শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_২ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
572

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_২
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

দিবাকর বুজি আজ ধরনীকে তার রুপে ঝলসে দিতে চাই। নাকি রাগ করে এমন মতলব এটেছে সে। বুঝতে পারেনা সূরা। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা তার। পাশেই দিয়া তার অভিযোগ শুনিয়ে যাচ্ছে সূরা কে। সূরা কেনো এতো ঘাড়ত্যারামি করে এই নিয়ে তার শতাধিক অভিযোগ। অভিযোগ কম মিসবাহের প্রশংসা বেশি।আর চুপ করে থাকতে পারলনা সূরা। দাঁত কটমট করে দিয়া কে ধমকে উঠলো

“ওই তোর মাথায় কি গ্যাস্ট্রিক হয়েছে। গ্যাস্ট্রিক হলে বল ঔষধ এনে দিব তোকে।তাও আমার মাথা খাসনা দয়া করে। এমনি গরমে এতোদুর হেঁটে এলাম আর এখন তোর অসহ্যকর কথা। চুপ যা।”

সূরার রাগ দেখে ভয় পেলেও মুখে প্রকাশ না করেই উল্টো রাগ দেখিয়ে দিয়া বলল

“কেনো রে? চুপ করব কেনো?এমন ভাবে বলছিস মনে হচ্ছে আমি তোকে বিশ মিনিটের রাস্তা হেঁটে আসতে বলেছি। নিজে তো আসলি সাথে আমাকেও নিয়ে আসলি।ইশ!মাগো পা দুটো টনটন করছে। স্যার এর গাড়ি তে আস,,

আর বলতে পারল না দিয়া। সূরার ঐ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখ পড়তেই শুকনো ঢক গিললো দিয়া। সূরা মেডিকেল কলেজ গেট পার হতে হতেই বলল

“তোর পছন্দের স্যার কে বলে দিস আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে যেনো চলে। আমি চুপ করে আছি বলে এই না যে আমি পরবর্তীতেও চুপ করে থাকব। সূরা তোর ওই স্যার কে পানি ছাড়াই গিলে খেয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে।”

“তা আর বলতে।”

বিরবির করে বললো দিয়া। সূরা শুনেও না শোনার ভান করলো। কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না তার। দুই বছর থেকে মিসবাহ কে চিনে সে। মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তিত্ব প্রখর। যেকোনো রমনী ওই সুদর্শন পুরুষের প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু সূরা,,,, দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সূরা কিছু না বলেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেল। ঔআজ প্রথম ক্লাস মিস হয়ে গেল।

★★★★★★

“মামা জীবনডায় ত্যাজপাতা হয়ে গেল। না আছে নারী আর না আছে বাড়ী। কপাল সবই কপাল।”

আফসোসের সুরে কথাটি বললো জিহাদ।ওর কথা শুনে দুইজোরা চোখ তাকিয়ে রইল ওর দিকে। সিহাব বিরক্তি প্রকাশ করে বলল

“এই তোর সমস্যা কি? সকালে কি বাথরুম ক্লিয়ার হয়নি? না হলে বল ঔষধ দেই। এমন ঔষধ দিব ডায়রিয়া হয়ে যাবে। তাও বাথরুম হয়নি বলে তো আফসোস করবি না।”

সিহাবের কথায় সায় জানিয়ে রাফি বলে উঠলো

“সিহাব ঠিক বলেছে। বাথরুম ক্লিয়ার না হলে মানুষ হতাশায় ভোগে। বন্ধু হয়ে তোর হতাশা মিশ্রিত মুখ দেখতে পারবো না। দয়ার শরীর কিনা আমাদের।”

নাহ্ আর পারল না সহ্য করতে জিহাদ। এমনি সে আছে নিজের জ্বালায় আর এরা বন্ধু হয়ে কষ্ট বুঝলো না। এরা থাকলে শত্রুর কি দরকার।

“সা**লা চুপ করবি তোরা। এমনি বাসা থেকে বের করে দিয়েছে তাও বিনা দোষে আর তোরা আমাকে খোচাচ্ছিস।”

জিহাদের কথা শুনে সিহাব আর রাফি চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকাল। ওদের এভাবে তাকাতে দেখে মৃদু ঢক গিললো জিহাদ। হতাশায় ডুবে বলল

“তেমন কিছুই করিনি। ব্যালকনিতে বসে সকালে গান বলছিলাম। নিচে একটা মেয়ে ছিল বুঝিনি। হঠাৎ বাবা এসে গাল লাল করে থাপ্পর দিল। কিছু বলার আগেই কলার ধরে বললো আজ থেকে তিন দিনের জন্য এ বাড়ীর দরজা বন্ধ। আমি বললাম কেনো দরজায় কি লক পড়ে গেছে। এ কথা শুনে বিনা নোটিশে আর একটা থাপ্পর দিল। বাইরে এসে দেখি মেয়েটা দাঁত কেলিয়ে হাসছে।”

হঠাৎ রাফি বলে উঠলো “কি গান বলছিলি রে?”

“ওই তো ,,চুম্মা চুম্মা দে দে, ওই টা

লজ্জা মিশ্রিত স্বরে বলল জিহাদ। হঠাৎ পেছন থেকে সূরা আর দিয়া এক সাথে খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। ওদের দেখে সিহাব রাফিও হেসে দিল। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ওদের পাশে বসল সূরা আর দিয়া। জিহাদ এর মুখ দেখে আবারো হেসে উঠলো সূরা। আর সূরার এই হাসি দেখে একজনের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। এখনি বুঝি হার্ট অ্যাটাক হলো। মুগ্ধতা তার চোখে মুখে। নাহ্ মেয়েটি কে হাসলে মারাত্মক সুন্দর লাগে। এভাবে কি হাসা ঠিক। ঘোর অন্যায়। মুচকি হেসে নিজ গন্তব্যে গেল মিসবাহ। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে একটু পানি খেয়ে নিল সূরা। জিহাদ আবারো আফসোসের সুরে বলল

“তোরা হাসছিস?একটু তো মায়া কর। এই তোরা সত্যি আমার বন্ধু তো?এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে। কোথায় আমার সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় মর্মাহত হবি তানা তোরা বত্রিশ পাটি বের করে কেলিয়ে যাচ্ছিস।”

“বন্ধু বলেই তোকে আমরা উগান্ডা পাঠায়নি এখনো। নইলে তুই তো উগান্ডা বাসিন্দা। তোর আসল ঠিকানায় হলো উগান্ডা। নইলে কেউ ঐ গান ব্যালকনিতে বসে বলে।”

দিয়া ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলল। সূরা বলল
“তোরা এমন করে বলছিস কেন? দেখছিস তো বেচারা কতো কষ্টে আছে।”

জিহাদ গদগদ হয়ে বলে উঠলো
“আমি জানতাম বোন। একমাত্র তুই আমার কষ্ট বুঝবি। তুই আমার কলিজা,ফোপরা, কিডনির টুকরা বোন।”

রাফি বলল “আহা কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল তোর সূরাকে এতো পাম দেওয়া দেখে। কিন্তু আমি বুঝলাম না আঙ্কেল শুধু তিন দিন কেন তোকে বাসা থেকে বের করে দিল। তোকে তো বনবাসে দেওয়া উচিত।তবে উগান্ডার বাসিন্দা হওয়া কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার। সবাই হতে পারে না। তুই এই সুযোগ হাতছাড়া করিস না।”

জিহাদ কটমট করে তাকালো। তার তাকানো দেখে সবাই নিষ্পাপ শিশুর মতো মুখ করে বসে রইল। এমন একটা ভাব যেন বন্ধুর মারাত্মক কষ্টে তারা মর্মাহত, ব্যথিত।জিহাদ কিছু না বলেই উঠে চলে গেল। পেছনে চারজন এখন জোরে শব্দ করে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। এরা শত্রু। ঘোর শত্রু।

★★★★★★

প্রভাকর তার তেজ কমিয়ে পশ্চিমাকাশে ঠায় নিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। আজ দুইটা টিউশনি করিয়ে চলে আসার আগে মাহদি নামের বাচ্চাটির মা সূরা কে নিয়ে গল্প করতে লাগে। মাহদির মা সূরা কে স্নেহ করেন খুব। মেডিকেল তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সূরা। ভালো ছাত্রী বিধায় মাহদির পরাশোনার বিষয়ে বেশ ভরসা করে ওর মা সূরাকে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। হাতে থাকা ঘড়িটি জানান দিচ্ছে সাত টা বেজে বিশ মিনিট। আজ অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে মা-বাবা অনেক বার ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছে ওর। সূরার টিউশনি করানো তাদের পছন্দ না। ওর বাবা চাই তার মেয়ে সুন্দর জীবন পাক। কিন্তু সূরা চাইনা আর বাবার টাকায় ভরসা রাখতে। এমনি মানুষগুলোর কাছে তার আকাশসম ঋন। সূরা যে বড্ড স্বার্থপর। বাবা মা ভাই এই মানুষগুলো ছাড়া কে বা আছে ওর। এই স্বার্থের দুনিয়ায় সবাই কালসাপের ন্যায়। স্বার্থে ঘা লাগলে ছোবল মারতে সময় নিবে না। এই মানুষ গুলোই শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে, আগলে রাখে।

” যাবে নাকি আমাদের সাথে? আদরে আদরে ভরিয়ে দিব।”

ভাবনার মাঝেই এই বিষাক্ত কথাটি শুনে পুরো শরীর রাগে ক্ষোভে জ্বলে উঠলো সূরার। কথার উৎস খুজতে সামনে তাকিয়ে দেখল তিনজন গাজাখোর টাইপ বখাটে ছেলে দাঁড়িয়ে তাকে দেখেই বত্রিশ পাটি কেলিয়ে হাসছে। দেখে মনে হচ্ছে সূরার চেয়েও ছোট হবে। রাগে দুঃখে সূরার গা গুলিয়ে আসছে। রাগে গজগজ করতে করতে ওদের দিকে এগিয়ে গেল সূরা। বলল

“আর একবার এইধরনের কথা বললে এখানে মেরেই এখানেই পুতে ফেলবো তোদের। অসভ্য দের দল। এই বয়স কতো তোদের। লজ্জা করেনা মায়ের বয়সী একজনকে এসব বলিস। ঠিক সময় বিয়ে হলে তোদের বয়সী ছেলে থাকতো আমার।”

সূরার কথা শুনে তিনজন একে অপরের দিকে তাকালো। ওরা হয়তো ভাবেনি মেয়েটি এমন কিছু বলবে। ওদের মধ্যে একজন বলে উঠল

“আদর করার জন্য কি বয়স লাগে? আমরা কেমন আদর করতে পারি আমাদের সাথে না গেলে বুঝাই কিভাবে পাখি। চলো আমাদের সাথে।”

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে সূরার। শক্ত কন্ঠে বলল “আর একটাও বাজে কথা বলবি তো একটা মারও মাটিতে পড়বে না।”

একটা শুঁটকি মাছের মতো হ্যাংলা পাতলা ছেলে সূরার হাত খপ করে ধরতেই সূরা হিংস্র বাঘিনীর চাহনি নিক্ষেপ করল ছেলেটার দিকে। সূরার চাহনি দেখে ছেলে তিনটা বিশ্রী ভাবে হাসলো। সূরার গা গুলিয়ে উঠলো। কোনো কিছু না ভেবে অন্য হাত দিয়ে থাপ্পর মারল ছেলেটিকে। ধাক্কা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল সে। ছেলে তিনটার রাগ বোধকরি আকাশ ছুঁই ছুঁই। একজন বলল

“শা** তেজ বেশি। ধর শা**কে।তেজ আজ যদি না কমিয়েছি তো আমার নামও বাবু না।”

সূরার মনে হলো এদের খুন করলেও বুঝি শান্তি পাবে না সে। সূরা কিছু বলার পূর্বেই দুটো ছেলে ওর দুই হাত ধরল। একজন ওর মুখ বেধে দিল। এতো দ্রুত সব হলো সূরা কিছু করতেও পারল না। ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করল সে। কিন্তু পুরুষরুপী কাপুরুষ গুলোর সাথে পেরে উঠলনা। আজ বুঝি এই জীবন সংগ্রামে হেরে যাবে সে। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই বুঝি এখানেই শেষ। নিষ্ঠুর পৃথিবী বুঝি আজ ওকে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। এক আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন,আত্মদ্রাম্ভীক, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মেয়েটি আজ হেরে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের গর্জন ধরনীকে কাঁপিয়ে তুলছে। আজ বুঝি প্রকৃতিও চিৎকার করে বলতে চাইছে “তুমি নিষ্ঠুর পৃথিবী। তুমি নিষ্ঠুর।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here