শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_৯ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
691

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৯
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

সুখনীড়ে আজ খুশির পসরা বসেছে। কাছের আত্মীয় থেকে শুরু করে দূরের আত্মীয় স্বজন কেউ বাদ পড়েনি। সবাই দামি দামি গিফট নিয়ে হাজির। রাফি, জিহাদ আর সূরা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। ওরা তিনজনই কনফিউজড যে আজ সিহাবের জন্মদিন নাকি সুন্নাতে খাৎনা। এতোবড় দামড়া ছেলের কিনা জন্মদিনে এতো মানুষ। সূরা মনে মনে ভাবলো বড়লোকদের ব্যাপার স্যাপার আলাদা। দিয়া কে নিয়ে সবাই মাতামাতি করছে। মেয়েটার হাসি মুখ দেখে পঞ্চপাণ্ডবের সকলেই অনেক খুশি।

“মিষ্টি পরী কেমন আছো?”

হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠে হকচকিয়ে গেল সূরা।তিনজন পেছনে ফিরে দেখে সুদর্শন একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। রাফি আর জিহাদ চিনতে না পারলেও সূরার চিনতে অসুবিধা হয়নি। হাসি মুখে সূরা বলল

“আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুমুসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমাকে তো আজ সত্যি সত্যি পরী লাগছে।”

সূরা একটু লজ্জা পেল। অপ্রস্তুত হলো বটে। বলল

“ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেই আমার বন্ধু রাফি আর জিহাদ।”

রায়হান একগাল হেসে হ্যান্ডসেক করল দুজনের সাথে। বলল

“আমি রায়হান। মিসবাহর বন্ধু।”

চারজনে অনেকক্ষন আড্ডা দিল। হঠাৎ সিঁড়ি দিকে তাকিয়েই থমকে গেল সূরা। সিঁড়ি দিয়ে মিসবাহকে নামতে দেখে চোখ বুঝি পলক ফেলতে ভুলে গেছে। মিসবাহ সাদা শার্ট ব্লাক সুট পড়েছে। সিল্কি চুল গুলো বরাবরের মতোই গুছানো। শুভ্র মুখোস্রি স্নিগ্ধ লাগছে। সূরার কাছে এই পুরুষকে অতি সুদর্শন লাগছে আজ। ভয়ঙ্কর সুদর্শন পুরুষ। জিহাদ আর রাফি পাশ থেকে সূরার পলকহীন তাকিয়ে থাকা দেখে মুচকি হাসলো। রাফি সূরা কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল

“কিরে গিলে খাবি নাকি স্যার কে?”

জিহাদ বলে উঠলো “ইশ রে!দেখিস রাফি স্যারের নির্ঘাত ডায়রিয়া হবে। এই রাক্ষস রানী কটকটি স্যার কে যেভাবে নজর দিল তাতে স্যারের বাথরুম টু রুম,রুম টু বাথরুম, নির্ঘাত আজ সারারাত দৌড়াদৌড়ি করা লাগবে।”

“ঠিক বলেছিস। এই বিদ্যার রানী, লুচু মেয়েদের মতো আমাদের নিষ্পাপ,সহজ সরল স্যারের দিকে নজর দিতে তোর লজ্জা করল না। ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাঃ! এই স্যার মুখ দেখাবে কী করে? তুই তো স্যার কে লুটে নিলি।”

নাহ্! আর এই বন্ধু নামক শত্রু দের অসহ্যকর কথা সহ্য হলো না সূরার। কতো বড় বদ দুজন ভাবা যায়। সামান্য তাকালে নাকি ডায়রিয়া হবে। এসব আজগুবি কথা কি মানা যায়? রায়হান আছে যেনেও এসব বলছে। ছিঃ ছিঃ! লজ্জায় সূরার এখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে।আড়চোখে সূরা রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান তার দিকে তাকিয়েই মিটিমিটি হাসছে। এই জিহাদ আর রাফির মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে ওর। সাথে নিজেরও মাথা ফাটানোর ইচ্ছে জাগলো মনে। ইচ্ছা মতো নিজেকে ধমক দিল সে। কিভাবে পারলো নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে থাকতে। হঠাৎ দিয়া এসে সূরা সহ সবাই কে বলল কেক কাটা হবে সেখানে সবাই ওদের খুঁজছে। দিয়ার হাত ধরেই সূরা ঐদিকে গেল ওদের পিছন পিছন ওরাও গেল। সূরাতো পারেনা দিয়াকে চুমু খেতে। আজ দিয়ার জন্য সে সাংঘাতিক লজ্জার হাত থেকে বেঁচেছে। ছিঃ! কি নির্লজ্জের মত তাকিয়ে ছিল মিসবাহর দিকে। ছিঃ ছিঃ! কি লজ্জা!

★★★★★★

ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই। কেক কাটা শেষ। সিহাবের মা বাবা কি গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট করবে সেজন্য সবাই অধির আগ্রহে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমানে এখন পার্টির কেন্দ্রবিন্দু চারজন। দিয়া সিহাব এবং সিহাবের বাবা মা। হঠাৎ পাশ থেকে জিহাদ ফিসফিসিয়ে বললো

“কেস টা কি মামা? এরা এমন পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণা করার মতো পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্যান?”

রাফিও জিহাদের মতো ফিসফিসিয়ে বললো
” জানিনা দোস্ত। আমার মনে হচ্ছে এরা কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

সূরা ওদের চেয়ে দ্বিগুন ফিসফিসিয়ে বললো
“শোন আমার না খুব ইচ্ছা করছে তোদের দুইজনের গাল চড়িয়ে লাল করে দিতে।কথা না বললে কি তোদের পেটে গ্যাস হয়? থাপ্পর না খেতে চাইলে চুপ করে দেখ কি হচ্ছে।”

জিহাদ ফট করে বলে বসলো “থাপ্পর খাই জানতাম না তো দোস্ত। কেমন টেস্ট?খেয়েছিস তুই?”

সূরা কটমট করে তাকালো জিহাদের দিকে।সূরার তাকানো দেখে ভড়কে গেল জিহাদ।রাফি ফট করে দুই হাত দিয়ে নিজের গাল চেপে ধরল। সে মার খেতে চাইনা। জিহাদ ক্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে দূরে সরে গেল। গালে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে মাথা অনবরত ডানে বামে নাড়িয়ে বোঝাল সে পৃথিবীর নিষ্পাপ বাচ্চা। সূরা দুজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। ওরা দুজনেও হাসলো। দূর থেকে সূরা কে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল মিসবাহ। ওর পাশেই রায়হান দাঁড়িয়ে। সে মুচকি হেসে বলল

“সা**লা আর কতো দেখবি ? মিষ্টি পরীর এবার না নজর লেগে যায়।”

কটমট করে তাকালো মিসবাহ। রাগান্বিত স্বরে বলল
“একদম মিষ্টি পরী ডাকবিনা আমার সুরজান কে। আর তখন সুরের সাথে কি কথা বলছিলি তুই?”

রায়হান দুষ্টু হেসে বলল “কেন দোস্ত জ্বলে?”

একটু থেমে ক্ষীন স্বরে বলল “তবে যাই বলিস মিষ্টি পরীকে দেখলে নিজের ছোট বোন মনে হয়। আলাদা মায়া কাজ করে। আত্মার সম্পর্ক কি এমনই হয় দোস্ত? আমি কিন্তু মিষ্টি পরীকে বোনের চোখে দেখি।”

মিসবাহ রায়হানের দিকে তাকালো। সে জানে তার বন্ধু সূরা কে কি নজরে দেখে। তবুও সে একটু জেলাস ফিল করছিল। মিসবাহ জড়িয়ে ধরল রায়হান কে।বলল

“তুই গাধা গাধায় থেকে গেলি। আমাকে চেনাচ্ছিস তোকে। যাকে আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি। সুরের প্রতি তোর মনোভাব আমি বুঝি। এটা তো একটু প্রেমিক পুরুষ তাই জেলাস হচ্ছিলাম।”

রায়হান শব্দ করে হেসে উঠল। মিসবাহর থেকে দূরে সরে চোখ ছোট ছোট করে বলল

“এই তোর মতলব কি বল তো? চিপকে যাচ্ছিস কেনো আমার সাথে? আমি কিন্তু ওই টাইপ ছেলে না।”

মিসবাহ কটমট করে তাকালো। রায়হান শুকনো ঢক গিলে একটু থেমে মুখো ভঙ্গি পরিবর্তন করে বলল “তুই কি জানিস আমার বোনটা তোকে পাগল প্রেমিকে পরিনত করেছে?”

মিসবাহ নড়েচড়ে উঠে। কন্ঠে খাদ নামিয়ে বলল “আমি জানি। কিন্তু সে জানে না।জানলে এই অসহ্যকর অসহনীয় যন্ত্রণায় আমাকে দগ্ধ করতো কি?”

“ভাবিস না দোস্ত। সবুরে কিন্তু মেওয়া ফলে।”

নিঃশব্দে হাসল মিসবাহ।সে হাসিতে প্রান নেই। হঠাৎ সিহাবের বাবা জামান চৌধুরীর কথায় তার দিকে তাকাল সবাই। তিনি হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন

“আপনারা সবাই জানেন আজ আমার একমাত্র ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি‌। কিন্ত আর একটা বিশেষ আকর্ষণ আছে এই পার্টির। আর তা হলো আমার হবু বউমা দিয়া জাহান। আজ তাদের এনগেজমেন্ট।”

মি.জামান চৌধুরীর কথা শুনে তিন বন্ধুর চোয়াল ঝুলে পরার মতো অবস্থা। জিহাদ আর রাফি সূরার দিকে তাকালো। সূরা সাথে সাথে ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে এই বিষয়ে কিছুই জানেনা। ওরা তিনজন এবার দিয়ার দিকে তাকালো।দিয়ার লজ্জা রাঙ্গা মুখোস্রী দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে এই বদমাশটা সব জানে আগে থেকে।ওরা তিনজন খুশি হলো। এবার মেয়েটা একটি পরিবার পাবে।সবার করতালিতে সূরা সিহাব আর দিয়ার দিকে তাকালো। প্রথমে সিহাব আংটি পরিয়ে দিল তারপর দিয়া।সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। অতঃপর পার্টি শেষ হলে সবাই রওনা হয় নিজ নিজ গন্তব্যে।এখন ড্রয়িং রুমে এক সোফায় বসে আছেন মুনতাহা সিকদার, সিহাবের বাবা মা এবং সিহাবের ফুপু রাহেলা বেগম, অন্য সোফায় রায়হান, মিসবাহ, সিহাব, রাফি, জিহাদ আর একটা সোফায় দিয়া আর সূরা। সূরা সেই যে মাথা নিচু করে বসেছে আর মাথা তুলেনি।ওর অস্বস্তি হচ্ছে।আর অস্বস্তির কারণ মিসবাহ সহ ওর বাসার মানুষ গুলো। বজ্জাত লোকটা তাকে লজ্জায় ফেলার জন্য পুরো চৌদ্দ গুষ্টিকে বলে রেখেছে তার কথা। হঠাৎ রাহেলা বেগমের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে সূরা। রাহেলা বেগম মুনতাহা সিকদারের উদ্দেশ্যে বলে উঠে

“ভাই সাহেবকে পার্টিতে দেখলাম না যে ভাবি?”

“আসলে তিনি গেছেন গ্ৰামে। মিসবাহর দাদু অসুস্থ। তাই এখানে থাকতে পারেন নি।”

“ওহ আচ্ছা।”

একটু থেমে মিসবাহর উদ্দেশ্যে বলেন “মিসবাহ আব্বু তুই কি বিয়ে করবি না?সিহাব তোর ছোট তবুও দেখ কয়েক মাসের মধ্যে ওর বিয়েটা হয়ে যাবে।”

মিসবাহ বাঁকা হেসে শান্ত স্বরে বলল
“ফুপিমনি আমার কপালে মনে হয় বউ এর আদর যত্ন নেয় বুঝেছো। নয়লে দেখো হ্যান্ডসাম হয়েও বউটা কেন পাত্তা দিচ্ছে না।”

জিহাদ দুষ্টু হেসে বলে উঠলো “স্যার আপনার বউ এখনো হয়তো পয়দা হয়নি। কিন্তু স্যার আপনি এখানে এখনো কিভাবে বসে আছেন? আপনার তো বাথরুম টু রুম, রুম টু বাথরুমে থাকার কথা।”

মিসবাহ সন্দিহান কন্ঠে বলল “প্রথমত স্যার বলে সম্বোধন করা বাদ দাও। সিহাব ভাইয়া ডাকে তোমরাও ভাইয়া ডাকলে খুশি হব।আর দ্বিতীয়ত হঠাৎ বাথরুমে থাকার কথা কেন বলছো?”

রাফি গদগদ হয়ে বলে উঠলো “স্যার না না সরি ভাইয়া। আপনার বউ পয়দা না হলেও কিন্তু আশেপাশের মেয়েরা আপনাকে যে নজরে দেখে তাতে আপনার ডায়রিয়া হওয়া মাস্ট। আচ্ছা ছোট বেলায় আন্টি কাজলের টিকা দিয়েছিল তো আপনাকে?”

এদের কথা শুনে মিসবাহর বুঝতে আর বাকি নেই এরা সূরার কথা বলছে। আড়চোখে সূরার দিকে তাকালো মিসবাহ। বেচারি লজ্জায় মুখ নীচু করে আছে। মিসবাহ দুষ্টু হেসে বলল

“ভাগ্যিস আম্মু ছোট বেলায় টিকা দিয়েছিল নয়তো এখন তো আমার সংরক্ষিত ইজ্জত লুটে যেত। এখনকার মেয়েগুলো এতো অসভ্য। আমার মতো মাসুম বাচ্চাকেও ছাড়ছে না।”

সূরা হঠাৎ দুষ্ট হেসে বলল “ভাইয়া আপনার তো এখনো কপালে বড় কালো টিকা লাগিয়ে রাখা উচিত। মেয়েদের নজরে একদিন না আপনি গায়েব হয়ে যান ভাইয়া। দেখা গেল ওরা আপনাকে গিলে খেয়ে নিয়ে ঢেকুর তুলতেও ভুলে গেছে।ভাইয়া নজরটিকা কি আমি লাগিয়ে দিব?”

মিসবাহ সূরার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে শুকনো কেশে উঠলো।সে কি কাশি, দেখে মনে হচ্ছে যক্ষ্মা রোগী।মুনতাহা সিকদার দ্রুত পানি দিলেন ছেলেকে‌।পানি খেয়ে একটু স্বাভাবিক হয়ে মিসবাহ ধমকে উঠলো সূরাকে

“এই মেয়ে তোমার মায়ের পেটের ভাই লাগি আমি‌? এক সেনটেন্সে কতোবার ভাইয়া বলো? ফারদার আর ভাইয়া ডাকবেনা আমাকে।”

ইনোসেন্ট ফেস করে সূরা বলল “কেন ভাইয়া?আপনিই না বললেন সিহাবের আপনি বড় ভাই।তাই সবাই যেনো আপনাকে ভাইয়া ডাকে।আমিও তো সিহাবের ফ্রেন্ড তাহলে আমি কেন ডাকতে পারবোনা ভাইয়া?”

মিসবাহ অসহায় মুখ করে তাকালো সূরার দিকে। সূরা মিটিমিটি হাসছে।এই মেয়ে ভারি দুষ্টু আছে বুঝতে বাকি নেই মিসবাহর। মনটা বিষিয়ে গেছে সুরার মুখে এই ভাইয়া শুনে।মনে হচ্ছে কেউ করলার জুস খায়িয়ে দিয়েছে। চোখ মুখ কুঁচকে গেল মিসবাহর।জিহাদ,রাফি, সিহাব আর রায়হান শব্দ করে হেসে দিল।সবাই হাসছে।সূরার মুখে হাসি দেখে মিসবাহর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। হঠাৎ রাহেলা বেগমের একটা কথায় সূরা স্তব্ধ হয়ে গেল….

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here