তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_২ #মেহরিন_রিম

0
393

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২
#মেহরিন_রিম
“পনেরো বছরের বড় একজন লোকের সঙ্গে যখন বাবা জোড় করে আমার বিয়ে দিয়েছিল, সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হয়েছিল যেদিন সেই মানুষটা বাড়িতে সতীন নিয়ে আসে। তখন আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। বাঁচার ইচ্ছে না থাকলেও সন্তানের কথা ভেবে আমি বেঁচে ছিলাম। আমার আদি, যেদিন তুই জন্মেছিলি,তোর মুখের দিকে তাকানোর পর আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিল। বেঁচে থাকার নতুন উদ্দেশ্য খুজে পেয়েছিলাম আমি। ভেবেছিলাম,আমার আর কাউকে দরকার নেই। তোকে নিয়েই আমি বাঁকি জীবনটা পার করে দিতে পারবো। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,আমি চেয়েও তোর সঙ্গে থাকতে পারছিনা বাবা। বুঝতে পারছি, আমার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। তোর বাবা তোকে খুব ভালোবাসে আদি,আমি জানি উনি তোর খেয়াল রাখবে। তুই হয়তো বড় হয়ে লেখাটা পড়বি। একটা কথা মনে রাখিস,মা সবসময় তোর সাথে আছে।”

চোখ বন্ধ করে নিলো আদৃত, এই লেখা সে আগেও বহুবার পড়েছে। হাতে থাকা ডায়েরীটা খুব যত্নসহকারে ড্রয়ারে রেখে দিলো আদৃত। ডায়েরীর লেখাগুলো পড়লেই মনে হয় মা তার সামনে বসে কথাগুলো বলছে।

রুমের দিকে তাকালো আদৃত, সায়ান সোফায় বসে গেইমস খেলছে। এই ফ্লাটে যদিও আদৃত একাই থাকে, সায়ান মাঝেমধ্যে তাকে কম্পানি দিতে চলে আসে এখানে।
আদৃত আবারো আকাশের দিকে তাকালো। গান করাটা মূলত তার মায়ের জন্যই। তার মায়ের ইচ্ছে ছিলো আদৃত গান করবে, তার ইচ্ছে পূরন হলেও নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। গান বাজনা ছাড়াও আদৃত বাবার বিজনেস এর দেখাশোনা করে। লোকটার উপর তার অনেক রাগ । যদিও শাহাদাত সাহেব তার নিজের কাজের শাস্তিও পেয়েছেন। দ্বিতীয় বউ বিয়ের কয়েকবছর পর ই তাকে ছেড়ে চলে যায়, আদৃত ও আর তার সঙ্গে থাকতে চায়নি। কলেজ এ উঠেই ঢাকাতে চলে আসে সে। নিজের কাজের জন্য শাহাদাত সাহেব প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় ভোগেন,তবে আদৃত তার সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাতীত খুব একটা কথাও বলতে চায়না। মায়ের চলে যাওয়ার পিছনে যদিও তার বাবার হাত নেই, তবুও আদৃত এর কাছে তার বাবাকে দোষি ই মনে হয়।
বিজনেস এর কাজ সামলালেও সোশাল মিডিয়ায় এবং মানুষের কাছে সে সিঙ্গার হিসেবেই বেশি পপুলার। মেয়েরা তো একবার ওকে দেখার ড্রিম নিয়ে বসে আছে।

_আদি…জলদি আয় এদিকে
সায়ান এর কথায় ধ্যান ভাঙলো আদৃত এর। ভ্রু কুঁচকে রুমের দিকে অগ্রসর হলো সে।

____
দশ মিনিট যাবৎ দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পায়চারী করে চলেছে ইশা। ফাইজা গালে হাত দিয়ে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। অবশেষে আর ধৈর্য ধরতে না পেরে নিরবতা ভাঙলো ফাইজা। বিরক্তির সুরে বলল,
_তুই কি সারারাত যাবৎ চিন্তাই করে যাবি?

ইশা নখ কামড়ানো বাদ দিয়ে এক লাফে খাটে উঠে বলল,
_একটু আইডিয়া দাওনা আপু, কিভাবে প্রপোজ করবো?

_এখন আইডিয়া দাও আপু তাইনা। একটু আগে না বললি, তুমি শুধু দেখো আমি কি করি ব্লা ব্লা..

ইশা দাঁত কেলিয়ে হেসে ফাইজার গাল টেনে দিয়ে বলল,
_আমার কথা এতো মনে রাখার কি দরকার বলতো? আমার সোনা আপু, একটু তো টিপস দাও..

ফাইজা ইশার হাত সরিয়ে দিয়ে তার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
_সবচেয়ে বেস্ট আইডিয়া, মাথা থেকে ঐ নিরবের ভূত নামিয়ে ফেল।

ইশা মুখ ফুলিয়ে বলল,
_কেন নামাবো শুনি! ভালোবাসা কি ভুল নাকি?

ফাইজা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_ভুল নারে পাগলি। তোর এই বয়স আমি অনেক আগেই পার করে এসেছি, তুই যেটা কে ভালোবাসা ভাবছিস সেটা আসলে মোহ ছাড়া আর কিছুই না।

ইশা কপাল ভাজ করে বুকে হাত গুজে রাগী গলায় বলল,
_হ্যা হ্যা তুমিতো তাই বলবে। নিজে কখনো কাউকে ভালোবাসো নি তো তাই এমন কথা বলছো।

চুপ করে রইলো ফাইজা,ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। প্রসঙ্গ বদলাতে জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
_এসব কথা থাক। তবে তোর কিন্তু লোকটাকে সরি বলা উচিৎ ছিল,শুধু শুধুই তাকে কথা শোনালি।

_রাখো তো তোমার সরি, ভেবেছিলাম ওনার সঙ্গে সেলফি তুলে একটু ভাব নিবো। তা আর হলো কই, জানো কয়েকটা মেয়েকে দেখেই দৌড়ে পালালো। আই মিন বাইকে করে চলে গেলো।

_এতগুলো কথা শোনানোর পড়ে আবার তুই সেলফি ও তুলতে চেয়েছিলি? লাইক সিরিয়াসলি!

_ডোন্ট ওরি..নেক্সট টাইম দেখা হলে সরি ও বলে দেবো,আর সেলফি ও তুলে নেবো।

_হাহ,সেই স্বপ্ন নিয়েই ঘুমোও তুমি। মানুষ ওনার সাথে একবার দেখা করার জন্য কত কিছু করে। সেখানে উনি তো তোর সাথে এসে দেখা করবে তাইনা!

ইশা হামি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_কথায় লজিক আছে। কিন্তু আমার এখন প্রচুর ঘুম পেয়েছে, গুড নাইট।

কথাটা বলেই নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ইশা। ইশার কান্ড দেখে ফাইজা মুচকি হাসলো। এইতো ফুল এনার্জি নিয়ে কথা বলছিল,আবার হঠাৎ করেই তার ঘুম পেয়ে গেল। ফাইজা মনে মনেই বলল,
_মেয়েটা আসলেই পাগল।

___
_কলেজে গিয়েছিলি নাকি আজ?

সায়ান এর প্রশ্ন শুনে খানিকটা অবাক হলো আদৃত। ভ্রু কুচকে উত্তর দিলো,
_কই না তো। কেন বল তো?

সায়ান ফোনের দিকে চোখ রেখে বললো,
_না আসলে আমাদের কলেজ এর মেয়ের সঙ্গে তোর ছবি দেখলাম তো তাই।

_আমাদের কলেজের মেয়ে মানে? দেখ যা বলবি ক্লিয়ারলি বল।

সায়ান এবার ফোনটা আদৃত এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
_তোর পাশের মেয়েটার গলায় থাকা আইডি কার্ড টা দেখ।

আদৃত ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো মোহনার সঙ্গে আজকে তোলা ছবিটা। সে ছবিটা পোস্ট দিয়ে আদৃত কে ট্যাগ করে ক্যাপশন এ লিখেছে, “উইথ মাই ক্রাশ”
মোহনা সিভিল ড্রেস এ থাকলেও গলায় আইডি কার্ড ছিল। আদৃত সায়ান এর কথা অনুযায়ী আইডি কার্ডটা জুম করতেই বুঝতে পারলো এটা তাদেরই কলেজের আইডি কার্ড, ইন্টারে এই কলেজেই পরেছিল তারা। আদৃত আরেকটু খেয়াল করে দেখতে পেলো এটা ক্লাস টেন এর আইডি কার্ড। আদৃত ফোনটা সায়ান এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
_রাস্তায় তুলেছিল পিক। আর মেয়েটা কলেজের নয় স্কুল এর।

সায়ান ফোনটা হাতে নিয়ে আবারো গেইমস খেলায় মনোযোগ দিও। আদৃত বেড এ শুয়ে ফোনটা হাতে নিতেই তার সামনেও একই ছবি এলো। আদৃত সেটা স্ক্রোল করে নিচে যেতেই হঠাৎ তার তখনকার ঘটনা মনে পড়লো। মনে মনে ভাবলো,
_এই মেয়েটা ক্লাস টেন এ পড়ে মানে ওর বান্ধবী টাও টেন এ পড়ে। কি যেনো নাম,হুম ইশা। এইটুকু পিচ্চি মেয়ের এত তেজ! আমাকে কিনা পুলিশের ভয় দেখায়? উম হু, একে তো এত সহজে ছেড়ে দিলে চলবে না। কিন্তু ঐ মেয়েও কি একই সাথে পড়ে? কথা শুনে তো তাই মনে হলো।

আদৃতের হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই সে উঠে বসে সায়ানকে বলে,
_এই শোন, তোর কোন কাজিন যেন এবার ক্লাস টেন এ পড়ে?

_হ্যা পড়ে,তো?

_ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস কর, ইশা নামের কোনো মেয়ে ওদের সাথে পড়ে কিনা।

সায়ান বড়বড় চোখে আদৃতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো। তারপর অবাক হয়ে বলল,
_কেন বল তো? তুই আবার মেয়ের খোঁজ করছিস কেন?

_আরে…তোকে যা বললাম সেটা কর।

সায়ান এবার ওর কাজিন কে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো। তারপর কলটা কেটে বলল,
_হ্যা পড়ে, কিন্তু ইশা নামের তো কত মেয়েই হতে পারে।

_বাট আই থিংক,আমি যার কথা বলেছি এটা সেই হবে।

আদৃত কিছুক্ষন চুপ থেকে বাঁকা হেসে বলল,
_কাল একবার কলেজে যেতে হবে বুঝলি।

কথাটা বলেই মনে মনে বলল,
_মিস ইশা, আদৃত মেহরাজ কে অপমান করার ফল তো তুমি পাবেই। তোমার কত তেজ এবার আমিও দেখবো।

#চলবে

[সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি, আপনাদের রিসপন্স এর উপর ভিত্তি করে নেক্সট পার্ট দিবো।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here