#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_২৪
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
এ তো কোনো ছোটখাটো রোমান্টিক সিনেমার দৃশ্য। আর তার নায়ক হলো এত দিনকার ভিলেন চরিত্রে থাকা জায়ান। এটাও সম্ভব? অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে এতক্ষন সবটা দেখছিলো তৃষাম আর চ্যাং। জায়ান আর পূর্বাশার সিনেমাটিক জড়াজড়ি করার দৃশ্যে এতটাই বিভোর গিয়েছিল যে কখন এই দুইজন স্বশরীরে এসে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছে খেয়ালই করেনি। হঠাৎ চোখের সামনে এভাবে হুট করে জায়ানের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে দেখে বেশ অপ্রস্তত হয়ে পড়েছে তারা। এমনিই জায়ানের যা ক্রোধ তাদের না ঐ ট্রেনের উপর তুলে টুক করে নিচে ফেলে দেয়। ঢোক গিললো তৃষাম। আমতা আমতা করে বলল – বিশ্বাস কর ভাই আমি একটুও বেশি বুঝিনি।
চ্যাং ও অপ্রস্তুত। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে সে বলল – আমিও কিছু দেখিনি। এই যে তুই সকাল সকাল নায়কের মতো সেজে গুজে অ্যামিউসমেন্ট পার্কে এসে একটা মেয়ের সাথে জড়াজড়ি করে ট্রেন রাইড উপভোগ করছিলি। বিশ্বাস কর ভাই আমি কিছুই দেখিনি।
চ্যাং এর কথাগুলো শুনে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো পূর্বাশা। সে যে একটু আগে ভয় পেয়ে জায়ানকে জড়িয়ে ধরেছিল তাও দেখে নিয়েছে এরা? ইসসস কি লজ্জাজনক পরিস্থিতি। লাজে মাথা নুইয়ে ফেললো মেয়েটা। আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো জায়ানের মুখশ্রী। বরাবরের মতোই গম্ভীর। লজ্জার লেশটুকু নেই। তৃষাম আর চ্যাং আর কথা বাড়ালো না। গলা ছেড়ে দুজন হাঁটা দিল দুই দিকে। পূর্বাশা মাথা তুললো। তড়িঘড়ি করে ডাক, বলল – তৃষাম ভাই! চ্যাং ভাই!
এই ডাকটারই যেন অপেক্ষা করছিল তৃষাম আর চ্যাং। পূর্বাশার মুখ খুলে ডাকতে দেরী ত দের দৌড়ে গিয়ে পূর্বাশার সম্মুখে দাঁড়াতে দেরী নেই। পূর্বাশার সম্মুখে দাঁড়িয়ে তৃষাম বলল – কিছু বলবি বল।
আমতা আমতা করলো পূর্বাশা অতঃপর বলল – আপনার নাকি কি জরুরী কাজ ছিল তাই আসতে পরবেন না নাকি?
তৃষাম তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো জায়ানের পানে। এই ছেলে তাহলে বানিয়ে বানিয়ে তার জরুরী কাজের কথা বলে দিয়েছে। কিন্তু সকাল থেকে সে তো কোম্বলের মধ্যে ছিল। আর আজ যেহেতু কলেজ ছুটির দিন তাহলে আজ সারাদিন কোম্বলের মধ্যে শুয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ তার নেই। জায়ানের পানে দৃষ্টি রেখেই তৃষাম বিরবিরিয়ে বলল – ছিলো তো। বিশাল জরুরী কাজ ছিল তবে কোম্বলের নিচে।
পূর্বাশা স্পষ্টভাবে শুনলো না তৃষামের বলা কথাগুলো। আবারও শোনার জন্য সে শুধালো – কিছু বললেন তৃষাম ভাই?
মেকি হাসলো তৃষাম, বলল – কাজ ছিল তো। অনেক জরুরী কাজ ছিল তবে তাড়াতাড়ি শেষ করেছি শুধু তোর জন্য। ভয় হচ্ছিলো জায়ানের সাথে একা একা কি করছিস না করছিস। এমনিই ও যা রাগী পরে যদি তোকে মে’রে গুম টুম করে দেয়। তখন ফুফা ফুফুকে কি জবাব দিতাম আমি?
কথাটা বলেই তৃষাম তাকালো জায়ানের পানে। স্ফুলিঙ্গের ন্যায় আগুন ঝড়ছে যেন তার অক্ষিকোটর থেকে। মনে হচ্ছে এখনই যেন জ্বা’লি’য়ে পু’ড়ি’য়ে ভষ্ম করে দিবে তৃষামকে। ফাঁকা ঢোক গিললো বেচারা, জোরপূর্বক ঠোঁট টেনে হেসে বলল – মজা করছিলাম আর কি। জায়ান বড্ড ভালো ছেলে। এমন কিছু সে করতেই পারে না, একদম না। কোনো মতেই না।
তৃষাম আর চ্যাং ও থেকে গেছে জায়ান আর পূর্বাশার সাথে। ঘুরে ঘুরে তারা সকলে দেখেছে অ্যামিউসমেন্ট পার্কটা। তবে আর কোনো রাইডে ওঠা হলো না তাদের। মূলত পূর্বাশাই উঠতে চায়নি। প্রথম রাইডে উঠেই যে নাজেহাল আর লজ্জাজনক পরিস্থিতির স্বীকার সে হয়েছে। আবার কোনো রাইডে উঠলে আবার কি না ঘটবে। তার থেকে না ওঠাই ভালো। জায়ান পূর্বাশা, তৃষাম আর চ্যাং এর সাথে হাঁটছে আর মনে মনে তৃষ্ণায় আর চ্যাং এর পিন্ডি চটকাচ্ছে। পূর্বাশা থাকায় না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। এখানে আজ যদি পূর্বশা না থাকতো তাহলে এদের দফা রফা করেই সে ক্ষান্ত হতো। সকাল সকাল এত সেজেগুজে এলো পূর্বাশার সাথে একা একটু সময় কাটাবে বলে আর এই বদমাইশ দুটো কিনা তার সকল আশায় জল ঢেলে দিল? পার্কের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতেই তৃষাম হঠাৎ বলল – ভাই ক্ষুধা পেয়েছে।
চ্যাং ও সায় জানালো তৃষামের সাথে, বলল – ভাই আমারও ক্ষুধা পেয়েছে।
কথাটুকু বলে চ্যাং ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো পূর্বাশার পানে, বলল – পূর্বাশার নিশ্চই ক্ষুধা পেয়েছে তাই না?
পূর্বাশা উত্তর দিল না কোনো। শুধু একবার আড় চোখে তাকালো জায়ানের পানে। তার তো ক্ষুধা লেগেছে সেই প্রথম রাইডে চড়েই। ভয়েই মনে হচ্ছিলো পেটের সব খাবার হজম হয়ে গেছে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল জায়ান। পূর্বাশার মুখ দেখেই সে বুঝে নিয়েছে মেয়েটার ক্ষুধা পেয়েছে আর এই দুটো? এরা তো এসেছেই খেতে আর তার পকেট ফাঁকা করতে। জায়ান তাকালো সকলের পানে, বলল – চল।
তৃষাম আর চ্যাং হইহই করে ছুটলো তার পিছনে। কিন্তু একি? জায়ান তাদের রেস্টুরেন্টে না নিয়ে গিয়ে নিয়ে এসেছে রাস্তার ধারে। হাত উঁচিয়ে আবার একটা ট্যাক্সিও ডাকছে। তবে কি তাদের না খাইয়ে ট্যাক্সি করে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়ার মতলব করছে? তৃষাম আর চ্যাং চোখ বড় বড় করে তাকালো জায়ানের পানে। চ্যাং বলল – তুই কি আমাদের হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিস?
– তা কেন হবে? আমরা তো রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি।
তৃষাম সন্দেহ প্রকাশ করলো জায়ানের কথায়। সুরু দৃষ্টিতে সে তাকালো জায়ানের পানে। সন্দিহান কন্ঠে শুধালো – আশেপাশে তো অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। এত রেস্টুরেন্ট রেখে ট্যাক্সি করে আমাদের অন্য রেস্টুরেন্টে যেতে কেন হবে?
বাঁকা হাসলো জায়ান, বলল – খায়াবোই যখন তখন এই ছোট খাটো রেস্টুরেন্টে খাওয়াবো কেন? বড় কোনো রেস্টুরেন্টেই খাওয়াবো।
তৃষাম আর চ্যাং এর সন্দেহ তবুও দূর হলো না। এই ছেলেকে বিশ্বাস করা যায় না একদম। এর পেট আর মস্তিষ্ক ভর্তি সব ক্রোধ আর শ’য়’তা’নি। এখন সন্দেহ করেও তো উপায় নেই। যেতে তো হবেই ঐ জায়ানের সাথে। তা ছাড়া আর উপায় কি? নিজেদের সন্দেহ নিজেদের মধ্যে চেপে রেখেই ট্যাক্সিতে উঠে বসলো তৃষাম আর চ্যাং। দেখা যাক এখন কি হয়।
কিছুক্ষণ বাদেই জায়ানদের ট্যাক্সিটা এসে থামলো একটা বড় সুস্বজ্জিত রেস্টুরেন্টের সম্মুখে। ট্যাক্সি থেকে নেমে দাঁড়ালো সবাই। চ্যাং আর তৃষাম অবাক দৃষ্টিতে তাকালো রেস্টুরেন্টটার দিকে। সত্যিই জায়ান তাদের এত বড় একটা রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে আসছে? অবিশ্বাস্য! তৃষাম আর চ্যাং এর অবাকত্বের মাঝেই তাদের তাড়া দিল জায়ান, বলল – এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হা করে রেস্টুরেন্ট গিলবি নাকি ভিতরে গিয়ে কিছু খাবারও গিলবি?
তৃষাম আর চ্যাং খুশিতে গদগদ হয়ে উঠলো। নাচতে নাচতে ঢুকলো রেস্টুরেন্টের ভিতরে। ভিতরের দিকটা দেখে যেন আরও অবাক হলো। চারপাশ কি সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, স্বজ্জিত। টেবিল গুলোও সব হাই কোয়ালিটির। এমন একটা রেস্টুরেন্টে জায়ান তাদের নিয়ে আসবে ভাবতেই পারেনি কখনও। অবাক দৃষ্টিতেই চারপাশ অবলোকন করতে করতে একটা টেবিল দখল করে বসলো তারা চারজন। জায়ান মেনু কার্ডটা ধরে বাড়িয়ে দিল তৃষাম আর চ্যাং এর পানে। সহজ কন্ঠে বলল – তোদের যা যা খেতে ইচ্ছে হয় অর্ডার কর।
তৃষাম আর চ্যাং অবাক হলো। এত ভালো ব্যবহার তাও কিনা জায়ান তাদের সাথে করছে? আবার মেনু কার্ড তাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে তাদের নিজেদের পছন্দমতো অর্ডার করতে বলছে? ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না। একি সত্যি নাকি কোনো স্বপ্ন। তৃষাম অবাক কন্ঠেই বলল – এটা কি তুই জায়ান? নাকি কারো সাথে পাল্টে গিয়েছিস?
জায়ানের মুখশ্রী থমথমে হলো। থমথমে কন্ঠে সে বলল – ঠিক আছে তোদের অর্ডার দিতে হবে না। মেনু কার্ডটা আমাকে দে আমি দিচ্ছি।
চ্যাং দ্রুত মেনু কার্ডটা সরিয়ে নিল, বলল – না না আমিই দিচ্ছি।
মেনু কার্ড দেখে বেশ ভেবে চিন্তে তৃষাম অর্ডার দিল – বার্গার চারটা, পিজ্জা চারটা, পাস্তা চার প্লেট, ফ্রাইড রাইস
তৃষামের বলা শেষ হলেই চ্যাং বলল – ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন উইংস, রামেন, হট চকলেট সব চারটা চারটা।
জায়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো তৃষাম আর চ্যাং এর পানে, গম্ভীর কন্ঠে শুধালো – আর কিছু?
– না আপাতত এই টুকুই।
তৃষামের উত্তরে কাপালে ভাঁজ পড়লো জায়নের। ফিরে তাকালো পূর্বাশার পানে, বলল – আপনারও কি আপাতত এই টুকুতেই হবে নাকি আরও কিছু লাগবে।
জায়ানের কথায় সংবিৎ ফিরলো পূর্বাশার। সে তো এতক্ষন তৃষাম আর চ্যাং এর অর্ডার শুনেই হা হয়ে গিয়েছিল। এরা কি আজ রেস্টুরেন্ট শুদ্ধো সব খেতে এসেছে কিনা বোধগম্য হলো না তার। জায়ানের প্রশ্নে মাথা নুইয়ে ফেললো মেয়েটা, নরম কন্ঠে বলল – আমার কিছু লাগবে না।
কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই দুই তিনজন ওয়েটার তাদের অর্ডার করা খাবারগুলো নিয়ে এলো। টেবিল ভর্তি করে সব খাবারগুলো সাজিয়ে দিল। চকচক করে উঠলো তৃষাম আর চ্যাং এর মুখশ্রী। খাবার গুলোর দিকে হামলে পড়লো যেন আর জীবনে খাবার দেখেনি তারা। জায়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে একবার পর্যবেক্ষণ করলো তৃষাম আর চ্যাংকে অতঃপর নিজেও খাওয়া শুরু করলো। অল্প স্বল্প খেল জায়ান আর পূর্বাশা। এতেই পেট ভরে গেছে তাদের। অথচ তৃষামের খাওয়া শেষ হয়নি এখনও। সমানতালে খাচ্ছে তারা। জায়ান টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, বলল – তোরা খা তাহলে আমি একটু আশপাশটা ঘুরে দেখি।
তৃষাম খেতে খেতেই উত্তর দিল – আচ্ছা।
জায়ান টেবিল ছেড়ে বাইরে বেরুতে বেরুতে পূর্বাশাকে উদ্দেশ্য করে বলল – আপনার তো খাওয়া শেষ। ওরা খাচ্ছে এখনও। আপনি এখানে বসে বসে কি করবেন? তার থেকে বরং আমার সাথে চলুন। ঘুরে দেখবেন চারপাশটা।
পূর্বাশা আর না করলো না। উঠে দাঁড়ালো সে, বাইরের দিকে চলে গেল জায়ানের সাথে। প্রায় ঘন্টা দেড়েক সময় নিয়ে খাওয়া শেষ করলো তৃষাম আর চ্যাং। টেবিলে কোনো খাবার আর অবশিষ্ট নেই। একদম গলা পর্যন্ত তুলে খেয়েছে তারা। অতঃপর হেলান দিয়ে বসে পড়লো চেয়ারের সাথেই। একটু ভালোভাবেই শ্বাস ফেলার আগে একজন ওয়েটার বিল নিয়ে হাজির হলো, নম্র কন্ঠে বলল – স্যার আপনাদের বিলটা!
চ্যাং হাতে নিল বিলের কাগজটা অতঃপর আশেপাশে চোখ বুলালো কোথাও জায়ান নেই। এতক্ষন লাগে ওদের ঘুরতে? বিল চলে এসেছে অথচ ওদের খবর নেই। তৃষাম পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলো। অতঃপর কল লাগলো জায়ানের নাম্বরে। তৃষামের মাথায় একটা শক্তপোক্ত বারি মেরে এক নারীকন্ঠি জানান দিল জায়ানের নাম্বার বন্ধ। এখন কি হবে? জায়ান কোথায়? নিশ্চই আশেপাশে আছে। তাদের এভাবে রেখে আর কোথায় যাবে? ঠোঁট টেনে জোরপূর্বক হাসলো চ্যাং, বলল – আসলে আমাদের সাথে আর একটা ছেলে ছিল না ও দিবে বিলটা। ও একটু বাইরে তো এসেই দিয়ে দিবে। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
ওয়েটার ছেলেটা কপাল কুঁচকালো, বলল – কিন্তু উনি তো বলে গেলেন বিলটা আপনারা দুজন দিবেন।
চলবে…….
ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link
[ আহরাব ইশতিয়াদ এবং নিশিতা জুটির উপর লেখা আমার প্রথম উপন্যাস “স্নিগ্ধ প্রেয়শী” পড়ে নিন বইটই অ্যাপে, মাত্র ৪০ টাকা। বইয়ের লিংক এবং কিভাবে কিনবেন পেয়ে যাবেন কমেন্ট বক্সে ]