শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_২৪ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
660

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_২৪
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

গ্ৰীষ্মের খরতাপে প্রানীকুল যখন অতিষ্ঠ ঠিক তখনই আগমন ঘটে বর্ষার। আচ্ছা ঋতুরাজ বসন্ত হলে, ঋতুরানী কি বর্ষাকে বলা যেতে পারেনা? প্রকৃত অর্থে ঋতুরানী বর্ষাকেই বলা যেতে পারে। গ্ৰীষ্মের খরতাপে যখন সকলে অতিষ্ঠ তখনই ধরনীর বুকে বর্ষা নিয়ে আসে প্রশান্তি। মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ ধরনীকে সতেজতায় ফিরিয়ে আনে বর্ষাকাল। গাছ পালা যেনো প্রান ফিরে পাই। সারা রাত বৃষ্টি হওয়ার পরে সকালের একটু খানি রোদ যখন খিলখিলিয়ে হেসে উঠে তখন হয়তো ধরনীও প্রকৃতির সাথে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। বিছানার মাঝখানে পুষিকে কোলে নিয়ে বসে আছে সূরা। তার আশেপাশে জামা কাপড়ের স্তুূপ। মেহের সকাল থেকে বিয়ে বাড়িতে পড়ার জন্য একটার পর একটা জামা দেখাচ্ছে সূরাকে। এসবের মধ্যে একটাও না সূরার পছন্দ হচ্ছে আর না মেহেরের। দিয়া বসে বসে আঙ্গুল খাচ্ছে আর দুই বোনের কান্ড দেখছে। মুখে বিরক্তি নিয়ে মেহের বললো

“ধুর। আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। বিয়ে বাড়ীতে কি এসব পড়ে কেউ। নতুন জামা দরকার আমার।”

দিয়া চোখ পাকিয়ে বলে “এইটুকু মেয়ের পছন্দের কি আছে রে? এতোগুলো জামার মধ্যে নাকি তার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। একঘন্টা ধরে একটা জামাও সিলেক্ট করতে পারলি না। পাজি একটা‌।”

মেহের কাঁদো কাঁদো মুখ করে সূরার দিকে তাকিয়ে বলে “ও সূরা আপু দেখো দিয়া আপু বকছে আমাকে? তুমিই বলো এগুলো একটাও কি বিয়ে বাড়িতে পড়ার মতো?”

“উহু। আমার তো পছন্দ হয়নি। আর দিয়ু তুই আমার মিষ্টি বোনটাকে বকছিস কেন? তুই কি ভুলে গেছিস আমরা তোর ননদ। আমরা চাইলেই তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারি।”

দিয়া হাত জোড় করে বলে “ক্ষ্যামা দে বোন। আমার ভুল হয়েছে। তোর আর তোর বোন আজ সারাদিন জামা সিলেক্ট কর আর আমরা বিয়ে খেয়ে চলে আসি‌।”

“বিয়ে খাওয়া যায় জানতাম না তোহ্।”

ঘরে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বলে উঠে জিহাদ। দিয়া চোখ কুঁচকায়। ঠিক তার হাড় জ্বালাতে চলে এসেছে বজ্জাত টা। রাফি এসে সূরার পাশে বিছানায় বসে। জিহাদ শুয়ে পড়ে বিছানার কাপড়গুলোর উপরেই। সিহাব গিয়ে দিয়ার পাশে বসে। মেহের ঠোঁট উল্টে বলে

“জিহাদ ভাইয়া তুমি আমার কাপড়ের উপরে শুয়ে পড়লে কেন? আমার কাপড়গুলো তো তোমার মতো জলহস্তীর ওজনে মারা যাবে। এই ওঠো! ওঠো বলছি।”

সবাই ঠোঁট চেপে হাসে। জিহাদ আশেপাশে তাকায়। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

“বোন এগুলো তোর কাপড়। আমি ভাবলাম ময়লার স্তূপ। আমার শার্ট টাও ময়লা হয়ে আছে তাই ময়লা ময়লা ময়লাক্ষয় করতে শুয়ে পড়েছি। আমি কোথায় তোর উপকার করলাম। আর সেই তুই আমাকে ওজনের খোটা দিলি। বহুত কষ্ট পাইছি।”

মেহের চোখ ছোট ছোট করে কৌতুহলী হয়ে বলে “ময়লা ময়লা ময়লাক্ষয় আবার কি জিহাদ ভাইয়া?”

সূরা ঠোঁট চেপে হাসে। এই বদমাশ জিহাদ আজ বোকা বানানোর জন্য ছোট মেহের টাকেই পেয়েছে। জিহাদ যেন উৎসাহ পেলো মেহেরের প্রশ্নে। গদগদ হয়ে বলল

“তুই জানিস না? আসলে জানবি কিভাবে। আমি তো কখনো আমার ট্যালেন্ট প্রর্দশন করিনি কারও সামনে। সে যাই হোক। বিষে বিষে বিষক্ষয় হলে ময়লা ময়লা ময়লাক্ষয় হয় বুঝলি পুচকি।”

মেহের দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো জিহাদের দিকে। এটা কোনো কথা হলো। সে তো ভেবেছে কিনা কি বলবে। নাক ফুলিয়ে বললো

“জিহাদ ভাইয়া তুমি আমাকে একদম পুচকি বলবে না। ঠিক সময়ে আমার বিয়ে হলে আজ আমার একটা বাচ্চা থাকতো। আমার গুলুগুলু বাচ্চাটা কে মা ছাড়া থাকতে হতো না। কিন্তু দেখো কেউ বুঝলো না আমার কষ্ট।”

হঠাৎ শুকনো কাশির শব্দে দরজার দিকে তাকালো সবাই। মিসবাহ আর রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। রায়হানের কাশির যেন থামাথামি নেই। মেহের দ্রুত টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল রায়হান কে‌। পানি খেয়ে যেন স্বাভাবিক হয় সে‌। রায়হান ধমকে উঠল মেহের কে

“এই মেয়ে বয়স কত তোর? এখনো নাক টিপলে তরল বের হয় আর সে মেয়ে নাকি বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে।”

মেহের কটমট চোখে তাকায় রায়হানের দিকে। এই লোক থাকতে তার কখনো বিয়ে করাই হবেনা আর বাচ্চা তো বিলাসিতা। ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো মেহের। মিসবাহ বোন আর বন্ধু কান্ড দেখে বাঁকা হাসে‌। এগিয়ে যায় সূরার কাছে। পায়ের কাছে বসে ক্ষীন স্বরে বলে

“পায়ে কি এখনো ব্যথা আছে? ব্যথা থাকলে বলো হসপিটালে আগে যাবো।তারপরে বিয়ে বাড়ি যাবো।”

সূরা নরম সুরে বলল “না স্যার। ঠিক আছি আমি। ব্যথা নেই বললেই চলে। আর টেস্ট তো করা হয়েছে। আপনিই তো দেখলেন সব। সামান্য পা মচকে গেছে।”

মিসবাহ সূরার দিকে তাকায়। সেইদিন রাতে মেয়েটা নিজের ইচ্ছায় তাকে জড়িয়ে ধরার পরে তার মধ্যে আগের মতো না আছে কোনো দ্বিধা আর না আছে কোনো অস্বস্তি। তাহলে কি সত্যি তার অপেক্ষার প্রহর ফুরোলো? গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিসবাহ্। তার প্রনয়ের শেষ পরিনতি কি হবে জানা নেই তার। মিসবাহ সূরার পায়ে হাত দিতেই সূরা লাফিয়ে ওঠে। দ্রুত গুটিয়ে নেয় নিজের পা‌। মিসবাহ ভ্রু কুঁচকে তাকালো সূরার দিকে। সূরা মিসবাহর চেয়ে দ্বিগুণ ভ্রু কুঁচকে বলে

“এই আপনি সবসময় আমার পায়ে হাত দেন কেন?”

“সমস্যা কি? আমি যে একজন ডাক্তার ভুলে গেছো?”

সূরা ভেংচি কেটে বলে “জানা আছে আমার, আপনি কেমন ডাক্তার। সামান্য পা মচকে যাওয়ায় যে হসপিটাল নিয়ে যায় সে আবার নাকি ডাক্তার। আপনার তো নিজের ট্রিটমেন্টের উপরেই ভরসা নেই। আমার কেনো থাকবে?”

মিসবাহ কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো।এই মেয়ে কেমন তা আগে ভাবা উচিত ছিল তার। পায়ে ব্যথা পাওয়ার পরেরদিন সকালে সূরা হসপিটাল যেতে চাইনি ব্যথা কমে যাওয়ায়। কিন্তু মিসবাহ জোর করে নিয়ে যায় তাকে। আর এখন ঠিক ঘুরিয়ে পেচিয়ে সাতদিন আগের কথা শুনালো তাকে। যতই মিসবাহ ডাক্তার হোক। পায়ে বেশি ব্যথা পেয়েছে কিনা তার জন্য টেস্ট করানো তো দরকার। কিন্তু এই মেয়েকে কে বোঝাবে? মিসবাহ ভরাট কন্ঠে বলে

“আমি রিস্ক নিতে চাইছিলাম না। আর কথা যদি তোমার হয় তাহলে তো রিস্ক নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এখন সবাই রেডি হয়ে নাও। বেড়িয়ে পড়তে হবে আমাদের।”

মিসবাহর কথায় সকলে সম্মতি জানিয়ে রেডি হতে যায়। সবাই চলে গেলে মিসবাহ সূরার কাছে এগিয়ে আসে। সূরার কাছে একটু ঝুঁকে বলে

“আমার স্পর্শ সামান্য তোমার ওই পদযুগলে পেতেই কেঁপে উঠে তোমার তনু মন। যখন আমার রঙে রাঙিয়ে দিব তখন কি করবে?”

সূরা গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে মিসবাহর দিকে। এই অসভ্য পুরুষ কি কখনো ভালো হবেনা? লহমায় লজ্জায় রক্তিম হয়ে ওঠে কপোলদ্বয়। সূরা বিরবিরিয়ে বলে

“এই নির্লজ্জ বেহায়া অসভ্য পুরুষকে আমি কখনো বিয়ে করবো না।”

“এই নির্লজ্জ বেহায়া অসভ্য পুরুষই তোমার শেষ ঠিকানা সুরজান।”

সূরা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেই। মিসবাহ মুচকি হেসে সরে আসে সূরার থেকে। প্যান্টের এক পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেলতে দুলতে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। সূরা মিসবাহর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে ব্যঙ্গাত্নক স্বরে বিরবিরালো

“জমিদারদের রেখে যাওয়া নির্লজ্জ বেহায়া অসভ্য জমিদার।”

পরক্ষনে মুখে হাসি ফুটে উঠল রমনীর। মনে মনে আওরালো

“আমার জমিদার সাহেব।”

★★★★★★

এক জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে মোজাম্মেল সিকদারের বাড়ির সবাই। আজকেও গাড়িতে সূরার শরীর খারাপ হয়। দুটো গাড়িতে সকলে এসে পৌঁছায় বিয়ে বাড়ির সামনে। সূরা গাড়িতে উঠে সেই যে চোখ বুজে আছে আর চোখ মেলে তাকায়নি। সবাই গাড়ি থেকে নামলেও মিসবাহ আর সূরা এখনো বসে আছে গাড়িতে। মিজানুর সিকদার সূরার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন

“আম্মাজান আপনার কি অনেক শরীর খারাপ করছে? ভেতরে চলেন রেস্ট নিবেন।”

সূরা চোখ বুজেই ক্ষীন স্বরে বলে “আমি ঠিক আছি আব্বাজান। চিন্তা করবেন না। একটু জিরিয়ে নেই। তারপর না হয় যাবো ভেতরে।”

মিসবাহ গাড়ি থেকে নেমে আসলো। সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল “তোমরা সবাই ভেতরে যাও চাচ্চু। আমি সুর কে নিয়ে আসছি।”

মিজানুর সিকদার কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে মোজাম্মেল সিকদার সবার উদ্দেশ্যে বলেন

“ছোট জমিদার সাহেব ঠিক বলেছে সবাই ভেতরে চলো। ওরা একটু পরেই বরং আসুক।”

কেউ আর কোনো কথা বারালো না। ভেতরে যায় সকলে।

★★★★★★

পঞ্চপাণ্ডবের চারজন হেলতে দুলতে সবার সাথে সাথে ভেতরে যাচ্ছে। জিহাদ তো এমন একটা ভাব নিয়ে আছে যেনো তার মতো ছেলে পাওয়া দুষ্কর। আজ যে মেয়ে আগে পাবে তার মতো ভাগ্যবতী আর কেউ নেই পৃথিবীতে। যে আগে পাবে সে লুটে নাও। সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় জিহাদ। মেয়েটাও যে তার মতো শক্ত খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগায় পড়েনি তা নয়। দুজন দুইপাশে ছিটকে পড়ে। জিহাদ চেঁচিয়ে উঠে

“কোন সা**লা রে। চোখের মাথা,,,,

আর কিছু বলতে পারেনা জিহাদ তার আগেই তার কন্ঠনালি রোধ হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন বুঝি বেড়ে গেল। এতো জোরে লাফিয়ে উঠছে কেন তার হার্ট। বেরিয়ে যাবে নাকি। বুকের বা পাশে হাত রাখে সে। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে “মাশাআল্লাহ।”

রাফি গিয়ে ধরে তুলে জিহাদ কে। ওকে তুলতেই হাফ ছেড়ে যায় রাফির। রাফি মুখ কুঁচকে বলল

“খেয়ে খেয়ে দানবের মতো শরীর বানিয়েছিস সা**লা। জান বের হয়ে গেল তোকে টেনে তুলতে।”

জিহাদের কোনো দিকে খেয়াল নেই। এখন রাফির গালিও তার কাছে মিষ্টি লাগছে। জিহাদ নিজেকে সামলে কৌশলে সুধায়

“এই মেয়ে আমাকে ফেলে দিলে কেনো? তোমার নাম কি?”

“প্রিয়া”

প্রিয়া জিহাদের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে। দিয়া প্রিয়াকে তুলতেই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় সদর দরজা দিয়ে। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জিহাদ রাফির কাঁধে হাত রেখে গদগদ হয়ে বলে

“মান মে লাড্ডু ফুটা দোস্ত। হায়! মে মার গায়ি বারবাদ হো গায়ি।”

দিয়া ভেংচি কেটে বলে “যতসব ঢং। এই লুচু একটা মেয়ের দিকে ওই ভাবে তাকাস ক্যান হ্যা?”

জিহাদ দিয়ার গাল টিপে দিয়ে বলে “শুটকি মাছরে আজ তোর কথা এতো মিষ্টি লাগছে ক্যান আমার। তোকে আজ খুব মিষ্টি লাগছে। আমি কি প্রেমে পড়লাম দোস্ত?”

সিহাব চেঁচিয়ে উঠে “এই দিয়ার প্রেমে তুই পড়বি ক্যান? দিয়া আমার। থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো সা**লা।”

জিহাদ চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। বলে “তোর শুটকি মাছ তুই চোরচোরি করে খা। আমি এসব শুঁটকির প্রেমে পড়িনা। আমি তো ওই সুন্দরী রমনীর প্রেমে পড়েছি।”

দিয়া কটমট করে তাকালো। রাফি আর সিহাব হেসে উঠে। জিহাদেরও একটা হিল্লে হলো তাহলে। ভাবা যায়।

#চলছে…….
(কালকের পর্বে সূরার অতীতের সাথে সূচনা সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুত থেকো কিন্তু সবাই )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here