#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_২৭
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
পূর্বাশাকে দেখেই থমকে দাঁড়ালো তারা। একজন বলল – কি জায়ান ভাইয়ের পাত্তা না পেয়ে এখন আবার নতুন পাখি খুঁজছিস নাকি?
আরেকজন বলল – এ ছাড়া এর আর কাজ কি? যেমন চেহারা তেমন তার চরিত্র, দুটোই একদম কালোতে পরিপূর্ণ।
কথাগুলো বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মেয়েগুলো। পূর্বাশাও আর চুপ থাকতে পারলো না। কাল থেকে তো কম শুনলো না সে। যে যেখান থেকে পেরেছে তার চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলে যাচ্ছে সমানতালে। তার কষ্ট হয় না বুঝি? নাকি সে মানুষ নয়? হয়তো তাকে মানুষ বলে গন্য করে না তাই তো এত কথা এত সহজে তাকে নিয়ে বলতে পারছে। পূর্বাশা এবার নিজের স্বপক্ষে প্রতিবাদ করলো, বলল – কারো চরিত্র নিয়ে কথা বলার আগে নিজেদের চরিত্রের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনি ঠিক কতটা ভালো। কারন ভালো মানসিকতা কিংবা ভালো চরিত্রের মানুষ কখনও অন্যকে তিরস্কার করে, খুব সহজে অন্যের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে পারে না।
পূর্বাশার কথায় যেন ক্ষেপে গেল তার সম্মুখে উপস্থিত মেয়েগুলো। তাদের মধ্য থেকে একটা মেয়ে আবার বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে প্রতিউত্তর করলো – তোর এত বড় সাহস, আমাদের সাথে তোর চরিত্র মিলাতে এসেছিস? আমরা তোর মতো কলির ড্রামও নই আর আমাদের চরিত্রও কালো নয়।
পূর্বাশা হয়তো মেয়েটার ছোঁড়া এই তিক্ত বাক্যের জবাব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কষ্ট করে আর তাকে উত্তর দিতে হয়নি। পূর্বাশার হয়ে এবার উত্তর দিল সেনজেই। কিছুটা তীক্ষ্ম কন্ঠে সে বলল – চামড়া সাদা হলেই তার হৃদয় সাদা হয় নাকি? এই যেমন ধর তোদের দেখেই তো আমার মনে হচ্ছে তোদের চামড়া ঠিক যতটা শুভ্র হৃদয়টা তার থেকে অধিক কালো আঁধারে ঢাকা।
– কি বললি তুই? আমাদের হৃদয় কালো আঁধারে ঢাকা?
একজনের কথার সাথে আবার অন্য একজন তাল মিলিয়ে বলল – আমাদের হৃদয় কোন দিক থেকে কালো আঁধারে ঢাকা হলো? আমরা কি তোর মতো কলেজের সুদর্শনদের কাতারে থাকা পুরুষ দেখতেই লাফিয়ে পড়েছি নাকি তার উপর? নাকি তার পিছু পিছু কুকুরের মতো ঘুরতে শুরু করেছি?
– আমিও কারো উপরে লাফিয়ে পড়িনি।
পূর্বাশার জবাবে যেন আনন্দ পেল মেয়েগুলো। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল – তাহলে কি বলতে চাইছিস তুই? তুই জায়ান ভাইয়ের উপর লাফিয়ে পড়িসনি বরং জায়ান ভাই তোর উপর লাফিয়ে পড়েছে?
কথাটা বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো যেন সবাই ঠিক তখনই পূর্বাশাদের পিছনের দিক থেকে গম্ভীর ক্রোধিত একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো। বেশ তীক্ষ্ম কন্ঠে সে বলল – হ্যা আমি লাফিয়ে পড়েছি পূর্বাশার উপরে। তাতে কার কি সমস্যা চেহাগুলো দেখি একবার।
চমকে উঠলো সবাই। চকিত দৃষ্টিতে পূর্বাশার পিছনের দিকে সকালে। জায়ান দৃশ্যমান হলো পূর্বাশার পিছনের দিকে। ক্রোধিত রক্তিম মুখশ্রী তার। কপালের রগগুলোও কেমন নীলচে বর্ন ধারন করেছে। চোখ বড় বড় হয়ে গেল সবার। সেনজেই, জেফি আর সুজা যেন জ্ঞান হারাবে এখনই। যে ছেলের সাথে পূর্বাশার সম্পর্কটা ঠিক দা কুমড়ার সেই ছেলে নাকি দাবি করছে সে পূর্বাশার পিছনে লাইন মারছে, এও সম্ভব? ততক্ষণে ধুপধাপ পা ফেলে সম্মুখের দিকে চলে এলো জায়ান, দাঁড়ালো পূর্বাশার পাশে। মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে শুধালো – আমি পূর্বাশার পিছনে ঘুরছি। ও নয় বরং আমি লাফিয়ে উঠতে চাইছি ওর উপর। এ নিয়ে কারো কি সমস্যা আছে দেখি একে একে বলে যা তো আমার সম্মুখে। তোদের চেহারা গুলো চিনে রাখি একটু।
জায়ানের কন্ঠ নিঃসৃত কথাগুলো যেন ছোট খাটো একটা বজ্রপাত ঘটালো উপস্থিত সকলের মধ্যে। সবাই হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো জায়ানের পানে। জায়ান থামলো একটু অতঃপর আবার বলল – অবশ্য যদি তোদের কারোর মধ্যে আমাকে এবং পূর্বাশাকে নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তবে অতি দ্রুত তোদের সেই মস্তক দেয়ালের সাথে টাক মেরে ফাটিয়ে ফেল। কারন যে মস্তিস্কে অন্য কাউকে নিয়ে কুচিন্তা, অন্য কারো খারাপ সাধনে নিয়োজিত সে মস্তিষ্ক থাকার চেয়ে না থাকা অধিক শ্রেয়।
মেয়েগুলো আমতা আমতা শুরু করলো তবে জায়ানের কথার প্রতিউত্তর করার মতো কোনো কথাই খুঁজে পেল না কেউ। কি উত্তর দিবে তারা? এতক্ষন পূর্বাশাকে দূর্বল ভীত পেয়ে যে যেখান থেকে পেরেছে বলে গেছে কিন্তু জায়ান তো দূর্বল নয়। তাকে কি কিছু বলা খুব সহজ? কারন –
“সমাজ দূর্বলদের দূর্বলতায় আঘাত করতে সফল তবে সবলদের আঘাত করতে ভীত। দূর্বলদের যে যেখান থেকে পারে হেয় করে তিরস্কার করে। আর সবলরা শত অন্যায় করার পরও তাদের পানে দৃষ্টিপাতের সাহস থাকে না কারো।”
পূর্বাশার অবস্থাও হয়েছে তাই। মেয়েগুলো কাঁচুমাচু হলো। পিছন ঘুরে চলে যেতে উদ্যত হলো সকলে। জায়ান পিছু ডাকলো তাদের। বেশ কড়া কন্ঠে বলল – তোদের দলনেত্রী যে আমার আর পূর্বাশাকে নিয়ে ছবিটা উইচ্যাটে পোস্ট করেছিল তাকে বলে দিস সাহস থাকলে আমি মাত্র যে কথাগুলো বলেছি প্রতিটি কথা হুবহু পোস্ট করে দিতে। নয়তো তাকে খুঁজে বের করে তাকে তিরস্কার করে যদি আমি লিখতে বসি তবে তা শুধুমাত্র দুই চার লাইনে সীমাবদ্ধ হবে না। গোটা এক রচনায় ছড়িয়ে পড়বে চীনের এলাকায় এলাকায়।
জায়ানের সম্মুখে আর কেউ দাঁড়ালো। দ্রুত প্রস্থান করলো মেয়েগুলো। সবাই চলে যেতেই পূর্বাশা তাকালো জায়ানের পানে অতঃপর বলল – আমাকে অপমানের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আপনি অন্য অনেক পন্থা অবলম্বন করতে পারতেন। এত বড় মিথ্যার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
জায়ান শীতল দৃষ্টিতে তাকালো পূর্বাশার পানে। ঠান্ডা কন্ঠেই জবাব দিল – আমি কোনো মিথ্যা বলিনি।
কপালে ভাঁজ পড়লো পূর্বাশা। অজানা আশঙ্কায় হৃদয় জর্জরিত হলো পূর্বাশার। পুরোনো অতীতটা মাথচাড়া দিয়ে উঠছে মস্তিষ্কে। না না এ হতে পারে না। সে হয়তো একটু বেশিই ভাবছে। কোথায় জায়ান আর কোথায় সে। জায়ান হয়তো মজা করেই বলেছে। তবুও হৃদয়ে ওঠা আশঙ্কার ঝড় থামাতে ব্যর্থ হলো মেয়েটা। আর একটু নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলো – মানে! আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন? এতক্ষন যা যা বলেছেন সেগুলো আমাকে অপমানের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছিল না?
– না, আমি কখনও মিথ্যা বলি না এবারও বলিনি। আমি এতক্ষন যে কয়টা শব্দ বা বাক্য আমার কন্ঠ থেকে বের বের করেছি প্রতিটি সত্য। আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি পূর্বাশা।
জায়ানের সোজাসাপ্টা স্বীকারোক্তি। তবে এই সোজা সাপ্টা বাক্যগুলোই যেন বি’ষা’ক্ত তীর ছুড়লো পূর্ববাংলার হৃদয়ে। বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। ভালোবাসার কথা কি কখনও কারো হৃদয়ে বি’ষা’ক্ত তীর ছুঁড়তে পারে নাকি? হৃদয়ে বি’ষা’ক্ত তীর ছোড়ে তো তিক্ত কথা, প্রতারনা, তিরস্কার। কিন্তু পূর্বাশার কাছে যে এই ভালোবাসা নামক শব্দটা এই সমাজের তিক্ত, তিরস্কারমূলক কথার চেয়েও বি’ষা’ক্ত। এই শব্দটা তাকে স্বরন করিয়ে দেয় তার জীবনে ঘটে যাওয়া এক কালো অতীত, নক্ষত্র! হ্যা নক্ষত্র। হয়তো সেই পুরুষকে এখন অনেকটাই ভুলতে বসেছে। মনের কোনে তার প্রতি ঘৃনার তীব্রতাও বেড়েছে। সেই প্রথম দিন যখন নক্ষত্র ছেড়ে গিয়েছিল তাকে তখনও সে পারেনি ঐ পুরুষকে ঘৃনা করতে। বরং ঘৃনা করেছিল নিজেকে, নিজের চেহারাকে। তাই তো আ’ত্ম’হ’ত্যা’র মতো এক ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল সে। তবে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক পূর্বাশা। একটু একটু করে ঘৃনাও করতে শুরু করেছে নক্ষত্র নামক পুরুষকে। নিজেকে অল্প স্বল্প ভালোবাসতে শিখেছে কিনা। হয়তো ঐ প্রতারক পুরুষের এখন আর কোনো অস্বিত্ব নেই তার জীবনে, তবে তার প্রতারনার দাগটা রয়ে গেছে এখনও ঠিক তার নামের মতোই উজ্জ্বল ভাবে। একবার ভালোবেসে চড়মভাবে প্রতারিত হয়েছে মেয়েটা। আজ আবার আরেকজন পুরুষ কিনা ভালোবাসার দাবি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে তার সম্মুখে? ভালোবাসা! ভালোবাসা বলতে কি এই পৃথিবীতে আদও কিছু রয়েছে? না ভালোবাসা বলতে কিছু নেই সবই মোহের খেলা। তাছাড়া জায়ানও যে নক্ষত্রের মতো তাকে নিয়ে খেলছে না তারও বা গ্যারান্টি কি? সেও হয়তো প্রতারনা করতেই ভালোবাসার দাবি জানিয়েছে। চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠলো পূর্বাশার। শক্ত কন্ঠে সে বলল – আমি জানি না আপনি সত্যি কথা বলছেন নাকি মিথ্যা। আমার সাথে মজা করছেন নাকি সত্যি বলছেন। অবশ্য আমি জানতেও চাই না। এই বিষয়ে আমি আগ্রহী নই মোটেই। আমি শুধুমাত্র আপনাকে এইটুকুই বলবো যে আপনি আজ এখানে দাঁড়িয়ে যা যা বললেন সেই কথাগুলো শুধুমাত্র এখানটাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে ভবিষ্যতে আর আগানোর চেষ্টাও করবেন না।
জায়নের মুখশ্রীতে অসহায়তা ফুটে উঠলো তবে মুখে প্রকাশ করলো না সে। বেশ স্বাভাবিক কন্ঠেই সে পূর্বাশাকে প্রশ্ন করলো – আপনি কি অন্য কাউকে ভালোবেসেন?
– না।
জায়ান স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো একটু। যাক মেয়েটার জীবনে অন্য কেউ তো নেই। এক মুহুর্তের জন্য তার হৃদয়ে কেমন সন্দেহ জেগেছি পূর্বাশা হয়তো ভালোবাসে অন্য কাউকে। কিন্তু মেয়েটা যেহেতু অন্য কাউকে ভালো বাসেই না তাহলে তাকে মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়? জায়ানের কপালে ভাঁজ পড়লো দুই তিনটা অতঃপর পূর্বাশার পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো – তাহলে আমাকে মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়?
– আমি কুৎসিত।
– তা নিয়ে সমস্যা নেই আমার। যদি থাকতোই তাহলে তো আপনার সম্মুখে আজ ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়াতাম না।
পূর্বাশার দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। তীক্ষ্ম কন্ঠে সে বলল – সমস্যা আছে নাকি নেই তা আমরা বিগত দিনে দেখেছি। আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে কিন্তু আমার নয়।
– আমি অনুতপ্ত আমার বিগত দিনের ব্যবহারে।
– অনুতপ্ত হলেই কি সব ভুলে যাওয়া যায়? আঘাতে জর্জরিত করে অনুতাপ বোধেই মলম লাগালে কি সে আঘাত সেড়ে রায়?
জায়ান চুপ রইলো। পূর্বাশার ছোঁড়া বাক্যগুলোর প্রেক্ষিতে সে ঠিক কি উত্তর দিবে খুঁজে পেল না সে। হত্যিই তো পূর্বাশার সাথে সে কম খারাপ ব্যবহার করেনি। পূর্বাশা কিঞ্চিৎ দাঁড়িয়ে রইলো জায়ানের সম্মুখে। হয়তো ছেলেটার মুখ থেকে উত্তরের আশা করেছিল। কিন্তু জায়ানকে চুপ থাকতে দেখে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো সে। সেনজেই, সুজা আর জেফিও হাঁটা ধরলো তার পিছু পিছু। জায়ান হঠাৎ পিছু ডাকলো পূর্বাশার, বলল – শুনুন!
থমকে দাঁড়ালো পূর্বাশা। পিছন না ঘুরেই জবাব দিল – জ্বী।
– আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।
পূর্বাশা শুনলো কথাটা। পিছন ঘুরে না তাকিয়েই শক্ত কন্ঠে বলল – তবে ভুলে যান আমাকে।
কথাটুকু সম্পূর্ণ করেই আর এক দন্ডও দাঁড়ালো না পূর্বাশা। লম্বা লম্বা পা ফেলছ হাঁটা ধরলো সম্মুখের দিকে। জায়ান আবারও পিছু ডাকলো তবে এবার আর দাঁড়ালো না পূর্বাশা। শুনলো না জায়নের কথা। পা চালিয়ে চলে গেল ছেলেটার দৃষ্টি সীমার বাহিরে। শীতল অথচ অস্থির হলো জায়ানের দৃষ্টিজোড়া। বিরবিরিয়ে বলল – আপনি ঠিক যতবার আমাকে ভুলে যেতে। বলবেন আমি ঠিক ততবার নতুন করে প্রেমে পড়বো আবার, নতুন করে ভালোবেসবো আপনাকে প্রাণপ্রিয়া।
চলবে…….
ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link
[ আহরাব ইশতিয়াদ এবং নিশিতা জুটির উপর লেখা আমার প্রথম উপন্যাস “স্নিগ্ধ প্রেয়শী” পড়ে নিন বইটই অ্যাপে, মাত্র ৪০ টাকা। বইয়ের লিংক এবং কিভাবে কিনবেন পেয়ে যাবেন কমেন্ট বক্সে ]