তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৮ #মেহরিন_রিম

0
300

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৮
#মেহরিন_রিম

_জানি উত্তর দিবিনা। সত্যি করে একটা কথা বল তো, ফাইজা কে তুই ভালোবাসিস না?

পূর্ন কেবলই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আদৃত তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পূর্ন বলে উঠলো,
_বাস্তবতা এত সহজ নয় আদি।

_কিন্তু তুইতো আরো বেশি কঠিন বানিয়েছিস। মেয়েটা তো কোন ভুল করেনি, তুই ওকে এতটা কষ্ট না দিলেও পারতি।

পূর্ন আদৃত এর দিকে তাকিয়ে ওর কাধে হাত দিয়ে সামান্য হেসে বলল,
_ভালোর জন্য হলেও মাঝেমধ্যে কাউকে কষ্ট দিতে হয়। নিজে কখনো কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারবি।

কথাটা বলেই পূর্ন ঘরে চলে গেল। আদৃত পূর্নর বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলো। হঠাৎ করেই যেন সকালের সেই মেয়েটার কথা মাথায় এলো আদৃত এর। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,
_কি হচ্ছে আমার সঙ্গে এসব? কেন বারবার সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে আমার?

কফির মগটা পাশে রেখে পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট টা বের করলো আদৃত। সিগারেট এর ধোঁয়া ছাড়তেই তার অবাধ্য মনে আবারো চিন্তা এলো,
_মেয়েটা কি রোজ ছাঁদে আসে?

____
দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যাবৎ দুরবিন নিয়ে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত। কোন বাড়ির ছাঁদে যে মেয়েটাকে দেখেছিল তাও ঠিক মনে করতে পারছেনা। তাই একই দিকে নজর রাখছে, যদি সেই মেয়েটি আসে। নিজের এরূপ কাজে আদৃত ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে, একটা মেয়েকে দেখার জন্য তার মন এতটা উতলা হয়ে উঠছে কেন? বারবার নিজেকে আটকানো চেষ্টা করেও পারছে না, যেখানে মেয়েটার মুখ অবধি দেখেনি সে।

আরো দশ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর আদৃত বুঝতে পারে হয়তোবা আজ আর মেয়েটি আসবেনা ছাঁদে। অত:পর মেয়েটির দেখা না পেয়েই নিজের ফ্লাটে চলে আসে সে।

পূর্ন সকাল সকাল ই গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে,আর সায়ান ও নিজের বাড়িতে চলে গেছে। আদৃত এর বাসায় যে মহিলা কাজ করে তিনিও চলে এসেছেন, আদৃত ঢাকাতে আসার পর থেকেই তিনি এখানে কাজ করছেন। আদৃত তার কাছে ফ্লাটের চাবিও দিয়ে রেখেছে, কেননা অনেক সময়ই আদৃত বাসায় থাকে না। আন্টি নিজের মতো এসে সব কাজ করে দিয়ে যায়।

আদৃত ফ্লাটে এসে আগে শাওয়ার নিয়ে নেয়। তারপর রেডি হয়ে অফিস এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

___
_কতবার বলবো আম্মু, আমার ডিম খেতে ভালো লাগেনা।
ডাইনিং টেবিলে বসে মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলল ইশা। রুকসানা পারভিন খুন্তি হাতে নিয়ে তার সামনে এসে বললেন,
_একদম বাচ্চাদের মতো খাওয়া নিয়ে টালবাহানা করবিনা ইশা।

ইশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
_তুমি কি চাও আমি ডিম খেয়ে পরীক্ষায় ও ডিম নিয়ে আসি?

_পড়াশোনা না করলে এমনিতেও ডিম ই পাবি। এখন চুপচাপ খেয়ে নে,নাহলে…

_রাগ করো কেন,খাচ্ছি তো আমি…

কথাটা বলেই মুখ গোমড়া করে খেতে লাগলো ইশা। খাওয়া শেষে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
_আম্মু,ফাইজা আপু চলে গেছে?

_হ্যা,ওর নাকি ভার্সিটি তে কাজ আছে তাই চলে গেলো।

_আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলে নিজের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে কোচিং এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ইশা।

দুপুর ১২ টা বাজে-
ইশা পড়া শেষ করে একা একাই বাড়ি ফিরছে। মোহনার একটু শরীর খারাপ থাকায় সে আসতে পারেনি আজকে, তাই একা একাই যেতে হচ্ছে ইশাকে। বাড়ির কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই ইশার চোখ পড়লো পাশের আশ্রমের দিকে। আশ্রমের দিকে তাকাতেই সেদিনের সেই মহিলাকে দেখতে পেলো সে। ইশা ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে সেদিকে পা বাড়ালো।

_হাই আন্টিমনি,কেমন আছো?

আশ্রমের উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিলেন আয়শা। ইশার ডাকে তার দিকে তাকালেন তিনি, কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পাড়লেন ইশাকে। ঝাড়ুটা পাশে রেখে মুচকি হেসে ইশার কাছে গিয়ে বললেন,
_আরে মা তুমি? আমি ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?

_আমি অলওয়েজ ভালো থাকি। বসতে বলবে না?

আয়শা ইশার দিকে একটা চেয়ার টেনে দিলেন। নিজেও একটা চেয়ার এনে বসলেন তার পাশে।

ইশা চেয়ারে বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর আয়শার দিকে তাকিয়ে বলল,
_এখানে তো অনেক বয়স্ক লোকজন থাকে, তাহলে তুমি এখানে থাকছো কেন?

আয়শা নিজের চশমাটা টেনে বললেন,
_আমি এখানে টুকটাক কাজ করি,সেই সূত্রেই থাকতে পারি এখানে।

_তোমার বাড়ির লোকজন?

_আমার বাড়ি? হাসালে মা, বাড়ি থাকলে বুঝি এখানে থাকতাম আমি!

_তোমার কোনো ছেলে মেয়েও নেই বুঝি?

আয়শা খানিকটা হকচকিয়ে উঠলেন। আশেপাশে তাকিয়ে নজর লুকিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন,
_ন না নেই।

ইশার খুব খারাপ লাগলো আয়শার জন্য। আয়শা ইশার দিকে তাকিয়ে বললেন,
_তোমার নামটাই তো জানা হলোনা মা।

_হ্যা তাইতো, আমার নাম ইসরাত আনজুম ইশা। সবাই ইশা বলেই ডাকে।

_ভারি মিষ্টি নাম তোমার।

হঠাৎ কেউ একজন আয়শাকে ডাক দিতেই আয়শা ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার আজ একটু কাজ আছে মা, অন্য একদিন এসো তুমি হ্যা।

_ঠিক আছে আন্টিমনি,অবশ্যই আসবো।

আয়শা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ইশাও নিজের ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

____

টেবিলের উপর হাত রেখে মাথা চেপে ধরে বসে আছে আদৃত। তার সামনে অনেকগুলো ফাইল এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে। কিছুতেই কাজে কনসেন্ট্রেট করতে পারছে না আদৃত,বারবার সেই মেয়েটার নাচের দৃশ্যই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফোনে কল আসতেই চিন্তা ভঙ্গ হয় আদৃত এর,ফোনটা সবসময় ভাইব্রেশন এই রাখে সে।

ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, “মিস্টার শাহাদাত” নামটা। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে আদৃত এর। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ফোনটা রিসিভ করে সে।

_কেমন আছিস বাবা?

_হুম ভালো।

_একবার তো ফোন করে আমার খবরটাও নিতে পারিস।

_তেমন সম্পর্ক আপনার সঙ্গে আমার নেই। আপনার কিছু দরকার হলে বলুন।

_কিছু দরকার নেই আদি। তুই শুধু একবার বাড়িতে আয়। এবার ঈদে আসছিস তো তুই?

_ইচ্ছে নেই।

_এভাবে বলিস না আদি…

_একটু ব্যাস্ত আছি আমি। আর কিছু বলার আছে আপনার?

_নাহ..

হতাশ সুরে কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলেন শাহাদাত সাহেব। সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি। নিজের অপরাধ এর শাস্তিই পাচ্ছেন তিনি, নিজের ছেলে তাকে বাবা বলে ডাকে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে! নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত তিনি, অনেকবার ক্ষমাও চেয়েছেন আদৃত এর কাছে। কিন্তু আদৃত যে ছোটবেলা থেকে নিজের মায়ের মৃ*ত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করে আসছে। শত চেষ্টা করার পরও আদৃত তাকে ক্ষমা করেনি।

চশমাটা খুলে চোখে জমে থাকা জলটুকু মুছলেন শাহাদাত সাহেব,আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here