তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৯ #মেহরিন_রিম

0
264

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৯
#মেহরিন_রিম
সকাল থেকে স্কুলে এসে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে ইশা। অধিকাংশ স্টুডেন্টস স্কুল ড্রেস এ এলেও ইশা আর বাকি কয়েকজন পারফর্ম করবে বলে সিভিল ড্রেস এই এসেছে। স্কুলে আসার পর থেকে নিরব এর খোজ করে চলেছে ইশা,তবে তার দেখা এখনো পাওয়া যায়নি। মোহনা স্কুল ড্রেস এ এলেও তার মেকআপ দেখে যে কেউ মনে করবে সে যেকোনো পার্টিতে এসেছে।

অনেকক্ষণ খোজ করার পর নিরব এর দেখা পেলো ইশা। ফোনের দিকে তাকিয়ে গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো সে। নিরব কে আসতে দেখে ইশা ছুটে যায় তার কাছে। তারপর খানিকটা রাগী সুরে বলে,
_আর আসার কি দরকার ছিল? একেবারে এসে স্টেজ এ উঠতে তাহলেই তো হতো।

নিরব ফোনের দিকে তাকিয়েই হাটতে হাটতে বললো,
_আমার ঘুম অনেক ইম্পর্টেন্ট বুঝলি।

ইশা নিরবের পাশে হাটতে হাটতে বললো,
_ফোন থেকে একটু চোখটা সরাও তো। এভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে তোমার চোখে সমস্যা হবে। আর চোখে সমস্যা হলে তোমার চোখে পাওয়ার চলে আসবে, তারপর তোমাকে চশমা পড়তে হবে। আর চশমা পড়লে মানুষ তোমাকে কানা বলে ক্ষ্যাপাবে। তারপর…

_হ্যা হ্যা বুঝেছি বুঝেছি,আর বলতে হবেনা।

_হ্যা তো বুঝে থাকলে ফোনটা রেখে প্রাকটিস করতে চলো।

_আরে বাবা এখন আবার প্রাকটিস করার কি দরকার?

_এখন একবার রিহার্সাল না করছে যখন স্টেজ এ উঠে গান গাইতে নেবো তখন মাঝখানে আটকে যাবো। তুমি একলাইন গাইবে আর আমি ভুল করে অন্য লাইন গেয়ে ফেললে…

_আর বলতে হবেনা, চল…

____
_তুই আবার ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রাম এ কবে থেকে গান গাওয়া শুরু করলি?

আদৃত একটা জলপাই রঙের পাঞ্জাবী পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিল। পূর্নর প্রশ্নে বিরক্তির সুরে বলে ওঠে,
_আমাদের কলেজ এরই প্রোগ্রাম। জয়নাল স্যার এর মুখের উপর আমি আর আপত্তি জানাতে পারিনি বুঝলি।

_হুম বুঝলাম।

আদৃত চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিল এ রেখে পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলল,
_বাই দা ওয়ে, তুই যাচ্ছিস তো আমাদের সাথে?

_যদিও একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ ছিল আমার। বাট অনেকদিন হলো কলেজ এ যাওয়া হয়না।

_আমরা কি প্রোগ্রাম শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকবো নাকি? কিছুক্ষন থেকেই চলে আসবো।

_ঠিক আছে,তাহলে আমিও যাচ্ছি। আর সায়ান?

আদৃত হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বললো,
_ও তো বললো বাসা থেকেই চলে যাবে। দেখ গিয়ে এতক্ষনে হয়তো চলেও গেছে।

___
এতদিন ধরে কান্নার প্রাকটিস করলেও আজ মোহনার একটুও কাঁদতে ইচ্ছে করছেনা। এত সুন্দর করে সাজলো, যদি কেঁদেকেটে সব মেকআপ নষ্টই করে ফেলে তাহলে আর লাভ কি হলো সাজার।
ক্যামেরাম্যানকে সাথে নিয়েই পুরো মাঠে ঘুরে বেরাচ্ছে মোহনা। কখনো গাছের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে আবার কখনো স্টেজ এর আসেপাশে গিয়ে ছবি তুলছে।

_আপু আপনি এখন পর্যন্ত কম করে হলেও ১০০ টা ছবি তুলেছেন। এবার অন্তত অন্যদের ছবি তুলতে দিন।

_আরে ভাইয়া আপনি তুলুন তো ছবি। বাকিদের টা অন্য কেউ তুলে নেবে। অন্তত ৫০০ ছবি তো তুলতেই হবে। এর মধ্য থেকে ৫০ টা ছবি যদি আমার পছন্দ হয় তাহলে সেগুলো আগামী ৫ মাস যাবৎ একটা দুটো করে আপলোড দিতে হবে,আবার স্টোরি ও দিতে হবে। আপনি তুলুন তো।

কথাটা বলেই আরো বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে লাগলো মোহনা। সায়ান মাত্রই পিঠে গিটার ঝুলিয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে খানিকটা হিরো হিরো ভাব নিয়ে প্রবেশ করলো কলেজে। আজকে অন্তত একটা মেয়েকে তো ইম্প্রেস করতেই হবে তার।
দূর থেকে মোহনাকে দেখতে পেয়েই সায়ানের সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়। মনে মনে ভাবে,
_এই মেয়ের জন্য আমাকে পুরো দুদিন কোমড় ব্যাথায় ভুগতে হয়েছে। এত সহজে তো ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়।
সায়ান মোহনাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে তার পাশে গিয়ে দাড়ালো। তারপর ফোন্টা কানে ধরে জোড়ে জোড়ে বলল,
_বুঝলি আদি,আমি বোধহয় ভুল যায়গায় চলে এসেছি। কলেজ এ আসার বদলে কোনো পার্টিতে চলে এসেছি মনে হচ্ছে। কেন? আরে আমার আশেপাশে কিছু মানুষ মুখের উপর প্রায় কয়েকশো স্তুপ ময়দা মেখে এসেছে। হ্যা হ্যা জোকারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

মোহনা সেলফি তোলা বাদ দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো সায়ান এর দিকে। এসব কথা শুনে বেশ ভালোই বুঝতে পারলো যেয়ে সায়ান তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছে।
মোহনা মুখ ফুলিয়ে সায়ান এর সামনে তুড়ি বাজালো। সায়ান তবুও না দেখার ভান করে আপন মনে কথা বলতে লাগলো। মোহনা আবারো তুড়ি বাজিয়ে বলল,
_এইযে, হ্যালো..

সায়ান মোহনার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝালো,
“আমাকে বলছো?”

_হ্যা হ্যা আপনাকেই বলছি।

_আচ্ছা আদি কোন এক জোকার আমাকে ডাকছে বুঝলি, আমি একটু পড়ে কল করছি তোকে।

_এই এই আপনি জোকার কাকে বললেন হ্যা?

সায়ান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
_যাকে বলেছি সে ঠিকই বুঝেছে।

_সাহস তো কম নয় আপনার। কতক্ষন ধরে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিসব কথা বলে চলেছেন। সমস্যা কি আপনার?

_আমার আবার কি সমস্যা হবে? আমি তো যা দেখেছি তাই বলেছি।

_মানে টা কি? আপনি আমাকে জোকার বলছেন?

_শুধু জোকার নয় সঙ্গে পাগল ও মনে হচ্ছে। নাহলে স্কুলে কেউ এভাবে ময়দা মেখে আসেনা।

_আপনি নিজে একটা পাগল,শুধু পাগল নয় মস্ত বড় পাগল।

কথাটা বলেই মোহনা রেগে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে। মোহনাকে এমন রাগতে দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো সায়ান। মোহনাকে বিরক্ত করতে পেরে বেশ মজাই লাগছে তার।

___
গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইজার জন্য অপেক্ষা করছে ইশা। নিজে তাড়াতাড়ি চলে আসায় সাজগোজ কিছুই করেনি সে। নিজের সাজ তার খুব বেশি পছন্দ হয়না,তাই ফাইজাকেই বলেছে সাজিয়ে দিতে।

_সরি সরি,একটু দেড়ি হয়ে গেলো।
ইশার সামনে এসে কথাটা বলল ফাইজা। ইশা বেশ তড়িঘড়ি করে বলল,
_একটু না অনেক দেড়ি করেছো। একটু পড়েই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। এখন জলদি চলো আমাকে সাজিয়ে দেবে।

_হ্যা হ্যা চল।

বাইকের হর্ন এর আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকালো ইশা। আদৃত নিজের বাইক নিয়েই এসেছে। পূর্নর একটা ইমার্জেন্সি কল আসায় ও বাইরে দাঁড়িয়েই পিছনে ফিরে ফোনে কথা বলছে।
বাইক থেকে নেমে নিজের হেলমেটটা খুললো আদৃত। আদৃত কে দেখেই খানিকটা ভয় পেলো ইশা,ফাইজা এতক্ষনে কিছুটা দূরেও চলে গেছে। ইশাও সেদিকে যেতে নিবে তখন ই পিছন থেকে আদৃত তাকে আদৃতের ডাকে থেকে যায় সে। আদৃত তার পিছনে এসে বলে,
_এই মেয়ে আমি তোমাকে দাঁড়াতে বললাম না,তারপর ও..

_কিরে ইশা থেমে গেলি কেন চল…
পিছন থেকে ফাইজা এসে ইশার হাত ধরে বলল কথাটা। আদৃত এর এবার চোখ পড়ে ফাইজার উপর, তাকে চিনতে খুব বেশি সময় লাগেনি আদৃত এর। অস্ফূটস্বরে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
_ফাইজা!

ঠিক সেই মুহূর্তেই পূর্নও সেখানে উপস্থিত হয়। ফাইজার দিকে না তাকিয়েই বলে,
_হ্যা আদি চল এবার..
কথাটা বলতেই তার নজর যায় ফাইজার দিকে।

#চলবে

[একটু দেড়ি হয়ে গেলো গল্প দিতে,তারজন্য আমি দুঃখিত। আশা করি আপনারা নিজেদের মতামত জানাবেন।
রিচেক করার সময় পাইনি, ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here