স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_২৮

0
417

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_২৮

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের দিকে পা বাড়িয়েছে। চারদিক সোডিয়ামের কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। শহরের বুকে লাল নীল সবুজ আলোর খেলা নেমেছে যেন। পড়ার টেবিলে দখল করে বসে রয়েছে জায়ান, তৃষাম আর চ্যাং। তৃষাম আর চ্যাং বসে বসে পড়লেও জায়ান পড়ছে না। বইয়ের পাতায় তাকিয়ে ভাবছে কিছু। হয়তো পূর্বাশার কথা ভাবছে। এই মুহূর্তে ঐ মেয়েটা ছাড়া তার মস্তিষ্কে ভাবার মতো কি রয়েছে কিছু? হৃদয়, মন, মস্তিষ্ক সব স্থানেই তো তার বিচরন। কিন্তু মেয়েটা এমন করছে কেন? এতটা নির্দয় পাষান তো ছিল না। আগে তো নরম কোমল স্নিগ্ধ পুষ্পের ন্যায় ছিল কিন্তু এখন কেমন কঠোর, পাষান হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। যদি তাই না হতো তবে কি ওভাবে তার মুখের উপর শক্ত কন্ঠে তার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারতো? উহু পারতো না, একদম পারতো না। তার উপর এখন আবার পূর্বাশা জায়ানকে সব স্থান থেকে ব্লক করে রেখেছে। আগে তো তাও মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিল। কল করলে বলতো নাম্বার বন্ধ, মনটাকে একটু বুঝ দেওয়া যেত। আর এখন সরাসরি ব্লক! ব্লক করে মেয়েটা তাকে ঠিক কি বুঝাতে চাইছে? সে চায় না জায়ানকে? জায়ানের ভালোবাসা সে প্রত্যাখ্যান করেছে? এত সহজ সব কিছু? মেয়েটা কি ভুলে গেছে যে এখন নিজের দেশে নয় বরং চীনে জায়ানের দেশে রয়েছে। না ভালোবাসলে কি’ড’ন্যা’প করে ধরে বেঁধে ভালোবাসাবে। এ দেশে রেখে দিবে চিরদিনের জন্য। আর কখনও বাংলাদেশে ফিরতেই দিবে না। তখন ভালো না বেসে যাবে কোথায়? আরও কিছুটা সময় নিয়ে জায়ান আকাশ পাতাল অনেক কথা ভাবলো অতঃপর চেয়ার ঘুরিয়ে তাকালো তৃষামের পানে, বলল – তোর বোনকে পটানোর কয়েকটা উপায় বল।

তৃষাম বইয়ের ভাঁজ থেকে দৃষ্টি রেখেই বলল – কোনো উপায় নেই।

জায়ান হাত উচালো। এক দুই তিন করে গুনলো বার কয়েক অতঃপর এক আঙ্গুল তুলে তৃষামের পানে তাকিয়ে বলল – তাহলে একটা উপায় বল।

তৃষামের কপালে ভাঁজ পড়লো। বিরক্তিভরা কন্ঠে বলল – একটাও নেই।

কথাটা বলে একটু থামলো তৃষাম অতঃপর আবার বলল – আমি তোকে ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি, তুই ওর পিছু তুই ছেড়ে দে। ও কোনোদিন তোর ভালোবাসা গ্রহন করবে না।

জায়ান সরু দৃষ্টিতে তাকালো তৃষামের পানে অতঃপর বলল – কেন করবে না?

– কারনটা না হয় ওর কাছ থেকেই জেনে নিস।

কিছুক্ষণ তম মেরে বসে রইলো জায়ান অতঃপর উঠে দাঁড়ালো। শরীরে শীত পোশাকটা জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। ভ্রু কুঁচকালো তৃষাম। এই সময়ে এ আবার কোথায় যাচ্ছে? পিছু ডাকলো তৃষাম, ভ্রুদ্বয় কুঁচকে রেখেই প্রশ্ন করলো – কোথায় যাচ্ছিস?

– তোর বোনের কাছে।

– কেন?

– জিজ্ঞেস করবো সে কেন ভালোবাসবে না আমাকে, কেন আমাকে প্রত্যাখ্যান করছে বারবার।

তৃষাম অবাক হলো। এই ছেলের মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি? আগের জায়ানের সাথে যে জায়ানের বিস্তর ফারাক। আগের জায়ানকে সে সচরাচর অস্থির হতে দেখেনি। হয় রেগে যেতে দেখেছে নয়তো ঠান্ডা মাথায় সমস্যার সমাধান করেছে। তৃষাম নিজের দুই ওষ্ঠ ফাঁক করলো। বলতে চাইলো কিছু কিন্তু জায়ান শুনলো না। তার আগে দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেলো বাইরে। কিঞ্চিৎ সময় পরই আবার দরজা ডেলে ভিতরে ঢুকলো সে। ভ্রু কুঁচকালো তৃষাম আর চ্যাং। এর মধ্যে পূর্বাশাকে প্রশ্ন কর শেষ? ছোট ছোট চোখে জায়ানের পানে তাকালো তৃষাম, বলল – ফিরে এলি যে?

– তোর মোবাইলটা দে।

– কেন? আমার মোবাইল দিয়ে তুই কি করবি?

থমথমে হলো জায়ানের মুখশ্রী, থমথমে কন্ঠে বলল – কারন তোর গুনধর বোন আমাকে সব স্থান থেকে ব্লক করে রেখেছে।

তৃষাম যেন সুযোগ পেল। সেদিন রেস্টুরেন্টে তাকে আর চ্যাং কে বিপদে ফেলেছিল, শুধুমাত্র এই জায়ানের জন্য তাদের রেস্টুরেন্টে কাজ করতে হয়েছে এখন সে কেন তার মোবাইল জায়ানকে দিবে? মোটেই দিবে না। টেবিলের এক কোনে রাখা মোবাইলটা ছো মেরে ঢুকালো নিজের পকেটে। ভেংচি কেটে বলল – আমি এখনও সেদিনের রেস্টুরেন্টের ঘটনা ভুলিনি, ভুলবোও না কখনও। আমি দেব না আমার মোবাইল তোকে।

জায়ান একটু সময় নিল অতঃপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল – ভেবেছিলাম তোর অ্যাসাইনমেন্টটা করে দেব। যাক ভালোই হয়েছে আর করতে হবে না।

তৃষাম যেন মুহুর্তেই ভুলে গেল রেস্টুরেন্টর ঘটনা। দ্রুত পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে বাড়িয়ে দিল জায়ানের পানে। মেকি হেসে বলল – এই নে আমার মোবাইল। তোর যতক্ষন লাগে ব্যবহার কর।

ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো জায়ান। সে ঠিক জানতো এতেই কাজ হবে। জায়ান হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিল, ঠোঁট কামড়ে বলল – এবার তাহলে আমার শালাবাবু হওয়ার প্রস্তুত হও বাছা।

কথাটা বলেই তৃষামের মোবাইল নিয়ে কারন ত্যাগ করলো জায়ান। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে গেল পূর্বাশার হোস্টেলের সম্মুখে। দেরী না করে হাতে থাকা তৃষামের নাম্বার থেকেই কল করলো পূর্বাশার নাম্বারে। একটু সময় রিং হতেই কলটা ধরলো পূর্বাশা, বলল – হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম তৃষাম ভাই।

সালামের জবাব দিল জায়ান। কিছুটা শক্ত কন্ঠেই বলল – আমি আপনার হোস্টেলের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। একক্ষুনি বাইরে আসুন।

তৃষামের মোবাইলে জায়ানের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই পূর্বাশা অবাক হলো। কিন্তু পরক্ষনেই সে বুঝলো ব্যাপারটা। এই ব্যাটাকে সব স্থান থেকে ব্লক করেছে বিধায় ব্যাটা নির্ঘাত তৃষামের নাম্বার থেকে কল করেছে তাকে। দাঁতে দাঁত চাপলো পূর্বাশা, বলল – আসবো না।

– হয় আপনি বাইরে বেরিয়ে আসুন নয়তো আমি ভিতরে আসছি। চয়েজ ইজ ইউরস।

কথাটা বলেই কলটা ধুপ করে কলটা কেটে দিল জায়ান। পূর্বাশাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। মেজাজ বিগড়ালো মেয়েটার। মগের মুল্লুক নাকি যে সে যা বলবে তাই মানতে হবে? পরক্ষনেই আবার ভাবলো মগের মুল্লুকই তো, ঐ লোককে দ্বারা সবই সম্ভব। এমনিই তো তার জীবনে অশান্তির অভাব নেই। এখন যদি আবার মহিলা হোস্টেলের মধ্যে এই রাতের জায়ান ঢুকে পড়ে তাও পূর্বাশার জন্য তবে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। এমনিতেও তো তার সাথে জায়ানকে জড়িয়ে কম কথা ছড়িয়ে পড়েনি। এখন জায়ান যদি এখানে চলে আসে তাহলে তো ঝামেলা হবে, কলঙ্ক লেগে যাবে তার। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও হোস্টেল থেকে বাইরে এলো পূর্বাশা। জায়ানের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – কি সমস্যা?

জায়ানের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো কিছুটা। থমথমে কন্ঠে সে বলল – আপনি দিন দিন বেয়াদব মহিলাতে পরিনত হচ্ছেন পূর্বাশা।

পূর্বাশার চোখ ছোট ছোট হলো। মুখ বাঁকিয়ে সে বলল – হলে হচ্ছি তাতে আপনার কি?

– বেয়াদবিটা তো আমার সাথেই করছেন সমস্যা তো তাহলে আমারই হবে তাই না?

– আপনার যদি মনে হয় আমি আপনার সাথে বেয়াদবি করছি তবে এড়িয়ে চলুন আমাকে। আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিন।

দাঁতে দাঁত চাপলো জায়ান। গম্ভীর কন্ঠে বলল – আপনি আমার মুখে মুখে তর্ক করছেন? চীনে এসে দেখছি আপনার সাহস অনেক বেড়ে গেছে।

– সাহস বাড়াতেই তো চীনে এসেছি।

হুট করেই জায়ানের দৃষ্টি শীতল হলো। ঠান্ডা কন্ঠে বলল – চীন দেশে এসে ঠিক এতটাই সাহস বেড়েছে আপনার যে মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমার মতো কঠোর হৃদয়ের পুরুষ জায়ান ইবনে জাফর চৌধুরীর হৃদয় চু’রি করে ফেলেছেন।

ক্ষানিকটা চমকালো পূর্বাশা। জায়ান তার পুরো নাম কি বলল “জায়ান ইবনে জাফর চৌধুরী!” ইবনে দ্বারা তো বাবার নাম অর্থাৎ কার পুত্র তা বোঝায়। তবে জাফর চৌধুরী কি জায়ানের পিতার নাম? হয়তো। কিন্তু জাফর নামটা তো বাঙালি। চীনে এমন নাম শোনা যায় না তো। তবে কি জায়ান বাঙালি? হতেই পারে। এর জন্যই হয়তো এই ছেলে এত সুন্দর বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। আবার বাঙালি অনেক সংস্কৃতি সম্পর্কেও অবগত। কিন্তু জাফর নামটা ক্ষানিকটা চেনা লাগলো পূর্বাশার। যাক গে তাতে তার কি। পূর্বাশা ততটা মাথা ঘামালো না এ বিষয়ে। তাছাড়া এক নাম তো কত মানুষেরই থাকতে পারে। এখানে চেনা চেনা লাগার কি আছে? চোখ মুখ শক্ত করলো মেয়েটা, শক্ত কন্ঠেই সে বলল – বাজে কথা রাখুন তো। কি বলতে এসেছেন তাই বলুন। নয়তো গেলাম আমি।

– আমি আপনাকে ভালোবাসি পূর্বাশা।

দাঁতে দাঁত চাপলো পূর্বাশা। আবার সেই এক কথা? কন্ঠে কাঠিন্য এটে সে বলল – কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

– কেন ভালোবাসেন না?

– এর কোনো কারন নেই। ভালোবাসতেও মানুষের কোনো কারন লাগে না। আবার ভালো না বাসাতেও কোনো কারন লাগে না। এটা সম্পূর্ণ হৃদয় ঘটিত ব্যাপার।

জায়ান ঠোঁট কামড়ে ছোট ছোট চোখে তাকালো পূর্বাশার পানে। ভাবুক ভঙ্গিতে বলল – তাহলে আপনার আগে আপনার হৃদয়টাকেই আমার দেখতে হবে একবার। আপনার হৃদয়টা আমাকে ভালো না বেসে কোথায় যায় আমিও দেখে নেব।

তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল পূর্বাশা। এবার কিছুটা নরম কন্ঠে বলল – দেখুন এমন কেন করছেন? একটু শান্তিতে বাঁচতে দিন আমাকে। দুই দিন আগেও তো আপনার প্রধান শত্রু ছিলাম আমি তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে আপনি এখন আমাকে ভালোবাসার দাবি করছেন আমার সম্মুখে।

মৃদু হাসলো জায়ান, কোমল কন্ঠেই বলল – আপনিই তো বললেন এটা সম্পূর্ণ হৃদয় ঘটিত ব্যাপার। আমি আপনাকে কেন কখন কিভাবে ভালোবেসেছি আমি নিজেও জানি না। তবে এই টুকু খুব ভালো করেই জানি বা বুঝতে পেরেছি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভীষন ভালোবাসি।

পূর্বাশার দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। সন্দিহান কন্ঠে সে শুধালো – যদি বলি আমি আপনার একটা কথাও বিশ্বাস করি না।

– তা বিশ্বাস করানোর দায়িত্ব অবশ্যই আমার। তবে আপনার কাছে আমার একটাই প্রশ্ন আপনি কেন বিশ্বাস করেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি।

– কারন,

“আমি কুৎসিত, আপনি সুদর্শন।
আমি আঁধার, আপনি আলো।”

একটু থামলো পূর্বাশা আবার বলল – আলো আর আঁধারকে কখনও মিলিত হতে দেখেছেন? তেমনি আপনার আর আমারও মিল হওয়া সম্ভব নয় হোক তা ভালোবাসায় কিংবা বন্ধুত্বে।

আলতো হাসলো জায়ান তবে সে হাসি দৃষ্টিগোচর হলো না পূর্বাশার। ছেলেটা একটু এগিয়ে দাঁড়ালো পূর্বাশার সম্মুখে অতঃপর বলল – আলো আঁধারের যেমন মিল হওয়া সম্ভব নয় তেমনি কিন্তু আঁধার ছাড়া আলোর অস্তিত্বও নেই কিংবা বলতে পারেন মর্যাদাহীন।

– আপনি কেন বুঝতে পারছেন না?

– কারন আমি বুঝতে চাইছি না।

চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো পূর্বাশা। শক্ত কন্ঠে বলল – আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

পূর্বাশার শক্ত বাক্যের বিনিময়ে হাসলো জায়ান। জোড় গলায় বলল – আপনি ঠিক যতবার আমাকে প্রত্যাখ্যান করবেন, আমি ঠিক ততবার আপনার সম্মুখে ভালোবাসার দাবি নিয়ে হাজির হবো। আমিও দেখি আপনি ঠিক কতবার প্রত্যাখ্যান করতে পারেন আমার ভালোবাসা।

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

[ আহরাব ইশতিয়াদ এবং নিশিতা জুটির উপর লেখা আমার প্রথম উপন্যাস “স্নিগ্ধ প্রেয়শী” পড়ে নিন বইটই অ্যাপে, মাত্র ৪০ টাকা। বইয়ের লিংক এবং কিভাবে কিনবেন পেয়ে যাবেন কমেন্ট বক্সে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here