স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ১০

0
419

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১০
অন্ধকার ছেয়ে আছে পুরো স্টোররুমটার মধ্যে।আরাবী বেশ সাবধানে আশপাশ দেখে পা ফেলল।হাতে তার ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানো।এদিক ওদিক তাকিয়ে সুইচবোর্ড দেখতে পেলো আরাবী।গিয়ে বাতি জ্বালালো।তবে একটা বাতিই জ্বলে এখানে।তাও বেশি একটা আলো হয় না।এখানে যে এতো সমস্যা এটা কি কেউ দেখেনি?আরাবী ভাবল গিয়ে এখানের এই সমস্যার কথা ম্যানেজারকে জানাবে।এমনিতে স্টোররুমটা বেশ ক্লিন।মানুষ যেখানে স্টোররুমে পুরোনো জিনিসপত্র রাখে।এইখানে তার উলটো।এখানে সব দরকারি আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখে।
আরাবী খুব সাবধানে আরেকটু সামনে এগোলো।দেখল একটা সেল্ফে বেশ কিছু জিনিসপত্র রাখা।আরাবী সেখানে গিয়ে খুঁজাখুঁজি করতে লাগল।কিন্তু সেখানে পেলো না।এরপর ছোটো একটা কাবার্ড দেখতে পেলো।ওটা খুলল।ভালোভাবে খুঁজতেই কফি পাউডার পেলো আরাবী।হাসি মুখে কফি পাউডার নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে বাতি নিভিয়ে যেই না পিছনে ফিরতে নেবে।তার আগে একজোড়া হাত ওর কোমড় চেপে ধরল।আরেকটা হাত রুমালের মতো কিছু একটা চেপে ধরল ওর নাকেমুখে।আরাবী ভয় পেলো। অস্থির হলো।ধস্তাধস্তি শুরু করল নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে।কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ পারলো না।কারন আস্তে আস্তে ওর শরীর নিস্তেজ হতে লাগল।দূর্বল হয়ে পরল আরাবী।চোখজোড়া ঝাপ্সা হয়ে আসল।ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে গেলো আরাবীর দৃষ্টিতে।ভারসাম্যহীন হয়ে গেলো আরাবীর ছোট্টো দেহটা।এদিকে পেছনের মুখোশধারী লোকটা আরাবীকে জ্ঞান হারাতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়াল।পর পর আরাবীর শরীরটাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের এমন জায়গায় রাখল।যেখানে সহজে ওকে কেউ দেখবে না।এরপর একটা ড্র‍য়ার থেকে একটা রিমোট বের করল।এখানে একটা একটা এসি লাগানো আছে।কারন এই স্টোররুমটায় নিহান সাহেব,জায়ান,ইফতি ওরাও আসে।আর তাদের এসিতে থাকার অভ্যাস।তাই এখানেও লাগিয়ে রেখেছে।অজ্ঞাত ব্যক্তিটি এসির রিমোটটি নিয়ে এসির পাওয়ার পনেরোতে দিয়ে দিলো।তারপর আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে।অজ্ঞাত লোকটা দ্রুত সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো।
এদিকে অতিরিক্ত ঠান্ডায় আস্তে আস্তে আরাবীর শরীর তাপমাত্রা কমতে লাগল।অজ্ঞান হয়ে পরে থাকা আরাবীর যেন মৃ’ত্যুর দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

অজ্ঞাত লোকটি খুব সাবধানে সেখান থেকে সরে পরল।পর পর নিজেকে স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনল।এরপর কল করল একটা নাম্বারে।একবার রিং হতেই ওপাশের ব্যক্তিটি ফোন রিসিভ করল।অজ্ঞাত ব্যক্তিটি ঘাবড়ানো গলায় বলে,
‘ ম্যাম কাজটা কমপ্লিট।’
‘ ওয়েলডান।ভেরি গুড, ভেরি গুড।আপনার রিওয়ার্ড জলদি আপনার কাছে চলে যাবে।’
‘ রাখি ম্যাম।’
‘ রাখুন,আর হ্যা এই ব্যাপারে যেন কিছুই কারো কানে না যায়।তাহলে কিন্তু সেটা আপনার জন্যে ভালো হবে না।’
‘ চিন্তা করবেন না ম্যাম।আমি খুব সাবধানেই কাজটা করেছি।’
ফোনটা কেটে দিলো।ফোনটা কান থেকে সরিয়ে চওড়া হাসি দিলেন সুহানা সাখাওয়াত। শয়তানি হাসি দিয়ে বলেন,
‘ নাহ থাকবে বাঁশ।না বাঁজবে বাঁশি।এইবার তুমি কি করবে নিহান?’

পর পর হাতে মদের গ্লাসটা নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘ যে করেই হোক জায়ানের বিয়ে তো আহানার সাথেই হবে।সেটা যে করেই হোক না কেন।আমি সুহানা ঠিক কি কি করতে পারি আর কি কি করেছি।তার ধারনাও তুমি করতে পারবে না নিহান।যেমনটা এতো বছরেও করতে পারোনি।এই বাড়ি,এই গাড়ি,এই সব প্রোপার্টি সব আমার।কেউ তা নিতে পারবে না।কেউ না।যে আমার পথে বাধা দিতে আসবে।তাকেও এই নির্দোষ মেয়েটার মতোই নিজের প্রা’ণ হারাতে হবে।বেচারি ম’রার আগে জানতেও পারল না। যে সে ঠিক কি কারনে ম’রছে।’

সুহানা অট্টহাসিতে ফেটে পরল। হাসি থামিয়ে রাগি গলায় সুহানা বলেন,
‘ তুমি কি ভেবেছ নিহান?রাতের বেলা চুপিচুপি ছেলের সাথে তার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে। আর আমি তা জানতে পারব নাহ?কিন্তু তুমি ভুল জানো নিহান।তোমাদের উপর আমার নজর চব্বিশ ঘন্টাই লেগে থাকে।তোমরা কি করো, না করো আমি সব খবরই রাখি।ইশ,কি ভুলটা করলে নিহান।এভাবে ড্রয়িং রুমের মাঝে ছেলের পছন্দ করা মেয়ের ব্যাপারে কথা বলা তোমার উচিত হয়নি। একদম হয়নি।হাহাহাহা!’

আবারও হাসতে লাগল সুহানা।
——-
‘ সো উই স্টার্ট ওয়ার্কিং ফ্রোম নেক্সট মান্থ।হোয়াট ডু ইয়্যু স্যে মি. কাং?” জায়ান বলে উঠল।

মি.কাং বলেন,
‘ ইয়েস ওফকোর্স।’

জায়ান আর মি.কাং হ্যান্ডসেইক করলেন।মি.কাং’দের বিদায় দিতেই।জায়ান দ্রুত ওর বাবাকে বলে,
‘ বাবা আমি যাচ্ছি। আমার কিছু কাজ আছে।’
‘ হ্যা যাও।’

জায়ান চলে গেলো।এদিকে জায়ানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে হাসলেন নিহান সাহেব।ছেলে যে তার কি জন্যে তারাহুরো করছে তা সে বুঝতে পারছেন।নাহ,আর দেরি করা যাবে না।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব জায়ানের বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে।

জায়ান দ্রুত পায়ে নিজের অফিসরুমে আসল।ওর কেমন অস্থির লাগছে।জায়ান ভেতরে প্রবেশ করল।আশেপাশে নজর ঘুরাতেই ভ্রু-কুচকে আসে জায়ানের।কোথাও নেই আরাবী।জায়ানের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসল।কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?জায়ান জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলল।রেগে লাভ নেই।জায়ান ভাবল আরাবী ওয়াশরুমেও যেতে পারে।তাই সেখানে গিয়ে জায়ান শক্ত কণ্ঠে ডাক দিলো,
‘ মিস আরাবী?আপনি কি এখানে?’

কোনো আওয়াজ আসল না।জায়ান দুবার দরজায় নক করল।এইবারও কোনো সারাশব্দ না পেয়ে জায়ান দরজা খুলে ভেতরে গেলো।নাহ,পুরো ওয়াশরুম খালি।জায়ান এইবার রেগে গেলো।এই মেয়ে নিশ্চিত বাহিরে চলে গিয়েছে।ও তো মানা করেছিলো মেয়েটাকে।যাতে এই রুমের বাহিরে না যায়। তাহলে ওর কথার খেলাপ করল কেন?জায়ান ফোন বের করে আরাবীকে কল করল।নাহ,ফোনটাও ধরছে না মেয়েটা।ভয়ংকর রেগে জায়ান ধুপধাপ পা ফেলে একেবারে সোজা চলে আসল আরাবীর ডেস্কে।কিন্তু সেখানেও নেই আরাবী।এইবার গেলো আলিফার কাছে। কারন আলিফার সাথেই আরাবীর একটু ভাব।আলিফা তখন কাজে ব্যস্ত।জায়ান ভারি স্বরে ডাকল,
‘ মিস আলিফা?আপনি কি আরাবীকে দেখেছেন?’

আলিফা ভয় পেয়ে গেলো আচমকা এমনভাবে ডাকায়।ঘাবড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল। সম্মুখে জায়ানকে দেখেই।নিজেকে সামলে বলল,
‘ হ্যা স্যার?জি কিছু দরকার ছিল?’

জায়ানের একই প্রশ্ন,
‘ আরাবীকে দেখেছেন?’

আলিফা না বোধক মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ নাহ স্যার।ও তো সেই যে আপনি ডেকেছিলেন।এরপরই চলে গিয়েছে।এদিকে আর আসেনি।’

একটু থেমে আলিফা ফের বলল,
‘ কেন স্যার?কি হয়েছে?আরাবী কোথায় স্যার?’

জায়ান আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বিরক্ত কণ্ঠে বলে,
‘ বাবা ডেকেছিলো। আমি তার কাছে গিয়েছিলাম।যাওয়ার আগে মিস আরাবীকে বলেছিলাম আমার অফিসরুম থেকে যেন কোথাও না যায়।বাট বাবার সাথে দরকারি কাজ শেষ করে আমার রুমে এসে দেখি।উনি সেখানে নেই।’

আলিফা বলল,
‘ আমি ওকে কল করে দেখছি স্যার।’
‘ আই অলরেডি ট্রাইড।বাট সি ইজ নট পিকিং আপ দ্যা ফোন।’

এইবার আলিফা নিজেও চিন্তায় পরে গেলো।কোথায় গেলো মেয়েটা??মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায় নয়ন ভাইয়ের কাছে কি জবাব দিবে ও?আল্লাহ্’র নাম স্মরণ করতে লাগল আলিফা।জায়ান আর কিছু না বলে দ্রুত কদম ফেলে আরাবীকে খুঁজতে লাগল।থেমে থাকল না আলিফাও।কিন্তু না কোথাও নেই আরাবী।জায়ান ইফতিকেও ফোন করে এখানে ডেকে আনল।সব শুনে ইফতিও খুঁজতে লাগল।আলিফা সবাইকে জিজ্ঞেস করছে আরাবী কথা।কিন্তু ওকে কেউ দেখেনি। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে অফিস পরিষ্কারের কাজে নিয়জিত বুয়ার কাছে গেলো আলিফা।উনাকে জিজ্ঞেস করে দেখা যাক। যদি সে আরাবীকে দেখে থাকে।পিছন পিছন ইফতিও গেলো।আলিফা উনাকে ডেকে বলে,
‘ আন্টি? আপনি কি এই মেয়েটাকে দেখেছেন?’

আলিফা নিজের ফোনে আরাবী একটা ছবি দেখালো উনাকে।তা দেখে বুয়া বলেন,
‘ আরে এই আফা?এই আফারে তো আমি স্টোররুমের ওইদিকে যাইতে দেখছিলাম।’
‘ স্টোররুম?’ বিরবির করে বলল ইফতি।পর পর বুঝতে পারল ব্যাপারটা।আরাবী বোধহয় কফি পাউডার আনতেই ওখানে গিয়েছে। জায়ান তো এই কারনেই ওকে ফোন করেছিলো।
‘ হো।ওইদিকেই যাইতে দেখছি।’
‘ আচ্ছা ধন্যবাদ আন্টি।’

আলিফা দ্রুত মেসেজ করল জায়ানকে,
‘ স্যার,আরাবীকে নাকি বুয়া আন্টি স্টোররুমের দিকে যেতে দেখেছেন।আপনি জলদি এদিকে আসুন।’

মেসেজটা পরে জায়ান আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল না।দ্রুত কদমে সেদিকে পা বাড়ালো।জায়ান,আলিফা আর ইফতি স্টোররুমে ঢুকতেই চমকে উঠল।
আলিফা চেচিয়ে উঠে বলে,
‘ এখানে এতো ঠান্ডা কেন?এসির পাওয়ার এতো নামিয়ে রেখেছে কে?হাত পা আমার জমে যাচ্ছে।’

ইফতি নিজের গায়ে কোট খুলে আলিফাকে পরিয়ে দিলো।চমকে উঠল আলিফা।অদ্ভুতভাবে তাকালো ইফতির দিকে।যে আপাততো এসির রুমোট খোঁজায়।আলিফা গায়ের কোটটায় হাত রাখল।পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।এদিকে ইফতি এসির রিমোট পেতেই তা দ্রুত বন্ধ করে দিলো।
এদিকে জায়ান অস্থির।কোথাও দেখতে পাচ্ছে না আরাবীকে।পুরো রুমটা তন্নতন্ন করে খুঁজল।জায়ানের কণ্ঠস্বর কাপছে।কাঁপা গলাতেই ডেকে উঠল,
‘ আরাবী?আরাবী?জবাব দিন আরাবী?’

কিন্তু না কোথাও নেই আরাবী।ইফতি বলল,
‘ ভাই এখানে বোধহয় মিস আরাবী নেই।চলো আমরা অন্য জায়গায় খুঁজি।এসো ভাই।’

জায়ান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।এখানে তো নেই মেয়েটা।কিন্তু ওর মনটা কেন বার বার বলছে যে আরাবী এখানেই আছে।ওর খুব কাছে।ও আরাবীকে অনুভব করতে পারছে।

কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না কেন মেয়েটাকে?ইফতি ফের ডাকল জায়ানকে।জায়ান না চাইতেও পা বাড়ালো ইফতিদের সাথে যাওয়ার জন্যে।জায়ান উল্টোদিকে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্যে।কিন্তু কিছু একটা দেখে হঠাৎ পা থামিয়ে ফেলল জায়ান।ওইতো কার্বাডের পিছনে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।জায়ান ভ্রু-কুচকালো।আস্তে আস্তে পা বাড়ালো সেদিকে।আরে ওটাতো আরাবীর ওড়নার অংশ।জায়ান বড়ো বড়ো পা ফেলে সেখানে গেলো।কিন্তু গিয়ে যা দেখল তার জন্যে জায়ান মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।
জায়ান এক চিৎকার দিয়ে উঠল,
‘ আরাবীইইইই!’

জায়ান আরাবীর পাশে বসে পরল।মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে এখানে।জায়ান আরাবীর গালে হাত রাখল।সাথে সাথে চমকে উঠল জায়ান।অস্বাভাবিকভাবে আরাবীর গা ঠান্ডা হয়ে আছে।এইবার ভালোভাবে আরাবীর মুখের দিক তাকালো।আরাবীর মুখশ্রী ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।জায়ানের বুকটা ধ্বক করে উঠল।আরাবীর এই অবস্থা দেখে জায়ানের মনে হচ্ছে।কেউ ওর হৃদপিণ্ডটা ভারি পাথর দিয়ে থে’তলে দিয়েছে।জায়ানের চোখজোড়া লাল হয়ে গেলো মূহুর্তেই।
জায়ান আর একমুহূর্তও দেরি করল না।দ্রুত আরাবীকে কোলে তুলে নিজের অফিসরুমের দিকে ছুটল।যেতে যেতে জায়ান বার বার বলতেই আছে,
‘ আরাবী আর ইয়্যু লিসেনিং টু মি?আরাবী?আরাবী চোখ খুলেন?আরাবী?’

#চলবে________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। রেস্পন্স করবেন সবাই প্লিজ।

#চলবে__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here