তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৭ #মেহরিন_রিম

0
497

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৭
#মেহরিন_রিম
_তুই সিওর পূর্ণ আসবে? দেখ ও কিন্তু আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি।

ড্রাইভ করার মাঝেই সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আদৃত। সায়ান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_১১০% সিওর, ও যখন একবার বলেছে আসবে তখন আসবেই।

আদৃত আর কিছু না বলে ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিলো। আদৃত,সায়ান,পূর্ণ তিনজনই কলেজ ফ্রেন্ড। পূর্ণ ওদের থেকে এক বছরের সিনিয়র হলেও তাদের আচরণে কেউ সেটা বুঝতে পারবে না।
আদৃত ভার্সিটি লাইফ থেকেই গানবাজনা করছে,অনার্স শেষ করার পর বাবার বিজনেস এও জয়েন্ট করে। সায়ানের চাকড়ি করাটা কখনই পছন্দ ছিল না তাই সে বাড়িতে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে।
ছোটবেলা থেকে পূর্নর ইচ্ছে ডিটেকটিভ হওয়ার, সেই কাজই করছে সে। নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্যই মাঝে মধ্যে তাকে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতে হয়, যা সে এবং তার এসিস্টেন্টরা ছাড়া আর কেউ জানেনা বললেই চলে। এমনই আজ সে কোন দেশ থেকে আসছে সেটাও জানা নেই কারো।

এয়ারপোর্ট এ এসে অপেক্ষা করছে আদৃত,সায়ান। আদৃত এর একটা কল আসায় সে উল্টো দিকে ঘুড়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো। আর সায়ান বরাবরের মতোই ফোনের মাঝে ডুবে রইলো। ইদানিং তাকে একটু বেশি ই ফোনের সাথে দেখা যাচ্ছে, বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি আদৃত।

_মুঝে ওয়েলকাম নেহি কারোগে কেয়া?

পূর্ণর কণ্ঠস্বর শুনে সায়ান দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। আদৃত ফোন কেটে দিয়ে পূর্নর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। পূর্ন ও সায়ানকে জড়িয়ে ধরে আদৃত এর দিকে তাকায়। তারপর নিজে থেকে গিয়ে আদৃত কে জড়িয়ে ধরে বলে,
_হোয়াটস আপ ব্রো?

_তুই বল।

পূর্ন আদৃত এর কাধে হাত রেখে বলে,
_চলছে বেশ ভালোই।

সায়ান এবার পূর্নর সামনে এসে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
_তা মামা, কোন কোন দেশে ঘুরলা? নিশ্চই অনেক ধরনের মেয়ে দেখছোস, বল এবার তোর বিয়া খাইতাছি কবে?

পূর্ন একনজর আদৃত এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ন কিছু বললো না, আদৃত দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,
_কথা পড়ে হবে,আগে বাসায় চল।
পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কী?তুই আমার সাথে যাবি তো?

_হ্যা আজকে এখানেই থাকবো, কাল একবার বাড়িতে গিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করে আসবো।

সবাই এবার গাড়িতে গিয়ে বসলো। সায়ান মনের আনন্দে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো,এতদিন পর বন্ধুকে পেয়েছে।
সায়ান বরাবরেই অনেক হাসিখুশি মানুষ,বন্ধুমহল সে একাই মাতিয়ে রাখতে পারে। তবে পূর্ন আর আদৃত এর মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে, কেউই খুব বেশি কথা বলেনা।

____
_এই শাড়ি পড়ে নাচতে গিয়ে যদি আমি পড়ে যাই? পড়ে গিয়ে যদি আমার পা ভেঙে যায়? তারপর যদি আমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়? আমি যদি কোনো পড়াশোনা না করতে পারি? তখন কিভাবে পরীক্ষা দিবো বলতো!

অতি চিন্তিত সুরে কথাটা বললো ইশা। ফাইজা মুচকি হেসে তার সামনে বসে বললো,
_এমনভাবে বলছিস যেন আগে কখনো শাড়ি পড়ে নাচ করিস নি তুই?

_ব্যাপার টা তেমন না। আসলে আমি অলওয়েজ একটু অ্যাডভানস চিন্তা করি তো তাই আরকি।

ইশার কথায় সে নিজে এবং ফাইজা দুজনেই হাসতে লাগলো। এমন সময় নিচ থেকে রুকসানা পারভিন রাগী সুরে বললেন,
_তোরা কী সারাদিন ছাঁদেই থাকবি? তাহলে আমি আর কাল থেকে নাস্তাই বানাবো না।

_এইরে ইশা,ছোট আম্মু সেই খেপেছে।

_চলো চলো নিচে যাই।

কথাটা বলেই ফাইজা আর ইশা দ্রুত নিচে চলে যায়। ফাইজা রুকসানার এমন আকস্মিক রাগের কারণ বুঝতে না পেরে তার কাছে গিয়ে বলে,
_কি হলো বলতো ছোট আম্মু? ছোট আব্বু কি আবারো আসার ডেট পিছিয়েছে নাকি?

রুকসানা হাতের চামচ টা ঠাস করে টেবিলে রেখে বললেন,
_ওনার কথা একদম বলবিনা আমার সামনে। সারাজীবন খালি কাজই করে গেলেন উনি,পরিবার বলতে যে কিছু আছে ওনার এটা তো উনি ভুলেই গেছেন।

ফাইজা পিছন রুকসানার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
_আহারে,খুব মিস করছো বুঝি ছোট আব্বুকে? থাক আর করোনা,ছোট আব্বুও নিশ্চই সবাইকে মিস করছে কিন্তু কাজের প্রেশারে আসতে পারছে না। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বরং ছোট আব্বুকে ফোন করে বলবো যতই কাজ থাকুক না কেন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসতে। এবার খুশি?

_আর খুশি, যাক বাদ দে। তুই বল, তোর আম্মু আব্বু যএ তোর বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে জানিস?

ফাইজা রুকসানার গলা ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে তার দিকে তাকালো। রুকসানা নিজের কাজ করতে করতে বললেন,
_আমি যদিই বলেছি,এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য আবার পাত্র দেখতে হয় নাকি? তারা নিজেরাই পছন্দ করে আনবে, তোর তেমন কোনো পছন্দ থাকলে বলতে পারিস আমাকে। আমি তোর আম্মুকে ঠিক বুঝিয়ে নিতে পারবো।

ফাইজা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
_ন না,আমার তেমন কিছুই নেই। কিন্তু তুমি প্লিজ আম্মু আব্বুকে বলো,আমি এখন ই বিয়ে করতে চাইনা।

_আচ্ছা আচ্ছা তা নাহয় বলবো। কিন্তু…

আর কিছু বলতে পারলেন না রুকসানা,তার আগেই ফাইজা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। রুকসানাও আর মাথা ঘামালেন না, ভাবলেন হয়তোবা লজ্জা পেয়েছে তাই পালিয়ে গেলো।

___
_ওই তুই সারাদিন ফোনের মধ্যে ঢুকে কি করছিস বল তো? দেখি তোর ফোনটা দে।
কথাটা বলে সায়ান এর হাত থেকে টান দিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলো আদৃত। তারপর ফোনটা দেখে হা করে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো,আদৃত কে চুপ করে থাকতে দেখে পূর্ন ওর হাত থেকে ফোনটা নিলো। এবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_এঞ্জেল মিম..

কথাটা বলে দুজন একসঙ্গে হাসতে লাগলো। সায়ান কিছুটা লজ্জা পেয়ে ফোনটা এক টানে নিয়ে নিলো। পূর্ন হাসতে হাসতে বলল,
_তুই আর ঠিক হলিনা সায়ান। এই দিনে এসেও সেই আদিকালের জাতীয় আইডির সাথে চ্যাট করছিস? এই ব্যাটা,তুই জানোস এটা ছেলে নাকি মেয়ে?

_যাই হোক না কেনো,দুইটা মিষ্টি মিষ্টি কথা যে বলে এটাই অনেক। একটা তো গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করে দিতে পারলিনা, বন্ধু নামের কলঙ্ক হয়ে আবার মজা নিতে আসছে হাহ।

আদৃত ব্যালকনির দিকে যেতে যেতে বলল,
_তুই থাক তোর এঞ্জেল মিম কে নিয়ে, দুই দিন পর আবার ম*রা কান্না কাঁদতে আসিস না তাহলেই হবে।

আদৃত ব্যালকনি তে যাওয়ার পর পূর্ন দু হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আদৃত মগটা হাতে নিতেই পূর্ন জিজ্ঞেস করে,
_তা মিস্টার আদৃত মেহরাজ, বিয়ে করছেন না কেন? এত মেয়ে যে আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।

আদৃত বিরক্তিসূচক চোখে তাকিয়ে কফিতে সিপ দিয়ে বললো,
_তুই আবার কবে থেকে সায়ান এর মতো প্রশ্ন করা শুরু করলি?

পূর্ন সামান্য হাসলো। আদৃত পূর্নর দিকে তাকিয়ে বললো,
_তুই বিয়ে করছিস না কেন?

_উম,পছন্দ হচ্ছে না।

আদৃত পূর্নর দিকে ঘুরে বলল,
_পছন্দ হচ্ছে না নাকি পছন্দ করতে চাচ্ছিস না?

#চলবে

[একটু তাড়াহুড়ো করেই লিখেছি তাই রিচেক করতে পারিনি। ভুল-ত্রুটির জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here