তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৪ #মেহরিন_রিম

0
315

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৪
#মেহরিন_রিম
_কি হলো? ডাকবেনা পুলিশ?
শুকনো ঢোক গিললো ইশা। এতক্ষনে সে আদৃত কে চিনতে পেড়েছে। তবুও কপট সাহস দেখিয়ে বললো,
_ক কে আপনি?

এবার হেলমেট টা খুললো আদৃত। শেষ সাহসটুকুও মিলিয়ে গেলো ইশার,সামান্য হেসে বলল,
_আ আরে আপনি!

আদৃত শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
_তোমার মতো পিচ্চি মেয়ের এতো তেজ থাকে কি করে হ্যা?

ভয়টা যেন মুহূর্তেই কেটে গেল ইশার,তার জায়গায় একরাশ রাগ এসে ভিড় জমালো। কোমড়ে হাত রেখে রাগী গলায় বলতে লাগলো,
_আপনি পিচ্চি বললেন কেন আমাকে হ্যা? আমি মোটেই পিচ্চি নই, যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি। আর বেশি হলে সাত-আট বছরের মধ্যেই আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে, তখন আমাকে আর কেউ পিচ্চি বলতে পারবেন না বুঝেছেন!

ইশার এমন কথায় বোকা বোনে চলে গেলো আদৃত। যেকোনো মেয়ে হলে হয়তো অন্য কিছু বলতো কিন্তু ইশা একেবারে সাত-আট বছর পরের কথায় চলে গেলো!
আদৃত তার এসব কথা উপেক্ষা করে বলল,
_এই মেয়ে,এত সাহস কোথা থেকে পাও তুমি? যাই হোক, মেইন কথায় আসি।

ইশা ছোটছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
_কি কথা?

_আদৃত মেহরাজ কে অপমান করেছো তুমি, এত সহজে কি তোমায় ছেড়ে দেওয়া যায়? এর শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।

ইশা শুকনো ঢোক গিলে ভীতু চোখে তাকিয়ে বলল,
_ক কী শাস্তি?

আদৃত কিছুক্ষন চিন্তা করে আবারো ইশার উদ্দেশ্যে বলল,
_তুমিই বলো,কি শাস্তি দেওয়া যায় তোমাকে?

ইশা একবার আদৃত এর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করলো,তারপর তার হাতের দিকে তাকালো। এই হাতের একটা চ*ড় তার গালে পরলে কি হবে ভাবতে লাগলো, আবার ঐ হাত দিয়ে যদি তার হাতে একটা মোচড় দেয় তাহলে তো হাতটাই ভেঙে যাবে।

_কী হলো বলো।

আদৃত এর কথায় ধ্যান ভাঙলো ইশার। তারপর সে যা করলো তার জন্য আদৃত মোটেই প্রস্তুত ছিল না।
ইশা আচমকা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিজের মুখের উপর দু হাত দ্বারা বাধা দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দ্রুতগতিতে বলতে লাগলো,
_আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ প্লিজ প্লিজ। অপমান তো দূড়ে থাক আর কখনো মান ও করবো না আপনাকে। দেখুন আর কদিন পড়েই তো আমার পরীক্ষা, এখন যদি আপনি আমার হাতটা ভেঙে দেন তাহলে আমি কি করে পরীক্ষা দিবো বলুন। যদিও তাতে আমার কোন সমস্যা নেই,কিন্তু আমার মা-বাবার কথা তো ভাবা উচিৎ তাই না। এবারের মতো মাফ করে দিন, আমি আর কখনো আপনার ত্রিসীমানা তেও আসবোনা প্রমিস প্রমিস প্রমিস..

ইশার কাণ্ড দেখে অতি কষ্টে ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি আটকালো আদৃত। সে তো ভেবেছিল শুধু একটু ভয় দেখাবে,কিন্তু ইশা যে এতকিছু ভেবে নেবে সেটা আশা করেনি।
আদৃত কিছুটা গম্ভীর সূরে বলল,
_হাত সরাও..

ইশা চট করে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো কিন্তু চোখ এখনো বন্ধ করে রেখেছে। আদৃত কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
_চোখ খোলার জন্য কি আলাদা ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে?

আদৃত এর ধমকে সাথে সাথেই চোখ খুলল ইশা। এতক্ষন নিজের হাসি আটকে রাখলেও ইশার এই ভীতু লুক দেখে এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা আদৃত। বেশ উচ্চস্বরেই হাসতে লাগলো সে।

আদৃতের মুখে এই হাসিটা বেশ মানিয়েছে, ইশা প্রথমবারের মতো আদৃতের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো। মেয়েরা যে তার উপর ক্রাশ খায়,তার জন্য পাগল হয়ে যায় এর যথেষ্ট কারণ আছে। হেয়ার স্টাইল থেকে শুরু করে গালে থাকা চাপদাড়িতে এককথায় দারুণ লাগছে তাকে। ইশা মনে মনে ভাবলো,
_লোকটা দেখতে এত্ত হ্যান্ডসাম এন্ড কিউট। কিন্তু কথাগুলো এমন করলার মতো কেন? আমাকে ভয় দেখিয়ে এখন আবার নিজেই হাসছেন। আচ্ছা আমি ওনার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছি কেন? আমিও কি ক্রাশ ট্রাশ খেয়ে গেলাম নাকি। না না এমন লোকের উপর আমি ক্রাশ খেতেই পারিনা,নো ওয়ে। ধুর,আমি কিসব ভাবছি এগুলো!
নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে ইশা ভ্রু কুঁচকে ছোটছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
_আপনি হাসছেন কেন?

আদৃত নিজের হাসি কিছুটা থামিয়ে বলল,
_এই তাহলে তোমার সাহস! সাহসিকতার তো স ও নেই তোমার মধ্যে।

ইশা এবার কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদৃত এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল,
_কিন্তু হ্যা, প্রচুর ইন্টারটেইনমেন্ট পেলাম তোমার কাজে। সো..ফার্স্ট এন্ড লাস্ট বারের মতো তোমাকে মাফ করে দিলাম।

____
ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে বেরিয়ে এলো মোহনা। পানি খেতে খেতেই উপরের দিকে তাকিয়ে হাটছিল সে।
সায়ানও অনেক দিন পর কলেজে আশায় হাটতে হাটতে আশপাশটা তাকিয়ে দেখছিল। মোহনাও যে উপরের দিকে তাকিয়ে হাটছিল সেটা সে খেয়াল ই করেনি।
অত:পর যা হওয়ার তাই হলো। দুজনে ধাক্কা খেয়ে একই সাথে পড়ে গেলো,সায়ান নিচে আর মোহনা তার উপরে। পানির বোতলটা খোলা থাকায় কিছুটা পানি ছিটকে সায়ান এর চুলে আর বাকিটা নিচেই পড়ে গেছে।
মোহনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়ান এর দিকে। এমন একটা ফিল্মি সিন তার সঙ্গে ঘটলো,এটা তো তার ড্রিম ছিল।
অন্যদিকে সায়ান বেচারা নড়তেও পারছে না। চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,
_ও মা গো,আমার কোমড়টা গেলো। কোন হাতির বাচ্চা আমার উপর পড়লো রে?
এতক্ষন সায়ান এর দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার কথাটা শুনে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো সে। তারপর রাগী গলায় বলল,
_এই এই,আপনি কাকে হাতির বাচ্চা বললেন হ্যা?

সায়ান ধীরেধীরে কোমড় ধরে উঠে দাঁড়ালো। তারপর নিজের চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
_তোমায় ছাড়া কাকে বলব? মানলাম আমি একটু বেশি ই হ্যান্ডসাম, তার জন্য এভাবে হুমরি খেয়ে পড়ার কি আছে?

_আইছে বড় হ্যান্ডসাম। আর আমি আপনার উপর কেন পড়তে যাবো শুনি? নিজেই তো চোখ কপালে তুলে হাটছিলেন,তার বেলায় কিছুই না!

_আচ্ছা! আমি চোখ কপালে তুলে হাটছিলাম, আর তুমি তো চোখটাই ফেলে দিয়ে হাটছিলে। আমার কোমড় টা ভেঙে গেলে কি হতো, আমায় কে বিয়ে করতো তখন।

মোহনা নিজের জামা ঝেড়ে নিয়ে পড়ে থাকা বোতল টা তুলল। তারপর বলতে লাগলো,
_আপনার মতো ছেলেকে না এমনিতেও কেও বিয়ে করবে না। আর বিয়ে হলেও যেন আমার চেয়ে তিন গুণ বেশি মোটা মেয়ের সাথে বিয়ে হয় আপনার,হুহ..

_এই মেয়ে তুমি কি অভিশাপ দিচ্ছো আমাকে!

_হ্যা হ্যা তাই দিচ্ছি,অবশ্য আপনার সাথে ফালতু কথা বলছি কেন আমি!

কথাটা বলেই সেখান থেকে পা বাড়ালো। সায়ান ওর পিছনে যেতে নিলেই কোমড়ের ব্যাথায় আর যেতে পারেনা। কোমড়ে হাত দিয়ে পাশে বলে মনে মনে বলে,
_কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা..

___
আদৃতের কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো ইশা। প্রেস্টিজ গেছে তো যাক, তবুও এবারের মতো রক্ষা তো পেয়েছে। মনে মনে বলছে,
_হুহ, এমনভাবে বলছেন যেন বিরাট দয়া দেখিয়েছেন আমার উপর। যা খুশি করুক,তুই যে বেঁচে গেছিস এটাই বড় ইশা। একবার এই লোক সরে যাক এখান থেকে, আর জীবনেও ওনার সামনেই আসবোনা আমি।

_তবে হ্যা,নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে…

আদৃতের কথার মাঝেই ইশা বাধা দিয়ে বলল,
_প্রশ্নই আসে না। আপনার সামনে আসলেই না আমি কিছু করবো। আমি তো আপনার সামনেই আসবো না তাহলে কোন ভুল করার তো সম্ভাবনাই নেই।

_আরে আদৃত, হুয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!
কন্ঠ অনুসরণ করে দুজনেই পাশে তাকালো…

#চলবে
[বোনাস পার্ট চাই? তাহলে কমেন্ট এ জানাবেন। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য পেলে বোনাস পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here