#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৫ (বোনাস পার্ট)
#মেহরিন_রিম
পাশে তাকিয়ে স্যারকে দেখতে পেয়ে আদৃত হালকা হেসে সালাম দিয়ে তার কাছে যায়। তারপর স্যার এর সঙ্গে কথা বলতে থাকে। অন্যদিকে অবাক হয়ে তাদের এই কথাবার্তা শুনছে ইশা, বুঝতে পারছে না স্যার ওনাকে কি করে চেনে। জয়নাল স্যার ইশার অনেক পছন্দের একজন শিক্ষক, যদিও তিনি কলেজের ক্লাস নেন তবে মাঝে মাঝে প্রক্সি ক্লাস এ নাইন টেন এর ক্লাস নিতেও আসে।
কিছুক্ষন কথা বলার পর স্যার ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_কাম হেয়ার ইশা।
স্যার এর কথায় ইশা কিছুটা এগোলো। স্যার এবার আদৃত কে দেখিয়ে বললেন,
_পরিচিত হও ওর সঙ্গে,ও হলো আদৃত। তোমাদের কে আগেও বলেছি ওর কথা, মাই ফেভারিট স্টুডেন্ট।
স্যার এর কথায় ইশার মনে পড়লো, স্যার যখন ওদের ক্লাস এ এসেছেন তখন মাঝেমধ্যেই তার এক স্টুডেন্ট এর প্রশংসা করতেন। তার মানে আদৃত ই সেই স্টুডেন্ট।
ইশার ভাবনার মাঝে স্যার আবারো বললেন,
_প্রচুর ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট,অল টাইম ক্লাস এ টপ করতো। অবশ্য আমি এত পরিচয় দিচ্ছি কেন, তোমার তো চেনার কথা ওকে। এত ভালো গান গায়,এত পপুলার।
নিজের এত প্রশংসা শুনতে ভালো লাগছে না আদৃত এর। তাই স্যার এর উদ্দেশ্যে বলল,
_স্যার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না।
_ঠিক আছে,নাই বা বললাম। কিন্তু তোমাকে তো আজকাল কলেজ এ দেখাই যায় না। টিচার দের ও তো একদম ভুলেই গেছো বোধ হয়।
_তেমন কিছুনা স্যার,আসলে একটু বিজি থাকা হয় তাই আরকি আসা হয়না।
এতক্ষনে মোহনাও সেখানে এসে পৌঁছেছে। আদৃত কে দেখে তার কাছে যেতে যাবে তখন ই ইশা তার হাত চেপে ধরে আটকে দেয়। মোহনাও এবার স্যারকে খেয়াল করে আর এগোয় নি। ইশার এখানে থাকতে একদম ভাল্লাগছে না,কিন্তু স্যার এর সামনে থেকে এভাবে চলেও যেতে পারছে না।
_তা তুমি কি একাই এসেছো নাকি?
_না স্যার সায়ান ও এসে…
_ওরে বাবা রে বাবা, আমার কোমড়টা আসলেই ভেঙে গেলো বোধ হয়।
আদৃত এর কথার মাঝেই সায়ান এক হাত কোমড়ে রেখে খোঁড়াতে খোঁড়াতে সেখানে উপস্থিত হয়।
সায়ান কে এই অবস্থায় দেখে আদৃত তার কাছে গিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
_কি হয়েছে? এভাবে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মতো হাটছিস কেন?
_আরে আর বলিস না, একটা হাতি…
সায়ান এর চোখ যায় মোহনার দিকে,দাঁতে দাঁত চেপে তার দিকে তাকিয়ে আছে সে। সায়ান চোখ সরিয়ে শুধু বললো,
_একটু পড়ে গেছিলাম।
সায়ান চাইলেই বলতে পারতো মোহনার কথা,কিন্তু সেটা বললে আদৃত আরো তার উপরেই হাসবে। আরো স্যার এর সামনে লজ্জায় পড়তে হবে। সেই ভেবে চুপ করে গেছে।
ইশা একবার জহুরি চোখে মোহনার দিকে তাকালো, তার হাবভাব ঠিক সুবিধার লাগছে না ইশার কাছে।
স্যার এবার নিজের চশমাটা ঠিক করে আদৃত এর সামনে এসে বললেন,
_আদৃত,তোমার ফোন নম্বরটা দিয়ে যাও তো। সামনেই ওদের ফেয়ারওয়েল আছে, তোমাকে এবার আসতেই হবে। আমাদের কলেজ এর স্টুডেন্ট ই যখন এত ভালো সিঙ্গার, সেখানে অন্য লোক আনার কি প্রয়োজন। আমি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব, নম্বরটা দিয়ে যাও।
ইশা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে ছুটে এলো স্যার এর সামনে। তারপর বলল,
_কেন স্যার? আমাদের স্কুল এ তো আগে কখনো ফেয়ারওয়েল এ বাহিরে থেকে সিঙ্গার আনা হয়নি, এবার তাহলে কি প্রয়োজন।
_আরে বাহিরে থেকে কোথায়? আদৃত তো আমাদের কলেজ এর ই এক্স স্টুডেন্ট,আমি বলব প্রিন্সিপাল স্যার এর কাছে। স্যার ও নিশ্চই খুব খুশি হবেন।
আদৃত প্রথমে না বলতে চাইলেও ইশার এমন কথা শুনে সে আরো আগ্রহ নিয়ে বলল,
_কেন নয় স্যার, আপনি যখন বলেছেন আমি অবশ্যই থাকার চেষ্টা করবো। শুধু ডেটটা একটু আগে জানাবেন, তাহলে আর অন্য কোথাও শিডিউল রাখবোনা সেদিন।
তারপর নিজের পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে বলল,
_স্যার এখানে আমার নম্বর আছে।
স্যার কার্ডটা নিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।
মোহনা তো খুশিতে পারলে এখানেই নাচা শুরু করে দেয়, কিভাবে সাজবে সেদিন সেই প্লানিং করতে শুরু করে দিয়েছে সে। অন্যদিকে ইশার এতক্ষন ধরে করা ভাবনার উপর আদৃত যেন এক বালতি পানি ঢেলে দিলো। কোথায় ভাবল এই লোকের সামনেই আসবেনা, সেখানে ফেয়ারওয়েল এর দিনও নাকি ইনি থাকবেন।
কলেজ টাইম হওয়ায় খুব বেশি স্টুডেন্ট ছিলোনা মাঠে। তবুও অল্প কয়েকজন ছিল, আর তারাই আদৃত কে দেখে ছুটে এসেছে। সবার একটাই কথা, আদৃত এর এখন অন্তত একটা গান শোনাতেই হবে। আদৃত শুরুতে আপত্তি জানালেও সবার জোরাজুরিতে রাজি হলো সে।আর সায়ান একটা গাছের নিচে বসে নিজের কোমড়ের চিন্তা করে চলেছে।
আদৃত বাকিদের সাথে গান গাইতে একটু পাশে যেতেই মোহনাও অতি উৎসাহ নিয়ে সেদিকে যেতে লাগলো। ইশা তৎক্ষণাৎ তার হাত চেপে ধরে বলল,
_কোথায় যাচ্ছিস তুই? স্যার পড়ানো শুরু করে দেবে জলদি চল,এখন ওনার গান শুনতে হবেনা।
মোহনা হাতটা ছাড়িয়ে বলল,
_আরে ধুর,তুই কর গিয়ে টাকলা স্যার এর ক্লাস। এমন সুবর্ন সুযোগ কেউ মিস করে নাকি,তুই গেলে যা আমি যাবোনা।
কথাটা বলেই মোহনা সেদিকে ছুটলো। ইশার ইচ্ছে না থাকলেও বাধ্য হয়ে সেদিকে যেতে হলো।
আদৃত একটা গাছের নিচে গিটার হাতে দিয়ে বসেছে,আর বাকিরা সকলে তার সামনে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশাও সেখানে এসে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।
আদৃত অধিকাংশ সময় চোখ বন্ধ করেই গান গায়,চেষ্টা করে বাহ্যিক জগতের সব চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসার। এবার ও তাই করলো সে। চোখ বন্ধ করে গিটারে সুর তুলে গাইতে লাগলো,
কারণে-অকারণে নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত জোছনা নিলাম
নিয়মে-অনিয়মে দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো বাঁ পাশেই ছিলাম
কারণে-অকারণে নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত জোছনা নিলাম
ভেতরে-বাহিরে দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো বাঁ পাশেই ছিলাম
চোখে জল নোনা কি? নিয়ে গেল জোনাকি
কেন আমি পথে একা দাঁড়িয়ে? আলোদের পিয়নে
সোডিয়াম নিয়নে যেন সবই কোথায় হারিয়ে
আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
পুরোটাই… (সংক্ষেপিত)
সকলে একসঙ্গে হাততালি দিয়ে উঠলো, মোহনা তো গান শুনে সেন্সলেস হয়ে যায়নি ভাগ্য ভালো। অনেকে আদৃত এর সাথে কথা বলতে লাগলো,কেউ কেউ তার অটোগ্রাফ চাইতে লাগলো।
আর ইশা, সে যে কোন ঘোরের মধ্যে চলে গেছে নিজেই জানেনা। এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো আদৃত এর দিকে। আদৃত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক বেশি বেজে গেছে। একবার ইশার দিকে তাকিয়ে বাকি সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো সে।
মোহনার ডাকে এবার ধ্যান ভাঙলো ইশার। সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা মাথায় আসতেই গেট এর দিকে তাকিয়ে দেখলো আদৃত আর সায়ান অলরেডি বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে।
মাথায় হাত চলে গেলো ইশার।
হতাশ কণ্ঠে বলল,
_এ জীবনে বোধ হয় তোর আর ওনার সঙ্গে সেলফি তোলাই হবেনা রে ইশা!….
#চলবে
[বোনাস পর্ব ছিল,তাই ছোট বলে লজ্জা দিবেন না।
শুধু নেক্সট কমেন্ট না করে আপনাদের মতামত জানালে খুশি হতাম।
হ্যাপি রিডিং।]