#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩১(১)
#নন্দিনী_নীলা
জায়ান কাঠের চেয়ারে বসে আছে ওর সামনে ছোট মোড়ায় বসে আছে তৃষ্ণা। জায়ান পায়ে উঁচু নিচুতে হোঁচট খেয়ে ফুলিয়ে ফেলেছে।
তৃষ্ণা জায়ানের পা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখেছে। ফর্সা পা লাল হয়ে ফুলে গেছে। তৃষ্ণা অসহায় মুখশ্রী করে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে। জায়ান বলছে বারবার করে,” আমি ঠিক আছি তৃষ্ণা। অযথা এতো টেনশন করছ।”
তৃষ্ণা জায়ানের পা গামছা দিয়ে মুছে গরম পানির গামলা নিয়ে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরে তৃষ্ণার মা মেয়ের জামাইয়ের জন্য খাবার তৈরি করছে। হঠাৎ করে মেয়ে মেয়ের জামাই এসেছে খুশিতে ওর কি খাওয়াবে সেই উত্তেজনায় দিশেহারা অবস্থা। এদিকে বকুল বাড়ি নাই। দুইদিন আগেই বকুল ওর মামা বাড়ি গেছে। তৃষ্ণা মায়ের পাশে কাঠের ছোট পিড়িতে বসে বলল,” মা বকুল কবে আসবে?”
” বলছিল তো আজকেই দেখি না আসলে তোর বাপ রে পাঠামু নি কাল।”
” ভাবি কই?”
” ওরা তো শহরে গেছে। এক মাস হলো।”
” টাকা পাইল কই?”
” কার সাথে জানি গেছে। বউ নিয়ে বাসা ভাড়াও করছে, কিসের জানি ব্যবসা শুরু করছে।”
” তোমাদের জন্য কিছু টাকা পাঠায় না?”
” বেশি নাকি ইনকাম হয় না। বলছে পাঠাইব।”
তৃষ্ণা বসে গোল আলু কেটে দিল। পেঁয়াজ কুচি করে বাইরে এসে দেখল জায়ান ফোনে কথা বলছে। কিন্তু কথা মনে হয় শুনতে পাচ্ছে না শুধু হ্যালো, হ্যালো করছে।
তৃষ্ণাকে দেখেই বলল,” তোমাদের বাড়ি এতো নেটওয়ার্কের প্রবলেম দেখো একটা কথাও বুঝতে পারছি না।”
” শশুর বাড়ি আসছেন এখন ফোনের কি দরকার? রুমে আসেন।”
জায়ান বসা থেকে উঠে তৃষ্ণার পেছনে পেছনে এলো রুমে।
” ঠিক বলেছ ফোনের কি দরকার! এখন তো শুধু বউকে দরকার।”
তৃষ্ণা বলল,” নাহ, এখন আপনার বিশ্রাম দরকার।”
” ওই একই হলো তুমি ছাড়া আমি রেস্ট নিতে পারি নাকি।”
জায়ান কোর্ট খুলে শার্টের ইন খুলে বিছানায় বসল। ” আপনি বিশ্রাম নেন আমি বাইরে আছি। কোন দরকার হলেই ডাকবেন।”
তৃষ্ণা ঘুরে চলে আসতে যাবে জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে আটকে দিয়ে বলল,” বাইরে কি করবা আমার সাথে তুমি ও রেস্ট করো।”
” মানে?”
” শশুর বাড়ি আসছি, একটু প্রেম করতে তুমি পালাই পালাই বলে বাইরে যাচ্ছ কেন? একসাথে এসেছি তাই রেস্ট করলে দুজনের করা উচিত ক্লান্ত দুজনেই।”
“আমি মায়ের সাথে বসে থাকি।”
জায়ান কি যেন ভেবে বলল,” আচ্ছা যাও। আমি তাহলে ঘুমাই।”
তৃষ্ণা চলে আসবে জায়ান আবার টেনে ধরল। তৃষ্ণা বিরক্তিকর চোখে তাকালো। জায়ান বলল,” একা ভালো লাগছে না।”
তৃষ্ণা ঘুরে এসে জায়ান কে শুতে বলে নিজেও তার সাথে শুয়ে পরল। জায়ান তৃষ্ণার কপালে চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তৃষ্ণা জায়ানের বুকে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে শার্টের উপর দিয়েই।
জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে ঠোঁটে গাঢ় স্পর্শ দিয়ে বলে,” আমাকে উত্তেজিত করছ? পরে কিন্তু নিজেই বাঁচতে পারবে না।”
তৃষ্ণা হাত গুটিয়ে জায়ানের বুকে মাথা রেখে আছে। জায়ান হেসে তৃষ্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। দুজনেই ঘুমিয়ে পরে। তৃষ্ণা ভেবেছিল জায়ান ঘুমিয়ে পরলে ও উঠে যাবে কিন্তু ও নিজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
তৃষ্ণার ঘুম ভাঙে বকুলের চিৎকার শুনে। বকুল বাড়ি এসেই যখন শুনেছে বুবু আর দুলাভাই এসেছে ও খুশিতে দৌড়ে বোনের দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করেছে।
তৃষ্ণা লাফ দিয়ে উঠে বসে শোয়া থেকে। জায়ান ঘুমের ঘোরে উল্টো কাত হয়ে শুয়ে পরে। তৃষ্ণা উঠে দরজা খুলতেই বকুলের হাসি মুখশ্রী দেখে।
বকুল ঝাঁপিয়ে পরে বুবুর বুকে।
” বুবু তুমি আইছ?” তৃষ্ণা কে ছেড়ে দিয়ে বলল।
তৃষ্ণা দরজায় চাপিয়ে বোনকে নিয়ে বাইরে এসে বলল,,”তুই কখন আসলি?”
” এখনি এসে শুনলাম তুমি আইছ।”
দুজনেই কথা বলতে বলতে উঠানে এসে দাঁড়াল।
__________________________
অবশেষে আয়ান কে ছাড়াতে সক্ষম হলো সাদিকুর রহমান। জামিন হয়েছে কিন্তু মামলা চলতে থাকবে। এখনো যথার্থ প্রমাণ তাদের কাছে নাই এজন্য আয়ান কে ছাড়তে হয়েছে। মামলা চলবে প্রমাণ হাতে পেলে আয়ান কে আবার জেলে যেতে হবে।
বাড়ি এসে আয়ান শুনতে পায় জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে তৃষ্ণা দের গ্রামে বেড়াতে গেছে। ও রাগে হিংসায় জ্বলে উঠে।
মনে মনে ভাবছে, জায়ান তো খুশিতে বউ নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। ও জেলে গেছে এই কারণে সবচেয়ে খুশি তো ওই হয়েছে।”
জেসমিন বেগম আয়ান কে গ্লাস ভর্তি পানি দিল। আয়ান হাতে নিল ঠিকই কিন্তু তা খেলো না ফ্লোরে ছুঁড়ে মারল। জেসমিন বেগম চমকে উঠলেন। ছেলের রাগের কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু প্রকাশ করলেন না। কাজের মেয়েকে ডেকে ফ্লোর পরিস্কার করতে বলে চলে গেলেন।
___________________________
উর্মি আরিফের সামনে বসে আছে। আরিফ ভাবলেশহীন ভাবে কফিতে চুমুক দিচ্ছে।
” মিস উর্মি,”
উর্মি চমকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,” হ্যা বলুন।”
” আমি কি বলব? বলবেন তো আপনি। তা কি জন্যে এতো জরুরি তলব করে ডাকলেন?”
উর্মি শুকিয়ে আসা ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,” আসলে আমি আপনার থেকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে আসছি।”
” হ্যা বলুন।”
” না মানে কীভাবে নিবেন কথাটা আমি সংকোচবোধ করছি প্রচুর পরিমাণে।”
” তাহলে কি কথাটা বলবেন না?”
” না বলব একটু গুছিয়ে নিচ্ছি।”
” বিগত আধা ঘন্টা ধরে চুপ করেই বসে আছেন! আর কত সময় নিয়ে গুছিয়ে নিবেন।”
” সরি আপনার সময় নষ্ট করছি তার জন্য। একটু সময় দিন।”
উর্মি মাথা নিচু একটু সময় নিয়ে বলল,” মিহির কে সেদিন তো আপনি খুব মেরেছিলেন।”
” হুম মারছিলাম কেন কষ্ট লেগেছিল আপনার বয়ফ্রেন্ড কে মেরেছিলাম বলে?”
উর্মি লজ্জায় কাঁচুমাচু করে বলল,” ও আমার বয়ফ্রেন্ড না। কখনো ছিল ও না।”
” আচ্ছা তা কি বলছিলেন বলুন!”
” তারপর ওকে কি করেছেন?”
” খোঁজ নিতে আসছেন? সে কি অবস্থায় আছে? তাকে আবার আমি আর আপনার ভাই মিলে মেরে ফেলেছি নাকি শুনতে তাইনা?”
” আপনি ভুল ভাবছেন ও মরে গেলেও আমার কষ্ট লাগবে না। ও আমার অনুভূতি নিয়ে যে খেলা দেখিয়েছে আমি ওকে ঘৃণা করি।”
” তাহলে জানতে চাইছেন কেন?”
” ও টাকার জন্য এসব করেছে আমি ওর মুখে টাকা ছুড়ে মারতে চাই। নিজের হাতে আমার অনুভূতি আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলার শাস্তি দিতে চাই।”
” তা ওর সাথে দেখা করতে চান। সেটা তো জায়ান কে বললেই হতো।”
” আমি ভাইয়াকে এসব বলার সাহস পাই নি। তাই আপনাকে বললাম।”
” ভাইকে বলার চেয়ে আমাকে বলা সহজ মনে হয়েছে! আমি কেন আপনাকে সাহায্য করব কে আপনি আমার?”
উর্মি আরিফের চোখে চোখ মিলিয়ে বলল,” আমি আপনার হবু বউ। আমাকে সাহায্য করা আপনার দায়িত্ব।”
আরিফ বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আছে উর্মির দিকে।
উর্মি লজ্জায় অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,” আমি আসছি আগামীকাল মিহিরের সাথে আমার দেখা করিয়ে দেবেন।”
বলেই উঠে দাঁড়াল। আরিফ নিজেও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি পৌঁছে দেব?”
” আমার সাথে গাড়ি আছে। প্রয়োজন হবে না।”
” হবু বউকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া ও দায়িত্বের মধ্যেই পরে। তাই ড্রাইভার কে চলে যেতে বলুন আমি আছি আপনার জন্য।”
_________________________
জায়ান ঘুম থেকে উঠে গম্ভীর মুখশ্রী করে বসে আছে বিছানায়। তৃষ্ণা রুমে এসে জায়ান কে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,” কি হয়েছে আপনার?”
তৃষ্ণার প্রশ্নে জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে বলল,” তুমি কোথায় ছিলে?”
” বাইরে!”
” কেন?”
” বকুল এসেছে। ওর সাথে ছিলাম। ও আপনার সাথে কথা বলার জন্য কখন থেকে ঘুরঘুর করছে।”
” আমাকে আর এভাবে একা রেখে উঠে যাবে না।”
জায়ান উঠে দাঁড়াল। তৃষ্ণা মগ ভর্তি পানি এনে দিল। জায়ান হাত মুখ ধুয়ে উঠানে বসল। বকুল এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,” দুলাভাই ভালো আছেন?”
জায়ান আর বকুল কথা বলছে। তৃষ্ণার বাবা ক্ষেত থেকে কাঁদা মাটির শরীরে বাসায় এসে মেয়ের জামাইকে বসে থাকতে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে খোঁজখবর নিতে লাগে। কল পাড়ে গিয়ে গোসল করে এসে জামাইয়ের পাশে বসে আলাপ শুরু করল।
রাতে খাবার খেয়ে জায়ান নেটওয়ার্কের জন্য রাস্তায় চলে এসেছে একাই। তৃষ্ণা মায়ের সাথে খাবার গুছিয়ে নিচ্ছে। বকুল উঠানে দাঁড়িয়ে জায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দৌড়ে তৃষ্ণার কাছে গিয়ে বলল,” বুবু দুলাভাই ওই দিকে গেছে একাই।”
” উনার ফোনে নাকি কি হয়েছে তাই গেছে যাক।”
” তুমি দুলাভাইরে ডাক দাও। চোর যদি দুলাভাইয়ের ফোন নিয়ে যায়।”
তৃষ্ণা বাইরে এলো। তৃষ্ণার বাবা বলল,” তুই যাইস না আমি ডাইকা নিয়া আহি। জামাই বাবারে।”
দুশ্চিন্তায় তৃষ্ণা ছটফট করছে। ওদের এলাকা চোরের কারবার। এই এলাকায় দিন দুপুরেই চুরি হয় সেখানে এখন রাত ভালোই হয়েছে।
জায়ান অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছে। নেটওয়ার্ক ও পেয়েছে ও আরিফ কে কল দিল। আরিফ অনেক কল দিয়েছিল। আরিফের থেকে জানতে পারল উর্মির সিদ্ধান্ত। জায়ান মিহিরের হসপিটালের ঠিকানা দিল। ওখানে উর্মি কে নিয়ে যেতে বলল। ফোন কেটে দেখল ভালোই দূরে চলে আসছে পেছনে ঘুরে ফিরে আসতে যাবে তখনি কারো সাথে জোরে একটা ধাক্কা খেল। লোকটা ওর শক্তপোক্ত শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে গেছে। জায়ান ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে সামনে তার দিকে ধরল।
#চলবে…..