#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৫
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)
কোলাহলপূর্ণ শহরে রাত্রি বুঝি শান্তি নিয়ে ফিরে আসে সবার মাঝে। সারাদিনের ব্যস্ততায় রাতে নিজের নীড়ে ফিরে আসে প্রত্যেকে। সন্ধ্যা হলেই পাখিরা ফিরে আসে নিজ নীড়ে। কর্মব্যস্ত জীবনে রাতে বাড়ী ফেরায় যেন সর্বসুখ, এতেই শান্তি। সুখনীড়ে একসাথে রাতের খাবার খেতে বসেছে সবাই। সারাদিন যে যেখানেই থাকুক রাতে একসাথে খাবার টেবিলে সবাই যেনো একসাথে খায় এটাই নিয়ম এ বাড়ির। মুনতাহা সিকদার আর কাজের মেয়ে বকুল দেখছে কার কি লাগবে। ভারি মিষ্টি মেয়ে বকুল। মেহেরের বয়সী। এতিম মেয়ে হওয়ায় সবার আদরের সে। অবশ্য মিসবাহ একটু বেশিই স্নেহ করে তাকে। বকুলও কম যায় না, যথেষ্ট সম্মান করে মিসবাহ কে।হরেক রকমের আয়োজন আজ। বিশেষ দিন আজ। মাহমুদ সিকদারের ছোট ভাইয়ের আজ জন্মদিন। সবাই বেশ গম্ভীর হয়েই খাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মূলত মাহমুদ সিকদারের এই দিনে বেশ মন খারাপ থাকে। ভাই কে তিনি মিস করেন। ভাইয়ের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। নিরবতা ভেঙ্গে একটু কেশে সবার মনোযোগ নিজের দিকে ফেরালো মিসবাহ।সক্ষমও হলো। মুচকি হেসে মাহমুদ সিকদারের উদ্দেশ্যে ক্ষীণ স্বরে বলল
“বাবা চাচ্চুকে এতোই যখন মিস করো তাহলে যেতে কেন দিয়েছিলে? তোমার মনে হয়নি চাচ্চু তোমাকে ছাড়া নদীতে শুকনো খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে পারে?”
“এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না মিসবাহ।”
বাবার গম্ভীর স্বরে বলা কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো মিসবাহ। মুহুর্তেই নিরবতা ঘিরে ধরল সবাইকে। গুরুগম্ভীর পরিবেশ। সব কিছু স্বাভাবিক করার নিমিত্তে মুনতাহা সিকদার শান্ত স্বরে বলে উঠলেন
“মিসবাহ তোর সাথে আমার কথা আছে আব্বা। আজকাল তোকে বাসায় বেশি পাওয়া যায় না। সকালে বেরিয়ে রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরিস।”
“বলো আম্মু। শুনছি।”
একটু কেশে গলা পরিষ্কার করলেন মুনতাহা সিকদার। কথাটা বলতে ইতস্তত বোধ করছেন তিনি। কথাটা শুনে ছেলের প্রতিত্তর কি হতে পারে তিনি বেশ জানেন। তবুও মা হয়ে ছেলের সুখ চান তিনি। একটাই ছেলে তার। বড় আদরের। ছেলে যে কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে বাকি নেই তার। কিন্তু ছোট থেকেই ছেলে টা একরোখা,জেদি, গুরুগম্ভীর স্বভাবের। আর রেগে গেলে তো কথায় নেই। কিভাবে বলবেন এটাই এখন ভাবনার বিষয়। আড়চোখে মাহমুদ সিকদার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীকে দেখে নিলেন। বেশ বুঝতে পারছেন তার অর্ধাঙ্গিনী কি বলতে পারে। খাওয়ায় মনোনিবেশ করলেন তিনি। মা ছেলের মাঝে তিনি থাকতে চাননা। মিসবাহ খাবার চিবিয়ে খেতে খেতেই মুনতাহা সিকদারের উদ্দেশ্যে বলল
“আম্মু কিছু বলতে চাইলে বলে ফেল। এতো ইতস্তত বোধ করছো কেন?”
ছেলের পাশের চেয়ারে বসে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন মুনতাহা সিকদার। শান্ত স্বরে বললেন
“দেখ তোর বাবার আর আমার বয়স হয়েছে। তোর দাদুরও তো বয়স কম হলো না। এই বয়সে তার একটাই ইচ্ছা তোর বউ দেখতে চান তিনি। আমি তোর বিয়ে দিতে চাই আব্বা।”
ওষ্ঠধর ভেদ করে তপ্ত শ্বাস ফেলল মিসবাহ্। মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল সে। মা যা চায় দিতে সে ব্যর্থ। তার হৃদয়ে যে একমাত্র তার সুরজানের বিচরন। তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরায় শিরায় ইনশিরাহ্ সূরা নামক বিষাক্ত বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। এর থেকে মুক্তির উপায় তার জানা নেই। আর মুক্তি সে পেতেও চায়না। এই বিষক্রিয়া তাকে কষ্ট যে দেয়না। এতে যে সুখ পায় সে। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষীণ স্বরে বলল
“আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি সুরকে ভালোবাসি আম্মু। আমি জানি তোমার ছেলে ওই কঠোর রমনীর হৃদয়হরন করতে ব্যর্থ। কিন্তু আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তার হৃদয়হরণের চেষ্টা করে যেতে চাই। দেখি সে নিজে কতটা অবহেলার দহনে দগ্ধ হতে পারে আর আমাকে কতটা দগ্ধ করতে পারে।”
“সূরা তো রাজি না আব্বা। আর কতোদিন এভাবে চলবে। আমাদের কি তোকে সুখী হতে দেখতে ইচ্ছা করে না?”
“আমি ভালো আছি আম্মু। বরং ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিজের জীবনে জায়গা দিলে না আমি সুখী হবো আর না অন্য একটা নিরপরাধ মেয়েকে সুখে রাখতে পারব। তুমি কি চাও তোমার ছেলে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাক?”
ছেলের কথায় মুনতাহা সিকদার নিষ্প্রাণ চাহনি নিক্ষেপ করল ছেলের মুখোস্রীতে। কোনো সুন্দরী রমণী তার ছেলে কে ফেরাতে পারবেনা। কি সুন্দর মায়াবী মুখোস্রি। চোখ দুটো দেখলে যে কোনো মেয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে বাধ্য। অথচ সূরা নামের নিষ্ঠুর মেয়েটি তার ছেলেকে উপেক্ষা করছে দিনের পর দিন। রাগ হলো মুনতাহা সিকদারের। ওই অপরিচিত মেয়েটিকে দেখার ইচ্ছা জাগলো মনে। এবার সে দেখা করবেই করবে। প্রাণপ্রিয় মায়ের চিন্তিত মুখোস্রি দেখে মুচকি হাসল মিসবাহ। শব্দ করে মায়ের হাতে ঠোঁট ছোয়ালো। নড়েচড়ে বসলেন মুনতাহা সিকদার। ছেলের হাসি মাখা মুখ দেখে হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করলেন তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সিহাব কৌতুক স্বরে বলে উঠলো
“ভাই ওই ঝাসিকি রানীকে বিয়ে করার আশায় থাকলে সেই আশা ছেড়ে দাও। ভাই আমাদের ভাবিজান কিন্তু ভেরি ডেঞ্জারাস।আজ তোমার কথা বলাই জিহাদ এর পিঠে কিছু ভাদ্র মাসের তাল ফেলেছে।”
“ভাবিজান কে দেখার সাধ আমার এজনমে মিটবে না গো মিটবে না।”
সিহাবের কথার মাঝেই হতাশা মিশ্রিত মুখ করে গানের সুর টেনে বলে উঠলো মেহের। সিহাব হতাশার শ্বাস ফেলে বলল
“সে তুই পরেও দেখতে পারবি বোন কিন্তু ভাই বিয়ে না করা পর্যন্ত তো আমিও বিয়ে করতে পারবো না। হায় রে! আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের বুঝি আমার দেখা হলো না।”
এদের কথা শুনে দাঁত কটমট করে তাকালো মিসবাহ।বলল
“আম্মু এদের কোথায় থেকে তুলে এনোছো বলবে?”
পরক্ষনে বাঁকা হেসে সিহাবের উদ্দেশ্যে বলল
“এতোই যখন বাবা হওয়ার ইচ্ছা একটা আইডিয়া দিই তোকে কাজে লাগা। দিয়া কে বল তোকে তাড়াতাড়ি বিয়েটা যেন করে ফেলে।”
সবে পানি মুখে নিয়েছিল সিহাব। মিসবাহর কথায় মারাত্মক আহত হয়ে পানি নাক মুখে উঠে গেল। কাশতে কাশতে বেহাল দশা। মুনতাহা সিকদার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মিসবাহকে বলল
“আহ্ মিসবাহ খাওয়ার সময় তোকে এসব বলতে হবে কেন? কিন্তু দিয়া কে? সিহাব তুই কি কোনো ভাবে রিলেশনশিপে জড়িয়েছিস?”
সবার তীক্ষ্ণ চাহনি সিহাবের দিকে। কাজের মেয়ে বকুল টাও বাদ যায় নি। অতি আগ্ৰহে সিহাবের দিকে তাকিয়ে সে। সিহাব কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
“ভাই আমি তোর কোন জনমের শত্রু বলবি? হাতে হাঁড়ি কিভাবে ভাঙতে হয় তোর কাছে শেখা উচিৎ।”
মুনতাহা সিকদার অভিমানী সুরে বললেন “তার মানে তুইও একটা মেয়েকে পছন্দ করিস কিন্তু আমাকে বলার প্রয়োজন টুকুও মনে করলিনা।”
সিহাব চেয়ার থেকে উঠে গদগদ হয়ে মুনতাহা সিকদারের পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বলল
“ও খালামনি আমি বলতাম তো। তার আগেই তোমার ছেলে আমাকে ফাঁসিয়ে দিল।”
“থাক অনেক হয়েছে। সব বুঝি আমি। মেয়ে টাকে বাসায় নিয়ে আসো একদিন সাথে তোমার ভাইকেও বলো সূরাকেও যেনো নিয়ে আসে একদিন। আমি দেখতে চাই তাদের।”
“আমাকে পাত্তাই দেয় না আর ঐ মহারানী কে আমি নাকি বাসায় নিয়ে আসব। আমার ঘাড়ে একটাই মুন্ডু আছে। অকালে নিজের শরীর থেকে মুন্ডু আলাদা হোক আমি চাইনা। এখানো বিয়ে করা বাকি আমার।” মনে মনে কথাগুলো আওরালো মিসবাহ। দুষ্টু হেসে বলল
“আম্মু সিহাবের বন্ধু কিন্তু সূর। নিজের বউ আনার পাশাপাশি আমার বউ কেও নাহয় নিয়ে আসলো।”
“হ্যা বাবা তুই নিয়ে আসিস। মিসবাহ তো নিয়ে আসে না। তুই তোর সব বন্ধুদের নিয়ে আনিস কেমন।”
খালামনির কথা শুনে কাঁদো কাঁদো মুখ করল সিহাব। মিসবাহর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল
“ভাই ওই সেরনীর গৃহে আমাকে খাদ্য হিসেবে কেন পাঠাতে চাস বলবি? তোর সিংহী আমাকে কাঁচা আমের মতো কচমচ করে খেয়ে নিবে।”
মেহের বললো “সিহাব ভাইয়া তোমাকে দেখে আমার কষ্টে কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কষ্টের পরিমাণ এতো বেশি যে চোখে পানি আসছে না। তোমার জন্য আমার পক্ষ হতে এক টেবিলস্পুন সমোবেদনা।
মেহেরের কথা শুনে সবাই জোরে হাসলো। সিহাব তো শুধু চোখে অন্ধকার দেখছে। সূরাকে এখানে আসার কথা বললে কাঁচা গিলে খাবে তাকে। শুকনো ঢক গিলে খাওয়ায় মন দিল সে। মিসবাহ চেয়ার থেকে উঠে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বিরবিরালো “আমার সেরনী”।
★★★★★★
সামনে হরেক রকমের টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল, বড়ো বড়ো মাছ, হরেক রকমের মিষ্টি দেখে দিয়া যেনো ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। দিয়ার মনে হচ্ছে সে বেঁচে নেই। সে কোনো মঙ্গলগ্রহের বাসিন্দা। সকালে ঘুম থেকে উঠে এতো বড় আঘাত হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। পাশ ফিরে প্রানপ্রিয় বান্ধবীকে দেখলো। সে দিব্যি বাবার বুকে শান্ত বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে আছে। মনে মনে হাসলো দিয়া। প্রায় এক ঘন্টা হতে গেলো সূরার বাবা আর ভাই এসেছে। তাদের দেখেই শক্ত খোলসে অনাবৃত মেয়েটি ঝরঝর করে কেঁদে ভাসালো বাবা ভাইয়ের বুক। এখন শান্ত বাচ্চার মতো চুপটি করে আছে। দিয়া আবার হরেক রকম জিনিস গুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সবগুলো একে একে ফ্রীজে রেখে দিল। ফ্রীজটা সূরার বাবা নিয়ে এসেছে। দিয়া সূরার বিষয়ে বেশি কিছু জানে না। এতো কিছু দেখে তার বুঝতে বাকি নেই সূরারা পারিবারিক ভাবে বেশ সচ্ছল। দিয়া রান্নাঘরের গেলো অতিথিদের তো আর না খেয়ে রাখা যায় না। অনেকক্ষণ পরে সূরা বাবার বুক থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। সূরাকে মাঝে বসিয়ে ওর বাবা ভাই ওকে দেখছে। মনে হচ্ছে কতোদিন দেখে না। নুহাশ ভাবলো সত্যি তো বোন কে অনেক দিন দেখেনা। তার পুতুল বড় হয়ে গেছে নইলে তিন বছর কি কম বোনকে দেখছে। কতো দেখার চেষ্টা করেছে কিন্তু মেয়েটা জেদি। একটু বেশিই জেদি। কতো বলেছে ঢাকা এসে শুধু একবার দেখা করবে। জেদি মেয়েটা রাজি হয়নি। আজ কি দেখা হতো? কত কি বলে রাজী করিয়েছে। বোনটাকে নুহাশ যে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল, তার পুতুল একটা জ্যান্তলাশ হয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস গোপনে ফেলে বোনের মাথায় হাত রাখল নুহাশ। সূরা ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে উল্টে আবার কেঁদে দিল। নুহাশ সূরার চোখে পানি মুছে মুখটা দুই হাতের আজলায় নিয়ে আল্লাদি সুরে বলল
“আমার পুতুল। কেমন আছিস সোনা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইজান। তুমি কেমন আছো? আম্মাজান, ভাবিজান কেমন আছেন? তুমি শুকিয়ে গেছো ভাইজান।”
কান্না মিশ্রিত স্বরে বলল সূরা। বোনের কথা শুনে হাসলো নুহাশ। কিন্তু বোনের অবস্থা দেখে একটু রাগ হলো নুহাশের। বোনের প্রশ্ন সম্পুর্ন উপেক্ষা করে রাগান্বিত স্বরে বলল
“এসব কি পুতুল? তিন বছর দেখা করিস নি ভালো কথা। আমরা তো তোর কেউ নাহ্ তাইনা? টাকা দিতে চাইলে নিতে চাসনা। যতোটুকু না নিলেই নয় ততটুকুই নিস। আমরা কি তোর কেউ নাহ্ পুতুল? তুই যে আমাদের সকলের কাছে কি তুই কি জানিস না?”
প্রানপ্রিয় ভাইয়ের কথা শুনে ছলছল চোখে হাসলো সূরা। সে জানে এই মানুষগুলোর কাছে সে অমূল্য রত্ন। তার সুখের জন্য এই মানুষ গুলো সব করতে পারে। কিন্তু সে যে আর চাইনা এই মানুষগুলো কে কষ্ট দিতে। কান্না গুলো যেন গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে ঠোঁটে হাসি টেনে বললো
“আব্বাজান আপনার ছেলে আমাকে বকছে, আপনি কিছু বলবেন না? আর ভাইজান আমি সাবলম্বী হতে চাই। তাই টিউশনি করায়। আর এ বাসায় থাকতে আমার কষ্ট হয়না। দিয়া আমার অনেক খেয়াল রাখে। আমার টাকা যখন প্রয়োজন হয় তখন কি আমি নিই না বলো। শুধু একাকিত্ব কাটাতে কাজে ব্যস্ত থাকি। তোমরা কি জানো না তুমি আব্বাজান , আম্মাজান ,ভাবিজান আমার পৃথিবী।
মেয়ের কথা শুনে ছলছল চোখে হাসলো মিজানুর সিকদার। মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন তিনি। বললেন
“আম্মাজান আপনাকে ছাড়া আমরা কেউ ভালো নেই। আপনার আম্মাজান প্রায় অসুস্থ থাকে আপনার চিন্তায়। আপনার ভাবিজান আপনাকে দেখতে চায়। মেয়েটা যে এতিম। আপনাকে নিজের ছোট বোনের চোখে দেখে। আপনার ভাই পাগলের মতো করতো আপনার কাছে আসার জন্য। আপনি চাননি কেউ এখানে আসুক তাই আমিও মেনে নিয়ে বারন করেছি। আপনি আমাদের কলিজা আম্মাজান।”
“আব্বাজান আমি এই মুখ নিয়ে আপনাদের সামনে যেতে চাইনি। আমি যে আপনাদের গুনাহগার আব্বাজান।ভাবিজান কেন আমাকে ক্ষমা করে দিলো এতো সহজে? আপনি আম্মাজান, ভাইজান কেন আমাকে ক্ষমা করে দিলেন? আমাকে শাস্তি কেন দিলেন নাহ্? আমার যে দম বন্ধ লাগে আব্বাজান। আমি যে খুনি। আমি খুন,,,,
আর বলতে পারলোনা সূরা। তার আগেই নুহাশ বোনকে বুকে আগলে নিল। ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো সূরা। বোনের কান্নার শব্দে নুহাশের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কি করে এতো কষ্ট কমাবে বোনের। তার ক্ষমতা থাকলে সব কষ্ট সে একা ভোগ করত। তার পুতুল কে এ মরন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিত। কিন্তু হায় আফসোস!এ যে হওয়ার নয়। তার ছোট পুতুলকে একাই সব বহন করতে হচ্ছে।এসব ভেবে নুহাশের গাল বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। আদরের মেয়ের হৃদয় নিংড়ানো হাহাকারে বুক পুড়ছে মিজানুর সিকদারের। কি করলে তার আগের প্রানোচ্ছল, চঞ্চল, প্রাণবন্ত মেয়েকে তিনি ফিরে পাবেন । জানা নেই তার। সূরা কে ডাকতে এসেছিল দিয়া। কিন্তু এখন এই দৃশ্য দেখে সে বাকরুদ্ধ। স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। সূরা কী বলল সে খুনি? কাকে খুন করেছে সূরা? মাথা ঝিমঝিম করছে দিয়ার। মনে হচ্ছে এখনি বুঝি লুটিয়ে পড়বে সে। দিয়া কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে বসল সূরা। তাকে শক্ত থাকতে হবে। সে আর ভেঙ্গে গুড়িয়ে যেতে চাই না। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষীণ স্বরে বলল সূরা
“আব্বাজান আর ভাইজান তোমরা বসো আমি একটু আসছি।”
বলে আর দাড়ালো না সূরা। দিয়া কে নিয়ে রান্নাঘরে গেল। দিয়া বারবার আড়চোখ সূরা কে দেখছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার বান্ধবী খুন করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব? কিন্তু সূরা তো নিজে মুখে বলল। সুযোগ বুঝে জিজ্ঞাসা করতে হবে ভেবে মাংস রান্নায় মন দিল দিয়া। সূরা দুই বাটি পায়েস নিয়ে ঘরে গেল। মিজানুর সিকদার আর নুহাশ আসবে ভেবে আগেই রান্না করে রেখেছিল সে।
“আব্বাজান আপনি কাল কেন আসলেন না? আমি তো আপনাকে কাল ডেকেছিলাম।”
“আব্বাজান কাল আসতেই চেয়েছিলেন কিন্তু আমার কাজ পড়ে যাওয়াতে আজ আসা। খুব জরুরি কাজ ছিল নইলে আমার পুতুল ডেকেছে আর আমরা আসবোনা?”
“জানা আছে আমার। তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না ভাইজান। এখন পায়েস খাও। আমি রান্না করেছি। আব্বাজানের তো কাল জন্মদিন ছিল। আব্বাজান যে আমার রান্না পায়েস খুব পছন্দ করে আর আমি নেই দেখে যে আব্বাজান পায়েস মুখে দেইনি সে আমার জানা আছে।”
মেয়ের কথা শুনে হাসলেন মিজানুর সিকদার। আর বললেন
“আমার আম্মাজানের হাতের পায়েস ছাড়া আমার মুখে যে অন্য কারো হাতের পায়েস মজা লাগেনা সেটা কি আমার আম্মাজান যানে নাহ্ ?”
বাবার কথা শুনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল সূরার ঠোঁটে। মেয়ের হাসি মুখ দেখে বুক ভরে গেল মিজানুর সিকদারের। নুহাশ বোনকে পচাতে একটু ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলল
“সব ঠিক আছে কিন্তু পায়েস খাওয়া যাবে তোহ্? ”
ভাইয়ের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো মুখে সূরা মিজানুর সিকদারের উদ্দেশ্যে বলল
“আব্বাজান! আপনি কিছু বলবেন নাহ্ ভাইজানকে?”
“আহ্ নুহাশ। আমার আম্মাজানকে রাগিয়োনা। আমার আম্মাজানের হাতের পায়েস রান্না বেস্ট। খেয়ে দেখো ”
“সে ঠিক আছে কিন্তু আমি আগে খেতে পারবোনা বাবাহ্! শেষে না অকালেই আমার প্রান যাই। নে পুতুল বড়ো করে হা কর তো। আগে তুই খা।”
সূরা জানে তার বাবা ভাই তাকে আগে না খায়িয়ে খাবেনা। আগেও এমন করতেন তারা। তাই বিনা বাক্যব্যয়ে নুহাশের হাতে পায়েস খেয়ে নিল সূরা। এবার মেয়ে কে খায়িয়ে দিলেন মিজানুর সিকদার। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে স্নেহের পরশ এঁকে দিলেন তিনি। নুহাশ এদিকে খাওয়া শুরু করেছে। তার পুতুলের রান্না বরাবরই বেস্ট তার কাছে। ভাইয়ের কান্ড দেখে জোরে হেসে দিল সূরা। সূরার এই হাসি তে দুটি হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া অনুভূত হলো। বাবা ভাইয়ের ভালোবাসায় সূরা আজ অন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী। দূরে থেকে দিয়া সূরা কে দেখে শান্তির নিশ্বাস ফেললো।সে চায় মেয়েটা এমনি হাসি খুশি থাকুক। কিন্তু এখন একটাই চিন্তা সূরা কাকে খুন করেছে? সত্যি কি সূরা খুনি?
#চলবে……
(নতুন লিখিকা আমি। গল্প কেমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না।পাঠক পাঠিকাদের রেসপন্স না পেলে কিভাবে বুঝবো গল্প কেমন হচ্ছে। আগ্রহ পাচ্ছি না লেখায়। প্লীজ রেসপন্স)
ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। ফলো দিয়ে পাশে থাকুন