স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #সূচনা_পর্ব

0
807

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#সূচনা_পর্ব
‘ আমার ছেলে জায়ান সাখাওয়াতের জন্যে রাজকন্যা খুঁজে আনবো।কোনো যেনতেন মিডেলক্লাস ফ্যামিলির মেয়েকে আমার ছেলের আশেপাশেই তো সহ্য করতে পারি না।সেখানে এদের আবার ছেলের বউ বানাবো ভাবলেন কিভাবে আপনি?আর এসব ঘটকালি আমার ছেলের জন্যে করবেন না।আমি কি কোনোদিন বলেছি আমার ছেলের বিয়ে দিবো আমি?তাহলে কেন এসেছেন?কোনো দরকার নেই এসবের বুঝেছেন?ওর জন্যে আমি নিজেই রাজকন্যা খুঁজে আনবো।তাতে আমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।আপনি এখন আসতে পারেন।’

মিসেস সুহানা সাখাওয়াতের কথায় ঘঠক নিয়াজউদ্দিন অপমানিত বোধ করলেন।এই বাড়ির ছেলের জন্যে দু চারটে সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলেন তিনি।বড়োলোক মানুষ।যদি এই বাড়ির ছেলেটার বিয়ে পাকাপোক্তভাবে করতে পারে।তাহলে বড়ো অংকের একটা সম্মানি পাবেন।সেই আশাতেই এসেছিলেন। কিন্তু তাকে যে এভাবে অপমানিত হতে হবে ভাবেননি তিনি।মুখ শুকনো করে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।তারপর বেড়িয়ে গেলেন বাড়ি হতে।যেতে যেতে মনে মনে বলে গেলেন,
‘ অহংকার পতনের মূল।একদিন আপনি এমনভাবে মুখ থুবড়ে পরবেন। যে উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারবেন না।’

নিয়াজউদ্দিন চলে গেলেন।তাকে যেতে দেখেই মিসেস সুহানা সাখাওয়াত চেঁচিয়ে ডেকে উঠলেন,
‘ রিনি? এই রিনি জলদি এদিকে আয়।’

রিনি নামের মেয়ে মিসেন সুহানা সাখাওয়াতের হুংকারে ছুটে চলে এলো।কারন এক মিনিট দেরি হলে যে তারই বিপদ।রিনি আসতেই মিসেস সুহানা সাখাওয়াত বললেন,
‘ দিছ সোফা স্যুড বি ক্লিন্’ড রাইট নাও। যতোসব ফকি’ন্নির বাচ্চারা আমার বাড়িটায় এসে নোংরা করে যায়।’

মিসেস সুহানা সাখাওয়াত চলে গেলেন।আর রিনি তার মতো কাজ করতে লাগলেন। এদিকে রান্না ঘর থেকে মিসেস মিলি সাখাওয়াত এইসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মিসেস সুহানা সাখাওয়াত হলেন উনার বড় জা।
এই বাড়ির প্রধান কর্তা নিহান সাখাওয়াতের স্ত্রী।আর মিসেস মিলি সাখাওয়াত হলেন নিহান সাখাওয়াতের ছোটো ভাই মিহান সাখাওয়াতের স্ত্রী।

মিসেস মিলি সাখাওয়াত বিরবির করে বলেন,
‘ আপার কেন যে এতো অহংকার।মানুষকে যে তিনি কেন এতো ছোটো করে দেখেন।কবে যে এমন দিন আসবে যেদিন হবে তার অহংকারের পতন।’

মিসেস মিলি সাখাওয়াত হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে রান্নায় মনোযোগ দিলেন।
————
‘ ভাইয়া? আর কতো?আমার মাস্টার্স কমপ্লিট। এইবার তো আমাকে চাকরি করতে দেও।তুমি তো বাবা, মায়ের একা সন্তান না।আমিও তার সন্তান।তাহলে তুমি কেন একা এতো কষ্ট করবে?ভাইয়া না করো না। প্লিজ রাজি হয়ে যাও।’

আরাবী করুণ গলায় কথাগুলো বলে উঠল।বোনের কথা শুনে ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলল।একমাত্র আদরের বোন তার।বোনের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারে না ফাহিম।তাই তো চাইছে নিজে একা কষ্ট করতে।যাতে তার বোন বিন্দু পরিমান কষ্ট না পায়।কিন্তু তার বোনটা যে কি নাছোড়বান্দা। তা বলে বোঝানো যাবে না।
ছয় মাস হলো তারা রাজশাহী থেকে ঢাকা এসেছে।তার কারনও আছে বটে।তাদের বাবা জাহিদ মৃধা।তিনি বছরখানিক হলো তিনি ব্রেইন স্ট্রো’ক করেছিলেন।যার ফলে তিনি ঠিকভাবে হাটতে চলতে পারেন না।তবে আবার একেবারে অচলও না।কিন্তু ভীতরে ভীতরে তার অনেক রোগের বসবাস।যেমন ডায়বেটিস,পিত্ত’নালিতে পাথর। এইসব রোগের কারনে জিহাদ সাহেব প্রায়শই অসুস্থ থাকেন।রাজশাহীতে তিনি চিকিৎসারত ছিলেন।তবে সেখানের চিকিৎসক’রা উনাকে ঢাকার ভালো হসপিটালে ডক্টর দেখানোর সাজেস্ট করেছিলেন।শুধু আরাবীর পড়লেখার কারনে আসতে পারছিলো না ওরা।যখন আরাবীর মাস্টার্সের ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়।তার দুদিন পরেই ওরা ঢাকা শিফট হয়ে যায়।কারন জিহাদ সাহেবের চিকিৎসার প্রয়োজন খুব করে।ঢাকা এসেই ফাহিম ওর এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে।তার বন্ধু আর দু একজন মিলে একটা কোচিং সেন্টার চালায়।ফাহিমের বন্ধু ফাহিমকে সেই কোচিং সেন্টারেই চাকরি দেয়।মোটামুটি ভালোই ইনকাম করে ফাহিম।কিন্তু এই ইনকামে যে টানাটানি হয়ে যায় ওদের সংসারে।কারন অর্ধেকের বেশি টাকা জিহাদ সাহেবের চিকিৎসাতেই খরচ হয়ে যায়।
ঠিক এই কারনেই আরাবী জোড় করছে।যাতে ওর ভাই ওকে একটা চাকরি করতে দেয়।এমনিতে ফাহিম মানা করতো না। দিতো চাকরি করতে আরাবীকে।কিন্তু ঢাকা আসার দুমাসের মাথায় একটা ঘটনা ঘটে যায়।ওদের পাশের বিল্ডিংয়ে এক ফ্যামিলি থাকে।তাদের মেয়েও নাকি চাকরি করতো।পরে একদিন নাকি সেই অফিসের বস উনার মেয়েকে রে’প করার চেষ্টা করেছিলো।এমনটা জানতে পারে ওরা।ভাগ্যের জোড়ে একটুর জন্যে বেচে গিয়েছিলো মেয়েটা।এই ঘটনাটা জানার পর থেকে ফাহিমের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে।হাজার হোক,বড় ভাই সে।নিজের কলিজার টুকরো বোনের গায়ে সামান্য একটা সুইয়ের আঁচড়ও সহ্য করতে পারে না।
কিন্তু আরাবী যেন আজ কোমড় বেধে নেমেছে যে করেই হোক।ফাহিমকে আজ রাজি করিয়েই ছাড়বে।

আরাবী ফাহিমের হাতদুটোকে নিজের হাতের মাঝে চেপে ধরল।শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,
‘ ভাইয়া ভয় পেও না।কিচ্ছু হবে না আমার।আমাকে চাকরিটা করতে দেও।ভাইয়া আমি ওই কোম্পানিতেই আমি ইন্টারভিউ দিব যে কোম্পানিগুলোতে তুমি ইন্টারভিউ দিতে বলবে।তুমি কোম্পানিগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড ভালোভাবে চ্যাক করে নিও।প্লিজ ভাইয়া।’

ফাহিম আরাবীর হাতের থেকে নিজের একটা হাত ছাড়িয়ে নিলো।তারপর আরাবীর মাথায় আদুরেভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘ আরু তোকে আমি কখনই মানা করিনি কোনো কাজে।সবসময় বলেছি তোর যেটা মনে চায় তাই করবি।নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করবি না।সেখানে তোর চাকরি করার শখ অনেক আগে থেকেই।তোর স্বপ্ন এটা।তোর স্বপ্ন পূরণে আমি বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না যে।
তবে কি জানিস।আমি ভাই তো! বোনের কিছু হয়ে যাবে এই ভয়টাই সবসময় আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে।এইজন্যেই রাজি হচ্ছিলাম না।তবে আর নাহ,আল্লাহ্ ভড়সা কিচ্ছু হবে না তোর।আমার শরীরের শেষ বিন্দু র’ক্ত দিয়ে হলেও তোকে আমি রক্ষা করব।আমি নয়নের সাথে কথা বলব রাতে। ভালো কিছু কোম্পানি সিলেক্ট করে তোকে লিস্ট দিচ্ছি।সেখানে সিভি জমা দিয়ে দিস।’

ফাহিমের কথা শুনে আরাবী প্রাপ্তির একটা হাসি হাসি দিলো।তারপর ঝটপট করে ফাহিমকে জড়িয়ে ধরল।উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলে উঠল,
‘ থেংক ইয়্যু ভাইয়া।অনেক অনেক থেংক ইয়্যু। আই লাভ ইয়্যু! ‘
‘ আই লাভ ইয়্যু টু! ‘

এদিকে নিজেদের রুমের আড়াল থেকে ভাই বোনের এই মিষ্টি মধুর মুহূর্তটা দেখে চোখের কোণে জমা অশ্রু মুছে নিলেন জিহাদ সাহেব আর লিপি বেগম।
জিহাদ সাহেব ধরা গলায় বলেন,
‘ ছেলে মেয়ে দুটো কবে যে এতো বড়ো হয়ে গেলো।বুঝতেই পারলাম না।মনে হয় এইতো সেদিনই না দুই ভাই বোন আমি কাজের থেকে ফিরলেই দৌড়ে আমার কাছে এসে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকতো চকলেটের আশায়।কেমন যেন চোখের পলকেই ওরা বড়ো হয়ে গেলো।এখন সংসারের দায়িত্বও দুজন ভাগাভাগি করে নিতে শিখে গিয়েছে।’

লিপি বেগম স্বামির কাধে মাথা রাখলেন।অশ্রুসিক্ত চোখে সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘ আমাদের জীবন স্বার্থক হয়ে গিয়েছে ছেলে মেয়ে দুটোকে মানুষের মতো মানুষ করতে পেরে।এখন শুধু আরাবীটাকে একটা ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারলেই হলো।মেয়েটা আমার সহজ সরল।ওর জন্যে এমন একটা ছেলেকে যেন খুঁজে পাই যেই ছেলে আমার মেয়েটাকে সব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে।যেমনটা তুমি করেছ আমায়।সবসময় বিপদ থেকে আগলে রেখেছ আমাকে আর আমার সন্তানদের।’

জিহাদ সাহেব মৃদ্যু হেসে স্ত্রীকে একপাশ হতে জড়িয়ে ধরে বলেন,
‘ চিন্তা করো না।আমার মেয়ের ভবিষ্যত সুন্দরই হবে ইনশাআল্লাহ!আল্লাহ্ তায়ালা যা করেন আমাদের ভালোর জন্যেই করেন।’
‘ হুম!’

জিহাদ মৃধা তার স্ত্রী মিসেস লিপি মৃধা।তাদের এক ছেলে আর এক মেয়ে।ফাহিম আর আরাবী।এই চারজন নিয়েই তাদের সুখী পরিবার।ছোট্টো এই সংসারে হয়তো অনেক বাধা বিপত্তিতে তারা পরেন।কিন্তু তাদের মাঝে সুখের কোনো কমতি নেই।দিনকাল তারা বেশ আনন্দের সাথেই পার করেন।সুখী পরিবার।
—–
কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আরাবী।মনটা আজ ভীষণ ভালো তার।অবশেষে ফাহিম ওকে চাকরি করতে দেওয়ার জন্যে রাজি হয়েছে।এইবার ও যদি একটা চাকরি পায়।তাহলে এই সংসারের অর্ধেক দায়িত্ব নিজের কাধে নিবে। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি টেনে আকাশপানে তাকালো আরাবী।আজ আকাশেরও বুঝি তার মতো মনটা অনেক ভালো।তাইতো কি সুন্দর দেখাচ্ছে আকাশটা।অসংখ্য তারা উঠেছে আকাশে।সাথে মস্ত বড়ো একটা চাঁদ।কি সুন্দর লাগছে দেখতে।মৃদ্যুমন্দ বাতাস বইছে।সেই বাতাসের সাথে কি যেন একটা নাম না জানা ফুলের সুরভী ভেসে আসছে।আরাবী চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস টেনে নিলো।আহ, কি সুন্দর ঘ্রান।
ফুল আরাবীর বরাবরই অনেক প্রিয়।বেশি ভালো লাগে ওর শুভ্র রঙের ফুলগুলো।আর এইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয় তার কাঠগোলাপ।কাঠগোলাপ ফুলগুলো দেখতে কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগে।কেমন যেন এই ফুলটার সাথে আলাদা একটা টান অনুভব করে আরাবী।মনে হয় এই ফুলগুলো ওর অনেক আপন কিছু,প্রিয় কিছু।
রাজশাহী থাকতে ওদের বাড়িতে একটা বিশাল বড়ো কাঠগোলাপ ফুলগাছ ছিলো।কি সুন্দর থোকায় থোকায় ফুল ফুটে থাকতো।আর আরাবী তা মুগ্ধ নয়নে দেখত।
গোলগাল মুখশ্রী,সাদাসিধে ডাগরডাগর আঁখিজোড়ায় যেন মেয়েটা রাজ্যের মায়া নিয়ে ঘুরে।নাকের ওই নাকফুলটা যেন জ্বলজ্বল করে মেয়েটার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুন।গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ওই কোমল ওষ্ঠজোড়ায় যখন হাসির ঢেউ খেলে যায়, সাথে হাওয়ার তালে তালে কালো কুচকুচে কেশরাশিগুলো দুলে ওঠে। তখন যেন আস্ত একটা আদুরে রাজকন্যা লাগে মেয়েটাকে।
কিন্তু এই সৌন্দর্য যদি কোনো পুরুষ মনের নজর দিয়ে দেখত তবে নিশ্চিত প্রেমে পরে হাবুডুবু খেতো একেকজন।কিন্তু মানুষ তো সাদা চামড়ার পূজারি।শ্যামাঙ্গিনী আরাবীর সৌন্দর্য তারা বুঝবে কিভাবে?মেয়েটা যেন নিজেই আস্ত এক #স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ। আর এই স্নিগ্ধ কাঠগোলাপের স্নিগ্ধতা বুঝতে পারবে এমন কি কেউ আছে এই জগতে?কেউ কি আছে যে শ্যামাঙ্গিনী আরাবীকে ভালোবেসে নিজের মনের কুঠরীর মালিকানা দিয়ে দিবে?আছে কি?

#চলবে________
আসসালামু আলাইকুম। অনেকদিন পর লিখলাম।জানিনা কেমন হয়েছে। ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার করবেন।আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন।আমার ত্রুটিগুলো আগে আমাকে জানাবেন।আমি যদি আপনাদের কথা গুরুত্ব না দেই।পরে নাহয় তা নিয়ে সমালোচনা করবেন।আর হ্যা সবাই রেস্পন্স করবেন।আপনারা রেস্পন্স করলে আমি লিখার উৎসাহ পাবো।নাহলে যেভাবে রাইটিং ব্লকে পরেছি।দেখা যাবে খুব জলদিই লিখালিখির থেকে মন উঠে যাবে।তাই দয়া করে রেস্পন্স করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here