#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৯
‘ জায়ান কাউকে পছন্দ করে। এটা জানার পর থেকে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে শামিম ভাই। আপনি আর দেরি করবেন না।আহানা নিয়ে জলদি চলে আসুন দেশে।আপনারা আসলেই আমরা আহানা আর জায়ানের বিয়েটা দিয়ে দিবো।’ চিন্তিত কণ্ঠস্বর মিসেস সুহানা সাখাওয়াতের।
ফোনের ওইপাশে থাকা ব্যক্তি কিছু বলল বোধহয়।তা শুনে সুহানা চেচিয়ে উঠল, ‘ আশ্চর্য! আমি জানব কিভাবে যে ওর এভাবে হঠাৎ করেই একজনকে পছন্দ হয়ে যাবে।যে ছেলে মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকায় না।সে ছেলে এভাবে হুট করেই এসে যদি বলে সে কাউকে পছন্দ করে।তাহলে সেটা আমি কিভাবে জানব?আর বিষয়টা আমাকেও জানায়নি।নিহানকে বলেছে।ভাগ্য ভালো আমি নিহানকে ওতো রাতে ছাদে যেতে দেখে ওর পিছু নিয়েছিলাম।নাহলে তো জানতেও পারতাম না।জায়ানের মনে এসব চলছে।’
একটু থেমে ফের বড্ড অস্থিরতার সাথে বলে,’ আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে।নিহান এমন একটা মানুষ যে তার সন্তানের মতামতের উপরে আর কিছুই শুনবে না।যেহেতু নিহানকেই জায়ান সব জানিয়েছে।এইবার নিহান যে করেই হোক।ছেলের জন্যে ওই মেয়ে খুঁজে এনে তার সাথে জায়ানের বিয়ে দিয়ে তবেই শান্ত হবে।’
ওপাশের ব্যক্তিটাও যেন এই কথা শুনে চিন্তায় পরে গেলেন।কিছু একটা বললেন সুহানাকে।সব শুনে সুহানা বলে,
‘ আমাদের শক্তপোক্ত একটা প্লান সাজাতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে জায়ান রাজি হয়ে যায় আহানাকে বিয়ে করতে।মোট কথা ওকে বাধ্য করব আমি।’
ব্যক্তিটিও সহমত জানালেন সুহানার কথায়।
সুহানা বললেন,
‘ আচ্ছা তবে রাখি।যে করেই হোক শীঘ্রই দেশে ফিরুন আপনারা।ওদের বিয়েটা তো এইবার হবেই।’
ফোন কেটে সুহানা কুটিল হাসল।তারপর রুম থেকে বের হবার উদ্দেশ্যে পিছন ফিরেই ভয়ে কেঁপে উঠে সুহানা।কারন তার সামনে স্বয়ং নিহান সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন।
সুহানার শরীর ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।
নিহান সাহেব তীক্ষ্ণ চোখে তার তাকিয়ে বলেন,
‘ কার সাথে কথা বলছিলে?’
শুকনো ঢোক গিললেন সুহানা।জোরপূর্বক হেসে বলেন,
‘ আপার সাথে কথা বলছিলাম। ‘
নিহান সাহেব তাচ্ছিল্য হাসলেন। সুহানা যে মিথ্যে বলছে তা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন।তিনি বলেন,
‘ ওহ তা তার সাথে বুঝি প্লান করছিলে। কিভাবে আহানা আর জায়ানের বিয়ে দিবে?কিন্তু আমি যতোদূর জানি সাহেদা তো এসবের ধারেকাছেও আসার মানুষ না।’
সুহানার শরীর ঘামছে।এভাবে যে ধরা পরে যাবে তিনি ভাবেননি।আর নিহানও যে আজ হঠাৎ করে দুপুরে বাড়িতে চলে আসবে এটা কি সে জানতো?যদি জানতো তবে তো রুমের দরজা আটকে তারপর কথা বলতো। কারন বাড়িতে যারা আছে সবাই এখন নিচতলায়।সার্ভেন্টসরা অকারনে দোতলায় আসেনা।মিলি নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে।সেটা তিনি দেখে এসেছেন।তাই ভেবেছিলেন কি আর হবে এভাবে কথা বললে।কিন্তু এটাই যে তার কাল হয়ে দাঁড়াবে তা ভাবতে পারেননি তিনি।
এদিকে নিহান সাহেব এসে দাঁড়ালেন সুহানার সামনে।রাগে তার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।নিহান সাহেব সুহানার দু গাল চেপে ধরলেন।দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
‘ আমার ছেলে মেয়ের ব্যাপারে তুমি নাক না গলালেই তোমার জন্যে ভালো।তাদের জন্যে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা আমি ওদের বাবা দেখে নিবো।আর বলছিলে নাহ যে?যে করেই হোক আমি আমার ছেলের পছন্দের মেয়েকে খুঁজে এনে সেই মেয়ের সাথেই আমার ছেলের বিয়ে দিবে। তবে শুনে রাখো। একদম ঠিক বলেছ তুমি।আমার ছেলে যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই ওর বিয়ে হবে।আর যদি এতে কেউ বাধা দিতে আসে।তাহলে তাকে মে’রে ফেলতেও দুবার ভাববো না আমি।কারন আমার সন্তানদের খুশি আমার কাছে সবচেয়ে উর্ধ্বে।’
কথাগুলো বলে শেষ করে সুহানার গালগুলো ছেড়ে দিলেন। একপ্রকার ছুড়ে মারলেন তিনি সুহানাকে।সুহানা ব্যথায় দুগালে হাত রাখলেন।কান্নারত কণ্ঠে বললেন,
‘ আমি জায়ানকে বলে দিবো তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছ।আমাকে মেরেছ।’
নিহান সাহেব হাসলেন।রাগি চোখে তাকিয়ে বলেন,
‘ এতো কিছু না।তুমি যদি কোনো উল্টাপাল্টা কিছু করার পরিকল্পনা করো। তাহলে এমন মার মারব।যে যেই সুন্দর চেহারা নিয়ে তুমি বড়াই করো না।সেটা আর মানুষকে দেখাতে পারবে না।আর কি বললে জায়ানকে তুমি বলে দিবে।বলো গিয়ে।দরকার পরলে মাইক এনে দেই। পুরো দেশ ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিও।দেখি কে কি করতে পারে আমায়। ‘
নিহান সাহেব সুহানাকে আর একবার শাষিয়ে তারপর চলে গেলেন।
—–
খাবার খেয়ে মাত্রই নিজের রুমে আসল আরাবী।অফিসের প্রথম দিন বেশ ভালোই কেটেছে।ও ভেবেছিলো লোকটা বুঝি খাটুনির উপর রাখবে।কিন্তু না এমনটা কিছুই হয়নি।ও যেটা বুঝতে পারেনি।তা লোকটা নিজ দায়িত্বে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় খুব অবাক করেছে আরাবীকে।আর তাহলো লোকটা অদ্ভুতভাবে তাকায় ওর দিকে।সেই চোখের দৃষ্টির প্রখরতা ওর ভেতর শুদ্ধ নাড়িয়ে দেয়।যখনই আরাবী একটু চেষ্টা করে লোকটার দিকে তাকাতে।তা কোনোভাবেই পারে না।ওই গভীর চোখজোড়ার দৃষ্টি যেন ওকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়।শিরশির করে উঠে শরীর।
আরাবী লম্বা শ্বাস ফেলল।তারপর পা বারালো বারান্দায়।আজও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ।আরাবীর স্বাস্থ্যহীন শরীরটা ঠান্ডা বাতাসে মৃদ্যু কেঁপে উঠল।অফিস থেকে ফিরে হালকা ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে নিয়েছিলো আরাবী।তারপর সবার সাথে প্রথমদিন অফিস কেমন কাটলো তা নিয়ে সবার সাথে কথা বলেছে।
এরপর রুমে এসেই গোসল করে নিয়েছিলো।
সদ্য গোসল নেওয়ায় মেয়েটাকে স্নিগ্ধ লাগছে। চোখে মুখে এখনও হালকা পানির বিন্দু জমে আছে।বারান্দায় মৃদ্যু লাইটের আলোতে ওই পানির বিন্দুগুলো মুক্তদানার মতো জ্বলজ্বল করছে।বাতাসের দাপোটে আরাবীর খোলা চুলগুলো হালকাভাবে দুলছে।ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে হালকা মৃদ্যু হাসি।আরাবী বেশিরভাগ সাদা জামা-কাপড় পরতে ভালোবাসে।এইযে এখনও মেয়েটার গায়ে সাদা ফতুয়া আর প্লাজো জড়ানো।চুলগুলো চোখমুখে এসে বারি খাচ্ছে আরাবীর।বিরক্ত হয়ে আরাবী চুলগুলো আলগোছে ডানপাশ থেকে বামপাশে এনে রাখল।বারান্দাটা খালি খালি লাগে।এভাবে দাঁড়াতে ভালো লাগে না।আগামীকাল ফাহিমকে বলে কিছু গাছ আনতে হবে।আরাবী ভেবেও নিলো কি কি গাছ আনবে।এমন সময় আরাবীর ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। আরাবীর ধ্যান ভাঙলো। ফোনটা হাতে নিয়েই দেখে সেদিনের আননোন ফোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।আরাবী মেসেজটা ওপেন করল,
‘ এই রাতের বেলা না ঘুমিয়ে বারান্দায় কি?’
আরাবী ভেবে পায় নাহ।এই মেসেজকারি ব্যক্তিটা কে?কে এই ব্যক্তি যে এভাবে ওকে মেসেজ করে? আরাবী আর মেসেজের রিপ্লাই করল না।আরাবী ভেবেছে আর একটা মেসেজেরও রিপ্লাই করবে না। দেখা যাক এই ব্যক্তি ঠিক কতোগুলো মেসেজ করতে পারে।এদিকে আবারও মেসেজ আসল ফোনে,
‘ হোয়াই আর ইয়্যু ইগনোরিং মাই মেসেজেস?’
আরাবী দেখেও ফোনটা রেখে দিলো।পর পর আবারও একের এর এক মেসেজ আসছে।
‘ চুলগুলো বেধে ফেলুন।এভাবে খোলা চুলে কখনও বারান্দায় আসবেন না।’
আরাবী এইবার কৌতুহল দমাতে পারছে না।এই লোকটা ওর প্রতিটা পদক্ষেপ সম্পর্কে কিভাবে জানতে পারছে? আরাবী নিজের বারান্দায় চারদিকে ভালোভাবে দেখল।কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে কিনা।কিন্তু না কোথাও কোনো ক্যামেরা নেই।আরাবী এইবার বারান্দা দিয়ে রাস্তায় উঁকিঝুকি মারল।ওর বারান্দা থেকে একটু দূরে একটা কালো রঙের গাড়ি দেখা যাচ্ছে।এছাড়া আর কিছু নেই আশেপাশে।আরাবীর ভ্রু-কুচকে আসল।তাহলে কি ওই গাড়িটাই সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিটির?ওখানে বসেই কি ওর উপর এইভাবে গোয়ান্দাগিরি করছে।আরাবী এইবার মেসেজ করল,
‘ আমার বারান্দা দিয়ে বরাবর তাকালে যে গাড়িটা দেখতে পাচ্ছি। সেখানে বসেই কি আমার উপর নজর রাখছেন?’
‘ আর ইয়্যু লুকিং ফোর মি?’
‘ কথা ঘুরাচ্ছেন?’
‘ মনের নজর দিয়ে খুঁজে দেখো।দেখবে তোমার খুব কাছে আমি।অনুভব করো তুমি আমাকে।যেভাবে আমি করি তোমাকে।প্রতিক্ষণে,প্রতিটি নিঃশ্বাসে।’
আরাবী শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে রইলো।কি চায় এই ব্যক্তি ওর কাছ থেকে?কেন এসব কথা বলছে ওকে।আরাবীর মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠল।লিখল,
‘ কি চান আপনি আমার কাছ থেকে?’
‘ তোমাকে চাই আমি।ওই পুরো তুমিটাকে আমায় দিয়ে দেও।বিনিময়ে পৃথিবীর সব খুশি তোমার আঁচলে এনে দিবো আমি।’
আরাবীর মেসেজটা পরেই কেমন যেন করে উঠল বুকের বা-পাশটা।ধুকপুক শব্দগুলো জোড়ালো হয়ে গিয়েছে।কে সে? এই লোকটা কি জানে না যে?ও কোনো বিশ্বসুন্দরী না। যে ওর জন্যে একটা মানুষ এমন পাগল হবে।নেহাতই লোকটা ওর সাথে মস্করা করছে।নাহলে ওর মতো কালো মেয়েকে কেইবা ভালোবাসবে?আরাবী ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যর হাসি টেনে লিখল,
‘আপনি যেই হোন না কেন?একটা কথা শুনে রাখুন। এইসব থার্ড ক্লাস প্রাঙ্ক আমার উপর চলবে না।কারন আমি জানি আমি কালো আর এসব কাব্যিক কথাবার্তা মানুষ অন্তত আমাকে নিয়ে করবে না।তাই বলছি আমাকে আর মেসেজ করবেন না।’
আরাবী ফোনটা সুইচ স্টপ করে দিলো। তারপর গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরল।
কিন্তু মেয়েটা তো জানলই না।সে তার কথাবার্তা দিয়ে একজনকে চূড়ান্তে পর্যায়ে রাগিয়ে দিয়েছে।
জায়ান রাগে চোয়াল শক্ত করে নিজের গাড়িতে বসে আছে।প্রতিদিন সে অফিস ছুটির পর আরাবীদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে রাখে।কারন সে প্রথম দিন আরাবীকে ফলো করে এখানে এসেছিলো।তারপরেই খেয়াল করেছে আরাবী অনেকক্ষণ নিরিবিলি একলা সময় কাটায় বারান্দায়।এরপর থেকেই জায়ান এখানে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যতোক্ষণ পর্যন্ত না আরাবী তার রুমে যায়।আরাবীকে মন ভরে দেখে।
কিন্তু আজ মেয়েটা যে এমন একটা কথা বলবে ভাবতে পারেনি জায়ান।ও আরাবীর সাথে প্রাঙ্ক করছে?ও কালো?নিজেকে এতোটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য কোন মানুষ করে? জায়ান হাতের মুঠোতে ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরে।চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘ কাজটা তুমি ঠিক করলে না।একদম ঠিক করলে না।তুমি নিজেকে এতোটা তুচ্ছ ভাবো কিভাবে? তুমি আমার কাঠগোলাপ।বোকা মেয়ে,তুমি যদি একবার আমার নজর দিয়ে নিজেকে দেখতে। তাহলে বুঝতে তুমি আমার কাছে ঠিক কতোটা সুন্দর।ঠিক যেন একটা #স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ তুমি।’
একটু থেমে জায়ান ফের বলে,
‘ আমি তোমাকে বোঝাবো মেয়ে।আজকে যেই কথাগুলো বললে তুমি তার জন্যে শাস্তি তোমার তুমি পাবে।’
রাগে গজগজ করতে করতে জায়ান গাড়ি চালু করে চলে গেলো।গাড়ি বাড়ির সামনে আসতেই দারোয়ান মেইন গেইট খুলে দিলো। জায়ান ড্রাইভারকে গাড়ি পার্ক করতে বলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল।দেখল নিহান সাহেব এখনও বসে আছেন সোফায়। জায়ান তার কাছে এসেই গম্ভীর মুখে বলল,
‘ এখনও জেগে যে?’
‘ তোমার এতো দেরি কেন?জানতে পারি?’
পাল্টা প্রশ্ন করলেন নিহান সাহেব।জায়ান শান্ত কণ্ঠে বলে,
‘ আর্জেন্ট কাজ ছিলো কিছু।অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পরো গিয়ে। আর কখনও এতো রাত জাগবে না।’
জায়ান রুমে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।
‘ মেয়েটার খোঁজ পেয়েছ কিছু?ঠিকানা টিকানা জানো?কোথায় থাকে সে?’
নিহান সাহেবের প্রশ্নে জায়ান থেমে গেলো।ঘুরে গিয়ে ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে,
‘ হঠাৎ এই প্রশ্ন? এসব জানার জন্যেই কি জেগে ছিলে?’
‘ আগে উত্তরটা দেও।’
জায়ান শ্বাস ফেলল।তারপর শীতল কণ্ঠে বলে,
‘ আমার পি.এ আরাবী মৃধা।ওই সেই মেয়ে।’
নিহান সাহেব অবাক হয়ে গেলেন।
‘ কি?আমার অফিসেই কাজ করে মেয়েটা?এতো কাছে?’
একটু থেমে ফের বলেন,
‘ মেয়েটার ফুল ডিটেইলস দিবে আমাকে।’
জায়ান এক ভ্রু উঁচু করে বলে,
‘ ওর ঠিকানা দিয়ে তুমি কি করবে?’
নিহান সাহেব মুচঁকি হেসে বলেন,
‘ ও মা?ছেলের বউকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে নিয়ে আসব নাহ?নাকি তুমি চাইছ না বিয়ে করতে?কি?করবে না বিয়ে?’
জায়ান বাবার কথা শুনে বাঁকা হাসল।পরপর চলে গেলো নিজের রুমে।নিহান সাহেব ছেলের হাসিতেই বুঝে গেলেন।ছেলে তার রাজি।এইবার যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েটার বাড়িতে সম্বন্ধ নিয়ে যেতে হবে।অবশেষে ছেলে তার রাজি হয়েছে বিয়ে করতে।আর দেরি করবেন না তিনি।
——
আজ একটু তাড়াতাড়িই অফিসে এসেছে আরাবী।কিছু কাগজপত্র আলিফা থেকে বুঝে নিতে হবে।তাহলে ওর কাজে হেল্পফুল হবে।সেই কারনেই এতো তাড়াতাড়ি আসা এখানে।কিন্তু এসে দেখে আলিফা এখনও আসেনি।আরাবী নিজের ডেস্কে গেলো।আলিফা না আসা অব্দি কিছু কাজ করে এগিয়ে রাখা যাক।যেই ভাবা সেই কাজ।আরাবী কাজ করতে লাগল।কাজ করায় এতোটাই মগ্ন হয়ে গেলো মেয়েটা যে আশেপাশে আর খেয়াল নেই।এদিকে জায়ান অফিসে এসে দেখে আরাবী মনোযোগ সহকারে কি যেন করছে।কি এমন করছে মেয়েটা?যা এতোটা মনোযোগ সহকারে করছে।জায়ান চায় আরাবী একমাত্র শুধু ওকে এতোটা মনোযোগ দিক।আর কিছুতে না।সহ্য হয়না জায়ানের তা। জায়ান নিজের অফিসরুমে চলে গেলো। তারপর আরাবীর জন্যে খবর পাঠালো একজনকে দিয়ে।আরাবীকে বলতেই আরাবী ফাইলপত্র গুছিয়ে জায়ানের রুমের সামনে নক করল,
‘ ম্যে আই কাম ইন স্যার?’
‘ কাম ইন।’
আরাবী ভেতরে প্রবেশ করল।মাথা নিচু করে বলে,
‘ স্যার ডেকেছিলেন?’
‘ হুহ! কফি বানান আমার জন্যে।আর হ্যা নিজের জন্যেও বানাতে ভুলবেন না।’
আরাবী মৃদ্যু হাসল।এখানে আসার পর থেকেই রোজ লোকটা ওর হাতের কফি খায়।সাথে ওকেও কফি অফার করে।আরাবীর নিজেরও ভালো লাগে।এক কাপ কফি খেলে বেশ রিফ্রেশ মনে হয় নিজেকে।
কফি বানাতে গিয়ে দেখে কফি পাউডার শেষ।এখন কি করবে?আরাবী জায়ানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।লোকটা চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।শরীর কি খারাপ তার?ঘুমিয়ে পরেছে কি লোকটা?ও যদি ডাকে তবে কি রাগ করবে?
এদিকে জায়ান চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলে উঠল,
‘ কিছু বলবেন মিস আরাবী?’
হঠাৎ এভাবে বলায় ভয় পেলো হালকা আরাবী।মৃদ্যু কেঁপে উঠল শরীর।শুকনো ঢোক গিলল আরাবী।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘ স্যার আসলে…কফি পাউডার শেষ।’
জায়ান চোখ মেলে তাকালো।আরাবী সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো।জায়ান আরাবীকে কিছু না বলে ল্যান্ডলাইনে ফোন করল।কিন্তু ফোনটা কেউ ধরছে না।ইফতিকে এইবার ফোন করল।ইফতি ফোন ধরলে জায়ান বলল,
‘ কফি পাউডার নেই কেন আমার রুমে?এটা শেষ হলে যে ম্যানেজার সোলাইমানকে সাথে সাথে রিস্টোক করতে বলে রেখেছি। সেটা কি সে জানে না?ফোন করছি তাও ধরছে না।এখন কি অফিসে এসে শান্তিমতো কাজটুকুও করতে পারবো না আমি?’
ইফতি বুঝল জায়ান রেগে আছে।কিন্তু ওর ভাই তো এতো ঠুনকো বিষয়ে রেখে যাওয়ার মানুষ না।কিন্তু এখন ইফতি বিষয়টা আর বেশি ঘাটলো না।শান্ত কণ্ঠে বলে,
‘ ভাইয়া রেগে যাচ্ছ কেন?আমি দেখছি ব্যাপারটা।’
‘ দ্রুত!’
জায়ান ফোন রেখে দিলো।ঠিক তার মিনিট পাঁচেক পর ইফতি আবার ফোন করল।জায়ান কল রিসিভ করলে সে বলে,
‘ ভাইয়া কফি পাউডার আছে।তবে সেটা নাকি ভুলবশত একজন স্টাফ অফিসের স্টোররুমে রেখে দিয়েছে।অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে।তোমার কফি পাউডার শেষ হওয়ার আগেই একটা এনে রাখবে ভেবেছিলো।কিন্তু ম্যানেজার সোলাইমের মনে নেই।’
সকাল থেকে জায়ানের মাথা ব্যথা।গতকাল সারারাত আরাবীর ওই কথাগুলো নিয়েই ভেবেছে জায়ান।তাই তো ঘুম হয়নি ঠিকঠাক।আর এখন মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে ওর।জায়ান রাগি গলায় বলে,
‘ সে এখন কোথায় তাহলে?’
‘ তাকে নাকি বড়োবাবা কি কাজে বসুন্ধরার দিকে পাঠিয়েছে।’
‘ আচ্ছা রাখি।’
জায়ান ফোন রেখে দিলো।তারপর আরাবীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ কফি স্টোররুমে আছে।আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।’
আরাবী জায়ানের চোখের দিকে তাকালো।লোকটার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।নিশ্চয়ই অসুস্থ লোকটা।আরাবী মৃদ্যু স্বরে বলে,
‘ আপনার বোধহয় মাথা ব্যথা করছে।আপনি বসুন।আমি নিয়ে আসছি।’
‘ ডিড আই টেল ইয়্যু টু গো?’
হালকা ধমকের সাথে বলল জায়ান।আরাবী মুখটা গোমড়া করে নিলো।জায়ান শ্বাস ফেলল।হাহ্! এই মেয়েটাকে ধমকেও শান্তি নেই।এইযে মুখ ফুলিয়ে আছে।মেয়েটাকে এখন ঠিক কতোটা কিউট লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।ইচ্ছে করছে মেয়েটার গালগুলো কামড়ে লাল করে ফেলতে।জায়ান বিরবির করল,
‘ কন্ট্রোল ইয়্যুরসেল্ফ জায়ান।ইয়্যু হেফ টু।’
জায়ান স্টোররুমে যাবে।ঠিক ওইসময় ওর ফোনে কল আসল।জায়ান দেখে ওর বাবা ফোন করছেন।রিসিভ করতেই তিনি বলেন,
‘ জায়ান আর্জেন্ট আসো।খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।সাউথ কোরিয়ার ওই কোম্পানিটা আমাদের সাথে ডিল সাইন করতে ইচ্ছা প্রকাশ করছে।এই সুযোগ হাতছাড়া করলে চলবে না।দ্যে ওয়ান্ট টু ঠক টু ইয়্যু।কাম ফাস্ট মাই সন।দ্যে আর ওয়েটিং।’
‘ আসছি।’ বলে জায়ান ফোন রেখে দিলো।
তারপর তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো আরাবীর দিকে। আরাবী মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়ালো।জায়ান বলল,
‘ এখানেই থাকুন।আমার জরুরি মিটিং আছে।সেটা শেষ করেই আসছি।এপরেই কফি খাব।এখান থেকে এক পা-ও বাহিরে রাখবেন না।’
এই বলে জায়ান হনহন করে চলে গেলো।এদিকে আরাবী অবাক।আশ্চর্য! সে মিটিংয়ে যাচ্ছে ভালো কথা।তো ওকে এখানে এভাবে আটকে রাখার মানে কি?এখানে বসে থেকে করবেটা কি ও?শুধু শুধু বসে থেকে সময় নষ্ট করে লাভ আছে?আরাবী একবার ভাবল এখান থেকে চলে যাবে।আলিফার সাথে কাজের বিষয়ে কিছু আলাপ করে নিলেও হবে।কিন্তু তা আর করল না।করল উল্টোটা।সে চলল স্টোররুমে কফি পাউডার আনতে।আরাবীর ভাষ্যমতে।কফি পাউডারটা আনতে তো আর বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।এই যাবে আর আসবে।যেই ভাবা সেই কাজ।আরাবী জায়ানের কথাকে অগ্রাহ্য করে বের হয়ে গেলো জায়ানের অফিসরুম থেকে।
#চলবে_______
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।বড়ো পর্ব লিখায় টাইপিং মিস্টেইক থাকতে পারে।আগামীকাল তা ঠিক করে দিবো।