#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব – ৩
– অনু দাঁড়াও,,, তুমি দাঁড়াবে নাকি???আমি যদি তোমাকে ধরতে পারি তো দেখো কি করি,,?? আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না,,,,
– কি করবে হৃদে ??? তুমি আমাকে ধরতে পারলে তো কিছু করবে,,,হি হি হা হা হৃদে আমাকে ধরতে পারে না,,,পারে না,,,( বলেই অনু পার্কের গাছ গুলোকে ধরে এদিক সেদিক দৌড়াতে লাগলো)
-তবে রে ওয়েট,,,আমি তোমাকে দেখাচ্ছি মজা,,( বলেই জোড়ে দৌড়ে অনুর হাত টা ধরে)
-ছাড়ো আমাকে,,আর করবো না,,,দেখো আশেপাশের লোকজন দেখছে,,,
-কেন একটু আগে জানো কে কি একটা বলছিলো??,,কি জানো বেশ,,ও হ্যাঁ মনে পড়েছে আমি নাকি তাকে ধরতে পারবো না,,, এবার বলো কি বলবে??? পারলাম তো??
-কোথায়??আমি তো শুনতে পাইনি,,,কে তোমাকে আবার কি বললো??( হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে দুষ্টুমির স্বরে বলে)
-এই শয়তান মেয়ে,,এখনো দুষ্টুমি করে যাচ্ছো,,,(বলেই অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে কোমড় ধরে হৃদয়,,,আচমকা কোমড়ে স্পর্শ পেয়ে অনু কেঁপে ওঠে)
-কি করছো কি?? হৃদয় ছাড়ো,,,কেউ দেখে ফেলবে,,,আমার লজ্জা করছে,,,,,
-দেখলে দেখুক আমি তো আমার হবু বৌ এর কোমড় ধরেছি,,,আর এইদিকটাই কেউ নেই,,,সুতরাং এসব কথা আমাকে বলে লাভ নেই,,,
-অসভ্য ছেলে বলেই অনু কোনো রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দেয় অন্যদিকে,,,,,
-এই অনু শোনো,,,আরে অনু,,,ঠিক আছে তুমি আমার কাছে আসবে না তো,,আমি কিন্তু কালকে চলে যাচ্ছি,,,(হৃদয়ের মুখে এমন কথা শুনেই অনু দাঁড়িয়ে যায়, তারপর হৃদয়ের কাছে এসে বলে)
– কাল কে মানে??কোথায় যাচ্ছো তুমি??
– শহরে বলেছিলাম না বাবার ব্যবসা এখন আমাকেই দেখতে হচ্ছে আর তার থেকে বড়ো কথা তোমাকে বিয়ে করতে হলে তো আমাকে শহরে যেতেই হবে,,,(হৃদয়ের কথা শুনে অনুর চোখ ছলছল হয়ে ওঠে,,মুহূর্তেই অনুভব করে যে গাল বেয়ে নোনা জল নামছে)
-এই অনু কাঁদছো কেন??এই কি হয়েছে??
-,,,,,,,,(কোনো কথা না বলে চোখের জল মোছে)
-কি হয়েছে অনু?তুমি চাও না আমাদের তাড়াতাড়ি।বিয়েটা হয়ে যাক,,,?
-চাই তো হৃদয় কিন্তু,,,
-কিন্তু কি অনু?
-আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না এখানে,,,আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে,,(হৃদয়কে জড়িয়ে)
-আরে পাগলি মেয়ে আমি তো সপ্তায় একদিন করে আসবো,,,আর সেই দিনটার পুরো সময় তোমাকে দেব,,,এখন প্লিজ হাসো সোনা,,, এই রকম কান্না করলে আমার তো কষ্ট হয়,,,, আর ওখানে গিয়ে তো আমরা সব সময় ফোনে কথা বলবো,,,
-সত্যি তো??
-সত্যি,,, সত্যি,, সত্যি,,
-আমি খুব ভালো বাসি তোমাকে হৃদয়,,নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি,,,
-আমিও তো আমার এই পাগলিটাকে ভীষণ ভালো বাসি,,,(বলেই অনুর কপালে চুমু দেয়,,আর সাথে সাথেই অনু লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে যায়)
-অনু অনু শোনো,,,আমার কাছে এসো,,,
-না আমি যাবো না,,,,
-অনু অনু,,,এই অনু(আশার ডাকে অতীতের ভাবনা থেকে ছেদ ঘটে অনুর)
-হ হহ হ্যাঁ ,,(পিছন দিকে তাকিয়ে)
-কি রে কি চিন্তা করছিস??সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি,,,
-আসলে মা,,,
-থাক আর বলতে হবে না,, ওই বাড়ির জন্য মন খারাপ করছে,,,?
-তেমন কিছু না মা,,,
-আচ্ছা অভ্র আসলে আমি ওকে বলবো যে তোকে যেন একটু ওইবাড়ি থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে,,
-না মা তার কোনো প্রয়োজন নেই,,, তুমি বলো ডাকছিলে কেন??
-আসলে আমি একটু তোর বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করাতে যাচ্ছি ,,,
– কেন মা বাবার কি হয়েছে?? ঠিক আছে তো?? কোথায় এখন??
– দেখো মেয়ের কান্ড,,,,বাবা ঠিক আছে,, আসলে তোর বাবার হার্ট খুব দুর্বল,, তার উপর সুগার আছে,,ডাক্তার বলেছে তোদের বাবাকে পেশমেকার বসানোর জন্য,,, তোদের বিয়ের চক্করে সেটা কদিন পর করবে বলেছিল,,, কিন্তু অভ্র নাছোড়বান্দা ও এখানে কিছুতেই করাবে না,,,আমেরিকায় আমার বোন আছে তাই ও চাই সেখানে থেকে ভালো ডাক্তার দিয়ে পেশমেকার বসাতে,,,এইজন্য ও ওখানকার ডাক্তার দের সাথে গিয়ে দেখা করে কথা বলে এসেছে,,,ছয় মাস পরে আমাদের যাওয়ার কথা,,,তাই এখানে যার আন্ডারে তোর বাবা আছেন তার কাছে গিয়ে একবার চেকআপ করাবো বলেই যাচ্ছি।
– ওওওও ঠিক আছে তোমরা সাবধানে যাবে,,,
– ঠিক আছে,,,আচ্ছা শোন অভ্র অফিস থেকে আসলে ওকে ব্লাক কফি করে দিবি ঠিক আছে,,, ব্লাক কফি বানাতে পারিস তো?
-হ্যাঁ মা পারি,,,তোমাকে চিন্তা করতে হবে না,,,
-আসলে অভ্র ব্লাক কফি পছন্দ করে,,,
-ওই জন্য মানুষটা এমন তিতো(আশার কথা শুনে অনু বিড়বিড় করে বলে)
-কিছু বললি??
-না মা তুমি যাও চিন্তা করতে হবে না,,, উনি আসলে আমি কফি করে দেবো,,,
-হমমম এবার থেকে একটু একটু করে ওর সব দায়িত্ব নিতে হবে তোকে,,,আর শোন পিসিমা ঘুমাচ্ছেন ,,মুন্নীকে বলা আছে ,তবুও তোকে বলে যায়,, পিসিমা ঘুম থেকে উঠলে আদা দিয়ে চা খান,,আচ্ছা আমি আসছি,,
-ঠিক আছে মা সাবধানে যেও,,পৌঁছে আমাকে একটা ফোন করে দিও,,,
___________________________________________
-সন্ধ্যেবেলায় অভ্র অফিস থেকে বাড়ি চলে আসে,,,এসে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়,,,তারপর অফিসের কিছু ফাইল হাতে নিয়ে সোজা স্ট্যাডি রুমে চলে যায়,,,আর যাওয়ার সময় আশা দেবীর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে,,,
– মা আমার কফিটা স্ট্যাডিরুমে পাঠিয়ে দিও,,,
-কিছুক্ষন পরে অনুপমা কফি নিয়ে স্ট্যাডিরুমে যায়,,,,
-আপনার কফি( কথাটা বলেই স্ট্যাডিরুমের ভিতরে ঢুকে কফির কাপ টা টেবিলে রেখে দেয়,,,অনুপমাকে কফি হাতে আসতে দেখে অভ্রের ভ্রু যুগল আপনাআপনি কুঁচকে যায়,, ও তখন বলে,,)
-তোমাকে কি আমি কফি আনতে বলেছিলাম??( টাউজারের পকেটে হাত রেখে শান্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করে)
– (অভ্রের এমন শান্ত স্বর শুনে অনু মনে মনে ভয় পেয়ে যায়,, কিন্তু অভ্রকে সেটা বুঝতে না দিয়ে ও বলে,,)
– আসলে মা তো নেই ওই জন্য,,,,( অনুর কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে,,)
-ওই জন্য তুমি ভাবলে যে আমার কাছে একটু আসা যাক তাই তো?? (মাড়ি চেপে বলে)
-না মি: চৌধুরী আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,,,আপনার কাছে আসার আমার কোনো শখ নেই ,,,মা বাড়িতে নেই,,ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছেন আপনাকে কফি দিতে,,,(বেশ জোড়ে আর তাড়াতাড়িই কথা গুলো বললো অনুপমা)
-আমি কিন্তু মুখে মুখে তর্ক করা একদম পছন্দ করি না(চেঁচিয়ে কফির কাপটা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো,,আর কাপের ভাঙা অংশ গুলো সারা ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল)
-আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন??এই ভাবে কফি টা ফেলে দিলেন কেন?
-আমি তোমাকে কত বার বলেছি যে আমার কাছে বৌ সাজতে আসবে না,,,আমি তোমাকে আমার wife হিসাবে মানি না,,,বাইরের জগতের কাছে স্বামী স্ত্রী হিসেবে থাকলেও চার দেওয়ালের মধ্যে আমি সেই সম্পর্ক মানি না,, কত বার বোঝাবো সেই কথাটা???
-আপনি কি কানে কম শোনেন মিস্টার চৌধুরী??কি বললাম আমি যে মা আমাকে বলে গেছে,,,না হলে আমার কোনো শখ নেই আপনার বৌ সাজার,,,( চিৎকার করে)
-এতই যখন তোমার বৌ হওয়ার শখ নেই তাহলে বিয়েটা করলে কেন??আমি তো তোমাকে ফোন করে বলে দিয়েছিলাম,,,এই তোমাদের মতো মেয়েকে আমার চেনা হয়ে গেছে,,, তোমরা শুধু টাকা চাও টাকা,,,,(অভ্র একবার রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান হারায় আর যার ফল স্বরূপ এখন ও অনুর হাতটা মুড়িয়ে ধরে)
-মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন আমাকে,,কি করছেন কি?? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন??আমার হাতে খুব লাগছে,,,
-লাগুক,,,আর কোনো দিন যদি আমার সামনে দেখি,,তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে,,এই বাড়িতে যতদিন আছো আমার সামনে আসা থেকে বিরত থাকবে,,নাহলে,,,( অনুর হাতটা ছেড়ে দেয়)
– ( অভ্র হাতটা ছেড়ে দিতেই অনুপমা হাতে ফু দেয়,,তারপর চোখের জল মুছে অভ্রকে বলে,,) আপনার এতটা ছোট মন,,,ছি,,,(বলেই কাঁদতে কাঁদতে চলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়)
-অনু চলে যাওয়ার পর অভ্র গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে,,,
-ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে অনুপমা ভীষণ কান্নাকাটি করে,,,অভ্র এত জোড়ে হাতটা ধরেছে যে হাতের উপর লাল হয়ে গেছে,,,,
– কেন উনি সব সময় আমাকে অপমান করেন?আমি তো নিজেও চাই নি বিয়েটা হোক,,,কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমি এই বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি,,,আজ এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী হৃদয়,,,শুধুমাত্র তুমি,,কেন এমন করলে আমার সাথে??আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলে তুমি??
_______________________________________
-কি ব্যাপার বলতো মুন্নী রাত ১১টা বাজতে চললো এখনো ছেলেটা বাড়ি আসলো না,,,অনু অভ্র কি তোকে কিছু বলে গেছে??
– ( অনু তখন রান্না ঘরে রাতের খাবার গুলো গরম করছিলো,,আশার প্রশ্নের উত্তরে বলে,,)
– না মা উনি তো আমাকে কিছু বলে যান নি,,,অফিস থেকে এসে কিছু সময় ছিলেন তারপরেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন,,,,
– তুই ওকে কফি দিয়েছিলি??( হঠাৎ করে এইরকম প্রশ্ন শুনে তথমত খেয়ে ওঠে অনু,,তারপর তুতলিয়ে বলে ওঠে,,)
– হ্যাঁ হ্যাঁ মা দি,,দিয়েছিলাম তো,,
-ওওওও,,,ঠিক আছে তুই খেয়ে নে,,,মুন্নী তুই অনুকে খেতে দে,,আমি একবার ফোন করে দেখি ছেলেটা কোথায় আছে,,, এত দেরি তো কোনদিন করে না,,,(বলতে বলতেই অভ্রের গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনতে পাই ওরা,,,)
– ওই তো কর্তামা দাদাভাই বাড়ি চলে এসেছে (মুন্নী)
– ফোনে কথা বলতে বলতে অভ্র যখন ড্রয়িংরুমে আসে তখন আশা বলে,,,
-কি রে অভ্র তুই কোথায় ছিলিস?? আর আজ এত দেরি করে ফিরলি কেন বাবা,,,??
– কেন মা কিছু দরকার??
– না কি দরকার হবে,,,এমনি দেরি হলে তো চিন্তা হয়,,
– আমার একটু কাজ ছিল বাইরে,,,ওই জন্যে দেরি হয়ে গেছে মা,,,
-ও ঠিক আছে আয় খেয়ে নে,,বৌমা কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে,,,কত রাত হয়েছে দেখেছিস??
-আমার জন্য অপেক্ষা না করে খেয়ে নিতেই তো পারে,,তাহলে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না মা(আড় চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে)
-ও কি কথা,,,স্বামী না খেলে কোনো স্ত্রী খেতে পারে,,,তুই বুঝবি না এইসব,,,মুন্নী আমাদের খেতে দিয়ে তুই ও খেয়ে নে,,,
_________________________________________
-রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সব কিছু গুছিয়ে অনুপমা ঘরে এসে দেখে অভ্র বালিস চাদর নিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কি করছে,,,অনু কিছু না বলে একটা কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়,,, আর তখনই অভ্র বলে ওঠে,,,
-আমি স্ট্যাডিরুমে যাচ্ছি,,,তুমি চাইলে বিছানায় শুতে পারো,,,বলেই অনুকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অভ্র,,,
অনু-আজব লোক তো,,,তখন এত কিছু হয়ে গেল কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই,,এ কেমন মানুষ ভগবান,,,
চলবে,,
( যারা যারা পড়বেন সবাই দয়া করে রিয়্যাক্ট ও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। কপি পেস্ট করবেন। সেয়ার করবেন সবাই।
– আমি সত্যিই অবাক আমার গ্ৰুপে সম্ভাব্য ১৫১ জন মেম্বার আছে,,কিন্তু তাদের গ্ৰুপে এ্যাক্টিভিটি এত কম ,,,আর সব থেকে অবাক করা বিষয় হলো সবাই আমার গল্প পছন্দ করেন তবুও প্রত্যেকটা পর্বের পাঠ- প্রতিক্রিয়া পাই না গ্ৰুপে। আমি তো গ্ৰুপটা আপনাদের জন্যে করেছি। আপনাদের ব্যবহারে আমি বার বার নিরাশ হয়ে যায়।)