#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১২
#মেহরিন_রিম
ঘরের লাইট নিভিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে আদৃত। পুরো ঘরে এখন আলো বলতে কেবলই ড্রেসিং টেবিল এর সামনের ছোট লাইট টি জ্বলছে। জানালা থেকে বাহিরের শীতল বাতাস এসে লাগছে আদৃতের গায়ে, যার ফলে তার চুলগুলোও সামান্য উড়ছে। তবে এই হাওয়ার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি বেগে তার মনে প্রশ্নের ঝড় বইছে।
আয়নার সামনে বসে নিজের সাথে কথা বলাটা আদৃতের বেশ পুরনো অভ্যাস। যখনি নিজের মন অতিরিক্ত অশান্ত হয়ে যায়,তখনি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সে। নিজের মনকে শান্ত করার সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র।
বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ায় আদৃত। আপন মনে নিজেকে প্রশ্ন করে,
_হুয়াট’স রং উইথ ইউ আদৃত? একটা মেয়ের জন্য আমি কেন এত অস্থির হয়ে যাচ্ছি? তাও আবার ঐ মেয়েটার জন্য? নো নো নো, আমি একটু বেশি ভাবছি ঐ মেয়েটাকে নিয়ে তাইনা? এইজন্যই এমন হচ্ছে, আই আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট।
লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের শান্ত করার চেষ্টা করে আদৃত। অত:পর শান্ত কণ্ঠে বলে,
_আমি এসব নিয়ে আর ভাববোই না, রাইট? তাহলেই সব ঠিক হয়ে যায়। লিসেন আদি, ইউ উইল নট থিংক আবাউট দা গার্ল ফ্রম নাও,ওকে?
রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো আদৃত। নিজের টাওয়াল টা নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল। পূর্ন তাকে কয়েকবার ফোন করেছিল সায়ান এর বাসায় যাওয়ার জন্য, তবে আদৃত বলেছে সে যেতে পারবেনা। পূর্ন ও আর জোড় করেনি, আদৃত যখন একবার বলেছে যাবেনা তখন সে কিছুতেই যাবেনা এটা পূর্নও ভালো করে জানে।
___
ইশা মনের আনন্দে ফাইজা কে সব ছবি,ভিডিও দেখাচ্ছে। কিন্তু ফাইজার সেদিকে তেমন কোনো নজর নেই,সে নিজের ধ্যানে মগ্ন থেকে শুধু ইশার কথায় সায় দিচ্ছে।
_আপু দেখো তো এটা আপলোড দেই?
_হুম
_কিন্তু এই ছবিটাও তো সুন্দর। দুটোর মধ্যে কোনটা দিবো বলো।
_হুম
ইশা এবার ফাইজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
_কতক্ষন ধরে দেখছি শুধু হুম হুম করছো। বলোনা দুটোর মধ্যে কোনটা আপলোড দিবো?
_হুম
ইশা এবার ফাইজার কাধে হাত দিয়ে কিছুটা ঝাঁকি দিয়ে বলে,
_এই আপু,কি হয়েছে তোমার?
ফাইজার ধ্যান ভাঙে এবার। ইশার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
_হ্যা হ্যা,কি যেনো বলছিলি?
ইশা এবার কিছুটা শান্ত সুরে বলে,
_আপু,তুমি ঠিক আছো তো? কেমন যেন লাগছে তোমাকে।
অনেক্ষন শাওয়ার এর নিচে থাকায় শরীরটাও ঠিক লাগছে না ফাইজার। তবুও মুচকি হেসে বলল,
_কি হবে আমার?একদম ঠিক আছি আমি,তুই টেনশন করিস না তো।
ইশার যেন বিশ্বাস হলোনা ফাইজার কথা। তাই সে নিজে থেকেই ফাইজার কপালে,গালে হাত দিয়ে বলল,
_ওমা, গায়ে তো বেশ ভালোই জ্বরে। তুমি বলবেনা আমায়?
_আরে ঐ একটু আকটু জ্বরে কিছুই হবেনা। ছাড় তো তুই।
_কিছু হবেনা মানে? তুমিতো কিছু খাওনি। দাঁড়াও আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। খেয়ে তারপর ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকবে বুঝেছো?
_ইশা,আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা বোন। শোন আমার কথা।
কে শোনে কার কথা, ইশা ছুটে চলে গেলো ফাইজার জন্য খাবার আনতে। মুচকি হাসলো ফাইজা, এখন ইশা তাকে খাবার,ঔষধ সব খাইয়ে তবেই শান্ত হবে। ফাইজা নিজের বাড়িতেও এতটা আদর পায়না যতটা ইশা আর রুকসানার থেকে পায়।
খাটে হেলান দিয়ে বসলো ফাইজা। মনে মনে ভাবলো,
_কত ভাগ্যবতী আমি, এমন একটা পরিবার পাচ্ছি, এমন একটা বোন পাচ্ছি। আর আমি কিনা বাহিরের একটা লোকের জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি! হাহ…
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ফাইজা। এরই মাঝে ইশাও খাবার নিয়ে হাজির হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছুটা খেতে হয় ফাইজাকে। এরপর ইশা তাকে ঔষধ খাইয়ে দেয়। ইশার টিচার চলে আসায় সে আর থাকতে পারেনি। ইশা চলে যাওয়ার পড় ফাইজা বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুটা ঘুমের বিশেষ প্রয়োজন তার।
___
রাত প্রায় একটা বাজে। পড়াশোনার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ না থাকলেও বাধ্য হয়ে অনেকটা রাত জেগে পড়তে হচ্ছে মোহনাকে। পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এখন একটু সিরিয়াস ভাবেই পড়ছে সে।
পড়তে পড়তেই মোহনার মনে পড়লো সে টানা দেড় ঘন্টা যাবৎ মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। পড়া বাদ দিয়ে মনে মনে ভাবলো,
_মেহু! তুই এতটা ব্রিলিয়ান্ট কবে থেকে হয়ে গেলি বলতো? আমি তো নিজেই চিনতে পারছি না। বাট, অনেকক্ষণ হয়ে গেল পরছি, বই খাতার ও তো একটু রেস্ট দরকার। আমি আবার এত দয়ালু, থাক ওদের একটু রেস্ট দেই।
বই খাতা বন্ধ করে খাটে বসে নিজের ফোনটা হাতে নিলো মোহনা। ফোনটা অন করতেই দেখলো হোয়াটস অ্যাপ এ কেউ বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছে। ভ্রু কুঁচকে ছবিগুলো দেখতে গেলো সে। কিন্তু ছবিগুলো দেখার পড় তার মাথায় একটা ডায়লগ ই এলো,
“হে মা মাতাজি!”
পুরো আটটা ক্যান্ডিড ছবি তার। তবে ছবিগুলো কেউ দেখলে মোহনার প্রেস্টিজ একদম ই পাঞ্চার হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। একটা ছবিতে সে রাক্ষস এর মতো হাসছে, আবার অন্য এক ছবিতে পাগল এর মতো নাচছে।
মোহনা ছবিগুলো দেখে সেই লোককে কিছু একটা লিখতে যাবে তার আগেই অপর প্রান্ত থেকে মেসেজ আসে,
_হেই মিস হাতি,ভালো আছেন তো?
কাঙ্ক্ষিত লোকটি যে সায়ান তা বুঝতে সর্বোচ্চ দশ সেকেন্ড সময় লাগলো মোহনার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এই নম্বরেই কল করলো সে, সঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ ও হলো। মোহনা রেগে গিয়ে বলতে লাগলো,
_সমস্যা কি আপনার হ্যা? এত মানুষ থাকতে আমার ই এসব ফালতু ছবি তুলতে হলো আপনার? ভাই তুলবেন যখন ভালো ছবি তুলতেন। আর আপনি আমার নম্বর পেলেন কোথায়?
_রিল্যাক্স, এত প্রশ্ন একবারে করলে আমি কোনটার উত্তর দেবো বলতো। এবার তুমি ই বলো, কোন প্রশ্নের উত্তর আগে দেবো?
মোহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান আবারো বলে,
_আচ্ছা ঠিক আছে আমি ই এক এক করে বলছি,হ্যা? প্রথমত তোমার ছবি কেন তুললাম,গুড কোয়েশ্চেন। এর এন্সার হলো আমার ইচ্ছে। আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই তুলেছে। আর তোমার ফোন নম্বর? তুমি কোন সেলিব্রিটি যে নম্বর জোগাড় করতে পারবো না হুম?
_আপনি কি জনেন যে আপনি একটা মেন্টাল।
_এখনো হইনি, বাট তোমার জন্য হলেও হতে পারি।
_মানে? শুনুন ফালতু কথা বলবেন না, ভালোভাবে ছবিগুলো ডিলিট করে দিন বলছি।
_এত সুন্দর ছবি তুললাম কি ডিলিট করার জন্য নাকি? আমিতো আরো ভাবছিলাম ছবিগুলো যদি কোনোভাবে তোমাদের ফ্রেন্ডস গ্রুপ এ দেওয়া যায় তাহলে কেমন হতো!
এবার খানিকটা দমে গেলো মোহনা। করুন সুরে বলল,
_এমনভাবে কেন বলছেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আর আপনি তো এত ভালো মানুষ, প্লিজ ভাইয়া ছবিগুলো ডিলিট করে দিননা। এগুলো আমার ফ্রেন্ডস রা দেখলে আমাকে সেই রকম পচাবে…প্লিজ ভা..
_ওয়েট ওয়েট, তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি আমি হ্যা? ভুলেও এই ওয়ার্ড ইউজ করবে না। আর এই ছবিতো আমি ডিলিট করবোনা। তবে তুমি যদি ঝগড়া বাদ দিয়ে আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলো তাহলে ভেবে দেখতে পারি।
_আরে ঝগড়া আবার কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয় তাই তো জানিনা। আর আমি তো অল টাইম সুন্দর করেই কথা বলি। লোকে তো বলে,আমার কথার সাথে নাকি মধু ঝড়ে।
_এইতো এভাবেই কথা বলবে। তাহলে আমি ভেবে দেখতে পারি ছবি ডিলিট করবো কিনা।
রুমের বাহিরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেরে মোহনা সরু গলায় বলে,
_আমার না অনেক পড়া বাকি আছে। ফোনটা রাখি আমি?
_ওকেই গুড নাইট।
ফোন টা কাটতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো মোহনা। তার সঙ্গে সায়ান কে মনে মনে কয়েকশো গালি দিতে লাগলো। আফসোস এর সুরে বলল,
_কেয়সা নাসিব হে তেরা মেহু! নিজের প্রেস্টিজ বাঁচানোর জন্য কিনা এই লোকের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে হচ্ছে!
#চলবে
[অন্যান্য পর্বের চেয়ে একটু হলেও বড় পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি, আপনারা নিজেদের মন্তব্য জানাবেন।
এখন পর্যন্ত আপনাদের কাছে কোন জুটিকে ভালো লাগছে জানিয়ে যাবেন।
হ্যাপি রিডিং।]