবে পায়চারি করছিস কেনো জান্নাত? ”

জান্নাত মায়ের দিকে অপরাধমূলক দৃষ্টিতে তাকায়। জান্নাতের আম্মু জান্নাতের এমন দৃষ্টিতে কিছুটা চিন্তিত হন।

জান্নাতের আম্মু চিন্তিতসুরে বলেন,,,,

-“কি হয়েছে জান্নাত তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? ঠিক আছিস তুই কিছু কি হয়েছে? ”

জান্নাত মায়ের হাত ধরে বেডে বসিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।জান্নাত হাত দিয়ে ওর আম্মুকে ইশারা করে বলে মাথায় বিলি কেটে দিতে।জান্নাতের আম্মু তাই করেন।

জান্নাত এবার মুখ খুলে।ও বলে,,,,

-“আচ্ছা আম্মু নিজের ভালোর জন্য কোনো খারাপ কাজ করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়? ”

মেয়ের এমন প্রশ্নে জান্নাতের আম্মু কিছুটা চমকায়।তিনি বলেন,,,

-“নিজের ভালোর জন্য কোনো খারাপ কাজ করা ঠিক না মা, তাহলে এটা স্বার্থপরতার পরিচয় বহন করে।যদি পারো তাহলে ব্যাপারটা সংশোধন করার চেষ্টা করো কিন্তু খারাপ কাজ করা ঠিক না। কারন তুমি যেই খারাপ কাজটা করবে সেটা হয়তো তোমাকে কোনো না কোনো সময় অনুশোচনা জাগাবে, তোমার খারাপ লাগা কাজ করবে। ”

জান্নাত এতোক্ষন মন দিয়ে মায়ের কথাগুলো শুনছিলো।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ওর।আসলেই ওর প্রচন্ড অনুশোচনা কাজ করছে ওর।ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ও।

জান্নাত হটাৎই ডুকরে কেঁদে উঠে। মেয়ের হটাৎ কান্না করাতে ভড়কে যায় জোহরা বেগম (জান্নাতের মায়ের নাম) । জোহরা বেগম অস্থির হয়ে জান্নাতকে জিজ্ঞেস করে,,,

-“কি হয়েছে মা? কাদছিস কেনো? ”

জান্নাত কেঁদে কেঁদে বলে,,,

-“আম্মু আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। ”

-“কি করেছিস বল আমাকে! ”

জান্নাত ওর আম্মুকে সব খুলে বলে।সব কিছু শোনার পর জোহরা বেগম জান্নাতের গালে জোরে একটা থাপ্পড় মারে।থাপ্পড়ের শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে জান্নাতের বাবা দৌড়ে আসে।তিনি এসে জান্নাতকে আগলে নিয়ে জোহরা বেগম রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,

-“কি হলো মেয়েটাকে মারছো কেনো? ”

-“কেনো মেরেছি ওকেই জিজ্ঞেস করো। ছিহ আমার তো লজ্জা করছে আমি তোর মতো একটা মেয়েকে পেটে ধরেছি! এতোটা নিচ তুই কিভাবে হলি জান্নাত? ”

জান্নাত মায়ের রাগী কন্ঠ স্বর শুনে জোরে কান্না করে দেয়।
______________

মায়রা আর আর্দ্র নিচে নামা মাত্রই কোথা থেকে যেনো তুরনা দৌড়ে এসে আর্দ্রকে জরীয়ে ধরে।

-“কই ছিলে আর্দ্র? আই মিস ইউ সো মাচ! ”

মায়রা আর আর্দ্র দুজনেই অবাক তুরনাকে এই সময় এখানে দেখে।তার থেকেও বেশি অবাক তুরনার ড্রেসআপ দেখে।

তুরনার পরনে একটা থ্রি -কোয়াটার প্যান্ট আর খুব ছোট একটা স্লিভলেস শার্ট, তার থেকেও বড় কথা শার্টের প্রথম দুইটা বোতাম খোলা।

আর্দ্র বিরক্ত হয়ে তুরনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।আর্দ্র তুরনাকে একটা ধমক দিয়ে বলে,,

-“এসব কি তুরনা? পাবলিক প্লেসে এভাবে জরীয়ে ধরছিস কেনো? মাথায়,,,,,”

আর্দ্র সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই তুরনার ড্রেসআপ দেখে লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়।আর্দ্রের রাগও লাগছে বেশ।কিন্তু হসপিটাল এ সিনক্রিয়েট করা ঠিক হবেনা ভেবে চুপ আছে।

তুরনা ঢং করে বলে,,,,

-“কি হলো জান কথা বলছো না কেনো? আর তুমি মাথা নিচু করে আছো কেনো? ”

আর্দ্রের ইচ্ছে করছে তুরনাকে একটা থাপ্পড় মারতে কিন্তু ও এটা করতে পারছে না কারন এটা পাবলিক প্লেস।এখানে তুরনাকে জোরে একটা ধমক দিলেও মানুষ জড়ো হয়ে ভিডিও করা শুরু করবে।

আর্দ্র মায়রার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

-“ওকে বলে দিস ড্রেস চেঞ্জ করতে। ”

কথাটা বলেই সেখান থেকে হনহনিয়ে চলে যায় আর্দ্র। মায়রা আর্দ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে।আর্দ্রকে আর কিছুক্ষণ তুরনার পাশে দেখলে ও দম বন্ধ মৃত্যুবরন করতো নিশ্চিত।

তুরনা মায়রাকে বলে,,,

-“আর্দ্র আমাকে দেখলোই না, কতো কষ্ট করে পার্লার থেকে সেজে এসছিলাম! ধ্যাত! ”

মায়রা হাসলো। মনে মনে হাসলো ও। কারন তুরনার সামনে হাসলে নিশ্চিত মেয়েটা ওর বারোটা বাজাবে।

তুরনা মায়রার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। ও বলে,,

-“তোর শরীরে আর্দ্রের শার্ট কেনো? ”

তুরনার প্রশ্ন শুনে মায়রা থতমত খেয়ে যায়। মায়রা চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে বলে,,

-“আসলে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছিলো তখন আমি পুরো ভিজে গিয়েছিলাম তাই,,,”

-“এই সামান্য কারনে আর্দ্র তোকে নিজ পরনের শার্ট দিয়ে দিলো, কই আমি যখন বিডিতে ছিলাম তখন তো আমাকে কখনো নিজের শার্ট দিলো না? ”

-“এটা তোদের ব্যাপার আমি কিভাবে বলবো? “(মায়রা)

তুরনা হটাৎই কেনো যেনো রেগে যায়। ও রেগে বলে,,

-” আমার উডবি হ্যাজবেন্ডের শার্ট তোর শরীরে থাকার কোনো অধিকার নেই! ”

বলেই টান দিয়ে আর্দ্রের শার্ট ‘টা মায়রার থেকে নিতে যাবে তখনি আর্দ্র এসে তুরনার হাত ধরে।

আর্দ্র তুরনার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে,,,

-“ডোন্ট ডু দিস! ”

আর্দ্রের চোখ গরম দেখে তুরনা ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।কারন আপাতত আর্দ্রকে বেশ ভয়ংকর লাগছে।

আর্দ্র যখন মায়রার থেকে নিজের ফোন নিতে এসেছিলো তখন মায়রা আর তুরনার কথোপকথন শুনে ফেলে।আর যখন তুরনা শার্ট টা নিতে যাচ্ছিলো তখন কেন জানি আর্দ্রের রাগ চরম পর্যায়ে চলে যায়।

আর্দ্র মায়রার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যায়।আর যাওয়ার আগে তুরনাকে একটা থাপ্পড় মেরে যায়।

#চলবে?

(রেসপন্স না করলে গল্পটা কিন্তু কন্টিনিউ করবো না! 😒 গল্প ভালো না লাগলে বলে দিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here