#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৯
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
চিকিৎসক নারীটি হাত রাখলেন পূর্বাশার মাথায়, কোমল কন্ঠে বললেন – আমার খুব কাছের কেউ বাংলাদেশী ছিল। তার কাছ থেকেই আমার বাংলা ভাষা রপ্ত করা।
পূর্বাশা চোখ বড় বড় করে তাকালো মহিলাটির দিকে, বলল – আপনার সাথে বাংলাদেশের মানুষদের পরিচয় আছে? আপনি সেখানে গিয়েছেন কখনও?
চমৎকার হাসলেন মহিলাটি, বললেন – অবশ্যই আছে ভীষন ভালো পরিচয় আছে তবে সেখানে যাওয়ার মতো সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি।
কথাটুকু শেষ করে একটু থামলেন তিনি, বললেন – তোমার শরীর কেমন এখন? সু্স্থ লাগছে একটু?
পূর্বাশা আস্তে ধীরে উঠে বসলো, বলল – আমি ঠিক আছি এখন।
– গুড ভেরি গুড। তবে তোমার শরীর দূর্বল কিন্তু বেশ। খাওয়া দাওয়াটা ভালোভাবে করবে। নিশ্চই দেশ থেকে এসে খাওয়া দাওয়া ভালোভাবে করছো না।
পূর্বাশা মাথা নিচু করলো বোঝার বুঝে নিলেন চিকিৎসক, বললেন – এখন থেকে ঠিকভাবে খাবে ঠিক আছে।?
পূর্বাশা উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো বোঝালো – ঠিক আছে।
অতঃপর চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসা সেক্টর থেকে বেরিয়ে এলো সে। ভাবলো এখন আবার গিয়ে মিলিটারি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবে আবার। প্রশিক্ষণ না দিয়ে উপায় তো নেই কোনো, বাধ্যতামূলক দিতেই হবে। শুধু শুধু এই এক বেলা তাহলে ফাঁকি দিয়ে লাভ আছে কি কোনো? তার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি করা শ্রেয়। পূর্বাশা দৌড়ে এলো মাঠের দিকে, কিন্তু মাঠ একদম খালি, পেল না কাউকে। সবাই গেল কোথায়? একটু খুঁজে একজনের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলল দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়েছে সবাই ক্যান্টিনে চলে গেছে। মাঠ থেকে পূর্বাশা এবার ছুটলো ক্যান্টিনের দিকে। সেখানে যেতেই পূর্বাশার দেখা হলো সেনজেই, সুজা, এবং জেফির সাথে। তারা খাবার নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। পূর্বাশা গিয়ে দাঁড়ালো তাদের পাশে। তিনজনই তাকে পেয়ে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার উপর। সেনজেই চিন্তিত কন্ঠেই শুধালো – তুমি ঠিক আছো?
পূর্বাশা ছোট করে উত্তর দিল – হুম।
তারপর চারজন মিলে নিজেদের প্লেটে খাবার নিয়ে বসলো একটা টেবিলে। সেনজেই, জেফি আর সুজা গল্প করতে করতেই খাওয়াও শুরু করে দিয়েছে ইতমধ্যে শুধুমাত্র পূর্বাশা খেতে পারছে না। চপস্টিক নামক চায়নিজদের প্রতিদিনকার ব্যবহার্য বস্তু নিয়ে পড়ছে মহা বিপদে। এই চপস্টিক দিয়ে সে খাবে কিভাবে? দুটো লাঠির মতো। এটা তো সে ধরতেই পারে না খাবে কিভাবে? কাউকে বলতেও পারছে না লজ্জায়। তাহলে কি ভাববে সবাই? তাহলে কি হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করবে? সবাই নিশ্চই আনকালচার গেঁয়ো ভাববে। হাতের চপস্টিক দুটো নিয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলো মেয়েটা। সেনজেই ওদের হাতের দিকে তাকিয়ে তারা যেভাবে ধরেছে সেভাবেই ধরার চেষ্টা শুরু করলো সে। কিন্তু পারছে না কিছুতেই। একটুপরই তো বিরতি শেষ হবে এদিকে সে তো চপস্টিকই ধরতে ব্যর্থ খাবে কিভাবে? পূর্বাশার ভাবনার মধ্যেই তার সম্মুখে টেবিলের উপর হুট করেই একটা চামচ পড়লো। হকচকিয়ে উঠলো পূর্বাশা। এভাবে হঠাৎ করে চামচ কে রাখলো এখানে? দ্রুত মাথা তুলে সম্মুখের দিকে তাকালো পূর্বাশা। দেখলো মিলিটারি পোশাকে আবৃত একটা ছেলে যাচ্ছে তার সম্মুখ থেকেই। পূর্বাশা ভালোভাবে তাকালো, এটা তো সেই নাক উঁচু ছেলেটা জায়ান। সে ওকে চামচ দিয়ে গেছে? না কোনোমতেই না। যে ওকে প্রতি পদে পদে অপমান করতে ছাড়ে না সে ওকে সাহায্য করবে? হতেই পারে না। কিন্তু জায়ান যদি চামচ না রাখে তাহলে রাখলোটা কে? আশেপাশের আর কাউকে না সে চিনে আর না তারা তাকে চিনে। তাহলে হুট করে তারা কি সাহায্য করবে তাকে? এখন এত ভেবে কাজ নেই। একটু পরেই খাওয়ার সময় শেষ হবে। তাই আর বেশি না ভেবে খাওয়া ভালো। তবে যেই রেখেছে তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিল পূর্বাশা। চামচটা পেয়ে তার উপকারই হয়েছে অনেক। চপস্টিক না ধরতে পারলেও চামচ তো ধরতে পারে সে। চামচ দিয়ে খাওয়া যাবে এবার, আর লজ্জায়ও পড়তে হবে না।
***
খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই ফিরলো আবার মাঠে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো সবাই। আবারও শুরু হলো দৌড়ঝাঁপ। দৌড়াতে দৌড়াতে এবার আর জ্ঞান হারালো না পূর্বাশা তবে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। ক্লান্ত শরীরে মাঠের মধ্যেই শুয়ে পড়লো মেয়েটা। পানির পিপাসা লেগেছে ভীষন। কিন্তু পানি খেতে হলেও এখন যেতে হবে ক্যান্টিনে। এদেশে আর তাদের দেশের মতো সব স্থানে বিনা পয়সায় পানি পাওয়া যায় না। পানি টুকুও কিনে পান করতে হয়। গলাটা শুকিয়ে কাঠ। পানি না খেলেই নয় এখন। উঠে বসলো পূর্বাশা। পানি খাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াবে তার আগেই পানি নিয়ে তার দিকে দৌড়ে এলো সুজা। এক বোতল পানি তার হাতে দিল মেয়েটা, বলল – নাও পানি খাও।
পূর্বাশা অবাক হলো, বলল – পানি কোথায় পেলে?
– ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম পানি আনতে নিজেদের জন্য তোমার জন্যও নিয়ে এলাম।
পূর্বাশা কৃতজ্ঞ হলো মেয়েগুলোর প্রতি, বলল – ধন্যবাদ।
অতঃপর বোতলটা খুলে পানি পান করতে শুরু করলো সে। জায়ানও ঐ দিকেই আসছিলো। তার হাতেও ধরে রাখা এক বোতল পানি। হুট করেই পূর্বাশার থেকে একটু দূরে এসে থেমে গেল জায়ান। একবার তাকালো মেয়েটার পানে অতঃপর হুট করেই হাতের সদ্য ক্যান্টিন থেকে কিনে আনা পানির বোতলটা ছুঁড়ে ফেললো মাঠের বাইরে। পূর্বাশার দিকে আবার একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাঁটা ধরলো উল্টোপথে।
___________________________________
রাতের আঁধার ঘনিয়েছে। চারদিকে সন্ধ্যা নেমেছে। কৃত্রিম আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে পুরো শহরটা। যানবাহনে ব্যবহৃত লাল সবুজ আলোতেও ভরে উঠতে শুরু করেছে রাস্তাঘাট। পূর্বাশাদের আজকের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে একটু আগেই। প্রশিক্ষণ শেষ করে তারা কেবল হোস্টেলে ফিরে ফ্রেশ হতে শুরু করেছে। সারাদিনের দৌড় ঝাঁপে ধুলোবালিতে একাকার অবস্থা। এখন গোসল না করলেই নয়। কোনোভাবে গোসলটা শেষ করে রুমে ফিরলো পূর্বাশা। আধভেজা চুলগুলো নিয়েই গা এলিয়ে দিল বিছানায়। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত লাগছে ভীষন। শরীর আর যেন চলছে না। ঘুম ঘুমও পাচ্ছে কেমন একটা। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিল পূর্বাশা। কিন্তু তার ঘুম বুঝি আর সহ্য হলো না কারো। প্রবল ঝংকার তুলে বেজে উঠলো বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা। ক্ষানিকটা বিরক্ত হলো মেয়েটা। বিরক্ত ভঙ্গিতেই মোবাইলটা নিল পূর্বাশা। মোবাইলের স্ক্রীনে দেখলো বাড়ি থেকে কল করা হয়েছে। পূর্বাশা ধরলো কলটা, বলল – হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম।
ওপাশ থেকে শোনা গেল পাখি বেগমের কন্ঠস্বর, বেশ অভিমানী কন্ঠে সে বলল – ভুলেই গিয়েছিস আমাদের? একদম কল করিস না। খবর নিস না আমাদের।
পূর্বাশা অবাক হলো, বলল – সকালেই না কল করলাম, কথা হলো তোমার সাথে।
– সে তো সকালে হয়েছে। তারপর সারাদিনে আর কোনো খোঁজ খবর নেই। আমাদের তো চিন্তা হয় নাকি?
– সারাদিন ট্রেনিং এ ছিলাম মা। কল করার সুযোগ পাইনি।
টুকটাক মা বাবা আর ভাই বোনদের সাথে কথা বলে কল কাটলো মেয়েটা। আবারও পাড়ি দিল ঘুমের দেশে।
___________________________________
ভোরের আলো ফুটেছে। সূর্যের আলোয় ভরে উঠতে শুরু করেছে চারদিক। প্রতিদিনের তুলনায় আজ একটু আগেভাগেই ঘুম ভাঙলো পূর্বাশার। কাল তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফল এটা। রাতে খাওয়াটাও হয়নি ঘুমের তাড়নায়। এখন ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। বাইরে গিয়ে এখন খাওয়া প্রয়োজন কিন্তু সেনজেই, সুজা এবং জেফি প্রত্যেকেই ঘুমাচ্ছে এখনও উঠেনি। পূর্বাশা একবার ভাবলো ওদের ডাকবে তারপর আর ডাকলো না। এদের সাহায্য সে আর কতদিন নিবে? সারা জীবন তো সেই একা একাই চলতে হবে। শুধু শুধু দুদিনের মায়ায় তাই আবদ্ধ না হয়ে একটু আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা প্রয়োজন তার। হালকা পাতলা একটা থ্রী পিস পড়েই মোবাইল আর হাতের পার্স ব্যাগটা তুলে বাইরে চলে এলো সে। ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলো চারদিক। সকালের নিস্তব্ধ কোলাহলহীন শহরটা বেশ ভালোই লাগছে পূর্বাশার কাছে। চারপাশটা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায়ও ভরপুর। পূর্বাশা একটু এগিয়ে হাঁটা শুরু করলো কলেজের সম্মুখের ছোট রাস্তাটা জুড়ে। এই মুহূর্তে লোকজন, যানবাহন কোনোটাই তেমন একটা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তাই নিজেকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বও একটু কম লাগছে তার। কিছুটা দূর হেঁটে ছোট ছোট কয়েকটা দোকান খোলা পেল পূর্বাশা। সেখানে ঢুকে ব্রেড আর একটা পানীয় নিল। যদিও দোকানদার তার ভাষা বুঝতে পারছিলো না ভালোভাবে। খাবারগুলো হাত দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে কিনতে হয়েছে। তবুও ভালো লাগছে। এই প্রথম সে নিজের সংকোচ ভেঙে নিজে থেকে কিছু করতে পেরেছে। রাস্তায় মানুষ কম থাকায় খাবারগুলো খুলে খেতে খেতেই আপন মনে হাঁটতে শুরু করলো পূর্বাশা। বেশ কিছুটা দূরে এসে তার খাবার শেষ হলো। হাতের পানীয়টা শেষ করে পিছন ঘুরলো, এখন হোস্টেলে ফিরতে হবে। কিন্তু পিছনে ফিরেই চমকে গেল মেয়েটা। তার পিছনে একই রকম তিনটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। এর কোন রাস্তা থেকে এসেছে সে? আশেপাশে ভালোভাবে তাকালো মেয়েটা জনমানবশূন্য একটা পার্কের মতো। এ কোথায় এসে পৌঁছেছে সে? তার কলেজ কোথায়? এখানকার কিছুই তো চিনে না সে। চারদিকে কাউকে দেখতেও পাচ্ছে না যে তাকে তার কলেজে যাওয়ার পথ জিজ্ঞেস করবে।
চলবে……
ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link
[ আহরাব ইশতিয়াদ এবং নিশিতা জুটির উপর লেখা আমার প্রথম উপন্যাস “স্নিগ্ধ প্রেয়শী” পড়ে নিন বইটই অ্যাপে, মাত্র ৪০ টাকা। বইয়ের লিংক এবং কিভাবে কিনবেন পেয়ে যাবেন কমেন্ট বক্সে ]