#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#লেখিকা: মারিয়াম আক্তার সাদিয়া
#পার্ট:১৫
তুরনা গালে হাত দিয়ে আর্দ্র আর মায়রার যাওয়া দেখছে।তুরনা এখনো শকে আছে, ও বুঝতে পারছে না আর্দ্র ওকে থাপ্পড় কেনো মারলো?
-“মায়রার জন্য আর্দ্র আমাকে থাপ্পড় মারলো, আমি আর যাইহোক মায়রাকে বাঁচতে দিতে পারবো না!”(রেগে)
আর্দ্র গাড়িতে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। বেশ রাগ লাগছে ওর তুরনার ওপর।ইচ্ছে করছে তুরনাকে মেরে ফেলতে,। মায়রা আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে আর্দ্রের চোখগুলো বেশ লাল হয়ে আছে যেনো এখনি রক্ত পড়া শুরু করবে।
মায়রা চিন্তিত হয়ে আর্দ্রকে জিজ্ঞেস করে,,,
-“আপনি ঠিক আছেন?”
আর্দ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,
-“নাহ। ”
-“কেনো? ”
আর্দ্র মায়রার কাছে একটু এগিয়ে এসে বলে,,,
-“তোর জন্য!”
-“আমার জন্য,, মানে?”
-“তুরনা যখন তোর থেকে শার্ট নিচ্ছিলো তখন কোনো প্রতিবাদ করলি না কেনো? ”
-“সেই অধিকার আমার নাই, তুরনার অধিকার ছিলো তাই ও নিয়েছে! ”
“অধিকার ” এর কথায় কিছুটা অবাক হয় আর্দ্র। ও ভ্রু কুচকে বলে,,,
-“মানে? ”
-“বাসার কারো থেকে জেনে নিবেন!”
কথাটা বলার পর পরই গাড়ি থেকে নেমে একটা রিকশা ঠিক করে চলে যায় মায়রা। মায়রার চোখে পানি স্পষ্টত যা আর্দ্রের চোখ এড়ায়নি। আর্দ্র বেশ অবাক, কি এমন অধিকার এর কথা বললো মায়রা তা ভাবতে ভাবতে শেষ আর্দ্র।
_____________
মায়রা রিকশায় বসে একাধারে কেঁদে যাচ্ছে। কেনো কাঁদছে তার কারন জানা নেই ওর।কিন্তু আপাতত ওর কান্না করলে মন শান্তি হবেনা এটা সিয়র। হটাৎ মায়রার ফোনে কল আসে, মায়রা ফোন রিসিভ করে,,
ফোনের ওপর পাশ থেকে মায়রার আম্মু মায়রাকে বলে,,,
-“মায়রা কই তুই? ”
-“আম্মু আমি বাসায় চলে এসেছি।”
-“ওহ। আচ্ছা আমরাও একটু পর আসছি আয়ানকে নিয়ে। ”
-“হুম।”
মায়রা জলদি করে ফোন কেটে দেয়।
_____________
আর্দ্র পুলিশ স্টেশনে পৌঁছে চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে আছে।তখনি রোহিত এসে আর্দ্র কে বলে,,,
-“এতই যখন ভালোবাসিস তাহলে ফ্যামিলিকে জানাচ্ছিস না কেনো?”
আর্দ্র ভ্রু কুচকায় রোহিতের কথায়।ও বলে,,,
-“মানে?”
-“মানেটা সিম্পল, তুই তোর ভালোবাসার কথা মায়রাকে বল দেখ ও এক্সেপ্ট করে কিনা আর না করলে,,, তুই আর ওকে ছাড়বিনা সো জোর করে বিয়ে করে ফেললেই তো হয়। ”
রোহিতের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে ও।তারপর হটাৎ চেয়ার থেকে উঠে রোহিতকে জরীয়ে ধরে বলে,,,
-“এই প্রথম কোনো কাজের কথা বললি!”
-“আমি সবসময়ই কাজের কথাই বলি, 😒”
-“আচ্ছা শোন প্রপোজ করার জন্য যা যা লাগে সব ঠিক করে ফেল। আজকেই ওকে প্রপোজ করবো, দ্যান রাজি হলে তো ভালো নাহলে জোর করেই বিয়ে করতে হবে। ”
-“আচ্ছা। ”
_____________
আয়ানকে বাসায় আনা হয়েছে।ও পুরোপুরি সুস্থ না হলেও সুস্থ বলা চলে।আয়ানকে দেখতে জান্নাতের বাবা মা দুজনই এসেছে। জান্নাতের বাবা মাকে আসতে দেখে সবাই বেশ অবাক।কারন জান্নাত পরিবারের কেওই কখনো আয়ানদের সাথে কথা বলেনা।আজ হটাৎ আয়ানকে দেখতে আসাতে তারা ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারছে না।তারপরও মুখে সৌজন্যতার হাসি ফুটিয়ে তাদের সাথে কথা বলে।
মায়রা চুপচাপ ছাদে দাড়িয়ে আছে। চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা হবে তাই। মায়রার মনটা বেশ খারাপ। ছাদে আসার আগে যখন বড় মার রুম ক্রস করে আসছিলো তখন তাদের কথোপকথন শুনতে পায়।তারা আর্দ্রের বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলো। তারা চায় আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আর্দ্র আর তুরনার বিয়েটা যাতে হয়ে যাক।কথা গুলো শোনার পর মায়রার শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো তাই তো এই ভর সন্ধ্যেবেলা ছাদে আসে।
মায়রা বাহিরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলো, তখন আদ্রিতা ওর ঘাড়ে হাত রেখে বলে,,,
-“এই ভর সন্ধ্যেবেলা ছাদে কি করছিস মায়রা?”
আদ্রিতার কন্ঠস্বর শুনে মায়রা পিছে ঘুরে তাকায়।মায়রা মলিন হাসে আদ্রিতাকে দেখে।
-“মলিন হাসলি যে মন খারাপ নাকি? “(আদ্রিতা)
-” উহুম।ভাইয়ার জন্য চিন্তিত একটু।”
-“আরেহ আয়ানের জন্য মন খারাপ করার কি আছে? ডাক্তার বললো তো আয়ান ঠিক হয়ে যাবে ”
-“হুম।”
আদ্রিতার ফোনে কল আসাতে ও পাশে চলে যায় কথা বলতে।কথা বলা শেষ হলে আদ্রিতা এসে মায়রাকে বলে,,
-“মায়ু নিচে চলতো জলদি! ”
-“কেনো আপু, কোনো দরকার? ”
-“হুম অনেক দরকার জলদি চল! ”
আদ্রিতা জলদি করে মায়রাকে নিচে নিয়ে যায়।নিচে নামার পর আদ্রিতা মায়রাকে নিজের রুমে এনে কার্বাড থেকে ড্রেস এনে মায়রার হাতে দেয়।মায়রা তা দেখে ভ্রু কুচকায়।
-“আপু ড্রেস দিচ্ছো কেনো?”
-“আর্দ্র তোকে আমাদের বাংলো বাড়িটায় যেতে বলেছে আর্জেন্টলি, ”
-“কেনো? ”
-“সেটা তো আমাকেও বলেনি শুধু বলেছে তোকে সুন্দর করে রেডি করে পাঠিয়ে দিতে! ”
মায়রা মন খারাপ করে বলে,,,
-“না গেলে হয়না আপু? ”
-“তুই তো জানিস আর্দ্র কেমন? ওর কথার অমান্য করলে কি হবে তা তো জানিসই! ”
মায়রা শুকনো ঢক গেলে বলে “হুম”
মায়রা ড্রেসগুলো নিয়ে তৈরি হতে চলে যায়।ড্রেস পরে আসার পর আদ্রিতা বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় মায়রাকে।মায়রার বিরক্তি লাগছে কিন্তু তাও ও চুপ আছে কারন ও জানে আর্দ্রের কথার অমান্য করলে আর্দ্র কি করতে পারে!
আদ্রিতা মায়রাকে রেডি করে আর্দ্রের পাঠানো গাড়িতে যেতে বলে।মায়রার মনে মনে বেশ ভয় হচ্ছে ওর কেনো যেনো মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হতে চলেছে।
_______________
বাংলো বাড়িতে এসে গাড়ি থামতেই মায়রার বুকের ধুপধুকানি টা যেনো চারগুন হয়ে যায়।
মায়রা ড্রেস ধরে আস্তে আস্তে সামনে আগায়।দরজার কাছে আসতেই গোলাপি পাপড়ির বর্ষন হয় মায়রার ওপর।অনেকটা অবাক আর প্রশ্ন নিয়ে সামনে আগায় মায়রা।
কিছুটা সামনে যেতেই একটা লোক এসে মায়রাকে বলে,,,
-“ম্যাম স্যার সেকেন্ড ফ্লোরে আছে।”
মায়রা লোকটির কথামতো সেকেন্ড ফ্লোরে যায়। সেকেন্ড ফ্লোরে যাওয়া মাত্রই মায়রার চক্ষু চড়কগাছে। সেকেন্ড ফ্লোরের চারদিকে লাভ শেপ বেলুন আর গোলাপের পাপড়ির ছড়াছড়ি। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সেকেন্ড ফ্লোরটাকে।মায়রা জামা ছেড়ে দিয়ে সামনে এগোয়।
সামনে আগানো মাত্র পিছন থেকে আর্দ্র এসে মায়রাকে জরীয়ে ধরে মায়রার কাধে নিজের থুতনি রেখে বলে,,,
-“হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে জান! ”
আর্দ্রের হিসহিসিয়ে কথাগুলো শুনে কেঁপে উঠে মায়রা। আর্দ্র মায়রাকে ছেড়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,,,,
-“ছোটো থেকেই তোর বাচ্চামো গুলার প্রতি একটা অন্য রকম আকর্ষণ ছিলো আমার।ছোটো সময় যখন পুতুলের জন্য কান্না করতি তখন ইচ্ছে করতো দুনিয়ার সব পুতুল তোর সামনে হাজির করতে।আস্তে আস্তে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম তোকে আমি ভালোবাসি।#অতিরিক্ত_চাই, দিবি আমাকে একটা সুযোগ, বিশ্বাস কর কখনো তোকে নিরাশ করবোনা। মা যেমন তার সন্তানকে আগলে রাখে যেকোনো পরিস্থিতি থেকে তেমনি তোকে আগলে রাখবো।একটু ভালোবাসবি আমাকে? ”
কথাগুলো বলে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে মায়রার দিকে আর্দ্র ওর উওরের আশায়।মায়রা স্তব্ধ হয়ে আছে। মায়রা চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করে আর্দ্র কে বলে,,,
-“আমি আপনাকে,,,, ”
#চলবে?