শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_৬ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
408

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৬
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

নিকষকৃষ্ণ রজনী। ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত মানুষ গুলোকে ব্যস্ততা থেকে আরাল করতে হয়তো ধরনীর বুকে রাত নেমে আসে। রাত্রি যতো গভীর হয় মানুষ গুলো ততো শান্তির খোঁজে ঘুমের জগতে পাড়ি জমায়।কেউ কেউ একাকিত্বের উত্তম সঙ্গি হিসেবে রাতকে বেছে নেয়। সন্ধ্যার দিকে গ্ৰামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে মিজানুর সিকদার ও নুহাশ। বাবা ভাই চলে যেতেই একাকিত্ব আবার আকরে ধরেছে সূরা কে। তারা অনেক বার বলেছেন কিছু দিন গ্ৰামে গিয়ে থাকার কথা। সূরা রাজি হয়নি। সে ঐ বিষাক্ত গ্ৰামে যেতে চাই না। নিজে পায়ে যখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তখন বাবা মা ভাই ভাবি কে ওই অভিশপ্ত গ্ৰাম থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে। আকাশের দিকে তাকালো সূরা। আজ জ্যোৎস্না রাত। অনেক বড় চাঁদ আকাশে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। গত আধা ঘন্টা যাবৎ সূরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। আকাশের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচে তাকালো সূরা। নিচে রাস্তায় একটা মানুষের অবায়ন দেখে কপালে ভাঁজ ফেলে চোখ ছোট ছোট করে বুঝার চেষ্টা করল কে দাঁড়িয়ে। পরক্ষনেই বুঝতে পারলো মানুষটা আর কেউ না মিসবাহ। রাস্তার সোডিয়াম বাতির আলোয় দূর থেকেই মিসবাহ কে সুদর্শন যুবক লাগছে। গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে একমনে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কতো বছরের না দেখার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত সে। সূরার একটু অস্বস্তি লাগছে এভাবে তাকিয়ে আছে তাই। সূরার যে ওই সুদর্শন পুরুষ কে দেখতে ইচ্ছা করছে না তা নয়। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্বের কাছে এভাবে তাকিয়ে থাকা বেমানান। সূরা চোখ সরিয়ে নিয়ে দ্রুত ঘরে গেল। এতক্ষণ সূরা কে দেখছিল মিসবাহ। মেয়েটা আজ কলেজ যায়নি। টিউশনি করাতেও যায়নি দেখে চিন্তা হচ্ছিল মিসবাহর। তাই কোনো কিছু না ভেবেই সূরার বাসার নিচে দাড়িয়ে ছিল প্রায় ঘন্টা যাবত। পরে দেখল তার শ্যামপরি বারান্দায় এসে চন্দ্রবিলাশ করছে। মিসবাহ তখন মুগ্ধ হয়ে সূরাকে দেখছিল। চাঁদের আলোয় তার শ্যামপরি কে চন্দ্রকন্যা লাগছিল। সূরা বারান্দা থেকে গেলেও মিসবাহ অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। একটু জোরেই বললো

“কারো যদি আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে বারান্দায় এসেই দেখতে পারে। তাহলে আমাকে দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যেতো আর তাকে দেখে আমার চোখ পরিতৃপ্তি পেত।”

বারান্দার দরজার ওপাশে লুকিয়ে মিসবাহ কে দেখছিল সূরা। মিসবাহ যে বুঝে যাবে সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। পেলে এতো লজ্জায় পরতে হতোনা। মিসবাহ কে অসভ্য লোক উপাধি দিয়ে ঘরে চলে গেল সূরা। মিসবাহ বুঝল তার প্রেয়সী লজ্জা পেয়েছে। মিসবাহ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো

“হায় আফসোস! তোমার লজ্জা রাঙ্গা ওই মুখোস্রী আমার এই দুনয়ন দেখতে পেলোনা। লজ্জাবতী তুমি কি পারোনা তোমার এই প্রেমিক পুরুষ কে একবার তোমার ওই লজ্জারাঙ্গা মুখোস্রী দেখাতে।বেশি কিছু কি চাইলাম সুরজান?

★★★★★★

রাতের সকল অন্ধকার কে পরাজিত করে বিজয়ী বেশে দিবাকর যখন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে তখন তার রুপে যেন ধরনী সতেজতা ফিরে পায়। এ কি রুপ তার! মানুষের জীবনও তো এমনই। দুঃখের পরে সুখ আসবেই। অন্ধকার কেটে আলোকিত হয়ে উঠবে সবকিছু। অন্ধকার আছে বলেই না আমরা আলোর মর্ম বুঝি। বারান্দা দিয়ে রোদ এসে সূরার মুখে পরতেই ঘুম হালকা হলো তার। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে নিল সে। পিটপিট করে তাকিয়ে উঠে বসল। দেয়াল ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে সাতটার ঘর ছেড়েছে সে কিছুক্ষণ আগেই। দ্রুত ওয়াসরুমে ছুটলো সে। বড্ড বেশি দেরি হয়ে গেছে। কাল মিসবাহর কথা ভাবতে ভাবতে অনেক দেরি হয়েছে ঘুমাতে। সকালের নামাজ কাযা আদায় করা লাগবে। তারপরে আবার একটা এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ছিল গতকাল। কাল কলেজ না যাওয়ায় জমা দেওয়া হয়নি। আজ দিতেই হবে। কিন্তু দেরি হয়ে গেল। এসব ভেবেই রাগ হলো সূরার। তার সব রাগ গিয়ে পরলো বেচারা মিসবাহর উপর। কিছু গালাগালি দিয়েও দিল। মিসবাহকে মনে মনে শতাধিক বার অসভ্য উপাধি দিতে দিতে রেডি হয়ে সূরা দিয়াকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কলেজ গেট পেরিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে পঞ্চপাণ্ডব দলের তিনজনকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সূরা ও দিয়া। সূরা কে দেখে জিহাদ বলে উঠলো

“কীরে বিদ্যার রানী আজ এতো লেট লতিফ কেন তোরা? জানিস না আজ প্রথমেই কার ক্লাস?”

সূরা কিছু বলবে তার আগেই সিহাব ব্যস্ত কন্ঠে বলল “এই পরে কথা বলিস তোরা।আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে ক্লাস শুরু হতে। দেরি হলে আর ঢুকতে দিবে না। চল চল।”

সবাই সিহাবের কথা শুনে ক্লাস রুমের দিকে দৌড় দিল। বেচারি সূরা দিকবিদিক না দেখে দৌড়ে ক্লাসে ঢুকবে ওমনি শক্ত কিছুর সাথে বারি খেয়ে যেই পরতে নিবে ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল সে। কিন্তু একি সে পরলে তো ব্যাথা পাবে। কিন্তু সে পরল না কেন? পরক্ষনে মনে হলো কারো শক্ত বাহুবন্ধনী তে আবদ্ধ সে। চোখ খুলে সামনে মিসবাহ কে এতো কাছে থেকে দেখে হকচকিয়ে গেল সূরা। মিসবাহর নিঃশ্বাস তার সারা মুখে খেলা করছে। মিসবাহর এক হাত সূরার কোমড় পেঁচিয়ে আছে। মিসবাহর চোখে মুগ্ধতা। এই গভীর চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা সূরার পক্ষে সম্ভব না। এই চোখে যে সূরা নিজের মৃত্যু দেখে। নিজের সত্তা,আত্মঅহংকার, নিজের তৈরিকৃত জগৎ সব ভুলে এই গভীর চোখে হারিয়ে যেতে মন চায়। সূরা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। মিসবাহ বাঁকা হেসে সূরা কে সোজা করে দাড় করিয়ে দিল। সূরার দিকে একটু ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো মিসবাহ

“সুর সামান্য এক ধাক্কাতেই পড়ে যাচ্ছিলে! আজ থেকে বেশি বেশি খাবে। ভবিষ্যত বলেও তো কথা আছে। আমি তো আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি।”

কথাটা বলেই মিসবাহ সূরার পাশ কাটিয়ে চলে গেল আর রেখে গেল হতভম্ব হয়ে যাওয়া সূরা কে। সূরার মনে হচ্ছে সে এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ডাক্তার কি বলে গেল এটা? সূরার একটুও সময় অপচয় করতে হলো না মিসবাহ কি বোঝাতে চেয়েছে। হঠাৎ করেই সূরার লজ্জা লাগছে। লজ্জা কে প্রাধান্য না দিয়ে মিসবাহ কে সহজেই অসভ্য উপাধি দিল সে। তবুও কেন এই লজ্জা গুলো তাকে গ্ৰাস করছে। এতোক্ষণ বিনা পয়সায় রোমান্টিক সিন দেখছিল পঞ্চপাণ্ডব। সূরা কে লজ্জা পেতে দেখে সবাই এগিয়ে আসল। সূরা কে মঙ্গলগ্রহ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য রাফি ইচ্ছাকৃত একটু কেশে উঠল। হঠাৎ এমন হওয়ায় হকচকিয়ে গেল সূরা।সবার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিতেই দেখা মিলল তাদের সকলের মুখে শয়তানি হাসির। সূরা জানে এখানে আর থাকা যাবে না তাই দ্রুত প্রস্থান করল সে। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়েই সকলে একপ্রকার জোর হেসে উঠলো।

★★★★★★

মধ্যাহ্নের শেষ ভাগ।মিসবাহর কেবিনের দরজা সামনে দাড়িয়ে আছে সূরা। এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে সে। কিন্তু দরজায় নক করতে অস্বস্তি হচ্ছে। সকালের পরে মিসবাহর কথা মনে পড়লেই সব বজ্জাত লজ্জারা তাকে ঘিরে ধরছে। লোকটা সত্যি অসভ্য। নয়লে কেউ এভাবে বলতে পারে। কিন্তু এ্যাসাইনমেন্ট আজ জমা না দিতে পারলে তো পরীক্ষার মার্ক জুটবে না। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই নিজের আঙ্গুল কামড়াতে কামড়াতে চিন্তায় মগ্ন সূরা হঠাৎ গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে হকচকিয়ে গেল

“ভেতরে না এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো।”

সূরা দরজা ঠেলে ভেতরে তো গেল কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছেনা মিসবাহ বুঝল কিভাবে সে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এই মানুষটাকে তার রহস্য মানব মনে হয়। সূরা নভ্র কন্ঠে সালাম দিল

“আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।”

মুচকি হেসে মিসবাহ প্রতিত্তরে বলল “ওয়ালাইকুমুস সালাম। ”

সূরা কিছু বলবে তার আগেই কেউ তার উদ্দেশ্য বলে উঠলো

” কেমন আছেন মিস সূরা? আমি আপনার স্যারের ল্যাংটা কালের একমাত্র কলিজার ফ্রেন্ড রায়হান কবীর।”

সূরা পাশে তাকিয়ে দেখল একজন সুদর্শন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক তার দিকে একগাল হেসে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সূরা ক্ষীণ হেসে মুখে সালাম দিল। রায়হান মুখে হাসি রেখেই হাত গুটিয়ে সালামের জবাব দিলো। মিসবাহ তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করল রায়হানের দিকে। রায়হান মিসবাহর দৃষ্টি দেখে ঠোঁট আরো প্রসস্থ করে দাত কেলিয়ে হাসলো। এমন ভাব যেনো সে কোনো জোকার দেখছে। মিসবাহর শরীর রাগে রি রি করে উঠছে। রায়হানের থেকে চোখ সরিয়ে সূরার মুখোস্রীতে তাকিয়ে বলে

“বসো সুর। কি বলতে এসেছো বলো।”

সূরার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। এই লোক সুধরাবে না। এতো বার বলে,সুর বলে যেনো সম্বোধন না করে তবুও বলে। সামনে বসে থাকা এই সুদর্শন পুরুষটা কি জানেনা হৃদয় নিংড়ানো আবেগময় এই সম্বোধন সূরার কঠোর ব্যক্তিত্ব নিমিষেই চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সূরা একটু ধাতস্থ হয়ে বললো

“স্যার আসলে গতকাল এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ছিল কিন্তু পারসোনাল ইস্যুর জন্য দিতে পারিনি। দয়া করে যদি জমা নিতেন। আর এমন হবেনা।”

মিসবাহ গম্ভীর স্বরে বলে “সুর তুমি কি জানো না ডেট পার হলে এ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার নিয়ম নেই। তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে কিছু বলবনা। তাহলে বলব ভুল ভেবেছ তুমি। আমি আমার সাবজেক্টে কোনো অবহেলা বরদাস্ত করবনা।”

মুখ ছোট করে নিল সূরা। সে ভেবেছিল মিসবাহ জমা নিয়ে নিবে। মনে মনে নিজেকে কড়া শাসন করল সে। আর এমন করবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করল। মাথা নিচু করেই বললো

“সরি স্যার। আর কখনো এমন হবে না। প্লীজ মাফ করবেন।”

সূরার ছোট মুখোস্রী দেখে বড্ড মায়া হলো মিসবাহর। কিন্তু সে নিরুপায়। সূরা পড়াশোনা করছে না বললেই চলে। গত ক্লাস টেস্ট গুলোতে মার্ক খুব একটা ভালো না তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিসবাহ্। বলে উঠলো

“সুর এ্যাসাইনমেন্টটা টেবিলের উপর রাখ।আর এটা মনে রাখবে স্টাডি না করলে লাইফে সামনে এগোতে পারবেনা। যাই করো পড়াশোনায় গাফিলতি করোনা। মনে থাকবে?”

“জী। মনে রাখব স্যার।”

এতক্ষণ দুই কপোত কপোতীর কথা শুনছিল রায়হান। মিটমিট করে হাসছিল সে স্যার রুপি প্রেমিকের প্রেমিকার জন্য উৎকণ্ঠা দেখে। মিসবাহ কিছু বলার আগেই পাশ থেকে রায়হান বলে উঠলো..

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here