কৃষ্ণবেণী #পর্ব_৩০ #নন্দিনী_নীলা

0
279

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩০
#নন্দিনী_নীলা

সকালে আসার কথা থাকলেও ওরা ঘুরাফেরা করে বিকেলে বাসায় এসে পৌঁছেছে। বাসায় আসতেই সাদিকুর রহমান ছেলেকে নিজের পাশে বসিয়ে সব বিস্তারিত জানাতে লাগলেন। জায়ান গম্ভীর মুখশ্রী করে বসে সব কথা শুনল।
” আয়ান কে থানা থেকে বের করার ব্যবস্থা করো জায়ান।”
জায়ান উঠে দাঁড়াল। সাদিকুর রহমান বললেন,,”কিছু বললে না।”
” বললেই থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব নয়। কয়েকদিন যাক।”
” তোমার মুখে এই কথা মানাচ্ছে না।”
” আমি খুব ক্লান্ত। আপনি বসে থাকেন।”
জায়ান গটগট করে উপর চলে গেল। তিনি তাকিয়ে র‌ইলেন জায়ানের দিকে জায়ান কিছুই করবে না উনার বুঝা হয়ে গেছে। নিজেকেই করতে হবে কিছু।
_________________________

উর্মি আজ নিজ থেকেই আরিফ কে কল করল। কেন করল ও জানে না। সেদিনের পর লোকটা আর আসে নি এ বাসায়। ধন্যবাদ তো পাওনা উনার।
আরিফ কল রিসিভ করতেই উর্মি বলল,” হ্যালো,কেমন আছেন?”
আরিফ উর্মির কল দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে।
” আপনি হঠাৎ আমাকে কল করলেন?”
” আপনার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেছি। একটা লম্পটের জন্য।‌তাই সরি ও ধন্যবাদ বলতেই কল করা। ভেবেছিলাম আপনিই কল করবেন কিন্তু করেননি তাই নিজেই করলাম।”
আরিফ বলল,” আপনাকে কল করতাম নিজের কেউ ভেবে। কিন্তু আপনি তো আমার কেউ হবেন না। জোর করে ও করতে চাই না তাই থেমে গেছে কল।”
” আপনি চাইলে আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।”
” সম্ভব না। আমি যাকে ব‌উ করার স্বপ্ন দেখেছিলাম তাকে বন্ধু করে রাখতে পারব না। ক্ষমা করবেন।”
আরিফের কথায় উর্মি খুব লজ্জা পেল। ও আচ্ছা বলে কল কেটে দিল।
সঙ্গে সঙ্গে আবার আরিফ কল করল,” কষ্ট পেলেন?”
উর্মি মিথ্যা বলল,” না তো।”
” মিথ্যে বলছেন!”
” নাহ।”
” আপনি কষ্ট পেয়েছেন আমি বুঝতে পারছি।”
” আচ্ছা পেয়েছি।”
” হাহাহা আমি কে যে আমার কথায় কষ্ট পেলেন?”
” কেউ না তবুও কষ্ট পেলাম।”
” আচ্ছা ভালো থাকেন। বিজি আছি পরে কল দেব।”
” প্রয়োজন নাই।”
” সেটা দেখা যাবে। আল্লাহ হাফেজ।”
পরে কল দিবে শুনে কেন জানি উর্মির ভালো লাগছে।
___________________________

উষসীর ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে উষসীর বাবা। ছেলেকে বের করতে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে অফিসার কে। ছেলে তার বের হয়ে ও রাগী চোখে তাকাচ্ছিলো অফিসারের দিকে। অফিসার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ছিল।
আয়ানের বাবা জামিনের জন্য এদিক ওদিক দৌড় পারছে। কিন্তু একদিন না গেলে জামিন সম্ভব না বলছে উকিলরা।

তৃষ্ণা উর্মির রুমে এসে দেখল উর্মির কিছু নিয়ে চিন্তিত হয়ে বসে আছে।
তৃষ্ণা উর্মির পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বাসায় এসেই উর্মির কথা সবার আগে মনে এসেছে।
” এখন কেমন আছেন আপু?”
” আমি ভালো আছি। তুমি তো খুব ভালো আছো ভাইয়ার সাথে ঘুরাঘুরি করে এলে।”
তৃষ্ণা লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো। উর্মি তৃষ্ণা কে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বলল,” বলো না কি কি করলে?”
তৃষ্ণা বলল,” তেমন কিছুই না আপু এমনিতেই ঘুরাঘুরি।”
” তোমাকে দেখেতো মনে হচ্ছে না শুধু ঘুরাঘুরি হয়েছে।”
” আপু বাদ দেন না লজ্জা লাগছে।”
” লজ্জার কিছু কি ঘটেছে বলো না ভাবি। আমি কি এবার ফুপি হয়ে যাব?”
” জানি না।” লজ্জায় আর থাকতে পারল না তৃষ্ণা বেরিয়ে এলো। হাঁটতে হাঁটতে আয়ানের রুমের সামনে এলো বুকটা কেঁপে উঠল উষসীর জন্য। ইশ মানুষটা আর নেই ভাবতেই পারছে না। মুখটা মলিন করে তৃষ্ণা চলে এলো। লিলির সাথে কথা বলে নিজের রুমে এসে দেখল জায়ান বসে আছে। ওকে দেখেই বলল,” কোথায় ছিলে?”
” সবার সাথে দেখা করতে গেছিলাম।”
” এতো দেখা করার কি আছে? যেন একবছর পর আসলে।”
” না মানে আসলে….
” তুমি আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছ তাই সময় পাস করতে গেছিলে আমি বুঝি না ভেবেছ।”
তৃষ্ণা সত্যি মাথা নিচু করে শাড়ির আঁচল আঙুলে পেছাতে লাগল। জায়ান তৃষ্ণাকে বলল,” আমার পাশে এসে বসো।”
” না ঠিক আছে, আমি আছি এভাবেই ভালো।”
” আসো বলছি।”
তৃষ্ণা গুটিগুটি পায়ে জায়ানের পাশে বসল। জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে বলল,” একটা ভালো খবর‌ আছে তোমার জন্য।”
তৃষ্ণা কৌতুহল নিয়ে চেয়ে আছে।
জায়ান আবার বলল,” আয়ানকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে থানায়। উষসীর মৃত্যুর জন্য।”
তৃষ্ণা চোখ বড়ো করে বলল,” আপনার ভাই কি সত্যি ভাবি কে খুন করেছে?”
” প্রমাণ ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারব না।”
” প্রমাণ কিভাবে পাবেন? কাজটা করলেও কি প্রমাণ রেখে দিছে?”
” অপরাধী অপরাধ যতোই নিখুঁত ভাবে করুক না কেন? কিছু তো প্রমাণ থেকেই যায়। সময়ের অপেক্ষা কিন্তু এবার আয়ান কে বাবা বের করে আনবেই। কারণ আমি প্রমাণ পাই নি কোন। সেখানে পুলিশ কি করে পাবে?”
” আপনি তো নিশ্চিত মনে হচ্ছে শুধু প্রমাণের অপেক্ষায় আছেন।”
” আমি নিশ্চিত তার যথার্থ কারণ আছে। কিন্তু আয়ান রাগের মাথায় মারাত্মক ভুল করেছে। আজ না বুঝলেও বুঝার সময় আসছে।”
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলল,” আপনি হঠাৎ এতো কথা আমাকে কেন বলছেন? এসব নিয়ে তো কখনোই আমার সাথে আলোচনা করতেন না।”
” আমার ছোটো ব‌উটা তো বড়ো হয়ে যাচ্ছে। আবার বোকা থেকে তাকে চালাক চতুর বানাতে সবকিছুই জানতে হবে।”
জায়ান তৃষ্ণার মন খারাপ বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
তৃষ্ণা বলল,” ভাবির কথা মনে পরছে। উনি আর নেই ভাবতেই পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।”
” আরেকটা সুখবর আছে!”
” কি?”
” আগামী পরশু তোমাদের বাড়ি যেতে পারি আমরা!”
তৃষ্ণা বাড়ি যাবার কথা শুনেই উত্তেজিত গলায় বলল,” সত্যি বলছেন?”
” হুম আমার ব‌উয়ের মুখে হাসি ফোটাতে আমি সব করতে পারি।”
” আমি ভেবেছিলাম সত্যি আর যাবেন না ওখানে নিয়ে আমাকে।”
” আমি তো শুনেছি সুজন ব‌উকে খুন‌ করে পালিয়ে গেছিল। বর্তমানে পুলিশের কাছে থেকে বাঁচতে পলাতক। তার জন্য তোমায় আমি এত বড় শাস্তি দেব কেন? তখন তো রাগ করে বলেছিলাম।”
খুশিতে তৃষ্ণার চোখ ছলছল করে উঠল। ও জায়ানের বাহুতে মাথা রেখে বলল,” থ্যাংকু।”
” তুমি তো দেখি ইংরেজি উল্টোপাল্টা শিখতেছ। সঠিক করে শিখতে হবে না হলে স্কুলে এডমিশন নিতে পারবে না।”
” আমার আর স্কুলে পড়ে কি হবে?”
” গ্রামে থেকে এসেই তোমায় স্কুলে ভর্তি করব।”
” আমি একা স্কুলে যাব কি করে?” ভয়ার্ত গলায় বলল তৃষ্ণা।
“সিকিউরিটি গার্ড যাবে। আমিও যাব মাঝে মাঝে পৌছে দিতে। ভয় পাচ্ছ কেন?”
” আপনি থাকলে আমি কিছুতেই ভয় পাই না।”
বলেই তৃষ্ণা জায়ানের বাহুতে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করল। জায়ান ওর সাহসের একমাত্র জায়গা।
__________________________

দুদিন পর গ্রামে যাওয়ার কথা থাকলেও ওরা গ্রামে যেতে পারল চারদিনের পর। জায়ান কোন একটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছিল।
দেরি হোক তবুও তৃষ্ণার যাওয়াটা হচ্ছে এতেই তৃষ্ণার আনন্দ ধরে না। এতো দিন পর বাড়ি যাচ্ছে ওর যে মনটা কতটা ফুরফুরে হয়ে আছে ও ছাড়া কেউ জানে না।
জায়ান তৃষ্ণার উজ্জ্বল হাসিখুশি মুখশ্রী দেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হাসি মুখটা দেখার জন্য ও সমস্ত কাজ ফেলে গ্রামে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃষ্ণা দের গ্রামে গাড়ি ঢুকতেই তৃষ্ণা জায়ান কে নিয়ে গাড়িতে নেমে গেল।
” এটা কি হলো তৃষ্ণা বাসা তো আরো দূরে এতো আগেই কেন নেমে গেলে।”
” গাড়ি চড়ে যেতে ভালো লাগছিল না। কতদিন গ্রামের হা‌ওয়া বাতাস পাই না। খোলা পরিবেশ দেখি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল জানেন আপনাদের ওর ইটের চার দেয়ালের ভেতর থেকে। আসুন আমরা হেঁটে যাই এই পথটুকু। অনেক ভালো লাগবে দেইখেন!”
” তৃষ্ণা তোমার কি শহরে একটুও ভালো লাগে নাই?”
তৃষ্ণা জায়ানের মুখটার দিকে তাকিয়ে বলল,” লেগেছে। আপনার সাথে থাকলে ভালো লাগে। কিন্তু আপনি যখন থাকেন না উর্মি আপু ও ভার্সিটিতে থাকে, লিলি কাজ করে তখন অনেক খারাপ লাগে একা লাগে।”
” তখন কি করো?”
” তখন আপনার কথা ভাবি। বাড়ির কথা ভাবি, মা, বাবা, বকুলের কথা ভাবি‌। সবাইকে অনেক মনে করি।”
” তৃষ্ণা আমি জানি তোমার খারাপ লাগে। এতো খারাপ লাগার পর ও বলতে পারব না। আমি এখানে তোমায় রেখে যাব তোমার খুশির জন্য। তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারব না। যখন কাজে ব্যস্ত থাকি তখন আমি ভাবি কখন বাড়ি যাব আর তোমার দেখা পাব। আমি একটু বেশিই স্বার্থপর।”
” আমি আপনাকে ছাড়া থাকতেও চাই না। সবাইকে ভালোবাসি বলেই যে আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারব তেমনটা নয়। আমি আপনি ছাড়া একটু খানি ও ভালো থাকব না।”
দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো বাসায়। তৃষ্ণার সমস্যা না হলেও জায়ানের সমস্যা হয়েছে। উঁচু নিচু রাস্তা কতবার যে হোঁচট খেয়েছে হিসেব নাই।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here