স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ২২

0
459

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২২
আজ শুক্রবার অফিস নেই।তাই আজ বেশ বেলা করে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরাবী।কিন্তু ওর সিদ্ধান্তে এক বালতি পানি ঢেলে বেশ জোড়েসোড়ে ওর মুঠোফোনটা বেজে উঠল।ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় চোখ কুচকে ফেলে আরাবী।বালিশের কোণায় হাতরে ফোনটা পেয়ে রিসিভ করে কানে ধরে।ঘুম জড়ানো গলায় বলে উঠে,
‘ আসসালামু আলাইকুম।কে?’

আরাবী ঘুম জড়ানো মায়াবী কণ্ঠস্বর শুনে থমকে গেলো জায়ান।আহা,মেয়েটার কণ্ঠস্বর এতো মিষ্টি কেন?মেয়েটা দিন দিন ওকে পাগল করে দিচ্ছে।জায়ান ঠোঁট কামড়ে ধরল।ওর রাতের ঘুম হারাম করে মেয়েটা কি সুন্দর শান্তির ঘুম দিচ্ছে।জায়ান ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠল,
‘ আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে।ম্যাডামের বুঝি খুব সুন্দর ঘুমানো হচ্ছে।’

জায়ানের কণ্ঠস্বর শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসে আরাবী।ফলে বিছানার হার্ডবোর্ডের সাথে বারি খেলো আরাবী।ব্যথায় মৃদ্যু আওয়াজ করে উঠল মেয়েটা।জায়ান ফোনের ওপাশ হতে চেচিয়ে উঠল,
‘ কি হলো?হ্যালো আরাবী?কি হয়েছে তোমার?’

আরাবী ব্যথাযুক্ত স্থান হাত দ্বারা ঢলতে লাগল।ঠোঁট উল্টে বলে,
‘ কিছু না। ওই একটু ব্যথা পেয়েছি।’

আরাবী ব্যথা পেয়েছে শুনে জায়ানের বুক অজানা আতংকে কেঁপে উঠল।মেয়েটা কি খুব বেশিই ব্যথা পেয়েছে?জায়ান নরম গলায় বলল,
‘ বেশি ব্যথা পেয়েছ?আমি কি আসব তোমাকে দেখতে?’

জায়ানের ছেলেমানুষী কথায় না চাইতেও হেসে ফেলল আরাবী।এই লোকটা ওর বেলাতেই এমন বোকা হয়ে যায় কেন?আরাবী হাসতে হাসতে বলে,
‘ আরে ভাই একটুখানি বারি খেয়েছি মাথায়।ব্যস, এতো সিরিয়াস কিছু না।’

আরাবী ‘ ভাই ‘ ডাকা মোটেও পছন্দ হলো না জায়ানের।ভ্রু-কুচকে ফেলল ও।ধমকে উঠল,
‘ ডোণ্ট কল মি ভাই।আই হেইট ইট হোয়েন ইয়্যু কল মি ভাই।’

আরাবী জায়ানের এমন কথায় কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো।তারপর বলে,
‘ ওটা তো আমি এমনি কথায় কথায় বলে ফেলেছি।’
‘ তো একদিন কথায় কথায় আমাকে জায়ান বলেও তো ডাকতে পারো তাই নাহ?’

আরাবী চুপ মেরে রইলো।সে কখনও জায়ানকে তার নাম ধরে ডাকতে পারবে কি?লোকটার নাম নিলেও কেন যেন ওর গলা শুকিয়ে যায়।এদিকে আরাবীকে চুপ থাকতে দেখে জায়ান ফের বলল,
‘ কি হলো?ডাকবে নাহ?’
‘ আমি পারব না।’
‘ কেন পারবে নাহ?জাস্ট ট্রায় ওয়ান্স।’
‘ বললাম তো পারবো না।’

জায়ান শীতল কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ আমিও দেখব বিয়ের পর তুমি আমার নাম না ডেকে কিভাবে থাকো।আমাকে নাম ধরে ডাকতে তো তোমাকে হবেই,সুইটহার্ট। ‘

জায়ানের কণ্ঠে ‘ সুইটহার্ট ‘ শব্দটা শুনে আরাবী কেঁপে উঠল।মাঝে মাঝে লোকটা এমন সব নামে ওকে ডাকে।যে আরাবীর সেটা মেনে নিতে অনেকটা সময় লাগে।
আরাবী কথা ঘুরানোর জন্যে বলল,
‘ এতো সকাল সকাল কিজন্যে কল দিয়েছেন এখন সেটা বলেন।’

জায়ান আরাবীর চালাকি ধরতে পারল।অতঃপর বাঁকা হেসে বলল,
‘ কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছ?বাট পারবে না আরাবী।যেটা আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি।তুমিও পারবে না।’

একটু থেমে জায়ান রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,
‘ আমাকে সবাই দেখলে ভাবে আমি কিছু বুঝি না। কিছু জানি না।বাট দ্যে ডোন্ট নো দ্যাট ইটস নট সো ইজি টু হাইড সামথিং ফ্রম সাফওয়ান জায়ান সাখাওয়াত। তারা যদি চলে ডালে ডালে,আমি চলি পাতায় পাতায়। শুধু সময়ের অপেক্ষা করছি।সবটা সামনে আনার জন্যে।’

আরাবী জায়ানের এহেন হেয়ালিপনা কথা বুঝতে পারল না।বলল,
‘ আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝলাম নাহ।’

জায়ান স্বাভাবিক হয়ে এলো মুহূর্তেই।মুচকি হেসে বলল,
‘ আরাবী আজ ফ্রি আছ?’
‘ হ্যা কেন?হঠাৎ এই প্রশ্ন?’
‘ আজ ডিনারে যাবে আমার সাথে?তোমার ননদ মানে আমার ছোটো বোন।সেদিন ওর এক্সাম থাকায় তোমার সাথে দেখা করতে পারেনি।তাই আমি ভাবলাম আজ ফ্রি আছি।তোমাদের ডিনারে নিয়ে যাই।এই সুযোগে ননদ ভাবি একে-অপরের সাথে পরিচয় হয়ে নিবে।’

আরাবী আলতো হাসল।বলল,
‘ আচ্ছা।ফ্রি আছি আজ আমি। সমস্যা নেই।কখন আসব?আর লোকেশনটাও বলে দিয়েন।’
‘ তার কোনো দরকার নেই।আমি আসব তোমায় নিতে।তুমি শুধু তৈরি হয়ে থেকো।আমি সন্ধ্যায় নিতে আসব।একটু আশপাশ ঘুড়িয়েও নিবো তোমাদের। ‘
‘ আচ্ছা।’

‘ কাঠগোলাপ?’ জায়ান কোমল গলায় ডেকে উঠল আরাবীকে।

জায়ানের এহেন কণ্ঠস্বরে ‘ কাঠগোলাপ ‘ ডাক শুনে আরাবী শরীর শিউরে উঠল।এতো ভালোলাগে কেন এই নামে জায়ান তাকে ডাকলে?হার্টবিড বেড়ে গিয়েছে আরাবীর। আরাবী মৃদু আওয়াজে বলে,
‘ জি বলুন।’
‘ আজ শাড়ি পরবে?তোমাকে শাড়িতে দেখতে চাই।কাঠগোলাপের শুভ্র রঙে নিজেকে রাঙিয়ে কাঠগোলাপ হয়ে এসো আমার কাছে।’

অনেকটা আবেগ নিয়ে বলল কথাটা জায়ান।আরাবী লজ্জামিশ্রিত মুচকি হাসি দিলো।লাজুক কণ্ঠে বলল,
‘ আসব।’
‘ ভালোবাসি কাঠগোলাপ।’

শরীরের মাঝে মৃদ্যু শিহরণ বয়ে গেলো আরাবীর। জায়ানের কণ্ঠে ‘ভালোবাসি ‘ কথাটা শুনলে এতো সুখ সুখ লাগে কেন?আরাবীর চারপাশে ভালোলাগার রঙিন প্রজাপতিরা উড়াউড়ি করতে লাগল।
আরাবী ছোট্টো কণ্ঠে বলল,
‘ হুম। ‘

জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সে অপেক্ষায় কবে যে মেয়েটার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনতে পারবে কে জানে?অপেক্ষার অবসান কবে হবে জায়ানের?জায়ান দৃঢ় স্বরে বলে,
‘ একদিন তুমি নিজেই যেচে আমাকে ভালোবাসি বলবে আরাবী।আর আমি সেদিনের অপেক্ষায়।আর সেইদিনটা খুব শীঘ্রই আসবে।ভালো থেকো।’
‘ আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন।’

কথপকথন শেষ হলো।আরাবী কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ভাবল।জায়ানকে ওর ভালোলাগে।কিন্তু ভালোবাসে কিনা সেটা জানে না আরাবী।তবে আরাবী চায় জায়ানকে ভালোবাসতে।লোকটা ওকে অনেক ভালোবাসে।জায়ানের মতো সুদর্শন একটা পুরুষ ওকে এতোটা ভালোবাসে এটা তো ওর সৌভাগ্য।আরাবী আড়মোড়া ভেঙে উঠে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো ওর মায়ের কাছে।আরাবীর শাড়ি নেই।মূলত ও হাতেগোনা একবার কি দুবার শাড়ি পরেছে।তাও অনেক আগে।আর সেগুলো হলো ওর মায়ের শাড়ি।তাই আজ আবারও লিপি বেগমের কাছে এলো শাড়ি চাইতে।কিন্তু কথাটা কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না আরাবী।ওর কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে আজ।এদিকে লিপি বেগম মেয়ের কাণ্ড কারখানা কিছু সময় দেখলেন।তারপর নিজেই বলে উঠলেন,
‘ কি হয়েছে তোর?কিছু কি লাগবে?’

আরাবী কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালো।তারপর থেমে থেমে বলে উঠল,
‘ আসলে মা হয়েছে কি।মানে উনি আজ আমাকে ডিনার করাতে বাহিরে নিয়ে যেতে চান।উনার ছোটো বোনতো সেদিন আসতে পারেননি।তাই আজ সে আমার সাথে দেখা করতে চাইছে।’

লিপি বেগম মুচঁকি হেসে বলেন,
‘ হ্যা সে তো ভালো কথা।তা যাবি।’
‘ মা আরেকটা কথা।ওই মানে উনি আমাকে শাড়ি পরে যেতে বলেছেন।’

কথাটুকু বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো আরাবী।ওর ভীষণ লজ্জা লাগছে।মেয়েকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে হাসলেন লিপি বেগম।তারপর বললেন,
‘ এখানে এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি।জায়ান ভবিষ্যতে তোর স্বামী হবে।এইতো আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন।তার জন্যে সাজবি না তো কার জন্যে সাজবি?আর এখন যেহেতু ছেলেটা সেধেই এই কথাটা বলেছে।তাহলে তো কোনো কথাই নেই।চল আমার সাথে।’

আরাবী মায়ের সাথে উনার রুমে চলে আসল।জিহাদ সাহেব তখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছিলেন।আরাবীকে দেখেই উঠে বসলেন।
‘ আয় মা। এখানে এসে বোস।’

আরাবী গিয়ে বাবার পাশে বসে পরল।এদিকে লিপি বেগম বেশ কয়েকটা শাড়ি বের করে বিছানায় রাখতে রাখতে বলছেন,
‘ আজ নাকি জায়ান বাবা আরাবীকে বাহিরে ডিনারে নিয়ে যাবে।জায়ানের বোন কি যেন নাম ও হ্যা নূর।মেয়েটা তো সেদিন আসতে পারেনি। তাই আজ আরাবীর সাথে দেখা করতে চাইছে। ‘

জিহাদ সাহেব আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
‘ তা বেশ ভালো কথা।যা ঘুরে আয়। ‘

ইশ, আরাবীর যে কি লজ্জা লাগছে।তাই আরাবী উঠে দাঁড়ালো ওর মায়ের বের করা শাড়িগুলো হাতে তুলে নিয়ে বলে,
‘ মা আমি শাড়িগুলো নিয়ে রুমে যাচ্ছি।পরে দেখছি সবগুলো।’

আরাবী মুহূর্তেই স্থান ত্যাগ করল। এদিকে লিপি বেগম আর জিহাদ সাহেব মেয়ে যে লজ্জা পাচ্ছে এটা বুঝতে পেরে হাসলেন।

কনফিউজড হয়ে বসে আছে আরাবী।ওর মা পনেরোটা শাড়ি বের করে দিয়েছে।কিন্তু আরাবী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কোনটা পরবে।দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে থাকা আরাবীর মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি আসল। তারপর ঝটপট সেখান থেকে একে একে সবগুলো শাড়ি পরে ছবি তুলল।তারপর সেন্ড করে দিলো জায়ানের কাছে।

এদিকে জায়ান ব্রেকফাস্ট করছিলো।হঠাৎ ফোনের নোটিফিকেশন আসায় সেটা চ্যাক করার জন্যে লক খুলে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই থমকে গেলো জায়ান।পানি খাচ্ছিলো ও।সেই পানি জায়ানের নাকে মুখে উঠে গেলো।কাশতে লাগল জায়ান।হঠাৎ জায়ানের এমন হওয়ায় খাবার টেবিলে সবাই চমকে উঠল।মিলি বেগম জায়ানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন।সাথি একগ্লাস পানি দিলো জায়ানকে।পানি পান করে জায়ানের কাশিটা একটু কমে আসলেই জায়ান চট করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসল।এসেই ধপ করে বসে পরল বিছানায়।এ কি করল মেয়েটা?একসাথে এতোগুলো ছবি আরাবীর।তাও আবার শাড়ি পরা দেখে জায়ানের যেন পাগল পাগল লাগছে।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে জায়ানের।অনেকক্ষণ সময় লাগিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল জায়ান।মেসেজ টাইপ করল দ্রুত।এরপর আরাবীকে সেন্ড করে দিলো।

মুঠোফোন হাতে নিয়ে জায়ানের উত্তরের অপেক্ষায় বসে থাকা আরাবী।ফোনের মেসেজ টোন পেয়ে দ্রুত ওপেন করল।সেখানে লিখা,
‘ এটা কি করলে কাঠগোলাপ?তোমার এতো বড়ো একটা ধাক্কা আমি কিভাবে সহ্য করব একবারও ভাবলে না?আমার জান নিয়ে নিতে চাও নাকি তুমি?’

আরাবী হা হয়ে গেলো।কি উদ্দেশ্যে পাঠালো।আর লোকটা বলছে কি।আরাবী মেসেজ করল,
‘ কি হয়েছে আপনার?আর এসব কি বলছেন?”

এইবার জায়ান ফোন করল আরাবীকে।ফোন রিসিভ করতেই জায়ানের অস্থির কণ্ঠস্বর শোনা গেলো
এখন তো তুমি কিছু জানো না তাই নাহ?আমার অবস্থা কি হয়েছে।ওসব তুমি বুঝবে না মেয়ে।আমাকে মে’রে ফেলার প্লানিং করে এখন তুমি কিছু জানো না তাই নাহ?’

আরাবী মুখ ফুলালো জায়ানের কথায়।
‘ আমি কি করলাম আবার?’
‘ এতোগুলো ছবি যে আমাকে পাঠালে।একবারও ভাবলে না যে আমি এসব দেখলে নিজেকে সামলাবো কিভাবে?মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে আমার।’
‘ মাথায় পানি ঢালুন ঠিক হয়ে যাবে।আমি যেই কারনে আমি ছবিগুলো পাঠিয়েছি সেটা বলুন।আমি কোন শাড়িটা পরব?’

জায়ান বেশ চমকালো আরাবীর কথায়।আরাবী বেশ সহজ হয়ে গিয়েছে ওর সাথে।একদম বউদের মতো কথা বলছে।ঠিকই তো এই মেয়েটা তো আর কয়েকদিন পর তো ওর বউ-ই হবে।জায়ান হেসে বলে,
‘ সবগুলোতে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।আমার কাঠগোলাপ যা পরবে তাতেই তাকে মায়াময়ী লাগবে।তবে আমার যে তোমাকে শুভ্র রঙে দেখতে ইচ্ছে করছে।’

আরাবী বিছানায় ওর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা শাড়িগুলোর দিকে তাকালো।এখানে কোনো সাদা শাড়ি নেই।ইনফেক্ট ওর মায়ের কোনো সাদা রঙের শাড়ি নেই।এখন আরাবী কি করবে?মুখ কালো করে আরাবী বলে,
‘ আমার তো কোনো সাদা রঙের শাড়ি নেই।এখন আর কি করার?জামা পরে চলে আসি?’

জায়ান মন খারাপের ভাণ ধরে বলে,
‘ এখন কি করবে তুমি?জামা তো রোজ পরো।একদিন শাড়ি পরে আসবে তার আবদার করলাম তোমার কাছে।সেটাও পূরণ হবে নাহ?’

আরাবীর যেন এইবার ভয়ংকর রকম মন খারাপ হলো।এই প্রথম জায়ান কিছু আবদার করেছে ওর কাছে।আর আরাবী সেটাই কিনা পূরণ করতে পারবে না?এইভাবে লোকটার মন ছোটো করে দিলো ও?আরাবী কাঁদো গলায় বলে,
‘ আমি সরি।কিন্তু কিছু করার নেই।’
‘ আসলেই কিছু করার নেই।থাক মন খারাপ করো না।এখন যাও গিয়ে তোমাদের বাসার নিচে নামো তো একটু।’

হঠাৎ বাসার নিচে নামার কথা বলায় আরাবীর ভ্রু-কুচকে আসে।প্রশ্ন করে,
‘ বাসার নিচে কেন নামব?’
‘ জাস্ট কাম নাহ!’
‘ ওকে!’
‘ রাখছি।’
‘ হু!’

আরাবী ফোন রাখল। তারপর ওর মাকে বলে বাসার নিচে নামল।গেটের বাহিরে এসে দাঁড়ালো।বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে আরাবী।এই লোক ওকে এখানে কেন আসতে বলল?আরাবী আরও পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করল।তারপর বিরক্ত হয়ে যেই না বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াবে।ঠিক তখনই একটা বাইক এসে থামালো আরাবীর সামনে।বাইক থেকে নেমে লোকটা আরাবী কাছে এসে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ ম্যাম, এটা জায়ান স্যার পাঠিয়েছেন।’

আরাবী ভ্রু কুচকালো।এই লোক আবার কি পাঠালো ওকে?আরাবী কিছু বলল না। চুপচাপ প্যাকেটটা হাতে নিলো।তারপর সৌজন্যতার জন্যে বলল,
‘ বাসায় আসুন ভাইয়া।’
‘ নাহ ম্যাম।আমার একটু কাজ আছে।ইনশাআল্লাহ অন্য একদিন আসব।’
‘ ধন্যবাদ ভাইয়া।এতো কষ্ট করার জন্যে।’
‘ ইটস ওকে ম্যাম।’

ছেলেটা চলে যাবার পর আরাবী বাসায় ফিরে আসল।ওর হাতে প্যাকেট দেখে লিপি বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
‘ এটা কি?’
‘ এটা উনি পাঠিয়েছেন মা।’
‘ ওহ।’

লিপি বেগম আর কিছু বললেন না।আরাবী নিজের রুমে চলে আসল।তারপর আস্তেধীরে প্যাকেটটা খুলল।প্যাকেটটা খুলতেই দেখতে পেলো।শুভ্র রঙের একটা শাড়ি তার মধ্যে কাঠগোলাপ ফুলের হ্যান্ডপেইন্ট করা।ভীষণ সুন্দর দেখতে শাড়িটা।আরাবী চোখজোড়া চিকচিক করে উঠল।ভীষণ মনে ধরল শাড়িটা ওর।আরাবী আরও ভালোভাবে দেখল পেটিকোট আর ব্লাউজও পাঠিয়েছে।সাথে সিম্পল সিলভারের জুয়েলারি আর এক ডজন সাদা রেশমি চুরি।আরেকটু ভালভাবে দেখতেই একটা চিরকুট পেলো আরবী।দ্রুত সেটা খুলল।সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,
‘ আজ আমার দেওয়া কাঠগোলাপের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলো, কাঠগোলাপ।মেক-আপ করবে না বেশি।একটু কাজল পরবে ওই মায়াবী চোখে আর তোমার ওই কোমল ঠোঁটজোড়ায় ন্যুড রঙের লিপ্সটিক দিবে।ব্যস, এতেই হবে।তুমি এমনিতেই অসম্ভব সুন্দর,বুঝেছ?’

আরাবী চিরকুটটা পরে মুচঁকি হাসল।এই লোকটাও না।আরাবী জায়ানকে ছোট্টো করে ‘ ধন্যবাদ ‘ লিখে পাঠিয়ে দিলো।জায়ান ফিরতি বার্তা পাঠালো,
‘ আই লাভ ইউ বললে বেশি খুশি হতাম।’

আরাবী আর উত্তর দিলো না।লজ্জামিশ্রিত মুচঁকি হাসল আরাবী।তারপর জায়ানের দেওয়া শাড়ি গহনাগুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো।জায়ানের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম উপহার।আরাবীর ইচ্ছে করছে এই উপহারের বিনিময়ে জায়ানকে ঠাস ঠাস করে দুটো চুমু খেয়ে নিতে।কিন্তু সেটা তো আরাবী কোনোদিন পারবে না।এসব চিন্তা করলেই আরাবীর লজ্জায় শ্বাস আটকে আসে।আবার বাস্তবে করবে তো দূরের কথা।এসব ভেবেই হাসল আরাবী।

#চলবে_________
ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here