#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৯(২)
#নন্দিনী_নীলা
সকাল বেলায় জায়ান দের বাসায় পুলিশ এসে হাজির। বাপ বেটা তখন ঘুমে আচ্ছন্ন আছে। এদিকে পুলিশসহ এসেছে উষসীর ভাই। পালানোর কোন রাস্তাই পেল না। দুজনেই ধরা খেলো। আয়ান কে নিয়ে যেতে পারলেও সাদিকুর রহমানকে নিয়ে যেতে পারল না।
সাদিকুর রহমান বললেন,,” দেখুন অফিসার আপনারা মিথ্যা মামলার দোহাই দিয়ে আমাকে জেলে নিতে পারেন না। আমি সমাজের একজন সম্মানিত লোক। তবুও অনেক পালিয়ে বেরিয়েছি আর না। আমার ছেলে জায়ান যদি জানতে পারে আপনি আমায় থানায় নিয়ে গেছেন আপনার কি হাল হয়ে বুঝতে পারছেন? আমি আমার ছেলের বউকে যথেষ্ট স্নেহ করতাম তাকে আমরা কেউ মারি নি। ”
অফিসার জায়ানের কথা শুনে একটু ভয় পেল তিনি উষসীর ভাইকে সাইডে নিয়ে বললেন,” আমার মনে হয় উনার নামে মামলায় না রাখাই ভালো। ছেলের বউকে উনি মারতে চাইবেন না। আমরা আয়ান কে নিয়ে ফিরে যাই?”
উষসীর ভাই অফিসারের কলার ধরে বলল,,” কি বললি তুই? তোর থেকে আমি শিখব কার নামে মামলা দিব না দিব। চুপচাপ বেটা দুইটাকে থানায় নিয়ে যা।”
অফিসার রেখে উষসীর ভাইকে ঘুসি মেরে নিজের থেকে সরিয়ে বললেন,” আইনের লোকের গায়ে হাত দিস। তোরে তো আগে জেলে নেওয়া উচিত।”
বলেই উনি কনস্টেবল পুলিশের সাহায্যে আয়ান আর উষসীর ভাই দুজনকেই থানা নিয়ে আসে। আর এক জেলে বন্দি করে।
আয়ান বিদ্রুপ হাসি হাসছে সুলাইমানের দিকে তাকিয়ে। সুলাইমানের গা জ্বলে উঠছে ওর হাসি দেখে ও এগিয়ে এসে ঘুসি মারল আয়ান কে। আয়ান ও কম কি নিজের পাল্টা আঘাত করে বলল,,” আমারে জেলের ভাত খাওয়াবি বলছিলি না? আয় দুজনে মিলে খাই।”
” শু*য়ারের বা*চ্চা তোর আজ শেষ দিন।”
” তুই আমারে শেষ করতে আসবি,আর আমি চাইয়া চাইয়া দেখুম তাই না। আয় দেখি কার শেষ দিন হয়।”
লেগে গেল দুজনের হাত্তাহাত্তি লড়াই। জেল পুলিশ তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো দুজনকে থামতে বলল
কিন্তু কেউ কথা শুনছে না রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে ফেলছে। অফিসার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল আরো দুজন কনস্টেবল পুলিশ দুজনকে ধরে থামালো। আয়ানকে একা রেখে সুলাইমান কে আলাদা রুমে দেওয়া হলো।
____________________
আজকের সকালটা তৃষ্ণার কাছে মধুর। অন্যরকম এক অনুভূতির, ভালোবাসার। গতরাতের কথা মনে হতেই লজ্জা কাঁচুমাচু করতে থাকে। ইশ কি লজ্জা, কত্ত ভালোবাসার। জায়ান ওর দিকে পিঠ করে ঘুমিয়ে আছে। ও রাতে কথা ভেবে মুখ লুকিয়ে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করছে।
স্বামীর ভালোবাসায় যে এতো সুখ থাকে ও জানতো না। এতো ভালোবাসা কেন দিল জায়ান ওকে। এখন এই মুখ জায়ান কে দেখাবে কি করে?
তৃষ্ণা উঠে শাওয়ার নিলো। আর গতকালের শাড়ি পরে নিলো। ভেজা চুল মুছল না জায়ান ওর অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে এখন এই চুলের যত্ন ওর নিতে ইচ্ছে করে না। জায়ানের যত্ন করে চুল মুছিয়ে দেওয়া, চুলে তেল দেওয়া, বেঁধে দেওয়া সেসবই অভ্যাস হয়ে গেছে। জায়ান কে ডাকতেও ইচ্ছে করছে না। কি সুন্দর নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমিয়ে আছে। কত আদুরে লাগছে। তৃষ্ণা সোফায় বসে চুল ফ্লোরে ফেলে রেখে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। ওর চুল বেয়ে পানি পরে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে তৃষ্ণার সেদিকে খেয়াল নেই। ও পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে জায়ানের ঘুমন্ত মূখটার দিকে। জায়ান ভ্রু কুঁচকে ঘুমিয়ে আছে। যেন ঘুমের মধ্যে ও কিছু কিছু গভীর চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে।
তৃষ্ণা জায়ানকে দেখছে আর ভাবছে এই মানুষটা শুধু আমার একান্তই আমার ভাবতেই অবাক লাগছে, শান্তি লাগছে।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে তৃষ্ণা গভীর ভাবনায় ঢুকে গেছে। জায়ানকে নিয়ে হাজারো কল্পনা জল্পনা করছে। এদিকে জায়ান হঠাৎ জাগ্রত হয়ে যায়। তৃষ্ণাকে বিছানায় না পেয়ে দেখে সোফায় গালে হাত নিয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে ভেজা চুল বেয়ে পানি পরে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। ও লাফ দিয়ে উঠে বসে। এই মেয়ে কি পাগল নাকি? এই ভাবে কেন ভেজা চুল ছেড়ে বসে থাকে।
জায়ান তোয়ালে এনে তৃষ্ণার চুলে রাখতেই তৃষ্ণার সব ধ্যান ভঙ্গ হয় চমকে তাকিয়ে দেখে জায়ান ওর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে চুল মুছে দিচ্ছে।
তৃষ্ণা চমকানো গলায় বলল,” আপনি এখানে কেন? ঘুমিয়ে না ছিলেন?”
” ঘুমাব কি করে? আমার একটা পাগল বউ আছে এতো দিন কম পাগলামী করত। এখন আমার ভালোবাসা পেয়ে বদ্ধ পাগল হয়ে ভেজা চুল মাথায় বসে আছে।”
” ইশ বললেই হলো! পাগল হলেও আপনার জন্য হয়েছি আপনি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছেন এখন এই চুলে আমার হাত দিয়ে ইচ্ছে করে না। এই যে আপনি যত্ন করে মুছিয়ে দিচ্ছে কত শান্তি লাগছে জানেন? আমি মুছে নিলে এই যত্ন পেতাম নাকি?”
” একদিনেই আমার বোবা পাখির মুখে তোতাপাখির মতো কথা ফুটেছে। নিজের ভালো লাগা নিজেই বলছে। আদর করলে তোমার সব সংকোচ গিয়ে মিষ্টি ভালোবাসায় পরিণত হবে জানলে তো এতো দিন বসেই থাকতাম না।”
তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
জায়ান সঙ্গে সঙ্গে তৃষ্ণাকে ঠেলে নিজে সোফায় বসে তৃষ্ণাকে টেনে কোলের উপর বসিয়ে দিলো। তৃষ্ণার পিঠ জায়ানের উন্মুক্ত বুক ঘেসে আছে।
” একি লজ্জা পাচ্ছ এখনো? এখন আর কিসের লজ্জা? সব লজ্জা তো হরণ করে ফেলেছি তাও লজ্জা আসছে কোথা থেকে মেয়ে?”
” ধ্যাত চুপ করেন দয়া করে।”
” আচ্ছা এসব কথা বাদ।”
” বাসায় যাবেন কখন?”
” আজ নাও যেতে পারি।”
” এখানেই থাকবেন?”
” তুমি চাইলে থাকব।”
“আপনার এতো বড় বাসা থাকতে ভাড়া হোটেলে থাকার দরকার কি?”
” তোমাকে কে বলেছে ভাড়া হোটেলে থাকছি?”
” তাই তো। এই হোটেল তো আর আপনার নয় যে আপনাকে ভাড়া ছাড়াই রাখবে।”
” ওরে আমার বোকা বউটা রে। এই হোটেলের মালিক তোমার হাজব্যান্ড। এটা আমার নামে দলিল করা। আমি নিজে করেছি।”
তৃষ্ণা ইয়া বড়ো চোখ করে বলল,” মিথ্যা বলছেন? এতো বড়ো হোটেল আপনার?”
” তো কি বড়োই তো থাকবে। এতো টাকা ইনকাম করতেছি এই হোটেল করা কি আমার জন্য অনেক কষ্টের নাকি। তোমার অবাক হওয়া স্বাভাবিক বিকজ তুমি তো কিছুই জানো না। আস্তে ধীরে সব জানতে পারবে। আমার সবকিছুই তো তোমার।”
তৃষ্ণা চুপ করে জায়ানের কথা শুনছিল জায়ান তৃষ্ণার ভেজা চুলে মুখ গুজে অনেক কথাই বলল। এবার তৃষ্ণাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,” খুব ভালোবাসি তোমায়।”
তৃষ্ণার কি হলো ও নিজেও বলল,” আমিও।”
জায়ান তৃষ্ণার কপালে চুমু খেলো, তৃষ্ণা চোখ বন্ধ করে ফেলল। জায়ান আবার তৃষ্ণা চোখের পাতায় অধর স্পর্শ করল তৃষ্ণা ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।
জায়ান এক হাতে তৃষ্ণার চুলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে ঘারে রেখে তৃষ্ণাকে আরেকটু কাছে এনে ঠোঁটে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো নিজের অধর দ্বারা। তৃষ্ণা জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। জায়ান তৃষ্ণাকে ছাড়তেই তৃষ্ণা উল্টো ঘুরে মুখ দুহাত দিয়ে ডেকে বসে রইল।
জায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” তুমি মুখ ডেকে বসে থাকো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
__________________________
জায়ান শাওয়ার শেষ করে এসে খাবার অর্ডার দিতে ফোন হাতে নিলো। তৃষ্ণা জায়ানের মাথার চুল মুছে দিচ্ছে জায়ান বিছানায় বসে ফোন ওপেন করল। ফোন ওপেন হতেই বাড়ি থেকে অগনিত কল মেসেজ পেল। ওর সিমে মিসকল সার্ভিস অন করা আছে এজন্য অফ থাকলেও কয়জন কল দিয়েছে জানা যায়।
এতো কল মেসেজ দেখে চমকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল। তৃষ্ণা জায়ানের পেছনে উঁচু হয়ে চুল মুছে দিচ্ছিল আচমকা দাঁড়িয়ে পরাতে তৃষ্ণা থুতনিতে ব্যথা পেল। আহ করে বসে পরল বিছানায়। জায়ান উফ সরি বলে ফোন বিছানার রেখে তৃষ্ণার থুতনি ঠলতে লাগল।
” বেশি ব্যথা পেয়েছ।”
তৃষ্ণার মুখ নোনতা লাগছে ও উঠে ব্যাসিং গিয়ে থুথু ফেলতেই রক্ত বের হলো। জায়ান ওর পেছনে পেছনে এসেছিল রক্ত দেখে ওর আত্মা কেঁপে উঠে।
” ও গড ব্লাড আসলো কি করে? দেখি কি করে ফেললাম! ফোনটা আমাদের জন্য বিপদজনক ওটা ওপেন করতেই এতো বড়ো কান্ড ঘটল। তাড়াতাড়ি চলো হসপিটালে যাই।”
জায়ান তৃষ্ণাকে টেনে বাথরুমে থেকে এনে ঠোট চেক করতে লাগল। ঠোঁটের কোনায় কেটে গেছে। জায়ানের মাথা গিয়ে ওখানেই লাগছিল নরম জায়গা তাই কেটে রক্ত বেরিয়েছে। জায়ান অস্থির হয়ে উঠছে।
তৃষ্ণা জায়ানের হাত ধরে টেনে বলল,” শান্ত হোন আমি ঠিক আছি। ওটা এমনিতেই চলে যাবে। হসপিটালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
জায়ান অপরাধের ন্যায় বলল,” সরি জান, আমার জন্য কত কষ্ট পেলে।”
” বেশি ব্যথা লাগে নাই।”
” সিউর”
” হুম।”
জায়ান তৃষ্ণার ঠোঁটে আলতো স্পর্শ করে ফোন আর করল না বাসায়। খাবার আসতেই দুজনে খেয়ে নিল। তৃষ্ণার খেতে খারাপ লাগছিল কিন্তু প্রকাশ করেনি। জায়ান এমনিতেই টেনশন করছে বললে আরো পাগলামি করবে।
জায়ানের ফোন আরো দুবার বাজলো খাওয়ায় ব্যাঘাত করে উঠল না। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফোন অফ হয়ে গেছে।
জায়ান ফোন চার্জে লাগিয়ে রেডি হতে লাগল। তৃষ্ণাকেও রেডি হতে বলল।
#চলবে….