স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ০৪

0
461

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৪
মুষুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।ভিজিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি।ঝড়ো হাওয়ার প্রকোপে গাছপালা গুলো নড়েচড়ে উঠছে ভয়ংকরভাবে।এককাপ কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আরাবী। সে ঝড়বৃষ্টির এই তান্ডবলীলা দেখতে ব্যস্ত।হাতের কফি তার সেই কখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।বৃষ্টির পানি ছিটিয়ে ছিটিয়ে এসে ভিজিয়ে দিয়েছে আরাবীকে অনেকক্ষাণি।তবে সেদিকে বেশি ভ্রুক্ষেপ নেই মেয়েটার।
কারন মন খারাপের মেঘ এসে জমেছে আরাবীর মনে।কোনো কিছুই যে ওর আর ভালো লাগছে না।কতো আশা নিয়ে বেরিয়েছিলো বাড়ি থেকে আজ।কিন্তু হলো কি?ওকে ফিরে আসতে হলো খালি হতে।ইন্টারভিউ তো দিবে দূরের কথা।অফিসেই ঢুকতে দিলো না।এখন ফাহিম আসলে কি জবাব দিবে ও?আর বাকি কোম্পানিগুলোতে যদি চাকরি না পায়। তাহলে কি হবে?তবে কি সংসারের জন্যে কি কিছুই করতে পারবে না আরাবী?ফাহিমকে কি একাই এই সংসারের জন্যে সব করতে হবে?কিন্তু এটা তো আরাবী কিছুতেই হতে দিতে পারে না।চাকরি না হলে নেই। ও টিউশনি করাবে।দরকার পরলে ভাইয়াকে বলবে। ও যেই কোচিং সেন্টারে পডায়। সেখানে ওকেও স্টুডেন্ট পড়ানোর সুযোগ করে দিতে। তারপরেও এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না আরাবী।ফাহিমের সাথে সমানতালে এই সংসারের জন্যে খাটবে ও।
আরাবীর চিন্তার মাঝেই ফাহিমের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। সে চিল্লিয়ে সবাইকে ডাকছে।আরবী স্বাভাবিক হলো।বারান্দা দিয়ে ঠান্ডা কফিটুকু ফেলে দিলো।তারপর আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো।নাহ,তাকে হাসিখুশি থাকতে হবে।কারন ওর মন খারাপ যে কেউ সহ্য করতে পারে না।আরাবী বসার ঘরে চলে এলো।গিয়ে দেখে ফাহিম বাবা আর মা’কে রসগোল্লা খাওয়াচ্ছে।বিষয়টা বুঝল না আরাবী।বলতে চাইলো,
‘ ভাইয়া কি হয়েছে?তুমি…!’

আরাবী কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না।তার আগে ফাহিম আরাবীর মুখে একটা রসগোল্লা ঠুসে দিলো।আরাবী চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল।ওর ভাই যে এমন একটা কান্ড করবে ভাবতে পারেনি আরবী।এদিকে ফাহিম,জিহাদ সাহেব,লিপি বেগম আরাবীকে দেখে হেসে কুটিকুটি। আরাবী রসগোল্লাটা দ্রুত চিবিয়ে গিলে ফেলল।তারপর বলল,
‘ ভাইয়া?আমাকে কথাটা তো সম্পূর্ণ করতে দিবে?আর এই রসগোল্লা এগুলো কিসের জন্যে?আর বাবাকে তুমি মিষ্টি খাওয়াচ্ছ কেন?তার সমস্যা হয় বুঝো নাহ?’

ফাহিম রসগোল্লার হাড়িতে টেবিলে রাখল।হাসি হাসি মুখে এসে একপাশ থেকে আরাবীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ একটা রসগোল্লা খেলে কিছু হবে না।আর এই রসগোল্লা এনেছি কারন।আমি তোলারাম কলেজে শিক্ষকতার চাকরিটা পেয়ে গিয়েছি।আগামী সপ্তাহে জয়েনিং।’

এতো বড়ো একটা খুশি খবর শুনে।আরাবী খুশিতে চিৎকার করে উঠল।তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ফাহিমকে।মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে।ফাহিমও আরাবীকে জড়িয়ে ধরে স্নেহের সাথে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ বাদে আরাবীকে সরিয়ে দেখে ওর চোখে পানি।ফাহিম মৃদ্যু হাসলো।সে জানে তার বোনটা অনেক ইমোশনাল। ফাহিম যত্নসহকারে বোনের চোখের পানি মুছে দিলো।বলল,
‘ পাগলি কাঁদছিস কেন?’

আরাবী হেসে বলে,
‘ এতো বড়ো একটা খুশির খবর শুনে চোখে পানি চলে এসেছে।’
‘ বোকা একটা।’

ফাহিম আরাবীর মাথায় আস্তে করে একটা টোকা মারল।তারপর কিছু একটা মনে পরতেই আরাবীকে প্রশ্ন করে,
‘ সাখাওয়াত ইন্ডাস্ট্রিতে আজ ইন্টারভিউ কেমন হলো আরু?’

এই প্রশ্নটারই ভয় পাচ্ছিলো আরাবী। এখন কিভাবে জবাব দিবে আরাবী?আরাবী শুকনো ঢোক গিলল।আমতা আমতা করে বলে উঠে,
‘ আসলে ভাইয়া আজ মানে।রাস্তায় এতো জ্যাম ছিলো তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।দেঢ় ঘন্টা আগে বেরিয়েছি তোমার কথা মতো।কিন্তু ঢাকা শহরে যে এতো জ্যাম হয় জানা ছিলো না।আমি যখন সেখানে পৌছালাম তখন অলরেডি ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিলো।’

বলতে বলতে মনটা বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেলো আরাবীর।আর মাঝখানে ওই দূর্ঘটনা আর ওই লোকটার কথা এড়িয়ে গেলো আরাবী।কারন এটা বললে বাবা,মা, ফাহিম সবাই চিন্তা করবে ওর জন্যে।তাই না বলাই ভালো মনে করল আরাবী।ফাহিম আলতো হেসে আরাবীর মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘ থাক এসব নিয়ে আর মন খারাপ করতে হবে না তোর।একটাতে ইন্টারভিউ দিতে পারিসনি তো কি হয়েছে?বাকিগুলোতে তো ঠিকঠাক হয়েছে সব কিছু।চিন্তা করিস না।’

ব্যস,এই একটা কথাই শোনার অপেক্ষায় ছিলো আরাবী।মন থেকে সব দুশ্চিন্তা আর মন খারাপের রেশ এক নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো।আনন্দে ভড়ে উঠলো মন।আসলেই তো এখন মন খারাপ করে থাকা একদম চলবে না।ওর ভাই চাকরি পেয়েছে।এখন তো পরিবারের সাথে আনন্দ করার সময়।এসব ভেবে মিষ্টি করে হাসল আরাবী।
______
‘ সমস্যা কি তোর?আমার কথা কানে যায় না তোর?আমার যে এক কথা বারবার রিপিট করা ভালো লাগে না।সেটা জানিস না তুই?’

দাঁতে দাঁত চেপে নূরকে ধমকে উঠলেন মিসেস সুহানা সাখাওয়াত। নূর হলো জায়ানের ছোটো বোন।মিসেস সুহানা সাখাওয়াত ফের বলেন,
‘ আহাদ ফোন করলে সাথে সাথে ওর ফোন রিসিভ করবি।কতোবার এই কথা তোকে বলতে হবে আমায়?’

নূর কান্নারত কণ্ঠে বলে,
‘ আহাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না আমার আম্মু।’

নূরের মুখে এই কথা শুনে মিসেস সুহানা সাখাওয়াত নূরের মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলেন।রাগি গলায় বলে,
‘ ভালো লাগে না মানে?কেন ভালো লাগে না?বাহিরে কি কোনো নাগর জুটিয়েছিস নাকি?যদি এসব করে থাকিস।আমি আগেই ওয়ার্নিং দিয়ে দিচ্ছি।সবকিছু বাদ দিয়ে দে।আহাদের সাথেই তোর বিয়েটা হবে।ভেবেছিলাম তোর অনার্স কমপ্লিট হলে বিয়েটা দিবো। কিন্তু তুই যে রঙ তামাসা শুরু করেছিস।অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই তোর আর আহাদের বিয়েটা দিয়ে দিবো।’

নূরকে একপ্রকার বিছানায় ছুড়ে মারল মিসেস সুহানা সাখাওয়াত। নূর সেভাবে পরেই কাঁদতে লাগল।
মিসেস সুহানা চলে যেতে গিয়েও থেমে গেলেন।নূরের কাছে এসে ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে বলেন,
‘ এই কথা জায়ান আর তোর বাবার কানে যেন না যায়।তাহলে ভালো হবে না কিন্তু নূর।আর তাছাড়া তাদের এসব বিষয়ে জানালে আমারও তেমন কোনো আপত্তি নেই।আমিও তাদের বলব তাদের বাড়ির মেয়ে এংগেজড হওয়া সত্ত্বেও বাহিরে বাহিরে নাগর জুটিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’

হনহন করে চলে গেলেন মিসেস সুহানা সাখাওয়াত। এদিকে নূর বালিশে মুখ গুজে চিৎকার করে কেঁদে উঠল।তার যে আর এসব সহ্য হচ্ছে না। ও একটু শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে চায়।নিজের মতো করে সব করতে চায়।কিন্তু তা যে হবার নয়।কেন এমন হলো ওর সাথে।কেন ওর এই যন্ত্রনাটুকু ওর ভাই আর বাবাকে চাইলেও বলতে পারে না।নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও আপন করে পাবার দুঃসাহস করতে পারে না।আর যে পারছে না ও।এইবার মর’লেই কি ও শান্তি পাবে?কাঁদতে লাগলো নূর।

অফিস থেকে মাত্রই বাসায় ফিরল জায়ান।এসেই সোজা উপরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।কিন্তু দোতলায় উঠার সময় সিড়ির দোরগোড়ায় দেখা হয়ে যায় মিসেস সুহানা সাখাওয়াতের সাথে।তিনি নূরের রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামছিলেন।
জায়ানের দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়।জায়ানের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে।অস্থির হয়ে বলে উঠলেন,
‘ বাবা?এটা কিভাবে হলো?কার এমন সাহস হলো?জায়ান বাবা খুব লেগেছে বাবা?কতোখানি কেটেছে বাবা?ব্যথা করছে?এই রিনি? মিলি ডক্টরকে ফোন কর।ইফতি কোথায় ও আসেনি?ও কোথায় আছে?’

আজ অফিসে এমনিতেই অনেক চিল্লাপাল্লা করেছে জায়ান।সেই কারনে গলাটাও ব্যথা করছে।কাজে মনোযোগ দিতে পারেনি একদম।বারবার ওই মেয়েটার চেহারা ভেসে উঠে চোখের সামনে।কি হচ্ছে এসব ওর সাথে?কেন হচ্ছে? সেটা বুঝতে পারেনা জায়ান।তাই তো নিজের রাগ অন্যের উপরে ঝেরেছে।(এই গল্পের লেখিকা সাদিয়া জাহান উম্মি)।
জায়ান বিরক্তিকর কণ্ঠে বলে,
‘ মম আ`ম ভেরি টায়ার্ড নাও।লেটস টক এবাউট দিছ টুমোরো। আর ইফতি ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছে।বেচারা আজ সারাদিন অনেক কাজ করেছে।একটু রিফ্রেশমেন্টের দরকার।’

মিসেস সুহানা মিথ্যে মিথ্যে একটু কান্নার অভিনয় করে বলেন,
‘ আচ্ছা বাবা যাও রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও।আমি সুমনকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিবো তোমার রুমে।’
‘ হুম!’

জায়ান চলে গেলো নিজের রুমে।রুমে আসতেই গায়ের কোটটা খুলে লন্ড্রি বাক্সেটে ছুঁড়ে মারল।তারপর শার্টের বুকপকেটে হাত দিলো।সেখান থেকে একটা রুমাল বের করল।রুমালের ভাঁজটা খুলল জায়ান।সেখানে একটা নেতিয়ে যাওয়া কাঠগোলাপ ফুল।এটা সেই ফুল যেটা আরাবীর চুলের মাঝে এসে ঝরে পরেছিলো।জায়ান খুব কৌশলে ফুলটা নিয়েছিলো আরাবীর চুল থেকে।মেয়েটা বিন্দুমাত্রও টের পায়নি।জায়ান বুকসেল্ফের কাছে এগিয়ে গেলো।সেখান থেকে ওর ডায়রীটা হাতে নিলো।ফুলটা ডায়রীর ভাঁজে রাখতে রাখতে জায়ান ধীর আওয়াজে বলে উঠল,
‘ জানি না তুমি কে?তোমার নাম কি?আর আমিই বা কেন এই ফুলটাকে এনে এভাবে যত্ন করে রাখছি।শুধু এটুকু জানি এই কাঠগোলাপটা যদি না নিয়ে আসতাম। তো অনেক বড়ো কিছু হারাতাম আমি।জানি না মেয়ে।কিন্তু তোমাকে ঠিক এই #স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ ফুলটার মতোই স্নিগ্ধ লেগেছিলো।’

কথাগুলো বলে জায়ান কাঠগোলাপটা ওর ডায়রীর ভাঁজে যত্ন করে রেখে দিলো।
.
.
.
#চলবে_______
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। আপনাদের রেস্পন্স আশা করছি।আপনারা রেস্পন্স করলে আমি লিখার উৎসাহ পাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here