#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ১
**নিচের (বিঃদ্রঃ) অবশ্যই পড়বেন সবাই,,**
-না এই বিয়েটা আমি কিছুতেই করতে পারবো না পিসি কেন বুঝতে পারছো না।তুমি তো সব জানো যে আমি হৃদয়কে কতটা ভালোবাসি আর ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভালোবাসা তো দূর স্বামী হিসেবে মানতেই পারবো না,,,আমি জানি ও একদিন ঠিক ফিরে আসবে আমার কাছে,,, ওকে তো আসতেই হবে,,,(কথা গুলো একদমে বলে দেয় অনুপমা,,,)
পিসি- চুপ একদম চুপ,,, ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো করে বড়ো করেছি তোকে,,,,আজ এই দিনটা দেখার জন্য,,,, আমাদের কথার কি কোনো দাম নেই তোর কাছে??
-পিসি তুমি একবার বোঝো আমাকে,,,
-শোন অনু আমি কিছু বুঝতে চাইনা,,,দাদা তো তোকে বলেছিল যে তুই যাকে পছন্দ করিস তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য,,, আনতে পেরেছিস তাকে??বল কি হলো,,,?? সে কি এসেছিল?? এমন তো নয় যে আমরা তোদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি,,,,
-পিসি তুমি একবার,,অন্তত বাবার,,,,(অনুর কথা শেষ করতে না দিয়ে,,)
-না অনু আমি এই নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না দাদার সাথে,,,দাদা যেটা ভালো বোঝে সেটাই করবে,,,(এই বলে পিসি চলে গেল,,,,আর অনুপমা সেই তখন থেকে ফোন হাতে নিয়ে বসে কেঁদেই চলেছে,,,,)
__________________________________________
-অনুপমার মা নেই,,,অনেক ছোট ছিল যখন তখন মা মারা যায়,,,আর তখন থেকেই পিসির কাছে মানুষ ,,,বেশ ভালোই চলছিল দিন গুলো ওর হৃদয়ের ভালোবাসা,, বাবার স্নেহ আর পিসি আদর নিয়ে,,,,কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় তৃতীয় বর্ষে ওঠার আগেথেকে,,, অনুপমার বাবা প্রতাপ রায় যখন তার মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছিলেন,,,
প্রতাপ-অনু মা কোথায় তুই??
-এই তো বাপি বলো,,,
-বলছি যে কালকে তোকে দেখতে আসবে সন্ধ্যেবেলায়,,,,তুই রেডি হয়ে থাকিস,,,
-কিন্তু বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাই না,,,
-অনেক হয়েছে আর না,,,বিয়ের বয়স হয়ে গেছে,,, আর কয়েকমাস পরেই তোর ফাইনাল ইয়ার,,, আমি চাই তার আগেই তোর বিয়েটা হোক,,আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের বেশি দেরি করে বিয়ে দিতে নেই,,,(একটু গম্ভীর হয়ে)
-কিন্তু বাপি,,
-কোনো কিন্তু নয় ,,,এটা আমার শেষ কথা,,
পিসি-দাদা তুমি একবার ওর কথাটা শোনো ও কি বলছে,,,
-এই তোর জন্যই ও এত সাহস পায়,,, আচ্ছা বল শুনি,,,
অনু-বাবা আমি একজনকে,,,মানে আমি বলতে চাইছিলাম,, মানে,,
-আরে কি মানে মানে করছিস??
পিসি-দাদা ও বলতে চাইছে যে,,,এই অনু বল কি বলবি?
অনু-(বুকে সাহস এনে)বাবা আমি মানে আমি একজনকে পছন্দ করি,,,(চোখ বন্ধ করে)
প্রতাপ-নাম কি তার(ভারী গলায়)
-বাবা হৃদয়(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
-কি করে সে?
-আমাদের থেকে এক বছরের সিনিয়র,,, কিছু করে না তবে শুনেছি বাবার অনেক বড়ো ব্যবসা আছে সেটা মাঝে মধ্যে দেখা শুনো করে,,,
-ওওও ঠিক আছে ওকে কালকে বাড়িতে নিয়ে আয়,,
-সত্যি বাপি তুমি সত্যি বলছো,,,i love you বাপি(বলেই জড়িয়ে ধরলো)
-হয়েছে হয়েছে এবার ছাড়,,,
-হ্যালো হৃদয়
-হ্যা বলো অনু,,,বলো,,
-একটা ভালো খবর আছে,,,
-কি খবর,,,
-আমি বাবাকে তোমার কথা বলা দিয়েছি,,,আর বাবা তোমাকে কালকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছে,,,(উত্তেজিত ভাবে)
-কি বলছো কি সোনা??সত্যি বাবা যেতে বলেছে ?
-হ্যাঁ,,,তুমি কালকে সময় মতো চলে এসো কিন্তু,,
-ঠিক আছে আমি কালকে যাবো,,,এখন রাখছি,,,(রাখছি বলে সেই যে ফোন রাখলো হৃদয় গত এক বছরে তার কোনো খবর পাওয়া যায় নি,,,দুই বছরের সম্পর্ক এইভাবে ছিন্ন হয়ে যাবে অনু ভাবতেই পারিনি,,,,,)
-হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে ওঠায় অনুর ভাবনার জগতের সাথে বিচ্ছিন্ন ঘটে,,,ফোনটা রিসিভ করে,,, ওপাশ থেকে,,
নিশা-অনু তুই কি কলেজে আসবি??
-,,,,,,(নিশ্চুপ)
-কাঁদছিস কেন??আমার কিন্তু একদম ভালো লাগে না,,,কি হয়েছে বল,,,
-বাবা আবার,,,
-বিয়ের কথা বুঝেছি,,, কিন্তু তুই একবার ভাব কাকু তো তার জায়গায় ঠিক,,,,আচ্ছা শোন এখন কান্নাকাটি কম কর,,,,বিয়ে বললেই তো হয়ে যাচ্ছে না,,আচ্ছা শোন আমি সন্ধ্যেবেলায় যাচ্ছি,,,,
_________________________________________
-পরের দিন কলেজ থেকে ফিরেই আবার শুরু হয়ে গেল পিসির সাথে অনুপমার কথা কাটাকাটি,,,,
-কেন আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে চাইছো তোমরা??আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি???
-এই ভাবে কেন বলছিস মা,,,বাবার কষ্টটা একবার বুঝবি না,,,মানুষটার শরীরটাও ঠিক যাচ্ছে না আজকাল,, তার মুখের উপর এই ভাবে তুই না বলিস না ,,,
-পিসি আমি কি করবো বলো,,তুমি তো জানো ,,
-জানি অনু ,,হৃদয়কে তো আমরা আসতে বলেছিলাম কিন্তু ও তো আসেনি,, আজ একটা বছর হয়ে গেল ওর কোনো খোঁজ তুই পাসনি,, ও যদি তোকে সত্যিই ভালোবাসতো তাহলে কি একটিবারের জন্য হলেও যোগাযোগ করতো না?? তুই বল,,,
-আমি জানি পিসি ও আসবে,,আমাদের ভালোবাসা সত্যি ছিল পিসি ও আসবে,,
-সে যদি আসার হতো তাহলে এতদিনে ঠিক তোর কাছে চলে আসতো,,,আর বাবার কথাটা একটু ভাব ,,,তুই বিয়েতে রাজি হয়ে যা,,,ছেলে খুব ভালো,, তোর বাবার খুব পছন্দ হয়েছে,,,
-না আমি বিয়ে করতে পারবো না পিসি
-ঠিক আছে আমাদের মরা মুখটা যদি দেখতে চাস তাহলে এই বিয়েটা তোকে করতে হবে না(প্রতাপ)
-বাবা কি বলছো তুমি,,(বাবার কথা শুনে কেঁদে ফেললো অনু,,ছোট থেকে মায়ের আদর পাইনি,, বাবা আর পিসিই সব ওর জীবনে,,তাই আজ সেই বাবার মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি,,, হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো)
-ঠিকই বলছি,,অনেক হয়েছে,,,মারে হৃদয় আসার হলে এতদিনে ঠিক চলে আসতো,,,ও ছেলেটা ভালো নয় ,,,আমি তোর জন্য যে পাত্র দেখেছি খুব ভালো,,আমার বন্ধুর ছেলে আবির চৌধুরী,,,তোকে খুব ভালো রাখবে মা,,,তুই রাজি হয়ে যা,,,
-ঠিক আছে তোমরা যেটা ভালো বুঝবে,,,(বলেই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল)
________________________________________
-আবির চৌধুরী কলকাতার একজন বড়ো বিসনেস ম্যান,, সুনীল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে,,,সুনীল প্রতাপের বন্ধুত্ত্ব সেই ছোট থেকে,,,,কিন্তু ব্যবসার সূত্রে সুনীল কলকাতায় চলে আসে,,,,,
আশা-আবিরের বিয়ে তাও আমাদের প্রতাপ দাদার মেয়ের সাথে ,,,সত্যি বলছো তুমি?(আবিরের মা)
-হ্যাঁ কেন? অনুকে তোমার পছন্দ হয়নি??
-পছন্দ হবে না কেন??কি যে বলো না তুমি,,,মা মরা মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে ছোটবেলায়,,, একবার ও এই বাড়িতে বৌ হয়ে আসুক দেখো ওকে নিজের মেয়ে করে রাখবো,,,কিন্তু,,,
-কিন্তু কি??
-আবির এই বিয়েতে মত দেবে তো,,
-আশা আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি,,,আর তোমার ছেলে কি মনে করে সব মেয়ে এক রকম নাকি,,,,ও এত দিন যা বলেছে শুনেছি তবে আর না,,,আমাদের সহ্যের একটা সীমা আছে,,,
_______________________________________
-রাতে আশা আবিরের ঘরে গিয়ে দেখে আবির ল্যাপটপ নিয়ে কি সব কাজ করছে,,
-আবির আসবো?
-হ্যাঁ মা এসো কিছু বলবে,,,(ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে)
-হ্যাঁ,,,তোকে একটা কথা বলার ছিল,,,
-বলো,,,
-তোর বাবা তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছে,,,এবং আমারো খুব পছন্দ হয়েছে,,(ভয়তে ভয়তে কথাটি বললেন আশা দেবী)
-কি যা তা বলছো মা,,,আমি তো তোমাদের অনেক দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছি যে এই জীবনে আমি আর বিয়ে করতে পারবো না,,,(চেঁচিয়ে উঠে)
-মার উপর চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই আবির কারণ সমন্ধ টা আমি ঠিক করেছি,,,(আবিরের ঘরে ঢুকে কথাটা বলে সুনীল বাবু,,,)
-কিন্তু বাবা,,
-কোনো কিন্তু নয়,,,আমি যেটা বলছি সেটাই হবে,,,আর তাছাড়া পৃথিবীতে সব মেয়ে এক নয় বুঝলে,,,,আশা তুমি ওকে বলে দাও পোরশু দিন আমরা মেয়েকে দেখতে যাবো,,,ও যেন রেডি হয়ে থাকে,,আমি কিন্তু কোনো অজুহাত শুনবো না,,,ঐ দিন অফিসে যেতে হবে না,,,আমি সামলে নেবো,,,,
-আবির আমাদের তো অনেক শখ আল্লাদ আছে নাকি তোর বিয়ে নিয়ে,,,অনেক বছর তো হলো,,,,আচ্ছা তোকে এখন বিয়ে করতে হবে না,,, তুই শুধু একটা বার মেয়েকে দেখে আয়,,,তারপর তুই তোর মতামত দিস(আশা)
-আমার দেখার কোনো প্রয়োজন নেই,,, তোমরা যেটা ভালো বুঝবে সেটা করো,,যেখানে আমার মতামতের দাম নেই ,,সেখানে আমি যেতে পারবো না(বলেই ঘর থেকে চলে গেল)
-আশা এই মাসেই দেখো কোনো ভালো দিন আছে কিনা??(প্রতাপ)
_________________________________________
-আজ আবির আর অনুপমার বিয়ে,,,সবাই খুব খুশি এই বিয়ে নিয়ে ,,দুই বন্ধু আজ একটা সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়েছে,,,কিন্তু যাদের বিয়ে তাদের মনে একটুও শান্তি নেই,,,,না আছে একে অপরের প্রতি ভালোলাগা বা ভালোবাসা,,,,,,
-এই ভাবে বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে বসে রয়েছিস কেন??(নয়ন)
-দেখ সব কিছু জেনে ন্যাকা সাজিস না,,,(আবির)
-শোন তুই কিন্তু একটু বেশি করছিস,,,সবাই তো আর সমান না,,,
-আবির তোর গায়ে হলুদের তত্ত্ব যাচ্ছে ওই বাড়ি চল একবার দেখে নিবি,,,(আশা)
-মা তুমি দেখে নাও আমার একটা কল করতে হবে(বলেই ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেল,, ওর চলে যাওয়া দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আশা দেবী),,,
– কাকিমা তুমি একদম চিন্তা করো না,,, আবিরের হয়তো প্রথম প্রথম অসুবিধা হবে,, কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যাবে,,, আর তাছাড়া আমি তো কাকুর কাছে শুনলাম অনুপমা মেয়েটা নাকি খুব ভালো,,,,(নয়ন)
– কি জানি নয়ন,, আমার তো আবিরকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হয়,,,ছেলেটা আমার বড্ড বদরাগী হয়ে গেছে এই কবছরে,,,কেন যে ওর জীবনে এমন হলো,,,,
_________________________________________
-লগ্ন প্রায় মাঝ রাতের দিকে তাই বর পক্ষ একটু দেরিতেই এসেছে,,,বিয়ে বাড়িতে লোকজন যমযম করছে,,,,অনুপমার সব বান্ধবীরা মিলে আবির ও তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছে,,কিন্তু এই আড্ডার আসরে আবিরের যেন কোন আগ্ৰহ নেই,,,ও ওর মতো ফোনেয় ব্যস্ত,,,
-অনু যদি আমরা এখন পালিয়ে যায়,,, বা তোমাকে আমার সাথে এখন পালাতে বলি,,,তুমি কি করবে,,??(হৃদয়)
-পালিয়ে যাবো,,কিন্তু তার আগে বাবা ও পিসিকে একবার বলবো যদি তারা মেনে নেয়,,,
-আচ্ছা অনু আমাদের বিয়েটা কিন্তু অনুষ্টান করেই হবে,,আমি বরবেশে তোমার বাড়িতে আসবো আর তুমি বৌ সেজে আমার জন্য অপেক্ষা করবে,,,(অনুর হাতে হাত রেখে)
-সেতো করবোই কিন্তু বেশিক্ষন যেন অপেক্ষা করিয়ে রেখোনা আবার,,,,
-সেতো তোমাকে একটু অপেক্ষা করাবোই অনু,,,,
-বেশি অপেক্ষা করালো দেখো আমি কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে উঠবো না,,,(অভিমান করে)
-অপেক্ষা করাবো না পাগলী,,,আমি তারাতারি তোমার বাবা আর পিসির সাথে কথা বলতে যাবো,,,
-সত্যি হৃদয়?
-হ্যাঁ সত্যি,,,সত্যি সত্যি এই দেখো তিন সত্যি,,, তোমাকে ছুঁয়ে বললাম,,,
আচ্ছা অনু তুমি কিন্তু লাল বেনারসি পড়বে না,,,
-কেন?
-লাল তো সবাই পড়ে তুমি নীল আর লাল রং মিশিয়ে একটা বেনারসি পড়বে,,,আর রিসেপশনে গোলাপি রঙের বেনারসি,,,
-আচ্ছা ঠিক আছে,,, আমি তো তোমার মনের মতো করেই সাঁজতে চাই হৃদয়(হৃদয়কে জড়িয়ে)
-আমি জানি তো পাগলীটা আমাকে এত ভালো বাসে যে আমি যা বলবো তাই করবে,,,আমার সব পছন্দকে নিজের পছন্দ করে নেবে,,,(অনুপমাকে জড়িয়ে কপালে একটি ভালোবাসার পরশ দিয়ে)
-এই আমি কিন্তু বেশিক্ষন না খেয়ে থাকতে পারি না,,,, তুমি একটু তারাতারি এসে বিয়ে করে নিও কিন্তু,,,
-(অনুর কথা শুনে হৃদয় হেসে ওঠে,,,)আচ্ছা ঠিক আছে,,, কিন্তু অনু আমি কিন্তু শুভদৃষ্টিটা একটু বেশি সময় ধরেই করতে চাই,,,
-কেন??
-কেন আবার কি,,,তোমাকে বৌ সাজে তো প্রথম দেখবো সেইদিন,,, কত অপরুপ লাগবে তোমাকে,,,তুমি যখন ধীরে ধীরে পান পাতা সরাবে আর তোমার ঠিক অপর দিকে দুটি চোখ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে,,,
-অনুপমা এই অনু পান পাতাটা সরা,,,অনু,,,(নিশা)
-নিশার ডাকে অতীত থেকে বিচ্ছেদ ঘঠল অনুপমার,,,মুখ থেকে পান পাতাটা সরিয়ে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে অনু,,,আজ তো এখানে তার হৃদয়ের থাকার কথা,,, সে তো বলেছিল তার দুটো নয়ন আজ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে ওর দিকে,,,কিন্তু কোথায় হৃদয়??সে তো আর এলো না,,,বরং আজ হৃদয়ের জায়গায় রয়েছে অন্য একজন,,,, হঠাৎ অনুপমার বুকের ভিতর টা হাহাকার করে উঠলো,,,চিৎকার করে বলতে চাইলো প্লিজ বাবা আমাকে মেরে ফেলো তবুও এই বিয়েটা করতে বলো না,,, আমি পারবো না বিয়েটা করতে,,,হৃদয়ের জায়গায় আমি অন্য কাউকে ভাবতে পারবো না,,, বুকের অজস্র ব্যাথার দাপটে অনুপমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো বিরহের অশ্রু,,, কিন্তু সেই অশ্রু সিক্ত নয়ন মেলে সামনে তাকানোর ইচ্ছা আর হল না ওর,, তাই নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,,,
-পানপাতাটা অনুর সরানোর সাথে সাথে আবির অন্য দিকে ফিরে তাকায়,,, অনুপমাকে সে ভালো করে দেখেই নি,,আর এই দিকে অনুপমার মনের মধ্যে ঝড় উঠেছে,,, সে যে এক দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাই তার হৃদয়ের কাছে ,,কিন্তু হৃদয় সে কোথায়??এই পরিস্থিতিতে অনুকে একা ফেলে সে চলে যেতে পারলো কি করে??এই রকম হাজারো প্রশ্ন অনুর মনের মধ্যে চলছে,,,ও যেনো একটা ঘোরেরে মধ্যে রয়েছে,,
-বিয়েটা ভালো ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে,,, দুটি মানুষের মধ্যে হাজারো দূরত্বের ব্যবধান রয়েছে আজ,,,জানি না এই ব্যবধান কখনো কমবে কি না,,,??দুটি হৃদয় এক হবে কি না??এই বিবাহ ভালোবাসার কোন নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে নাকি এই বিয়েতে ছাড়খার হয়ে যাবে দুটি জীবন????
_________________________________________
-পরের দিন সকালে সব নিয়ম মেনে অনুপমার বিদায়ের ব্যবস্থা করে ওর পিসি,,,অনুপমা চলে যাওয়ার আগে বাবা ও পিসিকে জড়িয়ে খুব কেদেঁছিলো,,,আর পিসি তখন বলেছিল-এখন এই বাড়ি থেকে যাওয়ায় জন্য কাঁদছিস একদিন দেখবি এই বাড়িতে আসার জন্য কাঁদবি,,,তখন আর ওই বাড়ি ছেড়ে এই বাড়িতে আসতে ইচ্ছা করবে না মা,,,
-পিসির কথায় অনু সেদিন মাথা নেড়ে অসম্মতি জানিয়ে গাড়িতে উঠেছিল,,
-যথারীতি আবিরের গাড়ি ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়,,, আবিরের মা আবির ও অনুপমাকে বরণ করে ঘরে তুললেন,,,বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই আবির যেন কোথায় চলে যায়,,,, সারা রাস্তা আবির অনুপমার সাথে একটা কথা বলেনি,,,একটা মেয়ে তার পরিবারের সব কিছু ছেড়ে অন্য একটা পরিবারে আসছে,,,তার মনের অবস্থা ভেবেও আবির কিছু বলেনি,,,এতে অনুপমার মনের মাঝে কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল,,,,কিন্তু সে কিছু বলেনি,,,,
আশা-অনুপমা আজ থেকে তুমি এই বাড়ির বৌ,,,বৌ বললে ভুল হবে মা তুমি হল আমার মেয়ে,,,,কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে জানাবে,,,আর এটা কিন্তু তোমার বাড়ি,,,আস্তে আস্তে সব কিছুর দায়িত্ব নিতে হবে কিন্তু,,, আমার আবিরের দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে এখন থেকে,,,
অনু-,,,(নিশ্চুপ)
-বুঝেছো কি বলছি আমি??নেবে তো আমাদের সবার দায়িত্ব??
-হ্যাঁ আন্টি(আস্তে করে বলে সম্মতি জানালো)
-উহু আন্টি না বলো মা,,,কি হল বলো,,,(অনুর মাথায় হাত দিয়ে)
-মা(বলেই কেঁদে ফেললো অনু,,,সেই ছোট থেকেই যে তার মায়ের ভালোবাসার বড়ো লোভ,,অনু কাঁদছে দেখেই আশার চোখটাও ছলছল করে ,,,তাই ও দ্রুত অনুকে ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়)
-কাঁদেনা ,,আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে,,, কিন্তু এখন তো আমি তোমার মা,,আর কষ্ট পেতে দেবো না,,, আমার এই মেয়েটা যদি আর একবারো কান্নাকাটি করে তাহলে কিন্তু আমিও তার সাথে কাঁদবো,,,
সুনীল-এই না না একদম না,,তাহলে এই বাড়িতে থাকার মুশকিল হয়ে যাবে,,(ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওদের কথা শুনে)
-সুনীলের কথায় আশা এবং অনুপমা দুজনেই চোখের জল মুছে হেসে ফেলে,,,
– এই থাম তো তোরা,,,অনু মা এইদিকে আয় তো একবার,,,
– অনু দেখলো একজন বয়স্ক মহিলা ওকে ডাকছে,,,ও সেই দিকে যেতেই ওই বয়স্ক মহিলা বলেন,,,
– অনুপমা আমি আবিরের পিসি ঠাম্মাম,,, মানে তোর শ্বশুরের পিসি ও শাশুড়ির পিসি শাশুড়ি,,,(এই কথা শুনে অনু তাকে প্রণাম করলো,,,আর আবিরের পিসি ঠাম্মাম ওকে একটা সোনার হার পড়িয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিলো)
সুনীল-অনু মা এই বুড়ো ছেলেকে কিন্তু একটু সেবা করতে হবে,,,
আশা-আমার মেয়ে তোমাকে কেন সেবা করতে যাবে শুনি??
সুনীল-ঠিক আছে তাহলে তুমিই করবে
আশা-আমার বয়েই গেছে তোমার সেবা করতে,,,
-অনু এতক্ষন ধরে সুনীল আর আশার কথা গুলো হা করে শুনছিলো,,,আর মনে মনে ভাবছিলো আবিরের মাকে না দেখলে ও জীবনে জানতেও পারতো না যে মায়েরা কত সুন্দর হয়,,,,
সুনীল-তা তোমার মা মেয়ের গল্প হয়ে গেলে নীচে চলো ,,,মাসিমারা এসেছে তোমার মেয়েকে দেখতে,,আর আবির সে কোথায় গেছে??
আশা-তা তো জানি না,,, তুমি একটু ফোন করে দেখো তো ছেলেটা কোথায় আছে??
সুনীল-ঠিক আছে,,, এই ছেলেটা যে কি করে,,বাড়ি এই রকম সুন্দর বৌকে রেখে কোথাও যায় কেউ??আমি হলে তো যেতাম না,,(বলেই চলে গেল)
পিসি ঠাম্মাম-আমি কিন্তু তুই করে বলছি,,,অনুমা আজকে কিন্তু তোদের কালরাত্রি,,,আজকে বরের মুখ দেখতে নেই,,,আমি আজকে তোর সাথে ঘুমাবো ঠিক আছে??
অনু-ঠিক আছে পিসি ঠাম্মা,,,
আশা-আচ্ছা আমি নীচে যাচ্ছি,,,তুই ফ্রেশ হয়ে নে,,,তারপর নীচে আসবি,,ওও পিসি চলুন,,(বলে চলে গেল)
অনু-আমি কি এই সুন্দর পরিবার টিকে আপন করে নিতে পারবো??আর আবির তাকে কি কখনো আমার মনে,,,,না না এ কি ভাবছি আমি,,,না কখনোই না,,আমি শুধু হৃদয়ের শুধু হৃদয়ের,,,
চলবে,,,,,,
(বিঃদ্রঃ- প্রথম পর্ব বলে একটু বড়ো করে দিলাম,, আর হ্যাঁ এই গল্পটার অধিকাংশ পর্ব আমি আমার গ্ৰুপে পোষ্ট করবো,,,সুতরাং যারা জয়েন হননি,, তারা প্লিজ তাড়াতাড়ি জয়েন হয়ে যাবেন,,,,গ্ৰুপের লিংক পেজে দেওয়া আছে।আর একটা কথা গল্পটা ১৮+ দের জন্য, মানে প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য,,, গল্পে এমন এমন পর্ব হয়তো আমাকে লিখতে হবে যা ১৮+ থাকবে,,,তাই আমি আবারো বলছি যারা পড়তে চাননা তারা গল্পটির থেকে বিরত থাকবেন,,,,
– প্রথম পর্ব পড়ে কার কি মতামত,, বা প্রতিক্রিয়া হয় সেটা গ্ৰুপে লিখে জানাবেন,,,, অবশ্যই লাইক ও সেয়ার ও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। কপি পেস্ট করবেন না।)