#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৪
#মেহরিন_রিম
_কাউকে বলবেন না হ্যা, ইশা নিরব ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই লাইক করে। কিন্তু নিরব ভাইয়া সেটা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয়না…
মোহনার কথা শুনে আদৃত আবারো ইশার দিকে তাকায়, সে এখনো নিরব এর সাথে হেটে হেটে তাকে অনেক কিছু বলে চলেছে। ইশার কার্যকলাপ দেখে সে আগেই এমন কিছু আন্দাজ করতে পেড়েছিল।
_কি হলো ভাইয়া? কিছু ভাবছেন?
আদৃত মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
_হুম, না না আর কিছু না।
_আচ্ছা।
মোহনা চলে যেতে নিলে আদৃত আবারো তাকে ডাক দিয়ে বলে,
_তোমার নাম যেন কি? হ্যা মোহনা, তুমি যে আমাকে কথাটা বললে এটা যেন ইশা জানতে না পারে ঠিক আছে?
_ওকে বলতে যাবো কেন?
_হুম দরকার নেই বলার। ঠিক আছে,তুমি কোথায় যাচ্ছিলে যেতে পারো।
মোহনাও মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আদৃত কিছুক্ষন ইশা আর নিরব এর দিকে তাকিয়ে রইলো, নিরব কে দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছেনা সে ইশাকে পছন্দ করে বা এমন কিছু।
আদৃত দু আঙুল কপালে স্লাইড করতে লাগলো, মুখ থেকে তার বিরক্তিসূচক ‘চ’ আওয়ার বেড়িয়ে এলো। মনে মনে ভাবলো,
_আমি ইশার লাইফ নিয়ে ভাবতে যাচ্ছি কেন? ওর লাইফ, ও যা খুশি করতে পারে তাতে আমার কি!
আশেপাশে তাকিয়ে সায়ানকে খুজলো আদৃত, তবে তার দেখা পেলোনা। সায়ান কে খোজার ইচ্ছে নেই এখন, তাই নিজের বাইক নিয়েই আদৃত বেড়িয়ে গেলো কলেজ থেকে।
___
অনেক্ষন ধরে নানান কথা বলে চলেছে ইশা, তবে নিরব তার খুব একটা পাত্তাই দিচ্ছে না। ইশা এসব নিয়ে না ভাবলেও এখন বেশ খারাপ লাগছে তার, কতদিন পর নিরবের সাথে কথা বলতে এসেছে আর তার মাঝে কিনা কোনো ভাবান্তর ই নেই। যেখানে ইশার আচরণ দেখে তার প্রায় সব ক্লাসমেট রাই বুঝতে পারে যে সে নিরবকে পছন্দ করে,সেখানে নিরব কি কিছুই বুঝতে পারেনা? বুঝতে পারেনা নাকি বুঝতে চায় না মাঝেমধ্যে এটাই ভাবে ইশা।
_এই নিরব ভাইয়া, একটু তো কথা বলবে নাকি। আমি কতক্ষন ধরে কতকিছু বলছি,আর তুমি সেই ফোনের মধ্যেই ঢুকে আছো। কি আছে এই ফোনে?
নিরব ফোনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল,
_অমূল্য রত্ন,বুঝলি?
ইশা অন্য দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো। নিরব এবার ফোনটা পকেটে রেখে বলল,
_শোন, বলেছিলাম না তোদের সারপ্রাইজ দেবো?
_সে তো আরো দুমাস আগে থেকেই দাও।
_এবার আসলেই দেবো,সঙ্গে আমার তরফ থেকে ট্রিট ও পাবি। বিকেলে কলেজে চলে আসিস।
_আম্মু আসতে দিলে তো।
_আরে আন্টি কে ম্যানেজ করে নিস, না এলে কিন্তু অনেক কিছু মিস করবি।
কথাটা বলেই নিরব চলে গেলো সেখান থেকে। ইশা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা খাটিয়ে ভাবতে লাগলো,কি এমন সারপ্রাইজ দেবে নিরব?
এত কিছু নিয়ে ভাবার ইচ্ছে নেই ইশার,পরীক্ষা শেষ হওয়ার খুশিতে পারলে এখানে নাচা শুরু করে দেয় সে। অনেক্ষন ধরে মোহনাকে দেখতে পায়নি ইশা, তাই মোহনাকে খোজার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো সে।
___
মাঠের এক সাইড থেকে আইসক্রিম খেতে খেতে হাটছে মোহনা আর সায়ান। মোহনা আইসক্রিম খেতে খেতে আড়চোখে বারবার সায়ান এর দিকে। পরীক্ষার কারণে এই কদিনে সায়ানের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বললেও রোজ অন্তত ১০ মিনিট এর জন্য বাধ্য হয়ে হলেও সায়ান এর সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলতে হয়েছে মোহনার। প্রথমে বিরক্ত লাগলেও এখন আর কথা বলতে খুব বেশি খারাপ লাগেনা বা রাগ ও হয়না।
_আই নো আই এম সো হ্যান্ডসাম, কিন্তু এভাবে নজর দেওয়া তো উচিৎ নয় তাইনা?
খানিকটা থতমত খেয়ে যায় মোহনা। মাঠের সাইডে থাকা বেঞ্চে বসে বলে,
_আপনার দিকে নজর দিতে যাবো কোন দুঃখে।
সায়ান মোহনার পাশে বসে বললো,
_ছবিগুলো কিন্তু আছে আমার কাছে।
মোহনা করুণ দৃষ্টিতে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এমন করছেন কেন? আমার মত একটা বাচ্চাকে এত ব্লাকমেইল করা কিন্তু ঠিক না।
_ওহ রিয়েলি! তুমি বাচ্চা?
_তা নয়তো কি? এত গুলুমুলু কিউট সা বাচ্চা আমি। আপনি শুধু শুধু আমায় ছবির কথা বলে ভয় দেখাচ্ছেন।
সায়ান কিছুক্ষন মোহনার দিকে তাকিয়ে হুট করে হো হো করে হেসে উঠলো। মোহনা কপাল কুঁচকে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হাসছেন কেন আপনি? খুব মজা লাগছে আপনার তাইনা।
সায়ান অতি কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
_সিরিয়াসলি, সামান্য কিছু ছবির জন্য তুমি এত ভয় পাচ্ছো? হাউ ফানি!
_তো আপনি ছবিগুলো ডিলিট করে দিলেই তো পারেন।
সায়ান মোহনার দিকে কিছুটা এগিয়ে বলল,
_ডিলিট আমি করে দেবো। তবে তোমার ও প্রমিস করতে হবে যে, আমার সাথে এভাবেই কথা বলবে। যদি রাজি থাকো..
_রাজি রাজি…কিন্তু আপনি ছবিগুলো এক্ষুনি ডিলিট করবেন,আমার সামনে।
সায়ান আবারো হাসতে হাসতে নিজের ফোনটা বের করে মোহনাকে দেখিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে দিলো। মোহনা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল এবার। মনের আনন্দে আইসক্রিম খেতে লাগলো।
সায়ান এবার নিজের পকেট থেকে একটা ছোট্ট টেডিবিয়ার চাবির রিং বের করে মোহনার সামনে ধরে বলল,
_এটা তোমার জন্য।
মোহনা এক ঝটকায় সেটা হাতে নিয়ে নিলো। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
_সিরিয়াসলি? কি কিউট এটা! থ্যাংক ইউ।
_মেহু…
বেশ গম্ভীর কণ্ঠের ডাকটা শুনে মোহনা আর সায়ান দুজনেই পিছনের দিকে তাকালো। ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে সরু চোখে একবার মোহনার দিকে,আরেকবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করছে।
ইশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মোহনা শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসলো। একনজর সায়ান এর দিকে তাকিয়ে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম এর কাঠিটা সাইডে ফেলে দিলো। তারপর ইশার কাছে গিয়ে বলল,
_আরে দোস্ত,তোকেই তো খুজছিলাম।
কথাটা বলেই ইশার হাত ধরে অন্যদিকে নিয়ে যেতে লাগলো মোহনা। সায়ান আর ওদের মাঝে গেলোনা, উঠে দাড়িয়ে নিজের বাইকের দিকে অগ্রসর হলো।
ইশা সরু চোখে মোহনার দিকে তাকিয়ে থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে দেয়। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
_কি চলছিল ওখানে?
_ক কী চলবে? আরে তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না।
_তেমন কিছুই না তাই টেডিবিয়ার গিফট করা হচ্ছে তাইনা? আমাকে পাগল ভাবিস তুই?
_দোহাই লাগে বইন,আম্মুরে কিছু বলিস না। আর সেরকম কিছুই নেই,আমি তোকে যেতে যেতে সব বলতেছি চল।
কথাটা বলেই মোহনা ইশার সাথে হাটতে হাটতে তাকে সব কিছু খুলে বলে। সবশেষে মোহনা বলে,
_সত্যি বলতেছি দোস্ত,আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই নেই।
ইশা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
_আচ্ছা….তাহলে তুই এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন শুনি?
মোহনা নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
_কোথায় লজ্জা পাচ্ছি!
_বুঝছি বুঝছি। এখন শোন, বিকেলে কলেজে যাবো একবার।
_কেন?
_নিরব ভাইয়া যেতে বলছে, কি যেন সারপ্রাইজ দিবে বললো।
_আন্টি যেতে দিবে তোকে?
_ফাইজা আপুকে নিয়ে যাবো,তাহলেই যেতে দিবে। এসব ভাবতে হবে না,তুই টাইমমতো চলে আসিস কিন্তু।
_ওকে..
#চলবে
[নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছিনা। তবে চেষ্টা করবো রাতে বোনাস পার্ট দেওয়ার। কমেন্টে জানাবেন বোনাস পার্ট চান কিনা।
হ্যাপি রিডিং।]